বেড়াল, হাত, ভূত, সাপ, বারাশিঙ্গা… বা চরাচরব্যাপী ঝিঁঝির ডাক

ধ্রুবজ্যোতি মুখার্জি

 






লেখক পেশায় শিক্ষক, নেশায় স্বপ্নদর্শী।

 

 

কদিন ধরে হা-করোনা যো-করোনা করে নার্ভ টানটান হয়ে উঠেছে। তুলো-ধোনা যন্ত্রে গরুর আঁত দিয়ে বানানো যে ছিলা থাকে, তার মত। আজ বিকেলে আমাদের পোষ্য টেরুমাইসিনের সামনে তার দুই প্রেমিক ধুমড়ো আর লোচনের মা ভুল করে চলে আসে। এতে প্রবল বিবাদের সম্ভাবনা তৈরি হয়, এবং আমার বোন মনি শঙ্কিত হয়ে চিক্কুর ছাড়ে, ‘এই লেগে গেল, লেগে গেল! সব্বোনাশ!’ এরকম প্রায়ই হয়ে থাকে, গা-সওয়া হয়ে গেছে বলা যায়, কিন্তু আজ এমন চমকে গেলাম যে চায়ের কাপ থেকে গরম চা চল্কে গায়ে পড়ার দশা। যাই হোক, মনি দুই লেজ-ফোলানো, পিঠ-বাঁকানো, গোঁফ-কাঁপানো মহিলার মাঝে পড়ে কোনওক্রমে লড়াই থামিয়ে ফিরে আসার পর ওকে জিজ্ঞেস করলাম এমন করে চেঁচালি কেন?

–কী করব? লড়াই লেগে যাচ্ছিল যে!

কী উত্তর! বললাম, তো? বেড়ালেরই তো লড়াই। ওদের হাতে কি নিউক্লিয়ার আর্মস আছে, যে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে? তোর চেঁচানি শুনে মনে হল আমেরিকা আর নর্থ কোরিয়ার লড়াই লাগল বুঝি! বলতেই ফট করে চোখের সামনে ভেসে উঠল কিম আর ট্রাম্প সাহেব (আমি বর্ণবৈষম্যের ঘোর বিরোধী) দুই বিবদমান হুলো বেড়াল হয়ে পরস্পরের দিকে থাবা উঁচিয়েছেন। হাসতে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি থাবায় নিউক্লিয়ার বোমা। শিউরে উঠলাম। হাসি টাসি উপে গেল। যে পৃথিবীতে ভাইরাসের আতঙ্কে লাটে লাট দেশ নগর শহর গ্রাম ডাইনির জাদুদণ্ডের প্রভাবেই যেন খাঁ-খাঁ করতে থাকে, সেখানে আমার কমিক স্বপ্ন কখন হুট করে জ্যান্ত অ্যাপোক্যালিপ্স হয়ে দাঁড়ায় কে বলতে পারে?

লীলা মজুমদারের ‘হলদে পাখির পালক’ আমার বড় প্রিয় বই। তার শেষ লাইনটি ছিল এরকম কিছু— সত্যি যে কোথায় শেষ হয়, স্বপ্ন যে কোথায় শুরু হয়, কে বলতে পারে? হঠাৎ স্বপ্নের আগে কোত্থেকে একটা দুঃ উড়ে এসেছে।

***

কাল রাতের খাওয়াদাওয়ার পর একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। রোজই বেরোই। মাঝারি চওড়া পিচঢালা রাস্তা পাঁচশো মিটারের মধ্যে দুখানা পাইথনসুলভ মোড় নিয়ে সোজা চলে গেছে অন্ধকারের গভীরে। মাঝে কটা ল্যাম্পপোস্ট। রাস্তার দুদিকে পুকুর, ঝোপঝাড়, মাঠ, পানের বরোজ, দূরে চাষের জমিতে আলু তুলতে আসা ট্র‍্যাক্টরের হলুদ চোখ নড়ে চড়ে, চন্দনের মত ঠান্ডা হাওয়া, ঝিঁঝিঁর ডাক, একজায়গায় ধুতরো ফুলের গন্ধ হাওয়ায় বোনা, ল্যাম্পপোস্টের আড়ালে আর্থিং কেবলের ওপর বসে থাকা একটা পেঁচা আমি কাছে আসতেই নিঃশব্দে উড়ে গেল। প্রায় রোজই দেখা হয় এর সঙ্গে। বা এরই কোনো ভাই-বেরাদরের সঙ্গে। মুখ চিনতে তো আর পারি না, সে সুযোগই দেয় না। বড় লাজুক পাখি।

সবই চেনা, তবু একটা কিছু অন্যরকম ঠেকছিল। গরমিলটা নিয়ে সচেতনভাবে কিছু ভাবছিলাম এমনও না। পুরনো ট্রাঙ্কের ডালা খুললে তলায় চাপা পড়ে থাকা ন্যাপথালিন বলের মত তার বাস পাচ্ছিলাম শুধু। হঠাৎ পকেটের ভেতর মোবাইলটা বেজে ওঠায় ঝপ করে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল— আজ মাইকের আওয়াজ পাচ্ছি না। খানিক দূর দিয়ে বাসরাস্তা গেছে, কোনও হর্ন বা এঞ্জিনের ক্রুদ্ধ গজরানিও না!

