ভোট ভাবনা

ভোট ভাবনা -- অতনু কুমার

অতনু কুমার

 

ভেবে দেখলাম, ভোট দেওয়ার অধিকার পাওয়ার পর আজ অবধি যে যে প্রার্থীকে আমি ভোট দিয়েছি, তাঁরা কেউই জিততে পারেননি৷ এই “রেকর্ড” জানা থাকলে কোনও রাজনৈতিক দলই নিশ্চিতভাবে আমার ভোট চাইবে না। তবু এখনও পর্যন্ত গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক যখন, ভোট তো দিতে যাবই৷ আমার এই সবেধন নীলমণি একটা মাত্র ভোটকে কীভাবে, কোন বোতামে প্রয়োগ করব তা নিয়ে কিছু ভাবনাচিন্তা করে নিতে হয়। গত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক মিডিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী এবারের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটের লড়াই অবশ্য দুটো দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ৷

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “খালি জাহাজের রহস্য” উপন্যাসের একটা সংলাপ মনে পড়ছে৷ লঞ্চের ডেকে বসে কে কত দূরত্বের ডেলিপ্যাসেঞ্জারি করতে পারে তাই নিয়ে গল্প হচ্ছিল৷ সন্তু বলে বসল: “আমার মাসতুতো দাদা রোজ দিল্লী থেকে কলকাতা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে৷” বাকিরা চমৎকৃত হয়ে মাসতুতো দাদার পেশা জিজ্ঞাসা করলে, সন্তুর জবাব ছিল: “এরোপ্লেনের পাইলট।” কাকাবাবু যদি টাইমমেশিনে চড়ে ২০২১ সালের বাংলায় আসতেন, তাহলে দেখতেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এরোপ্লেনের পাইলট না হয়েও কেমন দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গ ডেলিপ্যাসেঞ্জারি করছেন! বিজেপি এবার যেনতেনপ্রকারেণ বাংলা দখলে মরিয়া৷ বিজেপিকে রাজ্য সরকারে না দেখলেও সাত বছর ধরে কেন্দ্রের সরকারে দেখা যাচ্ছে, অন্যান্য রাজ্যের সরকার কেমন চলছে সে খবরও পাওয়া যাচ্ছে৷ দেশ বা সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর অর্থনৈতিক বিকাশে, শিক্ষার প্রসারে, স্বাস্থব্যবস্থার উন্নতিতে, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিজেপি সরকার কোনও কাজ করেছে তা গুটিকয় অন্ধভক্ত ছাড়া কেউই বিশ্বাস করেন না৷ বাবুল সুপ্রিয় বা অর্ণব গোস্বামীও করে না৷ যা হয়েছে তা হল জিডিপি বৃদ্ধির হার তলানিতে নামছিল, লকডাউনের পর তা খাদে নেমে গেছে, বেকার সমস্যা স্বাধীনতার পর চরমতম আকার ধারণ করেছে৷ সরকার একদিকে পেয়ারের শিল্পপতি, ঋণখেলাপিদের উপঢৌকন দিচ্ছে আর ব্যাঙ্কের সাধারণ আমানতকারীদের থেকে নানান ছলছুতোয় টাকা কাটছে৷ অবশেষে অর্থমন্ত্রী জানালেন, ব্যাঙ্ক চালাতে তাঁরা পারছেন না, তাই বেচে দিচ্ছেন৷ যে গুজরাট মডেল নিয়ে এত ঢক্কানিনাদ, সেখানে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি এলে দারিদ্র্য ঢাকার জন্য রাতারাতি পাঁচিল তুলে দিতে হচ্ছে৷ আইনশৃঙ্খলার কী অবস্থা? কখনও গোরুর নামে, কখনও রামের নামে গরীব সংখ্যালঘু, দলিত মানুষকে হত্যা করে রামরাজ্যের মহড়া নেওয়া হচ্ছে৷ বিজেপির সুশাসনের চরমতম নমুনা উত্তরপ্রদেশ, যেখানে গৈরিক বসন পরা মুখ্যমন্ত্রী পদে বসে প্রথমেই নিজের ওপর ঝুলে থাকা ফৌজদারি মামলাগুলো তুলে নেয়, যেখানে উচ্চবর্ণের যুবকরা নৃশংসভাবে দলিতকন্যাকে ধর্ষণ করে আর পুলিশ রাতের অন্ধকারে তার দেহ পুড়িয়ে দেয়, গেরুয়া ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা নির্দ্বিধায় খ্রিশ্চান সন্ন্যাসিনীদের ট্রেন থেকে নামিয়ে হেনস্থা করে৷ হিন্দুধর্মের স্বঘোষিত ঠিকাদারদের কাছে মানুষের প্রাণের মূল্য কতটা তা বুঝতে অসুবিধে হয় না যখন লকডাউনে বাড়ি ফিরতে গিয়ে অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু বা প্রবল শীতে দিল্লীর উপকন্ঠে আন্দোলনরত কৃষকদের মৃত্যুমিছিলের মধ্যেও তারা নির্বিকারভাবে দেশ বেচার পরিকল্পনা কষে যেতে থাকে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের এখন প্রধান কাজ হল সত্তর বছর ধরে তিলে তিলে যে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো গড়ে উঠেছে, ব্যাঙ্ক, বিমা, কয়লা, তেল, ইস্পাত— সে সব বেচে দেওয়া আর দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্তম্ভ বিবিধ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন কমিশন থেকে সিবিআই, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে বিভিন্ন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়— সবকিছুকেই আরএসএস-এর শাখায় পরিণত করা৷ এগুলো মানুষ জানে না তা নয়৷ তবু বিজেপি এতটা জনসমর্থন পাচ্ছে কীভাবে? তার একটা কারণ উগ্র জাতীয়তাবাদ আর ধর্মীয় ভাবাবেগকে ঠিক কতখানি অনুপাতে মিশিয়ে খাইয়ে দিলে পাবলিককে মৌতাতে বুঁদ করে রাখা যায় তা অমিত শাহর থেকে ভালো কেউ জানে না৷ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে আরেকটা কারণ হল ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি, নৈরাজ্য, স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানবিরোধী মনোভাবের অনেকটা এখন বিজেপির করায়ত্ত৷ অর্থাৎ এবারের ভোটের একটা সম্ভাব্য ফল হল বিজেপির নিরঙ্কুশ জয়৷ বিজেপি জিতলে কেমন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে তার আর একটা নমুনা অবশ্য সদ্যই বিহারে দেখা গেল। দানবীয় পুলিশ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় একদম বিধানসভার ভেতরে বিরোধী দলের বিধায়কদের পুলিশ দিয়ে নিগ্রহ ও গ্রেফতার করার মধ্য দিয়ে৷

