হেয়ার কনডিশনিং

হেয়ার কনডিশনিং -- মাস্তুরু আলাতা

মাস্তুরু আলাতা

 

'Will The Flower Slip Through The Asphalt' বইটি জলবায়ু পরিবর্তন ও রাষ্ট্রের দখলবাজি বিষয়ে নানা দিক থেকে লেখা একগুচ্ছ প্রবন্ধের সঙ্কলন। প্রবেশক প্রবন্ধটি নাওমি ক্লাইনের ২০১৫ সালে লন্ডনে প্রদত্ত এডওয়ার্ড সাইদ বক্তৃতা। এই বক্তৃতাটিকে কেন্দ্রে রেখে বিষয়ের সম্প্রসারণ ও প্রতিক্রিয়া লিখেছিলেন একাধিক লেখক যা প্রকাশ পেয়েছিল Leftward থেকে, ১৯১৭ সালে। মূল ইংরেজি বইটির শোভন অনুবাদ প্রকাশ করেছেন ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে৷ অনূদিত গ্রন্থটির নাম— 'ফুল ফুটবে কি এ্যসফল্ট চিরে'। অনুবাদক— সিদ্ধার্থ ভৌমিক। এই বইয়ের একটি প্রবন্ধ মাস্তুরু আলাতার, যেখানে তিনি মালয় মেয়েদের হিজাব, অধিকার ও  মালয়েশিয়ার বদলে যাওয়া জলবায়ু নিয়ে কথা বলছেন। চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম-এর এবারের স্টিম ইঞ্জিন বিভাগে মাস্তুরু আলাতা-র এই প্রবন্ধটির নির্বাচিত অংশ প্রকাশিত হল।

লেখক মাস্তুরু আলাতা-র জন্ম সিঙ্গাপুরে৷ মালয়েশিয়ায় সাংবাদিকতা করার পর ১৯৯২ সাল থেকে তিনি ইতালির মাচেরাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়ান৷ Counterpunch পত্রিকার নিয়মিত লেখক। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- The Girl Who Made It Snow in Singapore, এটি একটি গল্পগ্রন্থ যার বিষয় মূলত জলবায়ু পরিবর্তন। এছাড়াও নিজের পিতা মালয়েশিয় সমাজতাত্ত্বিক সৈয়দ হুসেন আলাতার একটি স্মৃতিচারণ-জীবনী লিখেছেন তিনি। সম্প্রতি নিজের দ্বিতীয় উপন্যাস লেখায় হাত দিয়েছেন মাস্তুরু।

আমার চুল লম্বা আর ঢেউ খেলানো। আবহাওয়া আর সমুদ্রের মতো বদলাতে থাকে, কখনো চিকন আর রেশমের মতো, কখনো ঘন কোঁকড়া আর জট পাকানো। পরের অবস্থা সামলানোর মতো জিনিস কিনতে পাওয়া যাবে, নারকেল তেলের মতো প্রাকৃতিক অথবা বাণিজ্যিক কনডিশনারের মতো রাসায়নিক মিশ্রণ।

এক যুবতীর পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম সে কীভাবে কুয়ালালুমপুরের সুপারমার্কেটের তাকে রাখা কনডিশনারের বোতলগুলোর ওপর চোখ বোলাচ্ছিল। অবশেষে একটা বোতল বেছে নিল।

‘দেখছি চুলের যত্ন নেয়, আমারই মতো’, নিজের মনে বলেছিলাম, ‘কিন্তু ওর চুলটা কীরকম?’

মেয়েটির মাথায় হিজাব ছিল বলে বলতে পারিনি। হিজাবটা পলিয়েস্টার, সুন্দর প্লাম রঙের। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বাকি জীবনভোর দিনের পর দিন, বছরের পর বছর অনেক ঘণ্টা ধরে মোটা সিনথেটিক কাপড়ে ঢেকে রাখলে চুলের অবস্থা কী দাঁড়ায় তাই নিয়ে কোনো গবেষণা আছে কিনা ভাবছিলাম। ঘোমটার নিচে ওর ঘাম জমে কি? কতদিন অন্তর চুল ধুয়ে কনডিশনার লাগায়? হিজাব পড়ে থাকা যে মেয়ের অভ্যাস, তার টাক পড়া শুরু হলে কী হয়? পুরুষরা কী বলে থাকে?

