Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

নিরুপম চক্রবর্তী

টের্জ়া রিমা, বৃক্ষ-মানবের

 

[টের্জ়া রিমা দান্তের ডিভাইন কমেডির বিন্যাস। ইংরেজিতে শেলির প্রখ্যাত সৃষ্টি ওড টু দি ওয়েস্ট উইন্ডের অবয়ব এটি। বৃক্ষ-মানবের কোনও গল্প নেই: সে এক অশ্লীল অশুভ দেশে বিশুদ্ধতার প্রতীক যেন, ব্যর্থ হওয়া তার ভবিতব্য…]

 

নিরাসক্ত অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রয়েছ একা, কে গো তুমি, হে বৃক্ষ-মানব?
বিপর্যস্ত বঙ্গভূমে পৈশাচিক রাত্রি নামে, শিবাদল সাড়ম্বরে হাঁকে
অশ্রু মোছে কৃত্তিবাস, মৃত্তিকায় দীর্ঘশ্বাস, রাম জপে তমিস্র দানব।

হে বৃক্ষ-মানব, তোমার স্থবির স্মৃতিকথা লুপ্ত হয় সময়ের বাঁকে
উৎপাটিত শিকড়ে তো শুধু গ্লানি, শুধু রক্ত, উড়ে যায় উল্লাসে শকুন
তবু তুমি প্রজ্ঞাবদ্ধ, একাকী এ স্তব্ধভাষ্য ভোর এলে বলে যাবে কাকে?

দেখেছ গভীর রাতে শবদেহ ভেসে যেতে, ঘাতকের হিংস্র চোখে খুন
খঞ্জরেতে রোমহর্ষ, মৃত্যুর নির্মম স্পর্শ, মর্কটেরা নাচে আর বলে:
আসিবে না ভোর শালা, পাশা খেলে বঙ্গবালা, ইন্দ্রপ্রস্থে উৎকুণ মৎকুণ!

প্লাবন ও বানভাসি, কৃষ্ণবৃষ্টি; বৃক্ষ-মানবের ভূমি একগলা জলে
বিহ্বল বেদনা নিয়ে জেগে থাকা দিব্যকান্তি ভেসে যায় জোয়ারের টানে
এই তাকে শেষ দ্যাখা; গভীর জলের প্রাণী আজও নাকি তার কথা বলে।

অন্ধকারে জেগে ওঠে বৃক্ষ-মানবের গাথা অলৌকিক টের্জ়া রিমা গানে
কে ছিল সে আরণ্যক ক্রুশবিদ্ধ যিশু কিংবা গুলিবিদ্ধ গ্যেভারার মতো?
সে বুঝি প্রতীক শুধু, একমুঠো ভরসা ও একরাশ বিষণ্ণতা আনে।

নিরাসক্ত অন্ধকারে আজও তার অশ্রু ঝরে, পরিত্যক্ত শিশিরে অন্তত
কে বৃক্ষ-মানব তুমি জেনে গেছ এ সমাজে সর্বঅঙ্গে উপদংশ ক্ষত?