জন্মশতবর্ষ, ইলা মিত্র এবং কিছু প্রাসঙ্গিক কথা

অশোক চট্টোপাধ্যায়

 


সংগঠনের কাজে যুক্ত হওয়ার সূত্রে ইলা মিত্রের জীবনাচরণ আমূল বদলে গিয়েছিল। ভূস্বামী-তনয় রমেন মিত্র যেমন কমিউনিস্ট কর্মী হিসেবে সমাজের নিচুতলার মানুষের মধ্যে নেমে এসে তাঁদের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাঁদেরই একজন হয়ে উঠেছিলেন, তাঁর সহধর্মিনী ইলাও ততোধিকভাবে শ্রেণিচ্যুত হওয়ার প্রক্রিয়ায় সামিল হয়েছিলেন এবং এক অভাবিত নতুন জীবনদর্শন অনুশীলনে ব্রতবদ্ধ হয়েছিলেন। ইলা এবং রমেনের সংস্কারমুক্ত মন, মনের প্রসারতার কারণে মুসলিমদের মধ্যেও তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাকীর্ণ হয়নি। তাঁদের সরল আটপৌরে জীবনাচরণ, খাবারদাবারে কোনওরকম ভেদচিহ্ন না-রাখা, কৃষকদের বাড়ির দাওয়ায় বসে রাজনৈতিক ঘটনাবলির সহজবোধ্য আলোচনা তাঁদের অসাধারণ জনপ্রিয় করে তুলেছিল

 

১৯৬৭-র মে মাসে উত্তরবাংলার নকশালবাড়ির বজ্রনির্ঘোষের দিনকয়েক পরে ৯ জুন নকশালবাড়ি এলাকার জনৈক কমরেডকে এক চিঠিতে চারু মজুমদার লিখেছিলেন: দশ-বারোজন পুলিশের দলকে আক্রমণ করতে গেলে অন্তত দুশো জন ‘কমরেড’কে সমবেত করতে হবে, আর একারণে যদি প্রয়োজন হয় এই দুশো জন ‘কমরেড’দের ‘গ্রুপ’ নিয়েই চলাফেরা করতে হবে, তাহলেই পুলিশকে আক্রমণ করা সম্ভব হবে। যদি জনা পাঁচ-দশ পুলিশকে ‘খতম’ করা যায় তাহলে পাঁচ-দশটা ‘রাইফেল’ ‘আমাদের’ হাতে চলে আসবে। এই রাইফেল হাতে পেলে কমরেডদের ‘সংগ্রামী মনোবল’ বেড়ে যাবে।

তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক চারু মজুমদার এই কথাগুলি বলেছিলেন নাচোলে তেভাগা আন্দোলনে পুলিশ আক্রমণের জবাবে কৃষক সংগ্রামীদের পালটা আক্রমণে চারজন পুলিশকর্মী নিহত হওয়া, সেইসব নিহত পুলিশের বন্দুক দখল করা, তার পরে পুলিশি সন্ত্রাসে আন্দোলন ভেঙে যাওয়া, অসংখ্য কমরেড গ্রেপ্তার হয়ে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হওয়া, বিশেষত আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের নিপীড়ন সহ্য করে বেঁচে থাকা, ‘স্বাধীন’ ভারতের পশ্চিমবাংলায় চলে আসার ঘটনাবলির দেড় দশকেরও পরে। চারু মজুমদার কি নাচোলের এই কৃষক আন্দোলনের কথা বিস্মৃত হয়েছিলেন এই লেখার সময়ে? এই ঐতিহাসিক আন্দোলনের পরিণতি কি তাঁকে শিক্ষণীয় কিছু দেয়নি? নাচোলের জঙ্গি কৃষক আন্দোলনের ছোট্ট পরিসরে যা ঘটেছিল তার সতেরো বছর পর তা অপেক্ষাকৃত বৃহৎ পরিসরে সংঘটিত হয়েছিল নকশালবাড়িতে। তবে পার্থক্য হল, পুলিশি আক্রমণ এবং অত্যাচারে নাচোলের কৃষক আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল, আর নকশালবাড়ির আগুন অনতিকালের মধ্যেই সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল, অনেক আশাব্যঞ্জক ঘটনাও ঘটেছিল। যদিও সেই ঐতিহাসিক জনোত্থানের সাড়ে পাঁচ দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পর আজ সেই আন্দোলন পথচ্যূত হয়ে বহুধাবিভক্তির পর্যায়ে হতাশার জন্ম দিয়েছে যা আবার স্বয়ং চারু মজুমদারের ভাষায় ‘ডিমোরালাইজেশান’-এ রূপান্তরিত হয়েছে।

 

দুই.

