ফ্রেডরিক এঙ্গেলস (২৮ নভেম্বর ১৮২০-৫ আগস্ট ১৮৯৫): জন্মদ্বিশতবর্ষ স্মরণ

কণিষ্ক চৌধুরী

 


লেখক পেশায় শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞানের উৎসাহী ছাত্র ও গবেষক, প্রাবন্ধিক

 

 

 

এঙ্গেলসের জন্ম প্রাশিয়ার রাইন প্রদেশে অবস্থিত বারমেন শহরে। বাবা ছিলেন কাপড় কলের মালিক। বাবা চেয়েছিলেন ছেলে তার মত ব্যবসায়ী হোক। বাবার স্বপ্ন সফল হয়নি। স্বাধীনচেতা ও সংবেদনশীল এঙ্গেলস অবসর সময় ভাবতেন আর বই পড়তেন। সাহিত্য শিল্প ও সঙ্গীতে ছিল গভীর অনুরাগ। বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করে বুঝতে চাইতেন চারপাশের ঘটনা ও পরিবেশকে। ১৯ বছর বয়সেই তিনি ধর্মমোহ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেন। ১৮৪২-এ তিনি ইংল্যান্ডে যান। এখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় মহান ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রী রবার্ট ওয়েনের শিষ্যদের। আলাপ হয় হেগেলের বামপন্থী অনুগামীদের সঙ্গে। এই পর্বে মার্কসের সঙ্গে তাঁর প্রাথমিক আলাপচারিতা শুরু হলেও ঘনিষ্ঠতার আবির্ভাব ঘটে ১৮৪৪-এ প্যারিসে। এর পরের গল্প একসঙ্গে পথচলার গল্প, মার্কসবাদ গড়ে তোলার গল্প, অভিন্ন বন্ধুত্বের অনন্য উদাহরণের গল্প।

১৮৮৩-তে কাল মার্কসের মৃত্যুর পর এঙ্গেলসের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। মার্কস তখন ‘ক্যাপিটাল’ নিয়ে কাজ করছিলেন। তাঁকে সে কাজে নানাভাবে সাহায্য করার পাশাপাশি ড্যুরিং-কে সমালোচনা করে একটি গ্রন্থ লেখেন— ‘অ্যান্টি ড্যুরিং’। প্রকাশিত হয় ১৮৭৮-এ। গ্রন্থটির আরও দুটি সংস্করণ এঙ্গেলসের জীবদ্দশাতেই প্রকাশ লাভ করে— ১৮৮৫ এবং ১৮৯৪-এ। ১৮৭০ দশকে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ডুবেছিলেন বিজ্ঞান ও দর্শন চর্চায়। কাজটি অত্যন্ত মন্থর গতিতে— প্রায় দশ বছর ধরে (১৮৭৩-৮৩)। এঙ্গেলস এই কাজটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ আকারে লিখে যেতে পারেননি, মূলত নোট আকারেই গবেষণাটি লিপিবদ্ধ থেকে যায়। ১৯২৭-এ এই নোটগুলি গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থনাম ডাইলেকটিকস অফ নেচার (প্রকৃতির দ্বান্দ্বিকতা)। এঙ্গেলসের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটি হল— পরিবার ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি (প্রকাশকাল ১৮৮৪)। এই সময়েই তাঁকে মার্কসের ‘পুঁজি’-র দ্বিতীয় খণ্ডের প্রকাশনার কাজ করতে হয়, আর প্রস্তুতি নিতে হয় তৃতীয় খণ্ডের প্রকাশের জন্য। এরই মধ্যে তাঁকে লিখতে হয় ‘ল্যুডভিগ ফয়েরবাখ ও চিরায়ত জার্মান দর্শনের অবসান’ গ্রন্থটি। এটি প্রকাশিত হয় ১৮৮৮-তে। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘কাল্পনিক ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’। মার্কসের জীবদ্দশাতে যেসব ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখ্যা ও বর্ণনাকে তাঁরা অপ্রতুল মনে করেছিলেন সেই অভাব মার্কস-পরবর্তী পর্বে এঙ্গেলসের রচনা অনেকটাই পূরণ করতে পেরেছিল। সংশোধন করতে হয়েছিল ধারণা। আলোকপাত করলেন স্বল্পালোকিত অঞ্চলে। আর এইভাবেই তিনি এগিয়ে নিয়ে গেলেন মার্কসবাদকে। এই প্রসঙ্গে তিনটি প্রধান ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করা যায়— (ক) মার্কসবাদ— পদ্ধতি না প্রণালী; (খ) ঐতিহাসিক ক্ষেত্র ও (গ) দর্শন ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্র।

