স্টেশনমাস্টারের কলাম
শতবর্ষ পেরোচ্ছেন ইলা মিত্র। তাঁকে নিয়ে চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম-এর নভেম্বর সংখ্যার সম্পাদকীয় লিখতে বসে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হল। বারবারই মনে হচ্ছে এই মহিয়সী রমণীর কর্মময় জীবনকে সামগ্রিকতায় পাঠকের সামনে তুলে ধরা এই সামান্য পরিসরে অসম্ভব। এই বাংলা তথা ভারতবর্ষে এমন অনেক বীরাঙ্গনা জন্মগ্রহণ করেছেন, যাঁরা সারাজীবন বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের পাশে থেকেছেন, ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে নিজেদের সর্বস্ব বাজি রেখেছেন, নারীর অধিকার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, কারাবরণ করেছেন, শাসকের দীর্ঘমেয়াদি অত্যাচার সহ্য করেছেন, মুক্তির পরেও আজীবন সমাজকর্মী হিসেবে প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। ওপরের এই সবকটি বৈশিষ্ট্যই এক এক করে আমরা ইলা মিত্রের জীবন থেকে খুঁজে নিতে পারি। আবার এই সবকটি বৈশিষ্ট্যের যোগফল দিয়েও ইলা মিত্র নামক ফেনোমেননটিকে ঠিকঠাক ধারণ করা যায় না। তা সত্ত্বেও অক্ষম চেষ্টাটুকু শুরু করা যাক। এবং শুরুটা করা যাক সংবেদী পাঠককে, সচেতনভাবে, এক তীব্র অস্বস্তির মধ্যে ডুবিয়ে দিয়ে।
বিগত ০৭/০১/১৯৫০ তারিখে আমি রহনপুরে গ্রেফতার হই এবং পরদিন আমাকে নাচোল নিয়ে যাওয়া হয়। যাওয়ার পথে পুলিশ আমাকে মারধর করে এবং তারপর আমাকে একটা সেলের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। … আমার যেহেতু বলার মত কিছু ছিল না, কাজেই তারা আমার সমস্ত কাপড়চোপড় খুলে নেয়
এবং সম্পূর্ণ উলঙ্গভাবে সেলের মধ্যে আমাকে বন্দী করে রাখে। আমাকে কোনো খাবার দেয়া হয়নি, একবিন্দু জলও নয়। সেদিন সন্ধ্যাবেলাতে এস আইয়ের উপস্থিতিতে সেপাইরা তাদের বন্দুকের বাঁট দিয়ে আমার মাথায় আঘাত শুরু করে।… তারা অমানুষিক নির্যাতন চালায়। সেলে চারটে গরম সেদ্ধ ডিম আনার হুকুম দিল। তারপর চার-পাঁচজন সেপাই আমাকে জোরপূর্বক ধরে চিৎ করে শুইয়ে দেয় এবং একজন আমার যৌনাঙ্গের ভিতর একটা ডিম ঢুকিয়ে দিল। আমি আগুনে পুড়ে যাচ্ছিলাম। এর পর অজ্ঞান হয়ে পড়ি। ৯ জানুয়ারি ১৯৫০ সকালে যখন আমার জ্ঞান হল তখন উপরোক্ত এস আই এবং কয়েকজন সেপাই আমার সেলে এসে তাদের বুট দিয়ে আমাকে চেপে লাথি মারতে শুরু করল। এর পর আমার ডান পায়ের গোড়ালিতে একটা পেরেক ফুটিয়ে দেওয়া হলো। সেই সময় আধাচেতন অবস্থায় পড়ে থেকে আমি এস আইকে বিড়বিড় করে বলতে শুনলাম, আমরা আবার রাত্রিতে আসছি এবং তুমি যদি স্বীকার না কর তাহলে সিপাইরা একে একে তোমাকে ধর্ষণ করবে। গভীর রাত্রিতে এস আই এবং সেপাইরা ফিরে এল এবং তারা আবার সেই হুমকি দিল। কিন্তু যেহেতু তখনও কিছু বলতে রাজি হলাম না তখন তিন-চারজন আমাকে ধরে রাখল এবং একজন সেপাই সত্যি সত্যি ধর্ষণ করতে শুরু করল। এর অল্পক্ষণ পরই আমি অজ্ঞান হয়ে পড়লাম। পরদিন ১০ জানুয়ারি যখন আমার জ্ঞান ফিরে এলো তখন আমি দেখলাম যে, আমার দেহ থেকে দারুণভাবে রক্ত ঝরছে এবং কাপড়চোপড় রক্তে সম্পূর্ণ ভিজে গেছে। এর পর আমাকে নবাবগঞ্জ হাসপাতালে পাঠানো হলো এবং ২১ জানুয়ারি নবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে এসে সেখানকার জেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। … কোনো অবস্থাতেই আমি পুলিশকে কিছু বলিনি।
