Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

মার্কস-এর চিন্তা বনাম মার্কসবাদ: এক নতুন বিজ্ঞাপন

অশোক মুখোপাধ্যায়

 


মার্কস-এঙ্গেলস মিলিয়েই মার্কসবাদের আদি কাঠামো। তাতে মার্কসই প্রধান চিন্তানায়ক, এঙ্গেলস তাঁর প্রথম সার্থক লোকপ্রিয় তাত্ত্বিক ও ভাষ্যকার। প্রতিটি আর্থসামাজিক বা বিজ্ঞানের প্রশ্নে মার্কসের পাশাপাশি এঙ্গেলসকে না ধরলে, বা সচেতনভাবে বাদ দিলে আমাদের প্রায় সমস্ত বিষয়েই আধাখ্যাচড়া মার্কসবাদ নিয়ে চলতে হবে। যা সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে কোনও কাজেই আসবে না। এখানে একটি স্বাভাবিক প্রশ্ন অনেকের মনেই উঠতে পারে— এইসব শুধু-মার্কসপন্থী বুদ্ধিজীবীরা এমন একটি ভ্রান্ত উপস্থাপনার পিছনে দৌড়াচ্ছেন কেন? তাঁরা আদতে কী চান?

 

সত্যি কথা বলতে, পিটার হুডিস নামে কাউকে আমি কয়েক দিন আগেও জানতাম না। স্বাভাবিক। অত্যন্ত সংকীর্ণ এক পরিধির মধ্যে বসে লেখাপড়া করলে জ্ঞানের জগতে অনেকেরই নাম ও কাজের পরিচয় জানা হয়ে ওঠে না। কিছু দিন আগে আকস্মিকভাবেই তাঁর কথা জানতে পারলাম।

আমার এক বন্ধু, একটি বামপন্থী দ্বিমাসিক পত্রিকার সম্পাদকের তরফে একটি লেখা আমার হাতে এল। লেখক পিটার হুডিস; প্রবন্ধের শিরোনাম ‘মুসলমানদের মাঝে কার্ল মার্কস’। প্রকাশিত হয়েছিল Capitalism Nature Socialism পত্রিকার ১৫শ বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যায়, ২০০৪ সালে। সম্প্রতি সেই ইংরেজি প্রবন্ধটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন কমরেড মলয় তেওয়ারি। সেই অনুবাদের সূত্র ধরেই পিটার হুডিসের নাম জানলাম। মূল উৎসে গিয়ে প্রবন্ধটির ইংরেজি পাঠটিও পড়ে নিলাম।

প্রথম দিকের কয়েকটি পৃষ্ঠা পড়ে বেশ ভালো লাগছিল। লেখক জানিয়েছেন, মার্কসীয় তথা হেগেলীয় দ্বন্দ্বতত্ত্বের কোনও কোনও দিক বেশ কিছুকাল আগেই অ-ইউরোপীয় অঞ্চলে থাকা স্বল্পপরিচিত দার্শনিকদের কারও কারও চিন্তায় উঠে এসেছিল। যেমন দশম শতকে, ইরানের ইসমাইলি ইসলামীয় গোষ্ঠীর দার্শনিক আবু ইয়াকুব আল-সিজিস্তানি নাকি ঈশ্বর-উপলব্ধির ব্যাখ্যায় ‘নেতি’ এবং ‘নেতিরও নেতি’— এই ধরনের এক ধারণার সূচনা করেছিলেন। সম্ভবত, হেগেলেরও প্রায় আটশো বছর আগে এটাই ছিল “নেতি-র নেতি”-বিষয়ক প্রথম দার্শনিক উত্থাপন।

তবে এই প্রসঙ্গে আমার দুটি আপত্তি উত্থাপন করতে হচ্ছে।

প্রথমত, হুডিস এই মুসলিম চিন্তাবিদের রচনাগুলি থেকে যতটা উদ্ধৃতি দিয়েছেন তাতে সন্দেহ হয়, সিজিস্তানি সম্ভবত negation of negation বলতে চাইছিলেন না; বরং বোঝাতে চেয়েছিলেন negation and negation। অর্থাৎ, একটি ধারণাকে যে বিবৃতির মাধ্যমে নাকচ করা হল, পরের ধাপে সেই বিবৃতিটিকেও নাকচ করতে হবে— এইরকমই যেন ছিল তাঁর বক্তব্য। তবে দর্শনের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত যে-কোনও মানুষই বুঝবেন, এতে হেগেলীয় শব্দবন্ধের সঙ্গে সাদৃশ্য পাওয়া গেলেও, দার্শনিক প্রেক্ষাপটে তা ঠিক একই অর্থ বহন বা ইঙ্গিত করে না। বরং, এর সাদৃশ্য অনেক বেশি আরিস্ততলীয় নৈয়ায়িক ন্যায়শাস্ত্রের সঙ্গে। যেমন— বেড়ালটি কুকুর নয়; শুধু কুকুর নয় তা-ই নয়, বাঘও নয়— অনেকটা এই রকম।

দ্বিতীয়ত, হেগেলীয় তথা মার্কসীয় মোচনের মোচন (আমি আমার দর্শন বিষয়ক রচনাগুলিতে negation of negation-কে এইভাবেই অনুবাদ করেছি) একটি গতিশীল ও পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপকে সূচিত করে। হেগেল নিজে ভাববাদী হলেও এই সূত্রটি ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে তিনি বাস্তব জগতের উদাহরণ ব্যবহার করেছেন। মার্কস ও এঙ্গেলসও এই সূত্র প্রয়োগ করেছেন নানা আর্থসামাজিক ও প্রাকৃতিক বিকাশমান ঘটনার ব্যাখ্যায়। এই দিক থেকে বিচার করলে, সিজিস্তানির বক্তব্য— অন্তত যতটুকু হুডিসের লেখায় পাচ্ছি— কোনও পরিবর্তনশীল ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়; বরং তা একটি স্থির ও নির্দিষ্ট ধারণার ওপর কেন্দ্রীভূত।

এই দুটি দিক বিবেচনায় আনলে সহজেই প্রতীয়মান হয়, সিজিস্তানির বিচারধারায় ‘মোচন’-এর ধারণাকে ‘মোচনের মোচন’ বা ‘মোচন এবং আরও মোচন’ যেভাবেই ধরা হোক না কেন— গুরুত্ব দিলেও তা কোনওভাবেই দ্বান্দ্বিক চিন্তাপদ্ধতির সঙ্গে বিজড়িত ছিল না। তবু, দশম শতাব্দীর দর্শনচিন্তার প্রেক্ষিতে এই ধরনের ভাবনার উদ্ভব নিঃসন্দেহে এক অগ্রগতি হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে।

 

দুই.

তারপর, তৃতীয় পরিচ্ছেদ থেকে আমি বুঝতে শুরু করলাম— হুডিস কোন চিন্তাপক্ষের প্রতিনিধি। অতঃপর আরও কিছু কথা বলার তাগিদ অনুভব করলাম।

ইদানিং কার্ল মার্কসকে নিয়ে এক নতুন ধরনের আদিখ্যেতা শুরু হয়েছে। ১৯৬০–৭০-এর দশকে আমরা দেখেছি, একদল পশ্চিমি মার্কস-গবেষক প্রায়শই যুবক মার্কস (Young Marx) ও পরিণত মার্কস (Late Marx)-এর মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতেন এবং যুবক মার্কসকে চিন্তাভাবনার প্রশস্ততায় বেশি নম্বর দিতেন। পরিণত মার্কস নাকি রাজনীতির কুটিল আবর্তে, শ্রেণিসংগ্রামের নৈমিত্তিক আয়োজনে, দলীয় কোন্দলের সংকীর্ণ আবহে, তাঁর মানবমুক্তির বৈপ্লবিক আবেদন অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন। এই ব্যাখ্যা এক সময় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠকক্ষের কানাচে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিল।

আজকাল, বিশেষত সমাজতান্ত্রিক শিবিরের পতনের পর, সেই তথাকথিত পরিণত মার্কসকে নিয়ে শুরু হয়েছে এক নতুন ধরনের বিচিত্র সুগম সঙ্গীত। ১৯৯০-এর দশক থেকে মার্কস-এঙ্গেলস সমগ্র রচনাবলি (Marx–Engels Gesamtausgabe, সংক্ষেপে MEGA) প্রকল্পের সাম্প্রতিক উদ্যোগের ফলস্বরূপ একদল মার্কসবাদী গবেষক দাবি করে চলেছেন— এতদিন ধরে সোভিয়েত ইউনিয়ন, এঙ্গেলস, প্লেখানভ, লেনিন, স্তালিন প্রমুখের অনুসরণে মার্কসের চিন্তাধারাকে মার্কসবাদের নামে এক যান্ত্রিক কঠোর নিয়মবদ্ধ সুশৃঙ্খল বৈজ্ঞানিক মতবাদ হিসেবে উত্থাপন করে রেখেছিল। এবং তা ছিল ইউরোপীয় সমাজ-ইতিহাসের এক অলঙ্ঘনীয় রেপ্লিকা। মার্কসের নতুন নতুন রচনাবলি যত উন্মোচিত হচ্ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে মার্কসের চিন্তাধারা অমনটি নয়। ইত্যাদি।

জানা গেল, আলোচ্য লেখক পিটার হুডিসও এই মতবাদেরই একজন অন্যতম তন্বিষ্ঠ মুখপাত্র।

এঁদের বক্তব্য কী?

