দাবার মেয়েরা: পুরুষ আধিপত্যের প্রতিস্পর্ধী বয়ান

প্রবুদ্ধ ঘোষ

 


দাবা-প্রশিক্ষক, সাহিত্য-গবেষক

 

 

 

 

লাজলো পোলগার স্রোতের বিরুদ্ধে ভাবার অভ্যাস গড়ে নিয়েছিলেন। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টভঙ্গি। রক্ষণশীলতাকে প্রত্যাখ্যান করা। তত্ত্ব ও অনুশীলনের মেলবন্ধন। জন্মসূত্রে কেউ জিনিয়াস হয় না, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে জিনিয়াস গড়ে ওঠে। জন্মগত মেধা নয়, নিরন্তর অনুশীলনের দ্বারা কোনও বিশেষ ক্ষেত্রের ‘শ্রেষ্ঠ’ নির্মিত হয়। সমাজনির্ধারিত ছকে বাঁধা পদ্ধতিগুলি এড়িয়ে পেরিয়ে নিজস্ব বিন্যাস খুঁজে পাওয়া যায়। কেউ কেউ পান। জেদ, সাহস আর ছকভাঙার উদ্ভাবনী কৌশল। লাজলো পোলগার নৈতিক লড়াইটা টেনে নিয়ে এলেন ৬৪ বর্গক্ষেত্রের ছকে। ১৯৬৭। ক্লারা আর লাজলো ব্যক্তিগত পরীক্ষাগারে যুগান্তকারী পরীক্ষা শুরু করলেন। আত্মীয়রা হতবাক। প্রতিবেশীরা দুয়ো দিল। সামাজিক ছ্যা-ছ্যা প্রবল। লাজলো আর ক্লারার পরীক্ষানিরীক্ষার বিষয়বস্তু নিজেদের সন্তান। ১৯৬৯— সুজান পোলগার। ১৯৭৪— সোফিয়া পোলগার। ১৯৭৬— জুডিত পোলগার। লাজলো আর ক্লারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করলেন না ওঁদের। নিজেরাই শিক্ষার দায়িত্ব নিলেন। আর, শুরু করালেন দাবার অনুশীলন। ভবিষ্যতের দাবা এবং সমাজ এই সিদ্ধান্তের জন্য কৃতজ্ঞ ক্লারা ও লাজলোর কাছে। অবিরত অনুশীলন শ্রেষ্ঠ দাবাড়ু গড়ে তুলতে পারে। পরিশ্রম আর জেদ দিয়ে লিঙ্গবৈষম্যের যাবতীয় বাঁধাগত ভেঙে ফেলা যায়। পারিবারিক পরীক্ষাগারে ঝুঁকি নিলেন লাজলো আর ক্লারা। ঝুঁকি। দাবাড়ুরা অহরহ নেন। কিন্তু, এ ঝুঁকি ভাগ্যের ওপরে দাঁড়িয়ে নেই। বৈজ্ঞানিক মনন, অভিজ্ঞতা এবং দানগণনার আয়াসসাধ্য কৌশল। জুডিত পোলগার ২২ বছর বয়েসে বিশ্বনাথন আনন্দের বিরুদ্ধে এমন ঝুঁকি নিয়েছিলেন। আনন্দ কেরিয়ারের তুঙ্গে। আর একবছর পরেই বিশ্বসেরার মুকুট অর্জন করবেন। ১৯৯৯। পোলগার ওপেনিং-এ দুটি পিস বলিদান দিলেন।

জুডিত পোলগার
জুডিত পোলগার বনাম বিশ্বনাথন আনন্দ (১৯৯৯)

1.e4 c5 2.Nf3 d6 3.d4 cxd 44.Nxd4 Nf6 5.Nc3 a6 6.Be3 e6 7.g4 e5 8.Nf5 g6 9.g5 gxf5 10.exf5 d5 11.Qf3 d4 12.O-O-O Nbd7 13.Bd2 dxc3 14.Bxc3 Bg7 15.Rg1 O-O 16.gxf6 Qxf6 17.Qe3 Kh8 18.f4 Qb6 19.Qg3 Qh6 20.Rd6 f6 21.Bd2 e4 22.Bc4 b5 23.Be6 Ra7 24.Rc6 a5 25.Be3 Rb7 26.Bd5 Rb8 27.Rc7 b4 28.b3 Rb5 29.Bc6 Rxf5 30.Rxc8 Rxc8 31.Bxd7 Rcc5 32.Bxf5 Rxf5 33.Rd1 Kg8 34.Qg2 1-0

সিসিলিয়ান প্রতিরক্ষা। যে প্রতিরক্ষা আনন্দের ‘স্পেশ্যাল পেপার’ ছিল! কেরেস আক্রমণ পদ্ধতি বেছে নিলেন জুডিত। দুটি পিস বলিদান দিয়ে দ্রুত সচল করে নিচ্ছেন অন্যান্য পিসগুলি এবং আক্রমণাত্মক ব্যূহ সাজিয়ে কালোর রাজার দিকে তাদের ছুটিয়ে দিচ্ছেন। প্রত্যাক্রমণ শানাচ্ছেন আনন্দও। কিন্তু, জুডিতের পিস-পনগুলির অদম্য জেদের কাছে পর্যুদস্ত কালোর পজিশন। জুডিতের ছোটবেলা থেকে শেখা আপসহীন এগিয়ে চলার নীতি এই গেমে অবিকল। সুজান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, জুডিথের দাবার নীতি-কৌশল বুঝতে একটু সময় লাগত, কিন্তু অত্যধিক অনুশীলনের শ্রমে সে সব পুষিয়ে দিত। “১% প্রতিভা আর ৯৯% অনুশীলন সাফল্য আনে”— লাজলো-ক্লারার মতো পোলগার বোনেরাও আত্মস্থ করেছিলেন।

 

