![prabuddha](https://i0.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2022/09/prabuddha.jpg?resize=678%2C381&ssl=1)
প্রবুদ্ধ বাগচী
সালটা ১৯৪৩। সারা দুনিয়া জুড়ে বিশ্বযুদ্ধের ছায়া। তার ওপর সেই সময় প্রায়ই শোনা যাচ্ছে ব্রিটিশদের নাস্তানাবুদ করার জন্য জাপানিরা নাকি কলকাতার ওপর বোমা ফেলবে। ভয়ে কলকাতার মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে শহর ছেড়ে। বুদ্ধদেব বসু সেই সময় দেখেছিলেন কলকাতার বহু বাড়ির গায়ে ‘টু লেট’ নোটিস লটকানো। খুব সস্তায় ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে বাড়ি। কলকাতা শহরে তখন সরকারি কলেজ বলতে দুটি। প্রেসিডেন্সি ও ইসলামিয়া কলেজ (এখন যার নাম মৌলানা আজাদ কলেজ)। এই দুই কলেজে যারা অধ্যাপনা করেন পদাধিকারে তাঁরা প্রথম শ্রেণির সরকারি অফিসার। বিপদের ভয় এঁদেরও কম নয়। সেই সময় ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নিলেন, সরকারি কলেজের অধ্যাপকদের জন্য তাঁরা আইডেন্টিটি কার্ড দেবেন। এতে যুদ্ধের বাজারে তাঁদের সরকারি পরিচয় নিয়ে আর কোনও প্রশ্ন উঠবে না। কিন্তু সরকারি অধ্যাপকদের সচিত্র পরিচয়পত্রে সই করতে হবে রাজ্যের শিক্ষাসচিবকে। তৎকালীন এক অধ্যাপক পরিচয়পত্রে ছবি আটকে গেলেন মহাকরণে শিক্ষাসচিবের অফিসে। যথারীতি তার দুই আর্দালি অধ্যাপকের পথ আটকাল। কী দরকার, কেন এসেছেন এইসব প্রশ্নের বেড়া টপকিয়ে তিনি সচিবের ঘরে ঢুকলেন ও সাহেব-সচিব গ্রিহাম তাঁর মূল্যবান স্বাক্ষর দিয়ে ধন্য করলেন। কিন্তু ঘর থেকে বেরিয়ে ঘটল বিপত্তি। সেই দুই আর্দালি পথ আটকে দাঁড়াল অধ্যাপকের। তাদের কিছু ‘প্রণামী’ না দিয়ে তিনি যেতে পারবেন না, এই হল তাদের একগুঁয়ে দাবি। তাদের যতই বোঝানো হয় সাহেব তো স্বেচ্ছায় সই করে দিয়েছেন, তাদের তো এর জন্য কিছুই করতে হয়নি। কিন্তু তাদের সেই একই বায়না, ‘আমরা কিছু পেয়ে থাকি’।
আজকে আমরা সবাই জানি রাইটার্স বিল্ডিং-এর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থেকে তার সীমানা পেরিয়ে ‘আমরা পেয়ে থাকি’ সংস্কৃতি তিল থেকে তাল হয়ে উঠেছে। প্রশাসনিক অন্দরমহল থেকে পুলিশ, সেনাবাহিনি, প্রতিরক্ষা দফতর সব জায়গায় এই বাড়তি অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা নানারকম নাম নিয়েছে। কোথাও তার নাম স্পিড মানি কোথাও কিকব্যাক বা কাটমানি। রাস্তার ট্রাফিক পুলিশের লরি থামিয়ে নোট আদায় বা সরকারি চাকরি পেলে পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে আসা ডিআইবি অফিসারের ‘মিষ্টি খেতে চাওয়া’ বা পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে ডাকবিভাগের পোস্টম্যানকে ‘খুশি করে দেওয়া’ সবই এখন আর আমাদের গায়ে লাগে না। ট্রাফিক পুলিশের ‘ঘুষ’ খাওয়া নিয়ে সুমন গান বেঁধেছিলেন ‘প্রথম দেখা, দিনদুপুরে পুলিশ ঘুষ খায়/ প্রথম জানা, পয়সা দিয়ে সবই কেনা যায়।’ সাধারণভাবে পুলিশবিভাগের নিচুতলা ঘিরে প্রাক-স্বাধীন যুগ থেকে যে বদনাম ছিল আজ তা রবীন্দ্রনাথের গানের ভাষায় ‘সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে সবখানে’। সত্তর দশকে লেখা বিমল করের ছোটগল্প ‘নিগ্রহ’-তে দেখি, এক অত্যাচারী পুলিশ অফিসার বলছেন তিনি তার মেয়ের বিয়ে অন্য কোনও পুলিশের সঙ্গে দেবেন না কারণ পুলিশের চাকরিকে তিনি নিজেই বেশ নিচু চোখে দেখেন।
