ক্ষুধার কসম জান

সৌনক দাশগুপ্ত

 

দৃশ্য ১: হন হন করে হেঁটে চলেছেন যমরাজ। পিছু পিছু নিপাট আনুগত্যে চিত্রগুপ্ত। চিত্রগুপ্তর চোতা অনুযায়ী আর খানিক সময় পরেই কিছু মর্তবাসীর ইহলীলা সাঙ্গ হবে। কিন্তু আঁতিপাতি খুঁজেও মৃত্যুর কোনও নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায়নি খাতায়। তাই যমরাজ আগেভাগে চলেছেন স্বচক্ষে ব্যাপারটা খতিয়ে দেখতে।

দৃশ্য ২: এমন মৃত্যু আগে কখনও দেখেনি যমরাজ। বিস্ময়ে চিত্রগুপ্তর চোখ দুটো বড় হতে হতে চশমা খসে পড়ে গেছে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। একটি পুরুষ, একটি মহিলা, দুটি শিশুর শিয়রে শমন। আগুন গ্রাস করেছে মানুষগুলোর জঠরকে। হ্যাঁ, ক্ষুধার আগুন।

আজ্ঞে হ্যাঁ, ক্ষুধার মতো সর্বব্যাপী মহামারী পৃথিবীতে আর দুটি নেই। বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী গোটা বিশ্বে আটশো বিয়াল্লিশ লক্ষ মানুষ এই মহামারীর কবলে ধুঁকছে, হ্যাঁ ক্ষুধার জ্বালায়। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার বারো শতাংশ। বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা সূচক (Global Hunger Index) অন্তত তাই বলছে। এবার অনিবার্য প্রশ্ন হল এই ক্ষুধা সূচক ব্যাপারটা কী? খিদে আবার কবে থেকে মাপযোগ্য হল? তাই মূল আলোচনায় ঢোকার আগে কিছু জিনিস আমাদের জেনে নিতে হবে।

১. বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা সূচক: গোদা বাংলায় বলতে গেলে এ হল ক্ষুধার্ত মানুষের পরিসংখ্যান। কিন্তু ক্ষুধার্ত মানুষের সংজ্ঞাটা কী? খিদে পাওয়া মাত্রই কি সে ক্ষুধার্ত? না, আদতে তা নয়। একজন মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম যে খাদ্য, পুষ্টি বা আহার্যর প্রয়োজন হয়, তার কোনওটাই যখন পায় না তখন তাকে প্রকৃত ক্ষুধার্ত বলা চলে। শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য দৈনিক যে পরিমাণ আহার দরকার, তা যখন কোনও মানুষ পায় না এবং এই না পাওয়াটা যখন দীর্ঘমেয়াদি হয় তখন সেই মানুষটিকে ক্ষুধার্ত বলে চিহ্নিত করা যায়। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (IFPRI) দু’হাজার ছয় সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার্ত মানুষের পরিসংখ্যান বের করছে। তাঁদের এই পরিমাপ গোটা বিশ্ব, প্রতিটি দেশ এবং প্রতিটি দেশের সমস্ত অঞ্চলব্যাপী। উদ্দেশ্য সারা বিশ্বব্যাপী খাদ্য সচেতনতা, খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলা।

২. পরিসংখ্যানের মাপকাঠি: মূলতঃ চারটি বিষয়কে মাথায় রেখে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়–

প্রথমত, যাঁদের প্রয়োজনের তুলনায় দৈনিক আহার্য খাদ্যগুণ অনেক কম।

দ্বিতীয়ত, পাঁচ বছরের নীচের যে সব শিশুর ওজন তাঁদের উচ্চতার তুলনায় অনেক কম অপুষ্টিজনিত কারণে।

তৃতীয়ত, পাঁচ বছরের নীচের যে সব শিশুর ওজন বয়সের তুলনায় অনেক কম, শরীরে দীর্ঘকালীন অপুষ্টিজনিত ছাপ স্পষ্ট। অর্থাৎ শারীরিক বিকাশ ও বৃদ্ধির হার অত্যন্ত কম।