অফিস আর বাড়িতে অধিকাংশ সময় এয়ার কনডিশন করা পরিবেশে কাটানোর কারণে হয়ত কনডিশনার কেনা মেয়ের তত ঘাম হয়ই না৷ কাজে যাওয়াও হয়ত গাড়ি বা ট্যাক্সি বা মনোরেলের ঠান্ডা, কৃত্রিম, শুকনো আরামে।

তবে জানি, গরম যুক্তির ধার ধারে না। নিউ ইয়র্কের ওয়াল স্ট্রীট থেকে সিঙ্গাপুরের ব্যাফল্ট প্লেস পর্যন্ত প্রচণ্ড গরমের দিনেও অনেক ছেলেকে জ্যাকেট আর টাইয়ে আঁটসাঁটো থাকতে এবং চওড়া বেতের টুপি মাথায় দিয়ে হিজাব পরা মেয়েদের মালয়েশিয়ায় খেতের কাজ করতে দেখেছি। যদিও ফিনান্স পাড়ার পুরুষ সম্ভবতঃ বাইরের গরমে অল্পস্বল্প এদিক ওদিক ঘুরে তাড়াতাড়ি আকাশছোঁয়া বাড়ির পেটের ভেতর এয়ার কনডিশন করা কিউবিকলে ঢুকে পড়ে। অন্য দিকে চাষী মেয়েকে কাঠফাটা রোদের মধ্যে অনেক ঘণ্টা থাকতে হয়। পার্থক্য এটাই।

প্রথা স্থায়ী করে দিলে অভ্যাস হয়ে যায়। কোনো কিছু মেনে নিলে ধরে রাখা হয়৷ সইয়ে নেওয়া হয়। তাই নিয়ে বেঁচে থাকা। তার মধ্যেই বেঁচে থাকা। ইটালিয়ান ভাষায় এমন বহু শব্দ পাওয়া যায়, যাতে বাঁচা অর্থের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনা। ইটালিয়ান ক্রিয়াপদ abitare (ভিতরে থাকা, বাস করা) থেকে এসেছে abito (যাজক/যাজিকার পোশাক, বেশবাস), abitazione (বাসস্থান) এবং abitudine (অভ্যাস, কারো অভ্যাসগত কার্যকলাপ)। কিন্তু বিজনেস সুটের মতো হিজাব পরে থাকাও অনেকের অভ্যাস হয়ে গেলেও সেই অভ্যাস না থাকলে ঢাকা চাপা দেওয়া মহিলাকে রোদের ভিতর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে গরম লাগা আটকানো যায় না।

মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর আর ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদের একসঙ্গে নিলে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ঐ কোণ পৃথিবীর সর্বাধিক মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চল। আজকে, ইন্দোনেশিয়া আর মালয়েশিয়ায় হিজাব পরা মহিলার সংখ্যা হিজাব না পরা মহিলার থেকে বেশি। বোঝার জন্য পরিসংখ্যান দেখার দরকার হয় না। শহর আর গ্রামাঞ্চল, শহরতলী, অফিস আর শপিং মলে ঘুরে বেড়ানোই যথেষ্ট।

মালয়েশিয়ায় হিজাব পরা মহিলারা আমার সাম্প্রতিক চিন্তাভাবনার বিষয় হবার অর্থ, আমি একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। আগে এরকম ছিল না। সিঙ্গাপুরেও চীনা, অমুসলমান সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও মালয় মহিলারা বোরখার আড়ালে চলে যাচ্ছে৷ আমি অন্যরকম বলে যে মুহূর্তে আমাকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তখনই নিজে যতটা অপরায়নের ভাগীদার ঠিক ততটাই অপরায়নের শিকারও বটে। আমাকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, অনেকে মানিয়ে নেওয়াই পছন্দ করছে এবং দূরে সরিয়ে দেওয়া পার্থক্য সম্বন্ধে সচেতন হয়ে যাচ্ছি৷