ভাবা যায়! এই ভরা বসন্তে আমাদের গঞ্জে শীতলাপুজোর মাইক বাজছে না! ডিজেবক্সের গুমগাম নেই কোথাও! গত তিন চার বছরে এমন একটি দিন বা রাতের কথা মনে করতে পারি না যেদিন এমন অখণ্ড নীরবতার স্বাদ পেয়েছি।

উঁহু। অখণ্ড নীরবতা নয়। সে তো মৃত্যুর মত। চুপ করে দাঁড়িয়ে দু কান ভরে গিলতে থাকলাম ঝিঁঝিঁর ডাক, পাতার মাঝে হাওয়ার ফিসফিস, বাঁশের বন থেকে ভেসে আসা মটমট। জীবনের শব্দ। এতদিন মানুষের অমানুষিক হরকতের ফলে যা আর কোনওদিনই এভাবে শুনতে পাব না বলে ধরে নিয়েছিলাম।

***

হাত সোজা জিনিস না। উদাহরণস্বরূপ, নেতা-মন্ত্রীদের ডানহাত অথবা বাঁহাত হতে পারলেই দিব্যি আখের গোছানো যায়, কষ্ট করে আর নিজেকে দেশসেবা করতে হয় না। অধিকার হারিয়ে ফেলাকে বলা হয় বেহাত হয়ে যাওয়া। টাকাপয়সা, ছাতা বা বেড়ানোর ছড়ি বে-হাত হলে যুক্তিটা বোঝা যায়, কিন্তু জমিজমা, সুযোগ, গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড ইত্যাদি বস্তু কেমন করে বে-হাত হতে পারে আমার জানা নেই। চোর চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে তার নাম ‘হাতেনাতে’ ধরা পড়া। ভাবুন! চুরি কি একা হাত করে? তারপর ধরুন হাতাহাতি। হয়তো লড়াইতে কিকবক্সিঙের নিয়ম ফলো করা হয়েছিল, তবু লাথালাথি না বলে হাতাহাতি বলাটাই নিয়ম। যদিও কালি, কলম, মন এই তিনজন মিলেই লেখে, তবু এন্ড প্রোডাক্টটার নাম সেই ‘হাতের লেখা’। কোনও অপরাধের দায় যে নিশ্চিতভাবেই অভিযুক্ত ব্যক্তির সেটা বোঝাবার জন্য ‘নিজের হাতে’ একটি বহুব্যবহৃত শব্দবন্ধ। এটা অবশ্য যুক্তিযুক্ত। ধরা যাক খুন। বিষ দিয়েই মারি বা গুলিই করি, হাত কাজে না লাগিয়ে কাউকে মেরে ফেলা বেশ কঠিন। শিখতে গেলে রামগড়ের ঠাকুরসাবের কাছে অন্ততপক্ষে ছ মাসের কোর্স করতে হবে। আর একজোড়া লোহার স্টাড বসানো নাগরা জুতোও চাই।

ঠাট্টা থাক। হাত ছাড়া মানুষ অসম্পূর্ণ। হাত বাদ দিয়ে কোনও কাজই হয় না এক ফুটবল খেলা আর লেঙ্গি মারা ছাড়া। ওহো! ফুটবলের ইতিহাসেও ‘ঈশ্বরের হাত’ পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে।

কর্মেন্দ্রিয় আর চারটে থাকলেও হাতের ভূমিকা যেন মন্ত্রীসভায় প্রাইম মিনিস্টার কিম্বা পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে অর্জুনের মত। হাতই মারে, বাঁচায়, আদেশ দেয়, কাছে টানে, দূরে ঠেলে, আদর করে, পেটায়, আঁক কষে, আঁকে, গড়ে এবং ভাঙেও। দুপায়ে দাঁড়াতে শেখার পর থেকে সামনের দুটো পা-কে মানুষ ঠিকঠিক কাজে লাগাতে পেরেছিল বলেই বাকি এপ, এবং পরে নিজেদের প্রায়-সমান অন্যান্য হোমো গণের প্রাণীদের ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে। এই হাতই প্রথম আগুন জ্বালিয়েছিল, পাথর ভেঙে অস্ত্র বানিয়েছিল, গড়িয়ে দিয়েছিল প্রথম চাকা। পিরামিড থেকে স্পেসক্র‍্যাফট— সব এই হাতেই গড়া।

