সোমদেব ঘোষ
১৫ আগস্ট ২০২২ আর ১ অক্টোবর ১৯৬৪। আপাতদৃষ্টিতে এই তারিখগুলোর মধ্যে কোনও মিল নেই।
তাই কি?
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাক।
প্রথম তারিখটা অবশ্য ভবিষ্যতের। স্বাধীন ভারতবর্ষের ৭৫তম জন্মদিন, ডাবল প্ল্যাটিনাম জুবিলি [[প্রাটী_জুবিলি]]। দ্বিতীয়টায় আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কলেতে ছাত্রদের “ফ্রী স্পীচ মুভমেন্ট” শুরু হয়েছিল। ষাটের দশকের মার্কিনমুলুকের #হোককলরব বলতে পারেন। হ্যাঁ, এর ঠিক দশ দিন বাদে, ১০ অক্টোবর, জাপানের টোকিয়োতে অলিম্পিক গেমস শুরু হয়েছিল বটে। এ ছাড়া সে বছরের পয়লা অক্টোবর আর বিশেষ কিছু ঘটেছিল কি?
ঘটেছিল বৈকি। জাপানেই ঘটেছিল। একটা নতুন ট্রেন লাইনের উদ্বোধন হয়েছিল।
নতুন ট্রেন লাইনের উদ্বোধন হামেশাই হয়ে থাকে। এই তো, গত জুলাই মাসেই, এক্স-রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু বলেছিলেন কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতবর্ষে ১৬,৫০০ কিমি রেললাইন ডাবল ও ট্রিপল করা হবে। মানে যা আছে তার পাশাপাশি সমান্তরালভাবে নতুন ভাইবোন লাইন পাতা হবে। সংখ্যাটা বেশ বড়। ভারতে বৈদ্যুতিন রেললাইনের মোট দৈর্ঘ্য ২৩,৫৫৫ কিমি [[প্রাটী_বৈদ্যুতিক]]। তার প্রায় ৭৫% লাইনে নতুন লাইন বসানো মানে কম কথা নয়। কিন্তু তা বলে খুব একটা ঐতিহাসিক কিছু নয়। জাপানে সেই পয়লা অক্টোবর যা ঘটেছিল তা কিন্তু ঐতিহাসিক।
১৮৬৭ সাল অবধি জাপানের সঙ্গে বাকি বিশ্বের সংযোগ ছিল খুবই সামান্য। সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার জন্য জাপানই দায়ী। সুফল হিসাবে জাপান কখনওই ইওরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কলোনি হয়ে ওঠেনি। চিরকাল স্বাধীন থেকেছে। কুফলও ছিল। আধুনিক জাপানের দুই বড় শহর টোকিয়ো আর ওসাকার মধ্যে দূরত্ব ৫১৫ কিমি, ১৮৬৭ সালে সেই পথ অতিক্রম করতে সময় লাগত কম-সে-কম সতেরো দিন।
১৮৬৮ সালে পনের বছর বয়সী সম্রাট মেইজি ক্রাইস্যান্থিমাম সিংহাসনে বসেন। ১৮৬৯ সালে প্রথম টেলিগ্রাফ লাইন বসে, ১৮৭২ সালে সমুদ্রের তলায় নাগাসাকি-সাংহাই কেবল্ বসে, বাইরের বিশ্বের টেলিগ্রাফ নেটওয়ার্কের সঙ্গে জাপানও যুক্ত হয়। ১৮৭৭ সালে জাপানে প্রথম টেলিফোন আসে। এদিকে টেলিফোন আবিষ্কারই হয়েছে এর মাত্র ছ’বছর আগে, আবিষ্কর্তা ইতালির আন্তোনিও মেউচ্চি (না, গ্রাহাম বেল নন)। এই মেইজি যুগ থেকেই জাপানে গতির উপাসনা শুরু। তারই ক্লাইম্যাক্স ১ অক্টোবর ১৯৬৪ সালে। টোকিয়ো আর ওসাকার মধ্যে টোকাইডো লাইন। পয়লা তারিখের আগে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগত ছ’ঘণ্টা। পয়লা তারিখের পর তা অর্ধেক হয়ে দাঁড়াল তিন ঘণ্টায়। এর জন্য দায়ী শিনকানসেন। জাপানী ভাষায় “নতুন ট্রাঙ্ক লাইন”। ডাকনাম বুলেট ট্রেন।
