দোলাচলে পাকিস্তান

সৌরিশ ঘোষ

 



গবেষক, প্রাবন্ধিক

 

 

 

পরিস্থিতি যে-দিকেই মোড় নিক না কেন, পাকিস্তানের জন্য কোনও ভাল বিকল্প নেই। তাদের বাছাই প্রক্রিয়া সর্বদাই হবে একজন স্বৈরাচারী প্রবণতাসম্পন্ন ইসলামি পপুলিস্ট নেতা যার সমস্যা মোকাবিলার জন্য কিছু বাস্তব সমাধান রয়েছে, এবং অন্যদিকে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত, রাজনৈতিক সামরিক বাহিনি, যারা ক্ষমতায় থাকার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং নীতির বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ, এই দুইয়ের মধ্যে

 

প্রচলিত একটি প্রবাদ রয়েছে বাংলায়, “শকুনের শাপে গরু মরে না”, কিন্তু এক্ষেত্রে যদি বলি গরু সত্যিই মৃত্যুমুখে দাঁড়িয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার দিন গুনছে তাহলে একটুও বাড়িয়ে বলা হবে না। ভারতের তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা অনেকদিন আগেই পাকিস্তানকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে পাকিস্তান যে সেই দিকেই মোড় নিয়েছে সে-কথা অনস্বীকার্য। ব্যাপক অর্থনৈতিক সঙ্কট, দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং আইনশৃঙ্খলার ক্রমাগত অধোগতিতে সারা দেশ ধুঁকছে। ইসলামাবাদ তার ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম এবং তার জন্য এখন অন্যান্য মিত্র দেশের কাছে তাকে হাত পাততে হচ্ছে। পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদদের মতে পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে এমনকি আইএমএফ থেকে ১.১ বিলিয়ন ডলারের প্রত্যাশিত পরিমাণও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। কিন্তু কেন পাকিস্তান অনেকটা লেবাননের মতোই একটি ডিস্টোপিয়ান দেশে পরিণত হচ্ছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে বিশদে আলোচনা প্রয়োজন।

 

পাকিস্তানের দুঃখজনক পরিস্থিতি

পাকিস্তান শুরুর দিকে সার্বভৌম এবং স্বাধীন দেশ ছিল, কিন্তু শুধুমাত্র কাগজেকলমে। ১৯৪৭ সালে গঠনের পর থেকে, পাকিস্তান এই ভয়ে বেঁচে আছে যে ভারত তাকে যে-কোনও মুহূর্তে আঁকড়ে ধরবে এবং সেই মনস্তাত্ত্বিক সঙ্কট কখনওই তাকে সম্পূর্ণ সার্বভৌম হতে দেয়নি। দুর্নীতিপরায়ণ অভিজাতদের কারণে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো বরাবরই দুর্বল ছিল এবং পাকিস্তানের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সদা শক্তিশালী সামরিক বাহিনির উপস্থিতি অবস্থার আরও অবনতি ঘটিয়েছিল। গণতন্ত্রকে যদি বিকশিত করতে হয়, তাহলে সামরিক শক্তি, পুলিশ ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দমনমূলক যন্ত্রগুলিকে সমান্তরালভাবে না চালিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। ঠিক এই পরিসরেই নেহরুর অধীনে ভারত অনেক সফলতা অর্জন করেছে যা জিন্নাহ-শাসিত পাকিস্তান পারেনি। যদিও পাকিস্তানি অভিজাতদের মধ্যে বহুকাল ধরেই এই যুক্তি প্রচলিত যে জিন্নাহ যদি আরও কয়েক বছর বেঁচে থাকতেন তবে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু এই কথা খুব নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। পাকিস্তান কখনওই জনপ্রিয় সার্বভৌমত্বকে বিকশিত হতে দেয়নি কারণ গণতন্ত্রের শক্তি কখনওই সাধারণ জনগণের কাছে প্রসারিত হয়নি এবং জনগণ সেই বিষয়ে উদাসীন ও সর্বদা বঞ্চিত হয়েই রয়ে যায়। একদিকে ভারতের ভয়, আর অন্যদিকে, একটি দুর্বল, ভঙ্গুর দেশ হওয়ার ভীতি পাকিস্তানকে অন্যান্য আরও শক্তিশালী দেশগুলির সঙ্গে হাত মেলাতে এবং তাদের ছায়ায় সুরক্ষিত বোধ করতে প্ররোচিত করেছিল। তাই শুরুতে সে হাত মেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর বর্তমানে সে চিনের শরণাপন্ন হয়েছে। ভারতকেন্দ্রিক নয় এমন যে-কোনও দেশকেই ইসলামাবাদ তার মিত্র বলে বিশ্বাস করে। কিন্তু সেই নির্ভরতা কখনওই পাকিস্তানকে পুরোপুরি সার্বভৌম হতে দেয়নি এবং শক্তিশালী ও স্বাধীন পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতি প্রণয়ন করায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শক্তি দেশের ক্ষমতাবান অভিজাতদের হাতে থাকার ফলে, তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা চিনের মতন দেশগুলির সঙ্গে অশুভ আঁতাত স্থাপনের কোনও সমস্যা হয়নি। এটি কারও অজানা নয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ)-র সঙ্গে সরাসরি সমন্বয় করে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এবং পাকিস্তানি সামরিক শক্তি যখনই বুঝতে পারে যে সরকার আর তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করছে না তখনই তারা দেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে শাসনক্ষমতা দখল করেছে। সুতরাং, পাকিস্তানের স্বাধীন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মেরুদণ্ড সর্বদা দুর্বল কারণ তা দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত যাদের মূল লক্ষ্য হল যতদিন সম্ভব ক্ষমতা দখল করে রাখা এবং দেশের ধনসম্পদ আত্মসাৎ করা।