চতুর্থত, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, সুষম আহারের অভাব এবং অপুষ্টিজনিত কারণে পাঁচ বছরের নীচে বয়স এমন শিশু মৃত্যুর হার।

এই চারটি মূল বিষয়কে মাথায় রেখে আমরা যদি ‘খেতে না পাওয়ার’ শতকরা হার বিচার করি তবে তা কিছুটা এরম দাঁড়ায় :

ক। শতকরা হার ৯.৯ শতাংশের কম– ক্ষুধার সমস্যা একদম কম
খ। শতকরা হার ১০-১৯.৯ শতাংশ– ক্ষুধার সমস্যা মাঝারি
গ। শতকরা হার ২০-৩৪.৯ শতাংশ– ক্ষুধার সমস্যা বেশ ভালো
ঘ। শতকরা হার ৩৫-৪৯.৯ শতাংশ– ক্ষুধার সমস্যা খুবই বেশি
ঙ। শতকরা হার ৫০ শতাংশর বেশি– ক্ষুধার সমস্যা অত্যন্ত মারাত্মক

৩. পরিস্থিতি এখন যেমন: দু’হাজার সতেরোতে প্রকাশিত ক্ষুধা সূচক অনুযায়ী গোটা বিশ্বে বুভুক্ষু মানুষের সংখ্যা সাতাশ শতাংশ কমে গেছে দু’হাজার সালের পরিসংখ্যানের তুলনায়। দু’হাজার সতেরোতে মোট একশো উনিশটি দেশকে এই সমীক্ষার আওতায় নিয়ে আসা হয়। একটু দেখে নেওয়া যাক ক্ষুধা সূচক অনুযায়ী কোন কোটায় কটা করে দেশ পড়েছে।

ক। শতকরা হার ৯.৯ শতাংশের কম—৪৩টি দেশ
খ। শতকরা হার ১০-১৯.৯ শতাংশ– ২৪টি দেশ
গ। শতকরা হার ২০-৩৪.৯ শতাংশ– ৪৪টি দেশ
ঘ। শতকরা হার ৩৫-৪৯.৯ শতাংশ– ৭টি দেশ
ঙ। শতকরা হার ৫০ শতাংশর বেশি– ১টি দেশ

সমীক্ষা বলছে ক্ষুধার সমস্যায় সব থেকে ভুক্তভোগী হল দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকায় সাহারার দক্ষিণ প্রান্তের দেশগুলো। দু’হাজার সতেরোর গোড়ার দিকে রাষ্ট্রপুঞ্জও ঘোষণা করেছিল, চারটি দেশে প্রায় দু’কোটি মানুষ চরম দুর্ভিক্ষের আওতায়। নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান এবং ইয়েমেন। এই অবস্থা একদমই প্রকৃতিগত নয়। এই দেশগুলোতে বছরের পর বছর চলতে থাকা হিংসা, হানাহানি, রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

এ তো গেল আফ্রিকার কথা। আমাদের এশিয়া মহাদেশের অবস্থাও তথৈবচ। দুটি বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো আফ্রিকার দেশগুলোকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। এক, পাঁচ বছরের নীচের যে সব শিশুর ওজন তাঁদের উচ্চতার তুলনায় অনেক কম অপুষ্টিজনিত কারণে– এই সংখ্যাটা আফ্রিকার যে কোনও দেশের তুলনায় বেশি।

দুই, পাঁচ বছরের নীচের যে সব শিশুর ওজন বয়সের তুলনায় অনেক কম, শরীরে দীর্ঘকালীন অপুষ্টিজনিত ছাপ স্পষ্ট। অর্থাৎ শারীরিক বিকাশ ও বৃদ্ধির হার অত্যন্ত কম– এ বিষয়েও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোই এগিয়ে।