১৯৪০ সাল নাগাদ জাপানের রেল নেটওয়ার্ক রীতিমতো ভাল ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তার বারোটা বেজে যায়। যুদ্ধ শেষে রেল পুনরায় গড়ে তোলার কাজ পুরোদমে শুরু হলেও হাইওয়ে ও এরোপ্লেনই যে পরিবহনের ভবিষ্যৎ, এবং রেলের দিন যে ঘনিয়ে আসছে, এমন একটা ভাবনা বাকি বিশ্বের মতো জাপানেও ভাবা শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ সত্ত্বেও বুলেট ট্রেনের জন্ম যে হল, এবং তা যে পরপর ফ্রান্স চীন ইত্যাদি দেশে ছড়িয়ে পড়ল, তার জন্য দায়ী মূলত দু’জন। জাপান জাতীয় রেলওয়ে (JNR) সংস্থার চীফ ইঞ্জিনীয়ার হিদেও শিমা ও প্রেসিডেন্ট শিঞ্জি শোগো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং হিরোশিমা-নাগাসাকির পর জাপানের অর্থনীতির অবস্থা ভাল নয়। হাইস্পীড ট্রেন তখনও ভীষণভাবেই পরীক্ষামূলক প্রযুক্তি। খরচ কত পড়বে, সে টাকা আসবে কোত্থেকে? আড়াইশো থেকে তিনশো কিমি গতিতে ট্রেন চালালে অ্যাক্সিডেন্ট যে হবে না, এর গ্যারান্টী কি শিমা-সান বা শোগো-সামা দিতে পারবেন?
বাঁদিকে টোকিয়ো অার ওসাকার শিনকানসেন টোকাইডো লাইন উদ্বোধন হচ্ছে (১লা অক্টোবর ১৯৬৪)। ডানদিকে টোকিয়ো স্টেশন থেকে বেরিয়ে বুলেটট্রেন য়ুরাকুচোর নিচিগেকি থিয়েটারের পাশ দিয়ে যাচ্ছে (২১ ডিসেম্বর ১৯৬৪)
পারলেন বৈকি। শোগো দেখালেন, পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকে জাপান রেলওয়ের “সেফটি ফার্স্ট” প্রকল্প অত্যন্ত সফল, বুলেটগতিতে ট্রেন চললেও তা চালানো হয় অত্যন্ত সাবধানে। বাজেট প্রোপোজালে তাঁরা বললেন, শিনকানসেনের জন্য লাগবে ২০০ বিলিয়ন বা ২০,০০০ কোটি ইয়েন। এর মধ্যে ৮০ মিলিয়ন বা ৮ কোটি মার্কিন ডলার দেবে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক, সফট লোন হিসাবে। সফট লোনে বার্ষিক সুদের হার খুবই কম, আর ১৯৬০ সালে ৮ কোটি মার্কিন ডলার মানে প্রায় ২৯ বিলিয়ন ইয়েন। জাপান সরকার রাজি হল, ১৯৫৯ সালের এপ্রিল মাসে শিনকানসেন তৈরি শুরু হল। তৈরি হওয়ার পরে দেখা গেল, ২০,০০০ কোটি ইয়েনে তো হবেই না, পুরো প্রজেক্ট শেষ করতে লাগবে তার দ্বিগুণ টাকা। এটা শোগো-শিমার কারসাজি, ৪০,০০০ কোটি ইয়েন লাগবে বললে তারা কখনওই সবুজ সঙ্কেত পেতেন না। জাপান রেলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুবাদে শোগো বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে টাকা ডাইভার্ট করে শিনকানসেন প্রজেক্ট চালু রাখেন। ১৯৬৩ সালে সবকিছু জানাজানি হওয়ার পর শোগো এবং শিমা, দু’জনেই পদত্যাগ করেন। বুলেট ট্রেনকে আটকে রাখা গেল না যদিও। ১৯৬৪ সালে সে ঠিক সময়মতো চালু হল। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের লোনও ১৯৮২ সালের মধ্যে শোধ হয়ে গেল। শোগো এবং শিমা বাজেট নিয়ে কারচুপি করলেও সুরক্ষা নিয়ে একবিন্দু আপস করেননি। টোকাইডো লাইনে প্রথম ট্রেন চালু হওয়ার পর প্রায় ৫৩ বছর কেটে গেছে, শিনকানসেন নেটওয়ার্কের রুট লেংথ বাড়তে বাড়তে এখন প্রায় ৩০০০ কিমি ছুঁয়েছে, বছরে ৩৫ কোটি মানুষ এতে চাপেন, এত কিছু সত্ত্বেও এত বছরে লাইন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ঠিক ০ জনের।
