নারীদের ভোটাধিকার ও মুক্তির পথ

অন্তরা মন্ডল

 


ধর্ষণ, ইভটিজিং, যৌন নির্যাতনের মতন ঘটনা ঘটে চলেছে‌ প্রতিনিয়ত। পশ্চিমবঙ্গের বুকে কামদুনি-পার্কস্ট্রিটের মতন ঘটনা, হায়দ্রাবাদে ডাক্তারি ছাত্রীর গণধর্ষণের পর পুড়িয়ে মারা, কাশ্মিরে নাবালিকা আসিফার ধর্ষণ এবং খুন-সহ বিভিন্ন সময়ে দলিত নারীদের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা অহরহই বেড়ে চলেছে দেশে। এছাড়াও রয়েছে ডাইনি বলে গনপিটুনি, বধূহত্যা, অ্যাসিড অ্যাটাক, নাবালিকা পাচার, অফিসের সহকর্মীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের ঘটনা, কন্যাভ্রূণ হত্যার মতন ঘটনা। ফলে দেখা যাচ্ছে, ভোটাধিকার পাওয়া সত্ত্বেও স্বাধীনতার এত বছর পরেও নারীদের অবস্থার তেমন কোনও উন্নতি হয়নি

 

নারীকে তার মৌলিক অধিকার অর্জনের জন্য বহু পথ পেরোতে হয়েছে। তাঁদের এই অধিকার আন্দোলনগুলো আঁকাবাঁকা পথে এগিয়েছিল, এগিয়ে পিছিয়ে, আবার কখনও-বা মুখ থুবড়ে পড়েছে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। তবে, এগুলো সমান্তরালভাবে চলা বিপ্লবী আন্দোলন থেকে পুষ্ট হয়েছে বরাবরই। আমরা সমাজতান্ত্রিক চিনের ক্ষেত্রে দেখেছি, মৌলিক অধিকার অর্থাৎ ভোটাধিকার, জীবনসঙ্গী নির্বাচনের স্বাধীনতা, সম্পত্তির মালিকানা, বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার ইত্যাদির দাবিতে চলা নারীদের আন্দোলন চিনের জনসাধারণের জাতীয় মুক্তির দাবিতে তৈরি চিনের বিপ্লবী আন্দোলন থেকে সহায়তা পেয়েছিল।

নারীদের একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার হল ভোটাধিকার। বিভিন্ন দেশে নারী ভোটাধিকার অর্জন করেছে বিভিন্ন সময়ে‌। যদিও এটা তারা সহজে পায়নি। নারীর ভোটাধিকার অর্জন দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল। গত শতকের শুরুতেও প্রথম বিশ্ব অর্থাৎ ইউরোপের দেশগুলোতে নারীর ভোটাধিকার ছিল না। ইউরোপের দেশগুলোতে সর্বপ্রথমে নারী পূর্ণ ভোটাধিকার অর্জন করে সমাজতান্ত্রিক রাশিয়াতে কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে বিপ্লবের পরে।

 

নারীর ভোটাধিকার অর্জন গুরুত্বপূর্ণ কেন?

নারীর ভোটাধিকার অর্জন একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক রাজনৈতিক অধিকার। সম-রাজনৈতিক অধিকার ছাড়া কেউই— কোনও রাষ্ট্রই নারীকে তার প্রাপ্য বাকি মৌলিক অধিকার দেয়নি। রাষ্ট্র সবসময় চেয়েছে নারীকে তার জীবনের রাজনৈতিক দায়িত্ব কর্তব্য থেকে সবসময় দূরে সরিয়ে রাখতে। কিন্তু পারেনি। গত শতকের শুরু থেকেই প্রায় সমস্ত দেশেই নারী এগিয়ে এসেছে ধীরপায়ে তার সম-রাজনৈতিক অধিকার অর্জনে। শ্রেণিবিভাজিত সমাজে পুরুষের মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে, রাজনৈতিক অধিকারহীন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে না থেকে নারী এগিয়ে এসেছে সমাজে, পার্টিতে, সরকার গঠনে, সংসদে তাঁদের ভূমিকা বজায় রাখতে, তাঁদের মৌলিকত্ব রক্ষার্থে এবং পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়তে এবং সমাজের উপরিকাঠামোয় পরিবর্তন এনে নারীমুক্তির দাবিতে। নারীর এই মৌলিক অধিকার অর্জনে গত শতকের শুরুর দিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক দলগুলির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমশ ইউরোপীয় দেশগুলোতে এবং আমেরিকায় নারী ভোটাধিকার পায় তবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো যেগুলো মূলত ইউরোপীয় দেশগুলোর কলোনি ছিল, সেখানে নারীর ভোটাধিকার তখনও স্বীকৃত হয়নি।

