Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

স্তন

সোনিয়া কামাল

 

অনুবাদ : সাগরিকা শূর

লেখক পরিচিতি : পুশকার্ট পুরস্কারের জন্য মনোনীত সোনিয়া কামাল পাকিস্তানি ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘এন আইসোলেটেড ইনসিডেন্ট’ টাউনসেন্ড অ্যাওয়ার্ড ফর ফিকশন এবং কে এল এফ ফ্রেঞ্চ প্রাইজ ফিকশন প্রতিযোগিতায় ফাইনালিস্ট ও অ্যামাজন রাইসিং স্টার পিক মনোনীত হয়। ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’, ‘টেড এক্স’, ‘দ্য গার্ডিয়ান’, ‘শিকাগো কোয়ার্টার্লি রিভিউ’, ‘বাজফিড’, ‘ক্যাটাপুল্ট’, ‘দ্য মিসিং স্লেট’, ‘দ্য অ্যাটলান্টা জার্নাল কন্সিটিটিউশন’, ‘হাফিংটন পোস্ট’, ‘লিটারারি হাব’, ‘দ্য রুম্পাস’, ‘দ্য নর্ম্যাল স্কুল’, ‘আর্টস অ্যালট’ ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় তাঁর লেখা প্রকাশিত৷ সোনিয়ার প্রবন্ধ ও ছোটগল্প ‘দ্য বেস্ট এশিয়ান শর্ট স্টোরিস’ পুরস্কারপ্রাপ্ত সংকলনে জায়গা করে নিয়েছে। তাঁর ছোটগল্প ‘ফসিলস’ অ্যাগনেস স্কট ২০১৭ ফেস্টিভ্যাল অ্যাওয়ার্ড ফর ফিকশনে ভূষিত হয়। সিকোয়েস্ট্রাম এডিটর’স রিপ্রিন্ট অ্যাওয়ার্ড, পেটন জেমস ফ্রি ম্যান প্রাইজ, দ্য এগনেস স্কট ফেস্টিভ্যাল অ্যাওয়ার্ডের জন্য তাঁর লেখা মনোনীত হয়। সোনিয়া স্যুগার মিউলস লিট্যারারি ম্যাগাজিনের সাউথ এশিয়ান সংখ্যা ‘নো প্লেস লাইক আ হোম’ সম্পাদনা করেন— এটি ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার স্মৃতিচারণ, কবিতা ও গল্পের একটি যুগান্তকারী সংকলন। তিনি সেন্ট জন্স কলেজ (লিবারেল আর্টস স্নাতক) থেকে সুসান বি. ইরেন অ্যাওয়ার্ড এবং জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পল বোলেস ফিকশন ফেলোশিপ পান। সোনিয়া পাকিস্তানের মেয়ে হলেও ইংল্যান্ড ও সৌদি আরবে বড় হয়েছেন এবং বর্তমানে জর্জিয়ায় থাকেন।

স্তন আসলে বেশ বড়সড়ো একখানা মাংসের তাল। এক একটা স্তন দেহ থেকে মুক্ত করা মানে অন্তত সাত পাউন্ড ওজনের হাত থেকে নিস্তার, অর্থাৎ দু’দিকের দু’টো স্তন বাদ দিলে ১৪ পাউন্ড। ঠিক এরকমই সাত পাউন্ড থলথলে মাংসপিণ্ড চিরকালের মতো বিদায় নিল আমার কাছ থেকে, আশ্চর্যজনকভাবে কোনওরকম বেদনার অনুভূতি ছাড়াই। আমি তখন অপারেশন টেবিলে শুয়ে, আমাকে ঘিরে রয়েছে কিছু মানুষ, আমার জন্য চিন্তিত, ভাবিত কিছু মানুষ, ঠিক সেরকম কিছু মানুষ যারা আমার প্রতি যত্নবান এবং আমার প্রতি যত্নবান হওয়ার জন্য যারা অর্থনৈতিকভাবে দায়বদ্ধ।

