কৃষকদের সঙ্গে সারা দেশ

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

যত দিন যাচ্ছে, নতুন নতুন দিক থেকে সমর্থন আসছে কৃষক আন্দোলনের পেছনে। স্বাভাবিক। ভারতের কৃষক জেগেছে। ভারত কী করে ঘুমিয়ে থাকে! আজ সেরকমই কয়েকটি খবর।

ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় যে সমাজকর্মীরা বন্দি, তাঁরা কৃষকদের সমর্থনে বিবৃতি পাঠালেন। বিবৃতিতে তাঁরা জানালেন, শারীরিকভাবে অংশ না নিতে পারলেও তাঁরা একদিনের অনশন পালন করছেন জেলে, কৃষকদের সমর্থনে। কারণ কৃষকদের দাবি যথাযথ, যুক্তিপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত। সরকারের করাল পরিকল্পনা জনবিরোধী। কৃষি-আইনগুলি কৃষকদের কর্পোরেটের দাসে পরিণত করবে। তা কৃষকের জমি কার্যত আইনি উপায়েই কেড়ে নেবে এবং কৃষকদের আম্বানি-আদানির দাসত্ব করতে বাধ্য করবে। এই বিবৃতিতে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করার পরিবর্তে শীতের রাতে জলকামান ছোড়ার বা আন্দোলনে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টির সরকারি চেষ্টার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে জনতার রক্তঘামে তৈরি সরকারি নিগম পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। একদিকে পুঁজিপতিদের ধার-কর-শাস্তি-জরিমানা সব মকুব করে দিয়ে অন্যদিকে সাধারণ মানুষের উপর যে সেসব চাপানো হচ্ছে— তারও বিরোধিতা করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, গৌতম নওলখা ও ফাদার স্ট্যান স্বামী বদ্ধপরিকর অনশন করতে। কিন্তু তাঁদের এই প্রতীকী অনশনে অংশ নিতে বারণ করা হচ্ছে তাঁদেরই স্বাস্থ্যের কারণে। কিন্তু বাকিরা অবশ্যই অনশন করবেন।

এই বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে সুধীর ধাওয়ালে, আনন্দ তেলতুম্বডে, রোনা উইলসন, হানি বাবু, সাগর গোর্খে, রমেশ গাইচর, মহেশ রাউত, অরুণ ফেরেরা, ভারনন গোঞ্জালভেস, ফাদার স্ট্যান স্বামী ও গৌতম নওলখার পক্ষ থেকে।

অন্যদিকে ইলেক্ট্রিসিটি এমপ্লয়িজ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া কৃষকদের প্রতি সমর্থনসূচক চিঠি পাঠিয়েছে। তারা কৃষি আন্দোলনের ব্যাপ্তির প্রশংসা করেছে। জানিয়েছে, তাদের বিবৃতির সঙ্গে CTU (কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন)-দের সংযুক্ত বিবৃতিও পাঠানো হচ্ছে। জানানো হয়েছে, শ্রমিকরা সর্বদা কৃষকদের পাশেই আছে। ইলেকট্রিসিটি (সংস্কার) বিল, ২০২০-ও প্রত্যাহার করা প্রয়োজন, এই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ইউনিয়নের সব সদস্যদের তহবিলে অর্থদান করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যে অর্থ যাবে কৃষকদের সাহায্যে। চিঠিটি এখানে সংযুক্ত করা হল।

দিল্লির সিংঘু সীমান্তে এসে পৌঁছেছেন ‘মজদুর অধিকার সংঘর্ষ মঞ্চ’-এর কর্মীরাও। এর আগে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে তাঁরাও দিল্লি অভিযান করেছিলেন নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে। আজ তাঁরা আবার এসেছেন দিল্লিতে কৃষকদের প্রতি সমর্থন জানাতে। তাঁরা বলছেন, কৃষি আইন ও শ্রম কোড-উভয়ের মধ্যেই অশনিসঙ্কেত দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা।

অন্যদিকে, দিল্লির চিকিৎসক সমাজের অনেককেই দেখা যাচ্ছে ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প করতে দিল্লি সীমান্তে। তাঁরা অবশ্য বলছেন, সীমান্তের দিল্লির দিকটায় মেডিক্যাল ক্যাম্প সংখ্যায় বেশি। হরিয়ানায় দিকটায় কম। কারণ গাড়ি নিয়ে সীমান্ত পেরোতে দেওয়া হচ্ছে না৷ লিটার লিটার ওষুধ কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যাওয়াও সমস্যার। কিন্তু সে চেষ্টাও করছেন অনেকে। নিচের ছবি দুটিতে দেখা যাচ্ছে দুজন চিকিৎসক, ডঃ সিদ্ধার্থ (হিন্দু রাও হসপিটাল) ও ডঃ সোনু (এলএইচএমসি) কাঁধে করে ওষুধ বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সীমান্তের ওপারের চাষিদের জন্য।

ডঃ সিদ্ধার্থ তারা জানাচ্ছেন:

আজ আমার বন্ধু ডঃ হরজিত, যে কুন্ডলি সীমান্তের হরিয়ানার দিকটায় মেডিক্যাল ক্যাম্প করছে, আমাকে ফোনে জানতে চাইল আমার কাছে কাফ সিরাপ আছে কিনা৷ ১০ লিটার কাফ সিরাপ ছিল। বয়ে নিয়ে গেলাম। কিসান কৃতি ইউনিয়ন আমাকে চা আর বিস্কিট খাওয়াল। সমাজকর্মী ডঃ অপর্ণার অনুরোধে একটা স্থায়ী জায়গাও দেওয়া হল আমাদের ওষুধপত্র রাখার, যাতে রোজ লিটার লিটার কেজি কেজি ওষুধ না বইতে হয়।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4596 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

  1. আমি কর্মসূত্রে প্রবাসী বাঙালী। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সরাসরি আঁচ আমার নিজের উপর না পড়লেও তার ভয়াবহতা সম্পর্কে বুঝতে পারছি।

    আমার নিজের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত ভাবে এবং এখানকার টরন্টো বেঙ্গলী ড্রামাগ্রুপের পক্ষ থেকে সমস্ত আন্দোলনরত কৃষকদের জন্য সমর্থন আর সংগ্রামী অভিনন্দন রইলো।
    তাঁদের আন্দোলনের সাফল্য কামনা করি এবং এই জনবিরোধী কৃষিবিলের প্রত্যাহারের দাবীকে আমরাও সমর্থন জানাই।

আপনার মতামত...