কোভিডকালে মানসিক অবসাদ: নারীদের দর্পণে

সীমন্তিনী ঘোষ

 


শিক্ষক, অশোকা ইউনিভার্সিটি

 

 

 

চিনের ইউহান অঞ্চল থেকে শুরু হওয়া অতিমারি গত দু বছর ধরে সারা পৃথিবী জুড়ে বদলে দিয়েছে জীবনযাপনের মানচিত্র। ব্যক্তিগত জীবন, শিক্ষা, কর্মজীবন, স্বাস্থ্য থেকে মানসিক সাম্য, সব কিছুর প্রেক্ষাপট বদলেছে দ্রুত। বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী দ্বিতীয় বিশ্বমহাযুদ্ধের পরে এত বড় বিপর্যয় জনজীবনে নেমে আসেনি[1]। বিশ্ব জুড়ে ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বেশিরভাগ রাষ্ট্রের সরকার ব্যবহার করেছে শারীরিক (প্রচলিত— সামাজিক) দূরত্ব বজায় রাখা, এবং লকডাউনের নিয়মাবলি। ফলানুসারে বহু মানুষের অর্থসংস্থান, খাদ্যসুরক্ষা হয়েছে ব্যাহত, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ফলে কাজের সময় এবং ধরন গেছে বদলে। নানাধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বহু মানুষ, দীর্ঘদিন ধরে। এই সমস্ত কিছু মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। অতিমারির হাত ধরে সারা পৃথিবী জুড়ে প্রবলভাবে বেড়েছে মানসিক সমস্যা। ২০১৯ সালের একটি গবেষণাপত্রের তথ্য অনুসারে, প্রতি ৭ জন ভারতবাসীর মধ্যে ১ জন মানসিক অসুস্থতার শিকার, অর্থাৎ ১৯৩৭ লক্ষ ভারতবাসী মানসিক সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছেন[2]। ২০১৫-১৬ সালে প্রথমবার জাতীয় স্তরে হওয়া মানসিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে মানসিক সমস্যা আর তার চিকিৎসা/সমাধানের মধ্যে ৮৫-৯২ শতাংশ ফারাক[3]। অতিমারি এই তফাত যে আরও বিস্তৃত করে তুলেছে, তা বলাই বাহুল্য। ভারতবর্ষে এবং বিশ্বজুড়ে গত দুবছরে হু হু করে বেড়েছে উৎকণ্ঠা, অবসাদ, স্ট্রেস।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে মানসিক সুস্থতা আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। কিন্তু মানসিক সুস্থতার সংজ্ঞা ধীরে ধীরে রোগভিত্তিক প্রেক্ষিত থেকে বেরিয়ে মানবাধিকারভিত্তিক পরিকাঠামোর দিক থেকে এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লুএইচও (হু) প্রদত্ত মানসিক সুস্থতার সংজ্ঞার ৪টি শর্ত হল:

১) নিজের মধ্যে নিহিত সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ লাভ করতে সক্ষম হওয়া,
২) নিত্যনৈতিক প্রতিকূলতার সঙ্গে যুঝতে সফল হওয়া,
৩) কর্মক্ষেত্রে কার্যকরী হওয়া,
৪) নিজ গোষ্ঠী ও বৃহত্তর সমাজকে প্রতিদান দিতে সক্ষম হওয়া।[4]

২০১৭ সালে পরিবর্তিত ভারতীয় মানসিক স্বাস্থ্য আইনেও মানসিক সুস্থতার সংজ্ঞাটি সামাজিক অধিকার ও মানবাধিকারভিত্তিক, কেবল রোগভিত্তিক নয়[5]। রোগভিত্তিক পরিকাঠামো অবলম্বন করে বিচার করলে, মানসিক সুস্থতা একটি ব্যক্তিগত বা একক ঘটনা। কিন্তু যে মুহূর্তে মানবাধিকারভিত্তিক পরিকাঠামোর নিরিখে মানসিক স্বাস্থ্যকে এনে ফেলা হয়, তখন ব্যক্তিগত কারণ ছাড়াও, মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখার দায়িত্ব একগুচ্ছ সমষ্টিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক কারণের ওপরেও বর্তায়। রাষ্ট্রসঙ্ঘ চিহ্নিত মানবাধিকার যথা স্বাস্থ্য ও বসবাসের যথাযথ উপযোগ, কর্মক্ষেত্রে কর্মীর প্রতি ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার এবং কোনওপ্রকার বৈষম্যের বিরোধীকরণ, প্রত্যেকটিই মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখার পক্ষে একান্ত জরুরি হয়ে পড়ে।[6] মাথায় রাখা দরকার, আমাদের দেশের জনসংখ্যা বিপুল এবং বিবিধ রকমের আর্থসামাজিক বৈষম্যে শুরু থেকেই বর্তমান। বিশ্ব জুড়ে উঠে আসা তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে যে অতিমারির প্রভাব সর্বত্র সমান নয়। দেশ-জাতি নির্বিশেষে দেখা যাচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণি, ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক গোষ্ঠীর সদস্য, নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজনেরা অতিমারি এবং সম্পর্কিত অর্থনৈতিক অবনতির দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত হচ্ছেন। বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য আরও জানাচ্ছে যে অতিমারির ফলে সমস্ত দেশের অর্থনীতির ওপরে কমবেশি চাপ পড়া সত্ত্বেও, প্রথম সারির ধনাঢ্য সম্প্রদায় আরও ধনী হয়ে উঠেছেন, অথচ ১২০০ লক্ষ মানুষ অর্থনৈতিক সমস্যার ফলে নেমে গেছেন দারিদ্র্যসীমার নীচে। অতিমারি শুধু অর্থনৈতিক নয়, যে কোনও ধরনের বৈষম্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।[7] ভারতবর্ষে তাহলে অতিমারির ফলে তৈরি হওয়া মানসিক সমস্যার চিত্রটা কেমন? এত বিপুল জনসংখ্যা, বহুবিধ সংস্কার, আচার-বিচার, ধর্ম, অর্থ, বর্ণ সম্বলিত দেশে মানসিক স্বাস্থ্যকে জনস্বাস্থ্যের আওতায় এনে ফেলতে গেলে কীভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে?

