Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

গিলগামেশ মহাকাব্য — দ্বাদশ ফলক

তর্জমা: সুজন ভট্টাচার্য

 

গিলগামেশের মহাকাব্যকে পৃথিবীর ইতিহাসে হদিশ পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন মহাকাব্য বলা যেতে পারে। গিলগামেশ সুমেরীয় শহর উড়ুক-এর এক ঐতিহাসিক নৃপতি, প্রাচীন মেসোপোটেমিয়ার পুরাণের এক মহান নায়ক, এবং একইসঙ্গে গিলগামেশের মহাকাব্যের প্রধান চরিত্র। খ্রিস্টপূর্ব ২৮০০-২৫০০ শতকের মধ্যবর্তী সময় গিলগামেশের রাজত্বকাল আর আক্কাদিয়ান ভাষায় লেখা মহাকাব্যটির রচনাকাল আনুমানিক খ্রিস্টজন্মের দু'হাজার বছরেরও কিছু আগে।

গিলগামেশের মহাকাব্যের দ্বাদশ ফলকটি মূল মহাকাব্যের অংশ নয়। এটি “পাতাল সাম্রাজ্যে গিলগামেশ” নামক সুমেরীয় মহাকাব্যিক কবিতার আক্কাদীয় অনুবাদ। সম্ভবত মহাকাব্যটির সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই এটিকে সংযোজিত করা হয়েছিল। প্রাচীন সুমেরীয় সংস্করণের মতোই এই অংশে গিলগামেশকে বলা হয়েছে বিলগামেশ; যদিও বর্তমান অনুবাদে যথারীতি গিলগামেশই ব্যবহৃত হয়েছে।

 

দ্বাদশ ফলক — মহান বন্য ষণ্ড শুয়ে পড়ল এইবার

মহান বন্য ষণ্ড শুয়ে পড়ছে মাটিতে, উঠবে না আর কোনওদিন,
রাজা গিলগামেশ শুয়ে পড়ছেন মাটিতে, উঠবেন না আর কোনওদিন,
যুদ্ধে যিনি ছিলেন সম্পূর্ণ ত্রুটিহীন, শুয়ে পড়ছেন তিনি, আর উঠবেন না কোনওদিন,
যে যোদ্ধার দেহ বর্মে আচ্ছাদিত, এইবারে শেষ শয্যায় তিনি,
আর দেখা যাবে না কোনওদিন উঠে দাঁড়াচ্ছেন তিনি
সমস্ত ধূর্তদের বিনাশক যিনি, শুয়ে পড়েছেন এইবার, আর তিনি দাঁড়াবেন না উঠে
পড়ছেন শুয়ে প্রাজ্ঞতার বাণী উচ্চারণ করেছিলেন যিনি, উঠে আসবেন না কোনওদিন
সদাজাগ্রত যিনি মাটির সুরক্ষায়, শুয়ে পড়ছেন তিনি, উঠবেন না আর কোনওদিন
পর্বতের শিখরে পা রেখেছিলেন যিনি, আর আসবেন না কোনওদিন প্রজাদের সম্মুখে
কুল্লবের প্রভু শুয়ে পড়ছেন এইবার, আর তিনি উঠবেন না কোনওদিন
মৃত্যুশয্যায় তিনি, আর তিনি দাঁড়াবেন না উঠে,
বেদনার শয্যায় শুয়ে আছেন যিনি, আর তিনি কোনওদিন দাঁড়াবেন না উঠে
উঠে দাঁড়াতে সক্ষম নন তিনি, এমনকি বসতেও নয়, তিনি শুধু আর্তনাদ করেন,
খাদ্য বা পানীয়, কোনওটাই আর গ্রহণে সক্ষম নন তিনি, দিনরাত শুধু আর্তনাদ করেন,
নামতারের বাঁধন তাকে ধরে রেখেছে শক্ত করে, উঠে দাঁড়াতে অক্ষম তিনি।
জালের মধ্যে মাছ যেভাবে বন্দি হয়, তিনিও যেন ধরা পড়েছেন জালে,

