কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়
এক
দাঙ্গায় শহর জর্জরিত, সত্যবতী খোকাকে লইয়া ভাগলপুরে পিতৃগৃহে যাত্রা করিয়াছে। আমি ও ব্যোমকেশ কেয়াতলার বাড়িতে বসিয়া গুলিবোমার শব্দ শুনিয়া কালাতিপাত করিতেছি। গত কয়েক বছরে কোকেনচক্র ধরাইয়া দেওয়া সহ নানাবিধ রহস্য সমাধানের পর সত্যান্বেষী হিসাবে ব্যোমকেশের খ্যাতি পাকা কাঁঠালের ন্যায় লালবাজারের অলিন্দে অলিন্দে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। সেই ব্যোমকেশেরও কাঠ বেকার দশা। মাৎস্যন্যায় যেখানে চলিতেছে সেখানে ছোটখাটো খুনরাহাজানি কেহ গা করে না।
ব্যোমকেশ অবশ্য বেকারত্ব লইয়া চিন্তিত নয়। কর্মহীনতার এই অলস অবসরে সে ইংরিজি সাহিত্যের রোম্যান্টিক কবিদের গুলিয়া খাইবার শপথ লইয়াছে। প্রত্যহে ওয়ার্ডসওয়ার্থ আওড়াইয়া দিন শুরু করিতেছে, মধ্যাহ্নে কিটস হইয়া সন্ধ্যায় শেলি ও কোলরিজের রহস্যঘন পদ্যের মায়াজালে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে।
আমার লেখালিখিও যে ভালো চলিতেছে এমন দাবি করিতে পারি না। ব্যোমকেশের কেসের অভাব, আমার আইডিয়ার অভাব। সত্যান্বেষী বন্ধুর ক্রিয়াকলাপ আশ্রয় করিয়া গল্পউপন্যাস রচনা শুরু করা ইস্তক অন্য লেখাতে আর মন বসাইতে পারি না। যাহাই লিখিতে যাই, নিরীহ নীরস ঠেকে। প্রেমের গল্প একখানি শুরু করিয়া দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে আসিয়া ঠেকিয়া গিয়াছি। কেবলই হাত নিশপিশ করিতেছে প্রেমিক কর্তৃক প্রেমিকা বা প্রেমিকা কর্তৃক প্রেমিককে খুন করাইয়া দিই। অনেক কষ্টে নিজেকে নিবৃত্ত করিয়াছি।
কিন্তু লিখিবার কিছু নাই বলিয়া লিখিতেছি না, পেশাদার লেখককে এ ঘোষণার বিলাসিতা মানায় না। পিতৃদেব যা টাকাপয়সা রাখিয়া গিয়াছিলেন তার সুদে চালাইতে পারি না যে তাহা নহে, আগের লেখাপত্রগুলি থেকে রয়্যালটি আছে, কলেজস্ট্রিটের বইয়ের দোকানখানি থেকে যা হয় সব মিলাইলে আমার মতো ঝাড়া হাতপা মানুষের চলিয়া যায়। কিন্তু পুরুষকারে টান পড়ে। ব্যোমকেশের সংস্পর্শে নানান ধরনের লোক আসে। তাদের মধ্যে একজন বিজ্ঞাপনী সংস্থার রামকিঙ্কর সেন। তাঁহাদের আপিসের সিঁড়ি হইতে পড়িয়া একজন কনিষ্ঠ কপিরাইটারের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করিয়া এবং খুনীকে হাতেনাতে ধরাইয়া দিয়া ব্যোমকেশ সেনবাবুর কৃতজ্ঞতাভাজনেষু হইয়াছে। সে কাহিনী লিপিবদ্ধ করিয়া আমিও দু’পয়সা কামাইয়াছি। সেনবাবুর উপস্থিতিতে একদিন লেখার বাজারের মন্দার কথা তুলিয়াছিলাম। পরের দিনই তিনি ফোন করিয়া জানাইলেন যে আমি রাজি থাকিলে কপিরাইটিঙের দুয়েকটি কাজ তিনি মাঝেসাঝে আমার দিকে পাঠাইতে পারেন। পার্মানেন্ট চাকরি দিবার ক্ষমতা তাঁর নাই। আমার সাধও নাই। কাজেই এই ব্যবস্থায় দুই পক্ষই খুশি। একটি সরিষার তৈলের এবং একটি চপ্পলের বিজ্ঞাপনের পর আপাতত যে বিজ্ঞাপনটি লিখিয়া দেবার কড়ার পাইয়াছি সেটি সিংহ ছাপ আচার কোম্পানির।
সকাল হইতে অসময়ের বৃষ্টি পড়িয়া অশান্ত শহরের পারা খানিকটা নামাইয়া গিয়াছে। একেবারে নিভাইয়া দিয়াছে এ আশা নাই, সম্ভবতঃ গুমিয়া গুমিয়া জ্বলিতেছে, মেঘছেঁড়া রৌদ্রের ন্যায় যে কোনও মুহূর্তে আত্মপ্রকাশ করিবে। লেখার টেবিলে বসিয়া কলম চিবাইয়া চিবাইয়া ঘামিয়া উঠিয়াছি, আচারের একলাইন গুণগান মাথা হইতে বাহির হইতেছে না। ভাবিতেছি পুঁটিরামকে দিয়া একবোতল সিংহ ছাপ আচার কিনিয়া আনিয়া চাখিয়া দেখি। তবে যদি অনুপ্রেরণা আসে।
হাল ছাড়িয়া সকালের এঁটো খবরের কাগজখানা তুলিয়া জাবর কাটিতে বসিলাম। প্রথম পাতায় কেবল দাঙ্গামারপিটের খবর। পড়িবার প্রবৃত্তি হইল না, পাতা উলটাইয়া ভিতরে পৌঁছাইলাম। আর তখনই তিনের পাতার নিচের দিকে তিন ইঞ্চি বাই তিন ইঞ্চি খোপে খবরটি চোখে পড়িল।
ব্যোমকেশকে শুনাইবার জন্য জোরে জোরে পড়িতে শুরু করিলাম।
হাইকোর্টের প্রয়াত বিচারপতি জাস্টিস মোহিনীমোহন মুখার্জির একমাত্র কন্যা শ্রীমতী মন্দাকিনী হালদার স্বামী শ্রী রমেন হালদারের গৃহ হইতে নিখোঁজ হইয়াছেন। গত সাত দিন ধরিয়া তাঁহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইতেছে না। পুলিশ সর্বত্র খোঁজ করিয়াও কোনও সুরাহা করিতে পারে নাই। তদন্তের ভারপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর রাখাল সরকারকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে তিনি বলেন মিসেস হালদারকে খুঁজিবার জন্য পুলিশবিভাগ যথাসাধ্য চেষ্টা করিতেছে, তদন্ত মাঝপথে থাকার দরুণ এখনই কোনও তথ্য ফাঁস করা সম্ভব হইতেছে না।
তক্তপোষের উপর একরাশ খাতাবইয়ের মধ্যে অনন্তশয্যার ভঙ্গিতে ব্যোমকেশ কাত হইয়া পড়িয়াছিল।
“কী বুঝলে? একবার তদন্ত করে দেখবে নাকি?”