এখনও অব্দি, আমার পরিবারে আমার সঙ্গেই প্রথম এই ঘটনাটা ঘটল। কারণ, এটা ঘটানো ছাড়া আমার বেঁচে থাকার আর কোনও উপায় নেই, অন্তত সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার উপায় তো একেবারেই নেই।

“ঠিকই আছে। তুই নিজেই নিজের কপাল পুড়িয়েছিস!”, একথাটা আজী আমাকে মাঝেমাঝেই বলে।

আজীকে আমার একটুকুও ভালো লাগে না।  আমি বিশ্বাস করি, সাহস থাকলে আজী নিজে একই কাজ করত। প্রচলিত ধর্মীয় মতের বিরোধিতা করলে আমাদের সালিশি সভা জিভ ছিঁড়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়, কেউ প্রথমবার চুরি করলে তার মাসুল দিতে হয় নিজের ডান হাতটাকে বিদায় দেওয়ার বিনিময়ে, আর ব্যাভিচারের শাস্তি এখানে শিশ্নচ্ছেদ। সাধারণত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সালিশি সভার বিচারের সাথে আমি একমত হই। কিন্তু, অন্য কারও বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর অপরাধে কীভাবে একজনের স্তন কেটে বাদ দেওয়ার শাস্তি ধার্য হতে পারে সেটা এখনও আমার বোধের বাইরে।

আমার সদ্যজাত মেয়েটাকে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখার পরেই ওকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়াটা নিশ্চয়ই আমার দোষ নয়। যখন প্রথমবার ওকে দেখেছিলাম, ওকে একটা ছোট কোঁচকানো হলদেটে কমলালেবুর মতো লাগছিল। ওর মাড়িহীন ছোট্ট ঠোঁট দুটো কিছু একটা চোষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। আমার মনে হচ্ছিল ও যেন আমার বুকের দুধটুকু, আমার ব্লাউজ ভিজিয়ে দিয়ে একটু একটু করে চুঁইয়ে পড়া দুধটুকু পাওয়ার জন্যই অপেক্ষা করছিল।

নাহ, ভুল ভেবেছিলাম আমি।

আজী বলেছিল, “ওই তোর পাপের শুরু।”

বরং আমার মনে হয়, আমার ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে, (না, না, ভুল বললাম, ‘ছোট্ট’, ‘ফুটফুটে’ ওসব কিছু নয়, ও শুধুই একটা মেয়ে, আর কিচ্ছু নয়), ওই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলা উচিত ছিল, “ওকে নিয়ে গিয়ে পুঁতে দাও, যাও।”

কিন্তু আমার ব্যর্থতা, আমি তা পারিনি।

অথচ, আমি কিন্তু সবসময়ই ভেবেছিলাম আমি পারব। আমাদের এখানে অনেক বাচ্চার জন্মের সময়ই আমি তাদের ধাই-মা ছিলাম। আর প্রত্যেকবার এক একটা ছেলে জন্মানোর পর আমি ওদের মায়ের চোখে খুশির ঝিলিক খেলে যেতে দেখেছি, আর মেয়ের জন্মের পর দেখেছি সেইসব মায়েদের মুখ যারা এক বুক ক্ষত আর কান্না চেপে তাদের সদ্যজাত মেয়েকে বিচারক সমাজের হাতে তুলে দিতে দিতে বলেছে, “ওকে নিয়ে গিয়ে পুঁতে দাও, যাও।”