ইলা মিত্র তাঁর কোনও পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য থেকে রাজনীতিতে আসেননি। তাঁর পিতা ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারী। কলকাতার বেথুন স্কুল এবং কলেজে তাঁরা পড়াশোনা। কলেজে পড়ার সময়ই ছাত্র-রাজনীতির পরিবেশে গতায়াত এবং এই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া। ভালো অ্যাথলিট ছিলেন। তিন বছর জুনিঅর অ্যাথলেটিকসে চাম্পিয়ন হয়েছিলেন। একশো মিটার দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরবও অর্জন করেছিলেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে জাপান অলিম্পিকে ভারতীয় দলে নির্বাচিত হয়েছিলেন, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে সেবার এই অলিম্পিক বাতিল হয়েছিল। ছাত্র-রাজনীতির সংস্পর্শে আসায় তেতাল্লিশে মন্বন্তরের সময় ভুখা মিছিল, খাদ্য আন্দোলন, লঙ্গরখানা পরিচালনার মতো কাজে যুক্ত হয়েছিলেন সোৎসাহেই। মেয়ের এই ডানপিটেমি তথা রাজনীতির আবর্তে জড়িয়ে পড়া তাঁর বাড়ির লোকের কাছে ভালোভাবে সমাদৃত হয়নি। তাঁরা ইলার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবিত হয়ে তাঁকে রাজনীতির অঙ্গন থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন এবং এরপর তাঁরা তাঁকে তাড়াতাড়ি পাত্রস্থ করার সিদ্ধান্ত নেন। তৎকালীন অবিভক্ত মালদা জেলার রামচন্দ্রপুরের জমিদার বংশের সন্তান রমেন্দ্রনাথ মিত্রের সঙ্গে ইলার বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু মজা হচ্ছে রমেন নিজেই ছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। ফলে সোনায় সোহাগা হয়। নববধূ ইলা দেখেন তাঁর স্বামী লুকিয়ে লুকিয়ে কৃষকসভার মিটিং করেন। ইলা উদ্দীপিত হন, কিন্তু জমিদারবাড়ির প্রাচীর অতিক্রম করে স্বামীর সহযোগী হয়ে ওঠা সম্ভব হয়ে ওঠে না। রমেনই পথ করে দেন। তাঁর বন্ধু আলতাফ মিয়াঁ তাঁর নিজের বাড়ির একটি ঘর ছেড়ে দেন গ্রামের মেয়েদের পড়াশোনার জন্যে। রমেনের আগ্রহ এবং উৎসাহেই আলতাফের বাড়িতে ইলার যাতায়াত শুরু হয় স্কুলে শিক্ষকতা করার লক্ষ্যে। প্রথমে জমিদারবাড়ির বৌ গরুর গাড়িতে চড়ে স্কুলে যেতেন, তারপর শুরু হয় পায়ে হেঁটে স্কুলে যাওয়া এবং সেইসঙ্গে আশপাশের মানুষজনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার প্রাথমিক কাজ। এই বাড়ির বাইরে পা-বাড়ানোর সুযোগে ইলা বছর দুয়েকের মধ্যে আত্মগোপন করে নাচোলে চলে যান এবং রমেনের উৎসাহে জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠন গড়ে তোলার কাজে তাঁর সহযোদ্ধা হয়ে উঠতে থাকেন। মাতলা মাঝি নামক এক সাঁওতাল কৃষকের পরিবারে থেকে সংগঠন করার সূত্রে ইলার জীবনযাপনে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়। ১৯৪৬-এ নোয়াখালি-দাঙ্গার সময় ইলা তাঁর স্বামীর সহযোদ্ধা হিসেবে প্রপীড়িত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। এই আত্মগোপনে থাকার সময়ই ১৯৪৮-এ একবার কলকাতায় আসেন এবং সেখানে কলকাতা মেডিকেল কলেজে জন্ম নেয় ইলা-রমেনের প্রথম সন্তান। সন্তান জন্মের মাত্র আড়াই সপ্তাহের মাথায় ইলা আবার তাঁর সংগঠনের কাজের জায়গায় চলে যান, তাঁর সন্তান বড় হতে থাকে তার ঠাকুমার কাছে।