হ্যাঁ। ভুল পড়েননি। শূন্য। জিরো। জাপানীরা সেফটি জানে।
তুলনামূলকভাবে ভারতবর্ষে শুধু ২০১৭ সালেই রেল দুর্ঘটনায় ৬৪ জন মারা গেছেন, প্রায় ৩০০ জন আহত হয়েছেন। ভারতে রেলের সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ১৬০ কিমি (গতিমান এক্সপ্রেস, দিল্লী-আগ্রা), যেখানে জাপানের শিনকানসেন শুরুই হয় ঘন্টায় ২৫০ কিমি থেকে। [[প্রাটী_ভারতজাপান]]
বাঘের কথায় পরে আসছি। আগে ড্রাগন কী করছে একটু দেখে নিই।
১৯৯৩ সালে চীনদেশে ট্রেনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় মাত্র ৪৮ কিমি। ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ অবধি ছ’টা ধাপে “স্পীড-আপ” ক্যাম্পেনের ফলে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ঘন্টায় ৭০ কিমি। সর্বোচ্চ গতি হয় ঘন্টায় ২৫০ কিমি, চীনদেশ হাইস্পীড রেল ক্লাবে এন্ট্রি পায়। দুঃখের বিষয়, এর চার বছরের মধ্যেই, ২৩ জুলাই ২০১১ তারিখে ঝেজিয়াঙ প্রদেশের ওয়েনজাউতে হাইস্পীড রেলে দুর্ঘটনায় ৪০ জন মারা যান, ১৯২ জন আহত হন। এরপর নতুন প্রজেক্ট থামিয়ে চালু লাইনে সুরক্ষার অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর কয়েক মাস আগেই রেলমন্ত্রী লিউ ঝিজুন, যিনি চৈনিক হাইস্পীড রেলের মুখ্য সমর্থক এবং হোতা, ঘুষ নেওয়ার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন এবং পদ থেকে অপসারিত হন। একই অপরাধে ২০১১ সালেই রেলমন্ত্রকের আরেক উচ্চপদস্থ আধিকারিক ঝাং শুগুয়াংয়ের একই দশা হয়।
চীনের ওয়েনজাউতে হাইস্পীড রেল দুর্ঘটনা (২৩ জুলাই ২০১১)। মুখোমুখি দু’টো ট্রেনের সংঘর্ষে ৪০ জন প্রাণ হারান, ১৯২ জন অাহত হন
এত বিপত্তি সত্ত্বেও চীনা হাইস্পীড রেল এখন বিশ্বের বৃহত্তম। বছরে ৩৭ কোটি যাত্রী চলাচল করে এই রেলে। তুলনায় শিনকানসেনে বছরে ৩৫ কোটি যাত্রী চলাচল করে। মোট রুট লেংথ ২২,০০০ কিমি, সমস্ত বিশ্বের হাইস্পীড রেলের তিনভাগের দু’ভাগ!
চীনে হাইস্পীড রেল আর জাপানের শিনকানসেন চালু হওয়ার সময় রেলপ্রযুক্তিতে টাকা ঢালা উচিত কিনা, সে নিয়ে দু’দেশেই প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। রেলের মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী দুই, বিমান ও হাইওয়ে। ২০০০ সালে পৃথিবীতে সমস্ত হাইস্পীড রেলে বছরে ৪৩.৫ কোটি মানুষ চলাচল করত। তুলনায় বিমানে যাতায়াত করত ১৬৭.৪ কোটি। ২০১৬ সালে বিমানে যাতায়াত দ্বিগুণের বেশি হয়েছে, ৩৬৫ কোটি মানুষ। আর হাইস্পীড রেলে সেটা পাঁচগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৭ কোটি! রেল, বিশেষ করে হাইস্পীড রেল লুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা এখন শূন্য। বরং বিমানযাত্রা এখন কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে।