এই প্রেক্ষিতে প্রথমেই প্রয়োজন একটি সার্বিক পরিকাঠামোর। ২০০২ সালে, বিশ্বজুড়ে ঘটে চলা নানাপ্রকার হিংসাত্মক ঘটনাকে ভাবতে ডব্লুএইচও ১৯৭৯ সালে তৈরি করা একটি পরিকাঠামোর প্রণয়ন করে। একে বলা হয়, একোলজিকাল মডেল, বা বাস্তুতান্ত্রিক পরিকাঠামো। এই পরিকাঠামোর আওতায় ধরে নেওয়া হয় যে যেকোনও জিনিসকে বুঝতে হলে, তার পিছনের কারণগুলিকে চারটি স্তরে ভাগ করে নিতে হবে। যথা, সমাজগত, গোষ্ঠীগত, পারস্পরিক এবং ব্যক্তিগত। বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য সম্পৃক্ত সমস্যাকে এই পরিকাঠামোর নিরিখে বিচার করা যায়।[8]

সামাজিক বা গোষ্ঠীগত কারণ মানসিক স্বাস্থ্যের বিশ্লেষণে কেন প্রয়োজনীয়, একটু তলিয়ে ভাবলেই বোঝা যাবে। ভারতে কোভিড-১৯-এর দুটি ঢেউয়ে অসুস্থতা এবং প্রাণহানি ঘটেছে ব্যাপক হারে, বিশেষ করে দ্বিতীয় ওয়েভের শিখরে অজস্র মানুষ চূড়ান্ত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, হাসপাতালের বেড, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন ইত্যাদি জোগাড় করতে, অসহায়ভাবে বন্ধু বা প্রিয়জনের অসুস্থতা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করেছেন বহু মানুষ। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যার সঙ্গে শ্মশান বা সমাধিক্ষেত্রে সমাধা হওয়া শেষকৃত্য সংখ্যার মধ্যে বিপুল গরমিল, কোনও কোনও শহরে বেসরকারি সূত্রগুলি জানিয়েছে শ্মশানে শেষকৃত্য বা মৃতশংসাপত্রের সংখ্যা সরকারি মৃতসংখ্যার চেয়ে ১০-১৫ গুণ বেশি। এর উপরে মৃত্যুর পরে শব দাহ করার মত আয়োজনও মেলেনি বহুক্ষেত্রে। গঙ্গার চড়ায় ভেসে উঠেছে অগনিত শব। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোভিডে প্রাণবিয়োগ হলে, মৃত্যু সত্ত্বেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার খাতিরে শেষকৃত্যের আচারবিধি পালন করার কোনও অবকাশ পাননি মানুষ।[9] মনোবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই একমত যে কোনও ধর্মনির্বিশেষে যে প্রিয়জনের শেষকৃত্যের সঙ্গে জড়িত আচারবিচার প্রক্রিয়া প্রিয়জন বিয়োগের হাত ধরে আসা অনিবার্য শোকযাপনের একটি ধাপ, এবং যে কোনও সম্পর্কের পরিসমাপ্তিতে এই প্রক্রিয়াগুলির প্রয়োজনীয়তা আছে।[10] কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বন্ধু-প্রিয়জন হারাননি, এমন মানুষের সংখ্যা এই মুহূর্তে ভারতবর্ষে বিরল। চতুর্দিকে এই মৃত্যুমিছিল, স্বজনবিয়োগের যন্ত্রণা, ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরন্তর চেষ্টা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভেঙে পড়ার ফলে জনসাধারণের অসহায়তা, শোকজ্ঞাপনের অসফলতা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সব মিলিয়ে সমগ্র সামাজিক স্তরে এত বড় বিপর্যয় সাম্প্রতিককালে আর ঘটেনি।