কখন থেকে এই পরিবর্তন? তফসির (টীকাভাষ্য) নিয়ে তত্ত্বব্যাখ্যার মীমাংসাহীন বিতর্কে ঢুকে পড়তে চাই না বলে, কেন হল প্রশ্ন না তুলে বরং জিজ্ঞাসা করতে চাইব, কখন। আবারও, পরিসংখ্যান পরীক্ষা করে দেখতে পারি কিন্তু আমার স্মৃতি বলছে, সত্তরের দশক থেকে মধ্য-আশির যে সময়টা সিঙ্গাপুরে স্কুলে পড়েছি, তখন আমার কোনো শিক্ষয়িত্রী হিজাব পরতেন না। আমার কোনো বন্ধুও না, তাদের কারো মা-ও নয়।

অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে উনিশশো সত্তরের দশক অবধি মালয়ের সুলতানদের হিজাব না পরা স্ত্রী এবং ছাত্রী, সরকারি কর্মচারি আর কৃষক মেয়ে অনেকেই সংরক্ষণ করা ছবিতে দেখতে পাবেন, যারা হিজাব পরে নেই।

সনাতন বেশভূষায় মাথায় ওড়না পরা কিছু মালয় মেয়ে মহাফেজখানার এই সব ছবিতে বিশেষ লক্ষণীয়। কিন্তু কাঁধ কখনো খোলা এবং যে ঘোমটার মধ্যে দিয়ে চুল দেখা যাচ্ছে, সেটা খসে যেতে পারে। সুতরাং কেশাবরণ সুনির্দিষ্ট ছিল না।

সেখানে আজকে হিজাবের অর্থ দাঁড়িয়েছে পিন দিয়ে শক্ত করে আঁটা কয়েক থাক কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা, চুলের চিহ্নমাত্রও যাতে চোখে না পড়ে এবং হাওয়ায় ঘোমটা ওড়ার সম্ভাবনা একদম বন্ধ করে দেওয়া, যাতে একগাছা চুলও বাইরে উঁকি না মারে। আর ঊর্ধাঙ্গের কথা বলতে গেলে, চিবুক থেকে হাত পর্যন্ত ত্বকের প্রতি ইঞ্চি ঢেকে দেওয়া।

বিগত যুগের মালয় মেয়ে তাহলে গরমের হাত থেকে বাঁচত কীভাবে? হাতে আঁকা আর ফটো তোলা ছবিতে দেখা যায়, গ্রামের মেয়েরা বুকে বাটিকের সারং বেঁধে রাখতো আর সুতির কাপড়ের ঝুল হত হাঁটুর একটু নিচ পর্যন্ত। কুমির নেই বলে নিশ্চিন্ত হয়ে শীতল নদী বা সমুদ্রে ঝাঁপ দেবার সময় কাঁধ খোলা থাকত আর মাথায় টুপি থাকত না। পর্তুগিজ, ডাচ আর ইংরেজরা এসে পৌঁছনোর আগে এবং পরে মালয়ের সুলতানরা এই সমস্ত গ্রাম শাসন করত বলে অনুমান করা যায়, মালয় মেয়ের সাঁতার কাটার পোশাকে ইউরোপিয়ান উপনিবেশকর্তার প্রভাব সামান্যই পড়েছিল অথবা একেবারেই পড়েনি।

মালয় মেয়েদের বর্তমান হিজাববন্ধন যদি আরও একবার প্রমাণ করে, ঐতিহ্যের পরিবর্তন হয় এবং সাংস্কৃতিক প্রতীক কখনোই চিরন্তন নয়, তাহলে সিদ্ধান্ত করতে হয়, আজকের মালয়েশিয়ার বহু মুসলমান মহিলা বিশ্বাস করে তাদের অনবগুণ্ঠিতা পূর্বগামিনীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাদের ইসলামী জীবনচর্যায় ভুল করেছিল, যেমন করেছিল মালয়ের শাসকেরা। ধর্মপ্রচার এবং বাণিজ্যের হাত ধরে ইসলাম দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় আসতে শুরু করেছিল দ্বাদশ শতাব্দীতে, সুতরাং মেয়েদের বেশভূষা নিয়ে কোরান আর হাদিথের ব্যাখ্যায় মুসলমানরা দেখা যাচ্ছে এত শতাব্দী ধরে ভুল করে এসেছে। বিংশ শতাব্দীর শেষদিকেই মাত্র শোধরানো শুরু করেছে।