নাচোল ছিল আদিবাসী-অধ্যুষিত অঞ্চল। ফলে এখানকার তেভাগা আন্দোলনে আদিবাসী কৃষকদেরই সংখ্যাধিক্য ছিল। অবশ্য সেখানকার এবং আশপাশের বাঙালি কৃষকরাও এই আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। মাতলা মাঝির পরিবারের একজন হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় ইলার ব্যক্তিক, সামাজিক এবং ব্যবহারিক জীবনেও এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়। তিনি সাঁওতাল আদিবাসী কৃষকের সর্বজনীন ‘রানিমা’ হয়ে ওঠেন, যদিও রমেন সর্বজনীন ‘রাজাবাবু’ হয়ে ওঠেননি। এখানে এই রানিমা সামন্ত-সংস্কৃতির পরিচয়গন্ধী হলেও আসলে জমিদারবাড়ির রানিমা এখানে কৃষকদের একান্ত আপনজন নিজেদের রানিমা হয়ে ওঠেন। তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয়তা এবং জনগ্রাহ্যতা তাঁকে এভাবেই কৃষকদের আত্মার আত্মীয় করে নিয়েছিল।

১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮-এর প্রথমপর্বে নাচোলে কৃষক আন্দোলনের প্রত্যুষ তথা প্রস্তুতিপর্ব অতিক্রম করে ১৯৪৯-১৯৫০-এর পর্বটি সূচিত হয়েছিল ‘মূল আন্দোলন পর্ব’। তেভাগা আন্দোলনের সূত্রে নাচোলকে ঘিরে বৃহত্তর রাজশাহী জেলার পার্টি-নির্দেশিত মূল সাংগঠনিক কাজ শুরু হয় ১৯৪৮-এ পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের পর থেকেই।

মনে রাখা দরকার যে ১৯৪৬-১৯৪৭-এর পর্বে যখন উত্তর এবং পূর্ববাংলার এক বৃহৎ অংশ জুড়ে তেভাগা আন্দোলনের জোয়ার লক্ষিত হয়, তখন কিন্তু নাচোলে তেভাগার দাবি উত্থাপিত হয়নি। সেখানে তখন জমিদার-জোতদার-ইজারাদারদের অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠনের কাজ চলছিল। ১৯৪৮-এ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে রনদিভে যুগ শুরু হওয়ার পরে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টিতে ‘র‍্যাডিক্যালাইজেশান’-এর পর্ব শুরু হয়। অন্যত্র যখন সংগ্রামী কৃষকদের দাবি অগ্রাহ্য করেই তেভাগা আন্দোলন কমিউনিস্ট পার্টি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, সেইসময় নাচোলে কৃষক আন্দোলনের জোয়ার আসতে থাকে। এখানকার পার্টিনেতৃত্ব কি এখানে তেভাগা আন্দোলনের পুনর্জাগরণ প্রত্যাশী ছিলেন? এখানে কৃষকদের মধ্যে ‘সাত আড়ি জিন’, ‘আধি জমি তেকুটি ভাগ’ অত্যন্ত জনগ্রাহ্য এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নাচোলে তালগাছের মাথায় লাল পতাকা বেঁধে দিয়ে কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমবেত হওয়ার প্রচার করা হয়েছিল। এবং এই প্রচার সফল হয়েছিল। এর ফলশ্রুতিতে দেখা গিয়েছিল সাঁওতাল এবং রাজবংশী-সহ ব্যাপক কৃষকদের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি তার সাংগঠনিক বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হয়। কিন্তু এই প্রয়াস প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছিল চারজন পুলিশ হত্যা করে আপাত-সাফল্যের অব্যবহিত পরেই ব্যাপক পুলিশি সন্ত্রাস এবং হত্যাযজ্ঞ শুরু ও প্রচুর কৃষকদের গ্রেপ্তার করার পরবর্তী পর্যায়ে। গোটা সংগঠনটাই ‘ধসে’ পড়ে। আন্দোলনের সাফল্যের সমূহ সম্ভাবনা ব্যর্থতার নিয়তির কাছে আত্মসমর্পন করে।

 

তিন.

