সত্যিকারের সুনাগরিক বলতে ঠিক কী বোঝায়

মুকুলিকা ব্যানার্জি

 




সামাজিক নৃতত্ত্ববিদ্যার অধ্যাপক, লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্‌স। বর্তমান প্রবন্ধটি ‘দ্য ওয়্যার’ পোর্টালে ১১ মে প্রকাশিত হয়েছিল। লেখকের অনুমতিক্রমে তা এখানে পুনঃপ্রকাশিত হল। অনুবাদ করেছেন অভীক ভট্টাচার্য।

 

 

 

 

গল্পের মতো করে শুরু করা যাক। এক দেশে এক মস্ত ক্ষমতাশালী নেতা ছিলেন। তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষেরই একজন, কিন্তু তবু তাদের চেয়ে একেবারেই আলাদা। তিনি দেখতে ছিলেন সাধারণের মতোই, কিন্তু তাঁর গায়ের রং অনেক বেশি চকচকে, নখ অনেক বেশি পরিষ্কার। তাঁর পোশাক ছিল সাধারণের মতোই, কিন্তু অনেক বেশি দামি আর ঝলমলে, গলার সোনার হারটি আলো পড়ে চকমক করত সবসময়। তিনি সবসময় বলতেন, তিনি সাধারণ মানুষেরই একজন, তাদেরই মতো ভূমিপুত্র, তাদের সেবা করার জন্যই জন্মেছেন। কিন্তু তিনি ছিলেন উদ্ধত, আর তাঁর মনটা ছিল বিদ্বেষে ভরা। তিনি ছিলেন জনসাধারণের নেতা— কারণ তিনিই নিয়ন্ত্রণ করতেন তাদের সবকিছু— তারা কী খাবে-পরবে, কাকে বিয়ে করবে, কোথায় চাকরি করবে, কার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাবে, কাকে ভোট দেবে— সব।

নিয়মমতে না চললে শাস্তি ছিল অবধারিত। তাঁর পছন্দের পদ্ধতি ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভেদ ঘটিয়ে তাদের শাসন করা। কারও জন্য তাঁর তরফে বরাদ্দ থাকত যৌতুক, কারও জন্য শাস্তি। ভাইয়ে ভাইয়ে বিচ্ছেদ ঘটাতেন তিনি, মেয়েদের ভয় দেখাতেন, শত্রুদের সঙ্গে ষড় করতেন— কিন্তু যা করতেন সব একা-একাই। ছোটখাট প্রতিটি বিষয়েও তাঁর শিলমোহরই ছিল শেষ কথা, যে কোনও বিবাদ-বিসংবাদে তিনিই ছিলেন একমাত্র বিচারক। নিজের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য ছোট বড় সব সুযোগই কাজে লাগাতেন নির্দ্বিধায়। ফলে, যে কোনও বিষয়ে তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে চলেছে, তা নিয়ে সকলে সর্বদা ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকত।

তিনি কখন কী ফরমান জারি করবেন, কেউ জানত না বলে সর্বক্ষণ ভয়ে-ভয়ে থাকত ঠিকই, কিন্তু তাঁর প্রশংসাও করত। মানুষ তাঁকে প্রশংসা করত তাঁর জনমোহিনী চরিত্রের জন্য, চমৎকার কথা বলতে পারার দক্ষতার জন্য, তাঁর দাম্ভিক মেজাজের জন্য এবং জীবনে অতি সাধারণ জায়গা থেকে অনেক উঁচুতে উঠে আসার ক্ষমতার জন্য। কেউ যদি মনে মনে তাঁকে পছন্দ না-ও করত, তবু তারা ভাবত যে, যাক, মাথার ওপরে অন্তত একজন নেতা আছেন— অনেক নেতা মিলে ক্ষমতার জন্য কাড়াকাড়ি করার চাইতে বরং একজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় থাকা সুবিধেজনক।