মনস্তত্ত্বের একটি শাখা বলে, এই ধরনের কঠিন বিপর্যয় জন্ম দেয় সমষ্টিগত বিপর্যয়বোধের। কেবল ব্যক্তি নয়, পুরো গোষ্ঠীর ওপরে এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে, যেখানে কিছু বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং আবেগ গোষ্ঠীর সমস্ত সদস্যের মধ্যে সমানভাবে বর্তমান, এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃহত্তর গোষ্ঠী পরিচিতির মধ্যে এই বোধ, আবেগ এবং বিশ্বাসের আত্তীকরণ ঘটে। একবার সেই আত্তীকরণ ঘটে গেলে, পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও এই ধরনের বিপন্নতা চারিয়ে যায় খুব সহজেই। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ক্ষেত্রে যেমন দেখা গেছে, হিংসা-প্রতিহিংসার বিষাক্ত চক্রটি একপাকে থেমে যায় না, যে কোনও বিবাদী গোষ্ঠীর বিপন্নতাবোধ সেই গোষ্ঠীর আগামী প্রজন্মের মননের ওপরে গভীর ছাপ রেখে যায়, তাদের সংগঠিত ব্যবহার, আচারবিচার ইত্যাদিকে ধীরে ধীরে বদলে দিতে পারে।[11] দেশভাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি দাঙ্গার ইতিহাসে লেখা আছে এই ধরনের গোষ্ঠীগত চেতনার ক্রমাগত নির্মাণ-বিনির্মাণ থেকে বিবর্তন।

আমাদের সমাজ একেই বিভিন্ন শ্রেণি-জাতি-বর্ণ-লিঙ্গ ইত্যাদি নানা অক্ষে বিভক্ত। তার ওপরে এই ধরনের বিরাট বড় আর্থ-সামাজিক বিপর্যয় এসে পড়লে, দেখা যায় যে ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অতিমারির প্রভাব মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। ব্রাহ্মণ্যবাদের জাঁতাকলে আর্থসামাজিকভাবে দুর্বল শ্রেণির মধ্যে দলিত, আদিবাসী এবং বহুজন গোষ্ঠীর সদস্য সাবর্ণের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। ২৩ মার্চ ২০২০ তারিখে লকডাউন ঘোষণা আর শুরু হওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছিল চার ঘণ্টার। জনসাধারণকে আগাম পরিকল্পনা সম্বন্ধে কিছু অবহিত না করে শাসকদের এই অপরিণামদর্শিতার খেসারত দেন লক্ষ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিক। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেশভাগের পরে এত বড় জন-স্থানান্তর এই প্রথম। তাঁদের দুর্গতির কথা কারও অজানা নেই, দেশে-বিদেশে বহু মর্মান্তিক ছবি, লেখা, সাক্ষাৎকার, ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপ তার সাক্ষী। জামলো মাকদম থেকে অনাহারে মৃত মায়ের শব ঠেলতে থাকা শিশু ছাড়িয়ে তার ব্যাপ্তি কতখানি, সে হিসেব সংখ্যাতত্ত্বও করে উঠতে পারবে বলে মনে হয় না। একইভাবে, অসংগঠিত শ্রমের সঙ্গে যাঁরা সংযুক্ত, অতিমারির দাপটে তাঁদের গ্রাসাচ্ছাদন, অর্থসঙ্কটের হাত ধরে আসা মানসিক সমস্যার ভার অনেক বেশি।[12]

বিভেদের আরেকটি বড় অক্ষরেখা হল লিঙ্গ। এনইবিআর থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র জানাচ্ছে যে মূলত গ্রামাঞ্চলভিত্তিক পরিবারের একটি সমীক্ষাতে দেখা গেছে যে মহিলাদের মানসিক অবসাদ, উৎকণ্ঠা এবং সুরক্ষাবোধের অভাব অতিমারির পরে অনেক বেশি হারে বেড়েছে, কমেছে খাদ্যসুরক্ষা।[13] অতিমারির প্রভাব মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরে এত বেশি কেন? এক্ষেত্রে পারস্পরিক কারণগুলি ভেবে দেখতে হবে।