আজ হয়তো তিনি অন্য কথা ভাবতেন। কারণ নিচুতলা আর নয়, পুলিশের সর্বভারতীয় ক্যাডারের অফিসাররাও আজ বিপুল সম্পত্তির হয় মালিক নয় পাহারাদার। এমন এক জেলা পুলিশ সুপারকে আমরা কয়েকবছর আগে ক্যামেরার সামনে খামভর্তি টাকা নিতে দেখেছিলাম। তিনি আবার ছিলেন বকলমে অন্যের কালেক্টর। সত্যি মিথ্যে জানি না, এক জেলা সাংবাদিকের মুখে শুনেছি পশ্চিম বর্ধমানের কোলিয়ারি এলাকার কিছু কিছু থানায় প্রতিদিন নাকি দৈনিক সংবাদপত্রের মতো দৈনিক খাম বিলি হয়। একইভাবে শোনা যায় সারা রাজ্যেই কিছু কিছু থানার আধিকারিক পোস্টিং নিয়ে নাকি বহুদিন আগে থেকেই নিলাম প্রথা চালু আছে। যিনি নিলামে সব থেকে চড়া দর দেন তিনি নাকি সেই পোস্টিং ‘হাসিল’ করতে পারেন। তারপরে তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল থেক উজ্জ্বলতর হতে থাকে। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বি কে সাহার কথা মনে পড়ে? সত্যজিৎ রায়ের মরদেহ নিয়ে যখন কেওড়াতলা শ্মশানে শোকমিছিল পৌঁছায় তখন শ্মশানভর্তি ভিআইপিদের উপস্থিতিতে স্থানীয় সমাজবিরোধীদের মধ্যে একটা গোলমাল বাধে। সেই ঝঞ্ঝাট সামলাতে গেলে স্থানীয় এক নামী দুষ্কৃতি পুলিশ কমিশনারকে অকস্মাৎ ‘সাহাদা’ বলে সম্বোধন করে, বলতে গেলে এক পরমাণু বোমা ফাটিয়ে দেয়। পরেরদিন তিনি অপসারিত হন। আবার কলকাতার আরেক পুলিশ কমিশনারের বাড়ি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দল হানা দিলে ধর্মতলার মোড়ে মেট্রো চ্যানেলে এক নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী ধরনায় বসে পড়েন। তবে পুলিশের দুর্নীতি নিয়ে এত বেশি লেখা ও বলা হয়ে গেছে যে আর বাড়তি কিছু শুনতে আমাদের ধৈর্য রাখা সম্ভব নয়। বরং আশির দশকে তৈরি সেই ‘শত্রু’ চলচ্চিত্রের কথা মনে পড়ে। ‘সৎ ও মানবিক’ পুলিশকে নিয়ে নির্মিত সেই তৃতীয় শ্রেণির ছবি সব পুলিশকর্মীকে দেখতে পরামর্শ দিয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী জ্যোতিবাবু। জ্যোতিবাবু নিজে সবিনয়ে স্বীকার করে নিতেন তিনি ‘কালচার ফালচার বোঝেন না’ তাই শিল্পের দিক থেকে ওই সিনেমাটি দেখার পরামর্শ তিনি দিয়েছিলেন এমন নয়। আসলে রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী হিসেব হয়তো তার মনে হয়েছিল পুলিশের মধ্যেও যে ভাল লোক আছে জনমানসে এই ধারণা তৈরি করা। এখানে একটা কথা বলতেই হয়, এই রাজ্যে গত সাত দশক ধরে যখনই সরকারি দল বিরোধীদের কোনও আন্দোলন পুলিশ দিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে তখন বিরোধীরা পুলিশের আদ্যশ্রাদ্ধ করলেও একটা কথা পাদটীকা হিসেবে জুড়ে দেন, সব পুলিশ খারাপ নয়। যদিও সরকারি ক্ষমতায় থাকা দল মনে করে ‘আমার পুলিশ কোনও অন্যায় করে না/ যতক্ষণ তাঁরা আমার পুলিশ’। এই কথা এখন প্রবাদের মতো হয়ে গেছে।