ওই নেতা যে রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন, তারাও তাঁর কাজকর্মের প্রশংসাই করত। সাধারণ মানুষের ওপর ওই নেতার নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ, তাদের ভাবনার ওপর তাঁর অবিসংবাদী আধিপত্য ও বিরোধীদের মুখ বন্ধ করিয়ে রাখতে যে কোনওরকম হিংসার আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে তাঁর অনায়াস দক্ষতা ওই রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা ধরে রাখার পক্ষে অত্যন্ত সহায়ক ছিল। দল মনে করত, শুধু ক্ষমতা ধরে রাখা নয়, দলের আদর্শ ও বিচারধারা মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঠিক এমনই নেতার প্রয়োজন— এমন নেতাই প্রয়োজন যিনি মানুষকে বিশ্বাস করাতে পারেন যে, তাঁর ও তাঁর দলের আদর্শ ছাড়া তাদের পক্ষে বেঁচে থাকাই অসম্ভব— এবং কেবলমাত্র তাঁর দলই মানুষকে দিতে পারে উন্নততর জীবন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা। এবং সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাস করত বলেই প্রত্যেক নির্বাচনে তারা সেই নেতাকেই ভোট দিত— বছরের পর বছর।

যদি কেউ কোনও বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করত কিংবা প্রশ্ন তুলত, অতীতে সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও কত বেশি খারাপ ছিল তা মনে করিয়ে তাদের মুখ তৎক্ষণাৎ বন্ধ করিয়ে দেওয়া হত। তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হত – দেশে পরিবর্তন কেন জরুরি ছিল, কঠোর নেতৃত্বের কেন প্রয়োজন ছিল। এইভাবে, একের পর এক নির্বাচনে জয়ী হয়ে সেই নেতা আরও বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে লাগলেন, আর তাঁর অনুগামীদের আরও বেশি করে নিজের হাতের পুতুলে পরিণত করে ফেলতে লাগলেন— কখনও তাদের সামনে পুরস্কারের টোপ ঝুলিয়ে, কখনও চোখ রাঙিয়ে, কখনও মহিলাদের ভয় দেখিয়ে, কখনও বা পরিবারের মানুষদের মধ্যে বিভাজন ঘটিয়ে। আর এইভাবেই, তাঁর পোশাকও দিনে-দিনে হয়ে উঠতে থাকল আরও উজ্জ্বল, আরও ঝলমলে; তাঁ নখ হতে থাকল আরও পালিশ-করা, আর তাঁর প্রাসাদও হয়ে উঠতে থাকল আরও বড়, আরও ঝাঁ চকচকে। তাদের নেতাকে বাদ দিয়ে যে তাদের জীবন চলতে পারে, এই সহজ কথাটাও ক্রমে-ক্রমে লোকে বিশ্বাস করতে ভুলে গেল।

কিন্তু একটা সময় এল, যখন লোকে ধীরে-ধীরে তাদের নেতার কাজকর্মের প্রতি সন্দিহান হয়ে উঠতে শুরু করল। একই সঙ্গে, সাধারণ মানুষকে তিনি যে নিজের ইচ্ছার দাস বানিয়ে রেখেছেন— সেটাও ক্রমে তাদের নজরে পড়তে লাগল। তারা দেখতে লাগল যে, তাদের সমাজে যাঁরা ওই নেতার সবচেয়ে কাছের লোক তাদেরই ধনসম্পদ কেবল ফুলেফেঁপে উঠছে, অথচ বাকিদের জীবনযাপনে কোনও ইতর-বিশেষ হচ্ছে না— তাদের না বাড়ছে মাইনে, বাজারে না কমছে জিনিসপত্রের দাম। কিন্তু এই নির্লজ্জ, উদ্ধত ও বিপজ্জনক লোকটিকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানোর কোনও উপায় তাদের জানা ছিল না— ফলে, সেটা যে আদৌ সম্ভব, সেটাও তারা ভাবতে পারল না। ওই নেতার দল এতই শক্তিশালী, সমাজের সর্বত্র সেই দলের লোকেদের নিয়ন্ত্রণ আর নজরদারি এতদূর সর্বগ্রাসী যে, তারা ধরেই নিয়েছিল তাদের জীবন-মরণ সবই সেই নেতার কবজায়— সেভাবেই তাদের বাকি জীবনটা কাটাতে হবে।

 