মার্কসবাদ পদ্ধতি (method) না প্রণালী (system), এ প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন দার্শনিক রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য। প্রশ্নটা এই জন্যই উত্থাপিত হয়েছে যে, এই প্রশ্নের সমাধানের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মার্কসবাদের চরিত্র-প্রকৃতি। রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য বলেছেন:

…মার্কসবাদ যদি একটি পদ্ধতি হয় তবে দেশ-কাল-পাত্র-পরিস্থিতি ইত্যাদি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রণালীরও পরিবর্তন হবে। দেশকাল-নিরপেক্ষ প্রণালীর ধারণাটি মার্কসীয় পদ্ধতির বিরোধী। তার কারণ এই: পদ্ধতি হলে পরিবর্তনকেই একমাত্র অপরিবর্তনীয় নীতি বলে স্বীকার করতে হবে, কোনও-এক-সময়ে-গড়ে-ওঠা একটি প্রণালীকে তাহলে অপরিবর্তনীয় বলে মানা যাবে না। … পদ্ধতির ওপর চাপ দিলে প্রণালীর গুরুত্ব কমে যায়, এক বিশেষ কালপর্বের পরে যেগুলি আর প্রাসঙ্গিক থাকে না। (ভট্টাচার্য, রামকৃষ্ণ। ২০১৬:১১)

আর একটু ভেঙে বলা যায়: মার্কসবাদ পদ্ধতি বলে পরিবর্তনই সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। এখানে অপরিবর্তনীয় অচলায়তনকে স্বীকার করা হবে না। ফলে স্থান ও কালগত পরিবর্তন অনুযায়ী মার্কসবাদও বিকশিত হবে। অন্যদিকে এটিকে প্রণালী হিসেবে ধরে নিলে একটি অনড় দর্শন জন্ম নেবে, যা ধর্মের মত কিছু। বাস্তব সমস্যার সমাধানে মার্কসীয় শিক্ষকদের কথাগুলিকে পয়গম্বরের বাণী হিসেবে ধরে নিয়ে এগোনো। নিজের বিচারবুদ্ধিকে কাজে না লাগানো। চেতনজগৎ ও বস্তুজগতের পরিবর্তন ও দ্বান্দ্বিকতাকে অগ্রাহ্য করে শাস্ত্রবাদীতে পরিণত হওয়া, ইত্যাদি। এঙ্গেলস এই বিষয়ে মার্কসবাদীদের বহুদিন আগেই সচেতন করে দিয়েছেন তার ‘ল্যুডভিগ ফয়েরবাখ এবং চিরায়ত জার্মান দর্শনের অবসান’ (১৮৮৮) নামক গ্রন্থে। এখানে তিনি দেখিয়েছেন যে হেগেল একটি দর্শনতন্ত্র গড়ে তুলতে বাধ্য ছিলেন এবং চিরাচরিত চাহিদা অনুযায়ী দর্শনতন্ত্রের উপসংহারে কোনও না কোনও চরম সত্য থাকতে বাধ্য। (ম.এ.। ১৯৭২ : ২(২) : ৪৬)। এই চরম বা পরম সত্যের ধারণাটি বিকাশ প্রক্রিয়ায় সঙ্গে সঙ্গতিসম্পন্ন নয়। ফলে নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আজ যা সত্য, আগামীকাল তা সত্য নাও হতে পারে। অন্তত সে সম্ভাবনাটাই বেশি। এঙ্গেলস বলেন, এই কারণেই, “মান্যতার কোনও এক নিখুঁত আদর্শ অবস্থায় জ্ঞান যেমন কোন পরিপূর্ণ সমাপ্তিতে উপনীত হতে পারে না, তেমনি ইতিহাসও তা পারে না। কোনও নিখুঁত সমাজ বা নিখুঁত ‘রাষ্ট্রের’ অস্তিত্ব শুধুমাত্র কল্পনাতেই সম্ভব। পক্ষান্তরে একের পর এক প্রতিটি ঐতিহাসিক ব্যবস্থাই হল মানবসমাজের নিম্ন থেকে ক্রমশ উচ্চতর পর্যায়ে শেষহীন বিকাশধারার মধ্যে উৎক্রমণমূলক পর্যায় মাত্র। প্রতিটি পর্যায়ই আবশ্যিক, অতএব যে যুগ ও পরিবেশের কারণে তার উদ্ভব সেই যুগ ও পরিবেশের পক্ষে তা সঙ্গত, কিন্তু তার গর্ভে যে নতুন ও উচ্চতর পরিস্থিতি ক্রমশ বিকাশ লাভ করে তার সামনে তার বৈধতা ও যুক্তিসঙ্গতি লোপ পায়। উন্নততর পর্যায়ের জন্য তাকে পথ ছেড়ে দিতেই হবে, যে পর্যায় নিজেও আবার ক্ষয় ও বিনাশ লাভ করবে।” (পূর্বোক্ত : ৪৫)। সুতরাং স্থান-কাল নিরপেক্ষ প্রণালীর ধারণাটি মার্কসবাদসম্মত নয়। মার্কসবাদ তাই পদ্ধতি, যা পরিবর্তনকেই একমাত্র অপরিবর্তনীয় বলে মনে করে।