 

ভোটাধিকার অর্জন আন্দোলনের ইতিহাস

সমগ্ৰ পৃথিবীতে নারী ভোটাধিকার পেয়েছে লড়াই করে। আমেরিকা, ইউরোপ-সহ সমস্ত জায়গাতেই। ১৮৯৩ সালে নিউজিল্যান্ডের নারীরা ভোটের অধিকার অর্জন করেন, এটাই ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে নারীর সর্বপ্রথম ভোটের অধিকার অর্জন।

ব্রিটেনের এমেলিন প্যাঙ্কহার্স্ট ১৯০৩ সালে নারীর ভোট দেওয়ার মৌলিক অধিকারের জন্য Women’s Social and Political Union নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের মহিলা কর্মীরা বহু ব্যঙ্গবিদ্রূপের এবং ঘৃণা-বিদ্বেষের শিকার হন এবং শেষ পর্যন্ত ১৯১৮ সালে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান প্রথমবারের মতন তাও শর্তের বিনিময়ে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট শর্ত দিয়েছিল সম্পত্তির মালিকানা থাকলেই তবে ভোট দেওয়া যাবে। পূর্ণ ভোটের অধিকার পেতে আরও পথ পেরোতে হয়েছে ব্রিটিশ নারীকে।

এরপরে, ১৯২০ সালে আমেরিকার নারীরা ভোট দেওয়ার অধিকার লাভ করেন। তবে তীব্র বর্ণবিদ্বেষের কারণে কালো বর্ণের নারীদের ভোট দিতে দেওয়া তখনও হত না নানারকম ছুতোয়।

সোভিয়েত ইউনিয়নে বিপ্লবের বিজয়ের পর নারীর পূর্ণ ভোটাধিকার দেওয়া হয়েছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমস্ত দেশেই নারীদের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়।

এছাড়াও জাপানের নারী ১৯৪৭ সালে, সুইজারল্যান্ডের নারীরা ১৯৭১ সালে ভোটাধিকার পান। সুইজারল্যান্ডের মতন প্রথম বিশ্বের দেশেও নারীর ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়েছে মাত্র কিছু বছর আগেই। সেখানে দাঁড়িয়ে তৃতীয় বিশ্বের দেশে নারীর ভোটাধিকার স্বীকৃত হলেও তারা কতটা সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারত সেই বিষয়ে একটি আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

ভারতবর্ষে নারী ভোটাধিকার পায় স্বাধীনতার পর ১৯৫০ সালে দেশের সংবিধান স্বীকৃত হওয়ার পরই। ইংল্যান্ডের কলোনি হওয়ায় সে-দেশের মতনই শুধুমাত্র তাঁরাই ভোট দিতে পারত যাদের জমির মালিকানা ছিল। পরবর্তীকালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এই নীতির পরিবর্তন করা হয়।

 

ভোটাধিকার অর্জনের মাধ্যমে নারীর কি সত্যিই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে?

আমার দেশ ভারতবর্ষ। এখানে নারী ভোটাধিকার পায় ১৯৫০ সালে। কিন্তু ভোটাধিকার কি দেশের নারীর অবস্থার কোনও পরিবর্তন ঘটিয়েছে? পরাধীন থাকার পর দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালনও করে ফেলেছে বিগত বছরে। হয়েছে বিরাট উদযাপন, প্রচার। কিন্তু আমাদের মেয়েদের মায়েদের অবস্থা এখন কেমন? আসুন দেখি—

এক. সাল ২০২৩, মাস জুলাই। হঠাৎই সারাদেশে তোলপাড়, ছি ছি। খবরে শিরোনামে তখন দগদগে ক্ষতর মতন দেখাচ্ছে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ও পরে গণধর্ষণের হেডলাইন। এক্স হ্যান্ডেলে ভাইরাল সেই ভিডিও। শিউরে উঠেছিলাম। খবরটা ছড়িয়ে গেছিল বিশ্বজুড়ে।

দুই. স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে জেল থেকে ছাড়া পেলেন বিলকিস বানোর গণধর্ষণকারীরা। কী অজুহাতে? তারা ক্ষমতার মাথায়, ব্রাহ্মণ। গুজরাত সরকারের তৈরি মাননীয় উপদেষ্টা দলের মতে ব্রাহ্মণরা এরূপ কোনও অন্যায় করতেই পারেন না। ভাবা যায়? একটি গণতান্ত্রিক দেশে অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে কারণ তারা জাতে উচ্চবর্ণের হিন্দু তাই। এই কি গণতন্ত্র, নারীর পক্ষে সমাজ?