সুধী পাঠক এতক্ষণ ক্ষুধা, সূচক, আফ্রিকা, এশিয়া, শতাংশ, মাপকাঠি এসব পড়তে পড়তে বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে গেছেন। এই অব্দি এসে লেখাটার আদৌ কোনও উদ্দেশ্য আছে কিনা তা ভেবে সোনামুগের আমেজি ঢেঁকুরটা নষ্ট করার কোনও মানে হয় না ভাবছেন। আফ্রিকার কোন মরুভূমিতে কে বালি খেয়ে বাঁচল নাকি নিজের দেহ শকুনকে উৎসর্গ করল তা ভেবে পাঁঠার মাংসের ভাতঘুম নষ্ট করারও তো কোনও মানে হয় না। তবে ব্যাপারটা হল, যে তথ্যটা না দিলে আপনার সান্ধ্যকালীন আড্ডাটা জমবে না সেটুকু দিয়ে দিই।

ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (IFPRI)-এর সমীক্ষা বলছে দক্ষিণ এশিয়ার মোট ক্ষুধার্ত মানুষের তিন-চতুর্থাংশ ভারত রাষ্ট্রের অধিবাসী। আজ্ঞে হ্যাঁ, আমার আপনার মতোই তাঁরাও ভারতবাসী। দু’হাজার সতেরো সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা সূচক অনুযায়ী ভারতের স্থান একশোতম। একশো উনিশটি দেশের মধ্যে একশোতম। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে গোটা বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ক্ষুধার্ত মানুষ আমার দেশ, আপনার দেশ ভারতবর্ষে বাস করে। প্রতিদিন প্রায় কুড়ি কোটি, হ্যাঁ কুড়ি কোটি ভারতবাসী অনাহারে কাটাচ্ছে। দিনে গড়ে প্রায় সাত হাজার এবং বছরে প্রায় পঁচিশ লক্ষ মানুষ অনাহারে মারা যায়।

তবে আমরা উল্লাস করব। একশো ব্যাপারটা এমনিতেই উল্লসিত হবার মতো। আমরা উল্লাস করব। বিরাট কোহলি একশো করলে, সচিন একশো সেঞ্চুরি করলে যেরম উল্লাস করি, সেরকম উল্লাস করব। একশো বলে কথা। চিরশত্রু পাকিস্তান পিছনে পরে আছে বলে কথা, একশো ছয়তম স্থান। অতএব উল্লাস করো। এশীয় দেশগুলির মধ্যে ভারতের পরে আর আছে আফগানিস্তান। তালিবানি বিভীষিকার চারণভূমি আফগানিস্তান, মার্কিন সেনার বন্দুকের ডগায় থাকা আফগানিস্তান। আমার আপনার ভারতবর্ষ ঢের এগিয়ে, ডিজিটাল ভারতবর্ষ, শাইনিং ভারতবর্ষ, আইপিএল-এর ভারতবর্ষ, আইএসএল-এর ভারতবর্ষ। আচ্ছা ক্ষুধার সূচক অনুযায়ী ভারতের থেকে ভালো অবস্থানে আছে কোন এশীয় দেশগুলি? বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, উত্তর কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং বলাবাহুল্য চীন, জাপান ইত্যাদি। অর্থনৈতিকভাবে তুলনা করলে ভারত নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মায়ানমার ইত্যাদির তুলনায় এগিয়ে থাকা দেশ। অথচ যেখানে ভারতের বেকারত্বের হার ৫ শতাংশ সেখানে শ্রীলঙ্কায় ৪.৫, নেপালে ৩.৩ এবং বাংলাদেশে ৪.৯ শতাংশ। কারণ আমরা ‘আচ্ছে দিন’-এর আওতায় বাস করি। অথচ রাজনৈতিক দলগুলির ভোট পুস্তিকায় গোটা গোটা অক্ষরে লেখা থাকে বেকারত্ব সমস্যা সমূলে উৎপাটন করা হবে। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন!

