অতি বিত্তশালীরা বিশ্বসঙ্কট নিয়ে মাথা ঘামালেন ডাভোস-এ

হর্ষ মন্দর ও প্রভাত পট্টনায়েক

 





ক্রমশ বেড়ে ওঠা অসাম্যগুলির মধ্যে সর্বজনীন ন্যুনতম আয় নিশ্চিত করার চেয়েও জরুরি, সর্বজনীন সামাজিক অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা। সেই নিয়ে আলোচনা করলেন সমাজকর্মী হর্ষ মন্দর এবং অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়ক। সেন্টার ফর ইক্যুইটি স্টাডিজ-এর ব্যবস্থাপনায় আলাপচারিতাটি অনুষ্ঠিত হয় এবং স্ক্রল.ইন-এ গত ২৫ মে ইংরাজিতে প্রকাশিত হয়। বাংলা তর্জমা করেছেন সত্যব্রত ঘোষ

 

 

সুইস আল্পস পাহাড়ের কোলে ডাভোস-এ তাবৎ নিযুতপতি আর রাজনৈতিক ক্ষমতাধারীরা এসে জড়ো হয় গত ২২ মে। রবিবার শুরু হওয়া ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম-এ অর্থব্যবস্থা এবং সারা বিশ্ব জুড়ে বাড়তে থাকা সঙ্কটগুলি নিয়ে মাথা ঘামাতে। তার পরের দিন, সোমবার অ-সরকারি প্রতিষ্ঠান অক্সফ্যাম থেকে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রকাশ করা হয়।

অক্সফ্যাম জানায় কোভিড অতিমারি প্রতি ৩০ ঘণ্টায় একজন কোটিপতি সৃষ্টি করেছে। এবং অসম্ভব মূল্যবৃদ্ধি ও কঠিনতম পরিস্থিতির কারণে ততটাই দ্রুত গতিতে দশ লক্ষ মানুষ অতিদরিদ্র অবস্থায় পতিত হয়েছেন।

যেমন ভারতবর্ষে, শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির সম্পত্তি প্রতি ঘণ্টায় ৯০ কোটি টাকা বেড়েছে যখন দেশের জনসংখ্যার ২৪ শতাংশ মানুষ সারা দিন-রাত খেটেও প্রতি মাসে মাত্র ৩০০০ টাকা আয় করতে পেরেছেন।

ব্যবসায়ী গৌতম আদানি-র সম্পত্তি গত দুই বছরে ১২ গুণ বেড়ে ২০০২২ সালে ৯.৫ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। সেই সময়ে ভারতের অর্ধেক কর্মক্ষম জনসংখ্যা— ৯০ কোটি মানুষ সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে জীবিকানির্বাহের উপায় নিয়ে চিন্তা করাও ছেড়ে দিয়েছেন।

অতিমারিতে সামাজিক নিরাপত্তা এবং সহনশীলতার গুরুত্ব সামনে এলেও নব্য-উদারবাদী কুযুক্তি অনুযায়ী তা মোটেই আকাঙ্খিত নয় বা অর্থগত দিক থেকে কার্যকর নয়। এই অনুলিখিত আলোচনাটিতে সমাজকর্মী হর্ষ মন্দর এবং অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়ক বিশ্বজনীন সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠার জন্য সম্পত্তি এবং উত্তরাধিকারের উপর ১ শতাংশ কর কার্যকর করার সম্ভাব্যতা বিষয়ে আলোচনা করলেন।

হর্ষ মন্দর: আমরা দেখছি পৃথিবী এখন বড় সঙ্কটে রয়েছে এবং টালমাটালও যথেষ্ট। প্রচুর সম্পদ সৃষ্টি হলেও নব্য-উদারবাদীরা যা সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যেমন ভদ্রস্থ কাজকর্ম সৃষ্টি হওয়াতে সবাই মোটামুটি ভালোই থাকবে, যে বাজার থেকে যা কিছু কিনতে চায় কিনতে পারবে, নিয়মকানুন শিথিল হওয়ার ফলে দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে— এই সব কিছুই আজ প্রশ্নের মুখে।

