প্রদীপ ব্যানার্জিকে পাঠকের সঙ্গে পরিচয় করাতে চাওয়া বাতুলতা শুধু নয়, ধৃষ্টতাও। তাই, সে চেষ্টাও করছি না।
কী আশ্চর্য, প্রায় অলৌকিক, একটা সফর! সেই প্রত্যন্ত চাইবাসা থেকে উঠে এসে জীবনে কোনওদিন বড় ক্লাবে না-খেলেই ভারতীয় দলে, ক্রমে জাতীয় অধিনায়ক, অলিম্পিকে অধিনায়কত্ব, এশিয়াডে সোনা জয়! স্মর্তব্য, বাংলার বড় ক্লাবগুলি তখন সত্যিই বড় ক্লাব। দেশের সমস্ত প্রান্তের ফুটবলাররা মুখিয়ে থাকতেন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান-মহামেডান থেকে ডাক পাওয়ার আশায়। এও স্মর্তব্য, জাতি হিসেবে আমাদের যথেষ্ট ফুটবলবুভুক্ষা থাকলেও আন্তর্জাতিক সাফল্য আমাদের কাছে দীর্ঘদিনই মরীচিকাসম। ফুটবলার পিকে ব্যানার্জি সেই মরীচিকা-পূর্ব জগতের প্রতিনিধিই শুধু নন, অন্যতম সারথিও বটে।
আর এক বিপরীত জীবন আমরা প্রত্যক্ষ করি প্রশিক্ষক পিকে ব্যানার্জির ক্ষেত্রে। এখানে ক্লাব ফুটবলে তিনি একান্তভাবেই সীমাবদ্ধ ইস্ট-মোহনের মধ্যে। মহামেডানে যদিও গিয়েছিলেন এক বছর, তবে সে যাত্রা একদমই উল্লেখনীয় নয়। চিরকাল ইস্টার্ন রেলে খেলে আসা মানুষটি এরপর কেবলই কোচিং করাবেন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলকে, কাজ করবেন সুরজিৎ-শ্যাম থেকে বাইচুং পর্যন্ত ভারতীয় ফুটবলের প্রায় তিন প্রজন্মের তারকাদের নিয়ে, অর্জন করবেন তাঁদের অপরিসীম শ্রদ্ধা, আর অর্জন করবেন গগনচুম্বী সাফল্য। হ্যাঁ, প্রদীপ ব্যানার্জির এই আপাত-বিপরীত দুই সফরে একটি জিনিসের ব্যত্যয় হয়নি— সাফল্য। তাঁর প্রশিক্ষক জীবনের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অমল দত্তের মতো পিকে কোনওদিনই প্রোজেক্টর কাঁধে গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিদেশি ফুটবল দেখিয়ে স্বপ্ন ফেরি করে বেড়াবেন না, তবু তাঁর ছাত্ররা দ্বিধাহীন কণ্ঠে ঘোষণা করবেন— “টেকনিক্যালিও প্রদীপদা অমলদার চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন।”
এই মানুষটিকে স্মরণ না-করা অপরাধ হত।
ফুটবলার পিকের সমসাময়িকদের অনেকেই আর নেই। চুনি গোস্বামী গুরুতর অসুস্থ থাকায় ওঁর মতামত আমরা পাইনি। বস্তুত, শয্যাশায়ী ওঁকে এখনও পিকের মৃত্যুসংবাদ জানানোই হয়নি। তবে, আমরা কথা বলতে পেরেছি বদ্রু ব্যানার্জির সঙ্গে। পিকে ভারতীয় দলকে ১৯৬০-এর রোম অলিম্পিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ঠিক তার আগের অলিম্পিকে— ১৯৫৬তে মেলবোর্নে— ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সমর ওরফে বদ্রু ব্যানার্জি। পিকের ছাত্রদের মধ্যে আমরা পেয়েছি সত্তরের দশক থেকে সুরজিৎ সেনগুপ্ত এবং শ্যাম থাপাকে; আশি-নব্বইয়ের দশক থেকে মইদুল ইসলাম, ভাস্কর গাঙ্গুলি এবং অলোক মুখার্জিকে। এছাড়াও পিকে-র স্মরণে এই বিশেষ সংখ্যায় লিখেছেন তাঁর একদা সহপাঠী অমিয় ঘোষ এবং পিকে-র ঘনিষ্ঠ ভক্ত সৌমিত্র দস্তিদার।
পড়ুন, মতামত দিন, সুস্থ থাকুন। আপনাদের আরও একবার মনে করিয়ে দিই, চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে সব ট্রেন নিয়মমাফিকই চলছে।