Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

বিশ্বের দরবারে ভারতের মুখ ম্লান হয়ে গেল দাবাসংস্থার অপদার্থতায়

প্রবুদ্ধ ঘোষ

 



দাবা-প্রশিক্ষক, সাহিত্য গবেষক

 

 

 

 

সম্প্রতি ভারতীয় দাবার মুখ্য পরিচালন সমিতির অপদার্থতায় মুখ পুড়ল দেশের। দাবার একটি আন্তর্জাতিক শীর্ষস্তরের প্রতিযোগিতা আয়োজনে একাধিক গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত হল নিখিল ভারত দাবা সংস্থার পরিচালন সমিতি। স্বনামধন্য দাবাড়ুরা ক্ষোভ উগরে দিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে

 

ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্রীড়ার পরিচালনা বিভাগের শীর্ষস্তরে অযোগ্যদের ভিড় কোনও নতুন বিষয় না। বারবার তারা অভিযুক্ত হয়েছে। কখনও আর্থিক দুর্নীতির দায়ে, কখনও লিঙ্গবৈষম্যমূলক আচরণের জন্য, কখনও শাসকদলের সঙ্গে অতিঘনিষ্ঠতার জন্য আবার কখনও পরিকাঠামোগত অনুন্নতির দায়ে। সম্প্রতি ভারতীয় দাবার মুখ্য পরিচালন সমিতির অপদার্থতায় মুখ পুড়ল দেশের। দাবার একটি আন্তর্জাতিক শীর্ষস্তরের প্রতিযোগিতা আয়োজনে একাধিক গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত হল নিখিল ভারত দাবা সংস্থার পরিচালন সমিতি। স্বনামধন্য দাবাড়ুরা ক্ষোভ উগরে দিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে। এআইসিএফের শীর্ষ পদাধিকারী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমে উঠেছে।

দাবার গ্রাঁ প্রি প্রতিযোগিতা পুরুষ ও মহিলা দুটি বিভাগেই আয়োজিত হয়। আমন্ত্রিত শীর্ষস্থানীয় সেরার সেরা দাবাড়ুরা এতে অংশ নেন। গ্রাঁ প্রি প্রতিযোগিতার ফলাফলের ভিত্তিতে ক্যান্ডিডেটস দাবায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যতা অর্জন করেন দাবাড়ুরা। আর, ক্যান্ডিডেটসের বিজয়ী বিশ্বখেতাবজয়ীকে প্রত্যাহ্বান জানান। ২০২২-২৩ মরসুমে তিনটি গ্রাঁ প্রি হয়ে গেছে, একটি মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে সাইপ্রাসে। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত গ্রাঁ প্রি থেকে নাম তুলে নিয়েছেন কাজাখস্থানের জানাসায়া আব্দুমালিক এবং জার্মানির এলিজাবেথ পেহৎজ।