এবং গত দেড় দশকে শুধু ভারতেই কর্মহীনতা বাড়েনি, ভদ্রস্থ কাজে নিযুক্তির উপযুক্ত পরিবেশও দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। আমরা এখন উল্টে দেখছি লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য সেই কাজগুলিই রয়েছে যা অনিশ্চিত এবং অসুরক্ষিত।

আপনি প্রায়ই বলছেন সার্বজনিক সামাজিক অধিকারই এখন বিকল্প কল্পনার সূত্র হতে পারে। আমি শুনেছি কোনও এক জায়গায় আপনি বলেছেন এটাই নতুন শ্রেণিসংগ্রাম। আপনি এই সার্বজনিক সামাজিক অধিকারের ব্যাপারটি কীভাবে ব্যাখা করবেন? এবং এটি যে একটি বিকল্পের কল্পনা হতে পারে, তা আপনি কোথায় দেখছেন?

প্রভাত পট্টনায়ক: আমি বলছি না এটিই নতুন শ্রেণিসংগ্রাম। তবে মৌলিকভাবে আমাদের এই ধারণাটা রয়েছে যে শ্রেণির মধ্যেই ওঠা আর্থিক দাবিগুলি ঘিরেই শ্রেণিসংগ্রাম সংগঠিত হয়। তা সত্যি নয়, কারণ শ্রেণিসংগ্রাম সংগঠিত হয় সেই দাবিগুলি ঘিরেই যা মানুষদের সামগ্রিকভাবে প্রভাবিত করে।

তাই, যে মুহূর্তে আপনি এই চোখে শ্রেণিসংগ্রামকে দেখবেন, তখন সেটি এমন একটি কর্মসূচি যা বিশেষ একটি সময়ে ঐতিহাসিক দিক থেকে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। আমি বিশ্বাস করি আজকে দক্ষিণার্ধে নিশ্চিতভাবেই অধিকারের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।

কোটিপতিরা এখন ডাভোস উড়ে ফুর্তি করতে যাচ্ছে কারণ অতিমারির সময়ে তাঁরা প্রায় চার ট্রিলিয়ন ডলার কামাই করেছে। জীবননির্বাহ করবার মুল্য যেখানে ফুলেফেঁপে উঠছে, সেখান কর্পোরেশনগুলি এবং কোটিপতিরা যন্ত্রণা থেকে মুনাফায় আগ্রহী।

হর্ষ: আমি নিশ্চিত আপনি নিজেকে এখনও একজন মার্কসবাদী পণ্ডিত মনে করেন। কিন্তু সাবেকি মার্কসবাদীরা তো মানবিক অধিকারের ধারণাটির বিরোধ করেন।

প্রভাত: মানুষদের একটি নতুন গোষ্ঠী তৈরি করা দরকার, যেখানে ভ্রাতৃত্বের একটি নতুন বোধ থাকবে। পুঁজিবাদ একটি স্বতঃস্ফূর্ত ব্যবস্থা। সেখানে ব্যক্তিবিশেষের অধিকার নিয়ে লড়াইকে স্বীকার করা হয় না। যেমন, কোনও পুঁজিবাদী দেশ কিন্তু চাকরির অধিকার নিশ্চিত করবে না কারণ, শ্রম দেওয়ার জন্য যথেষ্ট বড় রিজার্ভ ছাড়া পুঁজিবাদ কাজই করতে পারবে না।

সেটাই যদি হয় তাহলে আপনাকে লড়াই করতে হবে এবং এই অধিকারগুলি আদায়ের জন্য লড়াইয়ে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করতে হবে। এগুলি যদি আদৌ অর্জন করতে হয়, তা আপনি এমন এক দুনিয়ায় করতে পারবেন যা নিজের থেকেই সমাজবাদী। এমনটা যদি বা হয় যে একজন ব্যক্তিবিশেষ পুঁজিবাদের মধ্যেই কিছু অধিকার অর্জন করতে পারলেন, সেই ব্যক্তি কিন্তু অন্যান্য অধিকারের জন্য লড়াইতে এগোতে পারবেন না।