আমাদের সমাজে শ্রমবিন্যাসের কাঠামো এখনও বহুলাংশে লিঙ্গভিত্তিক। গৃহকর্ম এবং শিশুদের পালন, বয়োজ্যেষ্ঠদের সেবা এখনও মূলত নারীশ্রম নির্ভর। ২০১৯ সালের অক্সফ্যাম সংস্থার একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে ভারতীয় মেয়েরা দিনে সাড়ে পাঁচ ঘন্টার বেশি গৃহশ্রমে ব্যয় করেন, সেখানে পুরুষরা ব্যয় করেন দিনে আধঘন্টারো কম। OECD-র তথ্য বলছে ভারতীয় মহিলারা পুরুষদের তুলনায় ৫৭৭ শতাংশ বেশি সময় দেন গৃহকর্মে, যে ফারাকটি সারা বিশ্বে একমাত্র কাজাখস্থান ছাড়া অন্য কোনও দেশে নেই। প্রসঙ্গত, কাজাখস্থানের জিডিপি ভারতের চেয়ে ৯৪ শতাংশ কম। ২০২০ সালে “দ্য হিন্দু” সংবাদপত্রের দেওয়া তথ্য জানাচ্ছে যে দেশ জুড়ে বিনামূল্যে গৃহ ও সেবাকর্মে নিযুক্ত রয়েছেন ৯২ শতাংশ মহিলা, এবং ২৭ শতাংশ পুরুষ। অপরদিকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত রয়েছেন ৭১ শতাংশ পুরুষ এবং ২২ শতাংশ মহিলা। অবৈতনিক গৃহশ্রমের সঠিক মূল্যায়ণ যদিও একপ্রকার অসম্ভব, তাও অক্সফ্যামের হিসেব অনু্যায়ী, ভারতীয় মহিলাদের অবৈতনিক সেবাকর্মের পারিশ্রমিক দেশের জিডিপিকে ৩.১ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও কর্মরতা মহিলাদের ক্ষেত্রেও কিছু বিশেষ জিনিস মাথায় রাখা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা জানাচ্ছে যে ২০১৬ থেকে ভারতে কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণের হার ক্রমাগত কমে যাচ্ছে, এবং শহরগুলিতে এই হার কমছে গ্রামীণ ক্ষেত্রের চেয়েও দ্রুত হারে। আসলে শহর গ্রাম নির্বিশেষে দেশের মহিলাকর্মীদের ৯০ শতাংশের বেশি অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করেন, এবং তাঁরা অর্থ উৎপাদনে কাজ করলেও অশিক্ষা এবং অসংঠিত ক্ষেত্রে নিযুক্ত থাকায়, তাঁদের নিজেদের উপার্জন কম, এবং সেখানে কোনও আইন বা সরকারি পর্যবেক্ষণ না থাকাতে তাদেরকে চূড়ান্ত নিগ্রহ প্রতিদিন সহ্য করে যেতে হয় শুধু উপার্জন ধরে রাখতে। সংগঠিত শ্রমের ক্ষেত্রেও মহিলাদের সীমিত উপার্জনের পেশায় অনেক বেশি নিযুক্ত থাকতে দেখা যায়, যেমন সেবাকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক, গ্রাহক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত, গৃহকর্মী ইত্যাদি। এক্ষেত্রে তাঁদের কায়িক বা মানসিক শ্রম অনেক বেশি হওয়া স্বত্তেও তাঁদের উপার্জন সীমিত থাকে, উলটে কর্মক্ষেত্রে নিত্যনৈমিত্তিক বৈষম্য এবং নিগ্রহ সহ্য করে যেতে হয়। যেহেতু অতিমারির আর্থসামাজিক প্রভাবটি অসংঠিত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ভয়ানক, মহিলারা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেশজুড়ে। যে কোনও দেশে, যে কোনও কারণে যখন অর্থনীতি দুর্বল হয়, কর্মসংস্থান কমে যায়, দেখা যায় মহিলারা কাজ হারান বা নানা কারণে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন পুরুষদের তুলনায় অনেরক বেশি হারে। বর্তমানে সংগঠিত ক্ষেত্রে চাকরিরতা মহিলাদের ওপরেও দু গুণ হারে চাপ থাকে। বাড়ি থেকে কাজ করার সুবিধে থাকলেও, কর্মক্ষেত্রে চাপ বজায় থাকছে। অথচ বাড়িতে থাকার সুবাদে গৃহকর্মের চাপও এসে পড়ছে মহিলাদের ভাগে। বেশিরভাগ কর্মরতা মহিলা বাচ্চাদের খেয়াল রাখা বা গৃহকর্মের চাপ সামলে চাকরি করতে গিয়ে এদেশে নাম-মাত্র পারিশ্রমিকে গৃহকর্মী নিয়োগ করেন। সামাজিক দূরত্বের কারণে সে রাস্তাও বন্ধ, কিন্তু স্কুল বন্ধ হওয়ার ফলে বাচ্চারা সারাদিন বাড়িতে। তাদের পড়াশোনার দায়িত্বগুলিও মাদের ওপরে বর্তায়। ঘরেবাইরে এই দ্বিমুখী জাঁতাকলের মাঝে ভারতীয় মহিলাদের মানসিক সমস্যা না হওয়াটাই একপ্রকার আশ্চর্যের। গৃহকর্মী মহিলাদের দুরবস্থা অবশই আরও বেশি। তাঁদের ক্ষেত্রে, দৈনিক কাজে না যেতে পারলে উপার্জন কমে যায়, বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত গৃহস্থ নিজে যদিও শ্রমিক হিসেবে নিজের পাওনা বুঝে নেন, গৃহকর্মীদের নিয়োগ করা বা পারিশ্রমিক দেওয়ার বেলায় সামন্ততান্ত্রিক হয়ে ওঠেন। ফলত গৃহকর্মীদের বিরাট অংশের উপার্জন গেছে বন্ধ হয়ে।[14]

