Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

জেল থেকে ফসলের খেত, বুরারি এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

যখন বৃষ্টি। যখন শীত অসম্ভব রকম। যখন গত পনেরো বছরের শীতলতম মুহূর্ত বেছে বেছ কুড়ি একুশের সীমান্তকেই বাছে। সরকারি নেক্সাসে গা মেলায় ঋতু। চেপে ধরে…

কিন্তু এহ বাহ্য। লড়কে লেঙ্গে। বুরারি সেই লড়াইয়ের প্ল্যাটফর্ম। বুরারি মানে তো ওপেন জেইল। উন্মুক্ত কারাগার। রামলীলা ময়দান, যন্তরমন্তর বদলে যখন প্রতিবাদের মঞ্চ পরিকল্পনামাফিক সাইড করে দিয়ে পাঠানো হয় তুলনায় প্রচারের আলোর বাইরে থাকা বুরারি অঞ্চলে, কৃষক আন্দোলন কোথাও একটা ধাক্কা খেয়েছিল অবশ্যই। রাজধানীর মূল প্রাঙ্গণে যে সোচ্চার, যে তীব্রতা সম্ভব, শহরতলিতে, সীমান্তে তা হয় না। কিন্তু এই আন্দোলন অন্যরকম। গলার জোর না, ইস্যুই আসল। যুক্তিই আসল। কালা কানুনের বিরুদ্ধে যেখানে প্রেক্ষিত, প্ল্যাটফর্ম সেখানে ম্যাটার করছে? না বোধহয়।

বুরারির কথা বলছিলাম। বুরারির নিরঙ্কারি অঞ্চলের খোলা একটা প্রান্তর। দিল্লির এক সেবাদার দিন দশেক আগে একটা জাল দিয়েছিলেন। ফরিদকোট থেকে আসা জগদীপ সিংরা সেই জাল টাঙিয়ে ভলিবল খেলছিলেন। শক্তি পান এত? শীত, মাথার উপর ছাদের অভাব, অনিশ্চয়তা, এসবের পরেও? ’কী করব? আমরা চাষিরা বসে থাকতে পারি না। আমাদের তো কিছু না কিছু করতেই হবে। সৃষ্টিশীলতা আমাদের রক্তে আছে।’

এই সৃষ্টিশীলতারই অন্য এক গল্প বলতে এত সব কথা। বুরারির ওই খোলা প্রান্তরে বারো দিন আগেই পেঁয়াজের বীজ পুঁতেছিলেন গুরুদেব সিং মাঙ্গারের মতো কৃষক। না হোক সুজলা, সুফলা, চাষির মন ঠিক পেয়ে যাবে জমি, মাটি। এরপর? ‘ওই পেঁয়াজের বীজ থেকে গাছ হতে ষাট দিন লাগবে। অর্থাৎ, আমরা ধরে নিন অন্তর দুমাস তো আছি। সরকার যদি না মানে, তারও বেশি। আমরা তো নড়ছি না। ফসল আমাদের সঙ্গেই বড় হোক।’

মাঠের একদিকে বছর আটান্নর জসকরণ সিং কাহান এবং তাঁর পরিবার আছেন। পাঞ্জাবের ফিরোজপুর থেকে আসা মানুষটি পালং, টম্যাটো, পেঁয়াজ, ভুট্টা পুঁতেছেন। গাছ হচ্ছে। পনেরোটা মতো ভুট্টাগাছ। অন্যান্য সব্জির আরও দুটো রো। জসকরণ বলছেন, একটু গরম পড়লেই অন্যান্য আরও সব্জির সঙ্গে ধান লাগাবেন। যাতে খাবারের জন্য অন্য কোথাও যেতে না হয়।

বৃষ্টি এখানেই আশীর্বাদ হয়ে আসছে। একটা সময় ভয় ছিল। এখনও যে নেই, তা না। বৃষ্টির কথা ভেবেই তাঁবু খাটানোর জায়গার আশেপাশে ট্রেঞ্চ খুঁড়ে রেখেছিলেন কৃষকেরা। যাতে জল সেইসমস্ত ট্রেঞ্চে জমে তাঁবু অবধি না আসতে পারে। একটু বড় তাঁবু হলেই সমস্যা হচ্ছে। ট্রেঞ্চ ভেসে জল ঢুকছে। নিচে কাপড় রেখে তাঁবু খাটানোয় বৃষ্টি সবকিছু ভাসিয়ে দিচ্ছে জসকরণ, গুরুদেবদের। মাদুর, শতরঞ্চি ভিজে যাচ্ছে। অসম্ভব জোলো ঠান্ডা হাওয়ায় উপরের তাঁবুও উড়ে যাচ্ছে। চ্যালেঞ্জ। জীবন। বাঁচা।

দিল্লির কিছু সেবাদার আবারও আশ্রয় হচ্ছেন। তাঁবু উড়ে গেলেই তাঁরা পাঠিয়ে দিচ্ছেন কাঠ, কাপড়, অ্যাসবেস্টস, পেরেক, হাতুড়ি। তাঁবু তৈরি হচ্ছে। আশ্রয় তৈরি হচ্ছে। ভেঙে যাওয়া লঙ্গরখানা তৈরি হচ্ছে আবার। বছর আটান্নর জসপাল সিং বলছেন, ‘আমরা এখন আর বৃষ্টিতে রান্না করতে ভয় পাই না।’

এবং সেইসব বৃষ্টির আরাম বাঁচাচ্ছে ফসলকেও। বুরারির নিরঙ্কারি সমাগম গ্রাউন্ড তখন আর স্রেফ বিক্ষোভ প্রদর্শনের মঞ্চ না। বুরারি নতুন জুঁই, সূর্যমুখীদের আলোয় দোলা এক মঞ্চ। কথা শুনতে হবে শাসককে। এত শক্তি, এত ইচ্ছে, এত সৃষ্টিশীলতা যাঁদের তাঁদের কথা একদিন না একদিন শুনতেই হবে শাসককে।

ততদিন, ওই যে শুরুতেই বললাম গুরুদেব সিং মাঙ্গারের কথাটা, ‘আমরা তো নড়ছি না!’