পরিবর্তন

কিন্তু একটা সময়, আস্তে-আস্তে পরিস্থিতি পালটাতে থাকল। ওই নেতা নিজের ক্ষমতার দম্ভে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে শেষে একদিন চালে একটা মস্ত ভুল করে বসলেন। তারপর যখন তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন, তখন তা শুধরে নিতে চাইলেন নিজস্ব উপায়েই— এতদিন যেভাবে তিনি নিজের সব অন্যায় ধামাচাপা দিয়ে এসেছেন, সেভাবেই। কিন্তু এবার কী হল— যত তিনি নিজের অপকর্ম থেকে মানুষের নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন, ততই আরও বেশি করে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে থাকলেন একের পর এক ভুলের ফাঁদে। ক্রমে পরিস্থিতি এমন হল যে, নেতা নিজের সেই প্রথম ভুলটা সংশোধন করার চেষ্টা করাই ছেড়ে দিলেন, যেন তেন প্রকারে ক্ষমতাকে আঁকড়ে থাকাই হয়ে উঠল তাঁর প্রধান কাজ। তখন মানুষের টনক নড়ল। কারও-কারও মনে হতে লাগল, যথেষ্ট হয়েছে – সবকিছুর একটা সীমা থাকা উচিত। আমরা এতদিন ওই নেতাকে সহ্য করে এসেছি, কারণ আমরা ভাবতাম এই দেশে বাস করতে গেলে বুঝি বা সেটাই আমাদের একমাত্র উপায়। কিন্তু, তার মানে তো এই নয় যে, আমরা আমাদের সমাজের যাবতীয় আইনকানুন লঙ্ঘনের অধিকার – আমাদের সমাজে ধর্মের পবিত্রতা নষ্ট করার অধিকার ওঁকে দিয়ে দিয়েছি! এমনটা হতে দেওয়া যায় না। এবার তিনি সব লক্ষণরেখা অতিক্রম করে গিয়েছেন। এর উচিত শিক্ষা ওঁকে পেতেই হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, কীভাবে? কেবল কি তারা নিজেরাই এমনটা ভাবছে? বাকিরা কি তাদের সঙ্গে একমত হবে? কীভাবে বোঝা সম্ভব কারা-কারা তাদের দলে— ভাবছে তাদেরই মতো করে? জনে-জনে গিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন করা সম্ভব নয়— তা হলে মুহূর্তে নেতার দরবারে খবর পৌঁছে যাবে। কোনও রাস্তা খুঁজে না-পেয়ে তারা নিরুপায় হয়ে অপেক্ষা করতে লাগল, আর দেখতে থাকল নেতা এর পর ঠিক কী করেন। কীভাবে সবাই মিলে একসঙ্গে এগনো যায় সে ব্যাপারে কোনও আশু সমাধান না-পেয়ে তাদের রাগ আর হতাশা ক্রমে বেড়েই চলল।

পাঠক, এই গল্পটি ভারত বিষয়ে আমার গবেষণাপত্রের একটি অংশ— সেখান থেকেই নেওয়া। গল্পটা পড়ে আপনাদের যদি মনে হয় নেতাটিকে আপনারা চিনতে পেরেছেন, আমি নিশ্চিত, আপনাদের অনুমান ভুল।

১৯৯৮ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের দুটি গ্রামকে নিয়ে আমি আমার গবেষণা চালিয়ে আসছিলাম— মদনপুর আর চিস্তি। সেখানকার স্থানীয় এক ‘কমরেড’ এই কাহিনির নেতা, এবং এই কাহিনির প্রতিটি কথা একেবারে অক্ষরে-অক্ষরে সত্যি— ঘটেছিল আমার চোখের সামনে— আমার ফিল্ডওয়ার্কের চলাকালীন। যে কমরেডের কথা এখানে বলেছি, তিনি ছিলেন ওই গ্রামদুটিতে ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টের স্থানীয় প্রতিনিধি— যে বামফ্রন্ট ১৯৭৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত রাজ্যের প্রতিটি নির্বাচনে জিতেছিল। গত শতকের একেবারে শেষে, যখন আমি আমার গবেষণার কাজ শুরু করি, রাজ্যে বামফ্রন্ট ছিল অপরাজেয়— ওই দুই গ্রামে ঠিক যেমন অপরাজেয় ছিলেন ওই কমরেড। গ্রামের মানুষ তাঁকে এতটাই ভয় করে চলত যে, তাঁকে নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে ফিশফিশ করে কথা বলত কেবল জনমনিষ্যিহীন শুনশান দুপুরে, সকলে যখন ঘরে দুয়ার এঁটে ঘুমোচ্ছে, সেই সময়। গবেষণার কাজের সূত্রে ধীরে-ধীরে আমার সঙ্গে তাদের পরিচয় যখন গাঢ় হল, তারা যখন আমায় বিশ্বাস করতে শুরু করল, কেবলমাত্র তার পরেই তাদের মুখে আমি সেসব কথা শুনেছি। আর তারপরে, যে পরিবর্তনের কথা ওপরে বললাম, নিজের চোখে সেই পরিবর্তন ঘটতেও দেখেছি।

