তারান্তিনো, সিজন দুই— ত্রিশ

প্রিয়ক মিত্র

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফিরতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ল সাইনবোর্ডটা। এমনিতেই এতদিন পর শহর দেখা, তার ওপর হঠাৎ এই সাইনবোর্ডটা দেখে বেজায় ঘাবড়ে গেল শাহিদ।

সাইনবোর্ডটা মামুলি। ‘মার্ফি রেডিও’-র সাইনবোর্ড। কিন্তু গল্পটা অন্য কোথাও লুকিয়ে, যার জন্য শাহিদ চমকে উঠছে। এই রেডিওটা এত সহজলভ্য, এতগুলো লোকের চোখের সামনে দিব‍্য স্পষ্ট হয়ে রয়েছে দিবালোকে, অথচ, এইরকম দেখতে একটা রেডিওই তো প্রাণভোমরা হয়েছিল তার এবং মৌলিনাথের। এত সোজা একটা জিনিস, এত বড় একটা ফাঁকি কী করে চোখ এড়িয়ে গেল রডরিগেজের মতো ধুরন্ধর শয়তানের? তাহলে কি এজাতীয় কুবের বদমাইশরা মূলত নির্বোধ হয়?

সরিতের চক্রান্ত যতই সাংঘাতিক হোক, অ্যাঞ্জেলাকে হাসপাতালে রেখে এসে আসলে শাহিদ-মৌলিনাথের মুক্তি পরোয়ানাই কিনেছিল সে। এই একটা ব‍্যাপারে মনে মনে ওকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারেনি। অ্যাঞ্জেলা পুলিশকে খবর দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ব‍্যাপারটা এফবিআই অবধি গড়াতে অল্পই সময় লেগেছিল। রডরিগেজ এত রকমের আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রে জড়িয়ে ছিল যে স্টেট এজেন্সির এখানে বিশেষ কিছু করণীয় ছিল না, ফেডারেল এজেন্সিকে এর মধ্যে ঢুকতেই হত। কিন্তু খোদ ওয়াশিংটনের ডাউনটাউনে রডরিগেজের অত বড় একটা বাড়ি যে আছে, এই খবর এফবিআই-এর কাছেও ছিল না। কিন্তু শাহিদ আর মৌলিনাথ জানত, কোনও না কোনওভাবে রডরিগেজের সন্ধান এজেন্সি পাবেই। যদিও ওরা বেঁচে থাকবে— এমন আশা করেনি। কিন্তু রডরিগেজ যখন হঠাৎ মনে করল, ওদের বাঁচিয়ে রেখেই ওদের দিয়ে ‘এলিয়েন’-এর অনুসন্ধান চালাবে, তখন শাহিদ এবং মৌলিনাথের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, সময় কেনা।

শাহিদের হঠাৎ হাতটা চলে গেল নিজের হাঁটুতে। খুনে জল্লাদগুলো শাহিদের সঠিক চিকিৎসাও করেনি প্রাথমিকভাবে। শুধু কোনওক্রমে গুলিটা বের করেছিল, আর রক্তপাতটা বন্ধ করে রেখেছিল। আর রক্তপাত হলে শাহিদ বাঁচত না। মৌলিনাথের কাকুতি-মিনতিতে ওরা ওইটুকু উপকার করেছিল। জীবন ভিক্ষা দিয়েছিল শাহিদকে। কিন্তু মৌলিনাথ ওদের কথা দিয়ে ফেলেছিল, সাহায্য করবে। কিন্তু কী সাহায‍্য সেটা? ওরা তো জানত, যা খুঁজে চলেছে রডরিগেজ, তা নেই। থাকলেও তার অস্তিত্ব সম্পর্কে অন্তত শাহিদরা কিছুই জানে না। যা জানে, তা রডরিগেজকে বললে সে বিশ্বাস করবে সে-কথা? সে বিশ্বাস করতে চাইবে যে, এত অনুসন্ধানের শেষে যা পাওয়া যাচ্ছে, তা আসলে একটা থকথকে জেলি, যার বৈজ্ঞানিক ব‍্যাখ‍্যা পর্যন্ত এখনও নেই ওদের কাছে? আর সেই জেলি বেরিয়ে এসেছে কেবল একখণ্ড হিরে থেকে? মুখ ফসকে যদিও প্রথমে হিরের কথা বলে ফেলেছিল মৌলিনাথ, তাও সেটা ম‍্যানেজ করতে বিশেষ সমস্যা হয়নি। রডরিগেজের মাথা এতটাই নিরেট, ওকে একটু বৈজ্ঞানিক কায়দায় যা বোঝানো হয়েছে, ও তাই বুঝেছে।