এই নব্য বিশেষজ্ঞদের একটি দল দেখাতে চেষ্টা করছেন— মার্কস জীবিত অবস্থায় সচেতনভাবে যে বইগুলি লিখেছেন এবং ছাপিয়ে বের করেছেন, সেগুলোর বেশিরভাগই নাকি তেমন গুরুত্বের নয়; সেগুলিতে মার্কসের প্রকৃত চিন্তাধারা প্রতিফলিত হয়নি। বরং, মার্কস বিভিন্ন সময়ে যে-সমস্ত নোট তৈরি করেছিলেন ভবিষ্যতে গ্রন্থাকারে প্রকাশের উদ্দেশ্যে, কিংবা নানা বইপত্রের মার্জিনে যা কিছু মন্তব্য লিখে রেখেছিলেন, তাতেই নাকি লুকিয়ে আছে অমূল্য সব মণিরত্ন।

যেমন— ১৮৫৭-৬৩ সালে লেখা পুঁজি গ্রন্থের খসড়া, যা বহু পরে গ্রুন্ডরিসে নামে প্রকাশিত হয়, এক স্বর্ণখনি। কিংবা, ১৮৮০-৮১ সালে বিভিন্ন বইপত্র পড়ে লেখা ব্যক্তিগত নোটই নাকি ‘আসল’ মার্কস। ইত্যাদি।

এ এক বড়ই আশ্চর্য মার্কসচর্চা!

আরও মুশকিল হচ্ছে, বিশ্বের নানা প্রান্তে অনেক মার্কসবাদী— এমনকি মাঠে নেমে আন্দোলন করা মেঠো রাজনৈতিক কর্মীরাও— এই গবেষণার প্রকৃত স্বরূপ বুঝে উঠতে পারছেন না। বরং তাঁরাও মোহিত হয়ে ভাবছেন, ওই এল মার্কসের আরও মূল্যবান সব নোট! আমরা এত দিন কী অন্ধই না ছিলাম। মার্কসবাদ অনুশীলনের ওপর যে এক ভয়ঙ্কর দুর্বিপাক নেমে আসছে— তাঁরা সেটা দেখতেই পাচ্ছেন না।

কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক।

ধরুন, এশীয় উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে মার্কসের ধারণা। অনেকেই জানেন, মার্কসীয় ইতিহাসচর্চায় সমাজবিকাশের একটি সাধারণ ধারাক্রম দেখানো হয়ে থাকে এইভাবে— আদিম সাম্যবাদী সমাজ, দাসপ্রথা, সামন্ততন্ত্র, ধনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ইত্যাদি। তবে এটাও ঠিক, এই বিবরণটি মূলত পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটি দেশের ইতিহাসের সাপেক্ষেই হুবহু খাটে। শুধু এশিয়া বা আফ্রিকা নয়— এমনকি ইউরোপের অন্যান্য দেশের সুদীর্ঘ ইতিহাসের বিকাশও এই রূপরেখার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না। ফলে, সচেতনভাবে হোক বা অজ্ঞাতসারে, মার্কসবাদীরা এই বিবরণকে একটা মডেল হিসেবে সামনে রেখে নিজ নিজ দেশের ইতিহাসের ব্যাখ্যা খোঁজেন।

কিন্তু তার মানে এই নয় যে অ-ইউরোপীয় দেশগুলির জন্য আমাদের নতুন করে আরেকটি মডেল দাঁড় করাতে হবে। আমরা যদি এশীয় উৎপাদন পদ্ধতির কথাও বলি, প্রশ্ন উঠবেই— সেই পদ্ধতিও কি চিন ও ভারতে একরকম ছিল? আরবভূমি আর মালয়েশিয়াতেও কি তা একরকম ছিল? ছিল না যে, এ তো আমরা জানিই। এবং তা সহজ বুদ্ধিতেই বোঝা যায়। তাহলে, মার্কসের অ-ইউরোপীয় চিন্তার বিকাশ উত্থাপন করে আমরা কি এক পাও এগোতে পারলাম? লাভটাই বা কী হল?

সমস্যা এখানেই শেষ নয়— আরও আছে।

 

মার্কসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একটি আর্থসামাজিক ব্যবস্থার মূল পরিচয় নির্ধারিত হয় তার উৎপাদন সম্পর্কের ভিত্তিতে— শ্রেণিগত বিভাজনের নিরিখে। কোনও দেশে সেচব্যবস্থা আছে কি না, তার দ্বারা সেই দেশের উৎপাদন-চরিত্র নির্ধারিত হয় না। এই সহজ সত্যটাও আমাদের নব্য মার্কসবাদী বিশেষজ্ঞরা হয় ভুলে গেছেন, নয়তো অস্বীকার করতে বসেছেন। পিটার হুডিসও এর ব্যতিক্রম নন।

আবার, এই উৎপাদন সম্পর্কের আলোকেই বোঝা যায় প্রকৃত উৎপাদকের থেকে মালিকশ্রেণি কীভাবে উদ্বৃত্ত আদায় করে। দাসপ্রথা, সামন্ততন্ত্র এবং ধনতন্ত্রে উদ্বৃত্ত আদায়ের পদ্ধতিগুলি আমরা জানি। তাই, এশীয় উৎপাদন পদ্ধতিকে একটি স্বতন্ত্র উৎপাদন পদ্ধতি হিসেবে দেখাতে চাইলে, সেখানে উদ্বৃত্ত আদায়ের জন্য বাকি তিনটি ব্যবস্থার থেকে ভিন্ন প্রণালীটি কী তাও শনাক্ত করতে হবে।

দুঃখের বিষয়, মার্কসের লেখায় এ-বিষয়ে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও আলোকের সন্ধান পাওয়া যায়নি। আর, বর্তমান মেগা-বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতবর্গও কোনও আলোকপাত করতে সক্ষম হননি। বলা ভালো, এই কাজটা যে করতে হবে, সেই বিষয়েই তাঁরা সচেতন নন।

কিংবা, আমার সন্দেহ, এই নব্য বিদ্বানরা সম্ভবত, মার্কসের শ্রেণিবিশ্লেষণ, শ্রেণিসংগ্রামের স্বরূপ ইত্যাদি বিষয়গুলিকেই আর মার্কসের মার্কসবাদ বলে মনে করেন না। ওসব হচ্ছে এঙ্গেলস, প্লেখানভ, লেনিন, স্তালিনদের “ভুয়ো মার্কসবাদ”। “আসল মার্কস” ইউরোপীয় সমাজের একরৈখিক শ্রেণিবিশ্লেষণ পদ্ধতি থেকে সরে গিয়ে অ-ইউরোপীয় সমাজসমূহের বহুরৈখিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিশ্লেষণের সমুদ্রে ডুব দিয়েছিলেন। নানান নোটে, বহু বইয়ের মার্জিনে, তিনি সেইসব কথা (বোধহয় এঙ্গেলসের ভয়ে) লুকিয়ে লুকিয়ে লিখে রেখেছিলেন। সেই গোপন নোটগুলো উদ্ধার করেই মার্কসের চিন্তাকে এখন চিনতে হবে।

যেমন ধরা যাক, মার্কসের এই কথাটি: “ভারতীয় আইন অনুসারে শাসনক্ষমতা পুত্রদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার বিষয় নয়; এর ফলে ইউরোপীয় ধরনের সামন্তবাদ গড়ে ওঠার একটি বড় উৎস ব্যাহত হয়।”[1]

প্রশ্ন হচ্ছে— মার্কস এই ধারণা কোথা থেকে পেলেন?