দাবা ছেলেদের খেলা। যেকোনও খেলাতেই ছেলেদের সহজাত দক্ষতা রয়েছে। বুদ্ধিবৃত্তির প্রয়োগে, মেধাগত সাফল্যেও ছেলেরা মেয়েদের থেকে যোজনখানেক এগিয়ে। অজস্র মিম। অসংখ্য ঠাট্টাগান। বহু চুটকি। এমনকি অনেক বিদ্যায়তনিক প্রবন্ধও। ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেওয়া— ছেলেরা উন্নততর লিঙ্গ এবং মেয়েরা গার্হস্থ্যক্ষেত্রের বাইরে দুর্বল। কখনও তারা বিদ্যা থেকে ক্রীড়ায় ছেলেদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করলেও সমকক্ষ হতে পারবে না। অনুকম্পার দৃষ্টিতে তাদের কৃতিত্ব বিচার করা যেতে পারে বড়জোর। এই দৃষ্টিভঙ্গি বহু বহু শতকের সামাজিক-রাজনৈতিক নির্মাণ। মেয়েদের সাফল্যের প্রতি পৌরুষজারিত অনুকম্পা একুশ শতকেও ‘স্বাভাবিক’ হয়ে আছে। ‘কুইন্স গ্যাম্বিট (২০২০)’ চলচ্চিত্রে বেথ হারমোনের সঙ্গে খেলতে বসার সময় হ্যারি বেল্টিকের ‘কুল, রিল্যাক্সড, ইজ্‌’ শরীরীভঙ্গি আর ‘ধুস্‌, আরামসে জিতব’ প্রতিক্রিয়া মনে আছে? বেথ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, অনমনীয়। দানের পর দান এগোচ্ছে। হ্যারির মুখাবয়ব ধীরে ধীরে কঠিন আর নিষ্প্রভ। অবিশ্বাস্য পরিস্থিতিতে পৌঁছে হ্যারি এক অনভিজাত অনভিজ্ঞ মেয়ে-দাবাড়ুর কাছে নতিস্বীকার করবে কিনা সংশয়ে— পুরুষঅহং ধাক্কা খাচ্ছে। বেথ হারমোন কাল্পনিক। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্যামুয়েল রেশেভস্কির জমানা শেষ হয়ে ফিশার-যুগ শুরু হয়ে গেছে। ফিশার— সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদদের তালিকায় উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। দাবাজগতের বাইরে ফিশার শিশুসুলভ অজ্ঞ, অপরিণত এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণহীন। ফিশার অস্থিরমতি, যা মুখে আসে বলে দেন, অন্যের মান-অপমানের তোয়াক্কা না করেই। ১৯৬৩ সালে কিংবা ১৯৭২ সালে ক্রীড়াজগতের আইকন হয়ে ওঠা ফিশার হাসতে হাসতে সাক্ষাৎকার দেন যে, সমস্ত মেয়ে-দাবাড়ুর বিরুদ্ধে এমনকি মহিলা-দাবার বিশ্বখেতাবজয়ীর বিরুদ্ধেও নাইট বাদ দিয়ে খেলেও অনায়াসে জিতবেন। “মহিলা দাবাড়ুরা খুব বাজে খেলেন, তাঁরা স্মার্ট নন। ইতিহাসে কোনও মেয়ে-দাবাড়ু পুরুষের সমকক্ষ হতেই পারেননি।[1] বুদ্ধি-মেধার খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে তারা বরং ঘরেই থাকুক।” ফিশারের উদ্ধত বৈষম্যোর্দ্রেককারী বক্তব্যে প্রকাশ্যে বা গোপনে সায় দেন অনেকেই। এখনও অনেক দাবা প্রতিযোগিতায় ছেলেদের মোট পুরস্কার-সংখ্যার তুলনায় মেয়েদের মোট পুরস্কারের সংখ্যা কম থাকে। পুরস্কারমূল্যেও বৈষম্য। ২০২০ সালে মহিলা-দাবার বিশ্বখেতাবি লড়াই ছিল চিনের জু ওয়েনজুন এবং রাশিয়ার আলেক্সান্দ্রা গোরিয়াচকিনার মধ্যে। মোট পুরস্কারমূল্য ছিল ৫ লক্ষ ইউরো— মহিলা-দাবার ইতিহাসে প্রথমবার এত অর্থমূল্য। তবু, পুরুষদের বিশ্বখেতাবি লড়াইয়ের মোট পুরস্কারমূল্যের অর্ধেক পরিমাণ মাত্র। যুক্তরাষ্ট্রের মোট দাবাড়ুর ১৫ শতাংশ মাত্র মহিলা দাবাড়ু। জুডিত বলেছেন, তিনি শুধু কৌশলের অনুশীলন করতেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বিভিন্ন ধরনের কম্বিনেশন— জটিল পরিস্থিতির জাল ছিন্নভিন্ন করে নান্দনিক আক্রমণ-কৌশলের উদ্ভাবনী প্রয়োগ। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভ্যাসিলি স্মাইস্লভ বালিকা জুডিতের দাননৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, “আরে, এ যে স্কার্ট পরা মিখাইল তাল!” জুডিত শুধু পুরুষদের ‘সমকক্ষ’ হলেন না, তাদের ছাপিয়ে গেলেন। সুজান, সোফিয়া, জুডিত পুরুষ-দাবাড়ুদের ‘অনুকম্পা’ উড়িয়ে দিয়ে একের পর এক প্রতিযোগিতা জিততে লাগলেন। যে ফিশার নারী-দাবাড়ুদের ধর্তব্যে আনতেন না, সেই ফিশারের রেকর্ড ভেঙে দিলেন জুডিত। মাত্র ১৫ বছর ৪ মাস বয়েসে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া— তৎকালীন দাবাবিশ্বে সর্বকনিষ্ঠ। ১৯৯১। জুডিত কোনওদিন মহিলা-দাবার বিশ্বখেতাব জেতেননি, কারণ মহিলা-দাবা প্রতিযোগিতায় কোনওদিন অংশগ্রহণই করেননি। বরং লিঙ্গসাম্যের রাজনৈতিক ধ্বজা সগর্বে বহন করেছেন— বিশ্বখ্যাত (কাসপারভ থেকে আনন্দ থেকে ক্রামনিক থেকে কার্লসেন) দাবাড়ুদের কাছে হেরেছেন— তারপরেই প্রতিস্পর্ধী দানে ফিরে এসেছেন। আত্মবিশ্বাস আর অনুশীলনের শ্রম থেকে সরে আসেননি। জুডিতই দাবার ইতিহাসে একমাত্র মহিলা যিনি পুরুষদের বিশ্বখেতাবি লড়াইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অংশগ্রহণের অধিকার অর্জন করেছিলেন ২০০৫ সালে। ২০০২ সালে রাশিয়া বনাম বাকি বিশ্ব প্রতিযোগিতায় কাসপারভকে হারালেন কাসপারভের অন্যতম প্রিয় বার্লিন প্রতিরক্ষা রকমফেরে।

জুডিত বনাম গ্যারি, ২৯ চালের পর
30.Re6 Rah8 31.Rexd6+ Kc8 32.R2d5 Rh3+ 33.Kg2 Rh2+ 34.Kf3 R2h3+ 35.Ke4 b6 36.Rc6+ Kb8 37.Rd7 Rh2 38.Ke3 Rf8 39.Rcc7 Rxf5 40.Rb7+ Kc8 41.Rdc7+ Kd8 42.Rxg7 Kc8 1-0