মানসিক ভারসাম্যের জন্যে দায়ী পারস্পরিক কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে যেটা প্রথমেই বোঝা যায় তা হল, মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির জন্যে দায়ী একটি প্রধান কারণ হল গার্হস্থ্য হিংসা। ভারত এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র সমন্বিত দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশে গার্হস্থ্য হিংসার হার সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। এই অঞ্চলে গড়ে ৩৭.৭ শতাংশ মহিলা তাঁদের অন্তরঙ্গ সঙ্গীদের থেকে সরাসরি শারীরিক বা যৌন নিগ্রহের শিকার হন। মানসিক বা অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান এর মধ্যে আসে না, তার মাত্রা এত বেশি এবং স্থান-কাল-পাত্র নিরিখে তার প্রকারভেদ এত বেশি যে সর্বত্র প্রচলিত হলেও সংখ্যাতত্ত্ব তাকে মাপতে পারে না। অথচ কাঠামোর মধ্যে যে নিগ্রহ বাসা বেঁধে থাকে, মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির পিছনে তার দায় তো কম নয়ই, বরং সময়ের সঙ্গে সে অনেক বেশি ক্ষতিকারক। ভারতবর্ষে খাতায়কলমে গার্হস্থ্য হিংসা প্রতিরোধে জোরালো আইন বহাল আছে। কিন্তু সেই আইনের দৈনন্দিন প্রয়োগে বহু ভুলত্রুটি এমনিতেই ছিল। আইনটির প্রচলনের ১৫ বছর পরেও বহু নারী তার আওতায় থাকা সুরক্ষা-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন, বিশেষ করে যদি তাঁরা সংখ্যালঘু বা প্রান্তিক গোষ্ঠীর মহিলা হন।

অতিমারির থেকে বাঁচতে গিয়ে লকডাউন প্রয়োগ করায় নিগ্রহকারী অন্তরঙ্গ সঙ্গীর সঙ্গে অনেক বেশি সময় একই বাড়িতে কাটাতে বাধ্য হয়েছেন বেশিরভাগ নারী। এমনিতেই, ৮০ শতাংশের বেশি মহিলা গার্হস্থ্য-হিংসা নিয়ে মুখ খোলেন না, পুলিশে অভিযোগ করা বা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া তো অনেক দূরের কথা। লকডাউনের একমাসের মাথায় ব্রেক থ্রু ইন্ডিয়া নামক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিভিন্ন শহরের গার্হস্থ্য হিংসা ক্ষেত্রে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধারদের নিয়ে একটি অনলাইন সেমিনার ও আলোচনার বন্দোবস্ত করে। দু ঘন্টা ব্যাপী আলোচনা জুড়ে দিল্লি-কলকাতা-মুম্বাই-ব্যাঙ্গালোর-হায়দ্রাবাদ-কোচি-চেন্নাই-পুনে নির্বিশেষে একটিই চিত্র উঠে আসছিল সমাজকর্মীদের কথায়। সবরকমের গার্হস্থ্য-হিংসা বেড়েছে সমস্ত দেশ জুড়ে, কিন্তু নারীরা জানাতেই পারছেন না অনেক ক্ষেত্রে। বহু নারী বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে এমনকি প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও নিগ্রহকারীর সঙ্গে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছিলেন দুটি কারণে। এক, লকডাউনের কড়াকড়ি এবং পরিবহণের অভাব। দ্বিতীয়ত, আইনে প্রযুক্ত প্রোটেকশন অফিসার বা সুরক্ষা আধিকারিক যারা নিযুক্ত ছিলেন, অধিকাংশ রাজ্যে তাঁদের কোভিড ডিউটিতে পাঠানো হয়েছিল। আইন অনুযায়ী, মহিলাদের গার্হস্থ্য-হিংসার অভিযোগ জানানোর প্রথম ধাপ হল এই সুরক্ষা আধিকারিকদের কাছে, তারপরে, বিভিন্ন নির্দেশপত্র, লিখিত আবেদন ইত্যাদির পরে আধিকারিক পুলিশের কাছে অভিযোগকারিণীকে সুপারিশ করেন, এবং বাকি আইনোপোযোগী কাজকর্মের পথ বাতলে দেন। যদি কাউন্সেলিং-এর প্রয়োজন হয়, সেই সংক্রান্ত তথ্য দেওয়াও তাঁর কাজ। অনেক রাজ্য এখন মহিলা কমিশন বা অন্যান্য সংস্থার সহায়তায় বা স্বাধীনভাবে ওয়ান-স্টপ সেন্টার চালান। আইনানুযায়ী গার্হস্থ্য-হিংসায় আক্রান্ত মহিলাদের জন্যে সরকারি আশ্রয়েরও বন্দোবস্ত আছে। কিন্তু অতিমারি নির্দেশিকাতে যখন এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যান্ড সার্ভিসেস খাতে কোন কোন সরকারি পরিষেবা চলবে তার নির্ধারণ হয়, তখন পিডব্লুডিভিএ অ্যাক্টের আওতায় থাকা প্রাপ্য পরিষেবা বা সুরক্ষা কোনওটিই তার মধ্যে স্থান পায় না। অন্তত প্রথম ঢেউয়ের সময় মার্চ থেকে জুন অবধি বিভিন্ন পর্যায়ে যে লকডাউন এবং আনলকডাউন হয়েছিল, তখন এই পরিষেবাগুলি ছিল না, এবং বেশিরভাগ সুরক্ষা আধিকারিকরা কোভিড-ডিউটিতে নিযুক্ত হয়েছিলেন। সুতরাং প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা যতটুকু পাওয়ার কথা, ভারতীয় নারীরা তা পাননি। শহরাঞ্চলে তাও তূলনামূলকভাবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির কার্যক্রম এবং ক্ষমতা বেশি, তাই কিছু অঞ্চলে সমাজকর্মীরা ঝুঁকি নিয়েও পৌঁছিয়েছেন, বা এলাকাবাসীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন সংযুক্ত থাকার ফলে কোনও প্রকারে আক্রান্তকে বসবাসের একটি জায়গা জোগাড় করে দিতে পেরেছেন, কিছু শহরে পুলিশের একাধিক আধিকারিক অত্যন্ত দ্রুত সহযোগিতা দিয়েছেন, এবং সমাজকর্মীদের থেকে খবর পেয়ে আক্রান্তকে উদ্ধার করেছেন, কিন্তু পুরোটাই ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং সমাজকর্মীদের চেনাপরিচিতির সুবাদে। গ্রামাঞ্চলে গার্হস্থ্য হিংসা যে কী আকার ধারণ করেছে, তা মাপের বাইরে। জাতীয় মহিলা কমিশনের তথ্য বলছে মোটের ওপরে লকডাউনের কড়াকড়ির ওপরে নির্ভর করে ২০২০ সালের মে মাসে গার্হস্থ্য হিংসা বেড়েছে ১৩১-১৮৪ শতাংশ।[15]

