Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

তিনটি অণুগল্প

তিনটি অণুগল্প: জাকারিয়া তামর | অনুবাদ: অদ্বয় চৌধুরী

জাকারিয়া তামর

 

অনুবাদ: অদ্বয় চৌধুরী

 

জাকারিয়া তামর সিরিয়ার দামাসকাসে ১৯৩১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আরবি ছোটগল্পের জগতে জাকারিয়া এক অতি উল্লেখযোগ্য নাম। জাকারিয়ার শৈল্পিক সত্তার আয়না হল মূলত তাঁর তীক্ষ্ণ স্যাটায়ারধর্মী লেখা যা সিরিয়ার আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা ও নিয়ম-নীতির অন্তঃস্থল পর্যন্ত তুলে ধরে স্বচ্ছ আয়নায়। সেরকমই এক স্যাটায়ারধর্মী গল্পগ্রন্থ হল ‘Breaking Knees’, যে বইটিতে মূল আরবি থেকে গল্পগুলি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ইব্রাহিম মুহাবি। ২০০২ সালে প্রকাশিত এই গ্রন্থের গল্পগুলি এমন এক পৃথিবীতে বহন করে নিয়ে যায় পাঠকদের যে পৃথিবী যেমন কৌতুকপূর্ণ তেমনই ভয়াবহ: অবৈধ সম্পর্ক, বহুগামিতা, নারীদের অবদমিত যৌনাকাঙ্ক্ষা, তাদের অবদমিত জীবনযাপন, দুর্নীতি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, স্বৈরতান্ত্রিক শাসন, রাষ্ট্রযন্ত্রের অত্যাচার— এই সবকিছুই তাঁর আপাতবিনোদক লিখনশৈলীর খোলসের ভিতরে লুকিয়ে আছে।

এখানে তিনটি শিরোনামহীন অণুগল্পের ভাষান্তরের প্রয়াস করা হয়েছে যেগুলি মূলত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সাধারণ নারীর অবস্থানকে নিরাবরণ রূপে উপস্থাপিত করে।

 

এক স্বামী-স্ত্রী অন্ধকার রাতে শুতে যাওয়ার তোড়জোড় করছিল। স্ত্রী নরম গলায় তার স্বামীকে বলে, ‘আমার জানা সব মেয়েরাই রাত ভালোবাসে। কিন্তু আমি সহ্য করতে পারি না। কেন পারি না আঁচ করতে পারো?’

 

‘কারণ তুমি রাতের বেলা উপুড় হয়ে শুতে পছন্দ করো, কিন্তু আমি তোমায় চিৎ করে শোয়াই’, কোনও রাখঢাক না রেখেই স্বামী উত্তর দেয়।

স্ত্রী তখন উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, ‘কেন তুমি আমাকে রাতের মাধুর্য বোঝানোর চেষ্টা করো না? আমি একজন নারী, যে কোনও চরম অভিমত পোষণ করে না, কিন্তু যে যুক্তি-প্রমাণ সহ মতামত শুনতে ভালোবাসে।’

হাঁপ ধরে যাওয়া ভাঙা গলায় তার স্বামী তাকে রাত সম্বন্ধে বলতে লাগে। বাইরে ঠান্ডা হাওয়া বইছিল; স্ত্রী তার স্বামীকে আরও বেশি জড়িয়ে ধরে। হিটারে কাঠ পুড়ে শেষ হয়ে গেছে এবং আরও কাঠ দেওয়া জরুরি— স্ত্রী জানায় তার স্বামীকে। কিন্তু স্বামী ওঠে না। বরং সে ওইভাবেই, ওই অবস্থাতেই শুয়ে থাকে। তার মনে হয়, সে-ই যেন কাঠ আর তার স্ত্রী যেন হিটার।

***

 

হাসান অপেক্ষা করছিল মনের মতো বউয়ের খোঁজে। তার বউ হবে একজন আনকোরা অনভিজ্ঞ নারী, যাতে তার জীবনের প্রথম ও শেষ পুরুষ সেই হতে পারে। শেষ পর্যন্ত বউ সন্ধান প্রক্রিয়ার ইতি ঘটে। সে বিয়ে করে এমন একজনকে যার নির্বাচন নিয়ে সে প্রবল আত্মবিশ্বাসী।

প্রথম রাতে তারা দুজনে একা হওয়া মাত্র তার বউ চটজলদি হাসানের জামাকাপড় খোলার কাজে হাত লাগায়। খানিক বাদে হাসানকে হাঁ করে দেখতে দেখতে চমকে গিয়ে চিৎকার করে ওঠে। ‘আল্লার অশেষ কৃপা! আমি ভাবতাম কড়ে আঙুল থাকে শুধুমাত্র হাতে বা পায়েই। এখন দেখছি আমি ভুল জানতাম।’

হাসানের হাসিতে ঝরে পড়ে তৃপ্তি আর গর্ব।

***

 

বেশ আরাম করে অন্ধকার সিনেমা হলে বসে ছিল ফতেমা। টানটান সিনেমাটায় ডুবে গেছিল সে। একটা লোক এসে তার পাশের চেয়ারে বসে। খানিক বাদেই, ফতেমাকে অবাক করে দিয়ে, লোকটি ফতেমার স্কার্টের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে সোহাগ করতে থাকে। ফতেমা বাধা দিতে গেলে লোকটি ফিসফিস করে জানায় যে অপবাদের বোঝা না বইতে চাইলে তার চুপ থাকাই ভালো। অপবাদ আসলে একজন পুরুষের থেকে একজন মহিলাকে অনেক বেশি আহত করে। ফতেমা জানে।

ফতেমা থেমে যায়। তারপর হঠাৎ সে লোকটার দিকে হাত বাড়িয়ে তাকে অনুভব করতে শুরু করে তার ভয়াতুর অথচ লোভী, অভিজ্ঞ আঙুল দিয়ে। সে চেষ্টা করে তার হাঁপধরা বুকের ধুকপুকুনিকে যতটা সম্ভব চেপে রাখতে।

লোকটির আঙুলগুলো থমকে যায় এবার। সে এক ঝটকায় নিজের হাতটা সরিয়ে নেয়, যেন কারেন্টের শক লেগেছে। হঠাৎ কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে পড়েছে এমন ভাব করে লোকটা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে, তারপর দৌড়ে বেরিয়ে যায় হল থেকে।

ফতেমা আবার সেই টানটান সিনেমাটায় ফিরে যায়, কিন্তু এখন আর অতটা টানটান লাগে না গল্পটা।