জাফর ইকবাল-রা, না একটি শক্তিশালী ‘কিন্তু’?

শারদ্বত মান্না

 

ঘটনার শুরু আসলে বেশ কয়েক বছর আগে। ২০১০ সালে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ে ২০১৩ সালের ২১শে জানুয়ারি আবুল কালাম আজাদকে (বাচ্চু রাজাকার নামেই পরিচিত) মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এর পরে ৫ই ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ জুড়ে তরুণ প্রজন্মের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সীমাহীন নৃশংস অপরাধের শাস্তি হিসেবে কেন প্রাণদণ্ড দেওয়া হবে না, সেই দাবীতে শাহবাগ চত্বরে তরুণ বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে থাকেন। ক্রমে এই দাবী পরিণত হয় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সকলকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার দাবীতে। বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের অবশ্য এ হেন আন্দোলনে খুশি না হওয়ারই কথা। এরাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রকাশ্যে পাকিস্তান মিলিটারির সঙ্গে হাত মিলিয়ে গণহত্যা সংঘটিত করেছে। শাহবাগ আন্দোলনের মূল উদ্যোক্তাদের অনেকেই ছিলেন ব্লগার। শাহবাগ আন্দোলন গড়ে তোলার অনেক আগে থেকেই তাঁরা ইন্টারনেটে লেখালিখি করতেন। অনেকের লেখা যথেষ্ট আক্রমণাত্মক ছিল, ব্যঙ্গ ছিল ক্ষুরধার, কারও ভাষা অশালীনও, সকলেই ধর্মের সমালোচনা করেছেন যুক্তির প্রয়োগে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, যার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, সেই ইসলামিক দেশের নাগরিক হয়ে নিরাপত্তার কারণেই বিভিন্ন অ্যালায়াস ব্যবহার করে তাঁরা লেখালিখি করতেন। শাহবাগ যত তীব্র হয়েছে, মৌলবাদী শিবির থেকে তার তত তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। একের পর এক যুদ্ধাপরাধীদের সাজা ঘোষণা হয়েছে, মৌলবাদী শিবিরও তার আক্রমণ শানিয়েছে। শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম শহীদ রাজীব হায়দার, যিনি থাবা বাবা নামে সমধিক পরিচিত। তাঁর হত্যার মাসখানেক আগেই আক্রমণ করা হয় আসিফ মহিউদ্দিনকে।

১৫ই ফেব্রুয়ারি রাজীব খুন হন, সেই খুনকে বৈধতা দিতে প্রচার করা হল, এই ব্লগার নাস্তিক, এ ইসলামের অবমাননা করেছে। এর পর থেকেই বাংলাদেশের গণমানসে সুস্পষ্ট দুটো শ্রেণির জন্ম হল। একদল মানুষ রাজীব হত্যার নিন্দা করলেন দ্ব্যর্থহীন ভাষায়, অন্য পক্ষ বললেন, তার ধর্মের বিরুদ্ধে লেখালিখি করার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডই সঠিক। এই দুই পক্ষের মাঝখানের ধর্মভীরু জনতা হয়ে গেল অ্যাপোলজিস্ট। ‘হ্যাঁ, তাকে হত্যা করা অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে বটে, কিন্তু, তার ধর্মের বিরুদ্ধে লেখালিখি করাও ঠিক হয়নি’ — বাক্যবন্ধটি গণমানসে জনপ্রিয় হল। মৌলবাদীদের ক্ষেত্রে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের লিটমাস টেস্ট হল পূর্বোক্ত বাক্যের ‘কিন্তু’টি। এই শক্তিশালী ‘কিন্তু’র প্রয়োগে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত ছাড়পত্রটি হাতে পেল। বুঝতে পারল, যে কোনও যুক্তিবাদী মানুষের ক্রিয়াকলাপ যদি তাদের পরিপন্থী হয়, তাকে ‘নাস্তিক’, ‘ব্লগার’, ‘ধর্মদ্রোহী’ বলে দেগে দিলেই সমাজের বৃহদংশ তার হত্যায় সায় দেবে।

