ছোট বটে, তবু…

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়

 


সিগারেট বাটের চেহারা যেমনই হোক না কেন আসলে তা হল প্লাস্টিক। ফলে প্লাস্টিকের প্রভাবে পরিবেশমানের যে ধরনের পরিবর্তন বা অবক্ষয় ঘটে সিগারেট বাটের বেলাতেও তাই। একবার মাটির আশ্রয়লাভের পর এই টুকরোগুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং গভীর পরিবেশ-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এগুলো জৈব বিয়োজ্য না হওয়ায় সমস্যার তীব্রতা দীর্ঘস্থায়ী হয়

 

এমন সময়কেই কি গোধূলি বলে? গাঁয়ের মাঠেঘাটে সারা সকাল পরম আবেশে ঘাসপাতা গলাধঃকরণ করে পায়ের শক্ত খুরের আঘাতে মাঠের ধুলোয় চারদিক আচ্ছন্ন করে কপিলা-ধবলীদের বাথানে ফেরার সময়। প্রায় দিগন্তের সীমানায় ঝুঁকে পড়া সূর্যদেবের ম্লান আলো আরও ম্লান হয় ধুলোর দাপটে। এটা আসলে সকলেরই ঘরে ফেরার সময়। ওরাও হয়তো ঘরেই ফিরছে। এক পরিচিত মানুষ আসবেন। তাঁর অপেক্ষাতেই বাসস্ট্যান্ডে হাজির হয়েছি। টিন-ছাওয়া যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের বেঞ্চে এসে বসি। কানে আসে তিন কিশোরের কথোপকথন।

—এই রজত, সিগারেটের প্যাকেটটা দে।
—আমি কিন্তু এখন খাব না।
—সিগারেট না খেলে ঠিক বড় হয়েছি এটা বোঝা যায় না।

ওদের কথাবার্তা চলতে থাকে। একসময়ে সিগারেটের লম্বাই খাটো হয়ে আসে। গোধূলির ম্লান পরিবেশকে আরও ম্লান, ধূমায়িত করে সিগারেটের শেষাংশ সামনের রাস্তায় ছুড়ে ফেলে একসময়ে বাড়ির পথে পা বাড়ায় ওরা। ছেড়ে যাওয়া ফিলটার টুকরোগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা আজব খেলায় মেতে ওঠে আমার চোখ আর মন। সামনের রাস্তায় ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা সিগারেটের ফিলটার অংশগুলোকে গুনতে শুরু করি— এক… পাঁচ… পঞ্চাশ…। এই সময়ে ফোন বেজে উঠতেই গুনতির পর্ব শেষ হয়। আমরা দুজন গল্প করতে করতে বাড়ি ফিরি।

 

হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি…

মাননীয় পাঠক, হ্যাঁ আপনাকেই বলছি। আপনি কি ধূমপায়ী? না না ধূমপানের ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনও লেকচার দেব না। খালি একটা ছোট্ট প্রশ্ন করব আপনাকে। আচ্ছা, এই যে ধূম্রপান করেন, তারপর সিগারেটের বাদামি রঙের শেষাংশটুকু নিয়ে কী করেন? প্রশ্নটা শুনে অবাক হচ্ছেন? না না, বাড়ি নিয়ে যান কি না তা জানতে চাইব কেন? নিশ্চয়ই ওটা রাস্তায় বা মাঠে ফেলে দেন? আপনি কি বলতে পারেন ওই ফিলটারের অংশটা ঠিক কী দিয়ে তৈরি হয়? কী বললেন? পাট? না হল না। পেপারপাল্প? উঁহু। রক উল? তা-ও নয়। আসলে আমাদের মধ্যে যাঁরা পত্তহারী বাবার মতো ধোঁয়া খান মানে মৌতাত জমাতে সিগারেটে মৌজসে টান দেন তাঁদের অনেকের কাছেই ‘ফিলটার রহস্য’ অজানা। আপনাদের মধ্যে একটা নতুন বিষয়ভাবনাকে যখন উস্কে দিয়েছি, তখন তা নিরসনের দায় যে আমারই। তাহলে আমরা এবার শুনব সিগারেট ফিলটারের কথা।