“কীসের?”
“কীসের মানে? মন্দাকিনী অন্তর্ধান রহস্যের? এতক্ষণ ধরে এই যে রিডিং পড়লাম। মন না হয় বুঝলাম, বউ যাওয়ার সময় সঙ্গে করে কানদুটোও নিয়ে গেছে নাকি?”
“না ভাই, কান যেখানকার সেখানেই আছে। আমি জানতে চাইছি রহস্যটা কীসের। রহস্যের তদন্ত করার আগে আদৌ রহস্য আছে কিনা সেটার একটা তদন্ত হওয়া দরকার।”
ব্যোমকেশ আড়মোড়া ভাঙিয়া খাট হইতে উঠিয়া জানালার ধারে গিয়া দাঁড়াইল। সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করিয়া বলিল, “নারীস্বাধীনতার যুগ ভায়া, ঘোমটা মুড়ি দিয়ে পায়ে বেড়ি পরিয়ে মেয়েদের হেঁসেলে বন্দি করে রাখার যুগ আর নেই। মন্দাকিনী পয়সাওয়ালা বাপের মেয়ে, চলতেবলতে পারে। তোমরা যাঁদের বলো আলোকপ্রাপ্তা। সে যদি নিজে থেকেই হারিয়ে যেতে চায় তাকে ধরেবেঁধে ফেরত আনা কি উচিত?”
এই সম্ভাবনা আমার মাথায় আসে নাই। কিন্তু এত সহজে হার মানিতে মন চাহিল না।
“এই দাঙ্গাহাঙ্গামার বাজারে একজন মহিলা, যত আলোকপ্রাপ্তাই হন না কেন, একা চলে যাবেন সেটা মেনে নেওয়া শক্ত, আর দ্বিতীয়ত…”
“দ্বিতীয়ত, শহরে এত খুনখারাপি থাকতে পুলিশ হঠাৎ গৃহপালিত একখানা অন্তর্ধান নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছে কেন? খবরের কাগজ না হয় বুঝলাম, ছাগলে গাছ মুড়িয়ে খেলেও সেটাকে প্রথম পাতায় ছাপে। কিন্তু এ কেস একেবারে রাখালের কাছে গিয়ে পড়েছে কেন সেটা অন্তর্ধানের চাইতেও জটিল রহস্য। সেটা উদঘাটন না করলে পরের রহস্যের কিনারা করা যাবে না। তাছাড়াও কয়েকটা খটকা আছে…”
ব্যোমকেশের গলা সহসা চাঙ্গা হইয়া উঠিল। “তবে আশার কথা সে সব খটকার নিরসন আর…” ব্যোমকেশের দৃষ্টি দেওয়াল ঘড়ির দিকে ঘুরিল, “…সাড়ে তিন মিনিটের মধ্যে হয়ে যাবে।”
নাঃ, মাথাটা একেবারেই গেছে। সত্যবতীকে তার করিয়া আনাইবার কথা তুলিব কিনা ভাবিতেছি এমন সময় সিঁড়িতে পদশব্দ শোনা গেল। মিনিটখানেক পরেই ভেজানো দরজা ঠেলিয়া যিনি ঘরে ঢুকিলেন তাঁহাকে দেখিয়া আশ্বস্ত হইলাম। ব্যোমকেশ পাগল হয় নাই। জানালা দিয়া রাখালকে রাস্তা পার হইতে দেখিয়াছে।
দুই
টুপি খুলিয়া ধড়াস করিয়া চেয়ারে বপুস্থাপনা করিয়া রাখাল বলিল, “আপনাদের পুঁটিরামকে একটু জল আনতে বলুন ব্যোমকেশদা।”
উঠিয়া গিয়া পুঁটিরামকে জল ও সঙ্গে কিছু স্থল আনিবারও হুকুম দিয়া বসবার ঘরে ফিরিয়া আসিলাম। ব্যোমকেশ খটকা নিরসনে সময় নষ্ট করে নাই। ঘরে ঢুকিতে ঢুকিতে রাখালের উত্তেজিত কণ্ঠ কানে আসিল।
“ওই ব্যাটা স্বামীই যে খুনী তাতে কোনও সন্দেহ নেই, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে যে আমাদের হাতে কোনও প্রমাণ নেই।”
“খুন? খবরের কাগজে যে বলছে অন্তর্ধান?”
“বলছে কারণ আমরা এখনও ব্যাপারটাকে খুন বলে চাউর করছি না।”
আমি গুছাইয়া বসিলাম। বলিলাম, “শুরু থেকে হোক।”
পূর্বরাগ যা শোনা গেল তাহা এইরূপ।
মিস মন্দাকিনী মুখার্জি হাইকোর্টের জজ মোহিনীমোহন মুখার্জির কন্যা। মন্দাকিনীর মা শৈশবে গত হইয়াছিলেন। জজসাহেব নব্য ঢঙের মানুষ ছিলেন, মেয়েকে ইংরিজি শিক্ষা শিখাইয়া পড়াইয়া বড় করিয়াছিলেন। কনভেন্টের ইংরিজি বুলি মন্দাকিনী শিখিয়াছিল ভালোই, দুঃখের বিষয় সেখানকার সন্ন্যাসিনীদের কঠোর নিষ্ঠা ও অনুশাসনের দিকটি সে শিক্ষা হইতে বাদ পড়িয়া গিয়াছিল। পার্টিতে গিয়া, মদ্যপান করিয়া, পুরুষের সহিত অবাধ মেলামেশা করিয়া মন্দাকিনীর দিন কাটিতেছিল। শাসনের সময় বা ইচ্ছা কোনওটাই পিতার ছিল না। বর্ষাকালের বন্য লতার মতো মন্দাকিনী বাড়িয়া উঠিতেছিল। লতায় যখন ফুল ধরিবার সময় হইয়াছে এমন সময়ে আলিপুর রোডের প্রাসাদদুয়ারে কোনও একটা কাজের খাতিরে রমেন হালদারের আবির্ভাব হইল। রমেন হালদার একজন ইনশিওরেন্সের দালাল। তিনকূলে কেহ নাই। মন্দাকিনী তাহার মধ্যে কী দেখিল বলা মুশকিল। হয়তো প্রাচুর্য ও স্তাবকদের ভিড়ে গমগমে জীবনের পাশে এই লোকটির রিক্ত চালচুলোহীনতাই তাহাকে আকর্ষণ করিয়া থাকিবে। বাবার চক্ষুর আড়ালে মাস দুই তিন প্রণয়াভিসার চলিল, তারপর একদিন মন্দাকিনী ঘোষণা করিল সে রমেনকে বিবাহ করিবে।
