Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

অবন্তিকা পালের কবিতা

যে ঝড় আসবে আসবে করে এল না

 

একটা অন্ধ বুড়ি বোবার মতো হাঁ করে তাকিয়ে দেখছে বৃষ্টি ও ঝড়।
আজ ঝড় আসবে
অন্ধ লোক দ্যাখে কীভাবে
দ্যাখে না
হাত দিয়ে বাতাস ছোঁয়
বাতাসের গতিবেগ বাড়ে
অন্ধের গতিবিধি কেউ টের পায় না

নিরিবিলিতে বসে তুমি আমার কথা ভাবো
ভাবো, সেসব কেউ জানতে পারবে না
ভেবে দ্যাখো তো
যদি না ভাবতে, ঢেউগুলো শূন্যতার পিছু
নিতে নিতে কীভাবে চিনত বেলাভূমি, সুবর্ণরেখা

শূন্যতায় আমাকেও পায়।
তুমি ভাবছ যা তোমার একার
তা কেবল তোমারই।
অথচ শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে উৎসর্গ করবে বলে
যে পাতাটি ফাঁকা রেখে দিলে,
সেখানে নীলচে দেয়াল থেকে একটা
খসে পড়া পলেস্তারা
অল্প একটু আঁক কেটে রেখে গেছে অসময়ের

এখন বেরিয়ে পড়ব ঘর থেকে।
এত বাতাস বয়ে যাচ্ছে কানের পাশ দিয়ে
তুমি তো নিলে না
অরণ্য — সেও কি নিল?

গাছেরা কি কিছুই নেয়?
নাকি নিতে নিতে, নিজের মধ্যে নিতে নিতে
তুমি, আমি, অলকার ছেলে, গোপনে
গাছের পর গাছ, গাছের পর গাছ
গভীর অরণ্য হয়ে যাই?

বিকেলেরা লীন হয়ে যায় মেঘে মেঘে।
অস্থায়ী দোকানের ঝাঁপ বন্ধ
ঘরে ফিরবে বলে এইমাত্র একটা ধূসর
ঘুঘুপাখি রেলিং ছেড়ে উড়ে গেল আকাশে।
পালটে যাওয়া শহর
ইমনের শুদ্ধ নিষাদ থেকে ঋষভের
মীড়ে বেদনার অবিন্যস্ত পাণ্ডুলিপি

হাতে তুলে নিয়ে দ্যাখো,
অক্ষরে হাত বোলাও, চোখ।
করস্পর্শে লেখাগুলো নামহীন
নদীতীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা
সোনালি রেণুর নির্যাস হয়ে যায়

তাহলে কে স্থবির, প্রাচীর? শ্যাওলা?
জলের উপরিতলে আস্তরণ ফেলেছে
শৈবালের মতো মোহমায়া
ভোর তো সকলকেই টানে।
তুমি ভোরে ওঠো না
আমি ভোরে উঠি না
তবু টানে।
ইটরং ওষুধের গায়ে টাটকা ক্ষতের মতো
কী একটা লেগে আছে।
তুমি লিখে যাও, সব শুনছি।
না-শোনানো গানের সঞ্চারী থেকে এইমাত্র
দুঁফোটা রক্ত পড়ল পৃষ্ঠায়

দিনে কটা করে রক্ত-তরলের ওষুধ খাও, যে
প্রগাঢ় লালরঙ এতটা ফ্যাকাশে!

চিঠির প্রত্যুত্তরে এলে আচমকা সুবাস,
দু’ পশলা জল পড়ে কালবৈশাখীর উঠোনে,
চৌকাঠে।
মাজারে সন্ধের আজান দিতে দিতেই
যে ফুটপাত-উপবাসী মুখে অন্ন তুলল,
সে কখনও কবিতা পড়েনি।
ঝড় থেমে গেলে
তবু তার দুইচোখে তোমার হাসির মতো
কয়েক খণ্ড কবিতাসমগ্র দেখতে পাব

যে হাওয়া আসবে-আসবে করে এল না
তার পায়ের পাতায় ধুলোবালি
রেখে গেছে গেরস্থালি।
রবিপক্ষ পড়তেই সুধারাণী এসে
রুইমাছের ঝোল ঢাকা দিয়ে গেল টেবিলে।
কোমরে কাপড় গুঁজে বলে গেল—
‘খেয়ে বোলো’

পরিচিত বৈশাখের গন্ধে কাকে যেন মনে পড়ে…
কবে যেন…