আজ হঠাৎ এক রোগ এসে এই হাতের ওপরেই অবিশ্বাস জন্মে দিচ্ছে। নতুন চোখে দেখতে হচ্ছে তাদের। সন্দেহের চোখে, অবিশ্বাসের চোখে। যেন তারা ট্রোজান হর্স, পেটের ভেতর বোঝাই করা গ্রিক সেনা। এই বুঝি আমার সাধের শরীর আক্রান্ত হল অবিমৃষ্যকারী হাত দুটোর পাল্লায় পড়ে। ধোও, ধুতে থাকো, বারবার ধোও। শরীর নামক ট্রয় নগরীর সমস্ত দ্বার শক্ত করে আটকে রাখো অবিশ্বাসের আগল দিয়ে। এ লড়াই বাঁচার লড়াই, এ লড়াই জিততে হবে।

একদিন লকডাউন শেষ হবে। একদিন না একদিন আবার সবাই রাস্তায় নামবে, বাসে-ট্রেনে উঠবে, পার্কে বেড়াতে যাবে বুড়োরা, সেলুনে চুল স্পাইক করাবে বাচ্চাকাচ্চারা। কিন্তু হাতের ওপর বিশ্বাস আর আমাদের ফিরবে না। না ফেরাই মঙ্গল।

***

দেখতে দেখতে লকডাউন…. দাঁড়ান, কত ঘন্টা হল হিসেব কর‍তে হবে। কবে থেকে শুরু হল? আজ যেন কত তারিখ? আজ মঙ্গল না বুধবার?

ঠাট্টা করছি না, সত্যি গুলিয়ে যাচ্ছে। আমি একা নই নিশ্চয় এ ব্যাপারে। কাজ থেকে, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলে ওসব হিসেব, দেখা যাচ্ছে, সহজেই গুলিয়ে যেতে পারে। বেশিদিন লকডাউন চললে হয়তো কোন মাস চলছে সেটাও মনে থাকবে না। মার্চ না এপ্রিল? না কি মে?

আপাতত ধরে নেওয়া যাক তিন দিনে পড়ল লকডাউন। গৃহবন্দি মধ্যবিত্তের দল প্রতিদিন নানা নতুন ট্রিভিয়া আবিষ্কার করছে, কেউ পুলিশের কড়া ভূমিকার সমালোচনা করছে, কেউ বলছে এমনটাই দরকার ছিল— আভি নহি তো কভি নহি। তবে যে যাই বলুক, দিন চারেক আগের দমচাপা ভয়টা সবারই কমবেশি কেটে গেছে। অনেকে তো এখন থেকেই প্ল্যান করছে করোনাবধের পর ঠিক কেমন করে সেলিব্রেশন হবে। করাই উচিৎ, সে দিন যখন আর বেশি দূরে নয়। পনেরোই এপ্রিল।

দেখেছেন, এই তারিখটা ঠিক মনে রেখেছি। কয়েদি যেমন করে খালাস পাওয়ার তারিখ মনে রাখে।

মোটের ওপর, এখনকার ডমিন্যান্ট মুড হল প্রত্যয়ী অপেক্ষার। যেন দুয়ার লাগানো ঘরে নীলকমল ঘুমোচ্ছে, আর রাষ্ট্রশক্তির খোলা তলোয়ার হাতে, মাস্ক পরে বসে আছে ডাক্তার লালকমল। পাশে স্যানিটাইজার ভরা প্রদীপ জ্বলছে। এই বুঝি স্পাইকে ভর দিয়ে গড়াতে গড়াতে এল করোনা রাক্ষুসী, কিন্তু ভয় নেই— পাহারা আছে। ঘরের ভেতরে নীলকমলের রোল শুধু পড়ে পড়ে ঘুমনো। লালকমলের রোল সে যেন ভুলেও না প্লে করতে যায়। সে রাক্ষসদের সুলুক-সন্ধান জানে না, শরীরে রাক্ষুসে রক্তও নেই। নিতান্ত কমন ম্যান সে, আমার আপনার মত। ওপরচালাকি করতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলবে সে, আর দুয়ার ভেঙে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে আসবে করোনারাক্ষুসী— রূপকথার গল্পে যেমন এসেছিল। উঁহু, নীলকমল, তুমি সামলে থাকো বাপু, স্পেশালিস্টদের কাজ করতে দাও। দে নো বেটার দ্যান ইউ। তাছাড়া, একটা রাতেরই তো মামলা। ভোর হলেই তুমি দোর খুলে টাট্টিতে যাও না— কেউ মানা করবে না তখন! জানো না রাত ফুরোলেই রাক্ষস-খোক্কসের দল ঘুমিয়ে পড়ে?