জজসাহেবের হুঁশ ফিরিল। তিনি মেয়েকে অনেক বুঝাইলেন, বকিলেন, রমেনকে পুলিশে দিবার হুমকি দিলেন, মন্দাকিনী টলিল না। পার্টিতে যাওয়া নিষেধ হইল, মেয়েকে ঘরে বন্ধ করিয়া দ্বারের বাহিরে রাঁধুনিকে পাহারায় বসাইয়া মোহিনীমোহন মুখার্জি এজলাসে যাওয়া শুরু করিলেন। কিন্তু ঘা তখন পাকিয়া উঠিয়াছে, এই সব পলকা পুলটিসে কাজ দিল না। একদিন বাড়ি ফিরিয়া মোহিনীমোহন দেখিলেন মন্দাকিনীর ঘর ফাঁকা। দোতলার বারান্দা হইতে বিছানার চাদরের দড়ি ঝুলিতেছে। অনাবৃত বিছানার ওপর চাপা দেওয়া একখানা চিরকুটে মন্দাকিনীর হস্তাক্ষরে লেখা, “আমাকে খোঁজবার চেষ্টা কোরো না, বাবা। পাবে না। পেলেও আমি আর ফিরব না। রাগ কোরো না। মনে রেখো, আমি সুখী হয়েছি। ইতি, মিনু। পুনশ্চঃ আমার জিনিস আমি নিয়ে গেলাম।”
মোহিনীমোহন দৌড়াইয়া গিয়া দেওয়ালের আয়রন সেফ খুলিলেন। ভেতরে তাঁহার মৃতা স্ত্রীর অন্তত পঞ্চাশ ভরি গহনা রাখা ছিল। একটিও নাই। “হা হতোস্মি” বলিয়া জজসাহেব মাথা ঘুরিয়া বুক চাপিয়া পড়িয়া গেলেন। ভৃত্যের দল ধরাধরি করিয়া হাসপাতালে লইয়া গেল। কিন্তু জ্ঞান আর ফিরিল না। তিনদিন পর হাসপাতালেই তাঁর দেহাবসান হইল।
পুঁটিরাম চা ও তেলেভাজার ট্রে লইয়া প্রবেশ করিয়াছে। সন্ধ্যা নামিয়াছে। ঘরের বাতি জ্বালাইয়া খালি ট্রে লইয়া পুঁটিরাম প্রস্থান করিল। মোড়ের মাথায় উড়ের দোকানে এই সময় চমৎকার ফুলুরি বেগুনি ভাজে। সত্যবতী থাকিলে তাহার কড়া শাসনে সে সব অখাদ্যকুখাদ্য খাইবার আমাদের জো থাকে না। দুধমুড়ি কিংবা শুষ্কখোলায় টালা চিঁড়া সহযোগে চা গলাধঃকরণ করিতে হয়।
তেলেভাজায় কামড় দিয়া যে যার চায়ের কাপে সশব্দে চুমুক দিলাম। রাখালের কণ্ঠ হইতে “আঃ” শব্দটি সবে বাহির হইয়াছে এমন সময় ব্যোমকেশ বলিয়া উঠিল,
“তারপর কী হল?”
তেলেভাজায় ব্যোমকেশের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নাই। সিগারেটের রিং ছাড়িতে ছাড়িতে, সিলিং-এর পানে সে একমনে তাকাইয়া আছে। বুঝিলাম শিকার টোপ গিলিয়াছে।
মুখস্থ তেলেভাজা গিলিয়া রাখাল উত্তর করিল, “তারপর আবার কী? প্রায় মাসছয়েক কপোতকপোতীর পাত্তা নেই, তারপর এই দিনদশেক আগে রমেন হালদার লোকাল থানায় এসে স্ত্রীর নিখোঁজের ডায়রি লিখিয়েছে।”
“রমেন হালদার নিজে এসেছিল থানায়?” ব্যোমকেশের দৃষ্টি সিলিং হইতে নামিয়া রাখালের মুখের ওপর স্থিত হইল।
“তবে আর বলছি কি। ব্যাটার সাহসের অভাব নেই।”
“তারপর?”
“তারপর পুলিশ গিয়ে খোঁজাখুঁজি করল। আলিপুরে বাপের বাড়িতে, কাশীতে মাসির বাড়িতে, মন্দাকিনী কোথাও নেই। স্রেফ উবে গেছে।”
“খুনই হয়েছে ধরে নিচ্ছ কী করে?”
রাখাল গর্জন করিয়া উঠিল।
“প্রমাণ দেখে।”
“শুনি কী প্রমাণ।”
রাখাল গলা ঝাড়িয়া কর গুনিতে শুরু করিল।
“এক নম্বর, রমেন হালদারের ভড়ং। দালালি করে খায় অথচ গলায় কণ্ঠী কেটে, কপালে ফোঁটা কেটে ব্যাটা একেবারে বোষ্টম।”
ব্যোমকেশ হাসিয়া ফেলিল। আমারও ব্যাপারটা যারপরনাই পক্ষপাতদুষ্ট বোধ হইল। রাখাল বলিল, “হাসছেন কী? আরও আছে।”
শুনিলাম বাড়ি তল্লাশি করিতে গিয়া পুলিশ নানারকম অস্ত্রশস্ত্রের সন্ধান পাইয়াছে। প্রথম পাওয়া গিয়াছে একটি ধারালো কুড়ুল। যেটা দিয়া একজন জোয়ান মানুষের পক্ষে একজন মহিলাকে খুন করিয়া ফেলা কিছু অসম্ভব নয়। দু’নম্বর, একখানা ধারালো ছুরি।
“যে লোক ঘাসপাতা খেয়ে বাঁচে তার রান্নাঘরে ও রকম কসাইয়ের ছুরি কীসে লাগে বলুন দেখি?”
“মন্দাকিনীর গয়নার কী হল?” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম।
ব্যোমকেশ আমার দিকে চক্ষু ফিরাইল। বলিল, “আচারের সাধনা তোমার মগজ খুলে দিচ্ছে দেখতে পাচ্ছি।”
“সব ফক্কা। রমেন মুখে কিছু বলেনি, কিন্তু মন্দাকিনী গয়না নিয়ে পালিয়েছে এমনই হাবভাব। আমরা লোক লাগিয়েছি, কিন্তু এই বাজারে টাকাপয়সা গয়নাগাঁটি হাওয়া করা কী সহজ জানেন নিশ্চয়? কালোবাজারিরা দিবারাত্র চরকি কাটছে, রমেন হালদার দালালি করে খায়, চেনাজানা বিস্তর, কোথায় কার হাত দিয়ে পাচার করেছে কে জানে। গলিয়ে সোনার বিস্কুট করে পুঁতে রাখলেই বা কে দেখতে যাচ্ছে।”
“বাড়ি তল্লাশ করেছ?”
“সব ঘরের সব দেওয়াল টোকা দিয়ে দেখেছি। বালিশতোশক সেলাই খুলিয়ে দেখেছি। বাগান পর্যন্ত খুঁড়ব ভেবেছিলাম, সেটা করতে হয়নি, রমেন হালদার নিজেই সম্প্রতি বাগান খুঁড়ে ফুলফলের চারা পুঁতেছে, জমি কুপিয়ে শাকসবজির বাগান করেছে। বাগানে যে বউয়ের লাশ পোঁতেনি সে নিয়ে সন্দেহ নেই। গয়নাও না।”
রাখালের মুখে হতাশার ছায়া ঘনাইল।
ব্যোমকেশ দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া ঠান্ডা তেলেভাজার দিকে হাত বাড়াইল।
“অর্থাৎ যতদিন মন্দাকিনী হালদারকে জীবিত বা মৃত খুঁজে না পাচ্ছ ততদিন কণ্ঠীধারী রমেন হালদারকে জেলের ঘানি ঘোরাতে পারছ না, এই তোমার আফসোস তো?”