গ্রাঁ প্রি-র আয়োজক ভারতীয় দাবা সংস্থার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন গ্র্যান্ডমাস্টার জানাসায়া আব্দুমালিক! জানাসায়া আব্দুমালিক বিশ্বের প্রথমসারির মহিলা দাবাড়ুদের মধ্যে অন্যতম। চার বছর আগে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জন করেছেন। কী লিখেছেন তিনি? “I can’t imagine if a top male player was arriving to the tournament and no one is there to pick him up. That was not a good start.” জানাসায়া আব্দুমালিককে স্বাগত জানাতে ভারতীয় দাবা সংস্থার একজনও উপস্থিত ছিলেন না!! জানাসায়া মরিয়া হয়ে যোগাযোগ করেছিলেন ভারতীয় দাবাসংস্থার ‘মালিক’দের সঙ্গে। দেড় ঘণ্টা কেটে গেল তবু তাঁরা কেউ একজনও গ্র্যান্ডমাস্টারের মেসেজ দেখবারও সময় পেলেন না? তিনি মহিলা বলেই কি এমন আচরণ? আব্দুমালিকের অভিযোগ, তাঁকে যে হোটেলে থাকতে দেওয়া হয়েছিল, তার নিরাপত্তা যথেষ্ট ছিল না। তিনি সুরক্ষিত, নিশ্চিন্ত বোধ করেননি। হোটেলের যে কক্ষে তাঁকে থাকতে দেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে বাইরের কোনও দৃশ্যে তিনি আতঙ্কিত বোধ করেছিলেন। “I could see a big landfill from my window where they were putting on a fire or something of that sort. Leaving the hotel is difficult because of its location. The hotel staff told me not to go out because it could be dangerous.” দিল্লির আবহে এই দৃশ্য অস্বাভাবিক না, এমনকি ভিড়ভাট্টা হট্টগোল ইত্যাদি রোজকার ঘটনা। কিন্তু, খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে, গ্রাঁ প্রি দাবায় অংশ নিতে এসেছিলেন জানাসায়া। এই মুহূর্তে মহিলা দাবাড়ুদের বিশ্ব-র‍্যাঙ্কিংয়ে তিনি দ্বাদশতম। দুবার বিশ্ব যুব দাবার মহিলা বিভাগের বিজয়ী। কাজাখস্থানের মহিলা দাবাদলের প্রতিনিধিত্ব করেন কিশোরী বয়স থেকে। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত গ্রাঁ প্রি-র আমন্ত্রিত দাবাড়ু ছিলেন তিনি। শীর্ষস্তরের সমস্ত দাবা প্রতিযোগিতায় আমন্ত্রিত দাবাড়ুরা সর্বোচ্চ মানের আতিথেয়তা পান। বিশ্ব দাবাসংস্থার (FIDE) নিয়মানুযায়ী আয়োজকরা প্রতিযোগীদের সর্বোত্তম সুবিধে দিতে বাধ্য। মানসিক ও শারীরিক স্থিতি সামান্য বিপন্ন হলেও নিজের সেরাটা তাঁরা দাবার বোর্ডে দিতে পারবেন না। ওই হট্টগোল, বাইরের দৃশ্য জানাসায়ার কাছে অস্বস্তিকর। আয়োজকরা এমন পরিস্থিতিতে তাঁকে রাখতে পারেন না, সেটা নিয়মবিরুদ্ধ। অথচ, তাঁরা উদাসীন রইলেন।

জানাসায়া নাম তুলে নেওয়ার পরের দিন এলিজাবেথ পেহৎজ অব্যবস্থার কারণ দর্শিয়ে আঙুল তোলেন আয়োজক এআইসিএফের বিরুদ্ধে। জানাসায়ার স্বদেশীয় বিবিসারা আসাবুয়েভা প্রথমে জানাসায়াকে সমর্থন করে সমবেত প্রতিবাদপত্রে সই করলেও, পরে অবস্থান পাল্টে ফেলেন। পেহৎজ তা করেননি। জানাসায়ার পাশে থেকেছেন। ফিডেকে চিঠি লিখেছেন প্রতিযোগিতাটি আপাতত স্থগিত রাখার জন্য— উপযুক্ত পরিবেশে ফের শুরু করা যাবে। জানাসায়া নাম তুলে নেওয়ার পরে প্রতিযোগিতার পেয়ারিং (যে ক্রমে দাবাড়ুরা পরস্পরের বিরুদ্ধে খেলবেন) বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রত্যেক দাবাড়ু সমসংখ্যক সাদা ও কালো ঘুঁটিতে খেলার সুযোগ পাবেন না, তা স্পষ্ট হয়ে যায়। পেহৎজ লেখেন, “নতুন পেয়ারিং-এ যে সমাধানসূত্র বের করা হল, তাতে সাদা-কালো ঘুঁটি নিয়ে খেলার স্বচ্ছ বিভাজন হল না। আমি নিজে ৬টা ম্যাচে সাদা আর ৪টে ম্যাচে কালো পাচ্ছিলাম। কিন্তু অন্য কয়েকজন দাবাড়ু তাতে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। আমি চেয়েছিলাম, প্রত্যেক দাবাড়ু যাতে স্বচ্ছ ও সমান সুযোগ পান।” প্রতিযোগিতা শুরুর আগেই যে প্রচণ্ড অনিশ্চয়তা ও মানসিক ধকল সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে, তার জন্যই নাম তুলে নেন পেহৎজ। জার্মান দাবাসংস্থা ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেয়। দাবাড়ুদের হোটেলের যে কক্ষে থাকতে দেওয়া হয়েছিল, তা যথাযথ ছিল না। হোটেলে নির্দিষ্ট কক্ষের অপেক্ষায় বহুক্ষণ বসে থাকতে হয়েছে তাঁদের। ফিডের পক্ষ থেকে একজন সুদক্ষ ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়, যাতে প্রতিযোগিতার পূর্বে এই ন্যূনতম ব্যবস্থাগুলি খতিয়ে দেখেন তিনি। প্রতিযোগীর সামান্যতম অসুবিধে হলে ফিডের ওই প্রতিনিধি তা দ্রুত সমাধান করেন। কিন্তু, এক্ষেত্রে ফিডে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থেকেছে বলে জার্মান দাবাসংস্থার অভিযোগ। ভারতীয় দাবাসংস্থার কর্তাব্যক্তিরা অযোগ্যতার ছাপ রেখেই চলেছেন।

