Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ল্যমার্ক নয়, ওয়ালেস নয়, শুধু ডারউইন

অশোক মুখোপাধ্যায়

 


একালের ধার্মিকগণ স্পষ্টবক্তা ল্যমার্ক সম্বন্ধে ভারি উদাসীন কিংবা সহনশীল। তাঁকে নিয়ে কেউ কোনও কার্টুন বানায় না। অথচ, স্বল্পবাক্‌ ডারউইনকে তারা যেন সহ্যই করতে পারে না। নাম শুনলেই ভয়ানক তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। তাঁকে নিয়ে কত কার্টুন, কত রকমের ব্যঙ্গচিত্র! এর পেছনে নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু কারণ আছে। সেটা কী— আমাদের খুঁজে বের করতে হবে

 

পূর্ব-প্রসঙ্গ: ডারউইন, গুডবাই!

জীবজগতের যে পরিবর্তন হয়, একরকমের প্রাণী বা উদ্ভিদ থেকে অন্যরকমের প্রাণী বা উদ্ভিদের জন্ম হতে পারে— এটা ডারউইনই প্রথম বলেছিলেন, এমন নয়। গ্রিক পণ্ডিতদের মধ্যে কেউ কেউ এমন সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। ব্যাবিলন বা ভারতের আদি প্লাবনের গল্পে এরকম সম্ভাবনার ইঙ্গিত আছে। সেইসব কথা বেশ প্রাচীন, ডারউইনের আবির্ভাবের অন্তত দু হাজার বছর বা তারও বেশি আগেকার কথা। ঐতিহ্যপন্থীরা অনেকে দাবি করে থাকেন, ভারতীয় পৌরাণিক সাহিত্যে বিষ্ণুর দশ অবতার তত্ত্বের মধ্যেও নাকি বিবর্তনবাদের বীজ লুকিয়ে রাখা আছে। এই যে বিষ্ণু ওরফে ভগবান কখনও মাছ, কখনও কচ্ছপ, পরে শুয়োর, ইত্যাদি হয়ে এককালে এসে নররূপ ধারণ করল (অ্যামিবা, কৃমি বা কেঁচো থেকেই বা বিষ্ণু কেন অবতরণ বা উত্তরণ শুরু করেনি, সেই প্রশ্ন আপাতত মুলতুবি রেখেই এগোনো ভাল), এক অরবিন্দ-শিষ্য একবার বলেছিলেন, তার মধ্যেও নাকি নানারকম প্রাণীর রূপান্তরের তথা বিবর্তনের ধারণা ছিল।

বেশ বেশ।

তা, ধর্মশাস্ত্রীদের তরফে সেইসব গ্রিক পণ্ডিত, নোয়া, বিবস্বত মনু, অথবা বিষ্ণু পুরাণের বিরুদ্ধে কখনও বিষোদ্গার করতে দেখা যায় না। বিজেপি-র কোনও মন্ত্রীকে বলতে শুনবেন না, আমার বাপ-ঠাকুরদা যখন মাছ থেকে কচ্ছপ বা কচ্ছপ থেকে বরাহের রূপান্তর দেখেনি, তখন এইসব পুরাণকাহিনি সর্বৈব মিথ্যা গুলগপ্পি! কোনও খ্রিস্টান ধর্মতাত্ত্বিক বা ইসলামি উলেমাকেও বলতে শুনিনি— নোয়ার গল্পটল্প সব বাজে কথা। একটা নৌকায় আর কতরকমের প্রাণী তোলা যায়?