এর পরে আসে মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যক্তিগত কারণ। অতিমারির আগেও ভারতে মানসিক সমস্যা ছিল না আদপেই এমন তো নয়। যে কোনওরকম মানসিক অসুস্থতা এই ধরনের একাকিত্বে বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। যাঁরা বাড়ি থেকে কাজ করছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে আর কোনও পরিসীমা অবশিষ্ট নেই। যখন অতিমারির প্রকোপ বাড়ছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বাইরে বেরোনো, হাঁটাচলা। মানুষের মস্তিষ্কের কাঠামোটাই বলে যে সে আদপে একটি সামাজিক জীব। সামাজিক জীবনযাপন একেবারে বন্ধ করে দিলে মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখা একপ্রকার অসম্ভব।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে মনে হয় এখন তথাকথিত কার্যকরিতা, হিসেব-নিকেশ, বস্তুভিত্তিক সাফল্য ইত্যাদি নিয়ে একটু কম ভাবলে পৃথিবীর খুব বেশি ক্ষতি হবে না। বিত্তবান বিত্তবানই থাকবেন, নিজের সঞ্চয় বাড়িয়েই যাবেন, তথ্য তাই বলছে। কিন্তু যাঁদের ভাগ্য ততটা সদয় নয়, তাঁদের দিকে মনোযোগ দেওয়া এখন অনেক বেশি প্রয়োজন। তাই পরীক্ষায় নম্বর কম পেলে, কাজ তত ভালো না হলে, সব কিছু ১০০ শতাংশ না হলে নিজেকে ক্ষমা করা যায় এই সময়। কিন্তু রাষ্ট্রর দায়িত্ব এই সময় জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানো। মানসিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বর্তমানে কর্মী থেকে ডাক্তার, নার্স, যথাযত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোবিদ, এবং গবেষণার ভয়ানক অভাব। অথচ জনস্বাস্থ্যে প্রশিক্ষিত মানুষ মাত্রেই জানেন ব্যাপক হারে যেকোনও পরিষেবা দিতে সবাইকে উচ্চশিক্ষিত হতে হয় না। আপৎকালীন মানসিক স্বাস্থ্য সম্পৃক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী তৈরি করা সম্ভব, অক্ষরজ্ঞান থাকলেই বাকিটা কিছুদিনের মধ্যে শেখানো সম্ভব। এইভাবে বিভিন্ন সারিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে “গেটকিপার” বা মানসিক ভারসম্যের রক্ষক তৈরি করা অসম্ভব নয়। সীমিত ক্ষমতা ও পরিসরে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিভিন্ন শহরে এই জাতীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় স্তরে তাকে ব্যাপৃত করে প্রয়োগ করার জন্যে যে রাজনৈতিক বীক্ষণ ও বোধের দরকার, তা আছে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর নেই। ছোট-বড়, দেশি-বিদেশি, সরকারি-বেসরকারি যেকোনও প্রতিষ্ঠান বা কর্মসংস্থায় যাঁরা দায়িত্বশীল পদে আসীন, তাঁরা একটু খেয়াল রাখতেই পারেন যে এই সময়ে কর্মীদের ওপরে মানসিক চাপ যাতে একটু হলেও লাঘব করা যায়।