তিন. নদিয়া জেলার হাঁসখালিতে ধর্ষণ এবং পরে খুনের ঘটনার শিকার এক নাবালিকা। গণধর্ষণের পর খুন করে তার দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যে রয়েছেন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন “মেয়েটি আদৌ ধর্ষিতা হয়েছে নাকি প্রেগন্যান্ট নাকি লাভ অ্যাফেয়ার্স ছিল?”

চার. চুরির অপরাধে বিবস্ত্র করে মারধর করা হল মালদহের দুই নারীকে।

পাঁচ. ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশের হাথরস জেলায় চারজন উচ্চবর্ণের পুরুষ ১৯ বছর বয়সি দলিত তরুণী মেয়েকে গণধর্ষণ করে হত্যা করে। অভিযোগ ওঠে, ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুলিশ পরিবারের অনুমতি ছাড়াই মেয়েটির সৎকার করে দেয়। এ নিয়ে খবর যে সাংবাদিক করেন তাঁর শাস্তি হয় কালাআইন ইউএপিএ-তে।

ছয়. বিজেপির নেতা ও লোকসভার সদস্য এবং ভারতের রেসলিং ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিং-এর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে বসেন অলিম্পিক পদক পাওয়া সাক্ষী মালিক-সহ আরও বহু নারী এবং পুরুষ। প্রত্যেকেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন খেলোয়াড়। প্রতিবাদে সামিল হন ভিনেশ ফোগট এবং গীতা ফোগটরাও।

এগুলো ছাড়াও ধর্ষণ, ইভটিজিং, যৌন নির্যাতনের মতন ঘটনা ঘটে চলেছে‌ প্রতিনিয়ত। পশ্চিমবঙ্গের বুকে কামদুনি-পার্কস্ট্রিটের মতন ঘটনা, হায়দ্রাবাদে ডাক্তারি ছাত্রীর গণধর্ষণের পর পুড়িয়ে মারা, কাশ্মিরে নাবালিকা আসিফার ধর্ষণ এবং খুন-সহ বিভিন্ন সময়ে দলিত নারীদের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা অহরহই বেড়ে চলেছে দেশে। এছাড়াও রয়েছে ডাইনি বলে গনপিটুনি, বধূহত্যা, অ্যাসিড অ্যাটাক, নাবালিকা পাচার, অফিসের সহকর্মীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের ঘটনা, কন্যাভ্রূণ হত্যার মতন ঘটনা। সামনে এসেছে স্ত্রীর সাফল্য রুখতে স্বামীর দ্বারা স্ত্রীর হাত কেটে নেওয়ার মতন ঘটনাও‌। খবরে দেখেছিলাম, সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে টিউশনে যাওয়া বন্ধ করেছে উত্তরপ্রদেশের সরকার, তাতে নাকি মেয়েদের সম্মানহানির ভয় থাকবে না। করোনার পর স্কুলছুট, অল্প বয়সে বিয়ে ইত্যাদিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

তাহলে আমরা দেখলাম, ভোটাধিকার পাওয়া সত্ত্বেও স্বাধীনতার এত বছর পরেও নারীদের অবস্থার তেমন কোনও উন্নতি হয়নি। পিছনে ফিরলে দেখতে পাই, গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষের গর্ব সেনাবাহিনির (অসম রাইফেলস) দ্বারা মণিপুরে মনোরমা নামক এক নারীর গণধর্ষণ ও গুলি করে হত্যার ঘটনা। পরবর্তীকালে মণিপুরের মায়েদের প্রতিবাদ এবং ইরম শর্মিলা চানুর অনশনের ঘটনাও বিখ্যাত।

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মহিলাদের অবস্থা আরও তথৈবচ, পুলিশ-সেনাবাহিনির হাতে যৌননির্যাতন ও হেনস্থার ঘটনা আজকাল কমন হয়ে গেছে আদিবাসী-অধ্যুষিত অঞ্চলে। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলিতে দেখা যায়, মাওবাদী সন্দেহে নারীদের স্নানের জায়গার মতন ব্যক্তিগত গোপনীয় স্পেসেও পুলিশের ঢুকে পড়ার, উঁকিঝুঁকি মারার খবর।