সেই ছোটবেলাতেও গল্পটা পড়ার পর আমার মনে হয়েছিল, আচ্ছা, রাক্ষসখোক্কসরা যদি দিনের বেলায় না ঘুমোতে যেত তাহলে নীলকমলের কী হত? সে কি আজীবন ঐ ছোট্ট ঘরেই আগল দিয়ে বসে থাকত, আর লালকমল তার কমলচক্ষু লাল করে একটুও না ঘুমিয়ে অবিরাম, অবিরাম পাহারা দিয়ে যেত? টাট্টি, স্নান, ঘোড়ায় চড়া সব, সঅঅব ছেড়ে দিত চিরজন্মের জন্য? সেই অস্বস্তিকর প্রশ্নটাই ফিরে এসেছে এখন। আরও অস্বস্তিকর হয়ে, কারণ নীলকমল স্বয়ং আমি, এবং আমি জানি লালকমল কিছুতেই আমার টাট্টি পেলে সঙ্গে যাবে না, উল্টে ক্যালাবে। এদিকে সবে এক পহর রাত হতে না হতেই আমার পেটে চাপ পড়তে শুরু করেছে।

এহেন দশায় প্রশ্নটার উত্তর যদি লালকমলদা দিত তাহলে বড়ই ভালো হত। কিন্তু মুখ খুলতে গেলেই দাদা রক্তচক্ষু দেখাচ্ছেন, ভয়ের চোটে ছোটটা অবধি চেপে বসে আছি। এরপর আমি যদি উল্টোদিকে মুখ ফিরিয়ে মটকা মেরে গুগল সার্চ করি তাহলে আমাকে কি দোষ দেওয়া যায়? ভাগ্যিস লালকমলদা ফোনটা কেড়ে নেয়নি, নইলে কী হত ভাবতেও শিউরে উঠছি।

তো দেখেশুনে মনে হল আমার ভাগ্যে বিস্তর দুঃখ আছে। ভোর হলে রাক্ষুসীর ঘুমোতে যাবার কোনও ইচ্ছে নেই, হ্যাঁ তার স্পিড একটু কমে যাবে মাত্র। আগামী কয়েক বছর, হয়তো আজীবনও তার সঙ্গে আমাকে লুকোচুরি খেলেই কাটাতে হবে। রাত এলে পাহারার ভেতর, ভোর হলে নিজের মত ঘোরাফেরা করতে পারি, কিন্তু গার্ড নামানো যাবে না। অসতর্ক হলে দিনের আলোতেও সে ঘাড়ে এসে পড়তে পারে। বছরখানেক পর ভ্যাকসিন-ছাপ বর্ম এলে তবে খানিক স্বস্তি। কিন্তু তদ্দিন লালকমলদা মাসোহারা দেয় কি না, দিলেও বর্ম কেনার মত যথেষ্ট পরিমাণে দেয় কি না, বুঝতে পারছি না। করোনারাক্ষুসী তো এদিকে রাজ্য ছারেখারে পাঠাচ্ছে।

অ লালকমলদা! এসব কি সত্যি? সকালেও কি টাট্টিতে যেতে দেবে না? না কি তখন ‘চরে খা’ বলে ছেড়ে দেবে? তার আগে অন্তত রাক্ষুসীকে এড়িয়ে চলার সুলুকসন্ধানগুলো বুঝিয়ে বলো! জানি তুমি বলছিলে, অনেকবার বলেছ, কিন্তু আমি তো তখন সিরিয়াল দেখছিলুম হটস্টারে। আরেকটিবার বলো প্লিজ! আর কথা দাও ভোর হলে বাইরে যেতে দেবে। আর শোনো না, বড্ড পেচ্ছাপ পেয়েছে, একটু দাওয়া থেকে ঘুরে আসি? এ কি! লাঠি তুলেছ কেন? ও লালকমলদা….. লাল..ক…মল…দা….গো ও ও ও!

***

ফেসবুকে অনেক কিছুর বিজ্ঞাপন দেখা যায়। তার মাঝে মাস্টারক্লাসের বিজ্ঞাপন দেখলাম সেদিন। চোখ টানল নিল ডি’গ্রাস টাইসনের ছবি। যারা একটু আধটু পপুলার সায়েন্সে আগ্রহী তাদের কাছে নামটা অচেনা নয়। হটস্টারে ‘কসমস’ বলে একটা সিরিজ আছে। যারা দেখেননি সামনের কদিনে দেখে ফেলতে পারেন। তো, আমি খুঁজছিলাম কার্ল সাগানের ঐ একই নামের টিভি সিরিজটা। প্রথমে তাই একটু হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু তারপর জমে গেলাম। তিনি কোন সারির অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট তা জানা না থাকলেও প্রেজেন্টার হিসেবে যে তিনি অনবদ্য তাতে সন্দেহ নেই। কার্ল সাগানের যোগ্য উত্তরসূরি। দর্শকের মনে বিজ্ঞান নিয়ে রোমাঞ্চ আর কৌতূহল তৈরি করতে দুজনেই সমান পটু।