রামায়ণ ও মহাভারত পড়া থাকলেই (ধরে নিচ্ছি, মার্কসের অন্যের হাতফেরতা হয়ে খানিকটা পড়া বা জানা ছিল) তিনি দেখতে পেতেন— শাসনক্ষমতা ও রাজকীয় ভূসম্পত্তি কার পুত্রদের মধ্যে কীভাবে ভাগ হবে, তা নিয়ে জ্ঞাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি এবং লড়ালড়ির কাহিনি নিয়েই এই দুই আখ্যান গড়ে উঠেছিল এবং পল্লবিত হয়েছিল। ভারতীয় ইতিহাসে যেসব রাজার বিবরণ পাওয়া যায়, তাতেও শাসনক্ষমতা পুত্রদের মধ্যেই ভাগ করে দেওয়ার প্রথা ছিল। রাজারা রানিদের কাছে পুত্রই চাইত। সংস্কৃত বচনই ছিল—পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্য্যা। বিবাহিত নারীর জন্য বয়োজ্যেষ্ঠদের পরম আশীর্বাণী ছিল— শতপুত্রের জননী হও। সুতরাং অন্তত এই প্রশ্নে ভারতের সামন্ততন্ত্র ইউরোপের চেয়ে আলাদা কিছু ছিল না। মার্কস যদি কোনও কারণে এটি না জেনে থাকেন, সেটা বুক ফুলিয়ে বলার মতো বিষয় নয়।

আবার, মার্কস নাকি বলেছেন— “মাটি ভারতে কোথাও এতটা মহৎ কিছু ছিল না যে তা সাধারণ মানুষ কিছুতেই ছাড়তে চাইবে না।”[2] এটাও ভারতের দীর্ঘ ইতিহাস ভালো করে জানা থাকলে একেবারেই বলা যায় না। রাজায় রাজায় যে যুদ্ধ হত, রামায়ণ-মহাভারতে যে অশ্বমেধ ও রাজসূয় যজ্ঞের সবিস্তার বর্ণনা পাওয়া যায়— তা আসলে জমির জন্য, জমি দখলের অধিকার নিয়ে যুদ্ধ ছাড়া আর কী? দুর্যোধনের সেই বহুচর্চিত উক্তিটিও নিশ্চয় পাঠকদের মনে আছে— “বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী।” সুতরাং, মার্কসের নোটে আছে মানেই তা ধ্রুব সত্য— এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই।

এর ফলে, যখন লরেন্স ক্র্যাডার লেখেন, মার্কসের জন্য “ভারতীয় ইতিহাসের গতিপথ দেশীয় ক্যাটিগরি দিয়েই ব্যাখ্যা করতে হবে, আমদানিকৃত ক্যাটিগরি দ্বারা নয়”[3]— তখন তা আর মার্কসবাদ থাকে না; বরং সরাসরি উত্তর-আধুনিক উত্তর-ঔপনিবেশিক চিন্তাধারার আলখাল্লাটা পরে নেয়। মার্কসবাদ থেকে শেখা বিশ্বজনীন ইতিহাস বিশ্লেষণের হাতিয়ারটিকে তখন জাদুঘরে জমা করে দিতে হয়।

মধ্যপ্রাচ্যের আরব খলিফাতন্ত্র যদি সামন্ততন্ত্র না হয়— তবে তা কী ছিল? শ্রেণিগত বিচারে, এবং উৎপাদন সম্পর্কের নিরিখে? যে মুসলিম শাহ দিল্লি ও আজমিরের শাসক পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাস্ত করেন, তিনি কোন শ্রেণির প্রতিনিধি ছিলেন? আর চৌহানেরই বা শ্রেণিগত পরিচয় কী ছিল? নাকি এই প্রশ্নগুলি তুললেই তা “আমদানি” বলে সাব্যস্ত হবে?

বরং ধরে নেওয়া যেতে পারে— নোট লেখার সময় মার্কস বেশি মনোযোগী ছিলেন তথ্যগুলিকে যথাযথভাবে টুকে রাখার ব্যাপারে। সে সময়ে তিনি সত্য-মিথ্যা বিচার বা বিশ্লেষণের দিকে ততটা নজর দেননি। পরে বই আকারে প্রকাশ করতে গেলে নিশ্চয়ই দিতেন। কিন্তু, এখন যিনি এইসব নোট থেকে উদ্ধৃতি দেবেন, তিনিও যদি বিশ্লেষণের দায় এড়িয়ে যান— তবে তা আর মার্কসবাদ থাকে না।

আর তাকেই মার্কসবাদ বলে চালাতে চাইলে মার্কসকেও মার্কসবাদ থেকে বিচ্যুত হওয়ার অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হয়।

 

তিন.

সতর্ক পাঠক লক্ষ করে থাকবেন— মেগা প্রকল্প থেকে উদ্ভূত যাবতীয় ঔৎসুক্য ও উত্তেজনা ছড়াচ্ছে শুধুমাত্র মার্কসের নতুন লেখাপত্র ঘিরে। অথচ শিরোনাম হচ্ছে: মার্কস-এঙ্গেলস সমগ্র রচনাবলি। আলোচ্য গবেষকদের কাণ্ডকারখানা দেখলে মনে হবে, নতুন যা কিছু জানার, সবই মার্কসের নতুন লেখাপত্রেই পাওয়া যাবে। এঙ্গেলসের নতুন রচনাপত্তর খুঁজে পেলেও তা নিয়ে অত নাচানাচি করার কিছু নেই। যেন, জানাই আছে, তাতে প্রায় সবই ভুল কথা থাকবে, যান্ত্রিক বিচার-বিশ্লেষণ থাকবে।

এই এঙ্গেলস-বিরূপতা এঁদের এত প্রবল, আর তা প্রকাশ করে ফেলার অসতর্ক আগ্রহও এত বেশি যে কোথায় কখন কী বলতে হবে তাও এঁরা গুলিয়ে ফেলেন।

 

হাতের সামনেই এরকম একটা উদাহরণ রয়েছে।

পিটার হুডিস লিখেছেন— “এঙ্গেলসের বিপরীতে, যিনি তাঁর পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং রাষ্ট্রের উদ্ভব গ্রন্থে ‘আদিম’ সমাজে আদিবাসী সাম্প্রদায়িক রূপগুলিকে সমালোচনাহীনভাবে মহিমান্বিত করার প্রবণতা দেখিয়েছেন, মার্কস তাঁদের অভ্যন্তরে শ্রেণি, বর্ণ ও উঁচুনিচু স্তর বিভাজিত সামাজিক সম্পর্কে জায়মান গঠনের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন।” পিটার হুডিস এই প্রশ্নে আরও কিছু গবেষকের নাম ও রচনাসূত্র উল্লেখ করেছেন, যাতে বোঝা যায়, এই মতটা তাঁর একার নয়; এই শ্রেণির গবেষকদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত।

অথচ কী আশ্চর্যের কথা— এঙ্গেলস আলোচনা করেছেন আদিম সমাজের শ্রেণিহীন গোষ্ঠীগুলির কথা, আর মার্কস ধরেছেন সেইসব প্রাচীন জনজাতিদের, যাদের মধ্যে ইতিমধ্যেই শ্রেণিবিভাজন, বর্ণবিভাজন ও স্তরবিভাজন শুরু হয়ে গেছে। এরকম দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতের মধ্যে থাকা দুটি ভিন্ন জনগোষ্ঠী সম্পর্কে দুজন লেখকের দু-রকম বিচারের মধ্যে যে তুলনা করা যায়, সেটা একমাত্র দোষ ধরার সুনিপুণ অত্যাগ্রহ ছাড়া ভাবাই যায় না।

আর ঠিক এই কাজটাই করে চলেছেন এই গবেষক বন্ধুরা।

মার্কস মৃত্যুর কিছুদিন আগে আলজিরিয়ায় বিশ্রামে ছিলেন। সেখানে তিনি অবাক হয়ে দেখেছিলেন, ধনী বা দরিদ্র যেমনই হোক “ভালো বা মন্দ ভাগ্য দিয়ে মহম্মদের অনুগামীদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ হয় না। তাদের সামাজিক মিলনে নিরঙ্কুশ সমতা, কোনওভাবে তা প্রভাবিত হয় না।” এরকম অভিজ্ঞতা আমাদেরও আছে। নামাজের কাতারে ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নীচু ভেদাভেদ করা হয় না, বা করা যায় না। খুবই ভালো ব্যাপার এটা।

কিন্তু এবার ভেবে দেখুন— সৌদি আরবের তেলকুবেররা ভারত বা বাংলাদেশের মুসলমানদের আদৌ মানুষ বা মুসল্লি বলে মনে করে? গুজরাত দাঙ্গার সময় বা পরে, বিশেষ করে ২০১৪ সালের পর থেকে, ভারতে নানা জায়গায় যেভাবে মুসলমানদের উপরে খুব অঙ্ক কষে আক্রমণ শানিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেই ব্যাপারে কি আরব শেখদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে? ইজরায়েল বছরের পর বছর ধরে প্যালেস্তাইনের মুসলমানদের বোমা মেরে দুরমুশ করে দিচ্ছে। তাতে সৌদি আরব কিংবা মিশরের মুসলিম শাসকদের মধ্যে কি কখনও “নিরঙ্কুশ সমতা”-র ভাব বা তথাকথিত মুসলিম বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ জেগে উঠছে?