বাইবেল এই ব্যাপারে সবচাইতে খাসা। সেখানে একই বইতে একসঙ্গে দুটো সৃষ্টিতত্ত্ব আগুপিছু করে সমান্তরালে চলতে দেখা যায়। একটাতে আছে ছয় হাজার বছর আগেকার ছয় দিনের সৃষ্টিতত্ত্ব; আর একটাতে আছে ব্যাবিলনীয় জগৎ ও জীবন সৃষ্টির লম্বা কাহিনি। ইহুদি এবং ইসলামি ঐতিহ্যেও সেই দুই ভিন্ন কাহিনিই এক সঙ্গে গ্রাহ্য। কোনও ধর্মের লোকেদেরই তাতে গাত্রজ্বালা ধরেছে বলে ৩০ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত আমার কাছে কোনও খবর বা খবরের লিঙ্ক নেই। কেউ দেখাতে পারলে বাধিত হব। তাঁরা যখন দাবি করেন, ডারউইনের তত্ত্ব বাদ দিয়ে বাইবেল বা কোরানের সৃষ্টিতত্ত্ব পড়াতে হবে, তখন আবার কোনটা পড়াতে বলেন তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন না। ভাবখানা হল, কোনও একটা পড়ালেই তাঁরা খুশি।

ইউরোপে রেনেশাঁস-পরবর্তী কালে অনেকেই নানা কারণে— নিছক দেশভ্রমণ, অন্য দেশের সম্পদ লুঠ, দাস সংগ্রহ ও কেনাবেচা, ইত্যাদি— জাহাজে চেপে এদিক ওদিক বহু জায়গায় ঘুরেছেন। এই ভ্রমণকালে তাঁরা লক্ষ করেছেন অনেক নতুন ধরনের প্রাণী, গাছপালা, যা তাঁরা নিজেদের দেশে দেখতে পাননি। তা থেকেই তাঁদের মধ্যে নানারকম কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। এই জাতীয় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে অষ্টাদশ শতাব্দ থেকে অনেক প্রকৃতিবিদই বিভিন্ন দিক থেকে বিবেচনা করে জীবজগতের বিবর্তনের কথা বলেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন ফরাসি বস্তুবাদী দার্শনিক দনিস দিদরো, জার্মানির গণিতজ্ঞ পিয়র লুই মাওপারতুই, ডারউইনের ঠাকুরদা ইরাসমাস ডারউইন, বিখ্যাত পর্যটক ও প্রকৃতিবিদ আলেজান্ডার হুমবোলট, ফ্রান্সের জাঁ ক্যুভিয় কিংবা কোঁত দ্য বুফোঁ, প্রমুখ। আরও অনেকের নামও করা যায়।

উনিশ শতকের প্রথম বিশিষ্ট এবং শক্তিশালী বিবর্তনবিদ হলেন জ্যাঁ ব্যাপ্তিস্ত ল্যমার্ক— যিনি বস্তুত একটা বেশ প্রণালীবদ্ধ নিরীশ্বরবাদী ব্যাখ্যা উপস্থিত করেন প্রাণীজগতের প্রজাতির রূপান্তরের ব্যাপারে ১৮০৯ সালে প্রকাশিত একটা বেশ বড় বইতে। সেই যে বছর চার্লস ডারউইন জন্মগ্রহণ করেন। অনেকে তাঁকে বলেছেন নিরাকার ঈশ্বরবাদী (deist)। কিন্তু যাঁরা তাঁর লেখাপত্র পড়েছেন, তাঁরা এটা মানতে পারেন না। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের নেচার পত্রিকায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক জানিয়েছেন,ল্যমার্ককে নিরাকার ঈশ্বরবাদী বলা মুশকিল, সে বিভিন্ন গ্রন্থকাররা যাই বলুন। লোকেদের যে একটা ঈশ্বর-ধারণা আছে, তা তিনি অস্বীকার করেননি, কিন্তু মানবজাতির জানার রাস্তা যেহেতু দাঁড়িয়ে আছে বস্তুগত উপাদান আর তাদের ধর্মের উপর, ভগবান সম্পর্কে কিছুই বলা সম্ভব নয়। ল্যমার্কের কাছে প্রকৃতির কোনও উদ্দেশ্য নেই, অন্তিম কোনও লক্ষ্য নেই— এক কথায়, প্রকৃতির কোনও বিশেষ উদ্দেশ্যে যাত্রা নেই।[1]