দুই বন্ধুই পরস্পরের ভাবনার ছন্দ ঠিক ধরে ফেলে। শাহিদ আর মৌলিনাথ দুজনেই বুঝে নিয়েছিল একটা সার কথা। এখন ওদের সময় কিনতে হবে।

তারপরেই শুরু হল দুই বন্ধুর খেলা। জীবনমৃত‍্যুকে বাজি রেখে সেই খেলা চলল। ওরা বোকা বানাতে শুরু করল রডরিগেজকে।

শাহিদের বিশেষ আগ্রহ চিরকালই ছিল যন্ত্রপাতি নিয়ে। শাহিদ আহত অবস্থায় নির্দেশ দিতে থাকল মৌলিনাথকে। মৌলিনাথ বানাতে থাকল একটা পাতি, নিখাদ রেডিও। আর সেসব বানানোর উপকরণ রডরিগেজই জোগান দিতে থাকল ওর চ‍্যালা স‍্যামের হাত ধরে। সেসব দিয়ে দিব‍্য রেডিওটা বানিয়েও ফেলল মৌলিনাথ আর শাহিদ।

রডরিগেজ বুঝল না, ওরা কী পরিমাণ সময় এবং অর্থ নষ্ট করল ওর। কিন্তু ওরকম অবধারিত মৃত‍্যুমুখে দাঁড়িয়েও শাহিদ আর মৌলিনাথ তখন অপেক্ষা করছিল, কবে ওরা এই কথাটা মনে করে প্রাণ খুলে হাসতে পারবে।

এখন সেই সুযোগ রয়েছে। কিন্তু শাহিদের তাও হাসি পাচ্ছে না। ওর ভেবে ভয় করছে যে, কোন চূড়ান্ত বিপদের মুখ থেকে ও ফিরে এল। কী করে ওই সময় ওরা ভেবেছিল হাসার কথা? ভেবেও অবাক লাগছে এখন ওর।

রেডিও তো তৈরি হয়ে গেল। তারপর? এরপর কীভাবে বোকা বানাবে ওরা রডরিগেজকে? পারবে তো আদৌ?  এরপর ওরা কী বলবে? সত্যিই সঙ্কেত এসেছে ভিনগ্রহ থেকে? এসব বুঝিয়ে ওরা কি রডরিগেজকে সত্যিই পাঠিয়ে দিতে পারবে কোথাও? সেই টিনটিনের ফ্লাইট ৭১৪-র মতো কিছুতে চাপিয়ে পাড়ি দেওয়াতে পারবে তেপান্তরে?

এসব ভাবনার মাঝেই একদিন ওদের বাঙ্কারে এল দশাসই শয়তান আর ওর শাগরেদটা। দুজনেরই মুখ থমথমে। যদিও শাগরেদটার মুখে আদৌ কোনও অনুভূতি খেলে বলেই মনে হয় না।

রডরিগেজ চিবিয়ে চিবিয়ে মৌলিনাথকে বলেছিল,

—তোমার প্রেমিকাটা একটা আস্ত বিচ। কুত্তি। ও এফবিআই-এর সঙ্গে বিছানা শেয়ার করে এখন। জেনে রাখো, রডরিগেজের কানের লতিও ওরা ছুঁতে পারবে না। একই সঙ্গে তোমাদেরও ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কারণ তোমাদেরকেও জ‍্যান্ত ধরতে পারবে না ওরা।

মৌলিনাথের তখনই ইচ্ছে হয়েছিল রডরিগেজের জিভটা টেনে ছিঁড়ে দিতে। পারেনি। শাহিদেরও রক্ত গরম হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওরা জানত মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।

