হিন্দুত্বের জয় পরাজয়

প্রবুদ্ধ বাগচী

প্রবুদ্ধ বাগচী

 




লেখক গদ্যকার এবং সমাজভাবুক।

 

 

 

গত কয়েকবছরে রাজনৈতিক হিন্দুত্বের দাপাদাপির প্রেক্ষিতে নানাভাবে নানা ধরনের মত বিভিন্ন মাধ্যমে উঠে এসেছে এবং এখনও আসছে। বিভিন্ন ফোরামে বিভিন্ন রকম লেখালিখি আমাদের দৃষ্টি এড়ায়নি, এইভাবে নানা মতের স্ফূরণ একটা মতের বর্ণালী তৈরি করছে বলেই আমাদের বিশ্বাস। এইসব মতের মধ্যে একটা অংশের বক্তারা বলতে চান, যে ক্ষমতাবাদী হিন্দুত্বের রকমসকম দেখে আমাদের মতো আরও অনেকের চোখ কপালে উঠেছে, আসলে হিন্দুত্ব বিষয়টা সেই রকম নয়। তাহলে কীরকম? এই কীরকমটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাদের একটু বেগ পেতে হয় কারণ তারা উদার পরমতসহিষ্ণু হিন্দুত্বের নিদর্শন হিসেবে রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের ভাবধারার উল্লেখ করতে পছন্দ করেন। এই নির্বাচনে ভুল কিছু নেই কিন্তু আছে অস্বস্তির উপাদান। ভুল নেই, কেননা রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের ভাবাদর্শে ভেদবুদ্ধির কোনও প্রকাশ নেই, অন্তত রামকৃষ্ণদেব হিন্দুত্বের কোনও দাপুটে অ্যাজেন্ডা নিয়ে কখনও ভাবেননি— বিবেকানন্দ কিছুটা হলেও হিন্দুত্বের একটা রেজিমেন্টেশন নিয়ে ভাবিত ছিলেন, সংগঠিতভাবে ধর্মটাকে কীভাবে আরও বিকশিত ও প্রামাণ্য করা যায়, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেশি বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায় এবং সেই ধর্মীয় চেতনা একটা পরাধীন দেশের উন্নয়নে কীভাবে কাজে লাগানো যায় এইসব নিয়ে তার সুচিন্তিত ভাবনা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে কোনও উগ্র সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি ছিল না, থাকার কথাও নয় কারণ ভারতবর্ষ দেশটাকে তিনি চিনবার চেষ্টা করেছিলেন।

সমস্যাটা হল, আজকের গেরুয়াপন্থীরা তাদের কর্মসূচির সমর্থনে যখন বিবেকানন্দকে জড়িয়ে ফেলেন, তখন তাঁকে যারা ঢাল করে হিন্দুত্বের “প্রকৃত” চেহারা প্রতিষ্ঠা করতে চান তাদের হালে পানি পাওয়া মুশকিল। এই দুই চিহ্নিতকরণের মধ্যে পৃথক মাত্রা কীভাবে খুঁজে পাওয়া সম্ভব বা আদৌ সম্ভব কি? যাঁরা এই বিষয়ে লেখালিখি করেন তাঁরা লিখে খালাস, কিন্তু আমরা যারা সেগুলো পড়ছি তাদের যে মাঝেমাঝেই সব গোল পাকিয়ে যাচ্ছে তার কী হবে? সন্দেহ নেই, রামকৃষ্ণদেব এক ধরনের উদার পরমতসহিষ্ণু হিন্দুধর্মের কথা বলেছেন। তাঁর ভাবধারায় একটা সহজিয়া পথের হদিশ আছে যার বড় শ্লোগান হল, যত মত তত পথ। এটা মহাপুরুষের বাণী হিসেবে যত আকর্ষণীয়ই হোক জীবনের ক্ষেত্রে তাকে প্রয়োগ করা ঠিক তত সহজ নয়। কারণ, রামকৃষ্ণের কাছাকাছি সময়েই প্রচলিত হিন্দুধর্মের গোঁড়ামিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ব্রাহ্মধর্মের পথচলা আরম্ভ হয় যেখানে ধর্ম-সমর্থিত কুসংস্কার গোঁড়ামি সেইভাবে ছিল না। ভিন্ন ধর্ম তো পরের কথা হিন্দুধর্মের শ্রেণিবিভাজনের ভিত্তিতে দলিত শ্রেণির প্রতি উঁচু জাতের যে সব অন্যায় ও সামাজিক নিষ্পেষণ তার সঙ্গে কত দূর যুক্ত হতে পারে যত মত তত পথ ভাবনার? ছিল বলে মনেও হয় না। দক্ষিণেশ্বর ভবতারিণী মন্দিরের একজন পূজারি বামুন কী ধর্মকথা বললেন তা নিয়ে সাধারণভাবে কারও মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। রামকৃষ্ণদেব কালীসাধনা ও তন্ত্রসাধনা নিয়ে নিজের মতো থাকতেন, তাঁর ব্যক্তিত্বে আকর্ষিত হয়ে কেউ কেউ তাঁকে কাছ থেকে দেখতে ও বিচার করতে চেয়েছেন— আমরা সবাই জানি, নরেন্দ্রনাথ দত্ত এমনই একজন পুরুষ। রামকৃষ্ণের সুনির্দিষ্ট ভাবধারাকে মূল স্রোতের বেদান্ত দর্শনের সঙ্গে মিলিয়ে স্বামী বিবেকানন্দের হাতে হিন্দুধর্ম একটা রূপ পেল যার মূল দিগদর্শন হল কর্মযোগ। এই পর্যন্ত কোনও সমস্যা নেই।