আরও অনেক কাল আগে বিজ্ঞানের ইতিহাস লেখক জ্যাক্‌স রজার দেখিয়েছেন,ল্যমার্ক কোনও আধিদৈবিক সূত্র অনুসরণ করার কথা ভাবেননি, সেই অর্থে তিনি বস্তুবাদী, … তাঁর ঈশ্বরতত্ত্ব খুব অস্পষ্ট ছিল, এবং ঐশ্বরিক সৃষ্টিতত্ত্বের কথা বললেও তিনি এটা মনে না করে পারেননি, প্রকৃতির সমস্ত কিছুই, এমনকি জীবনের চরম প্রকাশও, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই উদ্ভূত।”[2]

এই সমালোচকগণ ল্যমার্ককে চিনলেও তাঁর দর্শনটাকে ভাল করে লক্ষ করেননি। তাঁরা সম্ভবত জানেন না, নিকলাস দ্য কুসা, জিওর্দানো ব্রুনো, বারুখ স্পিনোজা থেকে শুরু করে সমস্ত নিরাকার ঈশ্বরবাদীরা আসলে ঈশ্বরকে প্রাকৃতিক নিয়মের ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে তার পরমায়ু আরও কিছু দিনের জন্য বাড়িয়ে দিতে চান। আসলে, “In modern civilised societies, alongside the efforts to limit the powers of kings, came the trend towards “natural religion” and to deism, that is, to a system of ideas wherein the power of God is restricted on all sides by the laws of Nature. Deism is celestial parliamentarism.” বলেছেন রাশিয়ার এককালের একজন নামকরা চিন্তাবিদ, গেওর্গি প্লেখানভ।[3] এই মতানুযায়ী স্বর্গে বসে ঈশ্বর আর আগের মতো মর্ত্যলোকের সবকিছু ইচ্ছামতো চালাতে পারে না। জাগতিক নিয়মের গণ্ডির মধ্যে থেকেই তাকে কাজ করতে হয়। ল্যমার্কের বক্তব্যও ছিল আসলে এটাই।

নেপোলিয়ঁর রাজসভায়ও তিনি এই বইটির জন্য খাতির পাননি। বরং কিছুটা অসম্মানিত হয়েছেন।

হ্যাঁ, ফরাসি বিপ্লবের সন্তান ল্যমার্ক কিন্তু তাঁর বিবর্তন বিষয়ক সেই বইতে সরাসরিই প্রাচীন ধর্মীয় ধ্যানধারণা সম্পর্কে কিছু কিছু কড়া কথা বলেছিলেন। এই যেমন, তিনি এক জায়গায় একেবারে স্পষ্ট ভাষায় বলে ফেলেছিলেন, “The ancient philosophers felt the necessity for a special exciting cause of organic movements; but not having sufficiently studied nature, they sought it beyond her; they imagined a vital principle, a perishable soul for animals, and even attributed the same to plants; thus in place of positive knowledge, which they could not attain from want of observations, they created mere words to which are attached only vague and unreal ideas.” সুতরাং এর ভিত্তিতে তাঁর সাধারণ সিদ্ধান্ত হল: “যখনই আমরা প্রকৃতিকে ছেড়ে আসি এবং আমাদের কল্পনার ডানা মেলে দিই বিচিত্র আজগুবি ভাবনা ধারণার আকাশে, আমরা ধোঁয়াশার মধ্যে হারিয়ে যেতে থাকি আর আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টাই বিভ্রান্তিতে গিয়ে শেষ হয়। আমরা সেই জ্ঞানই কেবল অর্জন করতে পারি এবং ভবিষ্যতেও করতে থাকব, যা নিরন্তর প্রকৃতির নিয়মকে অধ্যয়ন করার মধ্যে সীমিত থাকবে; প্রকৃতির বাইরে গেলে পাব শুধুই গোলমেলে আর মনগড়া ভাবনা: এই আমার বিশ্বাস।”[4]