আমি সবসময় একটা আশ্চর্য পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতাম, এমন একটা পৃথিবী যেখানে কোনও এক আশ্চর্য জাদুকর তার অলৌকিক জাদুবলে আগে থেকে বলে দেবে ঠিক কোন লিঙ্গ ভূমিষ্ঠ হতে চলেছে। তখন আর কন্যাসন্তানের জন্য কে-ই বা ন’ মাস ধরে অপেক্ষা করত? আমি তো কক্ষনও করতাম না। জাদুকাঠির ছোঁয়ার জীবন তখন অনেক সহজ। জন্মের অনেক আগেই, সদ্যজাত শিশুর মুখ দেখার আগেই, একফোঁটা দুধের জন্য ওই ছোট্ট ঠোঁট দুটোর আকুতি শোনার অনেক আগেই তাকে দিব্যি মেরে ফেলা যেত।

আমি ভেবেছিলাম আমার বোধহয় ছেলে হবে। আমার পেটটা নিচের দিকে বেশ শক্ত হয়ে ঝুলে পড়েছিল। আর মাঝে মাঝেই আমার খুব পোড়া তেঁতুল খেতে ইচ্ছে করত। আর হদ্দবোকা আমি, এসব দেখে ভেবেছিলাম, আমার নিশ্চয়ই ছেলেই হবে। এখন আমার প্রায়ই মনে হয় এই ইচ্ছেগুলোও কি আদৌ আমার, নাকি সেগুলোও অন্য কারও, খুব যত্নে লালন করা বা বলা ভালো লালন করতে শেখানো কিছু ইচ্ছে? কল্পনা কি খাবার খাওয়ার ইচ্ছে-অনিচ্ছেগুলোকেও প্রভাবিত করতে পারে? খুব খারাপ কিছু চিন্তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার মানে কি আসলে যন্ত্রণার মাত্রাটা একটু সহনীয় করে তোলা?

প্রত্যেকবার ওই কয়েক-মুহূর্ত-বয়সী মেয়েগুলোকে কবরসমিতির হাতে তুলে দিতে দিতে আমি সেইদিনের রাতের খাবার ছাড়া আর কিছু ভাবিনি। একবারের জন্যও শিউরে উঠিনি আমি, বরং প্রত্যেকবারই আমার হৃদস্পন্দন খুব স্বাভাবিক ছিল। শুধু গত সপ্তাহে ওরা যখন আমার বাচ্চাটাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়ে গেল, তখন, একমাত্র তখনই আমার বুকের ধুকপুকুনিটা হঠাৎ যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেল, আর বাড়তে বাড়তে একসময় আমার মনে হচ্ছিল ন’ মাস সাড়ে তিন সপ্তাহ পেটে ধরা ওই বাচ্চাটার সাথে আমাকেও কেন ওরা কবর দিয়ে দিচ্ছে না!

আজী আমায় পরে বলেছিল আমার ছোট্ট মেয়েটাকে যখন ওরা মাটিচাপা দিচ্ছিল তখন ও নাকি বেশ নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিল, এমনকি দু’হাতের তালুর মধ্যে লুকোনো ছোট্ট মুখটার ওপর ওরা যখন একরাশ বালি ফেলেছিল, তখনও। আমার বারবার মনে হচ্ছিল ও বোধহয় তখন খুব বেপরোয়া হয়ে গেছিল। ওর ওই চুপ করে থাকা, ওর ওই একবারও একটুও না কাঁদা, আসলে ওর সাহসের চিহ্ন। যে সালিশি সভা ওকে এভাবে দমবন্ধ করে একটু একটু করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল, তাদের সবার উদ্দেশ্যে তার একটা নীরব প্রতিবাদ।

আমার স্বামী এখন আর আমার সাথে কথা বলে না। যদিও সালিশি সভার সবার সাথেই ওর বেশ ভালোই যোগাযোগ। আমার স্বামী নাকি ওদেরকে বলেছে আমার স্তন কেটে নেওয়ার পর ও আর আমার সাথে কোনওরকম সম্পর্ক রাখতে চায় না। অবশ্য আজী বলছিল সালিশি সভা ওকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে একটা স্তন কেটে নিলেই আমার যথেষ্ট শাস্তি হবে, আমার আলাদা করে আর কোনও শাস্তির দরকার নেই। কিন্তু আমার স্বামীর বোধহয় এই যুক্তিটা ঠিক পছন্দ হয়নি।