যেকথা ওরাও জানত না, রডরিগেজও জানত না, তা হল রডরিগেজের শিয়রে শমন। শুধু এফবিআই নয়, ডিইএ-ও রয়েছে ওর পিছনে। দক্ষিণ আমেরিকার কুখ্যাত ড্রাগ ব‍্যারনদের কার্যকলাপে ওর পয়সা আর লোকবল খাটে। মূলত কলম্বিয়ার ক‍্যালির ডনদের সঙ্গে ওর চেনাজানা ঘিরে যথেষ্ট কৌতূহল তৈরি হয়েছিল মার্কিন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির। ব‍্যাপারটা ফেডারেল ম‍্যাটার তখন, নিছক চোরপুলিশ খেলা তো নয়! ফলে রডরিগেজের ঘাম ছোটানো শুরু হল। তাকে এই ডেরা থেকে ওই ডেরায় ছুটিয়ে মারল এফবিআই ও ডিইএ। বলা যায় না, আমেরিকার প্রায়-অদৃশ্য অথচ সর্বঘাটের কাঁঠালিকলা গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-রও কেউ কেউ হয়তো খোঁজ করছিল রডরিগেজের। তবে তাদের কাছে শত্রু না বন্ধু রডরিগেজ, সেকথা বোঝা শক্ত।

যাই হোক, রডরিগেজ বেপাত্তা হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে লেজুড় হতে হচ্ছে শাহিদ আর মৌলিনাথকেও। ওরা জানে, একবার যদি রডরিগেজ মনে করে, ওদের দিয়ে কাজ হাসিল হয়েছে, তাহলে পয়েন্ট ব্ল‍্যাঙ্ক রেঞ্জে বুলেট ঠুসে মেরে ফেলবে ওদের। তাই ওদের শুধু এবং শুধুই সময় কিনতে হবে। কিন্তু শেষমেশ? ওরা আদৌ বাঁচতে পারবে? সেই আশা ওদের কাছেও ক্রমে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছিল। তবু, কেবল রডরিগেজকে বোকা বানানোর আনন্দে ওরা মশগুল হয়ে থাকত। মজা পেত, হাসত।

অবশেষে দিনটা এল। ওদের নিয়ে পালাতে পালাতে রডরিগেজরা এসে পড়েছিল নেভাদার প্রান্তরে। সেখানে ওরকম বজ্রআঁটুনি লোহার বাঙ্কারে ওদের রাখা হয়নি, যা কম্বিনেশন লকে খোলে। এখানে কেবলমাত্র একটা কাঠের ঘর, যা প্রায় ল‍্যাবরেটরির আকার নিয়েছে। ওরা এখন আর সে অর্থে পরাধীন নয়, কারণ ওরা রডরিগেজের হয়েই কাজ করছে, অন্তত ওই হুমদো মর্কটটা তেমনই ভাবে। রডরিগেজ এই বাড়িতে থাকে না। ও মেক্সিকোর কাছে সান্টা ফে-তে রয়েছে, ড্রাগমাফিয়াদের আশ্রয়ে। এইখানে দিনরাত দরজায় পাহারায় থাকে স‍্যামুয়েল নামে ওই কিম্ভূত শিকারি জন্তুটা। একটু গড়বড় হলেই নানাবিধ অত‍্যাচারের ফিকির করে ও। মৌলিনাথ আর শাহিদের শরীরে অজস্র ছ‍্যাঁকার দাগ, ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ চেপে ধরার ক্ষত— সেগুলো সবই ওর সৃষ্টি। কিন্তু তাও ওকে খেপিয়ে দিয়ে ওরা খানিক আমোদই পায়। শুধু শাহিদের জখম পায়ের অবস্থা নিয়ে মৌলিনাথ চিন্তায় থাকে। ওইখানে কোনও আঘাত করতে গেলেই ও স‍্যামুয়েলকে আটকানোর চেষ্টা করে। আর এটা করতে গিয়েই একদিন কেলেঙ্কারি করে ফেলল মৌলিনাথ।

শাহিদের কোনও একটা খোঁচাকে নিতান্তই বেয়াদবি মনে করে স‍্যামুয়েল ওর পায়ে লাথি মারতে গিয়েছিল। আর তখনই ওর মন বিক্ষিপ্ত করার জন্য হ‍্যাঁচকা টান মেরে স‍্যামুয়েলের কালো চশমাটা খুলে নিল মৌলিনাথ।

সঙ্গে সঙ্গে ওরা দুজনেই আঁতকে উঠল।

স‍্যামুয়েলের চোখদুটো যেন নেই। আরও পরিষ্কার করে বললে, চোখদুটো যেন খুবলে নেওয়া হয়েছে।

স‍্যামুয়েলও এই ব‍্যাপারটায় কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুতই হল যেন। ঠিক কী করবে বুঝতে না পেরে প্রথমেই মৌলিনাথকে মারল একটা সজোরে ঘুষি। তারপর ওর হাত থেকে গগলসটা কেড়ে নিয়ে পরে নিল আবার।

স‍্যামুয়েল চোখে দেখতে পায় না, এটা তো কোনও দিনই মনে হয়নি। তাহলে?