এই অভিযোগগুলি সবিস্তারে লিখে দাবাড়ুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সুসান পোলগার। দাবায় পুরুষ-নারী বৈষম্যকে হেলায় কিস্তিমাত করে সাফল্যের পাহাড়ে চড়েছিলেন যিনি। পুরুষ আধিপত্যকে নিরন্তর প্রত্যাহ্বান জানিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের বহু নারীকে দাবাখেলার সাহস দিয়েছেন। স্পষ্টবক্তা সুসান বলেছেন, “মহিলা গ্রাঁ প্রি-তে যে ঘটনা ঘটল তা রীতিমতো লজ্জার। সমস্ত মহিলা দাবাড়ু যাতে উন্নত ও সুরক্ষিত অবস্থানে থেকে ম্যাচ খেলতে পারেন, মহিলা দাবাড়ুরা যাতে পুরুষ-দাবাড়ুদের সমমূল্যের পুরস্কার পান, লিঙ্গবৈষম্যমূলক সমস্ত আচরণের বিরুদ্ধে যাতে তাঁরা মাথা উঁচু করে প্রতিবাদ জানাতে পারেন, সেইজন্য সব মহিলা দাবাড়ুকে একজোট হতে হবে, একে-অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে। টেনিসে যা সম্ভব হয়েছে, দাবাতেও তা সম্ভব হবে একদিন, আমরা একতা বজায় রাখলেই তা হবে।”

অভিযুক্ত কর্মকর্তারা সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছেন যথারীতি। প্রকারান্তরে আব্দুমালিকের ওপরে দোষ চাপিয়েছেন নিজেদের দোষ ঢেকে। আব্দুমালিকের উড়ান নাকি নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে দিল্লিতে পৌঁছে গেছিল। হোটেল-সংক্রান্ত অব্যবস্থা নিয়েও দুর্বল যুক্তি সাজিয়েছেন। তবে, এআইসিএফের সচিবের সাফাই যে ধোপে টেকেনি তার প্রমাণ ফিডের সভাপতির বিবৃতি। আর্কাদি দর্কোভিচ বিবৃতি দিয়েছিলেন যে, তাঁরা ক্ষমাপ্রার্থী এআইসিএফের তরফে এমন নজিরবিহীন অব্যবস্থার জন্য। বাধ্যত নাম তুলে-নেওয়া দাবাড়ুদের যথাযোগ্য ক্ষতিপূরণ দেবেন বলে জানান তিনি। “We understand that this situation has caused great dissatisfaction among the players and has put the tournament in danger. We acknowledge your concerns and frustrations, and we take them seriously. We highly appreciate your openness and would like to assure you that we are committed to addressing the issues that have been raised regarding this tournament and FIDE women events in general. We are also determined to improve the level of communication with the participants.” শেষ মুহূর্তে প্রতিযোগিতা স্থানান্তরিত করার অপারগতার কথা লিখেছেন আর্কাদি। সেইসঙ্গে এও জানিয়েছেন যে, ফিডের পক্ষ থেকে একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রতিযোগিতা শেষ না-হওয়া অবধি দায়িত্বে থাকবেন। আয়োজকদের সঙ্গে প্রতিযোগীদের যে কোনও দ্বন্দ্ব নিরসনে সদাসচেষ্ট থাকবেন। আর, আরেকটি ঘোষণা করতে বাধ্য হন আর্কাদি— “পুরুষ ও মহিলা দাবা প্রতিযোগিতার পুরস্কারমূল্যের ব্যবধান দূর করতে সর্বতোভাবে চেষ্টা করব আমরা।” জানাসায়া আব্দুমালিক, এলিজাবেথ পেহৎজ, সুসান পোলগাররা প্রতিবাদ করে দুটো কাজ করলেন— (১) ক্রীড়াক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের বাস্তবতাকে প্রকাশ্যে এনে মহিলা-দাবাড়ুদের একজোট হওয়ার বার্তা দেওয়া। (২) ভারতীয় দাবা এই মুহূর্তে কিছু ‘অযোগ্য’ ‘ক্ষমতালোভী’ ব্যক্তির চারণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, তা ফের প্রমাণ করে দেওয়া।