সমস্যা হয়, যখন দেখি দেশের শাসকদলের প্রধান নিজেকে বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনের তদগত ভক্ত হিসেবে নিজেকে জাহির করেন। কোনও এক সময় তিনি নাকি মিশনের আওতায় থেকে সন্ন্যাস নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন সেই থেকে মিশনের কোনও এক বড় কর্তার সঙ্গে তার সখ্যের সূত্রপাত, এইসব তথ্য প্রকাশ্যে আসে। সেই দাবিতেই তিনি সরকারি সফরে এসে বেলুড় মঠে রাত্রিবাস করতে পারেন সমস্ত প্রোটোকল ভেঙে, ‘সর্বত্যাগী’ সন্ন্যাসীদের সঙ্গে সেলফি তুলেও তার বড় আমোদ। সমস্যা হয়, যখন দেখি, দেশের সব থেকে বিপজ্জনক হিন্দু মৌলবাদী দলটি নিজেদের দলীয় কর্মসূচির প্রচারে বড় বড় করে স্বামী বিবেকানন্দের ছবি ছাপান। সমস্যা হয়, যখন দেখি, নির্বাচনী প্রচারে রোড শো করতে এসে স্বামীজির বাসগৃহে তাঁর ছবিতে মালা না চড়ালে প্রবল পরাক্রমী সেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ষোলো কলা পূর্ণ হয় না। আর বিবেকানন্দের গলায় মালা দিতে গিয়ে তাদের কীর্তিমান কর্মীরা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ধূলিস্যাৎ করে দেয়।এ যেন এক প্রতীকী অভিযান।

কিন্তু এইসব যখন ঘটে চলে তখন কি খুব প্রাসঙ্গিক মনে হয় আর রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ বা তাঁদেরই জানিয়ে রাখা সব ভাবনা-অনুভাবনাগুলো? কেন নয় তা? কারণ, মহাপুরুষের বাণীগুলি তখনই তো কোলাহল করে যখন তাদের আর সামর্থ্য থাকে না ঠিক ঠিকভাবে আমাদের কাছে পৌঁছানোর। আপাতত এই গ্রহণ লাগা সময়ে যখন রাজনৈতিক দৈত্য দানোরা গোটা দেশটাকেই তাদের হিংসার পরীক্ষাগার বানিয়ে রাখতে চাইছে, যখন বিপরীতে দাঁড়িয়ে গোটা দেশ কোনও না কোনওভাবে বুঝে নিতে চাইছে এই নখ দাঁত আর গোপন আক্রমণের অভিসন্ধিগুলো, তখন ওইসব মহামানবের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই তাঁরা ইতিমধ্যেই কোনও না কোনও শিবিরের বন্ধনীভুক্ত হয়ে পড়েছেন। হয়তো দোষ তাঁদের নয়, সত্যিই নয়। কিন্তু যারা তাঁদের ভাবনাকে বহন করে নিজেদের উত্তরসূরি বলে এতদিন পরিচিত হয়ে উঠতে চাইল তারা কী করে ব্যবহৃত হতে দিল ওইসব প্রণম্য মানুষগুলিকে— এই প্রশ্ন কি আজ আমরা ওঠাতে চাইব না কোথাও ?