রাখাল ব্যাজার মুখে নিরুত্তর রহিল।
“মন্দাকিনীর বাপের বাড়ির লোকের কোনও মাথাব্যথা নেই?”
“বাপের বাড়িতে লোক বলতে জজসাহেবের একমাত্র ছেলে, মন্দাকিনীর দাদা মন্দার চাটুজ্যে আর তার স্ত্রী। বাকি সব চাকরবাকর। মন্দার একটি অপদার্থ। কাজকর্ম কিছু করে না, বাপের পয়সা ওড়ায় আর ক্লাবে গিয়ে জুয়া খেলে। বউ বড়লোক বাড়ির মেয়ে। মন্দাকিনীকে দু’চক্ষে দেখতে পারে না।”
ব্যোমকেশ হাসিয়া বলিল, “স্বাভাবিক। মন্দাকিনীর লুটের মধ্যে বউদিদির ভাগের গয়নাও ছিল বোধহয়।”
“ঠিক ধরেছেন। মন্দারের বউয়ের গয়নার অভাব নেই। বিয়ের সময় বাপের বাড়ি থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত গয়নাই নিয়ে এসেছিল, সে সব লকারে মন্দাকিনীর নাগালের বাইরে তোলা ছিল। কিন্তু মেয়েদের স্বভাব তো জানেনই।”
জানালার বাহিরে অন্ধকার ঘন হইয়া আসিয়াছে, হেমন্তের কুয়াশার মধ্যে হলুদ আলোজ্বলা ল্যাম্পপোস্টগুলিকে ভৌতিক দেখাইতেছে। কোথা হইতে একটা ক্ষীণ চেল্লামেল্লির শব্দ ভাসিয়া আসিল। রাখাল গভীর শ্বাস লইয়া টেবিল হইতে টুপি তুলিয়া খাটের ওপর কবিতার বইগুলির দিকে চকিত দৃষ্টিপাত করিয়া বলিল, “ব্যোমকেশদা, বলছিলাম কী আপনি তো, এই মুহূর্তে, মানে…আপনি যদি ব্যাপারটা একটু দেখতেন, আসলে আমাদের হাতে এত কাজ… “
প্রেমের গল্পখানিকে কুচি কুচি করিয়া বাতিল কাগজের ঝুড়িতে নিক্ষেপ করিবার সম্ভাবনায় মন নাচিয়া উঠিল।
তিন
মুনিঋষিরা শুভকাজে বিলম্ব করিতে মানা করিয়া গিয়াছেন, কাজেই স্থির হইল আগামীকাল প্রত্যুষেই রাখাল আমাদের রমেন হালদারের বাড়ি লইয়া যাইবে।
ভদ্রপল্লী শেষ হইয়া যেখানে সন্দেহজনক পল্লী শুরু হইয়াছে, শহরের সেই সীমানায় রমেন হালদারের বাড়ি। ও দিকটায় মূলত বিহারী কুলিকামিনদের বাস, পুলিশের গাড়ি দেখিয়া বাসিন্দাদের চোখেমুখে যেরূপ অভিব্যক্তি ফুটিল তাহার সঙ্গে হিংস্র বন্যবেড়ালের রোঁয়া ফুলিয়া উঠিবার সাদৃশ্য আছে।
পাড়া ছাড়িবার মিনিটখানেক পরই জনপদ ফুরাইয়া আসিল। রাস্তা পাকা হইতে কাঁচা হইল। সেই রাস্তায় খানিকক্ষণ হেলিয়াদুলিয়া চলিয়া একখানা জলার ধারে আসিয়া গাড়ি থামিল। গাড়ি হইতে নামিয়া ধুতির কোঁচা ঝাড়িতেছি, রাখাল বলিল, “ওই যে রমেন হালদারের বাড়ি।”
মুখ তুলিয়া দেখিলাম জলার ওপারে ঘন বৃক্ষচ্ছায়ায় একখানি দ্বিতল ভদ্রাসন। জমজমাট শহরের পিতৃগৃহ ছাড়িয়া এই জনমানবহীন এঁদোজলার পারে মিস মন্দাকিনী ছয়মাস দূরস্থান, একদিনও কীভাব কাটাইতে পারিলেন সে বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করিলাম।
ব্যোমকেশ বলিল, “মদনের শরের গুঁতো খেলে তুমিও অনেক কিছু পারতে। খাওনি তাই।”
জলা ঘিরিয়া আলপথের মতো একফালি রাস্তা অতিক্রম করিয়া বাড়ির নিকটবর্তী হইলাম। দূর হইতে বোঝা যায় না, বেশ ছিরিছাঁদ আছে। পাঁচিল ও বাড়ির মধ্যবর্তী বাগান। দেখিলে বোঝা যায় নিয়মিত যত্ন করা হয়। একধারে মাচার ওপর লাউকুমড়ো ফলিয়া আছে। বাকি জমি সদ্য খুঁড়িয়া মরশুমি চারাগাছ পোঁতা হইয়াছে।
আমার মনের কথা ব্যোমকেশ মুখ ফুটিয়া বলিল।
“রমেন হালদারের তো বেশ গোছানো স্বভাব মনে হচ্ছে। পরিবারহীন অসহায় গেরস্ত তো মনে হচ্ছে না। দেখাশোনা করার জন্য মালিচাকর আছে নাকি?”
“কেউ নেই। মন্দাকিনীকে বিয়ে করে আনার পর বিহারী বস্তি থেকে একটা হাবাকালা বুড়িকে ঠিকে ঝি রেখেছিল। মন্দাকিনীর অন্তর্ধানের পর ছাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়ির, বাগানের সব কাজ নিজে হাতে করে। একেবারে একলা মানুষ।”
বাগানের মধ্য দিয়ে হাঁটিয়া দরজার নিকট পৌঁছাইলাম। কপাটে করাঘাত করিয়া রাখাল হাঁকিল, “রমেনবাবু বাড়ি আছেন নাকি?”