হর্ষ: তাহলে, সার্বজনিক সামাজিক অধিকারের চিন্তাকে দক্ষিণপন্থীরাই বামপন্থীদের চেয়ে বেশি আক্রমণ করছে। যখন আমি পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে কাজ করতে দেখেছি, তখন এটাও দেখেছি উনি সত্যিই বিশ্বাস করতেন যে কল্যাণমূলক এবং সামজিক অধিকার বিষয়ে ধারণাগুলি অর্থনীতিকে প্রকৃতই ক্ষতি করবে, এবং তার বিশাল বৃদ্ধির বাধাহীন সম্ভাবনা আটকে দেবে— অর্থনীতির যে বিকাশই শেষ অবধি সব সমস্যার সমাধান করবে।

প্রভাত: বাজারের দক্ষতা নিয়ে চিন্তাভাবনার বিশ্বাসযোগ্যতা তো ৯০ বছর আগেই নষ্ট হয়ে গেছিল। বাজার যদি সব সম্পদকে দক্ষতার সঙ্গে উপযোগী করে তুলত, তাহলে তো বোঝায় যে সব সম্পদ ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু যদি আপনার সামনে বিশাল বেকারত্ব, অব্যবহৃত ক্ষমতা আর খাদ্যরসদ পড়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে ব্যবস্থাটি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে না।

আর বৃদ্ধির চিন্তা? আমার মনে হয় প্রচুর উৎপাদনের উপায়গুলিকে শুধু জড়ো করলেই দারিদ্র্যের সমাধান হবে না, এবং অন্যগুলিরও যা আপনি শুরুতে বললেন। মার্কস তো বলেই গেছিলেন যে পুঁজিবাদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রবণতা হল এক দিকে ঐশ্বর্য উৎপাদন করবে, অন্যদিকে দারিদ্র। তাই, শুধু ঐশ্বর্য উৎপাদনই দারিদ্র দূরীকরণের ওষুধ নয়। তা কেবল দারিদ্রবৃদ্ধিরই অন্য দিক।

এখানে আপনি প্রথমে যা বললেন, তা নিয়ে একটি মন্তব্য করতে চাই। ভারতে নব্য-উদারবাদী পুঁজিবাদের বাড়বাড়ন্তে শুধু অসাম্যই বাড়েনি। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন চূড়ান্ত বঞ্চনার ঘটনাও বেড়েছে।

উদাহরণস্বরূপ আপনি জনপ্রতি খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে গ্রামীণ এলাকায় যে অনুপাতে মানুষ দৈনিক ২২০০ ক্যালোরির নিচে খান, তা দারিদ্র চিহ্নিতকরণের মাপকাঠি হতে পারত। ১৯৯৩-৯৪ সালে তা ছিল ৫৮ শতাংশ। ২০১১-র পরিসংখ্যান যদি দেখেন, তা বেড়ে ৬৮ শতাংশ হয়েছে। সেই অনুপাত অনুযায়ী শহর (ও মফস্বল) এলাকায় জথাক্রমে ৫৭ শতাংশ এবং ৬৫ শতাংশ।

এখন যেটা ঘটছে তাতে দেখা যাচ্ছে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার দাম অনেক বেশি বেড়েছে, যা উপভোক্তা মূল্য সূচক দিয়ে ধরা যাচ্ছে না। যার ফলে এইগুলির বাবদে মানুষরা এত বেশি খরচা করতে বাধ্য হচ্ছে যে তারা খাদ্যগ্রহণে কাটছাঁট করছে।

হর্ষ: আমি তো ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট দেখে স্তম্ভিত হয়েছি। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক আর ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড-এর মতো ব্রেটন উডস-এর ধারার প্রতিষ্ঠানগুলি সম্ভবত প্রথম এত বড় স্বীকারোক্তি করছে যে আমরা এত পরিমাণ চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করতে পারব না, চাকরি-বিহীন এই যে বৃদ্ধি তা আসলে কোনও বিচ্যুতি নয়, নব্য-উদারবাদী মডেলেরই স্বভাব-প্রকৃতির মধ্যেই এটি ছিল। তবে সমাধান হিসেবে ওরা সার্বজনিক ন্যূনতম আয়ের উপায় কার্যকর করতে চাইছে।

প্রভাত: ঠিক তাই। যদিও ধরে নেওয়া যাক প্রত্যেক মানুষ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ হাতে পেলেন, কিন্তু তাদের কাছাকাছি কোনও স্কুল বা সরকারি হাসপাতাল নেই। সেক্ষেত্রে শুধু টাকা হাতে তুলে দিলেই হবে না। জরুরি পরিষেবা এবং পণ্যগুলিকেও সবার কাছে সত্যিই পৌঁছে দিতে হবে। কর্মনিযুক্তির সুবিধগুলিকেও। কল্যাণকামী রাষ্ট্র আপনাকে তারই প্রতিশ্রুতি দেয়।

হর্ষ: ধরুন, আমার একটি বিকলাঙ্গ শিশু আছে। আমার অর্থের প্রয়োজন আরেকজনের চাইতে বেশি, যার শিশু স্বাভাবিক। সুতরাং ন্যূনতম আয় এবং বাড়তি রোজগারের ধারণা এই ধরনের প্রশ্নকে পাত্তাই দেয় না।

আমার পরের প্রশ্ন সার্বজনিক সামাজিক অধিকার প্রসঙ্গে কথাবার্তা নিয়ে। এখানে কোন অধিকারগুলির কথা বলা হচ্ছে?

প্রভাত: আপনি অনেক ধরনের অধিকারের কথা ভাবতে পারেন। আমার লেখায় আমি পাঁচ ধরনের অধিকারের কথা লিখেছি। কিন্তু শুধু এই পাঁচটি অধিকার নিয়েই আমি আঁকড়ে নেই। আমি এও বলছি না যে এই পাঁচটি অধিকারকে অন্য ধরনের অধিকারগুলির থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হোক।

হর্ষ: আর সেই পাঁচটি অধিকার হল: চাকরি, স্বাস্থ্যরক্ষা, স্কুলশিক্ষা, পেনশন, খাদ্য এবং পুষ্টি।

প্রভাত: ঠিক। আমি এই পাঁচটি নিয়ে বলছি কারণ, এগুলিকে ধরে কিছু অঙ্ক করেছি আমি।

হর্ষ: ভারতে এখনকার রাজনীতির দিকে তাকালে মনে হয় আমরা এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কয়েকদিন আগে একটি কার্টুন দেখছিলাম, তাতে দেখাচ্ছে বাইরে কারফিউ জারি রয়েছে আর একজন ঘরে বন্দি। সে বেরোনোর জন্য কাতর অনুনয় করছে। কারণ, তার হাতে টাকাকড়ি কিছু নেই। আজ আমরা অর্থনৈতিক সঙ্কটের অন্য এক রূপ দেখছি। যে সঙ্কটে আমি কোনও কাজ না করলেও বা আমার কোনও সামাজিক অধিকার না থাকলেও অন্তত একটি ‘শক্তিশালী হিন্দু রাষ্ট্রের’ আমিও একটি অংশ।

পৃথিবীর অন্যত্রও আমরা দেখছি সেই ধরনের রাজনৈতিক নেতাদের উত্থান, যেরকমটা আমরা নির্বাচন করেছি। তা, আপনার কি মনে হয় সার্বজনিক সামাজিক অধিকার নিয়ে কথাবার্তা আদৌ কি উঠে আসবে?

প্রভাত: আমার মনে হয় হিন্দুদের অধিকার এসে রাজনৈতিক কথোপকথনগুলি ছিনিয়ে নিয়েছে। কিছু অর্থে আর্থিক উন্নতি এবং মানুষের জীবনধারণ সংক্রান্ত প্রশ্নগুলি নিয়ে রাজনৈতিক কথোপকথনের পরিসর আমরা আবার ছিনিয়ে আনতে পেরেছি।

হর্ষ: এই আলোচনাটি চমকপ্রদ হল। শেষ প্রশ্ন হিসেবে আমি জানতে চাইছি যে, এই ধারণাটিকে ইউটোপিয়া বলে সমালোচনা করে বলা হয় যে এতে কাজের কাজ কিছু হবে না এবং আমাদের হাতে টাকাও নেই। একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে আপনি অঙ্ক করেছেন। আমরা যেভাবে জনসম্পত্তি খরচ করছি, তা অবশ্যই নতুন করে সংগঠিত করতে হবে। কিন্তু সার্বজনিক সামাজিক অধিকারের জন্য কীভাবে আমরা সম্পদ সংগ্রহের ব্যবস্থা করব, যদি আমরা শুধু ওই পাঁচটি অধিকারকেই আঁকড়ে থাকি, যেগুলি নিয়ে আপনি লিখেছেন?

