অপর্ণা

ঘৃণাদোষে যে বন্ধু বন্ধুরই মতন, তুমি তারে দিও হে সম্মতি -- অপর্ণা

ঘৃণাদোষে যে বন্ধু বন্ধুরই মতন, তুমি তারে দিও হে সম্মতি

 

দুর্দশা অনেকান্ত
বিরূপ বাগানের মতো
কখনও শুকনো পাতা
কখনও বিরল কুসুম
যেভাবেই নিজেকে দেখাও
প্রতারণা সভ্যতার নাম
ব্যাখ্যা অসংজ্ঞাত রেখে
অসহায়তাই তার পুঁজি
আমি আজ কৌম প্রতিনিধি
কাল আমি মত্ত বালক
মানুষের সীমানা পেরোনো
অসহজে এমত সম্মতি
চোখ তাই ক্ষমাশূন্য নয়
করুণা যা সময় দেখেছে
তথাগত পানপাত্রে ডোবা
অপূর্বে অপূর্ণে অক্ষত।

 

কবিতায় যে খুঁজেছে ক্ষুধা
কবিতায় অসহনীয় প্রেম
কবিতায় বিরোধ প্রশ্ন
তার শাস্তি আজ পেতে হবে!

এই তো অস্তমিত চাঁদে
সম্ভাবনা ঘোর লেগে আছে
যে-পথ সংবেদনে গায়
তারও শাস্তি কবিতার মতো।

এভাবেই শতজন্ম যাবে
কিছু দিলে অভ্যস্ত হব
রসাভাসে কেঁদো না এখনই
দেশ, ঘৃণা! রাস্তা দিতে বলো।

কবিতায় খুঁজেছি দ্রোহ
কবিতায় নাস্তি নশ্বরতা
কবিতার মৃত্যু নেই বলে
তার শাস্তি আজ পেতে হবে।

 

হাত ধরে হেঁটে গেছি অনিবার্য পথ
মানুষের দুঃখ ব্যথা যতদূর যায়
যে চোখের জলে আমি কাঁদি
তোমাকে দ্রোহচিহ্নে চিনে নেব      সেই সীমানায়

কেই বা বুঝেছে কোনও ভিন্ন দলে ভিন্ন মতে আছি
যে আগুন তোমাকে পোড়াল
সে জেগেছে আমার কাছাকাছি

বানভাসি ক্ষুধাক্লিষ্ট যত মুখ আমরা দেখেছি
যত রাত কেটে গেছে একই দুঃস্বপ্নে জেগে থেকে
ছায়াপথ মানচিত্রে হদিশ পেয়েছ তুমি তার
আমারও পথ হাঁটা সমান দৃশ্যে চোখ রেখে

বন্ধুর মতো অথবা বন্ধুই যদি হও
তোমাদেরও চেনা আছে ক্ষত
বিফল অস্বীকারে বিঁধে

আমাকে সূর্যাস্তে করো বিপুল নিহত।

 

কোথায় যাত্রাপথ বলো
কে পাবে মৃত্যুহীন সরষের মুঠো
সুদূরপ্রয়াসী তীরভূমি
ছেড়ে চলো অতলেই ডুবি।

আমাকে এখন তুমি চিরপথে আহ্বান করো!
সন্ত্রাসে স্বপ্ন ভরে আছে
শ্বাসরুদ্ধে অপার ফুসফুস।

জনাকীর্ণে আঙুল ছুঁয়েছে
কিন্তু শ্লেষে বাক পরাধীন
কতটা ব্যাধিতে থেকে বলো
আঙুল আর মুখ ভিন্নগামী।

বুঝি গান চিরস্থায়ী নয়
মানুষ নিরস্ত্র তবু হাঁটে
চিরপথ অজেয় কতটা
চিরসখা একজনই আছেন।

 

শপথবাক্য যত আনুষ্ঠানিক
তার থেকে কত দূরে জল
কত দূরে গেলে আমি অনামী অপর

অনিঃশেষ মৃত্যুসংখ্যা, অসংখ্য জন্ম আমার
লাশ ছুঁয়ে দেখেছি ছবিতে।
তুমি বলো ওই স্তূপে তুমিও কি ছিলে
তুমি বলো ঘৃণা দিয়ে মৃত্যুকে মেপেছ?
তুমি বলো এ আমার পাপ
তুমি বলো বিশল্যকরণী

প্রমোদসন্ধ্যায় যত সন্ধি যত প্রতিশ্রুতি
নির্বিঘ্নে জন্ম নেয় ইতর আশার কোল ঘেঁষে
তার থেকে কত দূরে নদী
সভ্যতার অনন্ত সম্বল
কত দূরে জীবনের পাকচক্র
সভ্যতার নিশান রহিত
নির্মিত সত্যের দাবি ঠিক জানে
সুবিধাসম্মত কোন কোণ,
যাকে তুমি দৃষ্টিকোণ বলো
যাকে আমি দৃষ্টিভঙ্গি বলি
তার থেকে কত দূরে গেলে
মৃতদেহ সত্যি মনে হয়
পচনের গন্ধে বমি আসে

কত দূরে গেলে সব শব্দ স্তব্ধ রেখে
আবার আমাদের জন্ম হবে!

 

আমাকে লেলিহান জ্বালো
পৃথিবীর যে প্রান্তে থাকো
জ্বেলে দাও জ্বর, খিদে, অল্প আশা
বাগানের আগাছার মতো

তবুও ঘৃণার দোষ
তোমার সাম্যে তবু শাসানির ঘোর
ছেড়ে এসো কুটিরের পাশে
ডাস্টবিনে সদ্যোজাত, তারও কান্না আছে
পুরনো টায়ার জ্বেলে যে মানুষ
তাড়িয়েছে শীত
অথর্ব রাষ্ট্রের দোষে
যে বালক চায়ের কাপ ধোয়
যে কান্না বালিকার
পাচারের গাড়ি শুধু জানে
যেখানে রক্তের দাগে
অঙ্ক কষে তিক্ত মানুষ

ক্ষমতার বাতিঘরে বিবর্ণ আলো জ্বেলে
সেজে ওঠে বুদ্ধির নিষ্পলক গুটি!
এখনও কী পাও বলো তাতে
মধ্যযামে এসে এই থেমে

তার চেয়ে নতজানু হও
করজোড়ে ক্ষমা চাও মানুষের কাছে
যেখানে যাওয়ার ছিল খালিপায়ে
জীবনের পাঠ, এরকম অলীক ছিল না
অকথ্য স্পর্ধার বিদ্যায়
তাকে শুধু মাথার হিসেবে ফেলে
ভুলে গেছ কাজ মিটে গেলে
ভাবোনি সন্ধ্যায় কাজ থেকে ফিরে
আমানির জলে তার দুটো ভাত
জুটেছিল কিনা

আমাকে পুড়িয়ে দাও, ছুড়ে দাও অতল কবরে
তবুও অহং-এর জ্বরে জলপট্টি দেব
তোমাদের মিনারের নীচে
গান গাব দূর আগমনী
শুধু মানুষের কাছে এসে ছুঁয়ে দেখো
তার ক্রোধ, তার কান্না শুদ্ধ তার জীবনের মতো।

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4659 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...