 

ফিলটার কথা…

নিয়মিত ধূমপায়ীদের তামাকের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে খানিকটা রেহাই দিতে গত শতকের ৫০-এর দশকের একেবারে গোড়ার দিকে সিগারেট ফিলটার বা ফিলটার টিপ-এর সংযোজন। এর ফলে ধূমপায়ীদের কিছুটা স্বস্তি বা নিরাপত্তা মিললেও নতুন এক আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এই বর্জিত উপাদানগুলি থেকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সিগারেট ফিলটার সম্পর্কে কতগুলো মূল্যবান তথ্য আমাদের জানিয়েছেন। সেগুলো একবার দেখে নেওয়া যাক।

১. বেশিরভাগ সিগারেট ফিলটার তৈরি হয় সেলুলোজ অ্যাসিটেট দিয়ে যা আসলে প্লাস্টিকের ফাইবার। এই বস্তুটি খুব দ্রুত পচনশীল নয়। পরিবেশে পৌঁছনোর পর প্রায় দশ বছর সময় নেয় সম্পূর্ণভাবে মিশে যেতে।

২. আকারে ছোট হলেও সাদা তুলোর মতো দেখতে এই অংশটিতে মিশে থাকে নানান বিষাক্ত যৌগ, যেমন— ফর্মালডিহাইড, নিকোটিন, আর্সেনিক, সীসা, তামা, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম-এর মতো পদার্থ। এছাড়াও থাকতে পারে পলিয়ারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (PAHs) যৌগগুলো।

৩. অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে সমস্ত পদার্থ আমাদের পরিবেশকে প্রতিনিয়ত বর্জ্যভারাক্রান্ত করছে তাদের তালিকায় একেবারে শীর্ষে অবস্থান করে এই সিগারেট বাটস। গবেষকদের মতে সারা পৃথিবীতে বিক্রিত প্রায় ৬.২৫ ট্রিলিয়ন সিগারেটের প্রায় ৯৯ শতাংশের ফিলটার তৈরি হয় সেলুলোজ অ্যাসিটেট দিয়ে। এর প্রায় ৭৫ শতাংশ ধূমপায়ীদের হাত ঘুরে পরিবেশেই ফিরে আসে। পৃথিবীর যে-যে প্রান্তে ধূমপায়ীদের পদচারণা সেখানেই সিগারেট বাটসদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এই তথ্য থেকে প্রমাণিত যে এই ছোট চেহারার পদার্থগুলো দূষণের সর্বাত্মক মাধ্যম।

৪. অন্যান্য প্লাস্টিক বর্জ্যের মতো সিগারেট বাটসগুলোও বায়ো-ডিগ্রেডেবল নয়। ফলে পরিবেশে এগুলো অবিনষ্টভাবে বহুদিন টিকে থেকে দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে এগুলো ভেঙে গেলেও এদের মধ্যে থাকা ক্ষতিকারক রাসায়নিক যৌগ এবং ধাতব পদার্থগুলো পরিবেশে থেকে যায় এবং পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদি অবক্ষয়ের কারণ হয়ে ওঠে।

সমস্যা যে গভীর তা বোধহয় নতুন করে বলার প্রয়োজন হয় না। ভারতের মতো দেশে নবীন প্রজন্মের দাপট বাড়ছে, ফলে বাড়ছে ধূমপায়ীদের সংখ্যা। যে-সমস্যার আঁচে আজ পশ্চিমি দেশগুলো ধিকিধিকি জ্বলছে সেই সমস্যা এদেশেও বাড়ছে, ফলে একটু একটু করে বাড়ছে আশঙ্কা। তাহলে এবারে দেখে নেওয়া যাক সিগারেট বাট-বর্জ্যের পরিবেশ-প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি।

 