সোজা কথায়, ল্যমার্কের মতে, প্রাচীনকালের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে বা পবিত্র বলে মান্য শাস্ত্রসমূহে যা কিছু লেখা আছে জীবজগতের ব্যাপারে, তা নিতান্তই ভ্রান্ত অবাস্তব এবং মনগড়া। আর সেই জন্য তা ভয়ানক অকাজের। সত্য জানতে হলে, জীবজগৎকে ভাল করে বুঝতে হলে প্রকৃতিকে অধ্যয়ন করা, প্রাকৃতিক নিয়ম অনুধাবন করাই একমাত্র উপায়। অতিপ্রাকৃতিক উপায়ে চাইলেও কোনও ব্যাপারেই কিছু জানা যাবে না।

তথাপি তাঁর উপর মৌলবাদীদের খুব একটা রাগ করতে দেখা যায় না।

প্রসঙ্গত বলি, ল্যমার্কের মতবাদ কিন্তু বেশ জনপ্রিয় আজ অবধিই। তাঁর প্রাণী বিবর্তনের ব্যাখ্যাও বেশ সরল এবং যে কেউ সহজেই বুঝতে পারে। আমাদের সাধারণ জ্ঞান বা বোধভাস্যির সঙ্গে ভারি চমৎকারভাবে মিলেও যায়। আফ্রিকায় এক সময়ে একপাল জিরাফ বড় বড় গাছের উঁচু ডাল থেকে পাতা খেতে চেষ্টা করছিল। সেই জিরাফদের গলায় টান পড়ে পড়ে কিছুটা লম্বা হয়ে যায়। তাদের বংশধর জিরাফগুলি একই চেষ্টা করতে গিয়ে গলা আরও লম্বা করে ফেলে। এইভাবে কয়েক প্রজন্ম পরে সমস্ত জিরাফের গলাই বেশ লম্বা হয়ে গেল! এরকম ব্যাখ্যা শুনলে বুঝে নিতে দারুণ সুবিধা হয়। এর একটা গোলমেলে পরিণতি হচ্ছে যে, এই যে যাঁরা ডারউইনের তত্ত্বেরই সমর্থক, তাঁদেরও অনেকেই কার্যকালে এরকম ল্যমার্ক-মার্কা ভাষ্য দিয়েই বিবর্তন বোঝেন ও বোঝান। স্কুলে কলেজে যাঁরা বিষয়টা পড়ান, তাঁদেরও অনেকে ডারউইনের নাম বলে ল্যমার্কের ভাষ্যই শিখিয়ে দেন। দুটোর মধ্যে তফাত ঠিক কোথায় তা তাঁরা সম্ভবত সঠিকভাবে বোঝেন না। যাঁরা ঠিক জিনিসটা জানেন এবং বোঝেন, তাঁরাও অন্যকে বোঝানোর দায়িত্ব সচরাচর গ্রহণ করেন না। ডারউইন দিব্যি ল্যমার্কীয় ছদ্মবেশে হাতে হাতে বা মগজে মগজে ঘুরতে থাকেন।

ধরুন, এই যে বহুল প্রচলিত কথাটা— “ডারউইনের মতে বানর থেকেই মানুষের উদ্ভব হয়েছে”— এটা কিন্তু শুধুই একটা ভুল ধারণা নয়। এর মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে আছে ল্যমার্কের বিবর্তন সংক্রান্ত ধারণা। অর্থাৎ, এরকম একটি ধারণা যে অতি প্রাচীনকালে কিছু বানর নানা প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার কারণে গাছ থেকে নেমে আসতে বাধ্য হয় এবং সেই থেকে তারা মাটিতেই বসবাস ও খাদ্যসংগ্রহ শুরু করে। তারপর তারা মাঝেমাঝে সামনের দুই পা দিয়ে কিছু আঁকড়ে ধরা, গাছ থেকে ফল পাতা পেড়ে নেওয়া, ইত্যাদি করতে করতে দুই পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে শেখে। তারা যতটা পরিবর্তিত হয়, সেই বৈশিষ্ট্যগুলি পরবর্তী প্রজন্মের শাবকদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। লেজের ব্যবহার কমে আসতে থাকে বলে তা ছোট হতে থাকে। এইভাবেই এক সময় তাদের কয়েক প্রজন্ম পরের বংশধররা লেজ খসিয়ে দিব্যি মানুষ হয়ে যায়। যদি বিশ্বাস না হয়, ১৯৫০-এর দশকে লেখা বিশিষ্ট মার্কসবাদী চিন্তাবিদ দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের “বিজ্ঞান কী” শীর্ষক চমৎকার পুস্তিকাটি পড়ুন। দেখবেন সেখানেও অনেকটা এরকম কথা লেখা আছে: “এ কথা আজ আর কে না জানে যে আদ্যিকালের একদল বনমানুষই বদলাতে বদলাতে, বদলাতে বদলাতে, শেষ পর্যন্ত মানুষ হয়ে গিয়েছিল।”[5] তারপরে সেই বদলানোর কার্যকারণ ব্যাখ্যা আছে। উপরে যেমনটা বলেছি। প্রায় হুবহু।

