অরূপরতন ঘোষ

অরূপরতন ঘোষ | কয়েকটি প্রজাতান্ত্রিক কবিতা

কয়েকটি প্রজাতান্ত্রিক কবিতা

 

প্রজাতান্ত্রিক কবিতা, ১৮, ফরেস্ট বাংলো

কাচের গঠন দেখে আশ্চর্য হই
সেরামিক নীলের আবেশ দেখেছি আগেও, তবু
প্রায় এক সাঙ্কেতিক রং
যুদ্ধকালীন বেতারতরঙ্গ যেন জ্বলে ওঠে
সতর্ক সন্ধেবেলায়

বেতের চেয়ারে এসে লাগে
বাংলোর বিবশ রূপ

ঠিক বোঝা যায় না
হরিণ পালিয়েছে জিপ থেকে, নাকি
কেউ তির ছুঁড়ে হত্যা করেছে নীলগাই—
এসব প্রশ্নে রেঞ্জার সাহেব বিব্রত হন
আমিও সুযোগ বুঝে এগিয়ে দিই পানীয়ের গ্লাস
নিঃশর্ত জ্যোৎস্নার দিকে!

 

প্রজাতান্ত্রিক কবিতা, ২০, জাদুকর ম্যানড্রেক

তুমি সব দূরের চোখে চেয়ে দেখো
আর কাছে এলেই হাত পা শিকলে বেঁধে
ডুব দাও স্রোতের নদীতে,
ভেসে ওঠো আচম্বিতে ফের
তেলেনি ঘাটের কাছে—

লঞ্চভর্তি লোক বিহ্বল হয়
তোমার কৌশলে।

অথচ যুবতী বলে, আজকের দিন
মোটেও ছিল না জাদু দেখানোর উপযুক্ত
বরং ঘোড়া কিনে আনি চলো রাজাবাজার থেকে
মেঘচ্ছায়ায় আজ আর
নদীতীর বিশ্বস্ত নয় তেমন!

দিগন্তে সক্রিয় হয়ে উঠছে আবার
ওই এক দেশীয় পায়রা
কিছু আগে বজ্রপাতে গোলাপী বর্ণের
চেহারা হয়েছিল তার

 

প্রজাতান্ত্রিক কবিতা, ২৬, পরিযায়ী

আরিফুলের কবিতার বইটি আমাকে ভাবায়

ওই যে বিপ বিপ ধ্বনি…
তবে কি গোয়েন্দা আসছেন;

নাকি হরিণের লোভে পড়ে গেছি আমি….
কদম্বগাছিতে বারবার
জাদুকরী আঁশের আশায় ছুটে যাই।
আর বল্কল দেখিয়ে মুহূর্তে সে
সরে যায় দূরে—

প্রভূত জ্যোৎস্নায় আজ এই মনখারাপটিকে
বৎসরনামার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছি
দেখেছি, শান্ত হয়েছে সে।

ভাদ্রের সন্ধ্যায়
নিরীহ সাইকেলখানি মুছে রাখি তাই
আমার পুরনো বন্ধুর মতোই
তা চকচকে হয়ে ওঠে আরেকবার…

 

প্রজাতান্ত্রিক কবিতা, ২৭, সম্মোহন

মানুষেরা ফিরে এলে দেখে এই রাতে
বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে গেছে কেউ—

আমাদের শীৎকার কিছু মনে রেখে
নদীর চেয়ে পুরনো কাজুর পাতায় শুয়ে আজ
ঘুমিয়ে পড়েছে সব প্রাচীন শিকারি

কখন যে নিভে যায় ফেরিঘাটে আলো
মাঝিদের স্বপ্ন থেকে ঝরে পড়ে ফুল—

সাবলীল খেয়াঘাটে আফিমের মতো
বিষন্ন নৌকারা দেখে,
ফুলে ওঠা জল ছুঁতে মানুষেরা আসে
কখনও বিস্মৃত হয় শীতে— বছর বছর ধরে

তোমার করুণ এই ঝরণাতলায়
মুগ্ধ কেরানির মতো

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4666 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...