মিনিটখানেক পর দরজা খুলিয়া যে ব্যক্তি মুখ বাহির করিল তাহাকে দেখিয়া হাঁ হইয়া গেলাম। এই কণ্ঠীপরা লোকটি ইনশিওরেন্সের দালাল রমেন হালদার? নারিকেল দড়ির ন্যায় পাকানো দীর্ঘ শরীর, সদ্য স্নান সারিয়া উঠিয়াছে, কপালের তিলকখানা তখনও সম্পূর্ণ শুকায় নাই। সতর্ক দৃষ্টি। রাখাল ঠিকই বলিয়াছিল, লোকটির বৈষ্ণব আড়ম্বর বহিরঙ্গের বলিয়াই সন্দেহ হয়। নিরীহ বোষ্টমের বদলে ভিজে বেড়ালের ভাবই প্রবল। আপাতত গুটিসুটি মারিয়া চক্ষু বুজিয়া ঘরের কোণে বসিয়া আছ, ল্যাজে পা পড়িলে ফ্যাঁস করিয়া উঠিয়া আঁচড়াইয়া কামড়াইয়া দিবে না এমন নিশ্চয়তা নাই। মন্দাকিনী কী দেখিয়া মজিয়াছিল ঈশ্বরই জানেন। মদনের শর সত্যিই সর্বশক্তিমান।
রাখাল পরিচয় করাইয়া দিল। ব্যোমকেশের নাম শুনিয়া রমেন হালদারের মুখের ভাবের পরিবর্তন হইল না। হয় ইনশিওরেন্সের দালালির জগতে ব্যোমকেশের খ্যাতি পৌঁছায় নাই, নতুবা রমেন হালদার ঘাঘু লোক। মনের ভাব মনে লুকাইয়া রাখিতে জানে।
সদরঘরে বসিলাম। ঘরটি অনাড়ম্বর। একটি তক্তপোষ, খান দুই কেদারা, দেওয়ালে বাঁধানো ফোটোগ্রাফে রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তির চার পায়ে চন্দনের ফোঁটা। রমেন হালদারের সঙ্গে কথা বলিয়া এমন কিছুই জানা গেল না যা রাখাল আগে বলে নাই। লোকটি গুছাইয়া কথা বলিতে পারে। কণ্ঠস্বরটি মার্জিত। কথা বেচিয়া খাওয়ার উপযুক্ত।
স্ত্রীর সহিত কোনওরূপ বকাবকি হইয়াছিল কিনা জানিতে চাহিলে রমেন হালদার বলিল মন্দাকিনী ছিল তাহার ঘরের লক্ষ্মী। সে ঘরে আসা যাবত তাহার সংসারে শ্রী আসিয়াছে, ব্যবসায় উন্নতি হইয়াছে। এত সুখ বলিয়াই হয়ত সহিল না। সবই হরির ইচ্ছা। বলিতে বলিতে রমেন হালদার কুতকুতে চোখে ফতুয়ার হাতা চাপিয়া ধরিয়া অদৃশ্য অশ্রু প্রতিহত করিল।
রাখালের হাঁটুর ক্রমাগত আন্দোলন দেখিয়া বুঝিতে পারিতেছিলাম এই সব বাজে কথায় সময় নষ্ট না করিয়া ব্যোমকেশ সত্বর প্রমাণ বাহির করিয়া রমেন হালদারকে স্ত্রীহন্তারক সাব্যস্ত করিয়া দিক আর সে টানিতে টানিতে কণ্ঠী ছিঁড়িয়া রমেন হালদারকে হাজতে পুরুক এই চিন্তায় সে অধৈর্য হইয়া আছে।
ব্যোমকেশ বলিল, “বাড়িটা একটু ঘুরে দেখা যেতে পারে?”
রমেন হালদার ব্যস্ত ভাব দেখাইয়া কহিল, “নিশ্চয় নিশ্চয়, আসুন এই দিকে।” সদর ঘরের পর একখানি চাতাল কুয়োতলা রান্নাঘর পার হইয়া বাগান। সামনের বাগানের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ। বাগানে বেশিরভাগই একসময় বড় গাছে ভরা ছিল। সম্প্রতি রমেন হালদার সেগুলি কাটিয়া ফেলিয়াছে। কাটা গাছের গুঁড়িগুলি ডাই করিয়া দেওয়ালের গায়ে স্তুপাকার করিয়া রাখা। ওই রকম দড়িপাকানো চেহারা হলে কী হইবে, লোকটি শক্তিমান বলিতে হইবে, একা হাতে এই সব গাছ কাটিয়াছে, গুঁড়ি ফালা করিয়াছে, তারপর সারা বাগান কোপাইয়া শাকসবজি পুঁতিয়াছে।
ব্যোমকেশ বলিল, “মিসেস হালদারের ঘরখানা একবার…”
“নিশ্চয়, নিশ্চয়।” রমেন হালদার ব্যোমকেশকে দ্বিতলে পথ দেখাইয়া লইয়া চলিল।
ব্যোমকেশ আমার দিকে ফিরিয়া কহিল, “সুন্দরী মহিলার ঘরে তোমার মতো চিরকুমারের না যাওয়াই ভালো। চিত্ত বিক্ষিপ্ত হতে পারে। তুমি বরং একতলার বাকি ঘরগুলো দেখে নাও।”
একতলায় বসার ঘর আর রান্নাঘর ভাঁড়ার ব্যতিরেকে আর কিছু নাই। পরিচ্ছন্ন রান্নাঘরে স্টোভের উনুনের পাশে মাজাধোয়া বাসনপত্র গুছাইয়া রাখা। ভাঁড়ারের তাকে সারি সারি চিঁড়ামুড়ির বয়াম দেখিয়া বাহির হইয়া আসিতে গিয়া থমকাইলাম। শিশিবোতলের ভিড়ে সিংহ মার্কা আচারের দুইখানা শিশি। একটা শূন্য, আরেকটার গায়ে অল্প খানিকটা আচার তখনও লাগিয়া আছে।
চার
রমেন হালদারের বাড়ি হইতে বাহির হইয়া ব্যোমকেশ রাখালকে বলিল, “তুমি এগোও, আমি আর অজিত পরে আসছি।”
রাখাল গাড়ি চড়িয়া প্রস্থান করিল। আমরা জলাভূমি পার করিয়া এপাশে আসিলাম। খানিকক্ষণ হাঁটিতে হাঁটিতে রাস্তার বাঁ দিকে একটি চায়ের দোকান চোখে পড়িল। দোকানে আড্ডা চলিতেছে। আমরা অগ্রসর হইতে কথাবার্তা থামিয়া দৃষ্টি আমাদের দিকে ঘুরিল।
“বেশ চায়ের খিদে পাচ্ছে, বলো অজিত?” বলিয়া উত্তরের অপেক্ষা না করিয়া দোকানে ঢুকিয়া পড়িল ব্যোমকেশ। চা আর লেড়ো বিস্কুটের বায়না দিয়া ভাঙা বেঞ্চিতে বসিয়া একখানি সিগারেট ঠোঁটে চাপিয়া এদিকওদিক তাকাইতে লাগিল। উল্টোদিকের বেঞ্চি হইতে একজন উঠিয়া আসিয়া দিয়াশলাই জ্বালাইয়া সিগারেটে আগুন ধরাইয়া দিলেন।
“বাবুমশাইরা কি পুলিশের লোক?”
লোকটির চেহারা অনেকটা শুষ্ক কিশমিশের মতো। চক্ষু এবং গণ্ডদ্বয় কোটরপ্রবিষ্ট।
ব্যোমকেশ উত্তর করিল, “পুলিশের বন্ধু।”
“অ। আপনারা কি রমেন হালদারের ইস্তিরির খোঁজ করতে এয়েচেন?”
ব্যোমকেশ ঠোঁটে সিগারেট চাপিয়া চশমা ধুতির কাপড়ে মুছিতে মুছিতে বলিল, “আপনারা কেউ কিছু জানেন নাকি? মন্দাকিনী নিখোঁজ হওয়ার দিন কেউ দেখেছিলেন তাকে?”