কিন্তু কথা হল, দেবীপ্রসাদ বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন না। তিনি নিশ্চয়ই তাঁর আশেপাশে ঘোরা বিজ্ঞানপড়ুয়া বন্ধুদের কাছে বিবর্তনের ধারায় মানুষের উদ্ভব সংক্রান্ত বিষয়ে যা শুনেছিলেন, পরম বিশ্বাসে সেইমতোই লিখে রেখে গিয়েছিলেন। সুতরাং ভুলটা তাঁর একার নয়। বা সেই ভুলের দায়িত্বও শুধুই তাঁর নয়। এইরকম ভ্রান্ত ল্যমার্কীয় উপলব্ধিই বহু কাল ধরে আমাদের অধিকাংশের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

ডারউইন কিন্তু তাঁর সেই ভুবনখ্যাত প্রজাতির উদ্ভব প্রসঙ্গে বইতে নানা জায়গায় সুযোগ এলেও ঈশ্বর সম্পর্কে কোথাও খুব একটা বিরূপ মন্তব্য করেননি। বরং ভদ্রতার খাতিরে এবং খুব সম্ভবত তাঁর স্ত্রী এমার ভক্তিবাদী ধর্মীয় আবেগকে সম্মান জানিয়ে ভগবান সম্পর্কে তিনি নিজের মতামত প্রায় চেপেই রেখেছিলেন। আত্মজীবনীতে অবশ্য ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনি ১৮৩৬-এর পর থেকে আর ঈশ্বরকে তেমন আমল দিতেন না! ভক্তি চটে গিয়েছিল। কেন বা কীভাবে— সেই কাহিনিই তো এই রচনার প্রধান উপপাদ্য।

অথচ একালের ধার্মিকগণ স্পষ্টবক্তা ল্যমার্ক সম্বন্ধে ভারি উদাসীন কিংবা সহনশীল। তাঁকে নিয়ে কেউ কোনও কার্টুন বানিয়েছে বলে শুনিনি। এই যেমন জিরাফের লম্বা গলার উপরে তাঁর মুখ বসিয়ে কি দু-চারটে ব্যঙ্গাত্মক ছবি আঁকা যেত না! কিন্তু কেউ করেনি। অথচ, স্বল্পবাক্‌ ডারউইনকে তারা যেন সহ্যই করতে পারে না। নাম শুনলেই ভয়ানক তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। তাঁকে নিয়ে কত কার্টুন, কত রকমের ব্যঙ্গচিত্র!

এর পেছনে নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু কারণ আছে। সেটা কী— আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আর পাশাপাশি ল্যমার্কের চিন্তাধারার সঙ্গে ডারউইনীয় ব্যাখ্যার পার্থক্য কোথায় তাও বুঝে নিতে হবে। কেন ডারউইন বলতে গিয়েও আমরা অধিকাংশ লোক ল্যমার্কের বয়ানই বলে যেতে থাকি, বোঝা দরকার।

 

(ক্রমশ)


[1] Corsi 2009, 167. মোটা হরফ আরোপিত।
[2] Roger 1986, 291.
[3] Plekhanov 1976, 341.
[4] Lamarck 1914, 211-12.
[5] চট্টোপাধ্যায় ২০১৪, ২৩১-৩২।