Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

অনিন্দিতা গুপ্ত রায়ের কবিতা

পাঁচটি কবিতা

 

ঘুম

 

ঠিক এইসময়ই আলোর ভিতর স্পষ্ট চোখ মেলি। নিষ্কম্প তাকিয়ে থাকার মধ্যে সহজ পারাপারের গল্প পড়ি। কোথাও নদীতল বেড়ে উঠছে বলে কারা যেন মাছেদের অভিযোজনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। হাতপা-বিহীন শরীর ক্রমাগত মাকুর মতো বুনে চলে ঢেউ ও ভাঙনের জরিপাড় — শুনতে পাই। ভীষণ এক জ্বরের ভিতর আচ্ছন্নতায় মেঘ — আহা, নেমে আসে বুকের ওপর। কোথাও বকুল ফুটে ওঠে বলে সমস্ত রাজপথ চরাচর হয়ে যায়। ঘর-ভুল যে সমস্ত পাখি ডানাজোড়া সন্ধে নিয়ে ওড়ে — তাদের ছায়ার নীচে ছোট হয় দিন। ডুবে যাওয়ার আগের মুহূর্তে অস্পষ্ট আলো-ছায়ার দরজা ক্রমাগত জ্বলে নেভে। অবশিষ্ট ক্রিয়াপদ খুলে রেখে অন্ধকার সেসময় বড় নিরাময়!

#

স্বপ্ন

 

নিজেকেই হেঁটে যেতে দেখি পাশ দিয়ে।মাঠবাজারস্টেশনরেললাইনশ্মশান পেরিয়ে চেনা-অচেনা দৃশ্যপটের ভিতর একটা এলোমেলো অবয়ব বাতাস টপকাচ্ছে আর হোঁচটে হোঁচটে উপড়ে ফেলছে নখ। নেটওয়ার্কশূন্য দিগন্তের দিকে ঢিল ছুড়ে সে বুঝে নিচ্ছে কোন মাঠে জাল আর আর কোন মাঠে ত্রস্ত হরিণ। মাঠজুড়ে বুনোহাঁস দেবদারু ঝাউয়ের পালক — বাকি সব বনভোজনের রাতে ছাই হয়ে গেছে। সেখান থেকে ধুলো কুড়িয়ে তুলে সে মেশাচ্ছে জলরঙে আর প্যালেট উপচে বর্ষামঙ্গল তাকে স্থানু করে দিচ্ছে। আসন্ন প্লাবনের দিকে অপেক্ষা রেখে যে নিরুদ্দেশে চলে গেল — সে অবিকল আমিই!

#

ভ্রমণসঙ্গীত

 

বাড়ি ফেরার কথা মনে হলে একেকটা রাস্তা ঠিকানা খুঁজতে বেরোয়। সাদা দেওয়ালের অন্যদিকেই কোথাও গোছা গোছা লেবুফুল আর লোহার দরজা। অথচ জল বেড়ে ওঠার গল্পে নিঃশব্দে একটা নৌকো নিজেকে প্রস্তুত রাখছে। যে কোনও বিষণ্ণতারই নিজস্ব বর্ষা ঋতু থাকে, থাকে ধারাপ্রবণতা। অন্যমনস্ক পায়ে জেব্রা ক্রসিং পেরোয় শহুরে বৃষ্টিজল। অসুখপ্রবণ দিন যেন ভাতের থালার পাশে বেড়ালছানাটি! থাবা তুলে মাঝে মাঝে আড়মোড়া ভাঙে, শুয়ে পড়ে। অনেক দূরের ঘুমপরগনা থেকে চিঠি আসে, প্রতিটি শ্রাবণে, জলময়।

#

হৃদ্‌মাঝারে

 

অনিশ্চয়তার খুব কাছে একটা ঝুঁকে থাকা গাছ — পাতা ও বৃষ্টিসহ। উবু হয়ে টেনে নিচ্ছে শ্বাস আর সহ্যের ক্রিয়া বিক্রিয়া। মোহাবিষ্ট পাকদণ্ডী থেকে ঘন হয়ে উঠে আসা হাওয়া এফোঁড় ওফোঁড় করে চলে যাচ্ছে। গলার ভিতর খসখসে যেটুকু থমকে, তাকেই কি প্রাণবায়ু বলে? তবে নাও — তার কাছে  ঠোঁট রেখে লবণের স্বাদ। বেজে ওঠা সরগম ভাঁজ করে খামের ভেতর রেখে এসো গাছের গোড়ায়। কোনওদিন গাছ মরে কাঠ হলে বাঁশি হলে গান হলে — পাইনকলোনি থেকে শোনা যাবে না কি?

#

এপিটাফ

 

মৃত্যুবিষয়ক কোনও লেখা আর আমাকে দিয়ে লিখিও না। জলের অপর নাম জীবন — বলতে বলতেই কোথা থেকে যেন শুকনো বালির গন্ধ নাকেমুখে ঢুকে পড়ছে। বমি আটকে যাচ্ছে খাদ্যনালীর কাঠ হয়ে থাকা সুড়ঙ্গে। দূরের জানলায় যেদিকে শ্রমণের পায়ের শব্দ — সেদিক থেকেই হাওয়া এল খুব, মেঘভার এল। অথচ নিরাভরণ দুহাত ডানা করেও মেলাতে পারছি না জলস্তর আর কলসির বিরহ। দুচোখের গর্ত ছাড়া সমস্ত জলাশয় মরে গেছে জেনে পাখিদের মুগ্ধবোধ ভুল হয়ে যায়। অবগাহন থেকে খুলে রাখছি পুচ্ছপাখনা। জিভের ডগায় দুএকটা কান্না রেখে কথা বলে যাচ্ছি প্রাণপণ — তুমি বুঝতে পারছ, বলো?