সেই প্রথম পরিচয়ের দিনই মনে হয়েছিল এরকম কেউ যদি ছোটবেলায় বিজ্ঞানের ক্লাস নিত! পরে ইউটিউবে টাইসনের নাম দিয়ে সার্চ করে যা পেয়েছি সব বুভুক্ষুর মত গিলেছি। আর আজ কি না সত্যিই সরাসরি টাইসনের ছাত্র হওয়ার সুযোগ! লিঙ্ক ফলো করে দেখলাম ‘সায়েন্টিফিক থিঙ্কিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন’ বিষয়ে মোট তেরোটা ভিডিও লেসন। মোট দৈর্ঘ্য ২ ঘন্টা ১৪ মিনিট। কিন্তু কত পে করতে হবে দেখেই সমস্ত আগ্রহ উবে গেল।

করোনোত্তর যুগে স্কুল-টুল বাড়তি হ্যাপা এবং সংক্রমণের গাঁট বলে বিবেচিত হতে পারে। বিল্ডিংগুলো কখনও ফ্লাড শেল্টার, কখনও কোয়ারান্টাইন ফেসিলিটি হিসেবে ব্যবহার হবে হয়তো। বোর্ডের ছাত্রসংখ্যা যতই বেশি হোক গাদাগাদা টিচার পোষার আর দরকার থাকবে না। টাইসনের মত দরকার নেই, নিজের নিজের বিষয়ে সত্যিই যারা ‘মাস্টার’, এবং যাদের ততটাই ভালো কমিউনিকেশন স্কিল, সেরকম গুটিকয় বাছাবাছা লোক থাকলেই হল। মাস্টারক্লাসের সরকারি সংস্করণ। খাতা দেখা, পরীক্ষা সবকিছুরই একটা নতুন ইকুইভ্যালেন্ট তৈরি হয়ে যাবে। ‘টুকলি’ নামক শব্দটি অতীত হয়ে যাবে, ইলেক্ট্রিক নুন মাখানো কুলের আচার আর ফুচকার ভেন্ডররা ব্যবসা হারাবে, সরস্বতী ডেস্কটপাসীন হবেন— আর আমরা অর্থাৎ মাস্টার ক্লাস, যারা এখনই নন-এসেনশিয়াল হয়ে পড়েছি, তারাও পঞ্চভূতে বিলীন হব।

ওঁ মধুবাতা ঋতায়তে/মধুক্ষরন্তি সিন্ধবঃ……।

***

প্রথমটায় খুব চাপে পড়েছিলাম। এর-ওর ওপর রেগে যাচ্ছিলাম। বিদেশ থেকে দলে দলে ফিরে আসা ভারতীয়দের বিরক্তি, কলকাতার প্রথম পেশেন্টের দু দিন ধরে ঘুরে বেড়ানো সবই রাগ তৈরি করছিল। চাপ যখন চূড়ায় তখন লকডাউন ঘোষিত হল। তারপরই মাথা ঠান্ডা হল। বুঝতে পারলুম আমি দায়মুক্ত। আমার কাজ শুধু বসে থাকা, অপেক্ষা করা। দে অলসো সার্ভ হু ওনলি স্ট্যান্ড অ্যান্ড ওয়েট। বাড়িতে সাপ বেরোলে যেমন ছোটদের বলা হত দূরে সরে যেতে এবং কোনও একজন বা দুজন খুব সাহসী লোক অস্ত্র হাতে এগিয়ে যেত, সেরকম ব্যাপার। এইসময় পেছনে দাঁড়িয়ে থাকাটাই নিয়ম ছিল। কাছে গেলে সাপ সেদিকেই ছিটকে আসে যদি? রাতে এমন কাণ্ড হলে দূর থেকে কিচ্ছু বুঝতে পারতাম না কী হচ্ছে। হ্যারিকেনের আলো, তাতে দু তিনটে বডি, তত জোড়া পা, হাত এবং হাতে ধরা লাঠির ছায়া মিলে এক দুর্বোধ্য জটাপটি পাকাত।

আর এরপর দুটো জিনিস হত। মানে দুটো একসঙ্গে হত না। আইদার অর। এক নম্বর, সেই মহাসাহসী লোকদের কোনও একজন লাঠির ডগায় মৃত সাপটিকে ঝুলিয়ে ফিরে আসত। আর দুই, মাথা চুল্কোতে চুল্কোতে তারাই এসে খবর দিত যে সাপটা কোথায় যেন পালিয়ে গেল। তখন তাদের অতটাও সাহসী লাগত না, যতটা বোকাবোকা।