লোকগুলি নীরবে দৃষ্টিবিনিময় করিল। শুষ্ক কিশমিশ বলিল, “সেদিন কেন, রমেন হালদারের পরিবারকে আমরা কোনওদিনই দেখিনি বাবু। ও পাড়ার বুধুয়ার মা রমেন হালদারের বাড়ি কাজ করতে যেত,” লোকটি হাত তুলিয়া সম্ভবত বুধুয়ার বাড়ির দিক নির্দেশ করিল। “সে বলেছিল মেমসাহেব নাকি বড় বাড়ির মেয়ে, দেখতেও ভালো।”
ব্যোমকেশ বলিল, “রমেন হালদারের বাড়িতে লোকজন আসত? আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব?”
লোকটির চক্ষে সামান্য ঝিলিক খেলিয়া গেল। বলিল, “রমেন হালদার বাড়িতে থাকতে কাউকে আসতে দেখিনি কোনওদিন।”
“আর রমেন হালদার না থাকতে?”
লোকটা উদাস চক্ষু মেলিয়া চাহিয়া বসিয়া রহিল। যেন ব্যোমকেশের প্রশ্ন তাহার কানে ঢোকে নাই।
ব্যোমকেশ পকেট হইতে সিগারেট কেস বাহির করিয়া ঢাকনা খুলিয়া আগাইয়া ধরিল। সন্তর্পণে একখানি সিগারেট তুলিয়া ফুঁ দিয়া, হাতের তেলোয় ঠুকিয়া, দেশলাই জ্বালাইয়া লোকটি সিগারেট ধরাইল, তারপর বড় একখান টান দিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া মুখের সম্মুখে ধোঁয়ার ঘূর্ণন লক্ষ করিতে করিতে বলিল,
“একটা খুব বড় গাড়ি এসেছিল একদিন। সুটবুট পরা ছোকরা বাবু নেমেছিলেন গাড়ি থেকে। অনেকক্ষণ ছিলেন। কী কথা হইয়াছিল সে সব বুধুয়ার মা শুনতে পায়নি। একে বুড়ি কালা, তায় ঘরের দরজা বন্ধ ছিল।”
পাঁচ
সকালে ঘুম ভাঙ্গিয়া দেখিলাম বৈঠকখানার তক্তপোশ হইতে রোম্যান্টিক কবিরা অদৃশ্য হইয়াছেন, ব্যোমকেশ একেবারে ফিটফাট হইয়া আরামকেদারায় বসিয়া পা ঝাঁকাইতেছে। সমস্ত শরীরে একটা চাঙ্গা ভাব।
“তাড়াতাড়ি করো। বেরোতে হবে।”
চা খাইয়া বাহির হইয়া পড়িলাম। কোথায় যাইতেছি জানি না, কিন্তু মনে একটি সন্দেহ আছে। ট্যাক্সিতে বসিয়া ব্যোমকেশ কলিকাতার একটি জমকালো পাড়ার পথনির্দেশ দিতে সামান্য আত্মশ্লাঘা অনুভব হইল। ব্যোমকেশের সঙ্গে থাকিয়া সত্যান্বেষণের ধাপগুলি সড়গড় হইয়া আসিয়াছে। আলিপুরের শান্ত প্রশস্ত রাজপথের ধারে একটি বাংলো ছাঁদের অট্টালিকার সম্মুখে আসিয়া ট্যাক্সি থামিল।
রাখাল সম্ভবত পূর্বেই খবর দিয়া রাখিয়াছিল, চাকর আসিয়া দরজা খুলিয়া আমাদের বৈঠকখানায় বসাইয়া গেল। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলিয়া যিনি বাহির হইলেন তাঁহাকে দেখিয়া চিত্ত চমৎকার।
প্রায় ছ’ফুট লম্বা, মানানসই চওড়া নারীমূর্তি। চক্ষু ভাঁটার মতো গনগন করিতেছে। হালফ্যাশনে কাটা কেশরাশি মুখমণ্ডলের চারিপাশে উদ্যত নাগিনীর ন্যায় ফণা তুলিয়া আছে। পরিধানে সিল্কের কটকটে রক্তবর্ণ গাউন। বাপের বাড়ির গহনার জোরেই যে এঁকে সারাজীবন কুমারীত্বের সাজা ভোগ করিতে হয় নাই সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। মাতৃত্বের আশীর্বাদ লাভ করিলে হয়তো চেহারায় খানিকটা লাবণ্য আসিলেও আসিতে পারিত, সে সৌভাগ্য হইতে ঈশ্বর এঁকে বঞ্চিত করিয়াছেন।
মিসেস মুখার্জি চক্ষু ঘুরাইয়া কিয়দক্ষণ আমাদের সেঁকিলেন, তারপর জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী চাই?” মুখবাঁধা হাঁড়ির ভেতর হইতে যেন বুলডগ আর্তনাদ করিল।
ব্যোমকেশের স্নায়ুর জোর আছে, অল্প কথায় আমাদের আগমনহেতু ব্যাখ্যা করিল। আমরা পুলিশের লোক নই, স্রেফ ঘরের খাইয়া বন্য মহিষ তাড়াইয়া বেড়াইতেছি শুনিয়া মিসেস মুখার্জি সামান্য নরম হইয়া কৌচে আসিয়া বসিলেন।
“ও মেয়ের চরিত্র ভালো ছিল না, আগের নাগরদের কারও সঙ্গে ভেগেছে নির্ঘাত।”
নাগরদের নামঠিকানা জানতে চাওয়ায় মিসেস মুখার্জি মুখব্যাদান করিলেন। ওই সব নরকের কীটেদের সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না, জানিতে চাহেনও না। খালি রণজয় মজুমদার বলে এক ছোঁড়ার মন্দাকিনীর প্রতি বাড়তি দুর্বলতা ছিল, মন্দাকিনীর গৃহত্যাগের পূর্বে ঘনঘন বাড়িতে আসিত।
খানিক পরে বাড়ির ভিতর হইতে মন্দার মুখার্জি নিষ্ক্রান্ত হইলেন। স্ত্রীর তুলনায় অন্তত ছ’ইঞ্চি খাটো, রোগাভোগা চেহারা, মাথার চুল উঠিতে শুরু করিয়াছে, চিবুক নাই। চোখের কোলের স্ফীতিতে ভোগের চিহ্ন। স্ত্রীর প্রতি একঝলক ভীত দৃষ্টিপাত করিয়া তিনি কৌচে বসিলেন এবং মিনমিন করিয়া জানাইলেন, মন্দাকিনীর ব্যাপারে তিনি কিছু শোনেন নাই, দেখেন নাই, জানেন না।
রণজয় মজুমদারকে কোথায় পাওয়া যাইবে জানিতে চাওয়ায় মিসেস মুখার্জি পার্ক স্ট্রিটের একটি ক্লাবের নামঠিকানা দিলেন। বললেন, “ছোঁড়া প্রতি রাতে এখানে গিয়ে বেলেল্লাপনা করে, গেলেই পেয়ে যাবেন।”
ছয়
কলিকাতা শহরের ভেতর বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো অনেকগুলি শহর অবস্থান করে। কোনও শহরে দাঙ্গায় লোক মরে, কোনও শহরে বিজলিবাতি জ্বলে না, কোনও শহরে সারারাত বাতি নেভে না। পার্কস্ট্রিটের ক্লাবে আমরা যখন আসিয়া পৌঁছাইলাম, তখন রাজপথে আলো জ্বলিতে শুরু করিয়াছে। সুবেশা নরনারীর দল হাসিতে হাসিতে আলোকিত ক্লাবরেস্তোরাঁর ভিতরবাহির করিতেছে। আমরা লালবাজারের বন্ধু জানিয়া দ্বাররক্ষী পথ ছাড়িয়া দিল।
প্রবেশ করিতে উদ্যত হইয়াছি, একটি মস্ত বিলাতি গাড়ি আসিয়া ফুটপাথের পাশে থামিল। উর্দিপরিহিত চালক নামিয়া আসিয়া গেট খুলিয়া ধরিল, ভিতর হইতে আত্মপ্রকাশ করিল সাতাশ আঠাশ বছর বয়স্ক একটি তরুণ, পরনে স্যুটপ্যান্ট, দামি চামড়ার জুতো, চুলে টেরি, চোখে কালো চশমা, ঠোঁটের কোণা হইতে কিং সাইজ সিগারেট আলতো ঝুলিয়া আছে। ব্যোমকেশ আর আমি পথ ছাড়িয়া দিলাম। দামী পারফিউমের সুবাস ছড়াইয়া মসমস করিয়া আমাদের দিকে দৃকপাত না করিয়া যুবক ভিতরে চলিয়া গেল।
ব্যোমকেশ নিচু স্বরে জিজ্ঞাসা দ্বাররক্ষীকে জিজ্ঞাসা করিল, “ইনি কে?”