ভারতীয় দাবাসংস্থার বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও অনেক। এআইসিএফের শেষ নির্বাচনে (জানুয়ারি, ২০২১) ‘জিতে’ ভরত সিং চৌহান সচিবের পদে পুনর্বহাল হন। কিন্তু এই ‘জিত’-এর সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে অনেক। ২০২০ সালে করোনার জন্য নির্বাচন হয়নি, অথচ মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও পদ আঁকড়ে ছিলেন ভরত সিং।[1] ভারতীয় দাবাসংস্থার সভাপতি ভেঙ্কটরাম রাজা ২০২০ সালের মার্চ মাসে ভারতীয় দাবাসংস্থার সাংবিধানিক ধারা মেনে ভরত সিংকে সচিব পদ থেকে বরখাস্ত করেন। ভরত সিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে বেআইনি টেন্ডার পাশ করানোর এবং দাবাড়ুদের ব্যক্তিগত তথ্য বেসরকারি সংস্থায় পাচার করার। এআইসিএফ-এর শীর্ষকমিটির সদস্যদের অন্ধকারে রেখে ভরত একটি বেসরকারি সংস্থাকে দাবার একটি অ্যাপ বানানোর দায়িত্ব দেন এবং ওই সংস্থাটি ভারতীয় দাবাড়ুদের সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য (দাবাড়ুরা নিবন্ধনের সময় ভারতীয় দাবাসংস্থাকে যেসব তথ্য দেন) হাতানোর অধিকার পেয়ে যায়। ফলে ‘ব্রিচ অফ প্রাইভেসি অ্যান্ড ডেটা থেফট্‌’-এর গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত হন ভরত।[2] ওই একই সময়ে ভারতীয় ক্রীড়াসংস্থা (সাই) এআইসিএফ কমিটির বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের তথা ১০ লাখ টাকা জোচ্চুরির অভিযোগ এনে সভাপতিকে চিঠি লেখে। সভাপতি ভেঙ্কটরাম সচিব ভরতকে নির্দেশ দেন সাইকে টাকা ফেরত দেওয়ার।[3] অন্যান্য আর্থিক তছরুপের অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। বরখাস্তের নোটিশে ভরত সিংয়ের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারী বিবৃতি জারির অভিযোগও করেন ভেঙ্কটরাম রাজা। ২০২১-এর নির্বাচনের পরে রবীন্দ্র ডোংরের নেতৃত্বে ভারতীয় দাবাসংস্থার অপর গোষ্ঠী আদালতে মামলা করে। যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতলে (দুই-তৃতীয়াংশ) সম্পাদক ও সভাপতি পদে আসীন হওয়া যায়, সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ভরত সিংয়ের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী পায়নি। ফলে, জাতীয় ক্রীড়া কোডের নিয়মানুযায়ী রবীন্দ্র ডোংরের সচিব হওয়ার কথা। কিন্তু, প্রভাব খাটিয়ে ভরত সিং নিজের পদ ছাড়তে রাজি ছিলেন না বলে অভিযোগ করেন ডোংরে।[4] সুপ্রিম কোর্ট জুন মাসে যে রায় দিয়েছিল, তাতে ভরত সিংকে পদ ছাড়ার নির্দেশ ছিল ২০২২ সালের ১৪ আগস্টের পরে (যেহেতু সেসময় ভারতে দাবা-অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছিল)।[5] কিন্তু, ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে বসে থাকে ভরত সিংয়ের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী, এমনকি আদালতের নির্দেশের অবমাননা করে বিপনেশ ভরদ্বাজকে অন্তর্বর্তীকালীন সচিব পদে নিয়োগ করা হয়— এমনটাই অভিযোগ ছিল রবীন্দ্র ডোংরেদের।