পরিশেষে বলি, বেশিরভাগ মানুষ কিন্তু অসামাজিক বা পরান্মুখ নন। এই চরম সঙ্কটের মধ্যেও লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন যাঁরা নিঃস্বার্থভাবে দান করেছেন অর্থ, সময়, শ্রম। বহু ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, আপতকালীন কর্মী, স্বেচ্ছাসেবক অতিমারির প্রকোপে পড়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন, ফ্রন্টলাইন কর্মীদের মধ্যে মৃত্যুহার জনসাধারণের চেয়ে দশগুণ বেশি। তা সত্ত্বেও দুই ঢেউয়ের মধ্যেও অগণিত মানুষ এগিয়ে এসে অতিমারির বিরুদ্ধে অভিযানে যোগ দিয়েছেন, অভিবাসী শ্রমিক, প্রান্তিক মানুষজনের জন্যে ছোটখাট প্রয়োজনীয় দ্রব্য, মাস্ক বা স্যানিটাইজার বিতরণ করতে, বিভিন্ন জায়গায় সংগঠিত হয়ে চালিয়েছেন কমিউনিটি কিচেন, বা বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন খাবারের প্যাকেট। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে যখন অক্সিজেনের অভাবে দেশ কাতরাচ্ছে, তখন সিলিন্ডার নিয়ে স্কুটারে-বাইকে করে বহু লোকজন পৌঁছে দিয়েছেন রোগীর কাছে, দিল্লি শহরের বুকে শিখ গুরুদ্বারাতে বসেছে “অক্সিজেন-লঙ্গর”, এলাকার অটোওয়ালারা সংগঠিত হয়ে চালু করেছেন অটো-অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা। বিভিন্ন জায়গায় অযাচিতভাবে অন্যের উপকার করতে এগিয়ে এসেছেন জনসাধারণেরই সদস্য বহু মানুষ, অনেক ঝুঁকি নিয়ে, এবং প্রত্যাশা ছাড়া। মানুষের সুস্থবুদ্ধির ওপরে এখনও আস্থা রাখা যায়, কিন্তু সেই পথগুলোর হদিশ দরকার, যা চরম বিপদের মুখে মানুষকে শেখায় সংগঠন তৈরি করতে, স্বার্থপরতার বিপ্রতীপে তাকে উদ্বুদ্ধ করে দলবদ্ধভাবে সমাধানের সম্মুখীন হতে, চূড়ান্ত শোকের মধ্যেও সহনশীল হতে। সামাজিক মনোবিজ্ঞানের যে শাখা আমাদের সমষ্টিগত বিপর্যয়বোধ এবং সংলগ্ন বিচ্ছিন্নতা সম্বন্ধে সাবধান করে, সেই আমাদের আয়নার উল্টো পিঠে মানুষের মননের উজ্জ্বল দিকগুলিও তুলে ধরে।