ইওরোপেও হাইস্পীড রেল আছে বৈকি। ফ্রান্সের তেজেভে (TGV) বিশ্ববিখ্যাত। এ ছাড়াও জার্মানীর ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস (ICE) আছে, স্পেনের আভে (AVE) আছে। এমনকী বৃটেনেরও ইউরোস্টার আছে। কিন্তু এদের ছেড়ে আমরা নিজের দেশে ফিরে আসি। আসুন, ভারতবর্ষে হাইস্পীড রেলের বর্তমান, ভূত, এবং ভবিষ্যৎ একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।
২০০৯-১০ সাল নাগাদ দূরদর্শনে একটা প্যানেল আলোচনা বসেছিল। বিষয় ছিল ভারতীয় রেলের ভবিষ্যৎ। যদ্দুর মনে পড়ে পাঁচজন প্যানেলিস্ট ছিলেন। রেলমন্ত্রকের আধিকারিক, রেল বিষয়ক ঐতিহাসিক, প্রযুক্তিগত এক্সপার্ট ছাড়াও একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক ছিলেন। চীনের হাইস্পীড রেলের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে ইনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে আট থেকে দশ বছরের মধ্যে ভারতবর্ষও হাইস্পীড রেল নির্মাণ করা শুরু করে দেবে, আর খুব বেশি হলে ২০২৫ সালের মধ্যে এ’দেশে বুলেটরেল চালু হয়ে যাবে। কেবল্ টিভি আসার পর থেকে দূরদর্শন প্রায় কেউ দেখেই না। আমারও চোখে পড়ত না, যদি না আলাদা করে খবর পেতাম। সাংবাদিক ভদ্রলোকের নাম অরবিন্দ ঘোষ। দিল্লীর বাসিন্দা, পন্ডিচেরীর নন। ভারতীয় রেলের ব্যাপারটা ভালোই বুঝতেন। ভবিষ্যদ্বাণীও ফলতে যাচ্ছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গত হপ্তায় এসে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গেছেন। লাইন তৈরীর কাজ ইতিমধ্যে শুরুও হয়ে গেছে। শেষ হওয়ার সময়সীমা শিনকানসেনের মতোই, পাঁচ বছর। স্বাধীন ভারতের ডাবল প্ল্যাটিনাম জুবিলির দিন, ১৫ আগস্ট ২০২২ সালে মুম্বই-আমেদাবাদ লাইনে হাইস্পীড রেল চালু হতে যাচ্ছে। যাকে বলে রেড লেটার ডে।
বাঁদিকে উপরে : জাপানসম্রাট মেইজি (রাজত্বকাল ১৮৬৭-১৯১২)। ডানদিকে উপরে : জাপানরেলের প্রেসিডেন্ট শিঞ্জি শোগো (১৮৮৪-১৯৮১, ১৯৬৩ সালে পদত্যাগ করেন)। বাঁদিকে নীচে : জাপানরেলের প্রধান ইঞ্জিনীয়ার হিদেও শিমা (১৯০১-১৯৯৮, ১৯৬৩ সালে পদত্যাগ করেন)। ডানদিকে নীচে : ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক ও রেলবিশেষজ্ঞ অরবিন্দ ঘোষ (১৯৩২-২০১৪)
খুবই আনন্দের কথা, সন্দেহ নেই। নিজের দেশের উন্নয়ন সবাই চায়। কিন্তু উন্নয়ন তো আর “ফ্রী অফ কস্ট” আসে না। ৫০৮ কিমি লম্বা এই লাইন তৈরি হতে খরচা পড়বে ১৭০০ কোটি ডলার বা ১.১ লাখ কোটি টাকা। জাপানকে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক সফট লোন (কম সুদে) দিয়েছিল। ভারতকে জাপান লোন দেবে। বিশ্বব্যাঙ্ক পুরো খরচার ১৫% দিয়েছিল জাপানকে, জাপান ভারতকে দেবে ৮০%, ৮৮০০০ কোটি টাকা। এখনকার এক্সচেঞ্জ হারে প্রায় ১.৫৪ লাখ কোটি ইয়েন। লোন শোধ করার সময়সীমা ৫০ বছর, সুদের হার ০.১% (সফট লোন), টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হবে পনেরো বছর পর থেকে। অর্থাৎ বেশ লোভনীয় ব্যাপারস্যাপার। হাতে চাঁদ পাওয়া, উইনিং লটারির টিকিট কুড়িয়ে পাওয়া, প্যান্টের পকেটে বা ওয়ালেটের কোণে তিন বছরের পুরনো দশ টাকার নোট, বা ফাউ ফুচকা পাওয়ার মতো ব্যাপার। অন্তত রাজনীতিকদের বক্তৃতা শুনেটুনে লোকের মনে সেই ধারণা হতেই পারে।