শরীরী অবয়ব

একটি সিগারেট-শরীর নির্মাণে তিনটি উপাদান এককথায় অপরিহার্য। প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় তামাকের কথা। মূলত দুই প্রজাতির তামাকগাছ থেকে— Nicotiana tabacum এবং Nicotiana rustica— ব্যবহার্য তামাক সংগ্রহ করা হয়। তামাকগাছের পাতা সিগারেটের প্রধান উপাদান। পাতায় উপস্থিত নিকোটিন হল একটি উত্তেজক পদার্থ যা ধূমপায়ীদের শরীর ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে যুগপৎ প্রভাবিত করে। গবেষদের মতে তামাকে উপস্থিত কার্বন মনোক্সাইড, টার () এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক যৌগগুলিই তীব্র শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সিগারেট তৈরির দ্বিতীয় অপরিহার্য উপাদান হল কাগজ। সকলেরই এ-কথা জানা যে কাঠের মণ্ড থেকেই প্রধানত কাগজ তৈরি হয়। তাই কাগজের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার অর্থই হল পৃথিবীর বনজ সম্পদের আধার বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়া। কানাডার বিস্তীর্ণ সরলবর্গীয় বৃক্ষের নরম কাঠের বনভূমি এভাবেই প্রতিনিয়ত উজাড় হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর মানুষের কাগজের চাহিদা মেটাতে। সিগারেট-পেপার অবশ্যই তার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে। আর তৃতীয় উপাদান তৈরি হয় সেলুলোজ অ্যাসিটেট দিয়ে যার ক্ষতিকারক প্রভাবের কথা আগেই আলোচনা করা হয়েছে।

তাহলে আমরা বলতেই পারি, একটি সিগারেট— ব্যবহৃত উপাদানগুলোর প্রতিফলের বিচারে— পরিবেশ-ভারসাম্যহীনতার অন্যতম হেতু যা একাধারে নাগরিকদের স্বাস্থ্যহানির কারণ, দেশের জনসম্পদকে দুর্বল করে, বনাঞ্চলের ভৌগোলিক বিস্তৃতি হ্রাস করে; ফেলে দেওয়া ফিলটারের অংশ বিশৃঙ্খল করে পরিবেশের প্রাণদায়ী উপাদানগুলোর স্থিতাবস্থাকে।

বিষয়টা এখানেই শেষ তেমন নয়। বিজ্ঞান আর উন্নয়নের হাত ধরে সাবেকি কাগজে মোড়া সিগারেটকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে চলতি নেশার বাজার দখল করতে হইহই করে এসে পড়েছে ইলেকট্রনিক সিগারেট, সংক্ষেপে ই-সিগারেট। এ-দেশের বাজারেও তার আনাগোনা শুরু হয়েছে। কী সেই বস্তুটি? সুখটান দিয়ে তাম্বাকুর মৌতাতে মজতে না-পারি, এই নবাগত অতিথি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে তো বাধা নেই। ফলে গুগল-সাহেবের দ্বারস্থ হওয়া গেল। কী বললেন সবজান্তা গুগল-সাহেব? তার ভাষ্য অনুযায়ী—

একটি ইলেকট্রনিক সিগারেট হল একটি হাতে ধরা যন্ত্রবিশেষ যা পরিচিত সিগারেট-ধূম্রপানের অনুকরণ করে। মোট তিনটি স্বতন্ত্র অংশ নিয়ে এটি তৈরি। এরা হল যথাক্রমে:

  1. অ্যাটোমাইজার: এইটি একটি গরম করার যন্ত্র যা ই-তরল নামের একটি তরল দ্রবণকে বাষ্পীভূত করে ছোট ছোট ফোঁটায় পরিণত করে। বাষ্পে প্রধানত প্রোপিলিন গ্লাইকোল এবং/অথবা গ্লিসারিন থাকে, থাকে নিকোটিন।
  2. ব্যাটারি: এইটি শক্তির উৎস।
  3. কার্ট্রিজ: এটায় ই-তরল জমা থাকে।