[1] Jones E. COVID-19 and the Blitz compared: mental health outcomes in the UK. The Lancet Psychiatry. 2021; 0(0). doi:10.1016/S2215-0366(21)00118-8; World Health Organization. COVID-19 Virtual Press conference transcript – 5 March 2021. Published March 5, 2021.
[2] Sagar R, Dandona R, Gururaj G, et al. The burden of mental disorders across the states of India: the Global Burden of Disease Study 1990–2017. The Lancet Psychiatry. 2020;7(2).
[3] Gururaj G. VM. National Mental Health Survey of India, 2015-16 Prevalence, Pattern and Outcomes. NImhans Rep 2015-16. 2016;(May 2018).
[4] World Health Organisation. Mental health: strengthening our response. Fact sheet N220. 2014; (August 2014).
[5] Duffy RM, Kelly BD. Concordance of the Indian mental healthcare Act 2017 with the World health Organization’s checklist on mental health legislation. Int J Ment Health Syst. 2017; 11(1). doi:10.1186/s13033-017-0155-1
[6] United Nations. Convention on the Rights of Persons with Disabilities. Geneva: United Nations; 2006.
United Nations. Universal Declaration of Human Rights. Geneva: United Nations; 1948; United Nations. Principles for the Protection of Persons with Mental Illness and the Improvement of Mental Health Care. New York: United Nations, Secretariat Centre for Human Rights; 1991; Kelly BD. Dignity, Mental Health and Human Rights: Coercion and the Law. Abingdon, Oxon: Routledge; 2015; Mann SP, Bradley VJ, Sahakian BJ. Human rights-based approaches to mental health: A review of programs. Health Hum Rights. 2016;18(1). doi:10.17863/CAM.195.
[7] Yavorsky JE, Qian Y, Sargent AC. The gendered pandemic: The implications of COVID-19 for work and family. Sociol Compass. 2021;15(6). doi:10.1111/soc4.12881; World Bank. Poverty and Shared Prosperity: Overview Reversals of fortune. World Bank Group; Berkhout E, Galasso N, Lawson M, Rivero-Morales PA, Taneja A, Pimentel DAV. The Inequality Virus.; 2021. doi:10.21201/2021.6409; Misra SS, Patel T. The Inequality Virus—India Supplement.; 2021. Accessed June 30, 2021.
[8] Krug EG, Mercy JA, Dahlberg LL  et. al. World report on violence and health – World Health Organization. Lancet. 2002;360; Bronfenbrenner. The Ecology of Human Development: Experiments by Nature and Design. Cambridge. Encycl Qual Life Well-Being Res. 1979.
[9] Covid-19 in India: Why second coronavirus wave is devastating. BBC News. 21 April 2021; Covid-19: India’s holiest river is swollen with bodies. BBC News. 19 May 2021.
[10] de Souza CP, de Souza AM. Funeral rituals in the process of mourning: Meaning and functions. Psicol Teor e Pesqui. 2019;35(1). doi:10.1590/0102.3772e35412; Cardoso ÉA de O, da Silva BC de A, Dos Santos JH, Lotério LDS, Accoroni AG, Dos Santos MA. The effect of suppressing funeral rituals during the covid-19 pandemic on bereaved families. Rev Lat Am Enfermagem. 2020;28. doi:10.1590/1518-8345.4519.3361
[11] Noor M, Vollhardt JR, Mari S, Nadler A. The social psychology of collective victimhood. Eur J Soc Psychol. 2017;47(2). doi:10.1002/ejsp.2300; Vollhardt JR. Collective Victimization. In: The Oxford Handbook of Intergroup Conflict.; 2012. doi:10.1093/oxfordhb/9780199747672.013.0009
[12] Irudaya Rajan S, Sivakumar P, Srinivasan A. The COVID-19 Pandemic and Internal Labour Migration in India: A ‘Crisis of Mobility.’ Indian J Labour Econ. 2020;63(4). doi:10.1007/s41027-020-00293-8; Singh GP. Migrant Crisis After Lockdown in India During the COVID-19 Pandemic: An Invisible Mental Health Tsunami. Prim care companion CNS Disord. 2020;22(4). doi:10.4088/PCC.20com02710; Choudhari R. COVID 19 pandemic: Mental health challenges of internal migrant workers of India. Asian J Psychiatr. 2020;54. doi:10.1016/j.ajp.2020.102254; Government of India. Psychosocial Issues among Migrants During COVID-19.; Kumar K, Mehra A, Sahoo S, Nehra R, Grover S. The psychological impact of COVID-19 pandemic and lockdown on the migrant workers: A cross-sectional survey. Asian J Psychiatr. 2020;53. doi:10.1016/j.ajp.2020.102252
[13] Natalie Bau et al. Women’s Well-Being During a Pandemic and its Containment. NBER. Augest 2021.
[14] Deshpande, A. (2020). The Covid-19 Pandemic and Lockdown: First Effects on Gender Gaps in Employment and Domestic Work in India. Working Papers 30, Ashoka University, Department of Economics, revised Jun 2020; ILO. (2018). Women and Men in the Informal Economy: A Statistical Picture, third edition. International Labour Organization, Geneva, Switzerland; ILO. (2020). ILO Monitor: COVID-19 and the World of Work, second edition. International Labour Organization; Shah, K, Gandhi, S. L and Randolph, G,. (2020). How COVID-19 is amplifying gender inequality in India; Public Good or Private Wealth. Oxfam Briefing Paper. Jan 2019; Data. The Hindu. Updated 9 Oct 2020; Unpaid Care Work. OECD Development Centre. Dec 2014; Ananya Bhattacharya. India’s inequality crisis hurts girls and women the most. World Economic Forum. 6 Feb 2019.
[15] Devastatingly Pervasive… WHO. 9 Mar 2021; Gupta R. A Critique of the Legal Framework for Domestic Violence in the Light of Coronavirus Pandemic. SSRN Electron J. 2020. doi:10.2139/ssrn.3729866; Saravana Ravindran & Manisha Shah. Unintended Consequences of Lockdown: Covid-19 and the Shadow Pandemic. NBER. Jul 2020. Revised Mar 2021.

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4660 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...