গান্ধি কি ভারতের কৃষক-শ্রমিকদের বন্ধু ছিলেন?

দেবোত্তম চক্রবর্তী

দেবোত্তম চক্রবর্তী

 

১৯১৪ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকাকে চিরতরে বিদায় জানিয়ে ভারত অভিমুখে যাত্রা করলেও গান্ধি বোম্বাইতে পৌঁছন পরের বছর ৯ জানুয়ারি। সরাসরি ভারতে না এসে তিনি লন্ডনে উপস্থিত হন এবং ভারত সচিবের কাছে চিঠি লিখে সাম্রাজ্যের সেবায় বিনা শর্তে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার বাসনা জ্ঞাপন করেন। যিনি নিজেই আত্মজীবনীতে লেখেন: “I make no distinction, from the point of view of ahimsa, between combatants and non-combatants. He who volunteers to serve a band of dacoits, by working as their carrier, or their watchman while they are about their business, or their nurse when they are wounded, is as much guilty of dacoity as the dacoits themselves. In the same way those who confine themselves to attending to the wounded in battle cannot be absolved from their guilt of war” (‘A Spiritual Dilemma’, Chapter 116, An Autobiography or The Story of My Experiments with Truth)। সেই একই ব্যক্তি কীভাবে পুনরায় যুদ্ধে যেতে উন্মুখ হন তা বোঝা দুষ্কর! যাই হোক, শেষ অবধি প্লুরিসিতে আক্রান্ত গান্ধি সেই পরিকল্পনা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়ে ভারতে ফিরে আসেন। গুরু গোখলের পরামর্শে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, অবিচার-অত্যাচার সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করার জন্য তিনি এবার ভারতের গ্রাম পরিভ্রমণ শুরু করেন। অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিটিশ বাহিনির হয়ে যুদ্ধে যোগদান করার পুরস্কার হিসাবে ততদিনে তাঁর ‘কাইজার-ই-হিন্দ’ পদক পাওয়া সারা।

১৯১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গোখলের মৃত্যুর পর তিলকই হয়ে ওঠেন কংগ্রসের অন্যতম প্রধান নেতা এবং পরের বছরে কংগ্রেসের লখনউ অধিবেশনে চরমপন্থীরা পুনরায় মূল স্রোতে ফিরে এলে তিলক ও তাঁর অনুগামীরাই কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সিদ্ধান্তসমূহের ক্ষেত্রে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। এই অধিবেশনে বিহারের জনৈক ধনী কৃষক তথা ছোট মহাজন রাজকুমার শুক্ল চম্পারনের কৃষিজীবীদের ওপর নীলকরদের চরম অত্যাচারের প্রসঙ্গটি অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবসমূহের অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানালে গান্ধি তীব্র আপত্তি জানান। পরিহাস এই, রাজকুমার শুক্লর অনুরোধে সেই একই গান্ধি জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকাকে পোক্ত করার উদ্দেশ্যে ১৯১৭ সালে বিহারের চম্পারন হাজির হন। পরে আমরা দেখতে পাব, তিলক ‘Indian Unrest’-এর লেখক ভ্যালেন্টিন চিরলের বিরুদ্ধে মামলা লড়তে ইংল্যান্ড গেলে ১৯১৯ সালের শেষদিকে গান্ধিই হয়ে উঠবেন কংগ্রেসের সর্বেসর্বা এবং পরের বছর অগস্টে তিলকের মৃত্যু ও ডিসেম্বরে জিন্নার কংগ্রেস ত্যাগের পরে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে প্রশ্ন করার লোকের সন্ধান পাওয়াও ক্রমশ দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে।

যাই হোক, আমরা ফিরে আসি চম্পারন প্রসঙ্গে। ১৮৬০ থেকেই চম্পারণে ‘তিনকাঠিয়া প্রথা’-র বিরুদ্ধে বিক্ষিপ্ত প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। নীলকররা জমিদারদের থেকে ঠিকাদারি ইজারা নিয়ে চাষিদের জমির একটা অংশে (বিঘা পিছু তিন কাঠা) অলাভজনক দামে নীল বুনতে বাধ্য করে। শেষে জার্মানির কৃত্রিম রঙের সঙ্গে মোকাবিলা না করতে পেরে ১৯০০ সাল নাগাদ নীল চাষ কমে যায়। তখন নীলকররা নীল চাষের দায় থেকে চাষিদের রেহাই দেওয়ার পরিবর্তে থোক ক্ষতিপূরণের বোঝা চাষিদের ঘাড়েই চাপানোর চেষ্টা করলে ১৯০৫-০৮-এর মধ্যে মোতিহারি-বেতিয়া অঞ্চলে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। চাষিদের তুলনামূলক সম্পন্ন একটা অংশ এবং বিহার কংগ্রেসের কিছু নেতা পরের দশক পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। রাজকুমার শুক্লের অনুরোধে ১৯১৭ সালের ১৫ এপ্রিল গান্ধি চম্পারন পৌঁছন।

সেখানে পৌঁছেই সংগ্রামী নীলচাষিরা তাঁর নেতৃত্ব মেনে নিলে তিনি নীলকরদের কাছ থেকে তাঁদের দাবি আদায় করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। চাষিদের তরফ থেকে আশ্বাস পেয়ে তিনি নীলকর ও বিহারের উচ্চপদস্থ সরকারি আমলাদের বোঝান যে, নীলচাষিদের সামান্য কিছু দাবি পূরণ করে এই সংগ্রাম মিটিয়ে ফেলা দরকার। অন্যথায় সারা বিহার জুড়ে কৃষক আন্দোলনের ঝড় উঠতে পারে এবং তার ফলে বিহারে জমিদারি প্রথা ও ইংরেজ শাসন বিপন্ন হতে পারে। নীলকরেরা গান্ধির পরামর্শ অগ্রাহ্য করে। অবশেষে বিহারের ছোটলাটের সঙ্গে উপর্যুপরি চার-চারটি বৈঠকের পর জুলাই মাসে সরকারি আমলা ও কতিপয় নীলকর ছাড়া কৃষকদের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে গান্ধিকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিশন গঠিত হয়। তদন্তের ভিত্তিতে নীলকররা ক্ষতিপূরণের অর্থ নীলচাষিদের ফেরত দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হন। তাঁরা ভেবেছিলেন, গান্ধি হয়তো পুরো অর্থই দাবি করবেন। কিন্তু তিনি পঞ্চাশ শতাংশ ক্ষতিপূরণ দাবি করলে তাঁরা ২৫ শতাংশ দিতে রাজি হন। তাঁদেরকে অবাক করে দিয়ে গান্ধি ওই ২৫ শতাংশ অর্থ ফেরত নিতেই রাজি হয়ে যান এবং তিনকাঠিয়া ব্যবস্থা উঠে যায়। তাঁর পরামর্শে নীলচাষিরা সংগ্রাম বন্ধ করে কাজে যোগ দেন। কৃষক সম্প্রদায়কে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম থেকে দূরে রাখতে সামান্য চালকলা দিয়ে তাঁদের তুষ্ট রাখার এই শিক্ষাই গান্ধিকে পরবর্তীকালের ‘সত্যাগ্রহ’ সংগ্রামের অন্যতম প্রধান কর্মপন্থারূপে গ্রহণ করার অনুপ্রেরণা যোগায়। 

কিন্তু রাতারাতি কৃষকদের মসিহারূপে পরিগণিত গান্ধি আদৌ কি এঁদের প্রকৃত বন্ধু ছিলেন? সহজ উত্তর, না। ১৯২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির যে বারদোলি প্রস্তাবে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার অনুমোদিত হয়েছিল, তার সাতটি ধারার মধ্যে অন্তত তিনটি ধারার উল্লেখ এখানে করলে কংগ্রেস তথা গান্ধির কৃষক-বিরোধী চরিত্রটি আরও একবার উন্মোচিত হয়ে পড়ে। প্রস্তাবের দ্বিতীয় ধারায় সরকারকে বকেয়া কর পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়: “In view of the violent outbreaks every time mass civil disobedience is inaugurated, indicating that the country is not non-violent enough, the Working Committee of the Congress resolves that mass civil disobedience … be suspended, and instructs the local Congress Committees to advise the cultivators to pay land revenue and other taxes due to the Government, and to suspend every other activity of an offensive character”। জমিদারদের আশ্বাস দিয়ে যথাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম ধারায় বলা হয় “The Working Committee advises Congress workers and organisations to inform the ryots (peasants) that withholding of rent payment to the Zemindars (landlords) is contrary to the Congress resolutions and injurious to the best interests of the country” এবং “The Working Committee assures the Zemindars that the Congress movement is in no way intended to attack their legal rights, and that even where the ryots have grievances, the Committee desires that redress be sought by mutual consultation and arbitration”।

১৯৩১-৩২ সাল নাগাদ পদুকোটা, জম্মু-কাশ্মির, পুলরা থেকে কৃষক সংগ্রাম যখন সারা ভারতে ছড়াচ্ছে সেই সময় গান্ধি গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করতে ইংল্যান্ড যান। ইংল্যান্ড থেকে এই বিদ্রোহের বিরোধিতা ও সামন্তপ্রভুদের সমর্থন করে তিনি ঘোষণা করেন, “Even up to now the Congress has endeavoured to serve the Princes of India by refraining from any interference in their domestic and internal affairs” (CWMG, ৫৩/৩৬১)। আবার ২৫ জুলাই, ১৯৩৪ জমিদারদের আশ্বাস দিয়ে বলেন— “ন্যায্য কারণ ছাড়া সম্পত্তির মালিকশ্রেণিদের তাদের সম্পত্তির থেকে আমি বঞ্চিত করতে চাই না। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে তোমাদের হৃদয় পরিবর্তন করা যাতে তোমরা তোমাদের সমস্ত সম্পত্তি তোমাদের প্রজাদের অছি হিসাবে রাখতে পার এবং মুখ্যত তাদের কল্যাণে তা ব্যবহার করো। … আমি কাজ করছি মালিক ও শ্রমিক এবং জমিদার ও প্রজার মধ্যে সহযোগিতা ও সংযোগের জন্য। … আমার স্বপ্নের রামরাজ্য রাজা ও নিঃস্ব উভয়ের অধিকার সুনিশ্চিত করতে চায়। … স্বাধীনতার শান্তিতে থাকার চেয়ে বড় কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রজাদের নেই এবং তারা তোমাদের সম্পত্তি নিয়ে কখনও ঈর্ষা করবে না যদি তোমরা তা তাদের জন্য ব্যবহার করো” (CWMG, ৬৪/২৩০-৩২)। মনে রাখতে হবে, সে সময় ভারতে ছিল পাঁচশোরও বেশি দেশীয় রাজ্য এবং এই অতিকায় সামন্তপ্রভুদের শোষণ-উৎপীড়নের নাগপাশে আবদ্ধ ছিলেন প্রায় দশ কোটি কৃষক।

সর্বোপরি কৃষকদের শিক্ষার ব্যাপারে তিনি যে মত প্রকাশ করেন তা প্রায় বাঁধিয়ে রাখার মতো! গান্ধি ‘হিন্দ স্বরাজ’-এ লেখেন: “A peasant earns his bread honestly. He has ordinary knowledge of the world. He knows fairly well how he should behave towards his parents, his wife, his children and his fellow villagers. He understands and observes the rules of morality. But he cannot write his own name. What do you propose to do by giving him a knowledge of letters? Will you add an inch to his happiness? Do you wish to make him discontented with his cottage or his lot? And even if you want to do that, he will not need such an education. Carried away by the flood of western thought we came to the conclusion, without weighing pros and cons, that we should give this kind of education to the people”। হয়তো এই কারণেই যে রাজেন্দ্রপ্রসাদ চম্পারনের ইংরেজ জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে গান্ধির সত্যাগ্রহে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন, ঘটনার ২০ বছর পরে তাঁরই প্রত্যক্ষ মদতে তাঁর সন্তানেরা চম্পারনের একরের পর একর উর্বর জমি আত্মসাৎ করেছিল!

চম্পারনে কৃষকদের বিশ্বাস আদায় করার পর তিনিই যে ভারতীয় শিল্পপতিদের অকৃত্রিম বন্ধু ও যোগ্যতম প্রতিনিধি, তা বোঝাতে গান্ধি ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ জুড়ে চলা আমেদাবাদের কাপড়কলগুলির শ্রমিক ধর্মঘটকে বেছে নেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ভারতীয় শিল্পপতিরা তাদের যুদ্ধকালীন সুযোগসুবিধা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পেছনে এসে দাঁড়ায়। আমেদাবাদের বস্ত্রশিল্প চূড়ামণি আম্বালাল সারাভাই-এর কাছ থেকে সাবরমতী আশ্রম মোটা আর্থিক অনুদান পায়, তাঁর বোন অনসূয়া বেন গান্ধির শিষ্যায় পরিণত হন। শুধু তাই নয়, ১৯২১ সালে গান্ধি যখন ‘তিলক স্বরাজ তহবিল’-এর জন্য ১ কোটি টাকা চাঁদা তোলার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দেন, তখন তার মধ্যে কেবলমাত্র বোম্বাইয়ের অবদান ছিল কম করেও সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে শিল্পপতিদের এই গাঁটছড়া দেখতে পেয়ে সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘Gandhism and the Labour-Peasant Problem’ প্রবন্ধে যথার্থই লিখেছিলেন: “Whenever there is unrest among the workers the mill owners of Ahmedabad are in the habit of requisitioning Mahatma Gandhi to use his influence to settle the disputes. With the consent and support of Gandhiji, some of his followers had taken upon themselves the task of organising the workers into unions. The poor workers, unconscious of their class interests, have readily fallen prey to this clever move”।

যে পরিস্থতিতে গান্ধি আমেদাবাদের ধর্মঘটে হস্তক্ষেপ করেন, সেটি ছিল একান্তভাবেই গুজরাটের মিলমালিক ও তাঁদের শ্রমিকদের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ। আমেদাবাদের মিলমালিকরা স্বল্প সময়ের জন্য দেওয়া ৭০% প্লেগ বোনাসের বদলে যুদ্ধের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে শ্রমিকদের ২০% মজুরিবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়। শ্রমিকরা ৫০% বেতনবৃদ্ধির দাবিতে অটল থাকেন। মালিকরা সেই দাবি না মেনে লকআউট ঘোষণা করে। অসন্তুষ্ট শ্রমিকরা হিংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু করলে গান্ধি এইবার আসরে অবতীর্ণ হন। প্রথমে তিনি শ্রমিকদের ৩৫% বেতনবৃদ্ধি যথেষ্ট বলে মধ্যস্ততা করেন এবং তাতেও কাজ না হওয়ায় শ্রমিকদের কারখানায় জঙ্গি পিকেটিংকে নিষিদ্ধ করার কৌশল হিসাবে তিনি ১৫ মার্চ অনশনে বসেন। টানা ২৫ দিন শ্রমিকদের ধর্মঘটের পরে অবশেষে গান্ধির অনশনের ফলে শ্রমিকদের মজুরি ৩৫% বাড়ে। গান্ধির এই অনশনকে ‘শ্রমিকদের ভাঙা মনকে চাঙ্গা করার সার্থক প্রচেষ্টা’ বলে বর্ণনা করা হলেও জুডিথ ব্রাউন জেলাশাসকের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন যে, শ্রমিকরা মিলমালিকদের সঙ্গে দহরম-মহরমের জন্য গান্ধিকে প্রচণ্ড অপমান করেছিলেন।