ধরা যাক, রামকৃষ্ণ মিশনের কথাই। তাঁরা ঘোষিতভাবে রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের মতের অনুসারী হিসেবে নিজেদের দাবি করে থাকেন। যদি তাই হয় তবে তাঁদের মননের মানচিত্রে কোথাও হিংসা দ্বেষ ও সঙ্কীর্ণতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার পরিসর নেই। কেবল এই মতাদর্শের জোরেই তাঁরা বলতে পারেন যিনি হিংসা বা কোনও সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির সঙ্গে যুক্ত তাঁদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তেমন কারও কোনও সংস্রব থাকতে পারে না। কারণ, এই কথাটা বলা তাঁদের কাজের অঙ্গ। কিন্তু একদা একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যার হাত সাম্প্রদায়িক গণহত্যার রক্তে রক্তাক্ত, যার ভূমিকা নিয়ে সারা দেশে কেন সারা দুনিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে সেই ব্যক্তি কেবল দেশের একটি প্রশাসনিক পদে আছে বলে তাকে কি সেই প্রতিষ্ঠানে ত্রুটিহীন সেবাযত্নে রাখা যায়? তার সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার সুযোগ দেওয়া যায় মিশনের তথাকথিত পুণ্যভূমিতে? তবে কি মিশনের মতাদর্শের থেকে সৌজন্যটাই প্রধান বিষয়? অথচ, লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা মিশনে দীক্ষা নিতে ছোটেন তাঁরা একটা মতাদর্শকে সামনে রেখেই সেখানে যান, প্রত্যাশা করেন মঠের বড় কর্তারা যা বলেন তা আসলে তাঁদের নিবেদিত মতের নির্যাস? সত্যিই কি তাই? আবার ধরুন, স্বামীজির সিমলা স্ট্রিটের বাসভবনে যে মূর্তি ও ধ্যানকক্ষ তৈরি করা হয়েছে সেখানে পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য নীরবতা যে বাঞ্ছনীয় তা গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে। সাধারণ মানুষ সেখানে গেলে এই নিয়ম মেনে চলেন পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে। কিন্তু এটা সত্যিই আমাদের বুঝতে অসুবিধে হয়েছে কোন বিশেষ ক্ষমতাবলে বাহুবলী সাধারণ সম্পাদক একদল কর্মী সমর্থক নিয়ে দল বেঁধে সেই বাড়িতে স্বামীজিকে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়ার স্পর্ধা পান! অথচ গত মে মাসে (২০১৯) লোকসভা নির্বাচনের আগে তো ঠিক এমনটাই ঘটেছিল— কোথাও তো কোনও নিষেধের কথা শোনা যায়নি। দেশের প্রশাসনিক প্রধানের প্রতি অবাধ সৌজন্য যদি বা মেনে নেওয়া যায়, কোনও একটি রাজনৈতিক দল, যাদের ঘোষিত কর্মসূচি আগ্রাসী হিন্দুত্বের পক্ষে, তাদের সর্বভারতীয় সভাপতি জেড ক্যাটাগরি নিরাপত্তা পেলেও মিশনের দৃষ্টিতে তো তিনি কোনও ভিআইপি হতে পারেন না— তিনি এমন এক কর্মসূচির প্রশ্রয় পান কোথা থেকে? সম্ভবত এই প্রশ্নের জবাব মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া দুঃসাধ্য। কারণ তাঁরা নিজেরা যাঁদের ভাবনা ও মত প্রচারের ব্রত নিয়েছেন, ধর্মীয় দুর্বৃত্তদের হাত থেকে তাঁদের আগলে রাখতে তাঁরা হয় ব্যর্থ নয়তো স্বেচ্ছায় আপসকামী।

কিন্তু এই আপসকামিতা যদি মেনে নিতে হয় তাহলে পাশাপাশি এটাও মেনে নিতে হবে ওই ‘উদার’ হিন্দুত্বের অস্পষ্ট অবয়ব দিয়ে এই আগ্রাসী হিন্দুত্বের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। কারণ, হয়তো কোথাও এই দুয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম কোনও তফাত আছে, কিন্তু তার চেহারা মোটেও স্পষ্ট নয় আজ। ফলে মূল ধারার হিন্দুত্ব আর তার থেকে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক হিন্দুত্বের মধ্যে কার্যত আজ আর কোনও ব্যবধান নেই। কথাটা আরও ওঠে এই কারণে যে, আরএসএসের হিন্দুত্ব বরাবরই একটা রাজনৈতিক ক্ষমতার আধার পেতে চেয়েছে, বিজেপি সেই আধারকে বাস্তবায়িত করার লক্ষে একটা উপকরণ। গৃহপালিত হিন্দুত্বের সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই ঠিকই, কিন্তু তার অনুসরণকারী মানুষরা যে সামাজিক রাজনৈতিক কাঠামোয় বাস করেন তাঁদের সামনে যখন রাজনৈতিক অপশন নেওয়ার দায় আসে, তখন কিন্তু তাঁরা ওই হিন্দুত্বের রাজনৈতিক চেহারাটাকেই সমর্থন করছেন। এটা না করলে বিগত নির্বাচনে বিজেপি বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে পারত না।