ই-সিগারেট ব্যবহার করা ভেপিং নামেই পরিচিত।

ই-সিগারেট নিয়ে আলোচনা এই নিবন্ধের মূল উদ্দেশ্য নয়। সেই কারণে এখানেই এই আলোচনায় ইতি টেনে মূল প্রসঙ্গে ফিরব।

 

প্রসঙ্গ পরিবেশমান

সিগারেট, তা যে চেহারারই হোক না কেন প্রত্যক্ষ ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যহানির সঙ্গে সঙ্গে বৃহত্তর পরিবেশ সংস্থানের ওপরেও গভীর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এক তথ্যনিষ্ঠ অনুসন্ধানসূত্রে জানা যাচ্ছে প্রতি বছর প্রায় ৮২৫,৩৭১ মেট্রিক টনের মতো সিগারেট বাট এবং ই-সিগারেট বর্জ্য আমাদের পরিবেশে মিশছে। এর প্রভাবে দূষিত হচ্ছে পার্থিব বায়ুমণ্ডল, জলভাগ এবং ভূমিভাগ। ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ই-সিগারেট ব্যবহারকারীদের হাত ঘুরে প্রতি সেকেন্ডে পাঁচটি করে ই-সিগারেট বর্জ্য এসে জমা হচ্ছে আমাদের পরিবেশে যার বার্ষিক পরিমাণ ১৫০ মিলিয়ন। আর এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ব্যাটারি-বর্জ্য যার লিথিয়াম প্রায় ৬০০০ টেসলা গাড়ির ব্যাটারিতে থাকা লিথিয়ামের সমান। ই-বর্জ্যের দাপটে ইতোমধ্যেই সারা বিশ্ব জুড়ে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠে গেছে। তার মধ্যে ই-সিগারেট বর্জ্য যুক্ত হলে সমস্যা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে তা আন্দাজ করা মোটেই শক্ত ব্যাপার নয়।

আমাদের পরিবেশের সর্বত্রই আজ সিগারেট বাটসের উপস্থিতি— ঘরে, রাস্তাঘাটে, মাঠে-ময়দানে, পুকুরের পার বা সমুদ্রের বেলাভূমি— সর্বত্রই এই ক্ষতিকারক বর্জ্য পদার্থটি যথেচ্ছ নজরে পড়ে। এখনও এ-দেশে ই-সিগারেট প্রবেশের বৈধ অনুমতি মেলেনি তাই রক্ষে, না হলে এদেশের বিপন্ন বাস্তু পরিবেশের কী হাল হত!

সিগারেট বাটের চেহারা যেমনই হোক না কেন আসলে তা হল প্লাস্টিক। ফলে প্লাস্টিকের প্রভাবে পরিবেশমানের যে ধরনের পরিবর্তন বা অবক্ষয় ঘটে সিগারেট বাটের বেলাতেও তাই। একবার মাটির আশ্রয়লাভের পর এই টুকরোগুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং গভীর পরিবেশ-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এগুলো জৈব বিয়োজ্য না হওয়ায় সমস্যার তীব্রতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিগারেট প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো দেশজুড়ে ১৯০.২ বিলিয়ন সিগারেট বিক্রি করেছিল। গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের পরিসংখ্যান পেলে সংখ্যাটা কোথায় দাঁড়াবে তা অনুমান করতেই আঁতকে উঠতে হয়।