১১ ফেব্রুয়ারি, রাজীব হত্যার চারদিন আগে জামায়াত-শিবির পরিচালিত ‘সোনার বাংলাদেশ ব্লগ’-এ ‘শাহবাগের আন্দোলনের পিছনের মানুষগুলো’ নামের একটা লেখা প্রকাশিত হয়। ‘স্পর্শের বাইরে’ অ্যালায়াস ব্যবহার করে সেখানে থাবা বাবাকে আক্রমণ করতে নানাভাবে উসকানি দেওয়া হয়। রাজীব খুন হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সোনার বাংলাদেশ ব্লগ থেকে লেখাটি সরিয়ে দেওয়া হয়। রাজীব হত্যার ঠিক দুই দিন আগে, শাহবাগ আন্দোলন শুরুর আটদিনের মাথায় মাহমুদুর রহমান সম্পাদিত ‘আমার দেশ’ পত্রিকাটি ‘ভয়ঙ্কর ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগার চক্র’ নামে একটি লেখা প্রকাশ করে। সেখানে এই আন্দোলনের উদ্যোক্তাদের ইসলাম বিদ্বেষী ধর্মদ্রোহী বলে আক্রমণ করা হয়, এই লেখাটির শেষদিকেও ‘থাবা বাবা’ ওরফে রাজীব হায়দারের লেখালিখির প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। রাজীব খুনের দশদিন পরে মাহমুদুর রহমান নিজস্ব ব্লগে নিহত রাজীবের চরিত্রহনন করে। সেই শুরু। এর পরেই একটি ৮৪ জনের তালিকা প্রকাশিত হয়। সেই তালিকার সকলকেই নাকি ইসলাম অবমাননার জন্য খুন করা হবে। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন (আনসারুল্লা বাংলা টিম, হেফাজতে ইসলাম ও আরও বহু) এরপর নতুন নতুন হিটলিস্ট প্রকাশ করতে থাকে। দেখা যায়, এই একই ছকে একের পর এক খুন হচ্ছেন অভিজিত রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্তবিজয় দাশ, নিলয় নীল, টুটুল। প্রতিবারই এক একটি খুন হয়, আর এই সর্বব্যাপী মহাশক্তিধর ‘কিন্তু’ শব্দটি বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস থেকে ব্লগারদের রক্ত ধুয়ে মুছে শুদ্ধ করে দিয়ে আবার মিলিয়ে যায়। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব মুহম্মদ জাফর ইকবালের ক্ষেত্রেও এই ছক কাজ করেছে। একটু অন্যভাবে।

মুহম্মদ জাফর ইকবালকে নাস্তিক তকমাটি প্রথম দেয় কুখ্যাত রাজাকার দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। তাঁর অপরাধ ছিল, রাজাকার বিরোধী ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র প্রধান উদ্যোক্তা শহীদজননী জাহানারা ইমামের সমর্থক ছিলেন তিনি। ১৯৯৯ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে তিনি অধ্যাপক, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নামকরণ করা হয় জাহানারা ইমামের নামে, তখনই রাজাকার সাঈদী ঘোষণা করে, জাফর ইকবাল নাস্তিক। দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানপন্থী যুদ্ধাপরাধী ইসলামী মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেই যে নাস্তিক ছাপ লেগে যায় গায়ে, জাফর ইকবালই তার প্রাচীন উদাহরণ। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এই শাহবাগ আন্দোলনের গোড়া থেকেই তার পাশে দ্বিধাহীনভাবে দাঁড়িয়েছেন। রাজীবের মৃতদেহ যেদিন শাহবাগ চত্বরে আনা হয়, সেদিন জাফর ইকবাল শাহবাগ আন্দোলনকে নতুন প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ বলে অভিহিত করেন। মৌলবাদী শিবির অনেকদিনই তাঁর বিরুদ্ধে সক্রিয়। তবু তাঁর বিশাল জনপ্রিয়তাকে তারা ভয় পেয়ে এসেছে। যদিও জাফর ইকবাল কখনও ধর্মের বিরুদ্ধে লেখেননি, তবুও দেখা যায়, জাফর ইকবালের উপন্যাসের নায়ক চরিত্ররা ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। তাঁর উপন্যাসে রাশেদ একভাবে রাজাকারদের নাকাল করে, বুবুনের বাবা আরেকভাবে। তাঁর কিশোর উপন্যাসে ‘সু’ অংশটি যুক্তিবাদী, প্রগতিশীল, ‘কু’ অংশটি গোঁড়া, নারী-শিক্ষার বিরোধী, বিজ্ঞান চর্চার বিরোধী, ‘হিন্দু কবি’ রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ার বিরোধী, তাদের হাতে থাকে বন্দুক আর তারা ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। তাঁর উপন্যাসে সবসময় ‘কু’ হেরে যায়। সবচেয়ে সমস্যার হচ্ছে, তাঁর উপন্যাসগুলি অত্যন্ত সুখপাঠ্য ও সাংঘাতিক জনপ্রিয়। তাই, শিশু-কিশোরদের মস্তিষ্কে সরাসরি জোরালো অভিঘাত ফেলছে সেগুলি। এ ছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মুক্তকণ্ঠের প্রতীক তিনি, যে কোনওরকম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার তিনি। হালের রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও তিনি মানবতার স্বার্থেই সোচ্চার হয়েছেন, ইসলামিক গোষ্ঠীগুলির মতো ‘ইসলাম বিপন্ন’ কিংবা ‘এ দেশ থেকে হিন্দু বৌদ্ধদের তাড়িয়ে জায়গা দেওয়া হোক সাচ্চা মুসলমান রোহিঙ্গাদের’ — এইরকম মধ্যযুগীয় ন্যারেটিভ নেই তাঁর। এ হেন প্রভাবশালী মানুষের হত্যাকে কীভাবে বৈধতা দেওয়া যায়? মৌলবাদী শিবির তাদের প্রস্তুতিপর্বে প্রথমেই তাঁকে চিহ্নিত করল ‘মুক্তিযুদ্ধের ব্যবসায়ী’ বলে। প্রমাণ করতে চাইল, তাঁর দেশপ্রেমের সবটুকুই দেখনদারি। এর পর, বিভিন্ন মর্ফড ছবি সহযোগে তাঁর নামে বিভিন্ন মুচমুচে কেচ্ছা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো শুরু হল। যৌন অপবাদ শুরু হল। আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ বলে তজ্জনিত গালাগালও বাদ গেল না। তবুও তাঁকে হত্যা করার যথার্থ যুৎসই কোনও অজুহাত পাওয়া যাচ্ছিল না ২০১৭ পর্যন্ত।