বিগত শতাব্দীর চল্লিশের দশক থেকে তেভাগা আন্দোলনের ঘটনাবলির সঙ্গে ‘তাত্ত্বিক’ সম্পর্কে আবদ্ধে আহমদ রফিক তাঁর ‘ইলা-রমেন কথা’ শীর্ষক গ্রন্থে লিখেছেন: কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে নাচোলের কৃষকদের এই বিদ্রোহ ‘সময়োচিত’ ছিল না। কারণ এটা ছিল রনদিভে-প্রণোদিত পার্টির উগ্র ‘বাম’পন্থী লাইনের অনুশীলন। সে সময়টা ছিল সাতচল্লিশের পনেরোই অগাস্টের উত্তরকালীন ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াজনিত রাজনীতির এক ‘টালমাতাল’ অবস্থা। সেই সময়টা ছিল দেশভাগজনিক কারণে হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘ঘৃণা-বিদ্বেষ-বৈরিতা’র এক অদৃষ্টপূর্ব প্রকট প্রকাশের সময়। রফিক-এর কথায়: ‘যেখানে বঙ্গীয় কৃষকশ্রেণীর বিশাল অংশ মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত; স্বল্পসংখ্যক আদিবাসী ও নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ বাদে কৃষকশ্রেণী সহ বাঙালি মুসলমান স্বতন্ত্রভুবন পাকিস্তানের স্বপ্নে বিভোর, সেখানে তেভাগা আন্দোলন প্রচণ্ড সরকারি দমন-নীতির মুখে সফল হওয়ার কথা নয়। বস্তুত তা হয় নি।’— এই নির্দ্বিধ উচ্চারণের মধ্যে অতিশয়োক্তি কোথায়? বরং রফিক আরও বলেছেন যে এই আন্দোলন শুরু করা উচিত ছিল ‘ক্রান্তিকালের বেশ কিছু’ আগে। ১৯৪০-এ যখন যশোরের পাঁজিয়ায় কৃষক সম্মেলনে যখন বর্গাদার ও ক্ষেতমজুরদের দাবিদাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে আলোচনা এবং প্রস্তাব গ্রহণের পর্ব চলছে তখনই তেভাগা আন্দোলন শুরু করা যেত বলে মনে করেছেন তিনি।

ছেচল্লিশের ‘প্রবল তেভাগা আন্দোলন’ সাতচল্লিশে এসে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। আর আটচল্লিশের অতি ‘বাম’পন্থার অনুশীলনপর্বে ১৯৪৯-১৯৫০-এর সময়কালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং বিশেষত নাচোলের আদিবাসী কৃষক-সহ অন্যান্য কৃষকদের সমন্বয়ে পরিচালিত তেভাগা আন্দোলন ‘অসময়োচিত’ তথা বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ছিল বলে আহমদ রফিক মনে করেছেন। বাস্তবিক ১৯৪৮-এর পার্টিগৃহীত বিটি রনদিভের অতি ‘বাম’ লাইনের অনুশীলনের ফলশ্রুতি ছিল নাচোলের চারজন পুলিশহত্যা, এমত ধারণার ভিত্তি থেকেই যায়। এই হঠকারী কাজ সম্পন্ন করার ফলশ্রুতিতে পুলিশের সর্বাত্মক আক্রমণে, অত্যাচারে, দমনপীড়নে এবং গ্রেপ্তারকরণের ফলে এই সম্ভাবনাময় নাচোলের ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। কৃষকদের প্রিয় নেত্রী ইলা মিত্রকে দেশত্যাগ করে প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবাংলায় চলে যেতে হয়েছিল এবং উত্তরকালে এই জঙ্গি কৃষকনেত্রী ‘বাম’পন্থার নামাবরণে তাঁর সংসদসর্বস্ব দলের সৈনিকবৃত্তিতে সওয়ারি হয়েছিলেন।