দ্বিতীয় সম্ভাবনা হল তৃণমূল কংগ্রেসের নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা৷ তাতে হয়ত আপাতত একটা স্বস্তি পাওয়া যাবে৷ যেমন দুর্নীতি চলছিল তেমনই চলবে৷ প্রচুর টাকা কাটমানি দিয়ে কলেজে ভর্তি হতে হবে৷ টেট এসএসসি হবে না, হলেও রেজাল্ট বেরোবে না, রেজাল্ট বেরোলেও নিয়োগ হবে না৷ কোনও শিল্প আসবে না৷ মেলা, উৎসব, ইমামভাতা, পুরোহিতভাতার মোচ্ছব চলবে৷ পঞ্চায়েতে ভোট লুট চলবে। বিজেপি এলেও অবশ্য এগুলো সবই হবে৷ কারণ প্রথমত প্রাক্তন তৃণমূল নেতারাই বিজেপির সরকার আলো করে থাকবে, দ্বিতীয়ত অন্য রাজ্যেও বিজেপি এইসব করে থাকে৷ তবে কেউ স্বস্তি পেতে পারেন এই ভেবে যে তৃণমূল এলে আর যাই হোক বড়সড় দাঙ্গা লাগাবে না, মানুষের খাদ্যাভ্যাস, ব্যক্তিস্বাধীনতা, বাঙালি সংস্কৃতির ওপর অতটা আক্রমণ নামবে না৷ ঘটনা হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এখন লক্ষ্য নিজেকে বিজেপির থেকেও খাঁটি হিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা৷ তিনি সভায় সভায় চণ্ডীপাঠ করছেন, শিবরাত্রির দিন বেছে মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন, তাঁর সমর্থক রা বিজেপির সঙ্গে একযোগে আব্বাস সিদ্দিকিকে “সাম্প্রদায়িক” বলে গাল পাড়ছে! মমতার জমানায় দাঙ্গা হয় না এমনটাও নয়: ধূলাগড়, বসিরহাট, তেলেনিপাড়া স্মর্তব্য। শক্তিশালী বিরোধী হিসেবে বিজেপির উপস্থিতি এই প্রতিযোগিতামূলক হিন্দুত্বকেই আরও ধোঁয়া দেবে৷ তাছাড়া সিএএ পাশের সময় তৃণমূল সাংসদদের অনুপস্থিতি থেকে শুরু করে বাবরি মসজিদ, কাশ্মির নিয়ে নীরবতা, তৃণমূল নেতার নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি কর্তৃক কৃষি আইনে সম্মতিদান, সারদা নারদায় অভিযুক্তদের শাস্তি না হওয়া— এসবই বিজেপি-তৃণমূলের পারস্পরিক মিথোজীবিতাকেই সূচিত করে৷