ইনি মজুমদার ইন্ডাস্ট্রিজ-এর একমাত্র ওয়ারিশ শ্রীমান রণজয় মজুমদার।
সাত
ক্লাবের অভ্যন্তরে চার পাঁচটি কক্ষ, কোনওটায় বিলিয়ার্ড, কোনওটায় তাস খেলা চলিতেছে। পানীয়ের কাঁচের ঠুনঠান আর চাপা হাসিতে বাতাসে গুনগুন গুঞ্জন উঠিয়াছে। সে সব পার হইয়া আমরা ভিতরের দিকের একটি ঘরে পৌঁছাইলাম। এই ঘরটি অপেক্ষাকৃত নির্জন। দূরে দূরে ছড়ানো কেদারায় দুয়েকজন বসিয়া পড়াশোনায় মগ্ন আছেন। একটি কেদারায় রণজয় বসিয়া আছে। পাশে দাঁড়ান আর্দালির হাতের ট্রে হইতে পানীয়ের গেলাস তুলিতেছে।
ব্যোমকেশ সময় নষ্ট করিল না। রণজয়ের সামনে গিয়া বলিল সে সত্যান্বেষী, পুলিশের পক্ষ হইতে মন্দাকিনী হালদার অন্তর্ধান রহস্যের তদন্ত করিতেছে।
“তাতে আমি কী করব?”
“আপনি মন্দাকিনীর সঙ্গে দেখা করতে তাঁর স্বামীগৃহে গিয়েছিলেন?”
রণজয় গ্লাসে চুমুক দিল।
“গেছিলাম।”
“মন্দাকিনীর সঙ্গে আপনার কী কথা হয়েছিল?”
রণজয় ঢুলুঢুলু চোখ ব্যোমকেশের মুখের ওপর রাখিল।
“সে কৈফিয়ত আপনাকে দিতে হবে নাকি?”
ব্যোমকেশ দৃষ্টি না সরাইয়া কহিল, “দিতে হবে না, তবে পুলিশের জেরা ঘরে বসে কৈফিয়ত দিতে না চাইলে আমাকে বলতে পারেন।”
রণজয় খানিকক্ষণ গোঁজ হইয়া বসিয়া রহিল। তারপর বলিল, “বলেছিলাম আমার সঙ্গে পালিয়ে চলো। এই বোষ্টুমী বোষ্টুমী খেলা আর কতদিন চালাবে?”
ব্যোমকেশ বলিল, “মন্দাকিনী রাজি হয়েছিল?”
রণজয় গেলাসে চুমুক দিয়া হাসিল। হাসির মধ্যে খানিকটা তাচ্ছিল্য আর খানিকটা অন্যকিছু মেশা।
“বলল, ও নাকি রমেনকে ভালোবাসে। ক্যান ইউ বিলিভ ইট?”
আট
উপরের ঘটনার পর প্রায় তিন মাস কাটিয়া গিয়াছে। এই দাঙ্গাবিধ্বস্ত শহরেও বসন্তের আগমনের বার্তা নির্ভুল ফুটিয়াছে। ঝিরিঝিরি বাতাস বহিতেছে, ট্রামবাসের হর্নের কলরবের মধ্যে কোথা হইতে কোকিলের কুহুস্বর কর্ণগোচর হইতেছে। আমাদের কেয়াতলার বাড়িতেও বসন্ত ফিরিয়াছে। আঁচল কোমরে গুঁজিয়া এঘরওঘর করিতেছে। খোকাকে সামলাইতেছে। পুঁটিরামকে টুকিটাকি সাংসারিক নির্দেশ দিতেছে। ব্যোমকেশ আর আমার ওপর সর্দারি করিতেছে। রমণীহস্তের স্পর্শে আমাদের গত কয়মাসের স্বাধীন জীবনযাত্রায় যে ফের মাধুর্যের ছোঁয়া লাগিয়াছে তাহা অস্বীকার করিবার কোনও উপায় নাই। আমার বন্ধুর মেজাজেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ করিতেছি। গত ক’মাস ধরিয়া ব্যোমকেশের মুহ্যমান অবস্থা অনেকাংশে নির্মূল হইয়াছে।
মুহ্যমানতার কারণ মন্দাকিনী রহস্যের সমাধান না হওয়া। লালবাজার এবং ব্যোমকেশের খোঁচররা বহু সন্ধান করিয়াছে, কিন্তু মন্দাকিনী হালদার যেন এ পৃথিবীর বুক হইতে কর্পূরের ন্যায় উবিয়া গিয়াছেন। হারানো সোনার সন্ধান করিয়াও বিশেষ লাভ হয় নাই। রাখাল ঠিকই বলিয়াছিল, এই বাজারে একজন জ্যান্ত মানুষের থেকে সোনার পিছু ধাওয়া করা অনেক বেশি কঠিন। রণজয় মজুমদারের ওপর কিছুদিন পুলিশপাহারা রাখিয়া তুলিয়া নেওয়া হইয়াছে। রণজয় প্রতি সন্ধ্যায় নতুন নতুন সঙ্গিনীর কটিলগ্ন হইয়া ক্লাব-অভিসারে মত্ত রহিয়াছে। সে মন্দাকিনীর ব্যাপারে কিছু জানে বলে মনে হয় না।
আমার প্রেমের উপন্যাসও শেষের পথে। শুরুতে বাধো বাধো ঠেকিলেও শেষের দিকে হাত খুলিয়া লিখিয়াছি। একেকবার ভাবিতেছি রহস্যরোমাঞ্চ ছাড়িয়া নরনারীর মনের কোমলপ্রবৃত্তিগুলির উপরই মনোযোগ নিবদ্ধ করি। মাঝেমাঝেই খবরের কাগজে আমার লেখা সিংহ ছাপ আচারের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। আমাদের বাড়িতেও নিয়মিত আনিতে শুরু করিয়াছি। ইদানীং মেয়েলি পত্রিকা দেখিয়া সত্যবতীর চরম উৎসাহে রান্নাবান্না শুরু করিয়াছে, কাজেই সে আচার কাজে লাগিতেছে বেশ।
একদিন কলেজস্ট্রিটে প্রকাশকের অফিসে পাণ্ডুলিপি জমা করিয়া দোকান ঘুরিয়া বাড়ি ফিরিয়া দেখি উৎসবের আভাস। সত্যবতী কী একটা হালফ্যাশনের বিরিয়ানি রাঁধিতেছে, ব্যোমকেশ রান্নাঘরে ঢুকিয়া তাহাকে সাহায্য করিবার অপচেষ্টা করিতেছে। বিরিয়ানির ও দাম্পত্য সুখের সুবাসে সারা বাড়ি ম ম।
খাইতে বসিয়া সিংহ ছাপ আচারের বোতলখানা কাছে টানিতে সত্যবতী ঠোঁট ফুলাইল।
“খাওয়ার আগেই কী করে বুঝলে যে আচার ছাড়া মুখে তোলা যাবে না?”
