চারটি কবিতা
ব্যর্থতা বা সাফল্য, আর…
গলার কাছে দুঃখ জমে অনেকটা যেই পাথর-পাথর
অমনি আমি কলম খুলে লিখতে বসি।
পাথর ভেঙে পাথর ঠুকে আগুন জ্বালার অদম্য এক
ইচ্ছে এখন ভীষণরকম
আষ্টেপৃষ্টে আমায় ধরে। প্রতি রাতেই।
আগুন জ্বলে কাঠকুটোতে
এবং তত শীত করে না।
এই যে পৌষ ফুরিয়ে এল, এই যে মলিন মাঘের বেলা
লিখতে পারি কী অনায়াস
শব্দ বুনে, শব্দ ছেনে
পাঠক পড়ে— হাততালি দেয়— ‘অসাধারণ’, ‘অসাম’— লেখে
কিন্তু দুঃখ পাথর-পাথর এখন তো খুব ইচ্ছে হলেই
স্তূপের মতো জমিয়ে রেখে
একটা একটা জমিয়ে রেখে
পাহাড় গড়তে পারি না আর
ইচ্ছে হলেই শোকের পাহাড়, যেমন তুমি ছুটিছাটায়
বেড়িয়ে আসতে বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে
অর্ক
অন্যের প্রেমিক তুমি।
বৃষ্টি এলে বাবরি চুল
বিকেলের গন্ধ মেখে শহুরে ধুলোয় নামে।
পার্কের আড়ালে রথ৷ রথী তুমি স্বয়ং আর
সপ্ত অশ্বের রশিতে দিয়েছ টান,
খুরের আওয়াজ শুনে শরণ্যা উদয় হন
কলেজ স্কোয়ার তীরে, মায়াসরোবরে।
সহস্র নামে কী যেন অছিলা ছিল
তাই, দু’কান বিঁধিয়ে অদিতিপুত্র
আড়চোখে চেয়ে গেল, চলে।
চলে গেল। বলে গেল একটি দুটি মৃদু শব্দ কানে
দ্রিম দ্রিম বাজছে সমস্ত রাত, ছায়াময়
ছায়ার প্রেমিক তুমি, আদি দেব।
বৃষ্টি এলে আলিঙ্গনপ্রত্যাশী মর্ত্যমানবী
অদ্যপি আলোকস্বর্গে তোমার রশ্মি মেখে ফিরে যায়…
উচ্ছিষ্টভোজী
হাততালি থেকে হাড়ভাতের মরশুমে
আমাদের জঘন্য শামিয়ানা৷
আকাশ জুড়ে ম ম করছে উলুর সুগন্ধ।
নিতবরকনে উড়ে এসে পড়ল ওই৷ তুমিও কি
পুজোর থালায় দু’পশলা রামধনু মেখেছিলে
দধিমঙ্গলের মতো?
বলো হৃদ্কমল?
এমন পাপাচার করে করে ক্লান্ত
সর্পিল বেদনার উচ্ছিষ্ট তুলে আমরা দুই নরনারী
নরকের সংসারে গিয়েই বা কী উত্তর দেব?
জুন মাসের লেখা
আমার অনেক বয়স হল।
অনেক বয়স হল আমার।
নদীর ধারে এলিয়ে পড়া গুটিকয়েক শাখার ভাঁজে,
রৌদ্র এল
কিংবা যখন কেউ এল না,
কিংবা যখন কেউ আসে না,
আদত কথা একলা চলার ভীষণরকম বদ-অভ্যেসে,
অফিস ফেরত ঘুমিয়ে পড়ি, চাল ধুতে যাই কায়ক্লেশে,
অন্নবস্ত্রে বাঁচার ছুতো
গলিয়ে ফেলা রঙিন জুতো, পটাং করে ছিঁড়লে ফিতে হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খাওয়া।
এই তো খানিক এগিয়ে যাওয়া, পিছিয়ে পড়ার রোজনামচা
ধুলোর মতো ঝাড়তে গিয়ে দু-একমুঠো চিকচিকে শোক
ছড়িয়ে পড়ে মাটির ওপর
অন্ধকারে হাতড়ে দেখি এক এক করে হাত ছেড়ে যায়
দেশের বাড়ি, বাড়ির উঠোন, হাস্নুহানা
একটা সময় তারার দিকে তাকিয়ে তবু শান্তি পেতাম
এখন এত মেঘ করে যে…
হঠাৎ হঠাৎ…
বৃষ্টিমাখা রাতের মতো, ভিজে চুলের খোঁপার মতো
আমার অনেক বয়স হল
অনেক বয়স হল আমার