তৃতীয় সম্ভাবনা হল ত্রিশঙ্কু বিধানসভা৷ কর্নাটক, গোয়া, হরিয়ানা, বিহার, মণিপুর ইত্যাদি রাজ্যের উদাহরণ এবং তৃণমূল ভেঙে বিজেপিতে যাওয়ার মিছিল থেকে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হলে প্রয়োজনীয় ম্যাজিক ফিগার সংগ্রহ করতে বিজেপির ২৪ ঘন্টার বেশি লাগবে না৷ তৃতীয় সম্ভাবনার সঙ্গে তাই প্রথম সম্ভাবনা অর্থাৎ বিজেপির নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতার কোনও তফাত রইল না৷ এমনকি আমরা যদি মধ্যপ্রদেশের কথা মাথায় রাখি তাহলে তৃণমূল নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেলেও মমতা ব্যানার্জি কতদিন মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে থাকতে পারবেন সে সন্দেহ থেকেই যায়৷

চতুর্থ সম্ভাবনা অর্থাৎ সংযুক্ত মোর্চার জয় কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষণের মধ্যেই আসছে না৷ এর কারণ হিসেবে পণ্ডিতরা বলছেন ২০১৯-এর ভোটে বামফ্রন্ট আর কংগ্রেসের ভোট শতাংশ যোগ করলে মেরেকেটে ১২ সংখ্যাটা পাওয়া যায়৷ মূলধারার সংবাদমাধ্যমে ভোটের খবর বলতে শুধু দুই ফুলের তরজা আর দলবদলের দৃশ্য৷ ২০১৯-এর ভোট শতাংশ কেন ২০২১-এ অপরিবর্তিত থাকবে তা বোঝা দায়৷ ২০১৯-এর ফল তো ২০১৬-র মত হয়নি, ২০১৬-র ফলও ২০১৪-র মত হয়নি৷ তাছাড়া গত দু বছরে অনেক বড় ঘটনা ঘটেছে৷ বিজেপি যেমন তার আগ্রাসী হিন্দুত্বের কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে গেছে: বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের ওপর মন্দির বানানো, জম্মু-কাশ্মিরের ভারতভুক্তির চুক্তি খারিজ করা, ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব আইন, তেমনই সাত বছরের জমানায় বিজেপির ফ্যাসিবাদী হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার পরিকল্পনা বাধার মুখে পড়েছেও এই পর্যায়েই: সে এনআরসি-সিএএ-র বিরুদ্ধে ছাত্র-যুব-মহিলা-সংখ্যালঘুদের নজিরবিহীন প্রতিরোধ হোক বা কৃষিক্ষেত্রকে কর্পোরেটের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে চলমান ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন৷ তাছাড়া আছে করোনা অতিমারি ও লকডাউনে কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষণবাজি, থালাবাজানো, টর্চ জ্বালানো, কর্মহীনতা, অর্থনৈতিক অধোগতি৷ আর ভোট শতাংশের নিরিখে যেখানেই থাকুক, এই প্রতিটা ক্ষেত্রেই লড়াইয়ের সামনের সারিতে থেকেছে বামপন্থীরা। ফ্যাসিস্ট গুণ্ডারা জেএনইউতে ঢুকে ঐশীদের মাথা ফাটিয়েছে। হান্নান মোল্লারা শত ভয়, প্রলোভন, প্ররোচনাকে পাশ কাটিয়ে কৃষকদের একতা অটুট রেখেছেন, চাকরির দাবীতে নবান্নে গিয়ে রক্ত ঝরিয়েছে মইদুল, সায়নদীপরা, গোটা লকডাউন পর্বে কোথাও শ্রমজীবী ক্যান্টিন, কোথাও ন্যায্যমূল্যের বাজার করে মানুষের পাশে থেকেছে বামপন্থী ছাত্রযুব কর্মীরা।

২০১৯-এর ভোটের পর পাঁচটা রাজ্যের বিধানসভা ভোট হয়েছে। তার মধ্যে বিজেপি-জেডি(ইউ) জোট বিহারে কান ঘেঁষে জিতেছে। হরিয়ানায় গরিষ্ঠতা না পেলেও জেজেপির সঙ্গে জোট করে সরকার গড়েছে, মহারাষ্ট্রে বৃহত্তম দল হয়েও শিবসেনার সঙ্গে ঝামেলায় সরকার গড়তে পারেনি, দিল্লি ও ঝাড়খণ্ডে বিজেপি গোহারান হেরেছে। এই সবকটা রাজ্যেই কিন্তু ২০১৯-এর ভোটে বিজেপি বিরাটভাবে এগিয়ে ছিল এবং পাঁচ রাজ্যেই বিজেপির ভোট শতাংশে ধস নেমেছে। তাহলে বিজেপি ২০১৯-এর ভোট ধরে রাখতে পারবে বা বাড়াতে পারবে তা এতটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে কীভাবে? পশ্চিমবঙ্গ কি ভারতের বাইরে? আর শুধু এই পাঁচটা রাজ্যের বিধানসভা নয়, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, কেরল, কাশ্মিরের পঞ্চায়েত, পুরসভা ভোটে সামান্য হলেও বামপন্থীদের জমি ফিরে পেতে দেখা গেছে।

