Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

চলমান বিদ্রোহের ইতিহাস ও একজন দ্রোহমানুষ

সুদীপ

প্রবুদ্ধ ঘোষ

 

The Trinamool Congress under Mamta Banerji’s leadership is cashing in on the dissatisfaction and the hatred among all sections of the people towards CPM and came to the fore as a strong contender for power. So now the CPM is facing the danger of losing its power. Whatever Mamta Banerjee may promise today, once in power her rule is not going to be basically any different from that of the CPM. It is very clear that her rule in alliance with Congress would be a continuation of the pro-feudal, pro-corporate and anti-people policies implemented by all ruling class parties including the CPM till date. Along with Congress, BJP and CPM, Trinamool Congress is also a party which represents the interests of the feudal and comprador bureaucratic capitalist classes, bending its knees before the imperialists. So the only way before the people of Bengal is to boycott these sham elections and to build militant people’s struggles while keeping the Maoist People’s War at the core with the inspiration of the glorious struggle spirit of the Lalgarh people. The real alternative is to expand more militantly and in a more organized manner the alternative people’s political power which came to the fore in an embryonic form as a result of the historic Lalgarh movement.”

Central committee, Communist Party of India (Maoist), Press Release, 5th April, 2011

প্রায় তামাদি হয়ে যাওয়া এই প্রেস্‌ রিলিজের উল্লেখ করেই এই লেখাটা চলতে থাকুক। কারণ, ‘মাওবাদীরা মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চেয়েছে’ এই একপেশে সিপিএমীয় ও সংবাদবিক্রিমূলক প্রচার বরাবরই প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। সেই প্রচারের ভোট-দাক্ষিণ্যের ভিত্তি রয়েছে, তুই আসল না মুই আসল এই প্রচার-উদ্দেশ্যও রয়েছে। গণআন্দোলনকে ইভিএমের বোতামে রূপান্তরিত করে দেওয়ার তৃণমূলীয় দক্ষিণপন্থা রয়েছে। মতাদর্শগতভাবে বহুবছর যাবৎ নিঃস্ব হয়ে যাওয়া ও সংসদীয় গণতন্ত্রের গদিলোভে কয়েক দশক প্রাণপাত ক’রে যাওয়া একটি দল, যারা ‘বাজার সমাজতন্ত্র’-র মডেলকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যারা আসলে রাষ্ট্রের হেজেমনিকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অনুশীলন করতে চায়— এই দলের মুখপত্র ‘গণশক্তি’তে ২০১৬ সালে ‘আচ্ছে দিন’ খ্যাত রাষ্ট্রনায়ক মোদির বিজ্ঞাপন বেরোবে এবং ২০১৯ সালে সিপিআই (মাওবাদী) দলের পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদকের নামে প্রভূত অর্ধসত্য ছাপা হবে, বোধসম্পন্ন প্রতিটি মানুষই তা বোঝেন। বহুবিকৃত ও বিক্রীত কাগজ ‘এই সময়’ বা ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ বা অন্য সংবাদপত্রগুলোতে সুদীপ চোংদারের জেল হেফাজতে মৃত্যুর খবর সম্পর্কে কয়েকটি মাত্র লাইন এবং তাঁর বিপ্লবী রাজনৈতিক আদর্শের ব্যাপারে হিরণ্ময় নীরবতা। এটা প্রত্যাশিত। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) যেহেতু ২০০৯ সালে তৎকালীন ইউপিএ সরকারের আদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে এবং তাদের প্রকাশ্য যেকোনও কর্মসূচি বা প্রচারের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাই রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে থাকা বিভিন্ন রঙের মিডিয়া ও ভিন্ন রঙের সংসদীয় দলের বহু ভুয়ো প্রচারের বিরুদ্ধে তাদের মতামত বুদ্ধিবৃত্তির অনুশীলনকারীদের কাছে সবসময় পৌঁছয় না। তাই, কমিউনিস্ট পার্টির কর্মসূচি বা রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝির রাষ্ট্রনির্মিত অবকাশ থেকে যায়। আরও বহু এর’ম ‘অবকাশ’ অনুশীলিত হয়ে চলে মতাদর্শগত রাষ্ট্রীয় যন্ত্রগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে। আর, কারাগারে প্রায় বিনাবিচারে প্রায় এক দশক বন্দি করে রেখে হত্যা করা হয় সুদীপ চোংদার, হিমাদ্রি সেন রায়, রঞ্জিত মুর্মু, স্বপন দাশগুপ্তদের। সরকার-অনুমোদিত রক্তপাতহীন হত্যাপদ্ধতি ক্রমশ ‘কনসেন্ট’ আদায় করে নিতে চায় জনমানসের শান্তিকল্যাণে, বাক্য, ভাবনায়।