ওপরের বয়ানটি রাজশাহী আদালতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষক সংগ্রামের নেত্রী ইলা মিত্রের ঐতিহাসিক জবানবন্দি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সম্ভবত এটিই ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম কোনও ধর্ষিতা, গণধর্ষিতা নারীর প্রকাশ্য নথিবদ্ধ বয়ান। ইলা মিত্রের এই পরিণতি তার আগে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পূর্ববঙ্গের কৃষকদের জোতদার ও জমিদারদের শোষণের বিরুদ্ধে তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার পুরস্কার। ১৯৪৩ সালে বাংলায় দুর্ভিক্ষ শুরু হলে কৃষকদের ওপর শোষণ আরও বেড়ে যায়। ১৯৪৬-৪৭ সালে ফসলের দুই-তৃতীয়াংশের ওপর অধিকারের দাবিতে কমিউনিস্ট পার্টির ডাকে তেভাগা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন কৃষকেরা। বিবাহসূত্রে রাজশাহীর নাচোলে আসার পর অন্যান্য কৃষক নেতাদের সঙ্গে নেতৃত্বের পুরোভাগে রইলেন ইলা এবং তাঁর স্বামী রমেন মিত্র। প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার, জননেত্রী ইলা মিত্রের হয়ে ওঠার পেছনে তাঁর নেপথ্যচারী স্বামী কমিউনিস্ট কর্মী ও নেতা রমেন মিত্রের অবদান অনস্বীকার্য। এহেন ইলার হয়তো পূর্ব পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুবরণ করাই ভবিতব্য ছিল, কিন্তু মৃতপ্রায় অবস্থায় ইলা মিত্রকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থা গুরুতর দেখে ১৯৫৪ সালের ৫ এপ্রিল তৎকালীন যুক্তফ্রন্ট সরকারের পাঁচ সদস্যের এক কমিটি ইলা মিত্রের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি-সহ আরও কয়েকজন নেতা ইলার মুক্তির সপক্ষে জনমত গড়ে তোলেন। কোনও ধরনের শর্ত ছাড়া যদি ইলাকে মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে আর তাঁকে প্রাণে বাঁচানো যাবে না। ইলা মিত্রকে দেখতে তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শত শত ছাত্র-ছাত্রী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিক-সহ সুশীল সমাজের নাগরিকেরা ভিড় করেন। শেষ পর্যায়ে কার্যত বাধ্য হয়েই পাক সরকার তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য কলকাতা যাওয়ার অনুমতি দেয়। যদিও ইলা কলকাতায় দীর্ঘ চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পরে পাক সরকার তাঁকে ছেড়ে দিতে রাজি ছিল না, বন্দি প্রত্যর্পণ নীতি অনুসারে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কূটনৈতিক স্তরে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছিল বারবার। জ্যোতি বসু, হীরেন মুখোপাধ্যায়-সহ বাম নেতারা ইলাকে আর পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না— এই মর্মে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ জানান। ইলা মিত্রের জীবনের প্রথম ও সবচেয়ে বর্ণময় পর্বটি এখানে শেষ হল।
এতদসত্ত্বেও ইলা মিত্র ফেনোমেননকে সম্পূর্ণ ধরা গেল না। এ-কথা বলা বাকি থেকে গেল যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে হেলসিঙ্কি অলিম্পিক বাতিল না হলে ইলা মিত্র (তখন সেন) প্রথম বাঙালি মহিলা অলিম্পিয়ান হতেন। ১৯৪০ সালে ইলা যখন অ্যাথলিট হিসেবে হেলসিঙ্কি অলিম্পিকের জন্য ব্রিটিশ-ভারতীয় প্রতিনিধিদলে স্থান পান, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৫। ততদিনে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলিতে নানা সাফল্যের কারণে দেশীয় সংবাদপত্র