২০২১-এর ভোটটা হবে ২০২১-এ দাঁড়িয়ে, ২০১৯-এর ফলের ওপর দাঁড়িয়ে নয়। তাই রাজনৈতিক পণ্ডিত ও মিডিয়ার ভাষ্যের বাইরে গিয়ে যদি ভাবার চেষ্টা করি তাহলে দেখব যে সংযুক্ত মোর্চা ভোটে লড়ছে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, শান্তিশৃঙ্খলার মত বিষয়কে সামনে রেখে। প্রতি বছর নিয়ম করে চাকরির পরীক্ষা, সরকারি শূন্যপদ পূরণ, একশো দিনের কাজকে দেড়শো দিন করা, অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য আলাদা দপ্তর, শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা, এনআরসি, সিএএ কার্যকর না করার মত বিষয় রয়েছে তাদের ইশতেহারে। বিজেপি আর তৃণমূলের প্রার্থীতালিকায় যেখানে দলবদলু আর টেলিতারকাদের ভিড়, বামফ্রন্ট সেখানে লড়ছে শিক্ষিত উদ্যমী ছাত্র-যুবদের সামনে রেখে।

এনআরসি-বিরোধী আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন সহ বিভিন্ন ইস্যুতে বামপন্থীদের যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ছবি দেখা গিয়েছিল তা টাল খেয়েছে পশ্চিমবঙ্গে এসে। সিপিআই (এমএল) লিবারেশন বামফ্রন্ট-কংগ্রেস-আইএসএফ এর যৌথমঞ্চ সংযুক্ত মোর্চা থেকে নিজেদের পৃথক করে নিয়েছে। অন্য কিছু বামপন্থী দল, সংগঠন ও কিছু নাগরিক বিজেপিকে হারানোর আবেদন রেখেছেন। সিপিআই (এম) সহ বামফ্রন্টেরও মূল লক্ষ্য চার রাজ্যে গৈরিক ফ্যাসিবাদকে প্রতিহত করা। ভোটের ফল যাইই হোক ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের বিপদ মিলিয়ে যাবে না। বিজেপি জিতলে ফ্যাসিবাদ সরাসরি ঘাঁটি গাড়বে। তৃণমূল জিতলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টিঁকে থাকার জন্য প্রতিযোগিতামূলক হিন্দুত্বের রাস্তাতেই হাঁটতে হবে, দল ভাঙিয়ে যেকোনও সময়ে বিজেপির ক্ষমতা দখলের আশঙ্কা সবসময় থাকবে। যদি সংযুক্ত মোর্চা জিততে পারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শক্তি বাড়বে, কিন্তু অমিত শাহরা চুপচাপ বসে থাকবেন মনে করার কারণ নেই। জম্মু-কাশ্মিরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা, দিল্লির নির্বাচিত রাজ্য সরকারের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া বুঝিয়ে দেয় ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে ব্যর্থ হলে বিজেপি যেকোনও পথের আশ্রয় নিতে পারে। অর্থাৎ যেকোনও পরিস্থিতিতেই ফ্যাসিবাদের বিপদ থাকবে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধে সাময়িক মতভেদ কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ বামপন্থীরাই অগ্রণী হবেন।

বামপন্থীদের ভোট যদি ৭ শতাংশ থেকে ০.৭ শতাংশ বা ০.০৭ শতাংশও হয়ে যায় তবু তার মধ্যে একটা ভোট থাকবে আমার। কারণ আমি জানি ২রা মে যদি আবহাওয়া দপ্তর আমফানের মত কোনও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেয়, ভোটের রেজাল্ট জানার অপেক্ষা না করেই কান্তিবুড়ো নেমে পড়বে বাঁধ বাঁচাতে। জামুড়িয়ায় জামানত জব্দ হলেও, চোরাবালিতে পা আটকে গেলেও সবার জন্য শিক্ষার অধিকার চেয়ে আওয়াজ তুলবে ঐশী-দীপসিতারা। দুই ফুলের তরজায় গলার স্বর চাপা পড়ে গেলেও জীবনের সংগ্রামে যুবশক্তিকে নেতৃত্ব দেবে মীনাক্ষী। আবার কোনও প্রাকৃতিক বা সামাজিক সঙ্ককট ঘনিয়ে এলে ভোটের অঙ্ক ভুলে মানুষকে রিলিফ দিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে সৃজন-প্রতীকরা। তাদের সেই লড়াইয়ে একটা ছোট্ট সমর্থন হয়ে থাকুক আমার একটা ভোট।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4664 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...