তো আমি, বা আমরা, এখন সেরকমই ম্যান্ডেটরি আইসোলেশনে আছি এবং অপেক্ষা করছি কখন এই দুটোর একটা হবে। দ্বিতীয়টা হলে একটু চাপ। পালিয়ে যাওয়া সাপটা, সারাক্ষণ মনে হবে, খাটের তলায় বিড়ে পাকিয়ে বসে আছে।

***

দিনের বড় অংশটাই কর্মহীন। তার মাঝে অজস্র দৃশ্য ও শব্দ বয়ে আনে ইন্টারনেট। তাদের কিছু কিছু মাথার মধ্যে গ্রুভ কেটে বসে যায়। যেমন কোনও এক এয়ারপোর্টে একজন চিৎকার করছে শ্যুট মি, কিল মি। যেমন ঐ অতি নিরীহ প্রশ্ন, চা খাব না আমরা? খাব না চা? যেমন ধু ধু খালি সড়ক ধরে দলে দলে মানুষ হাঁটছে, তারা বাড়ি পৌঁছতে চায়……..

এবং যেমন নয়ডাতে খোলা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকা নীলগাইয়ের ঝাঁক, হরিদ্বারে বারাশিঙ্গার পাল এবং কোচি-তে অতি ধীরে ক্রসিং পেরনো মালাবার সিভেট, যেমন এক বন্ধুর মোবাইলে তোলা সুস্পষ্ট কালপুরুষ, যেমন অর্থনীতির গর্জমান এঞ্জিন থেমে যাওয়ার ফলে হঠাৎ স্পষ্ট হয়ে ওঠা পাখির ডাক, মাঠ ঝাঁপিয়ে আসা হাওয়ার শব্দ।

প্রথম সেটটা, অর্থাৎ যেটা মানুষী, সেটার কথা আপাতত তোলা থাক। মানুষ আজ দুনিয়াজুড়ে ঘরবন্দি। অ্যান্টেনার বাঁশে সূক্ষ্ম কোয়ার্টার প্যাঁচ মোড়া দিলে যেমন টিভির পর্দা জুড়ে কিলবিল করতে থাকা মৌমাছির ভিড় কমে গিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠত মধুমন্তীর মুখ, হিউম্যান নয়েজ কমে যাওয়ার ফলে ঠিক তেমনটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে না-মানুষরা।

অনেকে এর মাঝে আশার আলো দেখছেন। এটা না কি নেচার’স রেক্লামেশন। কেউ আবার পুনর্দখলের মত নরম শব্দের বদলে পুরো ব্যাপারটার মাঝে প্রকৃতির ‘প্রতিশোধ’ দেখতে পাচ্ছেন। আবার আর এক দল আছেন, খানিকটা সিনিক, তাঁরা এর মাঝে মজার খোরাক পাচ্ছেন। কাঁথির মাঠে না কি ডাইনোসর দেখা গেছে, ম্যাস্টোডনরা মার্চ করছে লেনিন সরণী দিয়ে— এরকম পোস্টও দেখছি তাই। ফলত লাল বেলুনের মত দেখতে কোটি কোটি হৃদয় এবং চোখ-কুঁচকে দাঁত ক্যালানো মুখ দুইই প্রচুর পরিমাণ ওড়াউড়ি করছে। আমি, বলা বাহুল্য, উদার হাতে দুইই বিলোচ্ছি।

সমস্যা হল একটা লেভেল ক্রসিঙের বাইরেও অনেকটা কোচি শহর পড়ে থাকে, একটা রাস্তার বাইরেও অনেকটা হরিদ্বার বা নয়ডা, এবং ফেসবুকের বাইরেও অনেকটা দুনিয়া। সেই না-দেখা টেরিটরিতে এইসব হঠাৎ দেখা মালাবার সিভেট, বারাশিঙ্গা বা নীলগাইরা আদৌ নিরাপদ তো? আমার বিশ্বাস নেচার’স রিক্লামেশন না, শহরের মাঝে ওরা ছিটকে এসেছে নিতান্তই বাফার জোনের অনুপস্থিতিতে। ওদের মাঝে যারা ফিরে যেতে পারবে, বা পেরেছে, তারা বেঁচে গেল। যারা পারেনি? তারা হয় না খেয়ে মরবে, যেমন সমস্ত সস্তার হোটেল, খাবারের দোকান বন্ধ থাকায় না খেয়ে মরার দশা হয়েছে অসংখ্য কুকুর বেড়ালের। নিয়তির কি নির্মম পরিহাস, এরা ভাইরাস সংক্রমণ না হলেও মরবে। আর তারপরেও যদি কেউ বেঁচে যায়……

লকডাউন একদিন না একদিন ফুরোবে। আবার চালু হবে অর্থনীতির এঞ্জিন। শুরু হবে মানুষী রেক্লামেশন। তারপর?