তেভাগা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কৃষক আন্দোলনের অন্য এক রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম সতেরো বছর পরে নকশালবাড়িতে। তবে পার্থক্যও ছিল। তেভাগা রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলের আন্দোলন বা সংগ্রাম ছিল না, নকশালবাড়ির কৃষক অভ্যুত্থান নেতৃত্বের মতাদর্শিক তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলের প্রশ্নের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল। পার্টিনেতৃত্বের অতিবাম মতাদর্শিক অনুশীলন অচিরেই একটি বিশাল সম্ভাবনাকে বাস্তবিক বিনষ্ট করে দিয়েছিল। অতিবাম রাজনৈতিক কার্যকলাপের ফলে জনবিচ্ছিন্নতা ঘটতে থাকে, সরকার, তার দলীয় বাহিনী এবং রাষ্ট্র তার দাঁত নখ বের করে হিংস্র আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ফলে অজস্র গণহত্যার রক্তস্রোতে বড় আদরের প্রিয় স্বপ্নের ফুলগুলি ছিন্নবৃন্ত হয়ে ভেসে গিয়েছিল। এই আন্দোলনের পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে তেভাগা-নকশালবাড়ির ধারাবাহিকতায় আমাদের পশ্চিমবাংলায় আর কোনও কৃষক আন্দোলন হয়েছে কি? সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কৃষক আন্দোলন এই শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য কৃষক আন্দোলন হওয়া সত্ত্বেও তা তেভাগার ধারাবাহিকতা বহন করেছে বলে মনে হয় না। দুটি আন্দোলনের প্রেক্ষিতটাই ছিল আলাদা। নাচোলের কৃষক আন্দোলন এবং নকশালবাড়ির কৃষক আন্দোলন উভয়ই ব্যাপক পুলিশ আক্রমণের শিকার হয়েছিল। পুলিশি আক্রমণ এবং অত্যাচারে নাচোলের কৃষক আন্দোলন ব্যর্থতার নিয়তিকে মান্যতা দিতে বাধ্য হয়েছিল। আর অন্যদিকে নকশালবাড়ির কৃষক আন্দোলনে কৃষকদের আক্রমণে একজন পুলিশ নিহত হলে তার অব্যবহিত পরে বিশাল পুলিশবাহিনী এসে এগারোজন কৃষক পরিবারের মানুষদের হত্যা করেছিল। পুলিশি তাণ্ডবে নাচোলের কৃষক আন্দোলন অচিরেই ব্যর্থ হলেও, নকশালবাড়ির আগুন অনতিবিলম্বে বাংলার সীমানা অতিক্রম করে সারা ভারতবর্ষে বিস্তার লাভ করেছিল, গড়ে উঠেছিল একটি নতুন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি।

 

চার.

সংগঠনের কাজে যুক্ত হওয়ার সূত্রে ইলা মিত্রের জীবনাচরণ আমূল বদলে গিয়েছিল। ভূস্বামী-তনয় রমেন মিত্র যেমন কমিউনিস্ট কর্মী হিসেবে সমাজের নিচুতলার মানুষের মধ্যে নেমে এসে তাঁদের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাঁদেরই একজন হয়ে উঠেছিলেন, তাঁর সহধর্মিনী ইলাও ততোধিকভাবে শ্রেণিচ্যুত হওয়ার প্রক্রিয়ায় সামিল হয়েছিলেন এবং এক অভাবিত নতুন জীবনদর্শন অনুশীলনে ব্রতবদ্ধ হয়েছিলেন। ইলা এবং রমেনের সংস্কারমুক্ত মন, মনের প্রসারতার কারণে মুসলিমদের মধ্যেও তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাকীর্ণ হয়নি। তাঁদের সরল আটপৌরে জীবনাচরণ, খাবারদাবারে কোনওরকম ভেদচিহ্ন না-রাখা, কৃষকদের বাড়ির দাওয়ায় বসে রাজনৈতিক ঘটনাবলির সহজবোধ্য আলোচনা তাঁদের অসাধারণ জনপ্রিয় করে তুলেছিল। আর এদিক দিয়ে রমেনের চাইতে অনেকখানি এগিয়ে ছিলেন ইলা। গ্রামদেশের সমাজ ও পরিবেশে তাঁর অতি সাধারণ গৃহবধূর পোশাক, কথাবার্তা, চলাফেরা তাঁকে অবলীলায় সেইসব গ্রামের জনগোষ্ঠীরই একজন হিসেবে মান্যতা দিয়েছিল। মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে যেমন ইলা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন, তেমনই তিনি সাঁওতাল কৃষকসমাজের মধ্যেও তাঁদেরই একান্ত আপন রানিমা হয়ে উঠেছিলেন। ‘বস্তিজাতীয়’ ঘরে ইলা-রমেন অবলীলায় নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং উত্তরকালেও তাঁরা জীবনযাপন করেছেন ‘ছোটখাটো ফ্লাটে’ বিত্তবৈভবহীন অবস্থায়। কোনও দৃশ্যত সুখের হাতছানিতে তাঁরা প্ররোচিত হননি। জীবনাচরণের এই যে নজির সৃষ্টি করে গিয়েছিলেন তাঁরা, আজকের দিনের ‘বাম’পন্থীরা তাকে মান্যতা দেন না, আগে যেখানে ত্যাগের ধর্ম অনুশীলিত হয়েছিল, এখন সেখানে বিত্তবৈভবের প্রাচুর্যের মধ্যে থেকে জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক আত্মসুখবাদী জীবনাচরণের দৃষ্টান্ত সংস্থাপিত এবং সেটাই ‘বাম’পন্থী সংস্কৃতিতে গ্রহণযোগ্যতার ছাড়পত্র পেয়েছে।