দুর্নীতি বিষয়টার নানারকম সংজ্ঞা হতে পারে। প্রশাসনিক, সামাজিক, আর্থিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি ইত্যাদি। কেউ কেউ বলেন, এই যে সরকারি কর্মীরা দেরি করে অফিসে আসেন আর তাড়াতাড়ি চলে যান বা শিক্ষক-অধ্যাপকরা ক্লাস না করিয়ে বাড়িতে টোল খুলে বসেন এগুলোও তো এক ধরনের দুর্নীতি। যুক্তিটা ফেলে দেওয়ার নয়। অন্যদিকে সরকারি বা বেসরকারি কোম্পানিতে ‘পারচেজ’ বিভাগটি বরাবরই ‘শাঁসালো’ বলে চিহ্নিত। কোনও কোম্পানিকে বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি আধিকারিকরা যেমন বেআইনি সুবিধে নিয়ে থাকেন একইভাবে বেসরকারি ব্যবসা-বাণিজ্যেও নানা ধরনের বিনিময় প্রথা চালু আছে। সত্যজিতের ‘জন অরণ্য’ ছবিতে সোমনাথ নামক চরিত্রটিকে আমরা ঠিক এমনই এক আবর্তে ঘুরপাক খেতে দেখি। ইদানিং কর্পোরেট জগতে ‘এসকর্ট গার্ল’ নামের শব্দটি আমাদের খুব অচেনা নয়— এখানে চাহিদামতো নারী-সংসর্গ দাবি করা কি বৃহত্তর অর্থে দুর্নীতি নয়? আবার একদিবসীয় ক্রিকেটে টাকার বিনিময়ে ম্যাচ ফিক্সিং, সে আরেক অশৈলী কাণ্ড।
এই প্রসঙ্গে একটি ক্রিকেটীয় গপ্পো মনে পড়ে গেল। এটাও প্রাকস্বাধীনতা যুগের। খুলনা জেলার সদর শহর থেকে কিছুদূরের একটি গ্রাম, সেখানে স্থানীয় জমিদারের সৌজন্যে স্থাপিত হয়েছিল একটি স্কুল। স্কুল সমেত তার সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল একজন নায়েব। জেলা সদরের পুলিশ সুপার সাহেবের ইচ্ছে হল তিনি একদিন তার পুলিশ টিম নিয়ে ওই স্কুলের উঁচু ক্লাসের ছাত্রদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলবেন। সেইমতো ব্যবস্থা পাকা হল। নির্দিষ্ট দিনে বিশালদেহী সুপার সাহেব ও তার বাহিনির আরও কিছু লম্বা চওড়া সদস্য স্টিমারযোগে স্কুলে এলেন। স্কুলের মাঠের চারদিকে লোকে লোকারণ্য। খেলা শুরু হতেই প্রথম বলেই দীর্ঘদেহী পুলিশ সুপার সাহেব বোল্ড আউট হয়ে ফিরে গেলেন। দেখতে দেখতে চল্লিশ রানের মধ্যে সাহেবের দলের ছজন ব্যাটসম্যান আউট। সারা মাঠ আনন্দে উত্তেজনায় ফেটে পড়ছে। স্কুলের খেলোয়াড়দের দিকে ছুটে আসছে প্রশংসার ফোয়ারা। এমন সময় দেখা গেল, ব্যাট প্যাড খুলে সুপার সাহেব তার গোটা দল নিয়ে মাঠ ছেড়ে নদীতে বাঁধা থাকা স্টিমারের দিকে হাঁটা দিয়েছেন। নায়েব মশাই ও স্কুলের হেডমাস্টার মশাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটলেন তাঁদের পেছনে। এ যে স্কুলের বদনাম, গ্রামের বদনাম। তাঁদের মধ্যে দীর্ঘ কথাবার্তার শেষে জানা গেল, সুপার সাহেব জানিয়েছেন মাঠজুড়ে দর্শকদের গোলমালে তাঁদের ব্যাটসম্যান রা নাকি মনোসংযোগ করতে পারছে না, তাই তাঁরা আর খেলতে চান না। কিন্তু তা কী আর হয়? সুতরাং একটা কিছু রফাসূত্রের পর আবার খেলা শুরু হল। সাহেবের দলের বাকি ব্যাটসম্যানরা আরও তিরিশ চল্লিশ রান করে ইনিংস শেষ করলেন। কিন্তু এর পরে খেলতে নেমে স্কুলের ছাত্ররা কেন যেন আর পিটিয়ে রান তুলতে পারল না। ঢিমেতালে রান করে তারাও তাঁদের ইনিংস ওই আশি রানেই শেষ করলেন। সম্মানজনক ‘ড্র’-এর পরে সেদিনের সূর্য অস্ত গেল।
২.