আসলে বাস্তব সমাজ-অর্থনীতিতে মার্কসেরই উত্থাপিত শ্রেণির প্রশ্নটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই শ্রেণির প্রশ্নে ইউরোপ-অইউরোপের মধ্যে কোনও কার্যকর প্রভেদ নেই। মার্কসের সেই শিক্ষাটাই আসল ও বড় কথা। এ কথা ভুলে গিয়ে যদি কেউ তাঁর নতুন প্রাপ্ত নোটগুলি ঘেঁটে বেড়ায়, তাহলে কিছুই অর্জিত হবে না।

এবার একটা চিত্তাকর্ষক ঘটনার কথা বলি।

মার্কস এবং এঙ্গেলস— দুজনেই ১৮৭০-এর দশকে রাশিয়ার বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর, এবং বিশেষ করে ১৮৭২ সালে পুঁজি গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের রুশ অনুবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর রাশিয়ার বিপ্লবী আন্দোলনের সম্ভাবনা সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। সেই সময় দুজনেই রুশ ভাষা শেখেন এবং রুশ বিপ্লবীদের সঙ্গে দীর্ঘ পত্রবিনিময় করেন। এইভাবে কথাচালাচালি করতে করতে তাঁরা রাশিয়ার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে মির বা গ্রাম-কমিউনগুলি সম্পর্কে অবগত হন।

হুডিসের বা তাঁর সমচিন্তকদের বিবেচনায় অবশ্য এঙ্গেলসের কোনও জায়গা নেই। তাঁরা শুধু মার্কস কী বলেছেন বা লিখেছেন, সেটুকুতেই আগ্রহী। আমরাও আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত রাখার স্বার্থে এঙ্গেলস সেই সব বিষয়ে কী বলেছিলেন, সে-প্রসঙ্গে যাচ্ছি না।

হুডিস লিখেছেন— “…মার্কসের সামগ্রিক অবস্থান রুশ ‘মার্কসবাদীদের’ তুলনায় জনপ্রিয়তাবাদীদের [অর্থাৎ, নারোদনিকদের — অ-মু] কাছাকাছি ছিল— যে ‘মার্কসবাদীরা’, মার্কসের নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিপরীতে, যুক্তি দিয়েছিলেন যে, রাশিয়াকে সমাজতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আগে পুঁজিবাদী শিল্পায়নের এক লম্বা কালপর্ব অতিক্রম করতে হবে।”

কী অদ্ভুত কথা!

একযোগে এক গুচ্ছ ভ্রান্ত তথ্য ও সিদ্ধান্তের পরিবেশনা!

প্রথমত, তৎকালীন রুশ মার্কসবাদী বলতে হুডিসরা কাদের বোঝাতে চেয়েছেন, আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু নিশ্চয়ই প্লেখানভকে সেই পরিসর থেকে বাদ দেওয়া চলে না। সেই প্লেখানভ ঠিক এই প্রসঙ্গে একেবারে গোড়ার যুগে— ১৮৮৩ সালে— যা বলেছিলেন সেটা একবার পড়ে নেওয়া যাক:

It goes without saying that neither the author of Capital nor his famous friend and colleague lost sight of the economic peculiarities of any particular country; only in those peculiarities do they seek the explanation of all a country’s social, political and intellectual movements. That they do not ignore the significance of our village commune is revealed by the fact that as recently as January 1882 they did not consider it possible to make any decisive forecast concerning its destiny. In the preface to our translation of the Manifesto of the Communist Party (Geneva, 1882), they even say explicitly that under certain conditions the Russian village commune may “pass directly to the higher form of communist common ownership.” These circumstances are, in their opinion, closely connected with the course of the revolutionary movement in the West of Europe and in Russia. “If the Russian revolution,” they say, “becomes the signal for a proletarian revolution in the West, so that both complement each other, the present Russian common ownership of land may serve as the starting-point for a communist development.[4]

এখানে দেখা যাচ্ছে, মার্কস ও এঙ্গেলস ১৮৮২ সালে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো-র রুশ সংস্করণের যৌথ ভূমিকায় যা লিখেছিলেন[5], প্লেখানভ এক বছরের মধ্যেই সেই সব কথা স্মরণ করেছিলেন এবং সন্তোষ ব্যক্ত করেছিলেন।

 

দ্বিতীয়ত, রুশ মার্কসবাদীরা আদৌ সমাজতন্ত্রের আগে ধনতান্ত্রিক শিল্পায়নের কোনও লম্বা ক্রমের আবশ্যিকতার কথা বলেননি। প্লেখানভও নন, লেনিনও নন। নারদনিকদের বক্তব্য ছিল, রাশিয়ায় গ্রাম-কমিউনের অস্তিত্বের ফলে ধনতন্ত্র সম্ভবই নয়। তাঁদের উদ্দেশ্যে এই মার্কসবাদী নেতারা নিজ নিজ সময়ে দেখাতে চেষ্টা করেছিলেন, ধনতন্ত্র সম্ভব কি অসম্ভব— এ প্রশ্ন অবান্তর, কারণ রাশিয়ায় ইতিমধ্যেই, এমনকি গ্রামাঞ্চলেও, পুঁজিবাদী কৃষি-অর্থনীতি গড়ে উঠছে। বিশেষত লেনিন এই বিশ্লেষণের ভিত্তিতেই রুশ সর্বহারাশ্রেণির সঙ্গে রাশিয়ার মুঝিকদের ঐক্য গঠনের প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে আসেন। আর বাস্তবে ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারির বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের এক মাসের মধ্যেই লেনিন তাঁর এপ্রিল থিসিস-এ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আহ্বান জানান। এই তথ্যগুলো এখন এতটাই সুবিদিত যে, কবিগুরুর ভাষায় একমাত্র “চোখ বুজে পথ পাই নে বলে কেঁদে ভাসাই পাড়া”— না হলে রুশ মার্কসবাদীদের সম্পর্কে হুডিসদের এই অভিযোগ তোলার কোনও জায়গাই নেই।

তৃতীয়ত, বাস্তব পরিস্থিতিতে দেখা গেল— সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পরে মির বা গ্রাম কমিউন কোনও কাজেই এল না। এমনকি বিপ্লবের এগারো বছর আগে যৌথ খামার গঠনের আহ্বান জানানো এবং কর্মসূচি গ্রহণ সম্ভবই হল না। শুধু তাই নয়, ১৯২৮ সাল থেকে যৌথ খামার আন্দোলন শুরু করার পরও বহু কাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় খামারের সংখ্যা খুব বেশি হতে পারেনি। ফলে মার্কস-এঙ্গেলস নারদনিকদের সঙ্গে কথা বলে যাই ভেবে বা বুঝে থাকুন না কেন, সেই ভাবনা বিপ্লবের পরে কোনও কাজে লাগেনি। সেই ভাবনায় কিঞ্চিৎ গলদ ছিল। শুধু এঙ্গেলস ভুল ভেবেছেন বলে নয়, মার্কসেরও বুঝতে সেদিন ভুল হয়েছিল। যদিও ১৮৭০-এর দশকে সেই ভুল করা হয়তো খুব অস্বাভাবিক ছিল না।

কিন্তু আজ, এই ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েও যে এই কথাগুলো আমাদের লিখতে হচ্ছে, এ বড় কম আশ্চর্যের নয়!

 

চার.

ঘটনাচক্রে পিটার হুডিসের আর একটা লেখা সম্প্রতি হাতে এল— Thoughts on Marx, Marxism, and Culture— Marx Forum নামক অনলাইন আলোচনার একটি ইমেল গ্রুপে চিঠি চালাচালির আকারে একজন সদস্যের মেল থেকে। এটা অবশ্য পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ নয়। সেই গ্রুপের চলমান আলোচনায় তাঁর কিছু মতামত জ্ঞাপন। তবে তার মধ্যেও তবে তার মধ্যেও তিনি এমন কিছু বিষয় উত্থাপন করেছেন, যা আমাদের অধীত মার্কসবাদের আলোকে বিচারের দাবি রাখে।

সেই আলোচনায় হুডিস সংস্কৃতি-বিষয়ে কার্ল মার্কসের বক্তব্যের সমর্থনে ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস ও পরবর্তী প্রসিদ্ধ মার্কসবাদী চিন্তানায়কদের অবস্থানকে কঠোর সমালোচনার দ্বারা ধুয়ে-মুছে দিতে চেয়েছেন। গোড়াতেই তিনি মার্কসের Theories of Surplus Value গ্রন্থের প্রথম খণ্ড থেকে একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন—

Humanity itself is the basis of material production, as of any other production that it carries on. All circumstances, therefore, which affect man, the subject of production, more or less modify all his functions and activities, and therefore too his functions and activities as the creator of material wealth, of commodities. In this respect it can in fact be shown that all human relations and functions, however and in whatever form they may appear, influence material production and have a more or less decisive influence on it.[6]

এই অধ্যাপক ভদ্রলোক জানেন— উপরে উদ্ধৃত মার্কসের বক্তব্যটি মার্কসবাদের বহুচর্চিত ভিত-উপরিকাঠামো বিশ্লেষণী মডেলের সঙ্গে খাপ খায় না। তিনি এ-ও জানেন যে মার্কস তাঁর ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত Contribution to a Critique of Political Economy বইয়ের ভূমিকায় একটি অতি বিখ্যাত প্যারাগ্রাফে ভিত-উপরিকাঠামো সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য একেবারে থিসিসের আকারে লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছেন। এই বক্তব্য তিনি আর কখনওই সংশোধন করেননি, বা বলেননি যে ওখানে তিনি যা বলেছেন তা ভুল বা অন্তত একপেশে ছিল।