যেভাবে হরিণও আটক হয় লুক্কায়িত ফাঁদে, তিনিও যেন তাই
মৃত্যুদেব নামতার, হাত নেই যার, নেই পা, রাত্রিতে শিকার করেন মানুষ,
সেই জল্লাদ নামতারের হাতে ধরা পড়েছেন গিলগামেশ।
পুরো ছয়দিন অসুস্থ রইলেন তিনি,
গলন্ত মেদের মতো স্বেদ ঝরে পড়ছিল তাঁর শরীরের থেকে
রাজা গিলগামেশ অসুস্থ,
উরুক আর কুল্লবের প্রভু …
যার কীর্তি আর নাম মুখস্থ জনতার,
তিনি এখন নামতারের বিছানো শয্যায়,
ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখেন তিনি,
সেই স্বপ্নেই নামতার চোখ খুলে দেন তাঁর—
দেবতারা সমবেত কোনও এক দৈবিক সমারোহে,
গিলগামেশকে আসতে দেওয়া হল কাছে,
তাঁর সম্পর্কেই দেবতা জানালেন গিলগামেশকে—
“তোমার পার্থিব দেহ ভ্রমণ করেছে যাবতীয় পথ,
টেনে নামিয়েছে সেই অনিন্দ্য দেবদারু পর্বতের গাত্র থেকে,
হুমবাবাকে ধ্বংস করেছে তার নিজস্ব অরণ্যে,
আগামী দিনের জন্য স্থাপন করেছে বিজয়মিনার,
স্থাপন করেছে দেবতাদের মন্দির,
পৌঁছেছিল উথা-নাপিষতির গৃহে,
যে সব প্রাচীন অভ্যাস ও প্রথা ভুলে গিয়েছিল সুমের,
আবার তাদের কাছে সেই সব সুমহান রীতি তুমিই ফিরিয়ে এনেছিলে।
মহাপ্লাবনের পরে যা যা তারা ভুলে গিয়েছিল,
সব তুমি শিখিয়েছিলে তাদের।
এখন গিলগামেশ, তোমাকে আনা হয়েছে এইখানে”,
এনকির কাছে প্রকাশিত এনলিলের ইচ্ছা বলে দিলেন তাঁরা,
যে ইচ্ছায় সম্মতি দিয়েছিলেন এমনকি আন—
“সেই সব দূরবর্তী দিনে,
সেইসব দূরবর্তী রাতে
সেইসব বহু অতীতের বছরে
সমবেত হয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন
মহাপ্লাবন এসে ভাসিয়ে দেবে সব,
ধ্বংস করা হবে মানবের বীজ।
তবুও বেঁচে গেল একজন মানব,
উথা-নাপিষতি রয়ে গেল মানবের প্রতিভূ হিসাবে।
সেইদিন থেকে আমাদের সিদ্ধান্ত, পৃথক হবে স্বর্গ আর পার্থিব জীবন,
সেইদিনই সিদ্ধান্ত আমাদের, মানুষ পাবে না কোনও অনন্ত জীবন।
এখন আমরা দেখছি গিলগামেশকে,
তাঁর মায়ের ভূমিকা সত্ত্বেও আমরা পারি না তাকে মার্জনা দিতে।

গিলগামেশ, পাতালপুরীতে মৃত তার প্রেতের আকারে
নিযুক্ত হবে পাতালের প্রশাসক রূপে, সেই হবে ছায়ামূর্তিদের প্রধান।
সে বিচার করবে, শোনাবে দণ্ডাজ্ঞা,
যে কথাই বলবে সে, গুরুত্বে সমান হবে
নিনগিশজিদা আর দুমুজির কথার।[1]