ব‍্যাপারটা পরিষ্কার হল পরের দিন। কৌতূহল মেটাতে দুই বন্ধু পরের দিন স‍্যামুয়েলের খাবারে দুখানা ঘুমের ওষুধ মেশাল। এই ঘুমের ওষুধটা অনেক বলেকয়ে আনানো হয়েছিল শাহিদের জন‍্যই। বেশ কড়া ডোজের ওষুধ।

স‍্যামুয়েল অকাতরে ঘুমিয়ে পড়তে ওরা দুজন আবার ওর চশমাটা খুলল। চোখদুটোর পাতা প্রায় ফাঁক করে দেখল। স‍্যামুয়েল তখন বেহুঁশ।

চোখ আছে ঠিকই। কিন্তু ওর দুটো চোখেরই পাতার নিচে দুটো সেলাই। যা ওর চোখদুটোকে প্রায় ঢেকে রাখে। কে জানে, কীভাবে ঘটেছে এমনটা।

এরকম চলতে চলতে একদিন রডরিগেজ এল। এসেই তড়িঘড়ি অনেক কিছু সরাতে লাগল বাড়িটা থেকে। এমনকী, ওদের বানানো রেডিও জাতীয় বিষয়টাও, যেটা হোমে-যজ্ঞে কিছুতেই লাগবে না। সেসব একটা ক‍্যারাভানে তুলে স‍্যামুয়েলকে নিয়ে কোথায় রওনা দিল। শাহিদ আর মৌলিনাথের হাত-পা-মুখ বেঁধে রেখে, দরজা বন্ধ করে।

কিছুক্ষণ বাদেই, বন্দি অবস্থাতেই দুজন শুনল মাথার ওপর হেলিকপ্টারের ঘড়ঘড়ানি। কিছুক্ষণের মধ্যেই মার্কিন মিলিটারির সাঁজোয়া গাড়ি ঘিরে ফেলল বাড়িটা। বাইরে থেকে কিছুক্ষণ চিৎকার করে রডরিগেজকে আত্মসমর্পণ করতে বলল ওরা। রডরিগেজ নেই বুঝতে পেরে তারপর দরজা ভাঙল সজোরে।

প্রথমেই অ্যাঞ্জেলার স্বর শুনতে পেল মৌলিনাথ।

—মল্লি… মল্লি… শাহিড…

উদ্ধার হল ওরা। কিন্তু এফবিআই ওদের সহজে ছাড়ল না। ক্রমাগত জিজ্ঞাসাবাদ করে চলল। রডরিগেজকে নিয়ে। রডরিগেজের কর্মকাণ্ড নিয়ে। বিশেষত, রডরিগেজ ওদের দিয়ে ঠিক কী ধরনের ‘ক্রেজি সায়েন্স’ করাতে চেয়েছে, তা নিয়ে। অ্যাঞ্জেলা ওদের সরিতের কথা বলে দিয়েছিল। ফলে সরিতের বিষয়েও রীতিমতো কড়া প্রশ্ন-উত্তর পর্বের মুখোমুখি হল শাহিদ। মৌলিনাথও বাদ গেল না।

এর মধ্যেই একদিন স্টিভ গার্ডনার ডাকল ওদের।

—দেখো, তোমাদের সঙ্গে যা ঘটে গেছে, তারপর সত্যিই কথা বলার মুখ নেই আমার। কারণ ওই বাস্টার্ডটাকে আমিই ধরে এনেছিলাম। ও কথা দিয়েছিল, তোমাদের স্পেস স্টেশন অভিযান তো বটেই, এমনকী, আমাদের পাঁচ-ছ বছরের গবেষণার ফান্ডিংও ওই-ই করবে। আমি সত্যিই ক্ষমাপ্রার্থী, এই লোকটার সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনের জন্য তোমাদের রিসার্চ আর লাইফ, দুটোই জিওপার্ডাইজড হল। এনিওয়ে, তোমাদের ওপর এই ইনভেস্টিগেশনের টর্চার যাতে আর না হয়, সেটা আমি দেখব। আমার সাজেশন, তোমরা একটা লিভ নাও। দেশে ফিরে যাও। ফিরে এসে আবার জয়েন করো।