 

উপসংহার

সেই সুদূর অতীত থেকে আজ অব্দি নারীকে তার রাজনৈতিক সামাজিক অধিকার রক্ষায় যখনই প্রতিবাদে নামতে হয়েছে তখনই তারা আক্রান্ত হয়েছে রাষ্ট্রের দ্বারা, কখনও বা রাষ্ট্রের কারবারীদের দ্বারা।

নারী ভোটাধিকার পেয়েছে বহু বছর পার হয়েছে কিন্তু আজও সমাজে রাষ্ট্রে নারীর নায্য সামাজিক অধিকার রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে কি? পেরেছে কি নারী পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে? পুরুষতন্ত্রকে সমূলে উৎপাটন করতে?

উপরের উদাহরণগুলো মনে হয় সেদিকে ইঙ্গিত করে না। সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব থাকলেও নারীর অবস্থার সেরূপ উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। আজও তাঁরা আক্রান্ত, অসহায়, ধর্ষিতা।

তাহলে কি নারীর অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়?

অবশ্যই সম্ভব। নারীর সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন তখনই সম্ভব যখন সমাজের উপরিকাঠামোয় পরিবর্তন‌ না হয়ে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভিত্তিতে পরিবর্তন হবে। পুরুষের মতন শুধু ভোটাধিকার নয়, পুরুষের মতন নারী যখন সম্পত্তিতে ও উৎপাদনের ভিত্তিতে সমান অধিকার অর্জন করবে তখনই তার সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হওয়া সম্ভব বাস্তবিক অর্থেই। নারীস্বাধীনতার জন্য প্রয়োজন উৎপাদনযন্ত্রে নারীর অধিকার, সমকাজে সমমজুরি, শিক্ষার সমান অধিকার, বালিকাবয়সে বিবাহ বন্ধ করা, শিশুশ্রম বন্ধ করা, স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কে সমানতা স্বীকৃত হওয়া ইত্যাদি। এগুলোর একটিও উৎপাদনের ভিত্তিতে পরিবর্তন না আসা অব্দি পুরোপুরিভাবে সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সর্বহারা নারীর বিপ্লবে অংশগ্ৰহণ, কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে। বুর্জোয়াশ্রেণির মহিলাদের ভোটাধিকার আন্দোলন উপরিকাঠামোয় পরিবর্তন‌ আনলেও তা সমাজের সর্বস্তরের পরিবর্তন আনতে পারেনি। এর কারণটাই হল শাসকশ্রেণির মহিলারা শাসকের হাতের পুতুলমাত্র এবং এরাও শাসকের হাতে নির্যাতিত। সাম্প্রতিক ভারতবর্ষের কুস্তিগিরদের আন্দোলন সে-কথাই প্রমাণ করে আবার। কারণ বিদ্রোহী কুস্তিগিররা প্রত্যেকেই ছিলেন শাসকদলের সমর্থক, তাদের হয়ে তাঁরা ভোট প্রচারও করেছেন একসময়। কিন্তু যৌননির্যাতিত হয়ে আজ তাঁদেরই প্রতিবাদে নামতে হয়েছে।

বিশ্ববিপ্লবের মহান শিক্ষক এঙ্গেলস বলেছেন:

নারীদের মুক্তি এবং পুরুষের সঙ্গে তাঁদের সমতা অসম্ভব, এবং সেটাই থাকবে যতদিন তাঁদের সামাজিক উৎপাদন থেকে বাদ রাখা হবে। মুক্তি বাস্তব হবে একমাত্র যখন নারীদের ব্যাপকভাবে সামাজিক উৎপাদনে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

সমাজতান্ত্রিক চিনে কমরেড মাও-এর নেতৃত্বে “যা কিছু পুরুষেরা করতে পারে তা একজন নারীও করতে পারে”— এই স্লোগানকে সামনে রেখে সামাজিক উৎপাদনে নারীদের প্রবেশ ঘটেছিল। এইভাবেই সমাজতান্ত্রিক চিনে নারী সামন্ততান্ত্রিক বন্ধনগুলি থেকে নিজেদের বের করে এনেছিল।

ঠিক একইভাবে ভারতবর্ষেও নারীদের সামাজিক উৎপাদনের ভিত্তিতে নিয়ে আসতে হবে, নিয়ে আসার প্রয়োজন রয়েছে এখনই।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4664 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...