পোলগার প্রতিযোগিতামূলক দাবার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন ২০১৪ সালে। কিন্তু, ক্রীড়া, মেধা, শ্রেষ্ঠত্ব শব্দগুলিতে পুরুষদের একচেটিয়া অধিকার নেই তা প্রমাণ ক’রে দিয়েছেন। পোলগার বোনেদের চোখধাঁধানো সাফল্যের পরে বহু মেয়ে উৎসাহিত হয়েছে পেশাদারি দাবাখেলায়। মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার তকমা পেরিয়ে অনেকে গ্র্যান্ডমাস্টার ও আন্তর্জাতিক মাস্টার উপাধি অর্জন করেছেন। নিয়মিত শীর্ষস্তরের প্রতিযোগিতায় লিঙ্গসাম্যের বয়ান প্রতিষ্ঠা করছেন। এই মুহূর্তের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট ৪০ জন মহিলা দাবাড়ু পুরুষদের সমকক্ষ গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জন করেছেন।

১৯৯৩। ববি তখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রীয় শমনের ভয়ে। যুগোস্লোভিয়ার হোটেলে লুকিয়ে রয়েছেন। ওই বছরের মাঝামাঝি ইয়ানোস কুবাট ববির সঙ্গে লাজলো-ক্লারা এবং সফিয়া-জুডিতের সাক্ষাৎ করালেন। কয়েক মাস বাদে ববি অতিথি হয়েছিলেন পোলগার পরিবারে। সুজান পোলগার লিখেছেন, “ববির অনেক পূর্বনির্ধারিত ধারণা ও যুক্তির সঙ্গে আমি সহমত না। কিন্তু ওঁর সঙ্গে মুখে তর্ক করা বৃথা বুঝেই আমি তর্কটা দাবার বোর্ডে করতাম।” দাবাপাগল ববির বিন্দুমাত্র ‘পৌরুষ-অহং’ ছিল না জুডিথ-সুজানদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাবা খেলায়, তাঁদের সঙ্গে বিখ্যাত ম্যাচগুলি বিশ্লেষণ করায় কিংবা ‘ফিশার র‍্যান্ডম দাবা’র নিত্যনতুন নিয়ম বানানোয়।

 

মির সুলতান খান ইউরোপীয় দাবায় উপনিবেশিত অখণ্ড ভারতবর্ষের উজ্জ্বলতম প্রতিনিধি। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের রুখে দেওয়া, মিডলগেমে সাবলীল নৈপুণ্য এবং ব্রিটিশ দাবার শীর্ষস্থানীয় প্রতিযোগী হয়ে ওঠা— সুলতানের সাফল্যের মুকুটে পালকের বাহার। সেই সময়েই ব্রিটিশ মহিলা-দাবাড়ুদের আভিজাত্যকে প্রতিস্পর্ধা জানাচ্ছিলেন গুলাম ফতিমা। ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশ মহিলা দাবা প্রতিযোগিতার খেতাব জেতেন ফতিমা। মাত্র ২১ বছর বয়েস।

এডিথ মেরি অ্যান মিশেল বনাম গুলাম ফতিমা (১৯৩৩)

1.d4 Nf6 2.e3 e6 3.Bd3 d5 4.Nf3 Nbd7 5.O-O Bd6 6.c4 c6 7.Nc3 O-O 8.e4 dxe4 9.Nxe4 Nxe4 10.Bxe4 Nf6 11.Bc2 h6 12.Qd3 Qc7 13.Re1 Rd8 14.Qc3 c5 15.dxc5 Bxc5 16.Bxh6 Bxf2+ 17.Kxf2 Ng4+ 18.Kg1 Nxh6 19.Ne5 f6 20.Ng6 Ng4 21.Qh3 Qc5+ 22.Re3 Qxe3+ 23.Qxe3 Nxe3 24.Bb3 Rd2 25.Nh4 Rd4 26.Nf3 Rg4 27.g3 Nxc4 28.Re1 b5 29.Kf2 Kf7 30.h3 Rg6 31.Re2 Bb7 32.Nd4 Rg5 33.Nxe6 Rf5+ 34.Kg1 Re8 35.Nxg7 Rxe2 36.Nxf5 Kg6 37.g4 Rg2+ 38.Kf1 Nd2+ 0-1

ফতিমা হারালেন এডিথকে। এডিথ ১৯৩১, ১৯৩২ ও ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ মহিলা-দাবার খেতাবজয়ী। ১৬ নম্বর দানে সাদা বিশপ বলিদান দিচ্ছেন। কালোর g7 পন বিশপটিকে খেলেই সাদার কুইন কালোর f6-এর নাইটটিকে মেরে দেবে। জেতার পজিশন সাদার মুঠোয়। অথচ, সাদার সেই দারুণ প্রত্যাশায় জল ঢেলে প্রত্যাঘাতের প্রত্যুত্তর খুঁজে বের করলেন ফতিমা। Bxf2+। ব্রিটিশ দাবার সেরা মহিলা-দাবাড়ুর প্রতিটি আক্রমণের প্রতিষেধক খুঁজতে পাল্টা আক্রমণের ব্যূহরচনা। ফতিমার অকুতোভয় বিশপ+নাইট+রুক পজিশনের দখল নিল। রক্ষণশীল আর্থ-সামাজিক বয়ান এবং পশ্চাৎপদ সাহিত্যনীতির বিরুদ্ধে ততদিনে ‘অঙ্গারে’ সঙ্কলন প্রকাশিত। প্রগতিবাদের সার্বিক রণনীতি প্রস্তুত হচ্ছে সামন্তবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের রাজনৈতিক উপাদানগুলির বিরুদ্ধে। ফতিমা তেমনই এক বদলমুখী সময়ে রক্ষণশীল-পর্দানশীন আবছায়ার বিরুদ্ধে জ্বলন্ত মশাল হয়ে উঠছেন। তাঁর দাবানীতিও রক্ষণশীল, বদল-ভিতু নীতি প্রত্যাখ্যান করে উড়ান খুঁজে নিচ্ছে দাবার বোর্ডে। ১১ ম্যাচে ১০.৫ পয়েন্ট— অপরাজিত খেতাবজয়ী ফতিমা। দেশভাগের পরে পাকিস্তানে চলে গেলেন ফতিমা। বিশ্বজয়ী ভেরা মেনচিকের সঙ্গে তুলনা করা হত যে ফতিমার কৌশলী ও অবস্থানগত দক্ষতাকে, তাঁর দাবাজীবন হারিয়ে গেল ওই ১৯৩০-এর দশকেই।