বাঁদিকে ভারতের প্রথম ট্রেন (১৬ এপ্রিল ১৮৫৩), বম্বে-থানে ২১ মাইল পথ। ডানদিকে ভারতের প্রথম বৈদ্যুতিন ট্রেন (৩ ফেব্রুয়ারী ১৯২৫), বম্বে ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস – কুরলা হারবার, ১৫০০ ভোল্ট ডিসি
আজ্ঞে না স্যার। জীবনে কোনওকিছুই “ফ্রী অফ কস্ট” নয়। জিওপলিটিক্স (Geopolitics, Jiopolitics নয়) বা বিশ্ববাণিজ্যে “বিনামূল্য” বলে কিছু হয় না।
প্রথমত, জাপান টাকা ঢালছে বটে, কিন্তু তা ধার হিসাবে। ভারতের খরচা হবে শেষমেশ ওই ১.১ লাখ কোটি টাকাই। হ্যাঁ, পঞ্চাশ বছর ধরে টাকা ফেরত দেওয়ার একটা সুবিধা আছে বটে। এখন ১০০ টাকার যা দাম, দশ বছর পরে তারই দাম গিয়ে ঠেকবে ৭৫ টাকায়। অর্থাৎ এখন, মানে ২০১৭ সালে যদি কোনও কিছুর দাম ৭৫ টাকা হয় (ধরুন ২০০ গ্রামের কোলগেটের টুথপেস্ট), তাহলে ২০২৭ সালে সেই একই টুথপেস্ট কিনতে আপনার ১০০ টাকা গচ্ছা যাবে। এর নাম ইনফ্লেশান, মুদ্রাস্ফীতি। আমি এক্ষুণি যে অঙ্কটা কষলাম তাতে আমি ৩% মুদ্রাস্ফীতির হার ধরেছি। কমই ধরেছি। বর্তমানে ভারতবর্ষে মুদ্রাস্ফীতির হার ১.৯% হলেও গত কুড়ি বছরে গড় মুদ্রাস্ফীতির হার হবে ৬.৬৮% [[প্রাটী_ইনফ্লেশান]]।
যাই হোক, ৩% ধরেই এগোনো যাক। আঁক কষতে সুবিধে হবে।
১.১ লাখ কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে। সুখের বিষয়, ফেরত দেওয়া শুরু হবে ২০৩২ থেকে। পনেরো বছর বাদে, ৩% হারে এই টাকার বেড়ে দাঁড়াত ১.৭১ লাখ কোটি টাকায়। কিন্তু তার বদলে ফেরত দিতে হবে মাত্র ১.১ লাখ কোটি টাকা। যার দাম ২০১৭ সালের পরিমাপে মাত্র ৭১০০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৩৬% ডিস্কাউন্ট! যত সময় যাবে তত এই ডিস্কাউন্টের পরিমাণ বাড়তে থাকবে। রাজনীতিকরা কি সত্যিই এই একবার ঠিকঠাক কথা বললেন?
আজ্ঞে না স্যার। সেদিন এখনও দূর অস্ত।
হ্যাঁ, হিসেবটা টাকার অঙ্কে হলে একদম ঠিকঠাক হত। কিন্তু জাপানের মুদ্রা হল ইয়েন। অর্থাৎ ভারতকে ১.১ লাখ কোটি টাকা নয়, ১.৫৪ লাখ কোটি ইয়েন ফেরত দিতে হবে।
আপনি হয়ত মন্দার বোস স্টাইলে বলবেন, লে হালুয়া, তাতে কী? হিসেব তো একই থাকবে।
আজ্ঞে না।
গত কুড়ি বছরে জাপানের গড় মুদ্রাস্ফীতির হার হল ০.১২%। হ্যাঁ, মানে প্রায় শূন্য। জাপানে টুথপেস্টের দাম বাড়ে না। অর্থাৎ পনেরো বছর পরে যখন টাকা শোধ হওয়া শুরু হবে, তখন ভারতকে দিতে হবে ২০১৭ সালের পরিমাপে ১.৫১ লাখ কোটি ইয়েন। বর্তমান এক্সচেঞ্জ হারে যেটা ৮৬০০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ডিস্কাউন্ট নেই বললেই চলে।
তার মানে লাভও নেই, কিন্তু লোকসানও তেমন নেই, তাই না?