এই তত্ত্বের পরবর্তী স্পষ্ট অভিব্যক্তি রয়েছে মার্কসের ১৮৬৭ সালে প্রকাশিত পুঁজি গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের একটি পাদটীকায়[7], এবং তার দুই পৃষ্ঠা পরেই আরও একবার— যা হয় হুডিস লক্ষ করেননি, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গেছেন।[8]

তবে এ তেমন কিছু ছিল না। মার্কস আর কখনও তাঁর কোনও রাজনৈতিক লেখায় এর আর উল্লেখ করেননি বলে হুডিস তাঁর খুশি চেপে রাখতে পারেননি। বরং তিনি উপরের উদ্ধৃত বক্তব্যকেই মার্কসের আসল মত এবং মাপকাঠি ধরে নিয়ে ভিত-উপরিকাঠামো সম্পর্কে মার্কসের অত্যন্ত সুপরিচিত সেই থিসিসকে মার্কসের বদলে অন্যদের— বিশেষ করে এঙ্গেলসের— ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে উদ্যোগ নিলেন।

এর পর তিনি গম্ভীরভাবে আমাদের জানালেন— “Nevertheless, the formulation was codified as a central principle in Engels’ late writings (after Marx’s death) and was promoted as part of a photocopy theory of knowledge by Plekhanov, Kautsky, the early Lenin, and many others who claimed to follow in their footsteps.”

অবশ্য হুডিস ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন-কে খানিকটা ছাড় দিতে রাজি আছেন, সেটাও বন্ধনীতে লিখে দিয়েছেন— “In his ‘Abstract of Hegel’s Science of Logic’ of 1914 Lenin broke from this vulgar materialist approach, which he had advanced six years earlier in Materialism and Empirio-Criticism, writing ‘Man’s consciousness not only reflects the objective world, but creates it.’” তাঁর একটাই দুঃখ, “Lenin of course never published his philosophic notebooks, and the base-superstructure relation was largely interpreted in a casual-determinist manner, by orthodox Marxists, with the economic base posited as the independent variable and the superstructure as the dependent one.”

মাখচিন্তা ও মাখের রুশ অনুগামীদের সমালোচনা করে রচিত লেনিনের Materialism and Empirio-Criticism গ্রন্থের বক্তব্যকে “স্থূল বস্তুবাদ” বলা যায় কি না— এই বিতর্কে আমরা এই প্রবন্ধে ঢুকছি না। ইতিপূর্বে আমি এই বইটির মার্কসবাদী সাহিত্যে অবস্থান ও অবদানের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।[9]

 

মার্কস ভিত ও উপরিকাঠামো সম্পর্কে কী বলেছেন একবার দেখে নিই:

My inquiry led me to the conclusion that neither legal relations nor political forms could be comprehended whether by themselves or on the basis of a so-called general development of the human mind, but that on the contrary they originate in the material conditions of life,… The general conclusion at which I arrived and which, once reached, became the guiding principle of my studies can be summarised as follows. In the social production of their existence, men inevitably enter into definite relations, which are independent of their will, namely relations of production appropriate to a given stage in the development of their material forces of production. The totality of these relations of production constitutes the economic structure of society, the real foundation, on which arises a legal and political superstructure and to which correspond definite forms of social consciousness. The mode of production of material life conditions the general process of social, political and intellectual life. It is not the consciousness of men that determines their existence, but their social existence that determines their consciousness.[10]

যা বলার মার্কস এখানে খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন।

মার্কস কি পরে তাঁর এই অবস্থান বদল করেছেন?

না। বরং এর আট বছর পরে পুঁজি গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে (১৮৬৭) একটা পাদটীকায় তিনি আবারও পাঠককে এই কথাগুলি স্মরণ করিয়ে দেন। আমেরিকার কোনও একটি পত্রিকায় লেখা হয় যে তাঁর উপরোক্ত থিসিস কেবলমাত্র ধনতন্ত্রের ক্ষেত্রেই সত্য, মধ্যযুগ বা প্রাচীন সমাজের জন্য সত্য নয়। উত্তরে মার্কস লেখেন:

In the estimation of that paper, my view that each special mode of production and the social relations corresponding to it, in short, that the economic structure of society, is the real basis on which the juridical and political superstructure is raised, and to which definite social forms of thought correspond; that the mode of production determines the character of the social, political, and intellectual life generally, all this is very true for our own times, in which material interests preponderate, but not for the middle ages, in which Catholicism, nor for Athens and Rome, where politics, reigned supreme. In the first place it strikes one as an odd thing for anyone to suppose that these well-worn phrases about the middle ages and the ancient world are unknown to anyone else. This much, however, is clear, that the middle ages could not live on Catholicism, nor the ancient world on politics. On the contrary, it is the mode in which they gained a livelihood that explains why here politics, and there Catholicism, played the chief part. For the rest, it requires but a slight acquaintance with the history of the Roman republic, for example, to be aware that its secret history is the history of its landed property. On the other hand, Don Quixote long ago paid the penalty for wrongly imagining that knight errantry was compatible with all economic forms of society.[11]

দুই পৃষ্ঠা পরেই তিনি আবার এই থিসিস স্মরণ করেন:

This juridical relation, which thus expresses itself in a contract, whether such contract be part of a developed legal system or not, is a relation between two wills, and is but the reflex of the real economic relation between the two. It is this economic relation that determines the subject-matter comprised in each such juridical act.[12]

মার্কসের জীবদ্দশায় এই গ্রন্থের দ্বিতীয় জার্মান সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ সালে। সেখানেও এই বক্তব্যগুলি অবিকৃতভাবেই থেকে যায়।

 

ফলে হুডিসের দাবিমতো এগুলো এঙ্গেল্‌সের কারসাজি বা প্লেখানভের ভুল ব্যাখ্যা— এইরকম ধরে নেওয়ার কোনও উপায় নেই। কারণ, উল্লিখিত দুই জার্মান সংস্করণই মার্কস নিজের জীবদ্দশায় সম্পাদনা করে প্রকাশ করেছিলেন।

সৌভাগ্যের কথা, আমাদের বাঙালি শুধু-মার্কস-পন্থী বুদ্ধিজীবী প্রদীপ বক্সী অবশ্য একটি পথ খোলা রেখেছেন। পুঁজি গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় মার্কসের মৃত্যুর পর (১৮৮৪ সালে), এবং সেখানে, তাঁর মতে, এঙ্গেলসের তত্ত্বাবধানে বহু জায়গায় মার্কসের মূল বক্তব্য পালটে দেওয়া হয়। সুতরাং মূল জার্মান পাঠে নিশ্চয়ই এরকম নেই। যাঁরা জার্মান ভাষা জানেন, তাঁরা চাইলেই মূল জার্মান পাঠ খুলে এই অংশগুলি যাচাই করে নিতে পারবেন।

আমিও প্রথমে সেরকমই ভেবেছিলাম। পরে মনে হল, চেষ্টা করে দেখি, আমি তো একটু-আধটু জার্মান ভাষা শিখেছিলাম এক কালে। ইন্টারনেটের কল্যাণে যদি পুঁজি গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের জার্মান সংস্করণটা খুঁজে পাওয়া যায়…

আমাদেরও সৌভাগ্য, গুগলের সাহায্যে নেট হাতড়ে সেটা পেয়ে গেলাম। দেখা গেল, একেবারে আদি (১৮৬৭) জার্মান সংস্করণের সংশ্লিষ্ট অংশে মার্কস এমন একটি বয়ান লিখে রেখে গেছেন, যেটিকে এঙ্গেল্‌সের ভাবশিষ্যরা ইংরেজিতে নির্ভেজাল আক্ষরিক অনুবাদ করেছিলেন:

Diess Rechtsverhältniss, dessen Form der Vertrag ist, ob nun legal entwickelt oder nicht, ist nur das Willensverhältniss, worin sich das ökonomische Verhältniss wiederspiegelt. Der Inhalt dieses Rechts- oder Willensverhältnisses ist durch das ökonomische Verhältniss selbst gegeben.[13]

অর্থাৎ, মার্কস তাঁর এই থিসিস খুব যত্নের সঙ্গে রক্ষা করেছিলেন।

 

পাঁচ.