চান্দ কোলে জাগে গগন পাশে বিবি নিন্দে মগন
খোয়াবে কান্দিলো বেটা না রাখে হদিস।
(ফকির) না রাখে হদিস।
(হায়রে) সিথানে পড়িয়া থাকে কার্পাসের বালিস।
দুয়ারে দাঁড়ায়ে ঘোড়া করিলো কুর্নিশ।
(ফকির) ঘোড়ায় চড়ি বাহিরিলো নাহিকো উদ্দিশ।।

ছয়ের দশকে জন্মানো সুদীপ চোংদারের ছাত্র রাজনীতির শুরু ছাত্র পরিষদ সদস্য হিসেবে। কামারপুকুর কলেজে পড়াকালীন এসএফআই-র সংস্পর্শে আসা এবং সদস্য হওয়া। কিছুটা সময় সিপিআই(এম)-এর সক্রিয় কর্মী। আশির দশকের মাঝামাঝি। সুদীপের পরিবার ছিল আপাতস্বচ্ছল, গড়বেতা অঞ্চলের ক্ষয়িষ্ণু উচ্চবিত্ত পরিবার। তবু, বামপন্থী আদর্শের টান তো ছিলই, ছিল ‘ব্যক্তিগত’ থেকে বৃহত্তর ‘রাজনৈতিক’ চেতনায় উত্তরণের বোধ। বাংলার রাজনীতিতে সিপিআই(এম)-এর তুঙ্গমুহূর্তেও সেই দলের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধিতায় আপস ছিল না তাঁর। পশ্চিমবঙ্গে সেই মুহূর্তে বেশ কয়েকটি ফ্যাকশনে বিভক্ত বিভিন্ন নকশালপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ তখন থেকেই। অন্যদিকে, ওই দশকেই তৎকালীন অন্ধ্রপ্রদেশে নকশালবাড়ি বিদ্রোহের সাময়িক পশ্চাদপসরণের পরে সীতারামাইয়া ও কোল্লুরি চিরঞ্জীবির নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল সিপিআই(এম-এল)(পিপল্‌স ওয়র)। সারা ভারত জুড়ে, বিশেষত বাংলায় সাময়িক ছত্রভঙ্গতার পরে জোট বাঁধছিল কৃষিবিপ্লবের অপূর্ণ প্রচেষ্টাগুলো। জনযুদ্ধের প্রভাব বাংলায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে নব্বই দশকের শুরুতে জনযুদ্ধের সংস্পর্শে আসেন সুদীপ, বাংলায় জনযুদ্ধের তৎকালীন সংগঠক অসিত সরকারের নেতৃত্বে। এরপর প্রায় এক দশক জুড়ে জনযুদ্ধ পার্টির সংগঠকেরা পশ্চিমবঙ্গে কৃষিবিপ্লবের ভিত্তি প্রস্তুত করেন। ‘অপারেশন বর্গা’-র সাফল্যের ঢক্কানিনাদের আড়ালে পুরনো জোতদার শ্রেণিরই একটা অংশের স্বার্থ সংরক্ষিত হল এবং কৃষকসমস্যার মূলগত প্রশ্নগুলিকে তাত্ত্বিক বচনে এড়িয়ে যাওয়া গেল। ’৬০ দশকের শেষভাগ থেকে তীব্রতর হওয়া কৃষিবিপ্লবের শ্রেণিআকাঙ্খাকে লিক্যুইডেট করার বামফ্রন্টীয় পদ্ধতির (প্রভূত জমির মালিক ও প্রান্তিক কৃষক একই কৃষকসভার ও পার্টির সদস্য) উল্লেখ দেবেশ রায়ের ‘মফস্বলি বৃত্তান্ত’ বা ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’-তে পাওয়া যায়। কেন্দুপাতার দামবৃদ্ধির আন্দোলন ও কৃষিজ পণ্যকেন্দ্রিক আন্দোলনে পশ্চিম মেদিনীপুরে জনভিত্তি সংগঠিত হয়। ১৯৯৫-৯৬ থেকে ১৯৯৮ সাল অবধি সশস্ত্র প্রতিরোধ নয় বরং একের পর এক গণআন্দোলন গড়ে তুলতে থাকেন তাঁরা। যে গণআন্দোলনগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল বামফ্রন্টের জমানায় নিশ্চিন্তে ঘাঁটি গেড়ে বসা ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততন্ত্র ও ছদ্ম-জোতদারশ্রেণি। বাংলার রাজনীতিতে এক উল্লেখযোগ্য মোড় আসে ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা এবং বিজেপির সঙ্গে মিলে কেশপুর-গড়বেতা অঞ্চলে তৃণমূলের এলাকাদখলকে কেন্দ্র করে। সিপিএমের তৎকালীন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষের খাসতালুক গড়বেতায় অত্যাচার নেমে আসতে থাকে কৃষক-শ্রমিকদের ওপরে, যাঁদের বেশিরভাগই ছিলেন সিপিএমের সদস্য-সমর্থক। ১৯৯৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে কেশপুর-গড়বেতায় সিপিএমের অসহায়তায় উল্লসিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেসময় বলেন, ‘কেশপুরই হবে সিপিএমের শেষপুর’। কারণ সুশান্ত ঘোষের অনুগত লেঠেল-বাহিনী তখন তৃণমূল-বিজেপির মেরুদণ্ড। ‘দাপুটে’ জুটি সুশান্ত-দীপক কর্মী সমর্থকদের বিপদে ফেলে রেখে এলাকাছাড়া। বাংলার রাজনীতিতে জনযুদ্ধের প্রবেশ এমনই এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, গড়বেতার ১ ও ২ নম্বর ব্লকে ও সংলগ্ন এলাকায় প্রতিরোধ আন্দোলনকে সশস্ত্র রূপ দিতে। ততদিনে সিপিআই(এম-এল)(পার্টি ইউনিটি) ও সিপিআই(এম-এল)(পিপলস্‌ ওয়র) একটিই পার্টিতে পরিণত হয়েছে। সুদীপ চোংদার ও অসিত সরকারের সাহসী পরিকল্পনায় ও প্রতিরোধী কৃষকদের অংশগ্রহণে এবং গেরিলা যুদ্ধপদ্ধতির সার্থক প্রয়োগে পিছু হটতে থাকে ভৈরব বাহিনী। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসি জমানার অত্যাচারে ও পরবর্তী বামফ্রন্ট শাসনের ‘নিরাজনীতিকরণের’ স্থিতাবস্থার রাজনীতিতে বাংলার মানুষ যখন নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রত্যক্ষ প্রয়োগ প্রায়-বিস্মৃত হতে বসেছেন, তখনই জনযুদ্ধের ফিরে আসা প্রতিরোধ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। সিংভূম-বেলপাহাড়ি-গড়বেতা-পিংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কৃষকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে, সেচের জলবৃদ্ধির দাবিতে গণআন্দোলনে যুক্ত হওয়া কৃষিমজুরদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ঘটে সশস্ত্র গণআন্দোলনে। হুগলি, গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অংশের মানুষের কাছে কান পাতলে কথা বলে সেই ইতিহাস। সশস্ত্র ভৈরব বাহিনীর বিরুদ্ধে জনযুদ্ধের পাল্টা প্রতিরোধে খতম হয় গড়বেতার বিজেপি নেতা স্বরূপ সরকার। এরপরই তৃণমূল সংঘটিত করে সন্ধিপুর গণহত্যা। ১৯৯৯ সালে। জনযুদ্ধের সংগ্রামী পার্টিনেতা অসিত সরকারের বাড়িতে হামলা করে তাঁর ভাই ও ভাইপোকে খুন করে তৃণমূলের বাহিনী। হামলা হয় সুদীপের বাড়িতেও। বহু অত্যাচারেও জনযুদ্ধের পাল্টা প্রতিরোধ অব্যাহত থাকায় পিছু হটতে থাকে ভৈরব বাহিনী। সুদীপদের সাহসী প্রতিরোধে ওই অঞ্চলের সিপিএমের বহু কর্মী-সদস্য ততদিনে জনযুদ্ধের সক্রিয় সদস্য হয়ে উঠেছেন। ভৈরব বাহিনীর ভয়ে পালানো সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘জনযুদ্ধ লাল পতাকার মান রাখল!’ এরপর কেন্দ্রে এনডিএ সরকার, শরিক তৃণমূল কংগ্রেস। তাই, কেন্দ্রীয় শাসকের প্রত্যক্ষ মদতে ফের আক্রমণ শানাতে থাকে বিজেপি-তৃণমূল। আক্রমণের মুখ বিজেপির জগদীশ তিওয়ারিকে খতম করে এমসিসি-র গেরিলা যোদ্ধারা, ২০০০ সালে। ভৈরব বাহিনীকে দুরমুশ করার পরে এলাকায় ফেরেন সুশান্ত-দীপক সরকার। আর, ফিরেই নিখুঁত রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় ভোটব্যাঙ্কের খেলায় নেমে পড়েন। যে খেলা এখনও মনে আছে গড়বেতার ভূমিজদের। গণপ্রতিরোধে তৃণমূল-বিজেপি প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার ফলে তাদের একমাত্র ‘শত্রু’ হয়ে দাঁড়ায় জনযুদ্ধ, সুদীপ, অসিত। পশ্চিমবঙ্গের শাসনতন্ত্র হাতে থাকার সুবাদে ভৈরব বাহিনীর কায়দাতেই গ্রামে গ্রামে নেমে আসে সুশান্ত-দীপকের বাহিনীর সন্ত্রাস। প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় কৃষক-মজদুর সংগ্রামী সমিতিকে, গ্রেপ্তার করা হয় সংগ্রামী কৃষকদের, যাঁদের দুঃসাহসিক প্রতিরোধে দক্ষিণপন্থা নিশ্চিহ্ন হয়েছিল। পুলিশ-ক্যাডার মিলিত বাহিনীর পরিকল্পনায় ছোট আঙ্গারিয়া গ্রামে আরেকটি গণহত্যা সংগঠিত হয়, মারা যান গণআন্দোলনের ১১ জন কর্মী। সংসদীয় রাজনীতির তাড়নায় যে ১১জন কর্মীকে তৃণমূলের কর্মী বলে দাবি করেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী তথা রেলমন্ত্রী। আত্মগোপনে থাকাকালীন ২০০২ সালে ধলভূমগড় থেকে গ্রেপ্তার হন সুদীপ চোংদার। মুক্তি পান ২০০৪ সালে। সেই বছরই জনযুদ্ধ ও এমসিসি মিলে তৈরি হয় সিপিআই(মাওবাদী), ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০০৪। অন্ধ্রপ্রদেশে প্রকাশ্য জনসভায় প্রায় দেড় লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ হয়। ২০০৪ সালে সিপিআই(মাওবাদীর) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য অসীম দাস ওরফে কাঞ্চন শহীদ হন। ২০০৮ সালে হৃদয়পুর থেকে কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক সোমেনকে গ্রেপ্তার করে এসটিএফ। এরপরে রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হন সুদীপ চোংদার ওরফে কাঞ্চন। অসাংবিধানিক জমিঅধিগ্রহণ ও SEZবিরোধী নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রভাব তখন সারা বাংলায়। ছোট ছোট পদক্ষেপে জনগণের নাড়ি বুঝে তাঁদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে লালগড় গণআন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সুদীপের। সরকারি বয়ান ও নথি অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে সেই সময়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ সুদীপ ওরফে কাঞ্চন ওরফে বাতাস কারণ, আদিবাসী-কৃষকদের গণপ্রতিরোধের নয়া ভাষ্যে রাষ্ট্রক্ষমতা প্রশ্নের মুখে। ২০০৮ সালে ছিতামণি মুর্মুর চোখে পুলিশের বন্দুকের বাঁটের আঘাত এবং পুলিশি তল্লাশির নামে পুলিশ-সিপিএম ক্যাডারের মিলিত অত্যাচারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি। একদিকে সদ্য বিকশিত স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলনকে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অভিমুখে দিশা দেখানো অন্যদিকে রাষ্ট্রের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজোট হওয়া আদিবাসী-মূলবাসী জনগণের জাতিসত্তার আন্দোলনকে শ্রেণিসংগ্রামের আদর্শে যুক্ত করা এবং ভারতজুড়ে চলমান দীর্ঘস্থায়ী জনযুদ্ধের সঙ্গে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্রদের মিলিয়ে নেওয়া— সিপিআই(মাওবাদী)-র এই রণনীতি এবং লালগড় বিদ্রোহের অন্যতম সেনাপতি সুদীপ চোংদারের রাজনৈতিক স্বচ্ছতাই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে। জঙ্গলমহলে ও বাংলার বিস্তীর্ণ অংশে সিপিএম ক্যাডারদের দ্বারা সংঘটিত খুন, গণহত্যা ও দমনমূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠতে থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অপারেশন গ্রিন হান্ট’ ও ‘লো ইন্টেন্সিটি কনফ্লিক্ট’-এর বিরুদ্ধে সশস্ত্র গণপ্রতিরোধ সাফল্য অর্জন করতে থাকে। স্পেশ্যাল ইকোনমিক জোন্‌ বা পরমাণু চুক্তির মতো শ্রমিকস্বার্থবিরোধী ইস্যুতে যখন প্রতিটি ‘মূলধারার’ গণমাধ্যম শাসকের স্বার্থরক্ষায় ব্যস্ত, তখন মাওবাদীদের দৃঢ় অবস্থান উল্লেখযোগ্য। আর, বামপন্থী বিপ্লবের ‘মালিকানা’ নিয়ে রাখা কমিউনিস্ট বাবুদের ড্রইংরুম বিপ্লবের মৌতাত ছেড়ে সত্যিই যখন বসাই টুডু, দোপদী মেঝেন, শশধর মাহাতোর উদারনীতিবিরোধী বিকল্প উন্নয়ন ও বিকল্প রাষ্ট্রব্যবস্থার দিশা তুলে ধরে, তখন ভদ্দরলোক বাবু বামপন্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বটে! গড়বেতার ভূমিপুত্র সুদীপের জনসংযোগ, নিম্নবর্গের ও কৃষক-শ্রমিক শ্রেণির মানুষকে নেতৃত্ব দেওয়ার সাবলীলতা এবং জনবিরোধী বামফ্রন্ট সরকারের শাসনপদ্ধতিকে পদে পদে চ্যালেঞ্জ করা রাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ বৈ কি! তাই, ২০১০ সালের ২রা ডিসেম্বর সুদীপ, বিদ্যুৎ, অনু এবং আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করে বামফ্রন্টের অনুগত তৎকালীন এসটিএফ প্রধান রাজীব কুমার, যে রাজীব কুমার বিভিন্ন দুর্নীতির খতিয়ানে সম্প্রতি সিবিআই-এর জেরার মুখে। গ্রেপ্তারের পর দু’দিন অকথ্য অত্যাচার করে পুলিশ-এসটিএফ, ঠিক যেমন আহত বিনয় বসুকে ধরার পরে বিনয়ের হাতের আঙ্গুলগুলো বুট দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল চার্লস টেগার্ট, অন্ধ আক্রোশে। ভারতে ইউএপিএ ধারার প্রথম সফল প্রয়োগকারী সিপিএম সরকার সুদীপকে এই দমনমূলক আইনেই গ্রেপ্তার করে। ২০১১-পরবর্তী সময়ে তৃণমূল সরকারও পূর্বসুরিদের মতো এই আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগ করতে থাকে। প্রথমে দীর্ঘদিন মেদিনীপুর জেল, তারপরে ২০১৫ সাল থেকে দমদম সেন্ট্রাল জেল এবং শেষে আলিপুর জেলে বিচারের প্রহসনে আটকে রাখা হয় সুদীপ ও তাঁর কমরেডদের। শাণিত দ্রোহচেতনাকে দমন করার চিরাচরিত একটি পদ্ধতি ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা যেমন ১৯১০ সালে গোন্দ বিদ্রোহের নেতা গুন্দাধুর বা ১৯৭১ সালে সরোজ দত্ত বা ২০১০ সালে চেরুকুরি রাজকুমার বা ২০১১ সালে কোটেশ্বর রাও— অসংখ্য শহীদ। আর, অন্য পদ্ধতি বিচারের নামে জেলে আটকে আইনি উপায়ে তিলে তিলে হত্যা। শাসক-মতাদর্শ নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলো প্রচার করতে থাকে স্থিতাবস্থার খবর, মুষ্টিমেয়র উন্নয়নের ফলাও খবর আর নির্মিত খবরের ভিড়ে জনমানস ভুলে যেতে থাকে নিজেদের দ্রোহচেতনা।