কীভাবে ঘটল সেই পরিবর্তন? বলি, শুনুন…

 

সার্বজনিক উদ্দেশ্য ও জনসমর্থন

মাঝি নামে এক তরুণ একদিন ওই নেতার কোনও এক নির্দেশ প্রসঙ্গে তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে মুখে-মুখে তর্ক করেছিল। সেই অপরাধে, ওই নেতা, মাঝির বন্ধু-পরিজনদের সামনেই তাকে যারপরনাই অপমান করেন। তখন থেকেই নেতার ওপরে মাঝির রাগ ছিল। সে ঠিক করেই নিয়েছিল, এর জবাব তাকে দিতে হবে। তার হারানোর কিছুই ছিল না। এমনকী, নিদেন একটা চাকরিও না— কারণ, মাঝি যাতে কোনওদিন কোনও চাকরি না পায়, ওই নেতা তা ইতিমধ্যেই সুনিশ্চিত করেছিলেন। গ্রামে মাঝি তার মাকে নিয়ে থাকত, এবং কোনওক্রমে ছাত্র পড়িয়ে সামান্য যে ক’টা টাকা পেত, তাই দিয়ে সংসার চালাত।

সাহস সঞ্চয় করে সে অবশেষে একদিন ‘জল মাপতে’ বেরোল। তার এক পড়শির কাছে গিয়ে কথায়-কথায় সে ওই নেতার নানা অপকীর্তির প্রসঙ্গ পাড়ল, কেবল আন্দাজ করতে, পড়শি তা কীভাবে নেয়। অনেক ভেবেচিন্তেই সে এগিয়েছিল। সে জানত, ওই পড়শি পুরনো আমলের কংগ্রেসি-সাপোর্টার, এবং প্রকাশ্যে ওই কমরেড-নেতার প্রশংসা করে বেড়ালেও নিজের ভোটটা এখনও গোপনে কংগ্রেসকেই দেয়। তার মনোভাব বাজিয়ে দেখার জন্য মাঝি তার সঙ্গে কথা পাড়তেই সেও মুখ খুলল, এবং একান্তে মাঝিকে বেশ কিছু কথা বলল। কীভাবে এই অবস্থাটার বদল ঘটানো যায়, তা নিয়েও তাদের মধ্যে বেশ কিছু কথা হল। কিছু বিষয়ে তাদের মতের মিল হল না বটে, কিন্তু তারা ঠিক করল, আপাতত যেসব বিষয়ে তারা একমত, কথা হবে কেবল সেসব নিয়েই। পড়শি এরপর তার এক পরিচিত চাষি— যার কাছ থেকে কিছু জমি নিয়ে সে ভাগে চাষ করত— তার কাছে গিয়ে কথা পাড়ল। সেখানেও একপ্রস্থ জল মাপা চলল, কারণ সে জানত, ওই চাষির এক তুতো ভাই— যার সঙ্গে ইদানিং চাষির সম্পর্ক খারাপ— সে ওই নেতার কাছের লোক। পড়শি ও সেই চাষি তারপর তাদের বাড়ির বউদের বলল; বউয়েরা তারপর পুকুরঘাটে কাপড় কাচতে গিয়ে সেসব কথা অন্যান্য বাড়ির বউদের বলল। মাঝির মা মাঝির কাছে পড়তে আসা ছেলেমেয়েদের বাপমায়ের কাছে সেসব প্রসঙ্গ তুলল। এইভাবে, ক’দিনের মধ্যেই দেখা গেল, এই অবস্থাটার বদল চেয়ে অনেকেই নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলি শুরু করেছে— এবং কীভাবে, কী উপায়ে ওই নেতাকে সরানো যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে লেগেছে।

ভয় যে ছিল না, তা কিন্তু আদৌ নয়। নিজেদের মধ্যেই কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে সব খবর নেতার লোকেদের কানে তুলে দিতে পারে, সে আশঙ্কা বিলক্ষণ ছিল। ফলে, শুরুর দিকে তাদের নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা চলত চুপিসাড়ে— চাপা গলায়। কিন্তু, একইসঙ্গে, প্রত্যেকটা কথোপকথন থেকে তারা নিজেদের মধ্যে একটা বাড়তি জোরও পেত। আর, এইভাবে ক্রমে তাদের সঙ্গে যত নতুন মানুষ এসে জুটছিল, সেই জোরটা আরও বাড়ছিল। নতুন মানুষ মানেই তাদের পক্ষে জনসমর্থন বেড়ে চলা— সেটা তাদের বাড়তি সাহস জোগাচ্ছিল।