ও নাকি চিৎকার করে বলেছিল, “ও মোটেই ভালো নয়। ওরকম বুক নিয়ে কেউ আর যাই হোক ভালো হতে পারে না।”

কিন্তু সালিশি সভা যে ওর এসব কথায় বিরক্ত হয়েছে, সেটা আশ্চর্যের কিছু নয়। বরং ওরা সবাই এই নিয়েই ঝগড়া করছিল যে আমাকে ছেড়ে দিলে আমার স্বামী আরেকটা বউ এখন কোথায় পাবে! আসলে এই মুহূর্তে এখানে আর কোনও বিবাহযোগ্যা পাত্রী অবশিষ্ট নেই। শেষ যে সুন্দরী মেয়েটা ছিল, এক বিপত্নীক পুরুষের সাথে তার বিয়ে হয়ে গেছে। একদিন হঠাৎ কুয়োয় পড়ে ওর আগের বউটা মারা যায়। ওরা বলছিল, লোকটা নাকি বউটাকে অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেনি। যদিও আমার কেন যেন মনে হয়, ও ওর বউকে শুধু ডুবে যেতেই দেখেনি, ও নিজেই ওর বউকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল, আর সেটা এই সুন্দরী মেয়েটাকে বিয়ে করবে বলেই। কিন্তু আমি যখন ভাবছিলাম ব্যাপারটা সালিশি সভায় জানাব তখনই আজী আমায় চুপ করিয়ে দিল।

“বেশি বাড়াবাড়ি করিস না। নালিশ মিথ্যে হলে ওরা কী করে তুই জানিস না? নিজের জিভটা বাদ দেওয়ার খুব শখ হয়েছে?” আমায় ধমকে আজী বলেছিল।

“না।”

কিন্তু আমি আমার বাঁদিকের স্তনটাও বাদ দিতে চাইনি।

এখন আমার মনে হচ্ছে কেন আমি তখন ওই লোকটার বিরুদ্ধে নালিশ করলাম না, তাতে আমার জিভ কেটে নিলেও কোনও দুঃখ ছিল না। আমার কপালে যদি সত্যিই অপরাধী তকমাটাই সাঁটা থাকবে তাহলে এই অপরাধের থেকে অন্তত ওটা অনেক বেশি ভালো ছিল। (কিন্তু আপাতত আমার এই অক্ষত বুকের মেয়াদ আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা।)

আমার মেয়ের মুখটা দেখামাত্রই আমি আজীর হাতটা ধরে বলেছিলাম, “একবার একটু দেখো না, কোথাও কারও কোনও ছেলে হয়েছে কিনা… ওই ওইদিকটায়… বা এ এদিকে কোথাও… দেখো না… দেখো না একটু…” আমি প্রায় পাগলের মতো ভিক্ষা চাইছিলাম যেন। কারণ, একটা ছেলে পাওয়া গেলেই আমার মেয়েটা বেঁচে যেত।

“আমি দেখে নিয়েছি। তোর দোষ, সব তোর দোষ!” আজী নিজের হাতটা সরিয়ে নিতে নিতে বলেছিল। হ্যাঁ, অবশ্যই, আমার সন্তানের মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। আমার ডেলিভারির আগে যোর বলেছিল, “আমার বউও যদি পোয়াতি হয় তাহলে তোর বাচ্চাটা বেঁচে যেতে পারে… মানে যদি তোর মেয়ে হয় আর কি…”

“যদির কথা নদীতে” যোরের কথায় এক চোট হেসে আমি বলেছিলাম। তখন আমি প্রায় সব ছেলেকে দেখেই হাসছিলাম। আর বেশ আত্মপ্রত্যয়ের হাসি হেসে আমি বলেছিলাম, “আমার বাচ্চাকে নিয়ে আমার কোনও সমস্যাই হবে না, দেখিস!”