সুতরাং কমরেড পিটার হুডিসের এই বক্তব্য নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে, যার খেয়াল তিনি রাখেননি।

পাশ্চাত্যের একজন অগ্রগণ্য বুদ্ধিজীবী হিসেবে তিনি নিশ্চয়ই জানেন, কারও উদ্ধৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে, এমনকি উদ্ধৃতি না দিয়েও কারও নাম করে একটা অভিযোগ উত্থাপন বা বয়ান উল্লেখেরও কিছু নৈতিক দায়বদ্ধতা থাকে। যা বলছেন, সে-সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হতে হবে, তা আদৌ সত্য কি না। যাঁর নাম নিয়ে বলছেন, তিনি সত্যিই সেরকম বলেছিলেন কি না। সেগুলি একে একে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।

প্রথমত, কার্ল মার্কস ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের সঙ্গে মিলিতভাবে ১৮৪৫-৪৬ সালে জার্মান মতাদর্শ নামে যে দার্শনিক গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি লিখেছিলেন, তাতে তাঁরা— ভিত-উপরিকাঠামো হিসাবে উল্লেখ না করলেও প্রায় সমার্থক বক্তব্যই তুলে ধরেছিলেন:

This conception of history thus relies on expounding the real process of production — starting from the material production of life itself — and comprehending the form of intercourse connected with and created by this mode of production, i.e., civil society in its various stages, as the basis of all history; describing it in its action as the state, and also explaining how all the different theoretical products and forms of consciousness, religion, philosophy, morality, etc., etc., arise from it, and tracing the process of their formation from that basis; thus the whole thing can, of course, be depicted in its totality (and therefore, too, the reciprocal action of these various sides on one another). It has not, like the idealist view of history, to look for a category in every period, but remains constantly on the real ground of history; it does not explain practice from the idea but explains the formation of ideas from material practice.[14]

… ইত্যাদি।

সেখানে তাঁরা আরও লিখেছেন:

The ideas of the ruling class are in every epoch the ruling ideas: i.e., the class which is the ruling material force of society is at the same time its ruling intellectual force. The class which has the means of material production at its disposal, consequently also controls the means of mental production, so that the ideas of those who lack the means of mental production are on the whole subject to it. The ruling ideas are nothing more than the ideal expression of the dominant material relations, the dominant material relations grasped as ideas;…[15]

এঙ্গেলসের স্পর্শদোষ আছে বলে যদি সেটা তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য না হয়ে থাকে, সেটা সরাসরি বলে রাখা উচিত ছিল। অগ্রাহ্য করা বোধহয় উচিত হয়নি।

১৮৪৮ সালের কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো-তেও অনুরূপ বক্তব্য ছিল তাঁদের:

Does it require deep intuition to comprehend that man’s ideas, views and conceptions – in one word, man’s consciousness – changes with every change in the conditions of his material existence, in his social relations and in his social life? What does the history of ideas prove than that intellectual production changes its character as material production is changed? The ruling ideas of each age have ever been the ideas of its ruling class.[16]

 

এটি আবার মূলত মার্কসেরই রচনা এবং একেবারে কঠোর রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা। উল্লেখযোগ্য যে, ১৮৮২ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো-র বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ প্রকাশের সময় মার্কস ও এঙ্গেলসের যৌথ ভূমিকা মুদ্রিত হয়েছে, এবং তাতে তাঁরা বিভিন্ন সময়ে সেই দলিলের বক্তব্যের নানা ভুল ও সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন। তার কোনওটিতেই তাঁরা বা মার্কস একা এই ভিত-উপরিকাঠামো সম্পর্কের বিষয়ে কিছুমাত্র সংস্কারের কথা উত্থাপন করেননি। অর্থাৎ, প্রায় চল্লিশ বছর ধরে মার্কস তাঁর বিভিন্ন রচনার পাঠককে এই ভিত-উপরিকাঠামো বিষয়ে ওয়াকিবহাল ও সতর্ক করে রাখতে চেয়েছেন।

দ্বিতীয়ত, মার্কসের মৃত্যুর পরে এঙ্গেলস ঠিক কোন বা কোন কোন রচনায় মার্কসের ওই বয়ানটিকে ‘বিধান-সদৃশ’ (codified) করে তুলেছিলেন, যদি পিটার হুডিস আমাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখতেন, ভালো হত। কারণ, আমাদের নজরে এরকম কিছু পড়েনি। মার্কসের অনেক বক্তব্য অনেক জায়গাতেই এঙ্গেলস উদ্ধৃত করেছেন মার্কসের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ, কিন্তু আলাদা গুরুত্ব দিয়ে, কিংবা বলা ভালো মার্কসের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়ে, ১৮৮৩ থেকে ১৮৯৫ সাল সময়কালে নিজের কোনও সুপরিচিত মুদ্রিত রচনায় ভিত-উপরিকাঠামো সম্পর্কে এরকম কিছু বলেছেন বলে আমাদের জানা নেই। হুডিস উপযুক্ত রেফারেন্স দিয়ে জানিয়ে রাখলে আমরা উপকৃত হতে পারতাম।

বরং, তৃতীয়ত, বাস্তবে আমরা যা জানি তা হল— একটা সময় (১৮৮০-র দশকের শেষদিক থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত), যখন ইউরোপের অধিকাংশ কমিউনিস্ট বুদ্ধিজীবী মার্কসের ভিত-উপরিকাঠামো সংক্রান্ত বক্তব্যকে যান্ত্রিকভাবে অর্থনৈতিক নির্ধারণবাদে পর্যবসিত করছিলেন, তখন এই এঙ্গেলসই অন্তত পাঁচটি বড় বড় চিঠিতে এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সকলকে সতর্ক করেছিলেন।[17] এর মধ্যে থেকে জোসেফ ব্লক-কে ২১-২২ সেপ্টেম্বর ১৮৯০ তারিখে লেখা একটামাত্র চিঠির অংশবিশেষ পাঠ করা যাক:

According to the materialist conception of history, the ultimately determining factor in history is the production and reproduction of real life. Neither Marx nor I have ever asserted more than this. Hence if somebody twists this into saying that the economic factor is the only determining one, he transforms that proposition into a meaningless, abstract, absurd phrase. The economic situation is the basis, but the various elements of the superstructure—political forms of the class struggle and its results, such as constitutions established by the victorious class after a successful battle, etc., juridical forms, and especially the reflections of all these real struggles in the brains of the participants, political, legal, philosophical theories, religious views and their further development into systems of dogmas—also exercise their influence upon the course of the historical struggles and in many cases determine their form in particular. There is an interaction of all these elements in which, amid all the endless host of accidents (that is, of things and events whose inner interconnection is so remote or so impossible of proof that we can regard it as non-existent and neglect it), the economic movement is finally bound to assert itself. Otherwise the application of the theory to any period of history would be easier than the solution of a simple equation of the first degree.[18]

ভিতের ফটোকপি হিসাবে উপরিকাঠামো সম্পর্কে একপেশে কোনও কথা এখানে কেউ দেখলেন কি? বাকি চিঠিগুলির পাঠেও এই বয়ানই সকলে পাবেন।

চতুর্থত, জোসেফ স্তালিনের অন্য ব্যাপারে যত বদনামই থাকুক না কেন, তিনি Marxism and Problems of Linguistics পুস্তিকায় ভিত ও উপরিকাঠামোর সম্পর্ককে যান্ত্রিকভাবে, একপেশে দৃষ্টিতে, একৈকিক সম্পর্কে (one-to-one correspondence), দেখার বিরোধিতাই করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল:

Further, the superstructure is a product of the base, but this by no means implies that it merely reflects the base, that it is passive, neutral, indifferent to the fate of its base, to the fate of the classes, to the character of the system. On the contrary, having come into being, it becomes an exceedingly active force, actively assisting its base to take shape and consolidate itself, and doing its utmost to help the new system to finish off and eliminate the old base and the old classes.[19]

 

তাহলে, হুডিসের যে কথা— “The notion that the ‘superstructure’— politics, civil society, juridical relations, culture, religion, etc.— is a mere reflection of the economic base became a virtual article of faith among innumerable post-Marx Marxists”— এর কোনও বাস্তব তথ্যগত জমি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে কি? না, কথাটা নিতান্তই ভদ্রলোকের অন্যদের মুখে গুঁজে দেওয়া— হয়তো অজ্ঞাতসারেই। এক অন্ধ ঝোঁকের বশবর্তী হয়ে। কিংবা অন্যদের কাছে শুনে, নিজে তথ্য যাচাই না করেই।

সুতরাং, উপরের এই সমীক্ষার ভিত্তিতে আমরা এখন দাবি জানাতে পারি, এঙ্গেলস, প্লেখানভ, লেনিন, স্তালিন প্রমুখ মার্কসবাদী নেতারা কে কোথায় তথাকথিত “photocopy theory of knowledge” তুলে ধরেছেন, আমাদের দেখানো হোক। যদি চিন্তা করার ক্রিয়া বোঝাতে ‘প্রতিফলন’ (reflection) শব্দটাতেই হুডিসের আপত্তি থেকে থাকে— থাকতেই পারে, তাতে অন্যায় কিছু নেই— সেক্ষেত্রে তো তাঁর মার্কস থেকেই সমালোচনা শুরু করা উচিত। মার্কস তাঁর পুঁজি গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের দ্বিতীয় জার্মান সংস্করণের পশ্চাদ্ভূমিকায় (Nachwort zur zweiten Auflage) খুব স্পষ্ট করেই হেগেলের ভাববাদের পাশাপাশি থেকে তাঁর বস্তুবাদী চিন্তার বৈশিষ্ট্য বোঝাতে গিয়ে চিন্তাভাবনাকে মস্তিষ্কে বহির্জগতের প্রতিফলন (Widerspiegelung der Außenwelt im Gehirn) হিসেবে বেশ জোরের সঙ্গে দাবি করেছেন।

এই বক্তব্য এত সুপরিচিত যে তার আর উদ্ধৃতি দিচ্ছি না।

কিন্তু না— আমরা খুব আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করি, এই শুধু-মার্কসপন্থী বিদ্বানরা মার্কসের অপ্রকাশিত লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিতে বেশি পছন্দ করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসুবিধা হয় বলেই কিনা জানি না, মার্কসের প্রকাশিত রচনাগুলিকে তাঁরা সাধ্যমতো এড়িয়ে চলেন। আর যেখানে মার্কসের কোনও সুপরিচিত মুদ্রিত বয়ানের সঙ্গে এঙ্গেলস বা অন্যদের বক্তব্য হুবহু মিলে যায়, অথচ যেটা তাঁদের না-পসন্দ, সেখানে তাঁরা মার্কসের যুক্ত থাকার কথাটা ভুলে থাকতে ভালোবাসেন।

এটা কি আলোচনার একটা ধারা হতে পারে?