পাষাণে হৃদয় বান্ধো কান্দো গিরিগণ কান্দো
ভাঙা ডিমে হলুদবরণ হইল সকল ঠাঁই।
বিবিবেটা নিন্দে মগন ফকির ঘরত নাই।।
হায়রে ভবানী পাঠক ভবে নাই।।

৯ই মার্চ, ১৯৭১। যাদবপুরের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র আশু মজুমদারকে গ্রেপ্তার করে থানায় এনে গুলি করে পুলিশ। তারপর কাটারি দিয়ে কোপায়। ৭ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২। হুগলি জেলে বিপ্লবী দ্রোণাচার্য ঘোষকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে পুলিশ। ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১। বহরমপুর জেলে তিমির বরণ সিংহ ও ১০ জন বিপ্লবীকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে খুন করে পুলিশ। ১৪ই মে, ১৯৭১। দমদম সেন্ট্রাল জেলে পুলিশ হত্যা করে ১৬ জন বিপ্লবীকে। ১৯৭২। হাজারিবাগ জেলে খুন হন মুরারি মুখোপাধ্যায় ও তাঁর কমরেডরা। ১৮ই জুলাই, ১৯৭৪। মাঝরাতে অর্চনা গুহকে থানায় তুলে আনে রুনু গুহনিয়োগী। পরের দিন থেকে লালবাজার লকআপে অর্চনা গুহর ওপরে চলে রুনু ও অন্যান্য পুলিশদের অত্যাচার। চিরকালের মতো পঙ্গু হন অর্চনা। আরও অজস্র বিপ্লবীর মৃত্যু ঘটে পুলিশ লকআপে। ওই দশকে।