[6] ম্যানুয়েল অ্যারন ভারতীয় দাবাক্ষেত্রে প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক মাস্টার তিনি। ‘চেসমেট’ নামক একটি উচ্চমানের দাবাপত্রিকা সম্পাদন করেন তিনি বিগত চার দশক ধরে। তিনিও ভরত সিং চৌহান গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্বৈরতন্ত্রের অভিযোগসহ জবরদস্তি ক্ষমতা দখল করার অভিযোগ এনেছেন। ভরত ২/৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় আইনত রবীন্দ্র ডোংরে সচিব পদের অধিকারী বলে তাঁর মত। ১৯৮৫ সালের সর্বভারতীয় দাবাসংস্থার নির্বাচনে এমনই অবস্থা হয়েছিল গুজরাতের বি ভার্মা এবং কোয়েম্বাত্তোরের ডঃ মহালিঙ্গমের দ্বন্দ্বে। কিন্তু, ভার্মা ২/৩ অংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় নিজেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন সচিব পদ থেকে এবং মহালিঙ্গমকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন পরবর্তী সচিব পদে বসার জন্য। ম্যানুয়েল অ্যারন ওই ঘটনার কথা মনে করইয়ে দিয়ে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন ভরত সিং চৌহানকে।[7] কিন্তু, ‘দাম্ভিক’ ও ‘ক্ষমতালোভী’ ভরত সিং এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী বর্ষীয়ান অ্যারন এবং আদালতের নির্দেশে কর্ণপাত করারও প্রয়োজন মনে করেনি। ২০১৯ সালে স্বনামধন্য দাবাড়ু এবং ফিডের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট নাইজেল শর্ট ভরত সিংয়ের নেতৃত্বাধীন দাবাসংস্থাকে দাবাড়ু-বিরোধী বলেন।[8] দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে বিষয়গুলি নিয়ে দেশের বিভিন্ন আদালতে মামলা চলছে। কিন্তু, ভুরি ভুরি অভিযোগ যে সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠে, তাদের স্বচ্ছ বলা যায় কি? ভারতীয় দাবাড়ুরা সাম্প্রতিক সময়ে বহু নজির গড়েছেন। দেশের গ্র্যান্ডমাস্টার, আন্তর্জাতিক মাস্টারের সংখ্যা বেড়েছে। এগুলি খুশির খবর। কিন্তু, আশঙ্কার মেঘ জমতেই থাকছে শীর্ষসংস্থার কর্তাব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়ে। আদালতের রায় কী হবে, অভিযোগগুলি প্রমাণ হবে কিনা এবং প্রকৃত দোষীরা কবে/কতটা শাস্তি পাবেন সেসব সময় বলবে। তবে, সাম্প্রতিক মহিলা গ্রাঁ প্রির উদাহরণ আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, ভারতীয় দাবাসংস্থার জন্য বিশ্বের দরবারে ভারতের মুখ অপমানে ম্লান হয়ে যাচ্ছে।


[1] পাঞ্জাব কেশরী, ৪ জুন ২০২২।
[2] দ্য কুইন্ট, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯।
[3] এএনআই, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯; টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯; দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ১০ জুলাই ২০২১।
[4] টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ২৫ আগস্ট ২০২২।
[5] হিন্দুস্তান টাইমস, ৮ জুন ২০২২।
[6] টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ২৫ আগস্ট ২০২২।
[7] চেসমেট, সেপ্টেম্বর ২০২২।
[8] দ্য কুইন্ট, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯।