দুটি নাগল্প

বিলাল হোসেন

 

আমাদের মহল্লার রাস্তাটি বর্ষার দগদগে ঘা নিয়ে শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছিল। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় খানাখন্দগুলো পুকুরের ছোট ছোট বাচ্চা হয়ে হাসছিল। পথচারীরা একহাতে গিরার ওপর কাপড় তুলে আরেক হাতে সাবধানতার কাঁধে হাত রেখে চলছিল কাদাপানি ভেঙে। কোথাও কোথাও আধলা ইটের সারি দ্বীপের মতো বুক চেতিয়ে শ্বাস নিচ্ছে। এই পথে যেতে যেতে একটি ঘটনা পানির-কাদার আর ইটের সবস্তর পাড়ি দিয়ে আমার সামনে এসে দুর্ঘটনায় পরিণত হয়।

আমি দেখতে পাই— একটি শরীর কাদায় পিছলে যেতে যেতে ভারসাম্য হারিয়ে আমার হাতটি ধরে ফেলে আর আমিও ভারসাম্য হারাতে হারাতে ঠিক সোজা হয়েই থাকি। কিন্তু একটু পরে, আমার মুখখানা দেখে সে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে ওঠে। শক্ত হয়ে ওঠে মুখখানাও। আর আমি তার দু’চোখ দেখে নুয়ে পড়ি। ভারসাম্য হারাতে থাকি।

সে ছিল, সে হাতটি ছিল— মধুবতীর। আমার মনে না-পড়া, জিইয়ে না-রাখা ধূসরকালের আবেগ।

এই ঘটনার সময় কিছু পানি আমার পোশাকে ছিটকে এসে লাগে। আমি বুঝি, ওটা বাচ্চা পুকুরের হাসি।

 

সন্ধ্যার মুখে মুখে একটু বৃষ্টি হয়ে গেল।

দেখছি— বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে কুলকুচি করে নিচ্ছে একটি চড়ুই। পাশেই ম্যানহোল হাঁ করে তার লুকোনো বর্জ্যসম্পদ দেখাচ্ছে ফাঁকতালে। লোহার ঢাকনাটা হেরোইঞ্চিরা চুরি করে বেচে দিয়েছে ভাঙারির দোকানে।

আমাদের এলাকার যে ভাঙারির দোকান আছে তা রফিক শফিক নামে দুই ভাই চালায়; সেখানে খোঁজ নিতে হবে। ওরা অবশ্য স্বীকার করবে না। এইসব জিনিস স্বীকার করে না কেউ। ব্যবসার ডিগনিটি কমে যায়। তবে আমার কাছে স্বীকার করলেও করতে পারে। এক সময়ে একটু উপকার করেছিলাম ওদের। দেখি…

ম্যানহোলের পাশে শাদালি লেজের ভেতর মুখ লুকিয়ে কুণ্ডুলি পাকিয়ে শুয়ে আছে। রাস্তার মাঝখানে এভাবে শুয়ে থাকার কুকুর শাদালি না। ওর কি মন খারাপ নাকি? কোনও কারণে হতাশ কী! লেজের ভেতর মুখ লুকিয়ে ঘুমালে সে কুকুর বেশি দিন বাঁচে না। মৃত্যুর গন্ধ পায়। শক্তিশালী ২২,০০০ ঘ্রাণেন্দ্রিয় সেল আনন্দ হতাশা মৃত্যুর গন্ধও শোষণ করার ক্ষমতা রাখে।

আমাদের শাদালির কী হল আজ! কোন গন্ধে সে এত নীরব হয়ে গেল!

ঢাকনা চুরি গেলে ভাঙারির দোকানে খোঁজ নেয়া যায়। মন ভেঙে গেলে কোথায় খোঁজ নেব— আমার জানা নেই।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5116 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

Leave a Reply to SUBRATA CHAKRABORTY Cancel reply