প্রভাত: দুটি স্তরে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়। প্রথমত, আর্থিক সম্পদ। আমার অঙ্ক অনুযায়ী দেখছি এর জন্য আমাদের জিডিপি অর্থাৎ মোট দেশীয় উৎপাদনের ১০ শতাংশ চাই অতিরিক্ত ব্যয় হিসেবে যাতে ওই পাঁচটি অধিকার অর্জন করা যেতে পারে। জিডিপি-র ১০ শতাংশ টাকা তোলা বিশেষ কঠিন নয়।

যেমন আমি অঙ্ক করে দেখেছি ভারতের সর্বমোট যে মূল্য তা প্রায় ৫৭০,০০,০০০ কোটি টাকার সমান। যদি আমরা একেবারে উপরিভাগের ১ শতাংশ মানুষকে হিসেবে নিই, তাহলে দেখব যে তারা এর প্রায় ৬০ শতাংশ অধিকার করে বসে আছে। যদি আপনি এদের সম্পত্তির উপর ২ শতাংশ কর কার্যকর করেন তা থেকে আপনার হাতে প্রায় ৬,৬০,০০০ কোটি টাকা আসবে। তারপরে সম্পত্তি করের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই একটি উত্তরাধিকারী কর জুড়তে হবে, নাহলে আপনি শুধু ভাগটুকুই করবেন।

সুতরাং আপনি ধরে নিন, উপরিতলের ওই ১ শতাংশ মানুষদের কাছে যে সম্পত্তি রয়েছে তার ৫ শতাংশ পরিমাণ প্রতিবছর হাতবদল হচ্ছে। সেই টাকার এক-তৃতীয়াংশ আপনি নিয়ে নিলেন, যা পুঁজিবাদের স্ব-ন্যায্যতার দাবি অনুযায়ী কোনও অন্যায় কাজ নয়। পুঁজিবাদ বলে আপনার কাছে সম্পত্তি রয়েছে কারণ আপনি গুণী মানুষ। সেই ক্ষেত্রে আপনার সন্তান কেন সম্পত্তির অধিকারী হবে, যদি না সে সেই গুণগুলিরই প্রকাশ না ঘটায়। যদি এই ভিত্তিতে উত্তরাধিকার কর কার্যকর করা যায় তাহলে হাতে আসছে আরও ৫,৫০,০০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মোট ১২,০০,০০০ কোটি টাকা। সত্যি বলতে কি, ১০ শতাংশ ব্যয় করবার জন্য আপনাকে যে টাকা হাতে পেতে হবে তা ১০ শতাংশের থেকে কম। যেহেতু এই ধরনের খরচের ফলগুলির গুণিতক প্রভাব রয়েছে, তাই আয় বাড়বে, যা থেকে আরও কর আসবে।

হর্ষ: যখন এই সব ঘটছে রাষ্ট্রের সামনে আরেকটি বাধা আসবে। আপনার কি মনে হয় মানুষদেরকে সার্বজনিক সামজিক অধিকার প্রদানের ক্ষমতা রাষ্ট্রের হাতে রয়েছে?

প্রভাত: আপনি জানেন, যে রাষ্ট্র সার্বজনিক সামাজিক অধিকার চালু করেছে, তারও নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে। ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জোয়ান রবিনসন একটি ভালো কথা বলেছেন। উনি বলছেন যে রাষ্ট্র পুঁজিবাদী ব্যবস্থার খারাপ দিকগুলি শুধরে নিতে পারে, সেই রাষ্ট্র পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ছাড়াই চলতে পারে। এবং যে রাষ্ট্র পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ছাড়া চলতে পারে না, তার খারাপ দিকগুলি শুধরে নেওয়ার ইচ্ছাও সেই রাষ্ট্রের নেই।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4650 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...