একুশ শতকের শুরুর দিকে মেয়ে ইয়েশিম ইকবালের অনুরোধে দস্যি মেয়েদের নিয়ে একটি উপন্যাস লেখেন তিনি, নাম ‘নীতু আর তার বন্ধুরা’। সাংঘাতিক জনপ্রিয় হওয়ায় এই নীতু চরিত্রটিকে নিয়েই তিনি ছোটদের একটি নাটক লেখেন, নাম ‘ভূতের বাচ্চা সোলায়মান’। ২০০৬ সালে এনটিভিতে সেই টিভি-নাটক সম্প্রচারিতও হয়। গত বছর, ২০১৭ সালে সেই নাটকটি গল্পাকারে প্রকাশিত হয় বইমেলায়, ‘ভূতের বাচ্চা সোলায়মান’ নামেই। ২০০৬-এ যা ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়, শাহবাগ পরবর্তী বাংলাদেশে সেই একই লেখাকে তাঁর মৃত্যুবাণ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হল। বলা হল, ‘সোলায়মান’ একজন নবীর নাম, তার আগে ভূতের বাচ্চা বিশেষণাত্মক শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা ধর্মদ্রোহই। প্রচ্ছদে আরবী পোশাক পরিহিত দবীর চাচার ছবিটি দেখিয়েও বলা হয় মুসলিম হুজুরদের আক্রমণ করতেই খলনায়কের পোশাক এরকম। তারপর ফেসবুকে পেজ খোলা হয় ‘শয়তানের বাচ্চা জাফর ইকবাল’, ওয়েবসাইট কওমিকণ্ঠ, ইসলামিক অনলাইন মিডিয়া থেকে তাঁর বিরুদ্ধে এই নামকরণ ঘিরেই ধর্মদ্রোহ বলে প্রচার করা শুরু হল। বলা বাহুল্য, এরা কেউই গল্পটি পড়ে দেখেনি। বরং, তাঁর ‘ঈশ্বর’ নামক সায়েন্স ফিকশন গল্পটি সরাসরি দেখিয়েছে নির্বোধের ঈশ্বরবিশ্বাস কীভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে সবকিছু। কিন্তু ইসলামী মৌলবাদীরা সেটির পাঠোদ্ধার করবে ও তাকে প্রচারে ব্যবহার করবে, এতটা তাদের কাছে আশা করা অন্যায়।