এইভাবে, নিজেদের অজান্তেই, মদনপুর ও চিস্তির মানুষ ক্রমে-ক্রমে খুব জরুরি কতগুলো বিষয় বুঝে ফেলল। সেগুলো হল— এক, মানসিকভাবে অনেক মানুষের একজায়গায় আসার জন্য প্রথমেই দরকার কোনও একটা সাধারণ উদ্দেশ্য। ঝুঁকি যদি নিতেই হয়, তা হলে সেটা তুমি কেন নিচ্ছ, তাতে তোমার কী সুবিধে হতে পারে, এটা সবার আগে বোঝা দরকার। বোঝা দরকার— তারা কেবল কমরেডদের ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্যই একত্র হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাইছে, নাকি আসলে চাইছে অন্য কিছু— আরও বেশি কিছু?

দুই— তোমাদের নিজেদের মধ্যে মতানৈক্যের নানা বকেয়া ইতিহাস থাকতে পারে, নানা বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পুরনো বিবাদ-বিসংবাদ থাকতে পারে, এমনকী শত্রুতাও থাকতে পারে, কিন্তু কোনও একটা উদ্দেশ্য নিয়ে একজায়গায় আসতে গেলে তোমাদের আপাতত নিজেদের মধ্যে সেসব লড়াই মুলতুবি রাখতে হবে। এর অর্থ হল, সকলের একটা পারস্পরিক বোঝাপড়ায় আসা যে, অন্তত সাময়িকভাবে ব্যক্তিগত ঈর্ষা-দ্বেষ-চুলোচুলি দূরে সরিয়ে রেখে যে পরিবর্তনটা ঘটানোর লক্ষ্যে সকলে একজোট হয়েছে, সেই লক্ষ্যটার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে।

এবং, তিন— ওই নেতা ও তাঁর কমরেডদের ক্ষমতা থেকে সরাতে তাদের নতুন রকমের কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। অন্যরকমভাবে ভাবতে হবে, এবং ব্যক্তিসাপেক্ষ প্ল্যান ঠাওরাতে হবে— একেকজনের জন্য একেকরকম— এবং নিজেদের মধ্যেও দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিতে হবে।

কিন্তু এত সব কীভাবে সম্ভব? কীভাবে তারা নিজেদের মধ্যে এতরকম নতুন আচরণবিধি কার্যকর করবে; বিশেষত, যেখানে এ-যাবৎ যে রাজনীতিটা তারা দেখতে অভ্যস্ত হয়েছে তার আগাপাশতলা ঘৃণা আর হিংসায় পরিপূর্ণ? সমাধানের জন্য, অতএব, তারা নিজেদের জীবনযাপনের অভিজ্ঞতার দিকে চোখ ফেরাল। যেমন ধরা যাক, যৌথ চাষের অভিজ্ঞতা। সেখানে তারা ফসল কাটার মরশুমে সবার জন্য কাজ ভাগ করে নেয়— যেখানে প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব থাকে, প্রত্যেকে কেবল নিজের কাজটুকুই মন দিয়ে করে যাতে ফসল কাটার পুরো প্রক্রিয়াটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মেনে সফল হতে পারে। হয়তো কেউ একজন কেবল একটা লম্বা দড়িকে নির্দিষ্ট মাপে ছোট-ছোট করে কাটছে, যা দিয়ে ফসলের আঁটি বাঁধা হবে। আপাতদৃষ্টিতে খুবই সামান্য একটা কাজ, কিন্তু সেটা ঠিকমতো না-হলে দিনের শেষে ফসলের আঁটিগুলো বাঁধাই হবে না।