 

ব্যক্তিটির নাম ইমরান খান

ইমরানকে ক্ষমতায় আসতে সহায়তা করে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে তারাও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। অন্যদিকে ইমরানও একজন বিশ্বব্যাপী আইকন যে পদে বসলে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি কিছুটা উজ্জ্বল হবে সারা পৃথিবীর কাছে। সমস্যা তখন শুরু হয় যখন ইমরান পাকিস্তানি সেনার ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে এসে এক স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গড়তে শুরু করেন। ইমরান চেয়েছিলেন অন্যদের সুরে সুর না মিলিয়ে বেজিঙের সঙ্গে সুসম্পর্ক গঠন করতে যা ওয়াশিংটন কখনওই সুনজরে দেখেনি। এমন খবর ছিল যে ইমরান চিনাদের কাছে বিপুল পরিমাণে জমি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ হস্তান্তর করছেন এবং দেশটিকে প্রায় চিনা উপনিবেশে পরিণত করছেন। এই পদক্ষেপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকটবর্তী পাকিস্তানের সামরিক বাহিনি পত্রপাঠ প্রতিহত করে এবং তখন থেকেই সরকার ও সামরিক শক্তির মধ্যে ফাটল আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। সর্বোপরি, ইমরান ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছিলেন যা শক্তিশালী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে তার বিরোধী করে তুলেছিল। এই গোষ্ঠীগুলির পাকিস্তানের ক্ষমতার অলিন্দে গভীর প্রভাব রয়েছে এবং মজার বিষয় হল তারাও ইমরান খানকে গদিতে বসতে সাহায্য করেছিল। সুতরাং, এই তিন শক্তিশালী ও প্রভাবশালী পৃষ্ঠপোষকরা অর্থাৎ সামরিক শক্তি, সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সকলেই তার বিরোধী হয়ে ওঠে এবং যার ফলস্বরূপ ইমরান খানকে বলপূর্বক ক্ষমতা থেকে বিচ্যুত করা হয়। এমনকি কারাবাসের শাস্তিও ধার্য হয় তার জন্য।