স্বপ্নের দেবতা সিসসিগ, উতুর সন্তান
তার জন্য আলোকের ব্যবস্থা করে দেবে অন্ধকারময় পাতালের দেশে।
যতজন মানুষ পেয়েছে অধিকার নামের,
যখন তাঁদের পারলৌকিক মূর্তি স্থাপিত হবে আগামীর দিনে,
যোদ্ধৃ-যুবকেরা আর যাদের দেখবার সামর্থ্য আছে,
অর্ধবৃত্ত রচনা করবে তারা এক প্রবেশপথ ঘিরে।
মল্ল প্রতিযোগিতা অথবা শক্তি পরীক্ষা যেখানে নেওয়া হবে,
মশালের মাসে কিংবা প্রেত উৎসবে
সে যদি উপস্থিত না হয়, একটুকরো আলোও আসবে না সেখানে।”
মহান পর্বত এনলিল, দেবতাদের পিতা
স্বপ্নের মধ্যেই বললেন গিলগামেশকে—
“গিলগামেশ তোমার জন্য রেখেছি আমি রাজত্বের নিয়তি,
কিন্তু তোমাকে দিইনি আমি অমর জীবন।
যেমনটাই হোক মানুষের জীবন, অন্তরে দুঃখী হওয়া উচিৎ কাজ নয়,
হতাশায় নয়, হৃত-দৌর্বল্যেও নয়।
আমিই বলছি তোমাকে, এখানেই জন্ম নেয় মানুষের সকল যন্ত্রণা।
তোমাকে বলছি আমি, নাভিরজ্জু ছিন্ন হয় যখন
তখনই যা যা নির্দিষ্ট থাকে, তারাই সামনে আসে।
মানুষের নশ্বর জীবনের অন্ধকারতম রাত এখন ঘিরেছে তোমাকে,
নশ্বর মানুষের বিচ্ছিন্ন একক স্থানে এখন চলে এসেছ তুমি,
যে প্লাবনস্রোতের প্রতিরোধে অসমর্থ মানুষ, তুমি এখন ভেসে যাচ্ছ তাতে,
যে লড়াইয়ে পলায়ন সম্ভব নয়, তাতেই রত আছ তুমি,
যে সংগ্রাম সর্বদাই সমকক্ষহীন, সেই এখন গ্রাস করেছে তোমায়,
যে সংঘর্ষে নেই কোনও দয়ার আশ্বাস, তাতেই এখন এক কুশীলব তুমি।
তবুও হৃদয়ে গ্রন্থি রেখে প্রবল রাগের, যেও না মহান নগরীতে,
উতুর সম্মুখে খুলে ফেলো তাকে,
তালগাছের তন্তুর মতো সেইসব খুলে যাক, গ্রন্থিমুক্ত হোক পেঁয়াজের মতো,
সামনে এগিয়ে যাও, যখন মহান দেব আন্নু বসবেন যখন পারলৌকিক ভোজে।
যেখানে বসে থাকে যাজকেরা বিভিন্ন স্তরের,
বসে থাকে প্রকৃত সত্তা যারা,
সেই স্থান, যেখানে আছেন তোমার পিতা এবং ঊর্ধ্বতন সমস্ত পুরুষ তাঁর,

আছেন তোমার মা, ভগিনীরা, আছেন ভ্রাতারা তোমার,
তোমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু যারা, তোমার অতীব নিকট।
এনকিদু, বন্ধু তোমার, তোমার সহচর সেই যুবক-পুরুষ।
সেই মহান নগরীতে বাস করেন প্রশাসক এবং রাজারা,
সৈন্যদলের নিয়ন্ত্রক যারা, সেনাপতি
যখন সেই মহান নগর আরালিতে তুমিও অধিবাসী হবে
নিজস্ব বাসগৃহ থেকে ভগিনীও আসবে চলে তোমার নিকটে।
ভ্রাতারাও আসবে চলে তাদের আবাস থেকে,
আসবেন বয়োজ্যেষ্ঠরা,
যারা যারা তোমার আপন।
হতাশাগ্রস্ত হোয়ো না, হোয়ো না দুর্বল,
কেননা তোমাকে গণ্য করা হবে আনুন্না বলে,
তুমিও মর্যাদা পাবে উপদেবতার,
নিযুক্ত হবে তুমি পাতালের প্রশাসক রূপে,
বিচার করবে তুমি, শোনাবে আদেশ,
যে কথাই বলবে তুমি, গুরুত্বে সমান হবে
নিনগিশজিদা আর দুমুজির কথার।”
জেগে উঠলেন গিলগামেশ,
নিশ্চিত স্বপ্ন ছিল এটা, মাথাটা ঝাঁকিয়ে তিনি ভাবেন তাঁর মনে,
চোখ ঘষেন তিনি হাতে, চারিদিকে নিস্তব্ধতা যেন পরিত্যক্ত আশপাশ থেকে।
স্বপ্ন …
স্বপ্ন সেই …
কুল্লবের রাজা গিলগামেশ,
উজ্জ্বল পর্বতের নায়ক,
উরুকের প্রভু, প্রিয়পাত্র দেবতাদের
নিজেই পরামর্শ নেন এক প্রাজ্ঞ বৃদ্ধের –

