Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

দ্বিতীয় বর্ষ, দশম যাত্রা : শেষ মোহিকান

স্টেশন মাস্টার

 

এতসব সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ঠিক করা গেল – মৃণাল সেনই হোন এই সংখ্যার মূল ভাবনা। বলাই বাহুল্য, উদ্দেশ্য ব্যক্তিপূজা নয়। উদ্দেশ্য – বিভিন্ন অধিকারীর দৃষ্টিতে তাঁর কাজকর্মের হদিশ করার একটা সৎ চেষ্টা করা।  

 

এমন মোটেও নয় যে দুনিয়ায় আলোচনার বিষয় কম পড়েছে। সামনে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস। গত বছরের ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় আমাদের মূল ভাবনাও ছিল ‘জননী ভাষার কাছে’। তারপর মহা হুল্লোড়ে হাজির হয়ে গেছে বাঙালির বাৎসরিক বই উৎসব (এর বেশি না-বলাই ভাল)।

এতসব সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ঠিক করা গেল – মৃণাল সেনই হোন এই সংখ্যার মূল ভাবনা। বলাই বাহুল্য, উদ্দেশ্য ব্যক্তিপূজা নয়। উদ্দেশ্য – বিভিন্ন অধিকারীর দৃষ্টিতে তাঁর কাজকর্মের হদিশ করার একটা সৎ চেষ্টা করা। এই কাজ করে উঠতে গিয়ে যা পারলাম, তা হল দুই বাংলার বাইরের জগতের কিছু স্বনামধন্য মানুষের চোখে তাঁর কাজকর্মের তথ্যনিষ্ঠ আলোচনা। আর যা পারলাম না, তা হল কেরালা ও কর্ণাটক এই দুই প্রদেশের – বাংলার বাইরে মৃণালের খ্যাতি যে চত্বরে সবথেকে বেশি – সেখান থেকে কোনও লেখা জোগাড় করতে। ফলে, আশঙ্কা সত্যি করে কাজটা অসম্পূর্ণই থেকে গেল।

অসম্পূর্ণ হলেও, যেটুকু পারা গেল তা-নিয়েই তৈরি হল এইবারের মূল ভাবনা – শেষ মোহিকান। বাংলা-তথা-ভারতের সিনেমার নবতরঙ্গ আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন যাঁরা, তাঁদের শেষতম প্রতিনিধিকে এই নামে স্মরণ করাই কর্তব্য বলে মনে করা গেল।

মৃণালের স্মৃতিতে-সম্মানে যাঁদের – শোকবার্তা না-বলে স্মরণবার্তা বলি – পেলাম, তাঁরা মাননীয় শ্যাম বেনেগাল, আনন্দ পটবর্ধন এবং ইয়োর্গে ইগলেসিয়াস। ইয়োর্গে ক্যুবার একজন লব্ধপ্রতিষ্ঠ কবিই শুধু নন, সেখানকার চলচ্চিত্র শিক্ষার সর্ববৃহৎ বিদ্যায়তনের অধ্যক্ষও বটেন। বলে রাখা ভাল – এই বিদ্যায়তনে অল্প কিছুদিনের জন্য মৃণাল গিয়েছিলেন, তাঁর ফিল্মতুতো বন্ধু ‘গাবো’ – গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ডাকে। মার্কেজ তখন সেই সংস্থার প্রধান।

সেই সময় সেখানে ছাত্র হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী। মার্কেজ-সহ অন্যান্য লাতিন আমেরিকান বন্ধুদের সঙ্গে মৃণালের সখ্য নিয়ে লিখলেন ইন্দ্রনীল। এ-ছাড়াও কলম ধরলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র-পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল। সিনেমা আলোচক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মৃণালের ছবি-বিষয়ে কলম ধরলেন বিশিষ্ট তথ্যচিত্র-নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদার। সৌমিত্রদার এই লেখা বেরোল বলে এ-সংখ্যায় ওঁর জিন্নাহ্‌-বিষয়ক লেখার কিস্তি প্রকাশ করা হল না।

এ-ছাড়াও লিখলেন মৃণালের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সিনেমা-আলোচক সোমা চ্যাটার্জি। মৃণালের বিভিন্ন ছবি নিয়ে আদতে ইংরিজিতে-লেখা একটি আলোচনার বঙ্গানুবাদ প্রকাশের অনুমতি দিয়ে আমাদের বাধিত করলেন জেমস কোয়ান্ট। অতি অল্প সময়ের মধ্যে মৃণালকে আন্তরিক শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ

অন্যান্য নিয়মিত বিভাগের সঙ্গে এই সংখ্যা থেকে প্রকাশিত হবে ‘এ-মাসের কবি’ নামে একটি বিশেষ অংশ। আমাদের উদ্দেশ্য, এই অংশে অপেক্ষাকৃত নতুন ও স্বল্প-পরিচিত কবিদের একজনকে বেছে নিয়ে তাঁর কাজের বিষয়ে আলোচনা। এই সংখ্যায় নীলাঞ্জন হাজরার কাজ ও তা-নিয়ে আলোচনা প্রকাশ করতে পেরে আমরা তৃপ্ত। এ ছাড়া, গত মাসে শেষ হয়েছে বুকাওস্কির বাংলা অনুবাদ। এই সংখ্যা থেকে ধারাবাহিকভাবে শুরু হল অবিন সেনের নতুন রহস্যোপন্যাস ‘মৃত পাখিদের গান’

সঙ্গে নিয়মিত অন্য বিভাগগুলি — গল্প, অণুগল্প, অন্যগদ্য, অনুবাদ সাহিত্য, ফটোফিচার, বইচর্চা — সবই রইল। আমাদের দুটি বিশেষ বিভাগ — স্টিম ইঞ্জিন এবং সবুজ স্লিপারও রইল যথারীতি।

ভাল থাকুন। ভাষার মাসে। বইয়ের মাসে।

অলমিতি।