কার্যত রাজকাজে দুর্নীতির চেহারা দেখা গেছে খুব প্রাচীন যুগেও। মহাভারতের যুগের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণাধর্মী বই প্রকাশিত হয়েছে। যেসব বিদেশি পর্যটক এদেশে এসেছিলেন তাঁদের ভ্রমণ-আলেখ্যে সেই সময়ের যে সমাজচিত্র মেলে তাতে অনেক ভালর সঙ্গে দুর্নীতির কটু গন্ধও আছে। প্রামাণ্য তথ্য কী আছে জানি না, তবে ইতিহাস বইয়ে ছোটবেলায় পড়ানো হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ওজনে কম দিলে আলাউদ্দিন খিলজি নাকি সেই ব্যবসায়ীর দেহ থেকে সমপরিমাণ মাংস কেটে নিতেন। রাজপুরুষরা যে দুর্নীতি করবেন কৌটিল্যের লেখায় তার আভাস ও সম্ভাব্য প্রতিকারের উপায় বলা ছিল। এসবের কয়েকশো বছর পরে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহেরু বলেছিলেন অসাধু ব্যবসায়ীদের তিনি ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে ফাঁসি দেবেন। আজকের প্রধানমন্ত্রী একদা আশ্বাস দিয়েছিলেন ‘না খায়েঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’। অথচ তাঁর সব সঙ্গীসাথীরা ‘খাওয়াদাওয়া’ সেরে দেশ ছেড়েই পালিয়ে গেছেন, কেউ টের পায়নি। প্রতিরক্ষা দফতরের অস্ত্র কেনায় ‘কিকব্যাক’ নিয়েছেন এই অভিযোগে ভারতের এক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে পরাজিত হন, পরে অবশ্য তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। যুদ্ধবিমান কেনায় একটি ‘বন্ধু সংস্থা’কে বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ হালের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও উঠেছিল, এমনকি বিমান সরবরাহকারী দেশ ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যমেও এই খবর ফলাও করে বেরিয়েছিল। কিন্তু কী এক গভীর রফাসূত্রে সেইসব উথলে ওঠা অভিযোগ আস্তে আস্তে সমতল হয়ে যায়। সে কি ওই পুলিশ সুপারের ক্রিকেট দলের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের ক্রিকেটীয় বোঝাপড়ার মতোই? অবশ্য কার্গিল সীমান্ত যুদ্ধের পরে সেনাদের কফিন কেনা নিয়ে এক বেইজ্জতি দুর্নীতিতে ধরা পড়েছিলেন সেই সময়ের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। আর কার্গিল যুদ্ধের সময় কেন্দ্রের সরকারে যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, যাঁরা সেই সময় নিজেদের দলকে বলতেন ‘পার্টি উইথ এ ডিফারেন্স’— তাঁদের সর্বভারতীয় সভাপতি আসমুদ্র হিমাচলকে বিস্মিত করে ক্যামেরার সামনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা গুনে নিয়ে এক আশ্চর্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। আর এই টাকা নেওয়া হয়েছিল প্রতিরক্ষা দফতরে বরাত পাওয়ার ‘উপঢৌকন’ হিসেবে। তথ্য হিসেবে এটা আমরা যেন ভুলে না যাই, ভারতের প্রতিরক্ষা দফতরের বাজেট বরাদ্দ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি (২০১৬-১৭-র হিসেব) আর দুনিয়ার মধ্যে সব থেকে বেশি অস্ত্র আমদানি করে আমাদের দেশ। ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল’ নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা সারা দুনিয়ার দেশগুলির একটা দুর্নীতি-মাপক ঠিক করে থাকেন তাঁদের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী (২০২১) ভারতের অবস্থান ৮৫ নম্বরে গড়িয়ে নেমে গেছে, যা ২০১৯-এ ছিল ৮০-তে। অর্থাৎ দেশে দুর্নীতি বাড়ছে। আর এই সংস্থারই সমীক্ষা অনুযায়ী যেসব ব্যবসার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির যোগসূত্র তার প্রথমেই আছে আন্তর্জাতিক অস্ত্রব্যবসা। আন্তর্জাতিক আঙিনা থেকে আমরা যদি আবার এই রাজ্যের মাটিতে দাঁড়াই তাহলে দুটো ঘটনা আমাদের একটু স্মরণ করে নিতে হবে। বিগত সময়ে এই রাজ্যের সংস্কৃতিমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভাকে ‘চোরেদের ক্যাবিনেট’ বলে চিহ্নিত করে পদত্যাগ করে চলে যান। পরে অবশ্য তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন, হতে পারে ইত্যবসরে মন্ত্রিসভার সদস্যদের গঙ্গা বা ভল্গা কিংবা হোয়াং হো নদীর জলে শুদ্ধ করে নেওয়া হয়েছিল! আরেক মুখ্যমন্ত্রী চিটফান্ডের পাহাড় প্রমাণ প্রতারণায় সর্বস্ব হারানো মানুষকে আশ্বাস দিয়েছিলেন ‘যা গেছে তা যাক’!