আমাদের দেশের ২১ শতাংশ শিশুর (পাঁচ বছরের নীচে) ওজন তাঁদের শারীরিক দৈর্ঘ্যের তুলনায় অনেক কম। ৩৮ শতাংশ শিশুর শারীরিক দৈর্ঘ্য তাঁদের বয়সের তুলনায় কম। কারণ আমার দেশ ভারতবর্ষে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ লিটার দুধ ভক্তি নামক সংক্রামক রোগের শিকার হয়ে নালায় বয়ে যায়। দু’হাজার সাতে অনাহার সমস্যায় চীন ছিল সাতচল্লিশ নম্বর স্থানে, ভারত চুরানব্বই। আর দু’হাজার সতেরোতে চীন ঊনত্রিশ, দক্ষিণ এশীয় অধিকাংশ দেশ ক্ষুধা সূচকে নিজের স্থানের উন্নতি ঘটিয়েছে, সেখানে ভারত পিছিয়ে এসে একশো। কারণ আমার দেশ আগে বাড়ছে, আমার দেশে আধার কার্ড না থাকার দরুন রেশন দেওয়া হয়নি ঝাড়খণ্ডের একাদশী তরুণীকে, অতএব অনাহারে মৃত্যু তালিকায় আরও একটি নাম।

দু’হাজার ছয় সালে বলবৎ হয় খাদ্য সুরক্ষা আইন। তৈরি হয় ফুড সেফটি এন্ড স্টান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSAI)। মূল উদ্দেশ্য সুষম খাদ্য বণ্টন, সঠিক গুণগত মানের খাদ্য বণ্টন, ক্রেতার খাদ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা ইত্যাদি। কিন্তু বছর এগারো পার করেও এই আইন কি সঠিকভাবে বলবৎ হয়েছে? তার উত্তর বোধহয় দু’হাজার সতেরোর বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা সূচক দিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে।

আমার দেশে সব থেকে বেশি ক্ষুধার্ত বোধহয় দুর্নীতি নামক, তবেই না সর্বগ্রাসী। খাদ্য নিরাপত্তার গোড়ার ব্যাপার হল সুষম খাদ্য বণ্টন অর্থাৎ রেশন ব্যবস্থা; দুর্নীতি এবং রাজনীতির যৌথ মারপ্যাঁচে যা অনেকাংশেই ধুঁকছে। বাদ যায়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও; শৈশব-কৈশোরকে অপুষ্টিজনিত সমস্যা থেকে নিরাপত্তা দিতে যে মিড-ডে মিল, দুর্নীতি সেখানেও।

আর আছেন আমাদের প্রিয় নেতা মন্ত্রীরা। তাঁদের বিতর্কের প্রিয় বিষয় শ্রীমান গান্ধী ট্যুইট করার ফলে কোন রাজ্যে খরা সমস্যা বৃদ্ধি পেল, অথবা শ্রীযুক্ত মোদী হাঁচি দেবার ফলে কোন রাজ্যে বন্যা এসে গেল! সমীক্ষা বলছে সংসদে মোট যত প্রশ্নোত্তর বা আলোচনা হয় তার মাত্র ৩-৫ শতাংশ শিশুদের পুষ্টিকরণ, অনাহার, খাদ্য সুরক্ষা এসব নিয়ে। কারণ হে গণতন্ত্র তুমি তো মুলতুবি নামক ব্রহ্মাস্ত্র তুলে দিয়েছ হাতে।

সরকার বদলেছে, বদলেছে দেশের স্লোগান। এই এখন যেমন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’। তো আমরা কী তৈরি করছি? আমরা তৈরি করছি ক্ষুধাতুর মধ্যপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড। হ্যাঁ অনাহারে মৃত্যুর দিক থেকে প্রথম তিন রাজ্য। সংবিধান অনুযায়ী আমরা জাত-পাত বিভেদহীন, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিন্তু মজার বিষয় হল, সমীক্ষা অনুযায়ী দলিতদের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার ৫৩ শতাংশ এবং আদিবাসীদের মধ্যে এই সংখ্যা হল ৬৯ শতাংশ। প্রশ্ন থেকেই যায়!