একটা সহজ প্রশ্নের তাই নিরসন করতে পারা যাচ্ছে না। ধরা যাক, আমি একজন গড়পড়তা হিন্দু, আমার তেমন বিশ্বাসের জোর নেই, বড়জোর কিছু পুজোআচ্চা ধর্মপালনের মধ্যে আমি নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছি। এই আমি রামকৃষ্ণের ভাবনার সঙ্গে পরিচিত, খুব গভীরে না গিয়েও আমি স্বামীজির পথকে সমর্থন করি, তার জন্মদিনে বেলুড় মঠে যাই অথবা পাড়ার ক্লাবে গিয়ে তার ছবিতে মালা দিই। আমি যে খুব আগ্রাসী হিন্দুত্বের সমর্থক তা নয়, ব্যক্তিগত জীবনে অন্য ধর্ম বিষয়ে আমার কোনও বিদ্বেষ নেই, সকলের সঙ্গে সামাজিক মেলামেশায় আমার তেমন আপত্তি নেই। কিন্তু এই আমি যখন ভোটের লাইনে দাঁড়ালাম এবং ইভিএমের বোতাম টেপার অবস্থায় এলাম, আমি কিন্তু বিজেপির হয়ে বোতাম টিপলাম। সেই মুহূর্তে আমার মনে পড়ল না, এই দলটির কর্মসূচির মধ্যে ভেদবুদ্ধির প্রকাশ রয়েছে, যে ভেদবুদ্ধি আমার জীবনযাপনের অঙ্গ নয়, আমি যে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের কথা ভাবি তাঁদের মতাদর্শকে এরা হাইজ্যাক করে নিয়েছেন— অন্তত এই ঘটনার অভিঘাতেই আমি তাঁদের বিরোধিতা করতে পারি। করলাম না কিন্তু। তাহলে আমার উদার হিন্দুত্বের শিক্ষা কোথায় গেল? কী এল গেল আমি রামকৃষ্ণ মিশনের দীক্ষা নেওয়া শিষ্য হই বা না হই— কেউই তো আমার মধ্যে এই শিক্ষাটুকু রোপণ করে দিতে পারেনি যে আমার প্র্যাক্টিস করা হিন্দুত্বের বিপরীতে দাঁড়িয়ে যারা মৌলবাদী রাজনৈতিক হিন্দুত্বের দাপট দেখায় তারা আমার সমর্থনের যোগ্য নয়। রাধাকৃষ্ণন হিন্দুত্ব নিয়ে কী বলেছিলেন, রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ কী মতবাদ প্রচার করতে চেয়েছিলেন এইসব নিয়ে বাগাড়ম্বর করে লাভটা কী? সেইসব মতামত তো আর আমার রাজনৈতিক অভিমুখকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এবং সেইসব মত প্রচারের দায় যারা নিজেরা নিয়েছেন বলে দাবি করেন তারাও একরকমের পথভ্রষ্ট— তাহলে?

এই জায়গাটাতেই জিতে যাচ্ছেন হিন্দুত্বের তাস খেলা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা। তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকে ওই ব্যবধানটা সফলভাবে মুছে দিতে পারছেন। তাই মিশনের গেরুয়া মিশে যাচ্ছে দাগী গেরুয়ার সঙ্গে, সাধারণের মন্দির মিলে যাচ্ছে দাপট দেখানো রামমন্দিরের সঙ্গে, পুরাণকে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইতিহাসের পাতায়। আমার তথাকথিত “যত মত তত পথ”-এর হিন্দুত্ব আমায় কী দিল তবে? ওই ঘাতক বাহিনীকে সমর্থনের শক্তি? দেশের মধ্যে একমুখী ভাবনার রক্তচোখ দেখানোর ঔদ্ধত্যকে আগলে রাখার শেকল? সমস্ত রকম প্রগতি ভাবনাকে বাঁধ দিয়ে রাখার একেকটা প্রস্তরখণ্ড?

একটা কথা গত কয়েক বছর ধরে নানাভাবে উচ্চারিত হতে দেখি। দেশে নাকি বামপন্থী দর্শন ভাবনার প্রাসঙ্গিকতা ফিকে হচ্ছে। এই কথা সত্যি কি মিথ্যে সেই বিতর্কে যাচ্ছি না। কিন্তু হিন্দুত্বের উদারবাদী দর্শন বলে যা প্রচার করা হয়, যা নাকি এই দেশের আত্মাকে নির্মাণ করেছে বলে মহাপ্রচার, ইদানিং সেই লিবারাল হিন্দুত্ব, বহুস্বর মেনে নেওয়া হিন্দুত্ব, পরধর্মসহিষ্ণু হিন্দুত্ব— তারও কি পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটে যায়নি অন্তত এই রাজনৈতিক হিন্দুত্বের বিধ্বংসী সাইক্লোনে? কই এই পরাজয়ের কথাটা তো কেউ তেমনভাবে বলছেন না!

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4649 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...