“দেবী নিনসানের গর্ভে জন্ম আমার,
আমার পিতা শুদ্ধতম লুগালবান্দা
আমার নিজস্ব দেব এনকি, প্রভু নুদিম্মাদ।
আমাকে মানায় কি ভয়ের তাড়সে কাঁপা শিশুদের মতো
আশ্রয় খুঁজে নিতে মায়ের জানুতে?
হস্তহীন, পদহীন নামতার, জানা নেই যার
কীভাবে মানুষকে রেহাই দিতে হয়,
আমার স্বপ্নে এসে গেছে সে।
সেই স্বপ্নেই দেব নুদিম্মাদ বলেন
এনলিল যা যা বলেছিলেন আগে।[2]

প্রাজ্ঞ বৃদ্ধটি সেই, যার কাছে পরামর্শ চেয়েছিল গিলগামেশ, বলে—
“আপনার চোখে জল কেন রাজা?
কী এমন কারণ আছে তাঁর?
এমন মানুষ তো কোনও আসেনি অদ্যাবধি
মৃত্যু অক্ষম যাকে অধিকারে নিতে।
যেদিনই মানুষের রোপন হয় বীজ,
সেদিনই লেখা হয়, একদিন মুছে যাবে সে।
এমনকি একজন মল্লবীরও অসহায় হয় জালে বন্দি হলে।
গভীর জলের মাছ হয়তো সুস্থির থাকে,
তবুও ধীবরের জাল এসে ঘিরে ফেলে তাকে।
এমন মানুষ নেই, যেই হোক না কেন,
পাতালের মৃত্যুপুরী থেকে আবার উঠে আসতে পারে।
সেই আদিম যুগ থেকে কেউ কি দেখেছে এমন?
আপনার সাথে ভবিতব্য মেলে,
এমন কোনও রাজা আসবে না কোনওদিন।
নামের অধিকার পেয়েছে যে সমস্ত মানুষ,
কে আছে এমন, পরিণতি যার আপনার মতো?
আপনার অপেক্ষায় আছে পাতালের প্রশাসক পদ,
যা যা বলবেন মুখে, সমস্তই সমান গুরুত্ব পাবে
নিনগিশজিদা আর দুমুজির সাথে।”
অতঃপর, বাস্তুকার নির্মাণ করলেন সমাধিভবন তাঁর,
তাঁর চারপাশে আবর্তন করতে করতে
তাঁর নিজস্ব দেব এনকি দেখালেন তাকে
কোথায় মিলবে তাঁর স্বপ্নের সমাধান যত,
সেই দৃষ্টি আছে বলে রাজার কুকুর তার সমাধান করে,
মানুষেরা নেহাত নাকাল।
রাজা নগরে নিযুক্ত করলেন শ্রমজীবীদল,
ঘোষক মাঠে মাঠে বাজাল তার ঘোষণার শিঙা—
“হে উরুক, জাগো, খুলে দাও ইউফ্রেতিসের মুখ,
হে কুল্লব জাগো, ইউফ্রেতিসের জল শূন্য করে দাও।”
উরুকের প্রাপ্য ছিল প্রবল প্লাবন,
কুল্লবের পাওনা ছিল কুয়াশা গহন।
এক মাসও নয়,