আজ্ঞে না।
হিসাবে ভুল আছে। বর্তমান এক্সচেঞ্জ হার বসালে তো ভুল, নিতে হবে ২০৩২ সালের এক্সচেঞ্জ হার। এখন ১০০ টাকায় ১৭৫ ইয়েন, তখন সেটা দাঁড়াবে ১০০ টাকায় ১১৫ ইয়েন। ১.৫৪ লাখ কোটি ইয়েন তখন হবে ১.৩৪ লাখ কোটি টাকা। ডিস্কাউন্ট তো গায়েব হলই, উল্টে খরচা বেড়ে যাবে। আর মনে রাখতে হবে, এ সমস্ত হিসাব ৩% হারে। ৬.৬৮% ধরলে কেস জন্ডিস।
নিজের দেশের উন্নয়ন হোক, সেটা আমরা সবাই চাই। কিন্তু তাতে করদাতাদের, বিশেষ করে ভবিষ্যতের করদাতাদের ওপর এতটা ভার চাপালে তো মুশকিল। পার ক্যাপিটা জিডিপি, মানে আদপে বছরে কে কত ডলার রোজগার করে, সেই হিসাবে জাপান প্রায় ৩৯,০০০ ডলার, ফ্রান্স ও জার্মানিও সেইরকমই, চীন ৮০০০ ডলার। ভারত? বছরে ১৭০৯ ডলার, বা মাসে ৯২৫০ টাকা। এদিকে ভারতের গুলিরেলে চাপার খরচ হবে প্রতি যাত্রায় ৩-৫ হাজার টাকা। মাসিক পার ক্যাপিটা জিডিপির ৫০%।
আচ্ছা, না হয় মানলাম, গুলিরেল শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা টাকা দিতে সমর্থ। তা হলেও, মুম্বই-আমেদাবাদ দূরত্ব অতিক্রম করতে গুলিরেল নেবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময়। তুলনায় প্লেন নেয় এক থেকে সোয়া এক ঘণ্টা সময়। দাম পড়ে দেড় হাজার টাকা। অর্থাৎ প্লেনে গুলিরেলের ডবল স্পীডে অর্ধেক খরচায় একই দূরত্ব অতিক্রম করা যায়। তফাতটা অবশ্য গতিতে নয়, ক্যাপাসিটিতে। গুলিরেলে ট্রেনপ্রতি ৭৫০ যাত্রী, দিনে ৩৬০০০ যাত্রী। সেদিক থেকে গুলিরেলের অ্যাডভান্টেজ আছে, সন্দেহ নেই।
হাইস্পীড রেল যাত্রীসংখ্যায় এখন বিমানের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, ভারতের গুলিরেলেও হয়ত ভবিষ্যতে সেই দিন আসবে। কিন্তু তাতে লাভ কতটা হবে? ১৯৬৪ সালে টোকিয়ো থেকে ওসাকা যেতে হলে সময় লাগত ছ’ঘণ্টা চল্লিশ মিনিট। মানে হয় ওভারনাইট, নয় পুরো দিন নষ্ট। শিনকানসেন চালু হওয়ার পর থেকে সে সময় অর্ধেক হয়ে গেল, ভোরে বেরিয়ে সকাল দশটার মধ্যে অন্য শহরে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হল, অফিস আওয়ার্স নষ্ট হল না। শিনকানসেন জাপানের সমাজ অর্থনীতিতে বেশ বড় একটা পরিবর্তনের ঢেউ এনেছিল। যা পরে আশির দশকে জাপানকে ইকনমিক পাওয়ারহাউস হতে সাহায্য করে। চীনেও হাইস্পীড রেলের প্রায় একই ভূমিকা রয়েছে। ভারতেও কি একই জোয়ার আসবে?
আসাটা সহজ নয়। মোটে সহজ নয়। যে দেশে ভয়াবহ বন্যায় কোটি কোটি লোক ঘরছাড়া হয়, মাসে একটা করে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে দেশের বেশিরভাগ মানুষ বিপিএল লাইনের নীচে বসবাস করে, সেখানে সাহসী সরকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া কি মানায়? মানাতো হয়ত, যদি এই সরকার নতুন হত, বা তাদের ভাল একটা ট্র্যাক রেকর্ড থাকত। তার বদলে আছে নোটবন্দী, যা এখনও দেশের অর্থনীতিকে বন্দী করে রেখেছে। আর আছে জিএসটি, যার ফল কী হবে সেটা পরের আরবিআই রিপোর্টেই বোঝা যাবে, ঠিক যেমন নোটবন্দীতে গিয়েছিল। এহেন অবস্থায় লাখ কোটি টাকার গুলিরেল কি একটু বাড়াবাড়িই নয়? মঙ্গলে একটা ছোট যন্ত্র পাঠানো আর ঘণ্টায় ২৫০ কিমি বেগে ৫০৮ কিমি রাস্তা ৭৫০ মানুষের প্রাণ হাতে করে ট্রেন চালানো প্রযুক্তিগত দিক থেকে সমান হলেও হতে পারে, প্রাণের দামে রেশিও ইনফিনিটি।
তাও। তাও, ইচ্ছে তো করে ক্রিকেট দলের মতো অন্যান্য সত্যিকারের দরকারী ক্ষেত্রে দেশকে জগৎসভার শ্রেষ্ঠ আসনে দেখতে। যতই সরকারের সমালোচনা হোক, সাচ্চা দেশবাসী হয়ে এরকম একটা সৎ কাজের কি সমর্থন করা কি উচিত নয়? এমন কাজ যা সত্যিই দেশের দশের উপকারে আসবে?