গুলাম ফতিমা

পুরুষদের বিদ্রূপ আর টিটকিরি-মিশ্রিত অনুকম্পা সয়ে প্রথম মহিলা একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে। আর, ভারতের মহিলারা প্রথমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন ১৯৭৮ সালে। ফুটবলে ভারতের প্রথম মহিলা দল গঠিত হয় ১৯৭০-এর মাঝামাঝি। ১৯৫২ হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে ভারতীয় মহিলা দৌড়বিদ ও সাঁতারুরা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেন। নীলিমা ঘোষ ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ অ্যাথলিট। দৌড়ে অংশ নেন মেরি ডি’সুজা। সাঁতারে হেলসিঙ্কি অলিম্পিকেই আরতি সাহা এবং ডলি নাজির ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন বিশ্বের দরবারে। তবে, বহু আগে থেকেই ভারতীয় মহিলা দাবাড়ুরা আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে দাপট দেখিয়ে চলেছেন। উপনিবেশিত অখণ্ড ভারতের ফতিমা উজ্জ্বল লক্ষত্র। তবে তারও প্রায় পাঁচ দশক আগে ভারতের দাবাক্ষেত্রে পুরুষদের আধিপত্য খর্ব করেছিলেন এক মহিলা দাবাড়ু। ১৮৮২ সালে বম্বের নকআউট প্রতিযোগিতায় (সেসময় ভারতের বাসিন্দা বেশ কজন সেরা ইউরোপীয় দাবাড়ু এতে অংশ নিতেন) একমাত্র মহিলা দাবাড়ু হিসেবে সুযোগ পেলেন তিনি। ফাইনালে উঠে দুজন পুরুষ দাবাড়ুকে পরপর হারিয়ে খেতাব জিতলেও বাধা সেধেছিল সেই পুরুষ অহং। পুরুষরাই ক্লাবের সভ্য হতে পারতেন, সেখানে একজন মহিলা হয়ে তিনি ক্লাবের দাবায় অংশ নেন কী করে? শুধু অংশ নিলে নাহয় অনুকম্পাবশত ইউরোপীয় পুরুষরা নিজেদের ‘আধুনিকতা’ ও ‘প্রগতি’র প্রমাণ দিতেন। কিন্তু, মহিলা দাবাড়ুটি সেসব ফুৎকারে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন দাবার বোর্ডে আশ্চর্য অবস্থানগত দক্ষতার (positional skill) পরিচয় রেখে। সম্মিলিত পুরুষবাহিনির লিঙ্গবৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলেন তিনি। জিতলেনও। লুইসা মাতিলদা ফাগান। জন্মসূত্রে ব্রিটিশ-ইতালীয় এবং বিবাহসূত্রে আইরিশ। প্রায় দু দশক স্বামীর সঙ্গে ভারতের বাসিন্দা ছিলেন। তখনই এই অভূতপূর্ব ঘটনাটি ঘটে। উপনিবেশোত্তর ভারতে, লুইসা ফাগানের ঘটনার প্রায় একশো বছর পরে, লিঙ্গবৈষম্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে দাবায়। ১৯৭৭ সালে কেন্দ্রীয় প্রোটাগনিস্ট হয়ে ওঠেন রোহিনী খাদিলকার। ন্যাশনাল বি প্রতিযোগিতার শীর্ষপদাধিকারী দাবাড়ুরা ন্যাশনাল এ প্রতিযোগিতায় (ভারতের সর্বোচ্চ দাবা প্রতিযোগিতা) অংশগ্রহণের সুযোগ অর্জন করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়স উপরন্তু নারী— বিরলতম কৃতিত্ব। চিরাচরিত পুরুষ আধিপত্যের প্রতিস্পর্ধী। “ন্যাশনাল এ দাবা প্রতিযোগিতা পুরুষদের জন্য। একজন কিশোরী তাতে অংশ নিতে পারে না”— দাবি করলেন অনেকেই। কিন্তু নীলকান্ত খাদিলকার (রোহিনীর বাবা এবং একটি ঐতিহ্যবাহী পত্রিকার সম্পাদক) ফিডের নিয়মাবলি খুলে সেসব দাবিকে নিছকই লিঙ্গগর্বী অজুহাত প্রমাণ করে দিলেন।[2] দাবার এবং রাজনীতির মাথারা নতিস্বীকার করলেন রোহিনীর প্রতিভার সামনে। রাজা কিস্তিমাত। রাজারা কিস্তিমাত। নারীবাদী রাজনীতির ইতিহাসের পাতা পিস-পনের ‘নভেলটি’ দানে জ্বলজ্বল করে উঠল। মাত্র ১৪ বছরের কিশোরী রোহিনী হারালেন আনন্দ ঘোষ, গৌরাঙ্গ মেহতা এবং আব্দুল জব্বারকে। এঁরা যথাক্রমে বাংলা, গুজরাত ও মহারাষ্ট্রের রাজ্যদাবার খেতাবজয়ী ছিলেন সে বছর। রোহিনীর দেখানো পথে বিজয়লক্ষ্মী, হাম্পি, হরিকা, নিশা মোহতারা পুরুষ-দাবাড়ুদের একচ্ছত্র আধিপত্যে ফাটল ধরিয়ে ন্যাশনাল এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। পুরস্কার জিতেছিলেন।

বিজয়লক্ষ্মীর নামের সঙ্গে তাঁর দাবার ফলাফলের দারুণ মিল। সোভিয়েত এবং ১৯৯১ পরবর্তী রাশিয়া দাবায় মহিলাদের অগ্রগতির প্রমাণ রেখে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে নেই। হাঙ্গেরির পোলগার বোনেরা চিরাচরিত সামাজিক বয়ানকে ঠাট্টায় উড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বরাজনীতিতে ভারত সুপার-পাওয়ার হিসেবে উঠে আসছে পরমাণু বোমার সফল পরীক্ষা ঘটিয়ে। দেশ উদারিকরণ-বেসরকারিকরণের প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ। সহস্রাব্দ শেষ হল। ভারতের প্রাচীনতম খেলায় এতদিন পরে বিশ্বমানের একজন মহিলা দাবাড়ু পেল ভারতীয় ক্রীড়ামহল। বহু দশকের খরা কাটল। ২০০১। সুব্বারামন বিজয়লক্ষ্মী মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার হলেন। অদম্য জেদ আর অধ্যবসায়। মহিলা বিভাগে আটকে না থেকে পুরুষদের দাবায় নিয়মিত অংশগ্রহণ। প্রতিটি পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন উদ্যমে সেগুলিকে জয়ে বদলে নেওয়ার অনুশীলন। বিজয়লক্ষ্মী দ্রুত আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব অর্জন করলেন। ২০০৫ সালে বিয়েল মহিলা দাবার খেতাব জিতলেন। প্রয়োজনীয় গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম জিতে নিলেন। শীর্ষ রেটিং ২৪৮৫। আর মাত্র ১৫ রেটিং পয়েন্ট পেলেই গ্র্যান্ডমাস্টার। পুরুষ-দাবাড়ু মহিলা-দাবাড়ু ভেদাভেদ ঘুচবে ভারতের ক্রীড়ামহলে। বিশ্বে মহিলা দাবার পর্যায়ক্রমে ততদিনে প্রথম দশে স্থান পাকা তাঁর। হঠাৎ ছন্দপতন। পরপর দুটি প্রতিযোগিতায় অপ্রত্যাশিত পদস্খলন। শীর্ষখেতাব— গ্র্যান্ডমাস্টার, অধরা রইল। ৬৪-ঘরের লড়াই বিজয়লক্ষ্মীকে অনেক আনন্দমুহূর্ত দিয়েছে, কিন্তু গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার শ্রেষ্ঠতম আনন্দ ছিনিয়ে নিয়েছে। সুখের কফির ওপর বিষাদক্রিমের আস্তরণের মতো ২০০৬ সালের দুটি প্রতিযোগিতা— ওএনজিসি গ্র্যান্ডমাস্টার্স ওপেন এবং জাতীয় মহিলা-দাবা প্রতিযোগিতা।