শুনেছি বারাশিঙ্গার মাংস না কি সুস্বাদু।

***

কুবুদ্ধি মানে বিচ্ছিরি কুবুদ্ধি। তাঁতির বাড়িও ছিল, ব্যাঙের বাসাও ছিল। পাশাপাশিই ছিল। তাঁতির ছানা, কোলাব্যাঙের ছানা দুজনেই খেত-দেত, তাইরে নাইরে না গান গাইত। কিন্তু একদিন তাঁতির ছেলের কুবুদ্ধি ঘটল। সে কোত্থেকে একটা লাঠি এনে কোলাব্যাঙের ছানাটিকে মারতে শুরু করল। এবং মারতে মারতে শেষে ব্যাঙটি মরে গেল।

তাঁতির ছেলের কাজের ফল তার বাবাকে হাতেনাতে পেতে হয়েছিল, অন্তত ছোটবেলায় মা-ঠাকুমার ঘুমপাড়ানি গানে সেরকমই খবর পেতাম। সে যাক, অনেক বাচ্চাকে এবং বড়দেরও এরকম অকারণে নিষ্ঠুর হতে দেখেছি। সবসময় হাতে ঝুলঝাড়ু, ভাঁড়ারে র‍্যাট কিলার থেকে জঙ্গলসাফ, লক্ষণরেখা, কালা হিট, লাল হিট— কাছে ঘেঁষে কার সাধ্য! একটা বোলতা বাসা বাঁধছে হয়তো, মাটির বাসা, একবার যায়, মুখে করে নালার পাশ থেকে ভেজা মাটির একটা এইটুকু বল নিয়ে আসে, আমাদের মুখ্যমন্ত্রীরই মত দক্ষতার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে নিপুণ একটি বৃত্ত বরাবর সেই মাটিটুকু সাজায়, আবার উড়ে যায়, আবার আসে….। যখন তার কাজ প্রায় শেষ, গম্বুজাকার কুঠরির মুখটি শুধু খোলা, সেটিকে কলসীর কানার মত সুন্দর করে মোড়া অবধি হয়ে গেছে, তখনও যদি কোনও কুবুদ্ধির চোখে পড়ে যায় তো হয়ে গেল। বেচারা বোলতা মুখে করে সবুজ পোকাটি নিয়ে এসেছিল, এসে দেখবে সব গায়েব। জানালার কাঠের ফ্রেমে শুধু একটু মাটির দাগ লেগে আছে।

‘এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’-তে মম লিখেছেন ভারতীয় পোকামাকড়দের নাকি কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই, মানুষের বাড়িঘর তারা নিজেদের বলে মনে করে। বিলেতে পোকামাকড় হয়তো নক করে ঘরে ঢোকে, কিন্তু আমাদের দেশে যে ব্যবস্থাটা সেরকম নয় তার দোষ-দায় পুরোটা না-মানুষদের ঘাড়ে চাপানো যায় না। ভারতীয় সংস্কৃতির মূলভাবটাই হল সবাইকে নিয়ে বাঁচো। জড়িয়ে-জাপটিয়ে বাঁচা— আলগোছে, চারপাশ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে বাঁচা আমাদের ধর্ম না। আর সবাই মানে সবাই। মানুষ, গরু-বাছুর, ছাগল, কুকুর, পায়রা, বোলতা— সঅঅঅব। আমরা গরুর কপালে তেল সিঁদুরের টিপ পরাই, বাঁদরকে হাত জড়ো করে নমস্কার করি, হাতির পায়ের তলায় কাঁথায় জড়ানো বাচ্চাকে শুইয়ে দিই। এরপর যদি তারা মানুষের গৃহসীমা চিনতে অস্বীকার করে, তাদের দোষ কোথায়? মম সাহেবও সেকথা বুঝেছিলেন। ঐ একই উপন্যাসে এক পাদ্রি আর কিছু চাষাভুষার (দলিতও কি? মনে পড়ছে না) কথোপকথন আছে। পাদ্রি বোঝাচ্ছেন যীশু এত মহান যে তিনি শুধু বড়লোকদের কুক্ষিগত নন, সবার তাঁর করুণার সমান ভাগিদার। সবাই স্বর্গে যাবে তাঁর শরণ নিলে। এ কথা শুনে উৎসাহী শ্রোতারা বলে উঠল, আমাদেরও জায়গা হবে সেই স্বর্গে, অ্যাঁ? হবে জায়গা আমাদের? পাদ্রির মুখে চওড়া হাসি ফুটল। অবশ্যই হবে, বাপধনেরা। আর, আর, আমাদের গরু-ছাগলদেরও হবে জায়গা? স্বর্গে? এবার পাদ্রি কিঞ্চিত ফাঁপরে পড়লেন, তবু আমতা আমতা করে বললেন, হ্যাঁ, তাদেরও জায়গা হবে। আরও উৎসাহ পেয়ে শ্রোতাদের একজন বলল, আর কুকুর? কুকুররাও আঁটবে তো সেখানে? পাদ্রির মুখ এতক্ষণে শুকিয়ে গেছে। যে স্বর্গে ফুটফুটে গোলাপি এঞ্জেলরা ধপধপে সাদা রোব পরে উড়ে বেড়ায় সেই হসপিটালের মত অ্যাসেপ্টিক স্বর্গে কুকুর! এদিকে পালাবারও উপায় নেই। নিজেদের স্বর্গটা নেটিভদের স্বর্গের থেকে পুঁচকে প্রমাণিত হবে, এটাও তো মানা যায় না। তাঁর মাথা একটু হ্যাঁয়ের মত কাৎ হয়েছে কি হয়নি আরেক শ্রোতা প্রশ্ন করল— বাঁদর? ছাগল? শুঁয়োপোকা-বোলতা? এদের জায়গা হবে না?