শেষ এখানেই নয়, এর উপর আছে আমাদের সাধারণ মানুষের চিরায়ত ব্যাধি, খাবার নষ্ট করা। একটি সমীক্ষা বলছে প্রতি বছর এই দেশে গড়ে ছয় কোটি সত্তর লক্ষ টন খাবার ফেলা যায়, নষ্ট হয়। মজার বিষয় হল এই পরিমাণ খাবার দিয়ে গোটা ইংল্যান্ডের মানুষকে একটি বছর খাইয়ে-পরিয়ে রাখা যাবে।

ইংল্যান্ড বলতে মনে পড়ল, যুব বিশ্বকাপ ফাইনাল আজ। মুখোমুখি স্পেন-ইংল্যান্ড। এই লেখা প্রকাশিত হবার সময় সেই খেলার ফলাফল আমাদের ফেসবুকের ব্যালকনি সাজিয়ে গুছিয়ে তুলবে। কিন্তু প্রসঙ্গ অন্য। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ বিশ্বকাপ আয়োজন করছে খুবই গর্বের কথা। এত সমারোহ, এত আলো, এত আয়োজন, নোটবন্দি অর্থনীতি ফ্লাড লাইট হয়ে জ্বলছে মাঠে মাঠে। অথচ স্টেডিয়ামে ঢোকার পথে যে শিশুটি অভুক্ত ও অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে তাঁর চোখ অব্দি ওই আলোর ঝলকানি পৌঁছচ্ছে তো? তবে আজ রাতে সে নিশ্চিন্তি, ডাস্টবিন থেকে ফেলে যাওয়া স্যান্ডউইচ কিংবা বার্গার আজ তার কপালে লিখে দিয়েছে এদেশের গণতন্ত্র।

এ তো গেল সমস্যা। এর প্রতিকার কই? হে সুধী পাঠক প্রতিকারের কথা কে ভাবে! নেতা-আমলা-সাধারণ মানুষ সবাই বলতে ভালোবাসে, করা না করা তো ভবিষ্যকল্পের বিষয়বস্তু। আমার টুকুন সোনা পাউরুটি না খেলে আমি সেটা ডাস্টবিনে ফেলব। তবুও টুকুন যতটা খাবে ততটাই তাঁকে দিয়ে বাকিটা মালতির ছেলের জন্য রাখব না। কাজের লোক, পয়সা পায়, খাবার দিয়ে মাথায় তুলে লাভ নেই। তার থেকে ডাস্টবিন ভালো।

আগে এই মানসিকতার পরিবর্তন হোক, তারপর না হয় অনাহারের প্রতিকার নিয়ে ভাবব।

অতএব ‘অনাহারে নাহি খেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ…’

তথ্যসূত্র :

https://scroll.in/article/819052/hunger-is-indias-greatest-problem-even-today-so-why-dont-we-ever-hear-about-it

http://businessworld.in/article/India-Wastes-As-Much-Food-As-United-Kingdom-Consumes-Study/27-08-2017-124858/

http://www.ifpri.org/topic/global-hunger-index

http://www.mondaq.com/india/x/244880/food+drugs+law/Laws+Governing+The+Food+Industry+In+India+Revisited

http://fssai.gov.in/home/fss-legislation/food-safety-and-standards-act.html

https://www.quora.com/How-many-people-die-with-hunger-in-India-per-annual

https://borgenproject.org/15-world-hunger-statistics/

https://www.indiafoodbanking.org/hunger

https://www.google.co.in/amp/indianexpress.com/article/india/jharkhand-girl-starvation-death-family-stopped-getting-ration-8-months-ago-4897433/lite/

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4650 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

  1. এই ধরণের লেখা পত্রিকাকে সমৃদ্ধ করে, তথ্যসমৃদ্ধ একটি লেখা উপস্থাপনার গুণে সুখপাঠ্য হয়েছে, সহজ সাবলীল লেখার গতি, ধন্যবাদ চার নম্বর ও লেখককে।

আপনার মতামত...