সুব্বারামন বিজয়লক্ষ্মী

ভারতীয় মহিলা-দাবায় মহারাষ্ট্রের দাবাড়ুরা দীর্ঘ কয়েক দশক আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন। পোলগার বোনেদের প্রায় সমসময়ে খাদিলকার বোনেরা ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটিয়েছেন। ১৯৭৮। বুয়েনস এয়ার্স দাবা অলিম্পিয়াড। পুরুষ দাবাড়ুদের দল সরকারি সহায়তা পেলেন না। কিন্তু, মহিলা দাবাড়ুরা সরকারি অর্থসাহায্য পেলেন। নেতৃত্বে রইলেন খাদিলকার বোনেরা। সামাজিক বিধিনিষেধ আর পশ্চাদপদ মানসিকতাকে পিন্‌ করে বা স্কিউয়ারে ফেলে নিয়মিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন তাঁরা। দেশীয় প্রতিযোগিতায় খ্যাতনামা পুরুষ-দাবাড়ুদের দেওয়া কিস্তি অনায়াসে এড়ালেন। তুরুপের তাসের মতো রুকের আক্রমণ বা বিশপের দুরন্ত দান খুঁজে নিলেন অনুশীলনজাত দক্ষতায়। রোহিনী, জয়শ্রী এবং বাসন্তী খাদিলকার। ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ভারতীয় মহিলা জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতায় খেতাব জেতেন ১৩ বছরের বাসন্তী। জয়শ্রী খাদিলকার ১৯৭৯ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব অর্জন করেন। রোহিনী ১৯৮১ সালে প্রথম এশিয়া মহিলা দাবা প্রতিযোগিতার খেতাবজয়ী। জাতীয় মহিলা দাবায় ১৯৮৪ অবধি খাদিলকার বোনেদের একপেশে অপ্রতিরোধ্য দাপট। এরপর ভাগ্যশ্রী সাঠে। অনুপমা অভয়ঙ্কর। কিরণ অগরওয়াল।

জেসপার নর্গার্দ বনাম বাসন্তী খাদিলকার (১৯৮৪)

1.e4 e5 2.Nf3 Nc6 3.Bb5 Bc5 4.c3 f5 5.Bxc6 dxc6 6.Nxe5 Bd6 7.d4 fxe4 8.Qh5+ g6 9.Nxg6 Nf6 10.Qh4 Rg8 11.Ne5 Bxe5 12.dxe5 Qd3 13.exf6 Bg4 0-1

ড্যানিশ দাবাড়ু নার্গার্দের ফিডে-রেটিং তখন ২৩১৫। কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী। এই গেমে প্রায় জেতার মুখে পৌঁছে গেছেন। কিন্তু একটি পিস বলিদান দিয়ে অবিশ্বাস্য কৌশলে আক্রমণ করলেন বাসন্তী। কুইন আর বিশপের যোগসাজশে সাদার রক্ষণ সম্পূর্ণ ভেঙে দিলেন।

কনেরু হাম্পি

বিজয়লক্ষ্মীর দেখা স্বপ্নের পথে হেঁটে বাস্তবে গ্র্যান্ডমাস্টার হলেন কনেরু হাম্পি। সরাসরি গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার লক্ষ্যে কঠিন কঠিনতর অনুশীলন শুরু করলেন। জুডিতের মতোই সুদীর্ঘ সময় অনুশীলন, নিয়মিত প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া এবং ক্ষুরধার গেম-পরিকল্পনা তৈরি করা। ২০০২। কেন্দ্রে তখন বিজেপি তথা এনডিএ-র শাসন। এমন দল, যাদের মতাদর্শগত মাথা আরএসএস। যারা মহিলাদের চার দেওয়ালের ভেতর বদ্ধ থাকার পক্ষে সওয়াল করে, পৌরুষ-আধিপত্যের বয়ান প্রচার করে এবং পিতৃতান্ত্রিক রক্ষণশীলতা সমাজে চারিয়ে দেয়। কনেরু হাম্পি অমন রাজনীতির গালে চপেটাঘাত। হাম্পি প্রথম ভারতীয় নারী, যিনি লিঙ্গবৈষম্যের দেওয়াল ভেঙে গ্র্যান্ডমাস্টার হলেন। সর্বকনিষ্ঠ মহিলা। জুডিত পোলগারের রেকর্ড ভেঙে। ফতিমা, খাদিলকার, বিজয়লক্ষ্মী, অনুপমাদের বহু প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে টিঁকে থাকা অপ্রতিরোধ্য পনগুলিকে (passed pawn) কুইনে রূপান্তরিত করলেন। হাতেগোনা যে কজন মহিলা দাবাড়ু ২৬০০ রেটিং পার করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হাম্পি। দীর্ঘ কয়েক বছর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেটিংধারী ছিলেন হাম্পি। ২০১১ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার হলেন অন্ধ্রের ডি হরিকা। তারও আগে মাত্র ১৫ বছর বয়েসে অভাবনীয় একটি রেকর্ড গড়েছিলেন হরিকা। ২০০৬ সালে ন্যশনাল বি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে দেশের সেরা জাতীয় দাবাড়ু নির্বাচনী দাবা-প্রতিযোগিতায় তথা ন্যাশনাল এ-তে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। হরিকা অপরাজিত রইলেন সবকটি রাউন্ডে। মেধা শুধু পুরুষদের কুক্ষিগত না। শতক-সহস্রাব্দ ধরে মেধা অনুশীলনের সামাজিক সুযোগ পেয়ে পুরুষরা সুবিধাপ্রাপ্ত অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু, অনুশীলন আর মেধার প্রতিফলন দেখানোর সুযোগ পেলে নারীরা সমস্ত লৈঙ্গিক বৈষম্য মুছে দিতে পারে। হাম্পি, হরিকা, রোহিনী, বিজয়লক্ষ্মী, বৈশালীরা তার বাস্তব উদাহরণ।