আমার ধারণা ছিল, আমার ছেলেই হবে। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম। আমার পেটটা শক্ত হয়ে নিচের দিকে ঝুলে পড়েছিল। আর মাঝে মাঝেই আমি পোড়া তেঁতুল খেতে চাইছিলাম।

আমি বুঝব কী করে যে আমার মেয়ে হবে? কোনওরকম সর্তকতা ছাড়া আমি এত বড় ঝুঁকি নিলাম কী করে?

আমিই, হ্যাঁ, আমিই আমার সন্তানকে খুন করেছি, কারণ আমি একটি ছেলে জন্ম দেওয়ার জন্য অন্য কোনও ব্যবস্থা আগে থেকে করে রাখিনি। তাহলে অন্তত ওর একজন সঙ্গী থাকত, ওর বেঁচে থাকার একটা কারণ থাকত। এটাই এখানকার নিয়ম। কোনও মেয়ে যদি একটা ছেলের যমজ হয়ে জন্মায় তবেই তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। এখনও অব্দি যে ক’জন মেয়ে আমাদের গ্রামে আছে তারা সবাই যমজ সন্তান। কারণ সালিশি সভার ধারণা পুত্রসন্তানের যমজ হিসেবে কন্যাসন্তানের জন্ম হলে সেই মেয়েকে মেরে ফেলা অন্যায়, নাহলে তার রোষ পড়বে ওর যমজ ভাইয়ের ওপর। আমি যদি সব ছেলেদের কথা তখন ওভাবে হেসে না উড়িয়ে দিতাম! আমি যদি একবারও এটা বুঝতে চাইতাম যে ওদের ক্ষমতা ঠিক কতখানি! আর ঠিক এই নির্বুদ্ধিতাগুলোর জন্যই আজ আমার ফুটফুটে মেয়েটাকে ওরা জ্যান্ত মাটিচাপা দিল, এই বোকামির জন্যই এই মুহূর্তে আমার বাঁদিকের স্তনটা আমার শরীর থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।

আমি শুধু একবার দুধ খাওয়ানোর অনুভূতিটুকু পেতে চেয়েছিলাম। একটা মাড়িহীন ছোট্ট মুখ কীভাবে প্রচণ্ড খিদেয় একটু একটু করে আমার শরীর থেকে ওর খাবারটুকু শুষে নেবে, সেটাই জানতে চেয়েছিলাম শুধু। এমনকি আমি নিজেও ওই নোনতা নোনতা দুধের স্বাদ নিয়ে দেখেছিলাম একবার। আর আমি একটা বাচ্চাকেও এই স্বাদটা, ঠিক এই স্বাদটাই দিতে চেয়েছিলাম। সেইজন্যই সেদিন, শেষ বিকেলে, যখন দিনের আলো মরে এসেছে, সেই সুযোগে আমি যে বাচ্চাটাকে প্রথম দেখতে পেয়েছিলাম তাকেই দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলাম।

কিন্তু আজী আমায় দেখে ফেলেছিল।

“বোলো না, আজী, বোলো না কাউকে!” আমি মিনতি করেছিলাম।

কিন্তু ততক্ষণে আজী সালিশি সভার দিকে দৌড়তে শুরু করেছে। আসলে আজী, মানে আমার মা, একজন খুব সৎ নাগরিক। ওঁর নিয়মানুবর্তিতার জন্য মেয়ে হিসেবে আমার গর্ব হওয়া উচিত। নিশ্চয়ই কয়েকদিনের মধ্যেই আমি আজীকে নিয়ে গর্ব করতে শিখে যাব, বা অন্তত গর্ব করার ভান করতে শিখে যাব, কারণ না হলে ওরা আমাকেও মেরে ফেলবে। তবে, তার কয়েকদিনের মধ্যেই নিশ্চয়ই আমি মৃত্যুকেও ভালোবাসতে শিখে যাব।