 

ছয়.

কমরেড হুডিস খেয়াল করেছেন কিনা জানি না, কার্ল মার্কস নিজেও অনেক জায়গায় ভুল বলেছেন। আমরা সাধারণত সেগুলি উল্লেখ করি না প্রয়োজন হয় না বলে। মার্কসের সঠিক বক্তব্যের ভাণ্ডার এত বিপুল, যে সেটুকু আত্মস্থ করতে করতেই আমাদের মতো ক্ষুদ্র মানবের পাতি জীবনকাল শেষ হয়ে যায়, তাই দু-চারটে ছোটখাটো ভুল চোখে পড়লেও, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় বা অবকাশ আমাদের থাকে না।

কিন্তু তাতেও ভুলটা ভুলই থাকে। যেমন, মার্কস যাজক ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্বের সমালোচনায় যথার্থ ছিলেন বটে, কিন্তু সেই তত্ত্বকে ডারউইনের বিবর্তনবাদে প্রয়োগ করে একাধিকবার যে শ্লেষাত্মক সমালোচনা তিনি করেছেন, তা তথ্যগতভাবে পুরোপুরি ভুল। হুডিসকে খুশি করার জন্য বলে রাখি— একই ভুল এঙ্গেলসও করেছিলেন। সম্ভবত মার্কসের ভাবনাধারণার প্রভাবের ফলেই।

একইভাবে, হুডিস তাঁর উপরোক্ত প্রবন্ধের গোড়ায় মার্কসের Theories of Surplus Value বইয়ের প্রথম খণ্ড থেকে যে উক্তিটি উদ্ধৃত করেছেন, সতর্ক মার্কসবাদী পাঠকমাত্রই বুঝতে পারবেন— বক্তব্যটি মার্কসের হলেও ভুল। আমার ধারণা, বইটি যদি মার্কসের জীবদ্দশায় প্রকাশিত হত, তবে তিনি এই অংশটি সংশোধন করতেন এবং তাঁর ভিত-উপরিকাঠামোর মূল থিসিসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বয়ানটি ঠিক করতেন। কারণ, এই থিসিসই মার্কসবাদের একটি অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। একে বাদ দিলে বিশ্ব-ইতিহাসের দীর্ঘ সময়জুড়ে ঘটে যাওয়া বড় বড় রাজনৈতিক ঘটনাবলির কোনও সাধারণ ব্যাখ্যাই দাঁড়ায় না। আর একে গ্রহণ করলে রাষ্ট্র, ধর্ম, রাজনীতি, যুদ্ধ, বিপ্লব— ইত্যাকার সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনাবলি এক বোধগম্য ব্যাখ্যার অন্তর্গত হয়ে ওঠে। তবে শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত প্রভৃতির ব্যাখ্যায় আরও সতর্কভাবে এগোতে হয়। বুদ্ধিমান মার্কসবাদীদের কাছে এগুলো সবই অআকখ।

এই জন্যই হুডিসকে স্মরণ করিয়ে দেব, তিনি তাঁর আলোচনার মাঝে চেক দার্শনিক কারেল কসিক-এর যে গুরুত্বপূর্ণ রচনা থেকে একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন,[20] সেই উদ্ধৃতিটি আসলে এঙ্গেলসের বক্তব্যেরই রকমফের। আর বইটা ভালো করে পড়লে সেখানেই তিনি মার্কসের সেই থিসিসের সমর্থনে অত্যন্ত জোরালো বক্তব্য দেখতে পেতেন।

আপাতত শুধুমাত্র একটা উদ্ধৃতি দিয়ে রাখি। কসিক প্রথমে প্লেখানভ এবং ল্যাব্রিওলার অনুসরণে অর্থনৈতিক উপকরণ এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে পার্থক্যের প্রকরণটি মেনে নিয়েছেন, যদিও তাঁদের ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত হননি।[21] তারপর বলেছেন:

…the economic structure will continue to maintain its primacy as the fundamental basis of social relations.[22]

আর এক ধাপ এগিয়ে কসিক স্মরণ করিয়ে দেন:

Materialist monism [= Marxism] considers society to be a whole which is formed by the economic structure, i.e., by the sum total of relations that people in production enter into with respect to the means of production. It can provide a basis for a complete theory of classes, as well as an objective criterion for distinguishing between structural changes that affect the character of the entire social order, and derivative, secondary changes that only modify the social order without fundamentally altering its character.[23]

অর্থাৎ, মার্কসের সেই উদ্ধৃতিটিকে সত্য বলে ধরলে আর কসিক থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া যায় না। আবার পক্ষান্তরে, কসিকের কথা মানলে মার্কসের সেই জীবদ্দশায় অপ্রকাশিত বক্তব্যকে মেনে নেওয়া যায় না।

মুশকিল হচ্ছে, শুধু মার্কস-স্তম্ভের উপরে মার্কসীয় মতাদর্শকে দাঁড় করাতে গিয়ে হুডিস এবং তাঁর মতো সমচিন্তকরা এরকম স্ববিরোধী, উল্টোপাল্টা কথার জালে জড়িয়ে পড়ছেন। আমরা আশা করব, যাঁরা তাঁদের এই সব কথায় কান পাতছেন কিংবা মাথা নাড়ছেন, তাঁরাও সমস্ত বিষয়টি আরও গভীরভাবে ভাববেন এবং চারদিক থেকে মিলিয়ে নেবেন।

 

সাত.

আমাদের কথা প্রায় শেষ। আলোচ্য লেখকের প্রতিটি ভ্রান্ত বক্তব্য ধরে ধরে খণ্ডন করতে গেলে বিস্তর শব্দ খরচ হবে, এবং সম্ভবত পাঠকদের ধৈর্যের উপর ভয়ানক রকমের অত্যাচার করতে হবে। আমরা পিটার হুডিসের মূল ভাবনাকেই ভ্রান্ত বলে সাব্যস্ত করছি। এবং যাঁদের থেকে তিনি উপকরণ ও দিশা সংগ্রহ করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যকে সন্দেহ না করেও বক্তব্যকে খারিজ করতে বাধ্য হচ্ছি।

মার্কস-এঙ্গেলস মিলিয়েই মার্কসবাদের আদি কাঠামো। তাতে মার্কসই প্রধান চিন্তানায়ক, এঙ্গেলস তাঁর প্রথম সার্থক লোকপ্রিয় তাত্ত্বিক ও ভাষ্যকার। প্রতিটি আর্থসামাজিক বা বিজ্ঞানের প্রশ্নে মার্কসের পাশাপাশি এঙ্গেলসকে না ধরলে, বা সচেতনভাবে বাদ দিলে আমাদের প্রায় সমস্ত বিষয়েই আধাখ্যাচড়া মার্কসবাদ নিয়ে চলতে হবে। যা সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে কোনও কাজেই আসবে না।

এখানে একটি স্বাভাবিক প্রশ্ন অনেকের মনেই উঠতে পারে— এইসব শুধু-মার্কসপন্থী বুদ্ধিজীবীরা এমন একটি ভ্রান্ত উপস্থাপনার পিছনে দৌড়াচ্ছেন কেন? তাঁরা আদতে কী চান?