সৎ? তাই বুঝি?
অনেক বকবক করেছি। গুলিরেলের প্রধান হোতা এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী শ্রীনরেন্দ্রমোদী মহাশয় নিজে গুলিরেল সম্পর্কে কী ভাবতেন শোনা যাক। সালটা ২০১৩, ব্যবসায়ীদের একটা মিটিং-এ শ্রী মোদী :
“…তো আমি প্রধানমন্ত্রীকে (মনমোহন সিং) বললাম, চীনের মতো আমাদেরও গোটা বিশ্বের সামনে আমাদের শক্তি দেখানোর জন্য কিছু একটা করা উচিত। আমেদাবাদ-মুম্বই হাইস্পীড বুলেট ট্রেন চালু করে দিন। তাতে দুনিয়া আমাদের তাকত বুঝবে। ট্রেনে কেউ চাপবে-টাপবে না, সে চিন্তা নেই। কিন্তু এসব করতে হয়, বুঝলেন তো মশাই হেঁহেঁ।”
গুলিরেল না বলে বোধহয় গুলরেল বলাটাই ভাল। কী বলেন, হেঁহেঁ?
হেডারের ছবি:
অাপেল ফুঁড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে হাইস্পীড বুলেট এবং বুলেটট্রেন। বাঁদিকের ছবিটা ঐতিহাসিক, ১৯৬৪ সালে প্রথম হাইস্পীড ক্যামেরায় তোলা বুলেটের ছবি। একই সালে শুরু হয় জাপানের বুলেট ট্রেন। [সূত্র : https://americanart.si.edu/artwork/bullet-through-apple-32694https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/c/c8/Shinkansen_tokyo.jpg]
প্রান্তটীকা:
[[প্রাটী_জুবিলি]] : জুবিলি। সিলভার : ২৫ বছর। রুবি : ৪০ বছর। গোল্ডেন : ৫০ বছর। ডায়মন্ড : ৬০ বছর। স্যাফায়ার : ৬৫ বছর। প্ল্যাটিনাম : ৭০ বছর। ডাবল প্ল্যাটিনাম : ৭৫ বছর।
[[প্রাটী_বৈদ্যুতিক]] : এই নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে একটা অদ্ভুত তথ্য পেলাম। ভারতবর্ষে রেললাইনের মোট দৈর্ঘ্য ৬৬,৬৮৭ কিমি। এটা রুট লেংথ, অর্থাৎ কলকাতা দিল্লীর রুটে যদি দুটো কি তিনটে লাইনও থাকে, তাহলেও দূরত্ব মাপা হবে সেই সাড়ে চোদ্দশো কিমি-ই। ট্র্যাক লেংথ, মানে সবকিছু মিলিয়ে ধরলে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৯,৬৩০ কিমি-এ। ২৩,৫৫৫ কিমি যে বৈদ্যুতিন, সেটা রুট লেংথ। অর্থাৎ ভারতের রেলের ৩৫% বৈদ্যুতিন। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রুট লেংথ ২৫০,০০০ কিমি, যার মধ্যে মাত্র ৩৫,০০০ কিমি প্যাসেঞ্জারদের জন্য, বাকিটা মালগাড়ির জন্য। এর মধ্যে বৈদ্যুতিন লাইনের দৈর্ঘ্য? ১,৬০০ কিমি! না, ভুল পড়েননি। মাত্র ১,৬০০ কিমি। মোট লাইনের ০.৬৪%। এরকম কেন তা নিয়ে পরে লিখব।
[[প্রাটী_ভারতজাপান]] : হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ভারতে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি মানুষ রেল চাপেন, জাপানের শিনকানসেনের ২৩ গুণ। কিন্তু ভারতের জনসংখ্যা জাপানের ১০ গুণ (১২৭ মিলিয়ন আর ১৩২০ মিলিয়ন), তাই সেদিক থেকে রেলজনসংখ্যার রেশিওটা কমে দাঁড়ায় ২.৩। মৃতের রেশিও কিন্তু ইনফিনিটি।
[[প্রাটী_ইনফ্লেশান]] : ১৯৯৭ সালে গড় হার ছিল ১৩.১৭%। ২০১৬ সালে ৪.৯৭ %। ১৯৯৮ থেকে ২০১৭, প্রতি বছরের গড় হার নিয়ে তার গড় নিলে ৬.৬৮% সংখ্যাটা পাওয়া যায়। অবশ্য ২০১৭-র ১.৯০% এখানে আনা ভুল, কেননা বছরটা শেষ হয়নি। বাদ দিলে গড় বেড়ে দাঁড়ায় ৬.৯৭%। এর স্ট্যান্ডার্ড ডিভিয়েশন ৩.১৩%, সুতরাং আসলে রেঞ্জ হল ৩.৫৫% থেকে ৯.৮১%। অত চিন্তা না করে ৩% নেওয়াই ভাল।
তথ্যসূত্র :
(1) The Japanese Shinkansen : Catalyst for the Renaissance of Rail :http://journals.sagepub.com/doi/abs/10.7227/TJTH.24.2.6?journalCode=jthc
(2) Berkeley Free Speech Movement : https://en.wikipedia.org/wiki/Free_Speech_Movement