 

সোভিয়েতের দাবাসফলতা মিথপ্রতিম। অনুশীলন, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বিজ্ঞানসম্মত চেতনার ত্র্যহস্পর্শ। সোভিয়েত মহিলা-দাবাতেও একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছিল। ১৯২৭ সালে ভেরা মেনচিক বিশ্বখেতাব জয় করেন। এরপরে ১৯৯১ সাল অবধি মহিলা-দাবার সবকটি বিশ্বখেতাব সোভিয়েতের দখলে। লুডমিলা রুডেঙ্কো। এলিজাবেথ বাইকোভা। ওলগা রুতস্বোভা। নোনা গ্যাপ্রিনদাশভিলি। মায়া চিবুরদানিজ। নোনা ‘কুইন্স গ্যাম্বিট’ ও নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। নোনা মহিলা-দাবার পঞ্চম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং প্রথম মহিলা যিনি পুরুষদের সমকক্ষ গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জন করেছিলেন ১৯৭৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত ওয়েবসিরিজটি বেথ হারমোন নামক এক কাল্পনিক দাবাড়ুর ব্যক্তিগত ও দাবাজীবনকে কেন্দ্র করে নির্মিত। কাল্পনিক চলচ্চিত্র/ওয়েবসিরিজের নিশ্চয়ই সত্যদাবি (truthclaim) থাকে না— কিন্তু এই অয়েবসিরিজে নোনার নামল্লেখ করে বলা হয়েছে যে তিনি কোনওদিন পুরুষ-দাবাড়ুদের প্রতিদ্বন্দ্বী হননি। অথচ প্রোটাগনিস্ট বেথ হারমোনকে মূলত পুরুষ-দাবাড়ুদের বিরুদ্ধে লড়ে আন্তর্জাতিক খেতাব অর্জন করতে দেখা গেছে।[3] বাস্তবে ১৯৬০-৭০ দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘বেথ হারমোন’-র মতো কেউ ছিলেন না, কিন্তু বাস্তবে সোভিয়েতে নোনা, এলিজাবেথরা ছিলেন। নোনা স্প্যাসকি, তালদের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ১৯৬৮ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল— ‘মিস্‌ গ্যাপ্রিনদাশভিলি দারুণ কঠিন প্রতিযোগিতায় ৭জন পুরুষকে হারিয়েছেন’। জর্জিয়ার নোনা যুক্তরাষ্ট্রের নেটফ্লিক্সের থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করেছেন। রাজনীতি আর দাবা অবিচ্ছেদ্য।

নোনা গ্যাপ্রিনদাশভিলি

রাজনীতি— নারীরা দুর্বল লিঙ্গ এবং অনুন্নত। এমন ধারণার জন্যেই সহস্রাব্দব্যাপী নারীকে ঘরের কাজে বেঁধে রাখা হয়েছে। এমনকি ঘরের কাজের শ্রমের ন্যায্য স্বীকৃতিও দেওয়া হয়নি। ক্রীড়ায়, বিদ্যাচর্চায়, অন্যান্য কাজে নারীরা ‘দুর্বল’ তথা ‘পিছিয়ে পড়া’ বলে পুরুষতান্ত্রিক প্রচার চলে। অথচ, এই পুরুষতন্ত্রই পুরুষদের যাবতীয় কর্মক্ষেত্র থেকে নারীদের সরিয়ে রেখেছিল। যাঁরা ক্রীড়ায় অনুশীলনের সমান সুযোগই পেলেন এত দেরিতে, তাও এত স্বল্প সংখ্যায়, তাঁরা রাতারাতি পুরুষদের সমদক্ষতা অর্জন করবেন এমনটা ভাবা আসলে পুরুষতন্ত্রের প্রলাপ। গার্হস্থ্য ক্ষেত্রের বাইরে যেকোনও ক্ষেত্রে দক্ষতা অনুশীলনের সুযোগ কজন পেতেন (কজন পান?)? দাবার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম না। ঊনিশ শতক পর্যন্ত নারীদের প্রকাশ্যে দাবাখেলার ‘সামাজিক ছাড়পত্র’ ছিল না। ইউরোপ ও আমেরিকার অভিজাত দাবা-ক্লাবগুলিতে তাঁদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। ১৮৮৪ নাগাদ তুরিনের একটি দাবা-ক্লাবে প্রথমবার পুরুষ-সদস্যদের স্ত্রী-কন্যা-বোনদের জন্য দাবা অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া হয়। যদিও, তা নেহাৎই ঠাট্টামূলক পরীক্ষা। উইলহেম স্টেইনিৎজ, বোধহয় অনভিজাত ছিলেন বলেই, দাবা-ক্লাবে নারীদের অনুশীলন নিয়ে উৎসাহব্যঞ্জক নিবন্ধ লিখেছিলেন। “অন্য দেশের দাবাসমাজেও এই নীতি অনুসৃত হোক। এতে সার্বিকভাবে দাবাজগতের মঙ্গল হবে।” ভারতে একসময় অভিজাত নারীরা দাবা খেলতেন। দিল-আরাম নামে মুঘল যুগের যে রূপসী নারী দাবাড়ুর কথা জানা যায়, তিনি রীতিমতো দক্ষতায় পুরুষ দাবাড়ুদের পরাস্ত করতেন। তাঁর দাবানৈপুণ্যে মুগ্ধ দর্শকরা ফারসিতে ছড়া বানিয়েছিলেন। পঞ্চদশ শতকে কেরলের এক প্রদেশের রাজা উদয়বর্মণ একদিন দাবায় হারছিলেন। ওই খেলায় হারলে মান-ইজ্জতসহ রাজ্যের বেশ কিছুটা খোয়া যেত। দাবাবিশারদ রানি উদয়বর্মণের অমন প্রায়-পরাজয় থেকে বেরনোর উপায় খুঁজে পেলেন। অথচ প্রকাশ্যে ব্যূহভেদকৌশল বলা যাবে না। পাশের ঘরে গিয়ে গান শুরু করলেন রানি— গানের মধ্যেই নির্ভুল দানের সূত্র বলে দিলেন। জিতলেন উদয়নারায়ণ। এর অনেকাংশই এখন মুখফেরতা কাহিনি। তবে, পুরুষ-দাবাড়ুরা তাঁদের লিঙ্গজনিত অহং-এর জন্যই নিরপেক্ষ বিচার করতে পারেননি কখনও। কাসপারভের মতো প্রখর ধী-সম্পন্ন দাবাড়ুও একদা বলেছিলেন যে, দাবাখেলা ক্রীড়া, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ, বিজ্ঞান ও আর্টের মিলিত দক্ষতার প্রকাশ; পুরুষদের আধিপত্য স্বাভাবিকভাবেই তাই বেশি। পুরুষতন্ত্রের আরেকটি লব্জ প্রায়ই ভেসে ওঠে— ‘মস্তিষ্কসহ সুন্দরী (beauty with brain)’— অর্থাৎ সুন্দরীদের এমনিতে বুদ্ধিবৃত্তি কম, ক্কচিৎ কদাচিৎ সৌন্দর্য+মস্তিষ্ক যোগসাধন ঘটে। এই ধারণাটিও যে বস্তাপচা রক্ষণশীল, তা প্রমাণ করেছেন বহু ক্রীড়াবিদ্‌ এবং বিদূষী ব্যক্তিত্ব। পুরুষকর্তৃক বিচার্য সৌন্দর্য এবং বুদ্ধিবৃত্তির সংজ্ঞায় ওলটপালট ঘটিয়েছেন তাঁরা। ইরিনা ক্রুজ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা মহিলা দাবাড়ু যিনি গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জন করেছেন। তিনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “হেরে গেলেই অনেক পুরুষ-দাবাড়ু বাহানা দেন যে, আমার সৌন্দর্য তাঁদের মনঃসংযোগে বাধা দিয়েছিল। আমি বেশ মজা পাই এসব অজুহাত শুনে।” ক্রুজ মাত্র ৫ বছর বয়েসে জন্মভূমি ইউক্রেন ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসেছিলেন। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কমবয়সি জাতীয় খেতাবধারীর রেকর্ড গড়েন। ২০০১ সালে ঐতিহ্যপূর্ণ মেয়রস কাপে হিকারু নাকামুরাকে হারালেন ইরিনা। তার ঠিক একবছর পরে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছিলেন নাকামুরা— কার্লসেন যুগের অন্যতম সেরা দাবাড়ু যিনি বুলেট দাবায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন।