ইলা সেন একটি নিয়মিত মুখ। এও বলা হল না, ইলা বেথুন কলেজে পড়াকালীন কলকাতায় ভিড় করা ব্রিটিশ ও মার্কিন সৈন্যদের যৌনক্ষুধা থেকে বাংলার মেয়েদের বাঁচাতে তৈরি হয়েছিল ‘মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’, এই সমিতির কর্মী হিসেবেই প্রথমবার ইলার সামাজিক কাজের হাতেখড়ি। ততদিনে তিনি বেথুন কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক। ধারাবাহিকভাবে সামাজিক কাজের অবদানের জন্য ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ। দানবিক রাওলাট আইন ও হিন্দু কোড বিলের বিরুদ্ধে পথে নামা। দাঙ্গাবিধ্বস্ত নোয়াখালিতে অশীতিপর মহাত্মা গান্ধি যখন শান্তিপ্রতিষ্ঠার জন্য গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন, শান্তি কমিটির কর্মী হিসেবে ইলা তখন সেখানে অন্যদের সঙ্গে ত্রাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক পরে, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় সিআটি রোডে ইলা-রমেনের বাসগৃহটি কার্যত মুক্তিযোদ্ধাদের কলকাতা কার্যালয় এবং এক কমিউন হয়ে উঠেছিল। স্মৃতিচারণায় এক সহযোদ্ধা জানাচ্ছেন সেইসময় সম্ভবত গোটা কলকাতায় অতিথি আপ্যায়নের জন্য সবচেয়ে বেশি চা-পাতা কেনা হত বাড়িটি থেকে।
এবার যদি ইলা মিত্রের এই বর্ণময় জীবনের সকল কর্মকাণ্ড থেকে তাঁর একটিমাত্র পরিচয় আমাদের খুঁজে নিতে হয়, কী হবে সেই পরিচয়? ভেবে দেখলে দেখা যাবে, সেই একটিমাত্র অমোঘ পরিচয় হল, ইলা মিত্র একজন প্রকৃত কমিউনিস্ট যিনি ডি-ক্লাসড হতে পেরেছিলেন। এবং সারাজীবনে তাঁর সেই অর্জিত শ্রেণি-অবস্থান থেকে কোনওদিন চ্যুত হননি। ব্রিটিশ ভারতে অবিভক্ত বাংলার ডেপুটি অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের মেয়ে হিসেবে ইলা মোটরগাড়ি চেপে কলেজ যেতেন, প্রয়োজনে সাহেবি পোশাক পরতেন। সেই আধুনিকা মেয়েটিই মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে পূর্ববঙ্গের নাচোলে গিয়ে গ্রামীণ মেয়েদের মতো খাটো শাড়ি পরে তাঁদের সঙ্গে মিশে গেলেন। নাচোলের জমিদারবাড়িতে তাঁর বিয়ে হয়েছিল, তাই নাচোলের ‘রানিমা’ গ্রামবাসীদের দেওয়া এই সামন্তগন্ধী সম্বোধনটি এড়াতে পারেননি বটে, কিন্তু লড়াইয়ের ময়দানে আদিবাসী গ্রামবাসীদের একজন হয়ে লড়াই করেছেন, শেষ পর্যন্ত তাঁদের পাশে থেকেছেন। উল্লেখ্য, তাঁরাও প্রতিদান দিয়েছিলেন সংগ্রামী মেজাজেই। ইলা মিত্রের নামটি তাঁদের মুখ দিয়ে বের করার জন্য পুলিশ কম অত্যাচার করেনি, এমনকি হতাশায় খুনও করেছে বহু গ্রামবাসীকে। কিন্তু ব্যর্থ হিয়েছিল। ইলা মিত্র ও জমিদারসন্তান রমেন মিত্র যে শ্রেণিচ্যুত হতে পেরেছিলেন তার আরেক উদাহরণ নাচোলে এই জমিদার দম্পতিই নিজেদের সম্পূর্ণ ৫০০ বিঘা জমিতে তেভাগা কার্যকরী করে আন্দোলন জোরদার করে তুলেছিলেন। এমনকি ইলার নাতি রিতেন মিত্রের স্মৃতিচারণ থেকে আমরা জানতে পারি, বৃদ্ধ বয়সে দাদু ও ঠাকুমা একইসঙ্গে চক্ষু পরীক্ষা করাতে যাওয়ার সময় দাদু রমেন মিত্র সুবিধার জন্য ট্যাক্সি ডেকে নিলেও ঠাকমা ইলা বাসে চড়েই হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন।