(3) Indian Railways Route Length : http://www.indianrailways.gov.in/railwayboard/uploads/directorate/stat_econ/IRSP_2015-16/Year_Book_Eng/9.pdf
(4) Indian Railways percentage electrified : http://www.indianrailways.gov.in/railwayboard/uploads/directorate/stat_econ/IRSP_2015-16/Facts_Figures_Eng/19.pdf
(5) US Railways percentage electrified : http://www.21stcenturysciencetech.com/Articles%202005/SuperiorRail.pdf
(6) List of countries by rail transport network size :
(a) https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_countries_by_rail_transport_network_size
(b) http://www.railway-technology.com/features/featurethe-worlds-longest-railway-networks-4180878/
(7) Doubling and tripling of Indian railway lines
(a) http://pib.nic.in/newsite/PrintRelease.aspx?relid=148427
(8) Bell did not invent the telephone : https://www.theguardian.com/world/2002/jun/17/humanities.internationaleducationnews
(9) Japanese Yen to US dollar, historical exchange rates :https://en.wikipedia.org/wiki/Tables_of_historical_exchange_rates_to_the_United_States_dollar
(10) List of Indian rail accidents : https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_Indian_rail_accidents#2017
(11) Annual High Speed Rail Ridership : https://en.wikipedia.org/wiki/High-speed_rail#Ridership and references therein
(12) High Speed Railways in China, A Look at Traffic : https://openknowledge.worldbank.org/bitstream/handle/10986/25480/932270BRI0Box30ffic020140final000EN.pdf?sequence=1
(13) The Long and Short of India’s Bullet Train : https://thewire.in/178568/india-bullet-train-economics-finances/
(14) 20-year history of India’s inflation : http://www.inflation.eu/inflation-rates/india/historic-inflation/cpi-inflation-india.aspx
(15) Japanese Highspeed Rail Fatalities : http://english.jr-central.co.jp/about/safety.html
(16) Mumbai-Ahd Bullet Train, All You Need to Know : http://timesofindia.indiatimes.com/india/mumbai-ahmedabad-bullet-train-all-you-need-to-know/articleshow/60508455.cms
(17) Govt. should be driven by institutions and not individuals: Shri Modi at IMC Interactive Meet : https://www.youtube.com/watch?v=_tWv10aRW9w
চিত্রসূত্র :
https://phys.org/news/2014-10-world-bullet-japan.html#jCp
https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/a/a8/Black_and_white_photo_of_emperor_Meiji_of_Japan.jpg
https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/a/a2/SOGO_Shinji.jpg
https://pbs.twimg.com/media/Ci5tnJbWEAIM55U.jpg
নিজস্ব সংগ্রহ
http://i.telegraph.co.uk/multimedia/archive/01954/t2_1954619a.jpg
http://www.irgreenri.gov.in/tile_elect.html
রেল নিয়ে লেখা গদ্যের একটা সংকলন করতে হতে পারে। যদি হয় তাতে দেওয়ার জন্য লেখক এবং সম্পাদকের কাছে তথ্যসমৃদ্ধ এই লেখাটিকে চেয়ে রাখলাম। আগাম ধন্যবাদ সহ।
অনেক অনেক দেরী হয়ে গেল উত্তর দিতে। অাপনার ইমেলে যোগাযোগ করছি।