কিন্তু সে মমও নেই, সে অযোধ্যাও নেই। এখন আমরা নিজেদের এলাকা বুঝে নেওয়ার ব্যাপারে পাশ্চাত্যের মতই জঙ্গি মনোভাব নিয়ে থাকি। গ্রামে গঞ্জেও খই ফোটার মত বাক্সপানা বাড়ি উঠছে। সেখানে পায়রাদের বাসা করার ব্যবস্থা তো দূরস্থান, দেয়ালে টিকটিকি অবধি টিকতে পায় না। রাত্রিবেলা মদ খেয়ে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তার কুকুর চিৎকার করলে পরের দিন চাটের মাংসের থেকে একটু বাঁচিয়ে বিষ মিশিয়ে সেই কুকুরের মুখের সামনে ছুঁড়ে দেয় লোকজন। জ্যোতিবাবু নাকি ঘুমের ব্যাঘাত হত বলে সেন্ট্রাল পার্কের শেয়ালদের পেছনে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছিলেন।

মোট কথা, নিজেদের টেরিটরি নিয়ে আমরা ভাদ্রমাসের পুরুষ কুকুরদের থেকেও বেশি সচেতন। এবং সেই টেরিটরির সীমা কতটা সেটাও আজকাল আমরাই ঠিক করে থাকি। আমাদের ইচ্ছেমত পুকুর বুজে যায়, ফলন্ত গাছ কাটা পড়ে, জঙ্গল কে জঙ্গল সাফ করে রাস্তা তৈরি হয়। কলেজে পড়ার সময় এসএফআইয়ের নেতা, কলেজের জিএস, থার্ড ইয়ারের সংগ্রামদা হোস্টেলে আমাদের রুমে ঢুকে সোজা টেবিলের ওপর বসে বিড়ি ধরাত। অ্যাশট্রে এগিয়ে দিলে বলত, ধুস। বড়মাপের লোকের জন্য বড়মাপের অ্যাশট্রে লাগে। পুরো মেঝেটাই আমার অ্যাশট্রে। আমাদের অবস্থা হয়েছে সেরকম। হাত পা ছড়াতে ছড়াতে একেকজন জ্যান্ত বামনাবতার হয়ে গেছি— একটি পায়েই ত্রিভুবন ঢেকে যায় এমন অবস্থা। আমরাই শুধু আছি এবং থাকব, বাকি আর কারও দরকার নেই।

এই লকডাউন একরকমের বন্দিত্ব। বাড়ির যে চৌহদ্দিকে এতদিন নিজের রাজধানী বলে জানতেন সেটাই এখন জেলখানা। না, জেলখানার বাইরে থেকে ভেতরে কেউ ঢুকতে পারে না চট করে। কয়েদিরা নিরাপদে ঘুমোয়। আপনি-আমি কিন্তু ঘুমের মধ্যেও সংক্রমণের ভয় পাচ্ছি। একবার বাইরে বেরোতে হলেই ভয়। এই বুঝি সে এল, এই বুঝি আপনার পিপিই, স্যানিটাইজার স্প্রে, বেড়া, দেয়াল দিয়ে গড়া যাবতীয় প্রতিরক্ষা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল।

কাকে ভয় পাচ্ছি আমরা? মৃত্যুকে না জীবনকে? কতদিন বাঁচবেন এভাবে? এড়িয়ে এড়িয়ে? অনন্তকাল কি আর ড্রিবল করে চলা যায়?

শুধরোবার সুযোগ একটা এসেছে। ভয়ে ভয়ে না বেঁচে ভালোবেসে বাঁচার। প্রশ্ন হল, সুযোগটা আমরা কাজে লাগাব তো?

কুবুদ্ধি নাতির ছেলের সুবুদ্ধি হবে কি না সময়ই প্রমাণ করবে।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4887 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...