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুআরি নাচোলে আন্দোলনকারী ক্ষুব্ধ কৃষকদের হাতে চারজন পুলিশকর্মী হত্যার দায় কেউ কেউ ইলা-রমেনকে দিতে কুণ্ঠা দেখিয়েছেন। আহমদ রফিক তো বলেই দিয়েছেন যে ৫ জানুআরি পুলিশহত্যার মতো অবাঞ্ছিত ঘটনাবলি ইলা-রমেনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। তাই কি? সেটা সম্ভব কি? তাঁরা তো পার্টির নেতা হিসেবে পার্টির নির্দেশিত লাইনের অনুশীলন করছিলেন, সেখানে কীভাবে পুলিশহত্যার মতো ঘটনা তাঁদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়? না কি তাঁরা পার্টির অনুসৃত লাইনের বাইরে গিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন যা পার্টির অন্য কেউ বা কারা তাঁদের বিরোধিতা করে পার্টি লাইনকেই প্রায়োগিক ক্ষেত্রে নিয়ে আসতে কৃষক সংগ্রামীদের উৎসাহিত করেছিলেন? এরকম কোনও তথ্য রফিক দেননি। তিনি ইলা এবং রমেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাঁদের সুখদুঃখের সাক্ষী। ফলে এরকম একটা ‘কলঙ্কজনক’ ঘটনার দায় থেকে স্বাভাবিকভাবেই তিনি তাঁর দুই বন্ধুকে মুক্ত রাখার প্রয়াস পেয়েছেন বলে মনে করার কারণ থেকে যায়। অন্যদিকে ইলা মিত্র তো তাঁর জবানবন্দিতে জানিয়েছেন: তিনি, রমেন মিত্র, ‘বিষ্টুদা, অনিমেষ, আজাহার’-সহ অন্যান্য পার্টি সদস্যদের ‘নির্দেশমতো’ ভলান্টিয়াররা গণরাঙা মিয়া, চরণ মাঝি এবং এছান মিয়ার খেলানের ধান ‘লুট’ করে— কারণ এরা তেভাগা ও সাত আড়ি জিন মেনে নেয়নি। ১৯৫০-এর ৪ জানুআরি তিনি অর্থাৎ ইলা মিত্র এবং বিষ্টুদা জোতদারদের নিকট থেকে এই মর্মে লিখিয়ে নেন যে তারা সাত আড়ি জিন এবং তেভাগা মেনে নেবে। সাঁওতালদের সবারই তীরধনুক থাকলেও ইলা মিত্রদের হাতে কোনও ‘আগ্নেয় অস্ত্র’ ছিল না। পার্টির প্রোগ্রামই ছিল ‘পুলিশ পাইলে তাহাদের বন্দুক কাড়িয়া লইতে হইবে’। এর পরেরদিন ৫ জানুয়ারি কৃষকদের তীরে চারজন পুলিশ নিহত হয় এবং তাদের সবগুলি বন্দুক কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।— স্বভাবতই রফিকের বক্তব্যে যতটা আবেগের স্থান আছে ততখানি যুক্তির স্থান ছিল না।