ইরিনা ক্রুজ বনাম হিকারু নাকামুরা (২০০১) ২৮ নম্বর চালের পর
29.Nc5 Bxh3 30.Qd4 Be6 31.Rd2 h5 32.e5 Bd5 33.f4 Qg4 34.Bxb5 h4 35.Bc4 h3 36.Ne4 h2+ 37.Kh1 Bxe4 38.Qxe4 Kg7 39.Qd4 c5 40.bxc5 Rb8 41.Ba2 Qg3 42.e6+ f6 43.Rd1 Qg4 44.e7 Rh8 45.d7 Rb2 46.Bd5 Rhb8 47.e8=Q Rb1 48.Qe1 1-0

জেনিফার শাহেদ প্রায় দেড় দশক আগের যুক্তরাষ্টীয় সমাজে লিঙ্গবৈষম্যের বাস্তবিকতা বলেছিলেন— মেয়েরা দাবাকে পেশা হিসেবে নিতে চাইলে সেটা বাঁকা নজরে দেখা হয়। মেয়েরা দাবা খেলবে, বুদ্ধিবৃত্তির নৈপুণ্যে পুরুষদের প্রত্যাহ্বান জানাবে, এটা তাদের ঠিক হজম হয় না। “আমি দাবা খেলা দারুণ উপভোগ করি। আমি নিছক মজার জন্য খেলতে বসি না, জেতার জন্য খেলি, তাতে প্রচণ্ড মানসিক ধকল হয়, কিন্তু জেতার নেশা ছাড়ি কী করে?” জেনিফার প্রথম নারী যিনি পুরুষদের বিভাগে জাতীয় জুনিয়র দাবায় খেতাব জেতেন ১৯৯৮ সালে। মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জনের সঙ্গে সঙ্গেই তুলনামূলক সাহিত্যে স্নাতক হন। তাঁর মায়ের মতোই পোকার খেলাতেও দক্ষতা অর্জন করেন জেনিফার; পোকারের বহু প্রতিযোগিতা জেতেন। জেনিফার যুক্তরাষ্ট্রীয় দাবায় দাপুটে নারীদের অগ্রণী। ২০০৩। জেনিফার দাবা-কেরিয়ারের শীর্ষে অবস্থান করছেন। জাতীয় মহিলা দাবার শেষ পর্যায়ের খেলা। সারারাত জেগে প্রস্তুতি নিলেন জেনিফার। পরের দিন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সকাল হতে চলেছে। টানা ন-রাউন্ড ধ্রুপদী দাবার ধকল, প্রতিটি রাউন্ডে গড়ে পাঁচ ঘণ্টার লড়াই। টাইব্রেকারে মুখোমুখি জেনিফার, ইরিনা এবং অ্যানা। ১৫ মিনিটের র‍্যাপিড। রাউন্ড রবিন। তিনজনই একে-অপরের-বিরুদ্ধে লড়বেন খেতাবের জন্য। সারারাত জেগে ওপেনিং অনুশীলন করলেন জেনিফার। ওপেনিং-এ সুবিধাজনক অবস্থান পেয়ে গেলে, বাকি গেমে জিততে সুবিধে। ফাইনাল শুরু হওয়ার পরে দানাবিশ্ব দেখল অ্যানার আশ্চর্য উত্থান। ক্লান্তি কোনও ক্রীড়াবদিকে ক্ষমা করে না, জেনিফার অবিশ্বাস্য ভুল দানে হারলেন। আর, ইরিনাকে দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে পরাজয় স্বীকারে বাধ্য করলেন অ্যানা।

 