পরবর্তী দশকগুলোয় হত্যাবিজ্ঞানে নিপুণতর শাসকেরা জেলের ভিতরে পাগলা ঘন্টি বাজিয়ে বিপ্লবীদের পিটিয়ে খুন করে না। বরং, বিনাবিচারে জেলে আটকে রেখে অত্যাচার করে রাজবন্দিকে অসুস্থ করে বিনা চিকিৎসায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০। আলিপুর জেলে অসুস্থ স্বপন দাশগুপ্তকে ইচ্ছাকৃত অবহেলায় হত্যা করে রাষ্ট্র। ২রা এপ্রিল, ২০১৩। শাসকবিরোধী ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যু হয় পুলিশ হেফাজতে। ২০১৪, বিপ্লবী নারায়ণ সান্যালকে ক্যানসারের অ্যাডভান্সড স্টেজে জেল থেকে ছাড়ে রাষ্ট্র। ১১ বছর জেলে অত্যাচার করেও প্রায় একটিও অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্র। ডিসেম্বর, ২০১৫। দীর্ঘদিন বিনা চিকিৎসায় ফেলে রেখে ফুসফুসের ক্যানসারের শেষ স্টেজে বিপ্লবী হিমাদ্রী সেন রায়কে জামিনে ছাড়ে রাষ্ট্র। ৭ বছরে তাঁর বিরুদ্ধে একটিও অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্র। দিল্লি প্রাসাদকূটে, মহাকরণে বা নবান্নে শাসকের তন্দ্রা ছুটিয়ে দেওয়া বিপ্লবী সুদীপ চোংদারকে হত্যার ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রীয় হত্যার এই নয়াপদ্ধতিই প্রযুক্ত হয়েছে। এই ৮ বছরে তাঁর বিরুদ্ধেও কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, বহু অভিযোগের বিচারই শুরু করতে পারেনি পুলিশ। ঠিক যেমন বহু অত্যচার করেও কোবাড ঘান্দিকে ‘অপরাধী’ প্রমাণ করতে পারেনা দিল্লি পুলিশ। জি এন সাইবাবাকে জামিন দেওয়া আর গ্রেপ্তারের নাটক অব্যহত রাখে তারা।