ইলা মিত্র আজ একশো বছর পেরোচ্ছেন। আজ স্বীকার করে নিতে দ্বিধা নেই, এই নামটির সঙ্গে বর্তমান কলমচির প্রথম পরিচয় ২০০২ সালে, ১৪ অক্টোবর ভোরের সংবাদপত্রের মাধ্যমে। তার ঠিক আগের দিন এই ইতিহাসনির্মাতা নারী ৭৬ বছর বয়সে চিরবিদায় নিয়েছেন৷ অর্থাৎ জ্ঞান হওয়া ইস্তক, প্রায় দু-দশক ধরে ইলা মিত্রের সঙ্গে বঙ্গদেশে বাস করে, তাঁরই শহর থেকে কলেজ পাশ করে, সংবাদপত্রে রাজনীতি ও খেলাধুলোর খবরাখবরে নিয়মিত চোখ রেখেও, এমন একজন মহিয়সীর সম্বন্ধে জানা বা শোনার সৌভাগ্য হয়নি আমার। বলা বাহুল্য, এখানে ‘আমি’ বা ব্যক্তিবিশেষ গুরুত্বহীন। কিন্তু যা গুরুত্বপূর্ণ এবং আশ্চর্যের, তা হল এই ‘আমি’ এমন এক প্রজন্মের প্রতিনিধি, আশি বা নব্বইয়ের দশকে যাদের বেড়ে ওঠা, যারা জন্মাবধি এক তথাকথিত ‘বামপন্থী’ রাজনীতির আবহে শৈশব ও কৈশোর অতিবাহিত করেছে, রাজ্যে তখন গরিব, নিম্নবিত্ত, শিক্ষিত মানুষের ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসা একটি কমিউনিস্ট সরকার, প্রতিমাসে ডাকে আসা সুদৃশ্য ‘সোভিয়েত দেশ’ পত্রিকায় হাত ছোঁয়ানোর সুযোগ ঘটেছে, সান্ধ্য স্মৃতিচারণায় ভিয়েতনাম ও চিনের চেয়ারম্যান নিয়েও কথা উঠেছে কখনও-সখনও, অথচ তখন এবং তারপরেও দীর্ঘদিন জীবিত ও কর্মক্ষম ইলা মিত্রের নামটি কখনও আমার আশেপাশে সেভাবে আলোচিত হয়নি। তাঁকে ঘিরে এই নীরবতা কি একান্তই আমার এক ব্যক্তিগত ও বিক্ষিপ্ত অভিজ্ঞতা? নাকি সেদিন ইলা মিত্রের মৃত্যুসংবাদ ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হওয়ার পরেই আমার মতো অনেকেই টের পেলেন যে এরকম একজন মানুষ আমাদের মধ্যে এতদিন জীবিত ছিলেন?
বিস্মৃতির বিরুদ্ধে লড়াই আসলে শোষিত মানুষের রাজনীতির একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দেশ ও কাল-নির্বিশেষে শাসক বঞ্চিত মানুষকে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের আবহমান ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে চায়। যে সংগ্রামের স্মৃতি ও ইতিহাস বেঁধে বেঁধে রাখে শ্রমজীবী মানুষকে, দেশে দেশে, বর্তমানের সঙ্গে অতীতকেও, শোষকের কুশলী রাজনীতি তা ভুলিয়ে দিয়ে শোষিতকে একা ও বিচ্ছিন্ন করে দিতে চায়৷ তাই ইলা মিত্রের শতবর্ষে তাঁর কর্মময় জীবন ও কাজকে ফিরে দেখার প্রচেষ্টা আসলে বিস্মৃতির বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের নভেম্বর সংখ্যায় ইলা মিত্রকে নিয়ে লিখলেন দিলীপ চক্রবর্তী, অশোক চট্টোপাধ্যায় এবং দেবকুমার সোম। পাশাপাশি এ-ও বলা দরকার, এই প্রচ্ছদ নিবন্ধগুলি নিছক ইলা-স্তুতি নয়, তাঁর পরবর্তী জীবনে বিশেষ করে সংসদীয় রাজনীতিতে যোগদানের পর ইলা মিত্রের কোনও নীরবতা, আপাত-বিচ্যুতির কথাও উঠে এসেছে এইসব লেখায়।
একইসঙ্গে, ব্যক্তি রাজনীতির চেয়ে বড় নয়। তাই এক হিসেবে, তেভাগা আন্দোলন ধারণ করে আছে ইলা মিত্রকে। ফলে তেভাগার উত্তরাধিকার স্মরণ করে এবারের সংখ্যার চতুর্থ প্রচ্ছদ নিবন্ধটি লিখেছেন দেবাশিস মিথিয়া। সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনে প্রেক্ষাপটে তিনি দেখিয়েছেন আদতে তেভাগার মূল দাবি অর্থাৎ রক্তে বোনা ফসলের ওপর কৃষকের আইনি অধিকার আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পঞ্চম নিবন্ধে পৃথা তা তেভাগার ভূমি-সংগ্রামের আলোকে খতিয়ে দেখলেন পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের চা-বাগিচার জমির অধিকারের প্রশ্নটি এবং চা-শ্রমিকদের ধারাবাহিক বঞ্চনার ইতিহাস। সবমিলিয়ে এই পাঁচখানি নানা স্বাদের নিবন্ধে সেজে উঠেছে চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের নভেম্বর সংখ্যার উষ্ণ নিবেদন— ইলা মিত্র ও তেভাগা। এর পরের দায়িত্বটুকু পাঠকের।
ভালো থাকবেন। প্রণাম…