মার্কস ও এঙ্গেলসের কর্ম ও জীবনের মধ্যে আশ্চর্য ধারাবাহিকতা ও সঙ্গতি থাকলেও, তাকে দুটি পর্বে ভাগ করা যায়— (ক) পূর্ব-১৮৭১ ও (খ) উত্তর পর্ব।

১৮৩০/৪০ দশক থেকে ১৮৭১-এর প্যারী কমিউনের মধ্যবর্তী পর্বে গোটা ইউরোপে একটি উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। প্রকৃত অর্থেই বৈপ্লবিক। শ্রমিকশ্রেণির শুধু বিকাশ নয়, সংগঠিত বিকাশের শুরু এই পর্বেই। কিন্তু ১৮৭১-এ প্যারী কমিউনের পতনের পরবর্তী পর্বে পরিস্থিতি বেশ কিছুটা বদলে গেল। বিপ্লবী আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ল। মার্কস ও এঙ্গেলস পূর্ববর্তী পর্বে (পূর্ব-কমিউন) ছিলেন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। কিন্তু কমিউন-উত্তর পর্বে তাঁরা ব্যবহারিক রাজনীতির আঙিনা থেকে সরে এসে তাত্ত্বিক চর্চায় মনোনিবেশ করলেন। মার্কস মূলত অর্থনীতি এবং এঙ্গেলস ইতিহাস, দর্শন ও প্রকৃতি বিজ্ঞান চর্চায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

মার্কস-এঙ্গেলস কখনওই কোনও প্রণালী গড়ে তুলতে চাননি। কারণ তাঁরা জানতেন প্রণালী নির্মাণের সীমাবদ্ধতা ও সমস্যাগুলিকে। মার্কসবাদ যদি প্রণালী হয়, তাহলে তার সঙ্গে যোগ-বিয়োগের আর বিশেষ অবকাশ থাকে না। তার নীতিতত্ত্ব, নন্দনতত্ত্ব ইত্যাদি সবই মজুত থাকার কথা। প্লেখানভ ও তাঁর অনুগামীরা কিন্তু ভাবতেন, যেগুলো মার্কসবাদের মধ্যে নেই, অন্য দার্শনিকদের থেকে ধার করতে হবে। এতেই আপত্তি ছিল স্তালিনের ও সেই সঙ্গে লুকাচের। স্পষ্ট করে না বললেও তাঁদের লেখা থেকে বোঝা যায়, “মার্কসীয় পদ্ধতিই হচ্ছে বড় কথা। সেই পদ্ধতি প্রয়োগ করেই মার্কসীয় দর্শনের সঙ্গে সুসঙ্গত নীতিতত্ত্ব, নন্দনতত্ত্ব ইত্যাদি গড়ে তোলা যাবে।” (ভট্টাচার্য, রামকৃষ্ণ। ২০১৬:১৫)।