নাচোলের জঙ্গি কৃষক আন্দোলনের সূত্রে চারজন পুলিশহত্যার প্রতিক্রিয়ায় ৭ জানুয়ারি বিশাল সংখ্যক মিলিটারি বাহিনী গ্রামে এসে প্রতি-আক্রমণে অত্যুগ্রতা দেখিয়ে বারোটি গ্রাম পুড়িয়ে দেয়, নির্মম অত্যাচারের নজির সৃষ্টি করে অসংখ্য আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে জেলের ভেতর অমানুষিক অত্যাচার করে। এই কৃষকদের অবিসংবাদী নেত্রী হিসেবে ইলা মিত্র গ্রেপ্তার হন ১৯৫০-এর ৭ জানুয়ারি। তাঁর ওপর যে ধরনের শারীরিক অত্যাচার পুলিশ করেছিল তা ছিল সে-সময় নজিরবিহীন। তবু ইলা মিত্র পুলিশের ইন্টারোগেশনে কারও নাম করেননি। তাঁর চোখের সামনে তাঁর সহযোদ্ধা সাঁওতাল কৃষক আন্দোলনকারীদের নৃশংস অত্যাচার করে তাঁদের নেত্রী এবং এই আন্দোলনের প্ররোচনাদানকারী হিসেবে ইলার মিত্রের নাম শুনতে চেয়েছিল। পুলিশ ইলা মিত্রের মনোবল ভাঙতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করেও তাঁরা কেউ ইলার নাম বলেননি। বিচারে ইলা মিত্র-সহ তেইশজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছিল।

এত অত্যাচার সহ্য করেও ইলা বেঁচেছিলেন। প্রচণ্ড অসুস্থ অবস্থায় দীর্ঘদিন ইলা মিত্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তারপর শারীরিক কারণে প্যারোলে মুক্তির প্রশ্নে সমসময়ের পূর্ব পাকিস্তানের জননেতা ফজলুল হক ইলাকে বলেছিলেন যে তিনি কতদিন ক্ষমতায় আছেন তা তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব নয়; তাঁকে মুক্তি দেওয়ার ‘অধিকার’ও তাঁর নেই। তিনি যেটা পারেন, চিকিৎসার কারণে প্যারোলে ছাড়াতে। ইলা তাঁর চিকিৎসার জন্যে কলকাতায় যাক আর যেন এখানে না ফিরে আসে, কারণ তাঁর আশঙ্কা ছিল যদি মুসলিম লিগ ক্ষমতায় আসে তারা ইলা মিত্রকে নিকেশ করে দেবে।— ফজলুল হকের এই পরামর্শ মেনেই প্যারোলে মুক্তি পেয়ে দেশ ছেড়ে ইলা মিত্র কলকাতায় চলে এসেছিলেন। এ-কথা জানিয়েছেন আর এক কমিউনিস্ট নেতা রণেন সেন। কলকাতায় মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন থাকা সত্ত্বেও ‘বিদেশি’ ইলা মিত্রকে তো আর বেশিদিন এখানে এভাবে রাখা যাবে না। তখন এখানকার কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুকে অনুরোধ করেন ইলা মিত্রকে এ-দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে। এবং এই পথেই ইলা মিত্র ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন।

এখানে দেখা যাচ্ছে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ইলা মিত্রকে তাঁর প্রাণরক্ষার্থে কলকাতায় আনার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন জননেতা ফজলুল হক, আর এ-দেশে তাঁর নাগরিকত্বের ব্যবস্থা করেছিলেন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু। এ তথ্যও জানিয়েছেন রণেন সেন।

 

পাঁচ.