তারা সকলে যে সমাজটায় বড় হয়েছে সেখানে বরাবরই তারা দেখে এসেছে সামাজিক বিভাজন এবং সম্প্রদায়গত উঁচু-নিচুর ভেদ; গুরুত্ব পেয়েছে এমনকী বয়সের মাপকাঠি অনুসারে দায়িত্ববণ্টনও। নতুন যে রাজনৈতিক কাজে তারা হাত দিতে চলেছে ও তার জন্য যে নয়া দল তারা গড়তে চলেছে, সেখানে পুরনো সেইসব প্রথাগত বিভাজনরীতি ভুলে থাকা কি আদৌ সম্ভব? এই প্রশ্নের সমাধান— সাম্যবাদী জমায়েতের একটা চমৎকার অনুপ্রেরণা তারা পেয়ে গেল ঈদের নমাজের দৃষ্টান্ত থেকে। সেখানে প্রার্থনার জন্য সমাজের সমস্ত মানুষ যদি উঁচু-নিচু জাতের বেড়া পেরিয়ে কাঁধে কাঁধ ঠেকিয়ে পাশাপাশি দাঁড়াতে পারে, তবে এখানেই বা তা সম্ভব হবে না কেন?

এইভাবে, একের পর এক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে-খুঁজতে ও তাদের সমাধান করতে-করতে তারা সেইসব মৌলিক সূত্রগুলো শিখতে শুরু করল, যেগুলোকে বলা যেতে পারে রাজনৈতিক কর্মপ্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের এই জরুরি ধাপগুলো তারা শিখল— সংগঠন ও ক্যাডারভিত্তিক কোনও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নয়— বরং তাদের গ্রামের যৌথ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই।

এইভাবে, যখন তারা নিজেদের রাজনৈতিক দল, তৃণমূল কংগ্রেস গড়ে তোলার পথে এগোচ্ছে, তখন একটা মজার ব্যাপার ঘটল। দেখা গেল, তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক কাজকর্মের একটা বড় অংশই ঘটছে ওই নেতা ও তাঁর কমরেডদের কাজকর্মের আদলেই— যা তারা, নিজেদের অজান্তেই, তাঁদের দেখে-দেখে শিখেছিল। যেমন ধরা যাক, বামফ্রন্টের কোনও সদস্যদের সম্পর্কে বলতে গেলে সাধারণভাবে এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, “ও পার্টি করে”। তো, এইধরনের লোকেদের দীর্ঘদিন ধরে খুব কাছ থেকে দেখে ওরা বুঝেছিল, ‘পার্টি করা’ বলতে ঠিক কী বোঝায়। এই ‘পার্টি করা’ মানে কিন্তু কেবল নির্বাচনের কাজ নয়, যখন বেশি সংখ্যক মানুষকে ভোটের লাইনে দাঁড় করানোই প্রধান ও একমাত্র কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। এই ‘পার্টি করা’ আসলে তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। বলা যেতে পারে, ভোটের কাজ আসলে পার্টির কাজের অত্যন্ত ছোট একটা অংশ— হিমশৈলের চুড়োটুকুর মতন।

 

সক্রিয় নাগরিকত্ব

রাজনীতির মূল কাজ আসলে চলত দুটো ভোটের মাঝের সময়টাতে। মধ্যবর্তী সেই সময়টা জুড়ে সেই নেতা ও তাঁর দলের কমরেডরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কথা বলে চলতেন মানুষের সঙ্গে – যারা মোটের ওপর সমমনস্ক ও সমর্থক কিংবা আপাত-নিরপেক্ষ, তাদের সমস্ত প্রশ্ন ও সংশয়ের জবাব দিয়ে চলতেন অক্লান্তভাবে, বোঝাতে চেষ্টা করতেন কেন পার্টির আদর্শই শেষ কথা, আপদে-বিপদে তাদের পাশে দাঁড়াতেন— এবং ঠারে-ঠোরে বুঝিয়ে দিতেন সুখে থাকতে গেলে, তরক্কি করতে গেলে, কেন তাঁদের নেতাকে ভোটের বাক্সে সমর্থন দিতেই হবে। কমরেডদের দেখেই মাঝি ও তার দলবল এসব শিখেছিল, অতএব, তাদের বিরুদ্ধে দল করতে এসে তারাও ঠিক সেই পথই ধরল।