মার্কসবাদ অনুযায়ী কোনও ঘটনাকে বিচার করার অর্থ দ্বান্দ্বিকভাবে বিচার করা, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বিচার করা। মৌখিকভাবে বহু মার্কসবাদী এটা স্বীকার করে নিলেও, বাস্তবে তা প্রয়োগ করেন না। অনেকেই ভিত্তি ও উপরিকাঠামোর সম্পর্ক নির্ধারণে অর্থনীতির উপর মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ করেন। ফলে সেগুলি আর মার্কসবাদী ব্যাখ্যা থাকে না, হয়ে পড়ে অর্থনীতিবাদী বিশ্লেষণ, হয়ে পড়ে যান্ত্রিক ব্যাখ্যা। এঙ্গেলস এই ঝোঁকের বিরুদ্ধে মার্কসবাদীদের সতর্ক করে দিয়েছেন:

ইতিহাসের বস্তুবাদী ধারণা অনুসারে বাস্তব জীবনের উৎপাদন ও পুনরুৎপাদনই হচ্ছে ইতিহাসের শেষপর্যন্ত নির্ধারক বস্তু। এর বেশি কিছু মার্কস বা আমি কখনও বলিনি। অতএব, কেউ যদি তাকে বিকৃত করে এই দাঁড় করায় যে, অর্থনৈতিক ব্যাপারই হচ্ছে একমাত্র নির্ধারক বস্তু, তাহলে সে প্রতিপাদ্যটিকে একটি অর্থহীন, অমূর্ত, নির্বোধ উক্তিতে পরিণত করে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি হল ভিত্তি, কিন্তু উপরিকাঠামোর বিভিন্ন বস্তু যেমন, শ্রেণিসংগ্রামের রাজনৈতিক রূপগুলি এবং তার ফলাফল— সাফল্যমণ্ডিত বিজয়ের পর বিজয়ী শ্রেণি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সংবিধান ইত্যাদি, বিচারব্যবস্থা, এমনকি যোগদানকারীদের মস্তিষ্কে এই সমস্ত বাস্তব সংগ্রামের প্রতিফলন, রাজনৈতিক, আইনগত, দার্শনিক তত্ত্বাবলি, ধর্মীয় মতামত এবং ক্রমে সেগুলির আপ্তবাক্যে পরিণতি, এসবও ঐতিহাসিক সংগ্রামগুলির গতিকে প্রভাবিত করে এবং বহু ক্ষেত্রে তাদের রূপ নির্ধারণে প্রধান হয়ে ওঠে। (ME, 1975 : 394-5)।

১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে ই ব্লক-কে লেখা এঙ্গেলসের এই চিঠিতে তিনি এখানেই থামেননি। এই অর্থনীতির ক্ষেত্রে তাঁদেরও কিছুটা দায় ছিল সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। (পূর্বোক্ত : ৩৯৬)। ফানজ্‌ মেরিং (১৪-৭-১৮৯৩) এবং বর্জিয়াস (২৫-১-১৮৯৪)-কে লেখা চিঠিতে এই উপরিকাঠামো ও রূপের () উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। (পূর্বোক্ত : ৪৩৩-৩৪; ৪৪১-৪২)। এঙ্গেলস এখানে সরাসরি বলেছেন, উপরিকাঠামোকে নিষ্ক্রিয় হিসেবে দেখা চলবে না।

মার্কসের মৃত্যুর পর এঙ্গেলস একদিকে যেমন গোড়ার দিকের কাজগুলির অসম্পূর্ণতা দূর করেন, তেমনই ইতিহাস ও দর্শনের জগতের ক্ষেত্রটির বিস্তৃতি ঘটিয়ে দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করান। আর এ সবই ছিল তাদের যৌথ কর্মের ধারাবাহিক বিকাশের ফল। এই কারণেই মার্কসের নামের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে এঙ্গেলসের নাম উচ্চারিত হতে হবে। উভয়ের বিচ্ছেদ কৃত্রিম ও যান্ত্রিক।

 

সূত্র:

  • ভট্টাচার্য, রামকৃষ্ণ। ২০১৬। মার্কসবাদ জিজ্ঞাসা। কলকাতা। অবভাস।
  • ম.এ. (মার্কস, কার্ল ও এঙ্গেলস, ফ্রেডরিক)। ১৯৭২। প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় অংশ। রচনা সংকলন। মস্কো। প্রগতি প্রকাশন।
  • E. (Marx Engels). 1975. Selected Correspondence. Moscow. Progress Publishers.
About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4596 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...