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশে ব্যবসা করতে এলেও দুর্নীতির প্রশ্নে তাঁদের অবস্থান মোটেও ‘যা গেছে তা যাক’ এর মতো ছিল না। কোম্পানির আমলে যে লবণগোলা গুলি থেকে নুনের ব্যবসা চালানো হত, সেখানে নিয়োজিত কোম্পানির দেশীয় কর্মচারীরা মোটেও সৎ ছিলেন না। ওজনে কারচুপি করায় তাঁদের নিজেদের পকেট ভরত অথচ কোম্পানির রাজস্ব কম আদায় হত। এইসব ঘটনার ভিত্তিতেই দ্বারকানাথ ঠাকুরকে কোম্পানি লবণগোলার দেওয়ান নিযুক্ত করেন। তিনি কড়া হাতে এই দুর্নীতি বন্ধ করে কোম্পানির রাজস্ব আদায় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেন। এই কাজের সূত্রেই কোম্পানির সঙ্গে তার সখ্য ও তারই সুযোগে তিনি নিজের সমৃদ্ধি বাড়াতে থাকেন। অবশ্য দ্বারকানাথ যে বিপুল বৈভব ও খ্যাতির মালিক হয়েছিলেন সেটা তার নিজস্ব বাণিজ্যবুদ্ধি ও বিবেচনার বিষয়, তাঁকে কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলে এখনও কেউ দাবি করতে পারেননি।
৩.
অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন আর্থিক দুর্নীতি না হলেও স্বজন-পোষণও এক ধরনের দুর্নীতি। কথাটা ভুল নয়। একটা সময় সরকারি সংস্থা রেলে একই পরিবারের প্রজন্মের পর প্রজন্ম চাকরি পেয়ে এসেছেন, এটা আমাদের চেনা অভিজ্ঞতার মধ্যেই আমরা খুঁজে পাই। সারা দেশের কথা জানি না, কিন্তু একটা সময় কলকাতার জীবনবিমা নিগমের অফিসে এমন অনেকের হদিশ পাওয়া যায় যাঁরা কর্তা গিন্নি তাঁদের পুত্র বা কন্যা জীবনবিমায় চাকরি করতেন। রাজ্যের সরকারি চাকরির একটা বড় অংশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আওতায় আগে ছিল না, এখনও নেই। এমন প্রচুর দফতর ছিল যেখানে সাধারণ কর্মীদের দফতর নিজে নিয়োগ করত। সেখানে ঢালাও স্বজনপোষণ হয়ে এসেছে বরাবর। একেকজন বাম মন্ত্রী সম্বন্ধে কিংবদন্তি ছিল তাঁরা নাকি বাড়ির পোষা কুকুরের জন্যও চাকরি করে দিতে পারেন। ইদানিং শিক্ষার ক্ষেত্রে নানারকম অভিযোগের খবর বাতাসে ভাসছে যা আদালতে বিচারের অপেক্ষায়।
পরাধীন দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদা উপাচার্য স্যার আশুতোষকে একজন জ্যোতিষ্ক শিক্ষাবিদ বলে আমরা মেনে নিয়েছি। তাঁর অবদান নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু এমন কিছু ঘটনা আছে যার সঙ্গে অপ্রিয় অনুষঙ্গের অবতারণা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা তখন দুই বাংলা সমেত সেই সুদূর বার্মা মুলুক পর্যন্ত। ঢাকা কলেজের এক ইংরাজির অধ্যাপক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইএ পরীক্ষার হাজার খানেক খাতা নিয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন ঢাকায়। শিয়ালদহ থেকে ঢাকা মেল ধরে ভোরবেলা গোয়ালন্দে নেমে মুটের মাথায় খাতার বোঝা চাপিয়ে নারায়ণগঞ্জে স্টিমার ধরার হুড়োহুড়িতে সেই খাতার ঝুড়ি পড়ে গেল পদ্মার জলে। সর্বনাশ! কী হবে? বেচারা একজামিনার ফিরতি ট্রেনেই কলকাতা ফিরে কেঁদে পড়লেন আশুতোষের কাছে। দীর্ঘদেহী উপাচার্য