সাম্প্রতিক দশকে পুলিশ হেফাজতে বন্দিমৃত্যুর দায় এড়িয়ে যেতে পারে না বন্দিমুক্তির জন্যে গঠিত রিভ্যিউ কমিটিও। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথম ও শেষ যে জনস্বার্থমূলক কাজ করে, তা হচ্ছে সমস্ত রাজনৈতিক বন্দির নিঃশর্ত মুক্তি। এই ব্যাপারে মত ও আদর্শগত কোনও কার্পণ্য করেননি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। কিন্তু, ২০১১ সালের ‘পরিবর্তন’-এর সরকার বন্দিমুক্তির নূন্যতম প্রতিশ্রুতিও ভঙ্গ করে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-লালগড়-নেতাইয়ের অসংখ্য বিপ্লবী কৃষক-মজুরের রক্তঘাম ঝরানো ঐতিহাসিক যুদ্ধকে ইভিএমে বদলে নিয়ে মসনদে বসা তৃণমূলনেত্রী এই মানুষগুলোর বুকেই ছুরি মারেন। এই সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা বন্দিমুক্তি রিভ্যিউ কমিটি প্রথমেই মুচলেকার শর্ত চাপিয়ে দেয় রাজনৈতিক বন্দি বিশেষত নকশালপন্থী বন্দিদের ওপরে। দীর্ঘদিন চলতে থাকে টালবাহানা। আর, বন্দিমুক্তির রিভ্যিউ কমিটির তাবড় মানবাধিকার বিশারদের যুক্তি-প্রতিযুক্তির খামখেয়ালিপনায় বলি হতে থাকেন রাজনৈতিক বন্দিরা। কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার বা ২০১৪ সালে জাঁকিয়ে বসা বিজেপি সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে রাজনৈতিক বন্দিদের ওপরে দমনমূলক ব্যবস্থা আরও কড়া হতে শুরু করে। পশ্চিমবঙ্গে ‘মাওবাদী’ তকমা এঁটে গণআন্দোলন কর্মীদের ধরপাকড় এবং বিরোধীস্বর মাত্রেই ইউএপিএ দিয়ে বিনাবিচারে জেলে আটকে রাখার বহর উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। যদিও, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তৃণমূল সরকারের রাজনৈতিক দৈন্যই ফুটে উঠতে থাকে কারণ প্রায় কোনও অভিযোগই প্রমাণ করতে পারে না তারা। সম্প্রতি রাজনৈতিক বন্দিমুক্তির নতুন উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

