সেবন্তী ঘোষ

সাতটি কবিতা -- সেবন্তী ঘোষ

সাতটি কবিতা

 

রাজপথ

কনকনে ঠান্ডায় তুমি যখন
দুটি কম্বলে না কুলিয়ে,
রুম হিটারে সেঁকে নিচ্ছ আরাম,
হোস পাইপের তীব্র ঘৃণার জলে,
রাজপথে তোমার গমের দানা,
জোয়ার বাজরা, তিল, তিসি ধুয়ে মুছে সাফ!
ভোরের কাগজে, ফোনের খবর স্ক্রোল করে,
তুমি অস্বস্তিতে চা খাচ্ছ আরেক কাপ।
ততক্ষণে দীর্ঘ, দীর্ঘ ভারত বেড় দেওয়া
কিলোমিটার জুড়ে মিছিল বাড়ছে,
তোমাকে বাদ দিয়েই,
তোমার মাপা জলের পরোয়া না করেই!
নামহীন কতগুলি হাত, কড়া পরা শক্ত বড়োই,
চড়া সুর, ট্রাক্টর, ওড়না ওড়া সর্ষেখেতের,
বলিউডি ছবি এফোঁড়-ওফোঁড় করে,
ঘিরে ফেলছে শহর, নিড়ানির রঙে।

 

দেবী

পেঁয়াজ আলু হিমঘর ঠেলে
রাজপথে এসে দাঁড়িয়েছে দেবী।
কখনও তার মুঠোয় বরাভয়, সন্তানের।
কখনও ক্রোধ, ঘৃণা, প্রতি জলকামানের।
দেবী পুরুষ না নারী তার কে বা জানে!
মাটির গন্ধ বুঝে নিতে তার ওড়ানো কুন্তল
কোনও স্পর্ধাকেই আমল দেয়নি কখনও।
প্রতিটি শস্যদানায় নিষেধের কামান গর্জালে,
দেবী বুক চিতিয়ে রুখে দাঁড়াবেই
এ ঘোর অমানিশা কালে।

 

অন্নপূর্ণা

বৃষ্টির ফোঁটার নিচে শুয়ে থাকার মজা এ নয়।
আমাদের ফুল্লকুসুমিত “চাষি ভাই আয়”,
এ গান আজ নয়!
প্রতিটি রুটির ফুটে ওঠা ভাপে ঘাম লেগেছে আবার।
প্রতিটি ধানের ছড়ায় চুম্বন রক্তিম, প্রণয় আমার।

 

আমি

না জমি গচ্ছিত নেই।
দুধেলা গাই আছে শিঙে তেল মাখানো।
বিস্তর ফেনা ওঠা গরম গ্লাসে চুমুক দিয়ে
চারপাইয়ে বসে হিসেব দেখি।
গত ফাল্গুনের তিসির দামে
এবারে কড়াই বুনেছি বিঘে খানেক।
দুবেলা দুমুঠো খাওয়া মাত্র নয়,
আমার ধান আমি নিজেই মজুত করব।
আমার বাজরা মুজরো করবে না অন্যের উঠোনে।

 

মাটি

মাটির ঘ্রাণ বিষয়ে তোমার ধারণা বৃষ্টিপাত।
গাড়ির খোলা জানলা অথবা,
ভ্রমণ হেতু আবেগকম্পন।
মাটির গোলায় কর্দমাক্ত পাগুলি
তোমার দেখতে ভারী বয়েই গেছে!
খড়ের গাদায় উষ্ণ চুম্বনের স্মৃতি সেলুলয়েডের,
যেখানে খলনায়ক রিরংসায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে
যত সারল্যে মোড়া কুল কামিনীর!
বৃষ্টি ছাড়া এ দেশে এখনও পাত্র ভরে না শস্যের!
পোয়াল গাদা মাত্র শয্যা বহু মানুষের,
রক্ষক এখন যে ভক্ষক—
সূর্য উঠার মত সত্য মনে করে,
টিপছাপ দিয়ে যাও তার নাকচ দলিলে।

 

পথ

ওই পথ তোমাকে ডাক দিয়েছে।
তুমি শ্যাম কুল দুই রেখে,
ঘূর্ণায়মান মাটির হৃদস্পন্দন শুনবে বলে,
আলের কিনারে এসে দাঁড়ালে।
আল হাসতে হাসতে ঠেলে ফেলে দিল
কাদা চটকানো খেতে,
কখনও বা না কাটা দাড়ির মতো
ধানের গোড়ায়।
তুমি তালকানা!
গাছ পোড়ানো ধোঁয়ায় আরও দিকভ্রান্ত!
কাকে নোটিশ ধরাবে?
যে উপায়ান্তরহীন,
নাড়ার বিলি বন্দোবস্তে?
না, একটা সুলভ ব্যবস্থা চাষির হাতে না দিয়ে
মেশিনগান চালিয়ে দেয় হাসতে হাসতে?

 

দুয়োরানি

এসো ধানের ছড়ার পাশে বসো।
পেঁচা এঁকেছ অথবা লক্ষ্মীর পা,
তোমার বাড়িতেই সব ভরভরন্ত।
ধান বুনছে যে ছিরিছাঁদহীন দুয়োরানি,
ধান সিদ্ধ করছে যে হাজামজা আলতা পা,
সবুজ ধানক্ষেতে হিল্লোলে,
মোটেই নেশা ধরে না তার!
মাজরা পোকার কথা ভাবে,
কচি ধানের নেশায় ঐরাবতেরও—
অকাল বর্ষা বা খরা নাম্নী
প্রেতিনীর উল্টো পায়ের ছায়া,
তার অস্থির উঠোনে
যে কোনও সময় এসে দোলে,
গলায় গামছা কখনও,
কখনও ফলিডলও ঢেলে দেয়।

 

Facebook Notice for EU! You need to login to view and post FB Comments!
About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4418 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...