বিগত তিন দশক ধরে মালয় মেয়ের মাথা পলিয়েস্টারে রঙিন হয়েছে, সেই ঘটনা থেকেই যায়। বিগত শতকগুলোর মতো আজকেও হিজাব না পরায় যেমন সামাজিক শ্রেণিবিভাগ নেই, তেমন পরার মধ্যেও নেই। সৌদি আরব এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের মহিলা টুরিস্ট এবং স্থানীয় মহিলাদের বেশি বেশি করে পুরো নিকাব বা চাদোর পরে মালয়েশিয়ার সমুদ্র বা পাঁচতারা হোটেলের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে দেখছি। বোর্খিনি (বোর্খা + বিকিনি) পরে নিয়ে সবচেয়ে কেতাদুরস্তরা সুপারহিরোদের মতো দেখতে হয়ে যায়, যারা নিজেদের বাদ দিয়ে আর কাউকে না বাঁচানোর বা খুশি না করার সংকল্প করেছে, নারীবাদী বাকবিস্তারের অন্ততঃ একটি অংশ তাই দাবি করে থাকে।

মালয়েশিয়ার মহিলাদের বেশভূষার এই পরিবর্তন পৃথিবীর রাজনৈতিক ঘটনাবলীর সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া যায়। ১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লব; উনিশশো সত্তর আর আশির দশকে মালয়েশিয়ার দাকোয়া বা ইসলামীকরণ আন্দোলন, যার বিশেষ প্রবক্তা তৎকালীন যুবনেতা এবং পরে সংস্কৃতিমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম; ১৯৮৭ সালে প্রথম প্যালেস্টাইন ইস্তিফাদা; ১১ই সেপ্টেম্বর; পরে আল-কায়দা আর ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর তাদের মিত্রদের সম্পর্কের শক্তিবৃদ্ধি।

অথচ এখানেই স্ববিরোধ। মুসলমান মেয়েরা আজ যদি নিজেদের ঢেকে ফেলে সঠিক কাজ করছে বলে মনে করে, তারা সেই অর্থে ধর্মনিষ্ঠ। আবার শ্রমজীবীদের অংশ, শিক্ষিত, অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হয়ে মালয় মেয়েরা যদি সমাজে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে, তাহলে আরো বেশি পরদাঢাকা হয়ে ইসলাম সম্বন্ধে নিজেদের সংজ্ঞা অনুসারে বেশি ইসলামী হওয়া সত্ত্বেও তাদের দেশটা কেন দুর্নীতির মধ্যে আরো ডুবে যাচ্ছে? ২০১৫ সালে ১ মালয়েশিয়া উন্নয়ন বেরহাদ (1IMDB) কেলেঙ্কারি প্রকাশ পাবার পর ধরা পড়েছিল, প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন রাজাকের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেরহাদের তহবিল থেকে সরিয়ে নেওয়া বলে মনে করা প্রায় সত্তর কোটি ডলার ছিল। ধর্মনিষ্ঠা কেন শুধু একদিকই, মালয় মেয়েদের দিকটাই দেখবে, অথচ অন্য সব গুরুত্বপূর্ণ দিক, যেমন দেশের নেতৃত্বের দিকে তাকাবে না?