আমরা এখনও পর্যন্ত তাঁদের কোনও অসদুদ্দেশ্য আছে বলে ধরে নিচ্ছি না। তাঁদের এই প্রবণতাকে আমরা একটি বিভ্রান্তি হিসেবেই দেখতে চাই। এঁরা আগেকার মার্কস-চিন্তকদের ‘পরিণত মার্কস’ বিষয়ে যে সমালোচনা ছিল, তাকে অতিক্রম করে মার্কসকে আগাগোড়াই একজন উদার মানবতাবাদী বৈচারিক, চিন্তাশীল সমাজ ও ইতিহাস-বিশ্লেষক হিসেবে তুলে ধরতে চান। তাঁদের কাছে শ্রেণি, দল, শ্রেণিসংগ্রাম, বিপ্লব, সমাজ পরিবর্তন— এগুলো আসলে মার্কসের প্রকৃত অ্যাজেন্ডা নয়। মার্কস মূলত একজন অসামান্য প্রতিভাসম্পন্ন চিন্তক। যিনি সারা জীবন ধরে নিত্যনতুন সমস্যার পেছনে ছুটে বেড়িয়েছেন। সমস্যার সমাধান, কাজের সমাপন— এমন ঘটনা তাঁর জীবনে নেই। তাই তাঁর কোনও রচনাই সমাপ্ত নয়, সম্পূর্ণ নয়। অসমাপ্তি অসম্পূর্ণতাই তাঁর যাবতীয় রচনার ভূষণ।

ঠিক এখানেই এঙ্গেলস বাধ সেধেছিলেন। আমেরিকার মার্কসবাদী পত্রিকা Human Geography-তে জনৈক গ্রিক অধ্যাপক লিখেছেন:

The main reason why Engels has attracted so much rancor is that he systematized Marxism as theoretical system and transformed it to a mass political movement. This is his ‘cardinal sin’ and for this contemporary anti-Engelsionists practically prefer that Capital should not have been published: ‘it is an unfinished and unfinishable work’.[24]

এই সমস্ত বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে লেখকের অভিমত হল:

The common ground uniting them is their abhorrence for the existence of Marxism as a coherent theoretical tradition and as a weapon for the revolutionary struggle of the working class for the emancipation of human society.[25]

কেউ ভাবতে পারেন, আমরা হয়তো বাড়িয়ে বলছি। না। আলোচ্য বিশেষজ্ঞদের কিছু কিছু রচনার শিরোনাম এবং/অথবা বয়ান পড়লেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। মারচেলো মুস্তো ২০০৯ সালে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যার শিরোনামই ছিল— “Karl Marx: The Indiscrete Charm of Incompleteness”। সেই প্রবন্ধের শেষে তিনি লিখেছিলেন:

After many seasons marked by deep and reiterated incomprehension of Marx, resulting from the attempted systematization of his critical theory–given its originally incomplete and non-systematic character–by the conceptual impoverishment which has accompanied its popularization, by the manipulation and censorship of his writings, and the instrumental use of the same for political purposes, the incompleteness of his work stands out with an indiscrete charm, unobstructed by the interpretations which had earlier deformed it, even manifestly becoming its negation. From this incompleteness re-emerges the richness of a problematic and polymorphous thought and of a horizon whose distance the Marx Forschung (the research on Marx) has still so many paths to travel.[26]

আর একজন শুধু-মার্কসবিদ, মাইকেল হাইনরিখ, তাঁর এক সাম্প্রতিক প্রবন্ধের শেষ লাইনে একই সুরের প্রতিধ্বনি করেন:

Marx’s legacy is not a finished work, but rather a research programme, the vast outline of which are only now becoming visible through MEGA.[27]

কার্ল মার্কসের এলোমেলো, ছড়ানো-ছেটানো পাণ্ডুলিপিগুলিকে যেমনকার-তেমন না ছাপিয়ে, সেগুলিকে সম্পাদিত করে সুসংহত রূপে উপস্থাপন করে “মার্কসবাদ” নাম এক বৈজ্ঞানিক ও সুশৃঙ্খল মতবাদের বিকাশ ঘটানোই হচ্ছে ফ্রেডরিখ এঙ্গেল্‌সের সবচেয়ে বড় অপরাধ। মেগা-প্রকল্প থেকে এঁরা এখন মার্কসের সেই অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপিরাশিকেই সামনে তুলে এনে পাঠককে তাক লাগিয়ে দিতে চাইছেন— দেখুন দেখুন, কী মহান চিন্তাবীর ছিলেন আমাদের কার্ল হাইনরিখ মার্কস! কী দারুণ অগোছালো তাঁর লেখাপত্তর! কী অনবদ্য তাঁর অসমাপ্ত বাক্যসকল, প্যারাপুঞ্জ, অধ্যায়রাশি! কী অপূর্ব তাঁর প্রতিটি রচনার সিদ্ধান্তহীনতা!!

আমার শুধু একটাই বিস্ময়। এই যে প্রায় শ-খানেক শুধু-মার্কসপন্থী বুদ্ধিজীবী, যাঁরা মার্কসের রচনায় অসম্পূর্ণতা, সিদ্ধান্তহীনতা ও বিশৃঙ্খলারই জয়গান গাইছেন এত জোর গলায়— তাঁরা নিজেরা কেন একটা প্রবন্ধও সেই মহান মার্কস-প্রতিভাকে অনুসরণ করে লিখছেন না? তাঁদের সমস্ত রচনাই কেন সুসংগঠিত আকারে প্রকাশিত হয়ে চলেছে? এটা কি শুধুই বিনয়ের অবতার সেজে মার্কসকে চির-অনন্য রেখে দেওয়ার জন্য?

 

আট.

মার্কসবাদের তাত্ত্বিক মূল স্তম্ভগুলি হল: (১) বস্তুবাদ, (২) দ্বন্দ্বতত্ত্ব, (৩) শ্রেণিসংগ্রাম, (৪) সর্বহারার একনায়কত্ব, (৫) উৎপাদন সম্পর্ক ও উৎপাদিকা শক্তির দ্বন্দ্ব, (৬) মূল্যের শ্রমতত্ত্ব, (৭) উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব, এবং (৮) ভিত-উপরিকাঠামোর সম্পর্ক ও তার দ্বন্দ্বসংঘাত। এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই মার্কসের বক্তব্যকে বুঝতে গেলে এঙ্গেলসের ব্যাখ্যাকে অবলম্বন করতেই হবে— এবং তার ভিত্তিতেই সঠিক ধারণা গড়ে উঠবে।

এরপর যে যেমন পারবেন, প্লেখানভ, লাফার্গ, ল্যাব্রিওলা, লেনিন, স্তালিন, ত্রতস্কি, বুখারিন, গ্রামশি, মাও, হোক্সা, কাস্ত্রো প্রমুখদের পাঠ করুন, নানা দিক থেকে জানতে থাকুন, তাঁদের মধ্যেকার মতভেদগুলি চিহ্নিত ও বিশ্লেষণ করুন। পাশাপাশি, মেগা-২ প্রকল্পের অনুসারী “শুধু-মার্কস” বিদ্বানদের রচনাও পড়তে পারেন। তবে সে পাঠের সময় সচেতন থাকুন— উপরোক্ত মূল সিদ্ধান্তগুলির বিষয়ে কে কে সদর্থক অবস্থান নিচ্ছেন, আর কে বা কারা, তার কোনও না কোনওটাকে, বুঝে বা না বুঝে, সজ্ঞানে বা অজ্ঞাতসারে— সেগুলিকে আড়ালে সরিয়ে দিতে চাইছেন। যাঁকেই দেখবেন এই মূল সিদ্ধান্তগুলির এক বা একাধিককে নানারকম কুযুক্তির সাহয্যে মার্কসের চিন্তাধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে উদ্যোগী হয়েছেন, বুঝবেন, তিনি মার্কসবাদ বোঝেননি। সে যতই মার্কসের নানারকম অপ্রকাশিত নোট থেকে উদ্ধৃতি দিন না কেন— তা মার্কসবাদ নয়। মার্কসীয় ভাবনা নয়।

কার্ল মার্কস কমিউনিস্টদের কাছে কোনও প্রফেট নন। শেষ এবং একমাত্র প্রফেটও নন!!

এই সমস্ত বিষয়ে সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।

 

সূত্রোল্লেখ:


[1] Cited: Hudis 2004.
[2] পূর্বোক্ত।
[3] পূর্বোক্ত।
[4] Plekhanov 1976, 69.
[5] হুডিসদের বয়ান থেকে সেটা একেবারেই আলাদা কিছু নয়।
[6] Marx 1969, 288.
[7] এর উল্লেখ হুডিস করেছেন।
[8] Marx 1974, 86 and 88.
[9] দ্রষ্টব্য: মুখোপাধ্যায় ২০২৩।
[10] Marx 1977, 20-21; emphasis added.
[11] Marx 1974, 86f; emphasis added.
[12] Marx 1974, 88; emphasis added.
[13] Marx 1867, 45.
[14] Marx and Engels 1976, 61.
[15] Ibid, 67.
[16] Marx and Engels 2014, 181.
[17] Marx and Engels 1982; Letters dated 5 August 1890; 21–22 September 1890; 27 October 1890; 14 July 1893; 25 January 1894.
[18] Marx and Engels 1982, pp.394–95.
[19] Stalin 1976, p.5.
[20] কসিক-এর এই গুরুত্বপূর্ণ বইটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমি কমরেড হুডিসের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
[21] Kosik 1976, 61-62.
[22] Ibid, 63.
[23] Ibid, 64.
[24] Mavroudeas 2020.
[25] Ibid, abstract.
[26] Musto 2009.
[27] Heinrich 2016.