ভারতের নাগরিকত্ব অর্জনের পর ইলা মিত্রের এ-দেশীয় নতুন জীবন শুরু হয়। স্বামী-পুত্র আর পার্টি তাঁর জীবনকে নতুন অভিযোজনার পথে অভিযোজিত করেছিল। ১৯৬২ থেকে ১৯৭৮-এর অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে পর পর চারবার তিনি তাঁর পার্টির (সিপিআই) বিধায়ক হয়েছেন, অধ্যাপনা করেছেন। রফিক সখেদে বলেছেন: বিপ্লবী রাজনীতি থেকে সংসদীয় রাজনীতিতে উপনীত হয়েছিলেন ইলা মিত্র। একসময়ের ‘কমিউনিস্ট’ পার্টির সংগঠক এবং জঙ্গি কৃষক আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্র পশ্চিমবাংলার বামাবরণে আবৃত দক্ষিণাবর্ত্মে বাসা-বাধা কমিউনিস্ট নামধারী পার্টির সঙ্গেই আজীবন সংশ্লিষ্ট থেকে গিয়েছিলেন। পার্টির মধ্যেকার মতাদর্শগত লড়াই তাঁকে কতখানি প্রভাবিত করেছিল তা তাঁর অনুশীলন প্রক্রিয়ায় প্রকটিত হয়েছিল। নিজে কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী হিসেবে জেলের ভেতর অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হলেও, উত্তরকালে উত্তরবাংলার নকশালবাড়িতে ঐতিহাসিক কৃষক বিদ্রোহ তাঁকে আদৌ প্রভাবিত করেছিল কিনা, সত্তরের দশকে কলকাতা-সহ সারা দেশে ইন্দিরা গান্ধির স্বৈরশাসনে নকশাল দমনের নামে জেলখানায় নকশালপন্থীদের ওপর অমানুষিক পুলিশি অত্যাচার তাঁর মনে কোনও দাগ কেটেছিল কিনা, অথবা সে-সময় দিনেদুপুরে প্রকাশ্য রাস্তায় নকশাল-দমনের নামে পুলিশের হত্যাযজ্ঞ, একাত্তরের আগস্টের শুরুতে কলকাতা ময়দানে তাঁর একদা সহযোদ্ধা সরোজ দত্ত-হত্যা অথবা বাহাত্তরে পুলিশি হেফাজতে একদা তেভাগা আন্দোলনের নেতা এবং নকশালবাড়ি কৃষক বিদ্রোহের রূপকার চারু মজুমদারের হত্যা প্রমুখ ঘটনাধারা তাঁর মনে দাগ কেটেছিল কিনা জানা যায় না। তাঁর একসময়ের সহযোদ্ধা কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তো শেষপর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির ওপরই আস্থা হারিয়েছিলেন, কবি গোলাম কুদ্দুসরা তাঁদের ‘কমিউনিস্ট’ জীবন পার্টির মূলধারাস্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। একদা জেলের ভেতর পুলিশি অত্যাচারে পীড়িতা ইলা মিত্রকে নিয়ে কবি গোলাম কুদ্দুস-সুভাষ মুখোপাধ্যায়রা বীরগাথা রচনা করলেও উত্তরকালে সত্তরের দশকে নকশালনিধনের সময় তাঁদের বিবেক কী এক আশ্চর্য কারণে অবরুদ্ধ ছিল। ইলা মিত্রও এই অবরুদ্ধ বিবেক নিয়েই ২০০২ খ্রিস্টাব্দের ১৩ অক্টোবর প্রয়াত হয়েছিলেন।

ইলা মিত্র প্রয়াত হওয়ার পর অতিক্রান্ত হয়েছে সুদীর্ঘ তেইশটি বছর। তবে তাঁর এই জন্মশতবর্ষে (জন্ম ১৯২৫-এর ১৮ নভেম্বর) তাঁর প্রতি সংগ্রামী কৃষকদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এবং কবিতা-গানে তাঁর অমর সত্তা আরও দীর্ঘকাল জীবিত থাকবে, সন্দেহ নেই।

 

সহায়ক গ্রন্থ

  • রফিক, আহমদ। ইলা-রমেন কথা। বিপ্লবীদের কথা। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২০১৮ সংস্করণ।
  • রফিক, শেখ (সম্পাদিত)। ইলা মিত্রের জবানবন্দি। বিপ্লবীদের কথা। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২০১৫ সংস্করণ।
  • প্রতিদিন রোববার। জানুয়ারি ৪, ২০২৪।
  • বাংলাপিডিয়া।
  • কামাল, মেসবাহ ও চক্রবর্তী, ঈশানী। নাচোলের কৃষকবিদ্রোহ সমকালীন রাজনীতি ও ইলা মিত্র। উত্তরণ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২০০৮ সংস্করণ।
  • সেন, সত্যেন। বাংলাদেশের কৃষকের সংগ্রাম। বিপ্লবীদের কথা। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২০২০ সংস্করণ।
  • মিত্র, ইলা। গোলাম কুদ্দুস। দীপায়ন। কলকাতা। ২০২০ সংস্করণ।

 

নভেম্বর ৪-১০, ২০২৫

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5217 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Trackback / Pingback

  1. ইলা মিত্র ও তেভাগা— নবম বর্ষ, চতুর্থ যাত্রা – ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

আপনার মতামত...