নারীজাতিকে সামাজিক রাজনীতিতে পিছিয়ে রাখার বহু নীতি বহু শতক ধরে গ্রহণ করেছে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং পশ্চাৎপদ মূল্যবোধে নারীর প্রগতিকে বেঁধে ফেলার কৌশল অগুনতি। সব দেশের সব ধরনের সমাজেই এই উদাহরণ ছড়িয়ে আছে। আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিতে দেশ উন্নত হোক আর অনুন্নত, নারী-স্বাধীনতা কোথাওই সুরক্ষিত না। সাম্প্রতিক বিশ্ব নারী-রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছিল ইরানের মৌলবাদী শাসনে। নারীকে পর্দানশীন থাকতে হবে— এমন ফতোয়া অমান্য করায় বহু নারীর জীবন বিপন্ন হয়েছে। অথচ পারস্য দেশে দাবা প্রাচীনকাল থেকে দারুণ সমাদৃত। অভিজাত থেকে আমজনতা দাবা সকলেরই প্রিয়। সেই দেশেই নারী দাবড়ুদের ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব হল— হিজাব পরে খেলতে হবে— বিদেশে খেলতে গিয়েও হিজাব খোলা যাবে না— এইসব মৌলবাদী নির্দেশে। সারাসাদাত খাদেমালশারেইয়াহ মহিলা-দাবাড়ুদের বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে ১৭ নম্বর স্থানে রয়েছেন। ইরানের শীর্ষ নারী দাবাড়ু। বিশ্ব র‍্যাপিড এবং ব্লিৎজ দাবায় অংশ নিতে কাজাখস্থান গেছিলেন। সব যাওয়ার পরে আর ফিরে আসার রূপকথা থাকে না। মৌলবাদের দত্যিদানোরা ফিরে আসার পথে হাজারো কাঁটা ছড়িয়ে রাখে, অস্ত্র নিয়ে তৈরি থাকে। সারাসাদাত দাবার বোর্ডে ব্যূহভেদী নীতিকৌশল প্রয়োগে সাবলীল। কিন্তু ফতোয়াধারীদের ব্যূহ ভাঙতে পারলেন না। হিজাব না পরে বিশ্ব দাবায় খেলেছিলেন। জানতেন দেশে ফিরলেই শাস্তির খাঁড়া নামবে। জন্মভূমি ছেড়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন তাই। সারাসাদাতের সিদ্ধান্ত সচেতন প্রতিবাদ। মাশা আমিনি হিজাব না পরায় রাষ্ট্রের দ্বারা খুন হয়েছিলেন। সারসাদাত তাঁর ব্যক্তিজীবনে প্রতিনিয়ত ফতোয়া মানতে মানতে ক্লান্ত। প্রতিবাদ তো করতেই হত। জীবনও দাবার মতোই। জয় হাসিল করতে গেলে বলিদান দিতে হয় কোনও পিস— সারাসাদাত নিজের জন্মভিটের টান বলি দিলেন। মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার মিত্রা হেজাযিপোর ২০২০ সালে মস্কোয় অনুষ্ঠিত বিশ্বদাবা প্রতিযোগিতায় খেলতে গিয়ে হিজাব পরেননি। বলেছিলেন যে, বাধ্যত এতদিন হিজাবের সঙ্কীর্ণতা মেনে নিয়েছিলেন তিনি। শোহরা বায়েৎ এশিয়ার সবচেয়ে সফল মহিলা আরবিটার। এত বড় কৃতিত্ব স্বীয় যোগ্যতায় অর্জন করেও তিনি শাসকের রোষদৃষ্টিতে পরলেন— বিশ্বখেতাবি লড়াই পরিচালনা করতে গিয়ে হিজাব প্রত্যাখ্যান করলেন। দোরসা দেরাখ্‌শানি আন্তর্জাতিক মাস্টার। ইরানের সর্বকালের অন্যতম সেরা দাবাড়ু। কিন্তু ইরানের দাবা সংস্থা তাঁকে কোনও স্বীকৃতিই দিল না ২০১৭ সালের জিব্রাল্টার ওপেনের পরে। হিজাব না পরার শাস্তিতে তাঁর প্রতি সমস্ত সাহায্য প্রত্যাহার করে নেওয়া হল। দাবাকে ভালবেসে দেশ ছাড়লেন দোরসা। এর আগে ধনুর্বিদ পারমিদা ঘাসেমি এবং ক্লাইম্বার এলনাজ রেকাবি হিজাব না পরায় শাসির কোপে পড়েছিলেন— দেশে ফিরে তাঁরা ক্ষমা চেয়ে নেন রাষ্ট্রের কাছে। অনেক ক্রীড়াবিদ্‌ই বাধ্যত এমন ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু দোরসা, মিত্রা, সোহরাহ্‌, সারাসাদাতরা প্রতিবাদ জারি রেখেছেন। নিজেদের পথে। নিজেদের কৌশলে।

সারাসাদাত খাদেমালশারেইয়াহ

দাবার ইতিহাস রাজনীতিময়। বোর্ডের ভেতরের যুদ্ধের নীতি বোর্ডের বাইরের আবহকে প্রভাবিত করে। বোর্ডের বাইরের রাজনীতি পিস-পনের গতিবিধির উদ্দেশ্য স্বচ্ছ করে তোলে। দাবার ইতিহাসে নারীবাদী রাজনীতি বহু প্রতিকূলতা জয় করে বিবর্তিত হয়েছে। ভেরা মেনচিক, গুলাম ফতিমা, মায়া চিবুরদানিজ, জুডিত পোলগার, রোহিনী খাদিলকার, কনেরু হাম্পি, সারাসাদাত খাদেমালশারেয়াহ সেই ইতিহাসের এক একটি মাইলস্টোন। আরও অনেকেই। পিতৃতন্ত্রের দ্বারা নির্ধারিত লৈঙ্গিক বাচনকে প্রতিস্পর্ধা জানাতে এঁরা বেছে নিয়েছিলেন দাবা নামক অস্ত্র। কখনও নিঃশব্দে কখনও উচ্চকিত ঘোষণায় লিঙ্গসাম্যের বাচন প্রতিষ্ঠা করেছেন। সব বৈষম্যের সব উপাদান এখনও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। লড়াই জারি আছে। বর্তমানের এবং আগামীর নারী দাবাড়ুরা ঘুঁটি সাজিয়ে প্রস্তুত হচ্ছেন নিজেদের অস্তিত্ব তুলে ধরতে।

 


[1] সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ফিশারকে জিজ্ঞেস করেন তিনি মিসোজিনিস্ট (নারীবিদ্বেষী) কিনা। ফিশার এই শব্দবন্ধটি জানতেন না। মহিলাদের ঘৃণা করেন না বলেও জানান।
[2] ম্যানুয়েল অ্যারনের লেখা “ইন্ডিয়ান চেস্‌ হিস্ট্রি (২০১৩)” বইতে এর বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। ভারতের নারী দাবাড়ুদের নিয়ে বিস্মৃতপ্রায় বহু তথ্য পেশ করেছেন অ্যারন।
[3] সমনামের মূল উপন্যাসটি ওয়াল্টার টেভিস লিখেছিলেন ১৯৮৩ সালে। ঠান্ডাযুদ্ধের আবহে লেখা উপন্যাসটিতে যুক্তরাষ্ট্রকে কাল্পনিক তথ্য/ঘটনার ভিত্তিতে দাবায় সেরা দেখানোর চেষ্টা রয়েছে। কিন্তু টেভিস নোনা, মায়া চিবুরদানিজদের সম্পর্কে এমন কোনও তথ্য পরিবেশন করেননি। বরং নিয়মিত তাঁরা পুরুষ দাবাড়ুদের পর্যুদস্ত করতেন সেই উল্লেখ রয়েছে।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4593 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...