কিন্তু ইমরানের বিপুল সংখ্যক সমর্থকরা তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগে কান না দিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়ায় এবং সেনাসমর্থিত শেহবাজ শরিফের অস্থায়ী সরকারের সঙ্গে লড়াই দাঙ্গায় লিপ্ত হয়। সেই সময়ের একটি স্লোগান— “কাহা থা ইমরান কো মাত ছেড়না” (আগেই বলেছিলাম ইমরানের গায়ে কেউ যেন হাত না তোলে)— সমগ্র দেশের রাষ্ট্র-নাগরিক চুক্তির পতনকে চিহ্নিত করে। ১৯৭১ সালের পর থেকে পাকিস্তান এরকম গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়নি এবং সাধারণ মানুষের দ্বারা সামরিক শক্তির আক্রান্ত হওয়ার নজিরও তার ইতিহাসে বিরল। এমনকি জেনারেল হেডকোয়ার্টারের ওপর আঘাত হেনে তার নিরাপত্তা লঙ্ঘন করে সাধারণ মানুষ। নৈতিক আদর্শের প্রতীক ইমরানের বিপুল জনপ্রিয়তা এবং ইসলামিক পপুলিজমের সঙ্গে এই অন্তর্বিস্ফোরক অর্থনীতি একটি গভীর আঘাত হানে পাকিস্তানের বুকে। পাকিস্তানি সামরিক শক্তির ভাবমূর্তি এবং তাদের রাজনৈতিক আধিপত্য এখন ক্ষুণ্ণ। সামরিক বাহিনির মধ্যে এই আঘাত এতটাই তীব্র ছিল যে সমগ্র প্রতিষ্ঠান দ্বিখণ্ডিত হয় প্রাক্তন প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এবং ইমরানপন্থী আইএসআই-এর প্রাক্তন প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদের মধ্যে। এবং এই সত্য তারা মেনে নিতে বাধ্য হয় যে তাদের চিরশত্রু ভারতের সঙ্গে লড়াই করার মত শক্তি বা সম্পদ কিছুই নেই পাকিস্তানের কাছে।

ঐতিহাসিকভাবে নাগরিক-সামরিক সম্পর্ক থেকে শুরু করে আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা বা ইচ্ছামতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন ও প্রত্যাখ্যান করে গণতন্ত্র পরিচালনার মত কৌশলগত ভুল বর্তমান সমস্যাগুলির উৎসে রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল এরপর কী? এবং এর উত্তর অনুধাবন করার আগে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বক্তব্য থেকে দূরত্ব স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এই যুক্তি যে ব্যর্থ অর্থনীতির দায় না নিতে চেয়ে সামরিক শক্তি বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারে না; দ্বিতীয়ত, বিচারবিভাগ শক্তিশালী এবং ইমরানের বিরুদ্ধে আরোপিত সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগ ইতিমধ্যেই বাতিল করে দিয়ে নিজেকে একটি ভারসাম্য রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। মনে রাখতে হবে, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনও গণতান্ত্রিক বিপ্লব হবে না, এটা ক্ষমতা দখলের জন্য একটি কুৎসিত লড়াই মাত্র।

 