নিজেকে সব সময়েই প্রশ্ন করেছি, প্রায় সর্বত্র এয়ার কনডিশন করা সহজে না পেয়ে গেলে মালয়েশিয়া আর সিঙ্গাপুরের নগরকেন্দ্রিক কর্মরতা মুসলমান মেয়েরা হিজাব পরে থাকত কিনা।  এয়ার কনডিশন ব্যবস্থা তুলে দেবার কম করে দুটো ফল হতে পারত:  ১) মুসলমান মেয়েরা হিজাব খুলে ফেলা শুরু করত এবং ২) কার্বন নিঃসরণ কমে যেত।

হিজাব পরা যে মেয়েদের চড়া রোদে খেতে কাজ করতে দেখেছিলাম তারা বলে দিচ্ছে এয়ার কনডিশন না থাকলেও কাজ করা সম্ভব। কিন্তু তাদের কাজ এবং থাকার জায়গা শহরের থেকে এখনও অনেক বেশি সবুজ গ্রামাঞ্চল। শহর তৈরির জন্য জমি কেটে গাছ কেটে ফেলা হয় আর শহরেই এয়ার কনডিশনারের ঘনত্ব সব থেকে বেশি। মালয়েশিয়া শ্যামল, ফুরফুরে হাওয়া দেওয়া পাহাড়ের ওপর সবচেয়ে ঠান্ডা জায়গা দেখে ব্রিটিশরা ভিলা আর বাংলো তৈরি করত। চারদিকে বারান্দা ঘেরা শক্তপোক্ত কংক্রিট বাড়ি আর ওপরে ছাউনি দেওয়া বড় বড় জানালা। ঔপনিবেশিক অতীতের থেকে নকল করা যাবতীয় কিছুর মধ্যে ঠান্ডা থাকার জন্য ব্রিটিশদের বাড়ি তৈরির পদ্ধতি নেই৷ এই বাড়ির অনেকগুলো সংরক্ষণ করাও হয়নি৷ মালয়েশিয়ার পক্ষে গাছের ছায়ায় ঠান্ডা খোঁজার দিন চলে গেছে। পৃথিবীতে ঠান্ডা থাকার মূল্য সব সময়েই মানুষ আর পরিবেশকে মেটাতে হয়৷ আর এইভাবে ঠান্ডা থাকার ফলে পৃথিবী আরো গরম হয়ে যাচ্ছে। সেইখানেই স্ববিরোধ।

তার চেয়ে, গরম সহ্য করতে করতে অতিষ্ঠ হয়ে হিজাব পরা মেয়েটা হিজাব খুলে ফেলবে মনস্থ করলে বোঝা যাবে তারা কেবল মাথার আবরণই খুলে ফেলছে না, বরং মনও খুলে দিচ্ছে। এর ব্যঞ্জনা হবে প্রতীকী৷ মাথার ওড়নাকে বাড়ির বাইরের বাঁধাধরা পোষাক বলে যখন মালয় মেয়ে ভাবতো না সেই অতীতে ফিরে যাওয়া হবে৷ গতানুগতিক বা কর্তৃত্ববাদী ইসলামী রীতিনীতি মেনে নেবার মানসিকতা আর যে সেরকম নেই দেখিয়ে দেবার এক প্রকার যৌথ প্রতীকী আচরণ হবে তথা জলবায়ু সঙ্কট ঘটানোর ভাগীদার দেশ কীভাবে এগোবে সেই ধারণারও।

তবে লঙ্কার রং চুপচাপ সবুজ থেকে হঠাৎ যেমন লাল হয়ে যায়, হিজাব থেকে হিজাব নেইয়ে রূপান্তর তেমনই যন্ত্রণাহীন হবে কি? মালয় মেয়েদের মাথা ঢেকে রেখে সবচেয়ে বেশি লাভ কার? কার লোকসান সবচেয়ে বেশি হবে? মালয়েশিয়ার মেয়েদের হিজাব পরিয়ে রাখার যদি চূড়ান্ত গুরুত্ব থাকে তাহলে তাদের মাথার ওপর একটি শক্রিশালী অস্ত্র আছে এবং তারা চরমপত্র দেওয়া শুরু করতে পারে৷ আর একটা ধোঁয়াশা? হিজাব খুলে ফেলব। বন্যা? খুলে ফেলব। দুর্নীতি? খুলে ফেলব।


বানান অপরিবর্তিত

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4650 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...