সুদীপ চোংদারের হত্যার নিখুঁত পরিকল্পনায় আলিপুর জেল কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন যাবৎ সুদীপের উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ বন্ধ ক’রে রেখেছিল। মানবাধিকার সংগঠন ও সুদীপের পরিবারের বারম্বার অনুরোধেও ওষুধ পৌঁছানো যায়নি। ৪ঠা ফেব্রুয়ারি সেরেব্রাল স্ট্রোকের পরে জেলের নিকটবর্তী ও উচ্চসুবিধাসম্পন্ন পিজি বা অন্য হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে সুদীপকে নিয়ে যাওয়া হয় এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে। এমনকি, স্ট্রোকের পরের ‘গোল্ডেন আওয়ার’ বিষয়ে সরকারি জনসচেতনার ভুরি ভুরি বিজ্ঞাপন শহরজুড়ে লাগিয়ে রাখলেও, সুদীপকে প্রায় ৭ ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয় হাসপাতালে। অবধারিত ফলাফল কোমা এবং ভেন্টিলেশন। এর দু’দিন পরে মানবাধিকার কর্মীদের চাপে পড়ে সরকারি নিউরোলজিস্টকে ডেকে পাঠানো হয় তাঁর চিকিৎসার জন্য, যখন অঙ্গবিকল হওয়া শুরু হয়ে গেছে। ৮ই ফেব্রুয়ারি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পরে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এমনকি, উপস্থিত মানবাধিকার কর্মীদের দাবি অনুযায়ী মৃত্যুর পরে নির্ধারিত ৪ ঘণ্টা অপেক্ষা না করেই হাসপাতালের মর্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মৃতদেহ। যথারীতি, রাষ্ট্রীয় নির্যাতনে মৃত্যুর কথা পোস্টমর্টেম রিপোর্টে লেখা নেই, লেখা আছে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট! হাঁফ ছেড়ে বাঁচে রাষ্ট্র, বিপ্লবীর মৃত্যুতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বর্তমান সরকার, আগের জমানার ক্ষমতাসীন শাসক প্রত্যেকেই। আর, ঘরের ছেলে কমরেড কাঞ্চনের শেষযাত্রায় ভিড় আছড়ে পড়ে গড়বেতায়, পুলিশ-প্রশাসনের গাড়ি ঢুকতে পারে না, বিভিন্ন গ্রামের কয়েকহাজার মানুষ শোকে উদ্বেল হয়ে ছুটে আসেন তাঁকে দেখতে। তাঁদেরই বয়ানে শোনা যায় সুদীপের রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রামের ইতিহাস।

এই লেখা কেন?

ইতিহাস নিশ্চিতভাবেই অব্‌জেকটিভ। কিন্তু, ইতিহাসই বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ে। কারণ, সেই প্রাচীন আফ্রিকান প্রবাদ অনুযায়ী বিজয়ীরা ও তাদের অনুগতরাই ইতিহাস লিখে রাখে, তাদের বয়ানই জিইয়ে রাখা হয়। আর, যদিও বা সেই ক্ষমতাবানের ইতিহাসের ছেঁড়া হলুদ পাতার ফাঁকে কোথাও ইতিহাসের বিকল্প পাঠ জেগে ওঠে, তবে তাকে প্রান্তিক করে দেওয়া হয়। মুখে মুখে ফেরা সংগ্রামের ইতিহাসকে মিথ্‌ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়, বিজিতের বিকল্প ইতিহাসের ভাষ্যকে তথ্যসূত্রহীন মিথ্যে বলে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, তবু তো পাণ্ডুলিপিরা পুড়ে যায় না। আখ্যানেরা শেষ হয় না। বিজয়ীর ক্ষমতাবানের দাম্ভিক একপেশে ইতিহাসলেখ্যর অসারতার বিরুদ্ধে প্রতিস্পর্ধায় উঠে আসে বিনুর তোষকের নিচে রাখা গোমিয়ার আইসিআই কারখানার ডিনামাইট, লোকমুখে জন্মানো স্মৃতিকথায় পাকুর গাছে বাসা বেঁধে থাকে বেশুমার ফকির মজনু শাহ্‌ ও মুনসি বরকতুল্লাহ। তারা ইতিহাস নির্মাণের ক্ষমতা-কাঠামো নির্দেশিত ধারাকে প্রশ্ন করতেই থাকে, কিছুতেই নিবে যায় না বরং শোককে সূর্যসমান ক্রোধে পরিণত করে নেয়। শাসনক্ষমতা ইতিহাসে যে অর্ধসত্য মিশিয়ে রাখে, অথবা শোষিতের শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস ভুলিয়ে রাখার যে নিরলস পাঠ দিয়ে চলে, তার বিপ্রতীপে জেগে থাকে প্রতিস্পর্ধার ইতিহাস, নিম্নবর্গের দ্রোহের ইতিহাস এবং সেই ইতিহাসের রক্তমাংসশিরদাঁড়ায় স্থানকালব্যাপী বইতে থাকা অগণিত বিদ্রোহী মানুষ।

তথ্যঋণ-