একা রামে রক্ষা নেই তার সঙ্গে সুগ্রীব হিসেবে দোসর হয়েছে ই-সিগারেট, পরিবেশে যার সংযুক্তি ডেকে আনছে একাধারে প্লাস্টিক, ইলেকট্রনিক এবং রাসায়নিক বর্জ্যের বিপুল ধ্বংসাত্মক বিপদ। কাগজে মোড়া চলতি সিগারেট ছেড়ে উঠতি বাবুসোনারা ই-সিগারেটে অভ্যস্ত হলে সমস্যাটা কোথায় দাঁড়াবে আন্দাজ করুন। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২২ সালে ৩২১.৪ মিলিয়ন ই-সিগারেট কার্ট্রিজ বিক্রি হয়েছে, যার চলতি বাজারদর ৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কোম্পানিকে ব্যবসা বাড়াতে হবে। এখানে মুনাফার প্রশ্নটাই মুখ্য আর সব গৌণ; ফলে লাভ বাড়াতে বাড়বে সিগারেটের উৎপাদন— চেষ্টা হবে কাগুজে সিগারেটের সার্থক বিকল্প হিসেবে ই-সিগারেটকে মোক্ষসাধনার সেরা উপায় হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার— বাড়বে শ্বাসযন্ত্রের নানা সমস্যা— কমবে মানুষের পরমায়ু— বাড়বে বর্জ্যদূষণ সমস্যা— বাড়বে কোম্পানিগুলোর মুনাফার পরিমাণ। বাপু, আর কী চাই বলো তো! নিত্যনতুন স্বাদ-গন্ধ-আমেজের মৌতাতে মজবে আমাদের যুবসমাজ— কালো অন্ধকার নেমে আসবে দেশের মানুষের তথাকথিত অগ্রগমনে। মার্কিন বাজারে ই-সিগারেটের শুভাগমনে (!) ফলে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর বিপুল জনপ্রিয়তা লক্ষ করা গেছে। লাফিয়ে বেড়েছে এর চাহিদা। ২০১৯ সালে যেখানে ২.৪ শতাংশ স্কুলছাত্র ই-সিগারেট ব্যবহারে আসক্ত ছিল, তা-ই ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২৬.৫ শতাংশ— মানে ১০০০ শতাংশ বৃদ্ধি! ভাবতেই কেমন শিউরে উঠতে হয়। ‘তাহা হইলে এই সমস্যা হইতে মুক্তি পাইব কেমনে?’ একেবারে শেষ পর্বে এসে সম্ভাব্য উপায়গুলো নিয়ে দু-এক কথা বলে নেওয়া যাক।

 

অন্তিম বাণী…

মাননীয় ধূমপায়ী বন্ধুগণ, আপনাদের কথা মাথায় রেখে দু-একটি কথা নিবেদন করতে চাই। না না, আপনারা সকলেই প্রাজ্ঞ এবং বিচক্ষণ, আপনাদের জ্ঞান দেওয়ার সামান্যতম অভিপ্রায় আমার নেই (আর দিলেই বা শুনছে কে?)। আসলে আপনাদের সহায়তা ছাড়া সিগারেট বাট এবং তার প্রভাবে উদ্ভূত সমস্যাকে কোনওভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া এই ছয়-ছোট্ট চেহারার উপাদান আমাদের পরিবেশের অবক্ষয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলছে। আমরা যারা সচেতন ধূমপায়ী নই, তারাও অবচেতনে ধূমপানের শিকার হচ্ছি নিষ্ক্রিয় ধূমপায়ী হিসেবে। গোটা বিশ্ব জুড়েই ধূমপানজনিত শারীরিক বিপর্যয় বাড়ছে, ফেলে দেওয়া সিগারেট বাট থেকে বাড়ছে নানান পরিবেশ-আশঙ্কা। তাই আগামী দিনের কথা ভেবে—

  • সিঙ্গল-ইউজ সিগারেট ফিলটার নিষিদ্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে।
  • ভাবা হচ্ছে বিকল্পের কথাও যাতে ধূমপান-পরবর্তী সিগারেট বাট-বর্জ্যের বোঝা যথাসম্ভব কমানো যায়।
  • সিগারেটের প্যাকেটের মধ্যেই বিকল্প খাপ তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে যাতে বর্জিত অংশগুলো সেখানে সংগ্রহ করে রাখা যায়। এতে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা কমবে।
  • বর্জিত ফিলটার অংশগুলো রিসাইকেল করার কথাও ভাবা হচ্ছে।

আর আহ্বান জানানো হচ্ছে ধূমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে। মনে রাখবেন এটা নিজের ও পরিবেশের সুস্থতার জন্য খুব জরুরি।

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4662 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...