গত ৩রা মার্চ ২০১৮ তারিখে মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যার চেষ্টা হয়, এক মাদ্রাসার ছাত্র, ফয়জুর রহমান ছুরি নিয়ে তাঁর পিছন দিক থেকে আক্রমণ করে। সে শুনেছিল, জাফর ইকবালের ভূতের বাচ্চা সোলায়মান বইটিতে ধর্ম অবমাননা করে অনেককিছু লেখা হয়েছিল, বলা বাহুল্য বইটি সে পড়ে দেখেনি। এই আক্রমণ অন্যান্য সবকটি আক্রমণের সঙ্গে মিলে যায়। হত্যাকারীরা ‘শুনে থাকে’ লেখকের লেখায় ধর্ম অবমাননা করা হয়েছে, কিন্তু হত্যা করার আগে তারা সেগুলি পড়ে দেখার সময় পায় না। তারা প্রত্যেকেই চাপাতি বা ছুরি নিয়ে মাথার পেছন দিক থেকে ঘাড় লক্ষ করে কোপ মারে। কারণ, ওইভাবে কোপ মারলেই সওয়াব, বেহেস্তে যাওয়ার পাকা সড়ক প্রস্তুত। আসিফ মহিউদ্দিন, রাজীব হায়দার, অভিজিত রায়, নিলয় নীল, টুটুল, জাফর ইকবাল — প্রত্যেকে এই চেনা ছকে আক্রান্ত। সেই একই বাক্যবন্ধ — ‘হ্যাঁ ওনার উপর আক্রমণ করা ঠিক হয় নাই, কিন্তু, উনি তো নাস্তিক, বইয়ের নাম না হলে ওরকম দেবেন কেন?’

যদিও বাকিদের সঙ্গে জাফর ইকবালের মূলগত প্রভেদ রয়েছে। এই দেশের জন্মের আগে থেকে এর রাজনীতির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। আক্রান্ত ব্লগারদের চেয়ে বয়সে অন্তত এক প্রজন্মের প্রবীণ তিনি। অত্যন্ত কৌশলী তাঁর রাজনীতি। ব্লগাররা অনেকটা উনিশ শতকের ইয়ং বেঙ্গলদের মতো চরমপন্থী, তিনি উনিশ শতকের বিদ্যাসাগরের মতো সুদক্ষ স্ট্র্যাটেজিস্ট। আক্রান্ত জাফর ইকবাল হাসপাতালের বিছানা থেকে ৭ই মার্চ তারিখে যে বার্তাটি দিয়েছেন, তার শেষে লেখা — ‘পৃথিবী এত অবিশ্বাস্য সুন্দর? খোদা আমাকে এই অবিশ্বাস্য সুন্দর পৃথিবীটিকে আরও কয়দিন দেখতে দেবে?’ তাঁর নাস্তিকতা, ধর্মদ্রোহ নিয়ে ঘটে চলা লাগাতার প্রচারের জবাবে হাসপাতালের বিছানা থেকে এই ‘খোদা’ শব্দটির ব্যবহার একটি মাস্টারস্ট্রোক। ইসলামী মৌলবাদ খোদা শব্দটিকে অপছন্দ করে, বলে, আল্লাহ্‌র পরিবর্তে খোদার ব্যবহার শির্‌ক। অন্যদিকে, খোদা শব্দটিকে বাংলাদেশের গণমানস সৃষ্টিকর্তার সমার্থক বলেই জানে। ফারসি খোদা না আরবী আল্লাহ্‌ — তা নিয়ে লড়াই চলুক, এই ধর্মান্ধকারাচ্ছন্ন বাংলাদেশে আলো আনতে গেলে জাফর ইকবালদের বেঁচে থাকা দরকার। এই স্ট্র্যাটেজি তাঁদের লড়াইয়ের অঙ্গ। যে লড়াইয়ের আরেক অঙ্গ, সারা বাংলাদেশ তথা বিশ্ব জুড়ে তাঁর ওপর আক্রমণের প্রতিবাদ। ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমেছে বহুবার, ‘জাফর স্যার’-এর ওপর আক্রমণের জবাব দিচ্ছে তারা। মৌলবাদ পিছু হটছে।

লড়াই আরও বহুদিন চলবে, কারণ, এত কিছুর পরে সেই ‘কিন্তু’ বেঁচে আছে। এই অ্যাপোলজিস্ট ‘কিন্তু’টিকে ধীরে ধীরে মারতে হবে। জাফর ইকবালরা বেঁচে না থাকলে ভবিষ্যতে এই ‘কিন্তু’ শব্দটি আরেকটি অসামান্য বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে — ‘বাংলাদেশ একটা সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র ছিল, কিন্তু, সৃষ্টির সময় ধর্মের বদলে ভাষাকে গুরুত্ব দিয়েছিল বলেই দেশটা টিকল না।’

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4888 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...