এবং এই কাজগুলো করতে-করতেই তারা প্রশ্ন করতে শুরু করল। তারা যেখানে প্রতিবছর নিজেদের ঘরের চাল ছাওয়ার জন্য খড় জোগাড় করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে, সেখানে স্থানীয় পঞ্চায়েত-প্রধান কীভাবে নিজের পাকা বাড়ি ফি-বছর অনায়াসে চুনকাম করাতে পারেন… কীভাবে গোটা গ্রামে কেবল ওই কমরেড-নেতার বাড়িতেই চব্বিশ-ঘন্টার জলের বন্দোবস্ত… কেন একই গ্রামে জীবনভর বসবাস করলেও ভাইয়ে-ভাইয়ে মুখ-দেখাদেখি বন্ধ… কেন ওই নেতার চোখের আওতার বাইরে থাকার জন্য গ্রামের মেয়েদের প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হয়… কেন ওই নেতা মুখে সর্বক্ষণ কৃষকদের অধিকারের কথা আউড়ে চললেও নিজের জমিতে স্থানীয় চাষিদের কাজ দেন না… এমনই নানান প্রশ্ন।

এইভাবে একের পর এক প্রশ্ন করতে-করতে, নিজেদের মধ্যে প্রশ্নগুলোর সম্ভাব্য উত্তর নিয়ে আলোচনা করতে-করতে, সেসব উত্তরের পক্ষে-বিপক্ষে প্রমাণ জড়ো করতে-করতেই তারা ক্রমশ অনেক কিছু বুঝতে শিখে ফেলল। এবং, যখন তারা দেখল যে, শুধু তারাই নয়, একই প্রশ্ন করছে আরও অনেকেই – তখন তাদের মধ্যে এধরনের সহমর্মিতা তৈরি হতে থাকল – বাড়তে থাকল জনসমর্থন। জনসমর্থন বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গেই বাড়তে লাগল আরও বেশি প্রশ্ন করার সাহস। এইভাবে প্রশ্ন করার সাহস ও সমর্থন বাড়তে-বাড়তে একটা সময় দেখা গেল, ওই কমরেড আর গ্রামের নেতা নেই— সেই জায়গাটা এসে গিয়েছে মাঝির দখলে।

এটাই সেই রাজনৈতিক কাজ যা করা হয়ে আসত দুই নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়গুলোতে— যখন লোকে প্রশ্ন করত এবং সেসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দায় বহন করতে হত ওই কমরেড-নেতাকে। এটাকেই ম্যাকিয়াভেলি অভিহিত করেছেন সক্রিয় নাগরিকত্ব বা ‘অ্যাক্টিভ সিটিজেনশিপ’ বলে। তাঁর বিখ্যাত ‘দ্য প্রিন্স’ গ্রন্থটি কার্যত দাঁড়িয়ে আছে এই সক্রিয় নাগরিকত্বের তত্ত্বের ওপর – যাকে ম্যাকিয়াভেলি চিহ্নিত করেছেন নেতার রাজনৈতিক কর্মপ্রক্রিয়ার প্রায় সমার্থক একটি ধারণা হিসেবে। এর পাশাপাশি, আমাদের নজর দিতে হবে ম্যাকিয়াভেলি-র ‘দ্য ডিসকোর্স’ গ্রন্থটির প্রতিও— যেখানে তিনি প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেছেন সৎ ও দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের (তাঁর ব্যবহৃত ‘গুড সিটিজেন’-এর বাংলা আমরা করলাম ‘সৎ ও দায়িত্বশীল নাগরিক’) মৌলিক ধারণাটি। এই ধারণাটির মধ্যে নিহিত রয়েছে সেই প্রজাতান্ত্রিক চিন্তা-পরম্পরার সারাৎসার— যৌথ সক্রিয়তা, দায়িত্বশীল নাগরিকত্ব এবং নাগরিক ঐক্যবদ্ধতা যার তিন প্রধান স্তম্ভ। নাগরিকের অধিকার কেবলমাত্র নির্বাচনের দিনে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না— তাকে ক্রিয়াশীল থাকতে হয় পরবর্তী নির্বাচনটি সংঘটিত হওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত। প্রতিটি নাগরিক ও সমগ্র নাগরিকসমাজের এই একক ও যৌথ সক্রিয়তাই তাদের নির্বাচিত নেতাকে ক্রমাগত প্রশ্ন করে চলে ও একইসঙ্গে নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতার প্রক্রিয়াটি নিরন্তর বজায় রাখে, যাতে সেই নির্বাচিত নেতা (জনপ্রতিনিধি) সেই জনগোষ্ঠীর প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে বাধ্য হন— দায়বদ্ধ না-হয়ে তাঁর কোনও উপায় থাকে না বলেই। একটু ভেবে দেখলেই বোঝা যাবে, মদনপুর ও চিস্তির মানুষ ঠিক এটাই করেছিল। বংশপরম্পরায় চাষের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার দরুণ তারা শ্রম, ধৈর্য ও সতর্কতার মূল্য সম্পর্কে আগে থেকেই বিলক্ষণ ওয়াকিবহাল ছিল— কেবল বহুকালের অধীত সেই শিক্ষাগুলিকেই তারা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়েছিল।

এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, ১৯৫০ সালে যখন স্বাধীন ভারতরাষ্ট্রের রূপরেখা লিপিবদ্ধ হয়ে উঠছে, তখন তার চারিত্র্য-জ্ঞাপক অভিধা হিসেবে সংবিধানে প্রথমে লেখা হয়েছিল ‘সার্বভৌম, স্বাধীন প্রজাতন্ত্র’ (sovereign independent republic) শব্দবন্ধটি। পরে সেই শব্দগুচ্ছকে সংশোধন করে মান্যতা দেওয়া হয় ‘সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ কথাটিকে (sovereign democratic republic)। এই সংশোধন নিছক অকারণে নয়। বিআর অম্বেডকর ‘গণতান্ত্রিক’ ও ‘প্রজাতন্ত্র’ শব্দদুটিকে পাশাপাশি ব্যবহার করার মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন যে, শব্দদুটি পৃথক অর্থবাহী ও পরস্পরের পরিপূরক। একদিকে যেমন (রাজনৈতিক) ‘গণতান্ত্রিক’ শব্দটি আমাদের দেশের ব্যক্তি-নাগরিক ও রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক নিরুপণের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচন-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপলব্ধ আলম্ব প্রতিনিধিত্বের (vertical representation) ধারণাটিকে দ্বর্থ্যহীন ভাষায় ঘোষণা করেছিল, তেমনই ‘প্রজাতন্ত্র’ শব্দটি স্বীকৃতি দিয়েছিল সামাজিক গণতন্ত্রের ধারণাকে— বা আরও ভালভাবে বলতে গেলে সমাজজীবনে গণতন্ত্রের চর্চার ধারণাটিকে— যা কেবলমাত্র ভারতীয় জনসমাজের নিজেদের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যবদ্ধতার নিরন্তর চর্চার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব বলে অম্বেডকর বিশ্বাস করতেন। দৈনন্দিনের জীবনে গণতন্ত্রের চর্চার পাশাপাশি নির্বাচনে রাজনৈতিক গণতন্ত্রের চর্চার এই দ্বৈত প্রক্রিয়াই মানুষকে শেখায়— কেবল ভোটদানেই তার নাগরিকত্বের দায়িত্ব শেষ হয় না, বরং দুইটি নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়ে নির্বাচিত নেতৃবর্গের কার্যকলাপের প্রতি নিরন্তর নজরদারিও একইরকম গুরুত্বের দাবি রাখে। বস্তুত, এই দুইয়ের সমান্তরাল চর্চা ব্যতিরেকে গণতন্ত্রের মৌলিক ধারণাটিই অর্থহীনতায় পর্যবসিত হয়।

এ-দেশের ছোট-ছোট গণপরিসরে গণতন্ত্রের এই বড় শিক্ষাগুলি কীভাবে নিয়ত ক্রিয়াশীল, এবং তা আমাদের জন্য কী সুন্দর দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে— ওপরের এই কাহিনি, বা বলা ভাল, ঘটনাটি, তার এক চমৎকার হাতে-গরম উদাহরণ।

তথ্যের খাতিরে জানানো থাক (যদিও সকলেই এ তথ্য সম্পর্কে অবহিত আছেন), ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের পর, ২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল উত্থান রাজ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণকে শক্ত মাটির ওপর দাঁড় করিয়েছিল।

সদ্যোসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে রাজ্যে বামফ্রন্ট একটি আসনেও জেতেনি। উলটোদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার শতাংশের হিসেবে সর্বকালের মধ্যে সর্বোচ্চ— এ-রাজ্যে এত ভোট পেয়ে কখনও কোনও দল ক্ষমতায় আসেনি, তা-ও আবার বিজেপি-র মতো আপাত-অপরাজেয় একটি দল ও তার অবিসংবাদী নেতাকে পর্যুদস্ত করে।

‘পার্টি করা’-র ঐতিহ্য, আদর্শ ও হিংসার উত্তরাধিকার, অতএব, এভাবেই আমাদের প্রতিনিয়ত শিক্ষিত ও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে চলেছে।


ছবি: ইন্টারনেট

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4647 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...