জনগণ মন — তৃতীয় বর্ষ, দশম যাত্রা

স্টেশন মাস্টার

 

আরবি-তে ‘শাহিন’ কথাটির অর্থ যে বাজপাখি, সে দিকে প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করাইয়া দিয়াছিলেন দিল্লিতে কর্মরত এক বাঙালি সাংবাদিক। তখন ধরনা আন্দোলন সবে শুরু হইয়াছে, শাহিনবাগ তখনও কৌলীন্যপ্রাপ্ত হয় নাই। অবলোকনটির নাটকীয়তা সে সময় অনেককেই মুগ্ধ করিলেও, তাহার তাৎপর্য তখন সম্যক বুঝা যায় নাই। সে তাৎপর্য ক্রমে বুঝা যাইতেছে, শাহিনবাগ আন্দোলন দুই মাসে পা রাখিবার পর।

একাধিক কারণেই আন্দোলনটি অভিনব। রাজধানী দিল্লির একপ্রান্তে একটি নিতান্ত ক্ষুদ্র জনসন্নিবেশ হিসাবে যাহার সূচনা, তাহা গত দুই মাসে শাহিনবাগের সীমিত ভৌগোলিক পরিসরটি পার হইয়া সারা দেশে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। তাহার বিস্তার ও জনপ্রিয়তা এতদূর গিয়াছে যে, চপ্পা চপ্পা শাহিনবাগের মতো স্লোগানও আর কেবল স্লোগান পদবাচ্য না-থাকিয়া আক্ষরিক অর্থে একটি দূরপ্রসারী বাস্তবতায় পরিণত হইয়া উঠিয়াছে। শাহিনবাগের দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত হইয়া জাতীয় নাগরিকপঞ্জী আইনের প্রতিবাদে গণঅবস্থান শুরু হইয়াছে উত্তরপ্রদেশের আলিগড়, লখনউ, বারাণসী, বিহারের পটনাসাহিব, মুজফফরপুর-সহ একাধিক স্থানে। কলিকাতার পার্ক সার্কাসেও অনুরূপ অবস্থান-আন্দোলন চলিয়াছে।

স্বাধীনতার পর গত সাত দশকের বেশি সময়কালে এই প্রথম আমরা এমন একটি আন্দোলন দেখিতেছি যাহার রাশ কোনও রাজনৈতিক দলের হস্তে নাই, বরং এ আন্দোলনের নেতৃত্বে একেবারে আক্ষরিক অর্থেই রহিয়াছেন সাধারণ মানুষ, আরও স্পষ্ট করিয়া কহিতে গেলে, ছাত্র-যুবা ও মহিলারা। বিভিন্ন রাজ্যে একাধিক রাজনৈতিক দল সঙ্কীর্ণ ভোট-ব্যাঙ্ক-রাজনীতির স্বার্থে এই আন্দোলনকে ব্যবহার করিতে চাহিলেও অন্তত এখন পর্যন্ত তাহাদের সেই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় নাই। এই আন্দোলন ভবিষ্যতে কোন পথে চলিবে তাহা ভবিষ্যৎই বলিবে, কিন্তু গত দুই মাসের অভিজ্ঞতা হইতে পরিষ্কার, শাহিনবাগ সহজে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক শক্তি বা স্বার্থের কাছে মাথা ঝুঁকাইতে প্রস্তুত নহে। দিল্লির নির্বাচনের মুখে বিজেপি-র বড়-মেজ-সেজ নেতৃবর্গের একের পর এক কদর্য আক্রমণের মুখে যে দৃঢ়তার সহিত শাহিনবাগের মায়েরা সোজা হইয়া দণ্ডায়মান থাকিয়াছেন, তাহা হইতেই ইহার অন্তর্নিহিত শক্তিটি সম্যক প্রতীয়মান হইয়াছে। এই শক্তিরই জোরে শাহিনবাগ শব্দটি তাহার বাচ্যার্থ ও ভৌগোলিক পরিচিতি অতিক্রম করিয়া একটি প্রতীকে পরিণত হইয়াছে। পরন্তু, সারা দেশের সম্মুখে প্রজ্বলিত অগ্নিশিখার ন্যায় জাগিয়া থাকিয়া এই আন্দোলন জনগণমনে একটি ভয়ভাঙানিয়া রূপকল্পেরও জন্ম দিয়াছে।

গত মাসাধিককাল ধরিয়া চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম অত্যন্ত মনোযোগের সহিত এই আন্দোলনকে অনুসরণ করিয়া আসিতেছে। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হইতে শাহিনবাগের উদ্দেশ্য-বিধেয়-প্রাসঙ্গিকতা বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন ও নিবন্ধ প্রকাশের পরেও আমাদের মনে হইয়াছে, আন্দোলনটির মূল বৈশিষ্ট্যগুলিকে আরও গভীরভাবে পর্যালোচনার প্রয়োজন রহিয়াছে। সেই প্রয়োজনবোধেই আমাদের এই সংখ্যার মূল ভাবনা হিসাবে পুনরায় বিষয়টিকে ফিরিয়া দেখিবার উদ্যোগ। লিখিয়াছেন প্রতিভা সরকার, প্রশান্ত ভট্টাচার্য, দেবব্রত শ্যামরায়, শতাব্দী দাশ এবং প্রবুদ্ধ ঘোষ

এতদ্ব্যতীত, প্রবন্ধ, গল্প, অণুগল্প, কবিতা, অনুবাদ সাহিত্য, মুক্তগদ্য, ধারাবাহিক উপন্যাস, বইপত্রের কথা, ফটোফিচার যেমন থাকে, তেমনই রহিয়াছে। যথাবিধি রহিয়াছে আমাদের চারটি বিশেষ বিভাগ– স্টিম ইঞ্জিন, সবুজ স্লিপার, ডিসট্যান্ট সিগনাল এবং ভালো খবর

কিছু অভ্যন্তরীণ কারণবশতঃ এই সংখ্যাটি প্রকাশে বেশ কয়েকদিন বিলম্ব ঘটিল। সে জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4658 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...