বিপদ দেখিয়া তাড়াতাড়ি বলিলাম, “আহা, ভালো যে হয়েছে সে তো চেহারা দেখে আর গন্ধ শুঁকেই বোঝা যাচ্ছে, আচার নিচ্ছি যাতে বেশি করে খেতে পারি। সিংহ ছাপ আচার আমিষ পাচনে সাহায্য করে।”
“তাই বুঝি?”
এইবার আমি আহত হওয়ার ভঙ্গি করিলাম। “খবরের কাগজে রোজ যে দুবেলা বিজ্ঞাপন বেরোচ্ছে পড়ো না? এত খেটেখুটে লিখলাম। সিংহ ছাপ আচারের বৈশিষ্ট্যই হল আমিষ খাবার পাচনে সাহায্য করা।”
“ওহ, তাই বুঝি সিংহ নাম? সিংহের খাবারদাবার হজমেও কাজে দেবে?”
সত্যবতী হাসিয়া উঠিল। আমিও হাসিলাম। এই যুক্তিটা আমার মাথায় আসে নাই।
“নিরামিষাশীদেরও খাওয়ায় মানা নেই অবশ্য, রমেন হালদারের রান্নাঘরেও তো দেখেছিলাম।”
“রমেন হালদারের রান্নাঘরে সিংহ ছাপ আচারের শিশি ছিল?” থালার ওপর ব্যোমকেশের আঙুল থামিয়া গিয়াছে।
“একটা না, দু’দুটো। বলিনি তোমায়?”
ব্যোমকেশের মুখের দিকে চাহিয়া বিস্মিত হইলাম। তাহার চোখমুখ চাপা উত্তেজনায় দপদপ করিতেছে।
“তোমার আবার কী হল?”
ব্যোমকেশ উত্তর দিল না।
খাওয়ার পর বৈঠকখানায় আসিয়া বসিলাম। ব্যোমকেশের মুখ অসম্ভব রকমের গম্ভীর। সত্যবতী পুঁটিরামের সহিত রান্নাঘর গুছাইয়া খোকাকে ঘুম পাড়াইয়া ঘরে ঢুকিয়া ভুরু নাচাইয়া ব্যোমকেশের দিকে নির্দেশ করিয়া আমাকে ইশারায় জিজ্ঞাসা করিল, “ব্যাপার কী?”
ব্যোমকেশ বলিল, “কাল সকালে রাখালকে একবার ফোন কোরো তো অজিত।”
“কেন, আবার কোনও কেস এল বুঝি?” সত্যবতী স্বামীর গা ঘেঁষিয়া বসিল।
“পুরনো কেস। মন্দাকিনী অন্তর্ধান রহস্য।”
লাফাইয়া উঠিলাম। “সমাধান করে ফেলেছ?”
ব্যোমকেশ সিগারেট ধরাইয়া সিলিং-এর দিকে তাকাইয়া ধোঁয়া ছাড়িতে লাগিল। জবাব দিল না।
“মন্দাকিনী বেঁচে নেই?”
“নাঃ।”
“রমেন হালদারই খুনী?”
“রমেন হালদারই খুনী। কিন্তু প্রমাণ করার কোনও উপায় নেই। তাকে কোনওদিন ধরা যাবে না। সেজন্যই কাল রাখালকে বলব কেসটা বন্ধ করে দিতে।”
সত্যবতী আমার কাছ হইতে মন্দাকিনী অন্তর্ধান রহস্যের আদ্যোপান্ত আগেই শুনিয়া রাখিয়াছিল। কৌতূহল ভরিয়া আগাইয়া বসিল।
“কিন্তু লোকটা খুন করল কী করে?”
“কী করে করল পুঙ্খানুপুঙ্খ জানি না, তবে অনুমান করাই যায়।” ব্যোমকেশ ধোঁয়া ছাড়িল। “খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিলে কুড়ুল মেরে খুন করলে চেঁচামেচির সম্ভাবনা শূন্য। তারপর ছুরি দিয়ে শরীরটাকে টুকরো টুকরো করে ফেলাও একটা জোয়ান লোকের পক্ষে অসম্ভব না।”
“তারপর?”
“তারপর আর কী? কুঠারের রক্ত ধুয়ে রমেন হালদার সেটা নিয়ে বাগানে চলে গেল, গাছ কাটল, বাগান কোপাল, জমি নিড়াল, চারা পুঁতল।”
আমি আর সত্যবতী হাঁ করিয়া ব্যোমকেশের দিকে চাহিয়া রইলাম। রমেন হালদারকে দেখিয়া উন্মাদ মনে হয় নাই। অর্থাৎ ব্যোমকেশের মাথাটাই খারাপ হইয়াছে।
“আর মন্দাকিনীর লাশের টুকরোগুলো? সেগুলো লুকোনোর বন্দোবস্ত না করে রমেন হালদার গাছ কাটতে গেল কেন?”
ব্যোমকেশ কহিল, “বোধহয় ক্ষিদে বাড়াবার জন্য।”
ঘরে দেওয়ালঘড়িটার টিক টিক ছাড়া আর শব্দ রহিল না। কয়েক সেকেন্ড পর সত্যবতী “মাগো” আর্তনাদ করিয়া মুখে আঁচল চাপা দিয়া ঘর হইতে দৌড়াইয়া বাহির হইয়া গেল।
*****
(Lord Dunseny-র The Two Bottles of Relish-এর ছায়া অবলম্বনে)
ধন্যবাদ, অবিন।
আরে বাঃ… কুন্তলা!! নবরূপে দেখি…! দারুণ দারুণ…
আরে ক. ব. আমি আপনার উৎসাহ পেয়েই তো উঠে পড়ে ভোল পালটাতে লেগেছি , সে ভোল ভালোই হোক বা খারাপ। থ্যাংক ইউ।
ও বাবা! নিজেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে… :p
bah… 🙂 🙂 🙂
ধন্যবাদ।