বললেন, এতে এত ভেঙে পড়ার কী আছে। তুমি আমার কাছে একটা অসুস্থ হয়ে পড়ার জন্য দু-মাসের জন্য ছুটি চেয়ে চিঠি দাও। আর মধুপুরে আমার একটা বাগানবাড়ি আছে, তুমি সেই বাগানবাড়িতে গিয়ে দু-মাস থাকো, আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সেই ব্যবস্থাই হল। অধ্যাপক দিব্যি ছুটি কাটালেন মধুপুরে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফল ঠিক সময়েই বেরোল, তাতে কোনও ভুলত্রুটি ছিল না। কীভাবে এই ভোজবাজি সম্ভব হল, দোর্দণ্ডপ্রতাপ উপাচার্যের কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার কেউ ছিল না। পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় নম্বর কমানো বাড়ানো নিয়ে যেসব অভিযোগ নানা সময়ে উঠেছে তার ভ্রূণ এখানেই থেকে গিয়েছিল কি না কে বলবে?
আশুতোষের দ্বিতীয় পুত্র শ্যামাপ্রসাদ বরাবর মিত্র ইন্সটিটিউশনে ক্লাসে দ্বিতীয় হতেন, প্রথম হতেন অন্য একজন। ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফল বেরোতে দেখা গেল, হাজার হাজার ছেলের মধ্যে শ্যামাপ্রসাদ হয়েছেন প্রথম আর মিত্র স্কুলের ওই ছেলেটি হয়েছেন দ্বিতীয়। সকলেই জানেন সেই সময় ম্যাট্রিক পরীক্ষা পরিচালনা করতেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। শ্যামাপ্রসাদ ও সেই দ্বিতীয় হওয়া ছেলেটি দুজনেই ভর্তি হলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। দ্বিতীয় স্থানাধিকারী ছেলেটি রীতিমতো আড্ডাবাজ, হইহল্লায় মাতিয়ে রাখে কলেজ, অথচ শ্যামাপ্রসাদ যেন স্বভাবলাজুক, একটু দূরে দূরে থাকেন। এটা লক্ষ করে সেই দ্বিতীয় স্থানাধিকারী শ্যামাপ্রসাদকে ডেকে একদিন বললেন, এসো এসো শ্যামাপ্রসাদ, ফার্স্ট হয়েছ তো এত লজ্জা পাওয়ার কী আছে! মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। এর দশ বছর পরে শ্যামাপ্রসাদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন এবং নিজের পদে থাকালীনই সিনেট ও সিন্ডিকেট থেকে নিজেকে ডি-লিট দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করিয়ে নেন। আশুতোষ পরিবারের জামাই প্রমথ নাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এর অল্প পরে উপাচার্যের আসন অলঙ্কৃত করেন। সেই সময়েও উঠেছিল এক প্রবল বিতর্ক। উপাচার্যের এক পুত্র এমএ পরীক্ষায় বসেন ও প্রথম শ্রেণিতে পাশ করেন, কিন্তু প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হতে পারেননি। এই বিষয়ে উপাচার্য নিজে কিছু জানতেন না। কিন্তু সেই সন্তানের জননী আশুতোষ-দুহিতা নাছোড়বান্দা। তিনি পরীক্ষাবিভাগের খোদ কর্তাকে বাড়িতে তলব করে মুখঝামটা দিলেন— বড়বাবুর ছেলে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হতে পারে, মেজবাবুর ছেলেও প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হতে পারে। আমার ছেলের বেলায় শুধু প্রথম শ্রেণি? এর বিহিত করুন! অনুগত ভদ্রলোক ব্যাঘ্রকন্যার আদেশ মেনে বিহিত করলেন— দু-একটা পেপারে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হল। আশুতোষ-দৌহিত্র প্রথম শ্রেণিতে প্রথম ঘোষিত হলেন।
দেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৫৬-৬১) সারা দেশেই শিক্ষা বিস্তারের জন্য বিপুল বরাদ্দ করা হয়েছিল। নতুন স্কুলকলেজ তৈরি বা চালু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামো বাড়ানোর জন্য খুব সহজে সরকারি অর্থ পাওয়া যেত। রাজ্যের শিক্ষা-অধিকর্তা ও পরে শিক্ষাসচিব হিসেবে সেই সময়ে কাজ করেছেন ভবতোষ দত্ত। তাঁর অভিজ্ঞতায় তিনি দেখেছেন, সুদূর গ্রামের স্কুলের কিছু কিছু শিক্ষাব্রতী মাস্টারমশায় যেমন রাইটার্সে এসে নিজের স্কুলের উন্নতির জন্য টাকা চেয়ে দরবার করছেন, অন্যদিকে, বেশিরভাগেরই ধান্দা ছিল স্কুলের জন্য গ্র্যান্ট চেয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা, যে শিক্ষক আদপে নেই সরকারকে ঠকিয়ে তাঁর মাইনে তুলে নেওয়া। সেই সময় যদি কোনও সমিতি উচ্চমাধ্যমিক স্কুল খুলতে চাইতেন তাহলে তাঁরা সহজেই অনুমোদন পেয়ে যেতেন। এই অনুমোদন পাওয়ার জন্য স্কুল কমিটিকে কোনও তদ্বির-তদারক করতে হত না, সবটাই করতেন বাড়ি তৈরির ঠিকাদাররা। নিয়ম ছিল উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের (কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ) বাড়ি তৈরির জন্য সরকার থেকে এক লাখ বারো হাজার টাকা মঞ্জুর করা হত (এটা ষাটের দশকের হিসেব)। তার মধ্যে প্রথমে দেওয়া হত ষাট হাজার টাকা, পরে বিভিন্ন ধাপে বাড়ি তৈরির অগ্রগতি দেখে টাকা বরাদ্দ হত। বহু ক্ষেত্রে ওই প্রথম কিস্তির টাকা নেওয়ার পর আর সেই স্কুল সমিতির হদিশ পাওয়া যেত না। আর যেখানে পুরো বাড়ি তৈরি হত সেখানে স্কুলবাড়ির বরাদ্দ অর্থে স্কুল সমিতির সম্পাদকের নিজের বাড়িও তৈরি হয়ে যেত। সবচেয়ে লাভবান হতেন ঠিকাদাররা। ভবতোষ দত্ত লিখছেন, শিক্ষাজগতে অনাচার যে কতটা গভীর এবং বাস্তব সেটা রাইটার্সে কাজ না করলে জানতে পারতাম না।
স্কুলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এই স্কুল কমিটির ফান্ডে ডোনেশন দেওয়া বামফ্রন্টের আমলে প্রায় অঘোষিত প্রথাই হয়ে দাঁড়ায়। বহু পরিচিত ছেলেমেয়ে যারা আশির দশকের শেষ থেকে নব্বই দশকের মাঝামাঝি অবধি স্কুলে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন তাঁরা এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। স্থানীয় স্কুলের কমিটিতে এলাকার মাতব্বর ও তথাকথিত ‘বিশিষ্ট মানুষ’রা বাম আমলের আগেও থাকতেন। তার মধ্যে কংগ্রেসি নেতারাও যে বাদ থাকতেন তাও নয়। কিন্তু বাম আমলে শিক্ষার গণতন্ত্রীকরণের নামে স্কুল কমিটিতে পার্টির নেতা ও সমর্থকদের সরাসরি ঢোকানো হত। স্কুল কমিটির সম্পাদক বা সভাপতি ও তার সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচয় উহ্য থাকত না। ফলে প্রার্থীদের থেকে নেওয়া অর্থ শেষ অবধি কোন খাতে কীভাবে ব্যয় হত সে এক গভীর রহস্য। আজকে বিরোধী আসনে থাকা বাম নেতারা এগুলো এড়িয়ে যেতে চান এবং তাঁদের আমলে স্কুল সার্ভিস কমিশন তৈরির কথা ফলাও