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে

পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ যে একেবারে অন্ধকারাচ্ছন্ন তা এখনই বলা উচিত হবে না। এই মুহূর্তে কোনও অনিশ্চিত পরিস্থিতির পূর্বাভাস দেওয়ার পরিবর্তে আমরা সম্ভাব্যতাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করতে পারি। প্রথমত, সামরিক শক্তি তার সমস্ত দমনমূলক ক্ষমতা, প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব, ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে মৈত্রী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতির মোকাবিলা করে উঠতে পারছে না। উল্টোদিকে ইমরানের কাছে রয়েছে বিপুল জনসমর্থন, যার মধ্যে কিছু ইসলামি রক্ষণশীল, জঙ্গি এবং গোয়েন্দা সংস্থার মিত্ররাও রয়েছেন। এখন এক শিবির যদি পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে আনার জন্য হিংসার রাজনীতি শুরু করে তাহলে উলটোদিকের শিবিরের যেমন সেই আগ্রাসনকে সহ্য করেও টিকে থাকার শক্তি রয়েছে তেমনই রয়েছে নিজের ভাবমূর্তি ও বিশ্বব্যাপী খ্যাতির সাহায্যে পূর্বোক্ত শিবিরের ওপর চাপ সৃষ্টি করার ক্ষমতা। এই সংঘর্ষের অভিমুখ দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল— এক, ইমরানের প্রতিবাদকারীদের ক্ষমতা এবং দুই, সেনাবাহিনির সক্ষমতা এবং তা মোকাবিলা করার ইচ্ছা। দ্বিতীয়ত, সামরিক বাহিনি ইতিমধ্যেই পাঞ্জাবে পা রেখেছে এবং বর্তমানে তাদের কাছে যথেষ্ট শক্তি রয়েছে এবং প্রয়োজন না হলেও বন্দুকের ট্রিগার চাপতে তারা কুণ্ঠা বোধ করে না। একটি বাস্তব মিলিটারি অভ্যুত্থানের দিকে এটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও সেনাবাহিনি সব কিছু নিয়ন্ত্রণে এনে দুইয়ের মাঝে এক নীরবতা স্থাপন করতে পারে তবুও, বৈধতার ঘাটতি এবং সরকার পরিচালনার অযোগ্যতার কারণে রাজনৈতিক ফ্রন্টে গিয়ে তারা ব্যর্থ হবে। এতে শুধু হিংসার বৃদ্ধি হবে এবং অবস্থার আরও অবনতি হবে। ২০২১ সালে মায়ানমারে যা ঘটেছিল (যদি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনি ভুল ধারণা করতে থাকে) সেই একইরকম হতে পারে এক্ষেত্রে। সেই সময়ে মায়ানমারে সেনাবাহিনির জেনারেল মিং অং হ্লাইং, অং সান সু চির সমর্থনের ভুল গণনা করে অভ্যুত্থান-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার নির্দেশ জারি করেছিলেন, যার ফলে তিনি এখন শুধুমাত্র মাদকের মুনাফার উপর ভাসমান একটি ক্ষুদ্র স্বৈরশাসকে পরিণত হয়েছেন।

সেনাবাহিনি এবং অস্থায়ী সরকার যদি আশা করে যে এই বিক্ষোভগুলি পর্যায়ক্রমে পেরিয়ে যাবে এবং ইমরানকে আবারও কারারুদ্ধ করে বিচার দীর্ঘায়িত করা যেতে পারে, তবে তারা পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছে না। ইমরান একদিকে পাকিস্তানের মানুষের কাছে মুক্তিদাতা ভাবমূর্তির প্রতীক হয়ে উঠেছেন ও তদুপরি চিন ও অন্যান্য রাষ্ট্রের যে সমর্থন পাচ্ছেন তার থেকে খুব সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়। এটি যে ক্ষতির সৃষ্টি করবে তা অদূর ভবিষ্যতে নানান প্রতিষ্ঠান-বিরোধী বিদ্রোহের জন্ম দেবে সারা দেশ জুড়ে। ইমরান তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতা ও শারীরিক ক্ষমতার দুর্বলতার বিষয়ে অবগত আর সেখান থেকেই তাঁর ভীতির উদ্রেক যে কোনও মুহূর্তে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে।

পরিস্থিতি যে-দিকেই মোড় নিক না কেন, পাকিস্তানের জন্য কোনও ভাল বিকল্প নেই। তাদের বাছাই প্রক্রিয়া সর্বদাই হবে একজন স্বৈরাচারী প্রবণতাসম্পন্ন ইসলামি পপুলিস্ট নেতার মধ্যে, যার সমস্যা মোকাবিলার জন্য কিছু বাস্তব সমাধান রয়েছে এবং অন্যদিকে রয়েছে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত, রাজনৈতিক সামরিক বাহিনি যারা ক্ষমতায় থাকার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং নীতির বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। পাকিস্তানে এই অবস্থা চলতে থাকলে তা শুধু ভারতের জন্য নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির জন্যও একটি গুরুতর সমস্যা হবে। সীমান্তের উভয় পাশে নির্মম, অযোগ্য এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষ তীব্রতর হতে পারে। সর্বোপরি, পাকিস্তানকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মধ্যে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি চলতে থাকবে যা দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতিকে সরাসরি প্রভাবিত করবে। এই বলেই শেষ করি যে, যখন বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে আলোকিত করতে পারে না, তখন রূহ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।


*মতামত ব্যক্তিগত

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4821 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...