তদন্তের ওই জাঁতাকল থেকে সত্যিই তাদের মুক্তি দিয়েছিল স্টিভ। কিন্তু শাহিদ মনে মনে হেসেছিল। ওর মনে পড়েছিল ওর নানা-র কথা। ব্রিটিশ সরকারের বিশ্বস্ত সেই দারোগা শাজাহান ইলিয়াসের কথা, যাকে স্বদেশিদের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে জেরা করা হয়েছিল, করেছিলেন স্বয়ং চার্লস অগাস্টাস টেগার্ট। ওর চাচা মহম্মদ ইলিয়াসের নেতাজির ফৌজে যুক্ত থাকার কথা খুব বেশি লোক জানত না ঠিকই, কিন্তু নেহরু সরকারের কাছে ঠিক খবর পৌঁছেছিল, বহু বছর পলাতক থেকে দেশে ফিরেছে আজাদ হিন্দ-এর এক সৈনিক। শুনেছিল শাহিদ, সর্দার বল্লভভাই প‍্যাটেলের কাছে খবর ছিল মহম্মদ ইলিয়াসের। তিনি এও জানতেন, সোভিয়েতে গিয়ে লুকিয়ে রয়েছে মহম্মদ ইলিয়াস। মহম্মদ ইলিয়াস দেশে ফেরার কিছু বছর আগেই যদিও সর্দারজি মারা গিয়েছিলেন, তাও ইন্টেলিজেন্স ব‍্যুরোতে তাঁর একান্ত চেনা এক অফিসার বিষয়টার ফলো আপ করেন। তিনি একেবারে ভবানীপুরের বাড়িতে এসে জেরা করা শুরু করেন মহম্মদ ইলিয়াসকে। এর মাঝে আরেকটা বিরক্তিকর ঘটনা ঘটেছিল, এক ইংরেজি সংবাদপত্রের সাংবাদিক প্রায় গায়ে পড়ে একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে যায় শাহিদের চাচার। মহম্মদ সেখানে ‘হুকুমত-এ আজাদ হিন্দ উইল শিওরলি রিটার্ন’ গোছের মন্তব্য করে ফেলে। আর এই মন্তব্য নিয়েই একেবারে চেপে ধরেছিল মহম্মদকে ওই আইবি অফিসার, সন্তোষ সাক্সেনা। সোভিয়েতে তার সঙ্গে সুভাষ বোসের দেখা হয়েছে কি না, এজাতীয় প্রশ্নও তিনি করে বসেন‌। নেহরুর কাছে খবর যায়। এই ম‍্যারাথন জেরা বন্ধ হয়। যথাযথভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামীর সম্মান দেওয়া হয় মহম্মদকে। যদিও তার তখন এসবে আর কিছু যায় আসে না। মোদ্দায়, জেরা সামলানোটা ওদের পারিবারিক ট্র‍্যাডিশন, যা সমানে চলছে।

অ্যাঞ্জেলাকে মৌলিনাথ বিয়ে করেছে এর মাঝে। ওরা একসঙ্গে গেছে গ্র‍্যান্ড ক‍্যানিয়ন, সেখান থেকে আসবে দেশে। কিন্তু শাহিদের একটু ফেরার তাড়া ছিল।

ভবানীপুরের বাড়িতে হলুদ-কালো ট‍্যাক্সি থেকে লাগেজ নামাতে ওকে সাহায্য করল ওর সর্দারজি ড্রাইভার। অ্যাম্বাসাডর চালানোয় এই জাতটার দক্ষতা সত্যিই দেখার মতো। আর কী অদ্ভুত হাসিখুশি, উচ্ছ্বল! এতদিন পর দেশে ফিরে এমন আন্তরিকতা পেয়ে মন ভিজে গেল শাহিদের।

শাহিদ একবার মন দিয়ে দেখল বাড়িটাকে। চোখ বুজল আরামে। তারপর মনটা তৈরি করল। ওর চাচার সঙ্গে ওর কথা আছে। ওকে জানতে হবে, কী ছিল ওই আকাশি হিরের ভেতর।

 

[আবার আগামী সংখ্যায়]

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4664 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...