রাসকিন শোষক ও শোষিতের মধ্যে দ্বন্দ্বের বদলে সহযোগিতার কথা বলেছেন, আর গান্ধি সেই দাওয়াইটিকে ‘ধন্বন্তরির দান’ বলে গ্রহণ করেছেন। তাঁর এই মানসিকতার প্রতিফলন আমরা যেমন কৃষক ও জমিদারদের পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপারে দেখতে পাই, হুবহু তাই দেখতে পাই শ্রমিক ও মালিকদের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত তার ছবি তিনি তুলে ধরেন ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ পত্রিকার ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯২০ সংখ্যায়— “If on the other hand they take their stand on pure justice and suffer in their person to secure it, not only will they always succeed but they will reform their masters, develop industries and both master and men will be as members of one and the same family”। ওই একই পত্রিকায় তিনি লেখেন: “…যখন কারখানার শ্রমিকরা কারখানার মালিকের সঙ্গে নিজেকে এবং নিজের স্বার্থকে এক করে দেখতে শিখবে, নিজেকে উন্নত করতে শিখবে, তখন তারা আর তাদের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের কলকারখানা সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠবে।”

শ্রমিকশ্রেণি যাতে ধর্মঘট করে বা বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হয়ে মালিকদের বেকায়দায় না ফেলতে পারে, সে বিষয়ে তিনি ছিলেন সর্বদা সতর্ক ও সচেতন। এই কারণেই ১৯২১ সালে রেলওয়ে এবং বাষ্পীয় জাহাজ শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, “In India we want no political strikes. …We must gain control over all the unruly and disturbing elements, or isolate them. …We seek not to destroy capital or capitalists, but to regulate the relations between capital and labour. We want to harness capital to our side. It would be folly to encourage sympathetic strikes” (CWMG, ২৩/২৮৫)। না, এখানেই তিনি থেমে থাকতে চাননি! বরং শোষকদেরই শোষিতদের অছি বা ট্রাস্টি হিসেবে দেখতে চেয়ে তিনি বলেন— “My attitude would be to convert the better-off classes into trustees of what they already possessed. That is to say, they would keep the money, but they would have to work for the benefit of the people who procured them their wealth. And for doing this they would receive a ‘commission’” (CWMG, ৫৪/১০২-০৩)।

দক্ষিণ আফ্রিকায় যেমন চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের বিষয়ে উদাসীন ছিলেন গান্ধি, তেমনই ভারতীয় কৃষক-শ্রমিকদের শ্রেণিস্বার্থ সম্পর্কেও তিনি ছিলেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। শুধু তাই নয়, ভারতের জনসাধারণের এই বিপুল অংশকে তাঁর আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সর্বদাই সতর্ক থেকেছেন এবং প্রায় এড়িয়ে গেছেন। যখনই তাঁরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, প্রায় প্রতিটি সময়েই হিংসার অনুপ্রবেশের অছিলায় তিনি সেই আন্দোলনকে হয় আটকে দিয়েছেন কিংবা স্থগিত করেছেন অসীম দক্ষতায়।

 

সহায়ক লেখাপত্র:

১. সুমিত সরকার – আধুনিক ভারত : ১৮৮৫-১৯৪৭

২. সৈয়দ শাহেদুল্লাহ –  লেনিনবাদীর চোখে গান্ধিবাদ

৩. Philip Sprat – Gandhism: An Analysis, Vol. II

৪. Rammanohar Lohia – Guilty Men of India’s Partition

৫. R. Palme Dutt – India To-Day

৬. Vinay Lal – The Gandhi Everyone Loves to Hate

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4645 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...