দশদিনও নয়। এমনকি নয় পাঁচদিনও,
তারা ভেঙে দিল ইউফ্রেতিসের বাধ, জলশূন্য করে দিল তাকে,
নুড়িগুলো বিস্ময়ে চেয়ে রইল সূর্যের দিকে।
নদীর গর্ভের ভূমিও অবশেষে চৌচির হল শুষ্ক হয়ে গিয়ে।
নির্মাণ করাল সে প্রস্তরের সমাধি ভবন,
পাথরের দেওয়াল,
প্রবেশের প্রস্তরদ্বার,
ফলকগুলো যার সোনা দিয়ে মোড়া।
বিশাল সব পাথরের ফলক সে ঢুকিয়ে দিল ভিতরে,
যাতে ভবিষ্যতে কেউ বের না করতে পারে
কোথায় রয়েছে সে।
এইভাবে রাজা গিলগামেশ
উরুকে স্থাপন করল এক সুরক্ষিত ঘর।
প্রিয়তমা রাণী তার, প্রিয়তম তনয়,
অতি প্রিয় গায়ক, সূপকার,
তার পছন্দের কেশকার, ভৃত্যেরা যত,
যাবতীয় দ্রব্য যা যা তিনি পছন্দ করেন,
সমস্ত রাখা হল যথাযথ স্থানে
যেন উরুকের বুকে প্রাসাদের পর্যালোচনা হবে।
গিলগামেশ, দেবী নিনসানের তনয়
সাজিয়ে দিল আতিথ্য-উপহার একে একে
এরেশিগাল, নামতার, দিম্পিকুজ,
বিত্তি, নিনগিশজিদা আর দুমুজির জন্য।
মহার্ঘ্য উপহার সব সাজিয়ে রাখল সে
তৃপ্ত হন যাতে সমস্ত দেবতা।
যাবতীয় মৃতেরাও যাতে সন্তুষ্ট হয়,
তাদের জন্যও রাখা হল উপহার সব।
দেবী নিনসানের পুত্র গিলগামেশ
ধীরে ধীরে শুয়ে পড়ল তার শেষ শয্যার উপরে,
জলধারা উৎসর্গ করল সে
জীবনের শেষ নিবেদন রূপে।
নগরবাসীরাই নিয়ে গেল তাকে সমাধি ভবনের ভিতরে,
তারাই রুদ্ধ করে দিল প্রবেশের দ্বার,
সমস্ত জল মুছে ফেলল তারাই,
অনন্ত বিশ্রামের স্থলে যেন না থাকে একবিন্দু ছোঁয়া।
তারপর রাজা গিলগামেশের শোকে

তারা ভেঙে ফেলল নিজেদের দাঁত,
উপড়ে ফেলল সমস্ত চুল।
উরুকের নাগরিক যত
সামলাতে পারল না নিজেদের,
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নোংরা করে ফেলল পোশাক।
রাজা গিলগামেশের শোকে
তাদের আবেগ যেন রুদ্ধ হয়ে গেল,
হৃদয় আক্রান্ত যেন পাথরের ভারে।
যে সমস্ত মানুষের ভাগ্য তাদের নাম এনে দেয়,
প্রাচীন যুগ থেকেই স্থাপন করা হয় তাদের স্মৃতির প্রতিমা,
দেবতার মন্দিরে স্ত্রোত্রপাঠে তাদের নাম আসে চলে,
কিভাবে তাদের নাম উচ্চারিত হয়, কেউ সেটা ভোলে না কোনওদিন,
দেবী আরুরু, এনলিলের জেষ্ঠ্যা ভগিনী
তার নাম যাতে অবিচ্ছিন্ন থাকে,
তাই মানুষকে এনে দেন সন্ততির ডালা,
তাদের মূর্তি গড়া হয় সেই প্রাচীন যুগ থেকে,
তাদের নাম এখনো উচ্চারিত হয় দেশে।
হে গিলগামেশ, দেবী নিনসানের তনয়,
তোমার সাথে সাদৃশ্য আছে, এমন রাজা জন্ম নেয়নি কোনওদিন
কোথাও পাওয়া যাবে না খুঁজে, এমন কারও অস্তিত্ব নেই।
হে গিলগামেশ, কুল্লবের প্রভু, তোমার কীর্তন সে বড়ই মধুর।

 

দ্বাদশ ফলক সমাপ্ত।

_________________

[1] এখানে বেশ খানিকটা অংশ আর উদ্ধার করা যায়নি

[2] পরবর্তী দীর্ঘ অংশ আগেই উদ্ধৃত এনলিলের বক্তব্যের হুবহু এক। তাই আর সেই অংশটি উদ্ধৃত করা হল না।