করে বলেন। কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশন তৈরি হয়েছে ১৯৯৭ সালে, ১৯৭৭-৯৭ এই কুড়ি বছর স্কুলের চাকরির রীতিনীতি কি স্বচ্ছ ছিল? এই বিষয়ে একটা তথ্য মনে করিয়ে দেওয়া যাক। নব্বই দশকের শুরুর দিকে ‘দেশ’ পত্রিকায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ‘পার্থিব’ ধারাবাহিক উপন্যাস লেখা শুরু করেন, যা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৯৪-এ। ওই উপন্যাসে দেখা যায়, চয়ন নামক চরিত্রটি একটি স্কুলে চাকরি পেতে গেলে তার কাছে কমিটি বকলমে ত্রিশ হাজার টাকা চায়। উপন্যাস বাস্তবের রিপোর্টাজ নয় ঠিকই, কিন্তু সময়ের কলঙ্কের ছাপও সে বহন করে।
অবশ্য একথা উল্লেখ করতে হবে বাম আমলের পরেও স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির মাথায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ‘কাঁঠালি কলা’ অবস্থান একটুও ‘পরিবর্তন’ হয়নি। আর, স্কুল সার্ভিস কমিশনের যোগ্যতা নিয়ে একটা সময় অবধি এত ঘোর বিতর্ক ও সংশয় তৈরি হয়নি। আড়ালে কী হয়েছে সেই বিষয়ে আলগা মন্তব্য সমীচীন নয়। আসলে দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যা যুক্ত তা হল ক্ষমতা। তার স্পষ্ট দুটি পক্ষ আছে। একদিকে যেমন ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতির ডানা মেলা অন্যদিকে অপরপক্ষ যারা দুর্নীতি প্রক্রিয়ায় গ্রহীতা তাঁদের উদ্দেশ্যই হলে ক্ষমতার সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে কলাটা মুলোটা বাগিয়ে নেওয়া। দেশের অন্যান্য রাজ্যে শিক্ষা দফতরের দুর্নীতি ইতিমধ্যেই শিরোনামে এসে আবার তামাদিও হয়ে গেছে। এই রাজ্যের শিক্ষা দফতরের নিয়োগ বিষয়ক নানা অভিযোগ নানা তদন্ত ধরপাকড় এই মুহূর্তে পাবলিক ডোমেনে সজীব হয়ে রয়েছে। সেখানে একটা সত্যি তো এটাও যে নিয়োগ পাওয়ার জন্য বহু প্রার্থী রাশি রাশি অর্থ ব্যয় করেছে। গত দশ বছরে এটাও তো আমরা দেখেছি ক্ষমতার কাছে থাকার জন্য কীভাবে শিবির বদলে ফেলেছেন নানাজনে। এটারও আছে এক পরম্পরা। সেই আশ্চর্য গল্পটা হল ১৯৬৭ সালের। প্রফুল্ল সেন মন্ত্রিসভার প্রায় শেষভাগ। নির্বাচন হয়ে গেছে। ভোটের গণনা চলছে। এমন সময় মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনের কাছে একটি চিঠি এল, লেখক কোনও এক মফঃস্বল কলেজের অধ্যাপক। তিনি লিখছেন— আপনার জয়লাভের জন্য গত তিন দিন ধরিয়া অহোরাত্র শ্রীশ্রীকালীমাতার চরণে বিল্বপত্র অর্পণ করিয়াছি। আপনার জয় অবধারিত। নির্বাচনের ফল বেরোলে দেখা গেল প্রফুল্ল সেন পরাজিত। তৈরি হল যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা, মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়। তিনিও ওই একই অধ্যাপকের কাছ থেকে চিঠি পেলেন অচিরেই। সেই চিঠিতে লেখা ছিল, আপনার জয়লাভের জন্য শ্রীশ্রীকালীমাতার চরণে তিন দিন অহোরাত্র বিল্বপত্র অর্পণ করিয়াছি। দেবী ভক্তের প্রার্থনা পূর্ণ করিয়াছেন।
দুর্নীতি নিয়ে বলতে গেলে আসলে কথা থামানো মুশকিল।