সত্যব্রত ঘোষ
সিনেমা তখনই তৈরি হয় যখন ব্যক্তিমানুষের একটি ধারণা বা আইডিয়া বিস্তৃত করবার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনিবেশ ঘটে। ক্যামেরা, শব্দগ্রাহক যন্ত্র প্রভৃতি প্রযুক্তিগত সহায়তায় দৃশ্য ও শব্দের একত্রিত প্রক্ষেপণ ঘটলে তা বহু মানুষকে প্রভাবিত করবার ব্যাপ্তি পায়। টাকার অঙ্কই নির্ধারণ করে সেই ধারণা কতটা বিপুল অথবা সঙ্কুচিত আকারে দর্শকদের সামনে পর্দায় ফুটে উঠবে।
সিনেমা যারা বানায় এবং সিনেমা যারা দেখে, তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একটাই। তারা সবাই ছায়ার মায়ায় আবদ্ধ। চলচ্চিত্র নির্মাণে পথিকৃৎরা শিল্পমনস্কতার পাশাপাশি উদ্ভাবনী বিজ্ঞানচিন্তা এবং বাণিজ্যমুখী মনোভাবের ভারসাম্য বজায় রাখতে জানতেন। কিন্তু ক্রমশ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলি যখন চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রতিষ্ঠিত সত্য হল, তখন পরবর্তী প্রজন্মের সিনেমা সংক্রান্ত ভাবনায় মুখ্য ভূমিকা নেয় বাণিজ্যচিন্তা। প্রেক্ষাগৃহের দর্শকদের উপর বিশাল পর্দায় ক্রমাগত আছড়ে পড়া দৃশ্যাবলির যে অভিঘাত, তার জের টিকিয়ে রাখবার উপরই মধ্যপ্রজন্মের বানানো সিনেমা তখন স্বাভাবিকভাবেই নির্ভরশীল।
তবে ঘরে ঘরে টেলিভিশন পৌঁছে যেতে নির্মাতাদের নতুনভাবে বাণিজ্যকৌশল সৃষ্টি করতে হয়। টেলিভিশনের প্রচার ও প্রসারের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশবিদেশের সংবাদপ্রেরণ। কিন্তু তার প্রেক্ষণের চরিত্রকে হাতিয়ার করে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলি নিত্যনতুন বিলাসদ্রব্যের প্রচারে টেলিভিশনকে ব্যবহারে মন দেয়। সরকারপুষ্ট টেলিভিশন অকালেই বিজ্ঞাপন রেভিনিউ-এর দাক্ষিণ্যে কর্মবিমুখ দানবে পরিণত হয়। কিন্তু ঘরে বসে থাকা মানুষরা যে একঘেয়ে বিজ্ঞাপন দর্শন করবে না, তা বুঝতে দেরি হয়নি টেলিভিশনের হর্তা-কর্তা-বিধাতাদের। বিজ্ঞাপন প্রসারকে অক্ষুণ্ণ রাখতে তাঁরা নির্দিষ্ট একটি টাকায় ছবির প্রিন্ট কিনে টেলিভিশনে দেখানো শুরু করে। এর ফলে টেলিভিশন সংস্থাগুলি মুনাফা করলেও, চলচ্চিত্র নির্মাতারা প্রেক্ষাগৃহে দর্শক আগমন কমতে দেখছেন। সিনেমার নতুন এক পর্ব শুরু হয় এই সন্ধিক্ষণ থেকে, যা বর্তমানে ‘ডিজিটাল সিনেমা’র রূপ নিয়েছে।
প্রচলিত অর্থে ‘সিনেমা’ বলতে আমরা যা বুঝি, তার সঙ্গে সেলুলয়েড ফিল্মের নিবিড় সম্পর্ক। ক্যামেরার লেনস-এর মধ্যে দিয়ে প্রতিসরিত আলো নির্দিষ্ট স্পিডের সেলুলয়েড ফিল্মে পড়ে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়, দৃশ্যগ্রহণের সূচনা তার থেকেই। তা সম্পাদনা এবং শব্দসংযোগের পর প্রোজেক্টরের সাহায্যে পর্দায় ফুটে উঠছে। কিন্তু টেলিভিশনে সিনেমা দেখানোর সময়ে প্রেক্ষণ ঘটছে ভিডিয়ো ক্যামেরার লেনস-এ। যা প্রক্ষেপণের ছায়াকে ‘বাইনারি’ (০ এবং ১)-র ভাষায় গ্রন্থন করছে ভিডিও টেপে।
সংকটের প্রথম যুগে বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা সিনেমা ও টেলিভিশনের মধ্যে সূক্ষ্ম একটি ফারাক রেখে দেন। তা প্রক্ষেপণের গতি সংক্রান্ত। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সিনেমার প্রক্ষেপণের গতি হল সেকেন্ডে ২৪ ফ্রেম। অর্থাৎ, প্রতি সেকেন্ডে দর্শকরা ২৪টি ছবি দেখবে এবং দৃষ্টিশক্তির এক সার্বজনীন প্রতিবন্ধকতা (পারসিস্টেনস অফ ভিশন)-’র কারণে তা চলমান এক দৃশ্য হিসেবে দেখবে। কিন্তু টেলিভিশনের ক্ষেত্রে প্রক্ষেপণের গতি নির্ধারণ করা হল সেকেন্ডে ২৫ ফ্রেম। এই ১ ফ্রেমের ফারাকে প্রথম যুগে টেলিভিশনে দেখানো সিনেমার দৃশ্যগুলিতে চরিত্রদের ঠোঁট নাড়া এবং উচ্চারিত কথা আগুপিছু হত (যাকে সিনেমার ভাষায় আউট অফ সিঙ্ক বলা হয়)। তবে বিজ্ঞাপনদাতাদের দাপটে এই ফারাক ক্রমশ মিটিয়ে দেন প্রযুক্তিবিদরা।
অগত্যা বাধ্য হয়ে সিনেমাকে আপস করতে হয়। মূলস্রোতের চিত্রনির্মাতারা এবার টেলিভিশনে অর্থনিবেশ করতে থাকে এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের দৌলতে যথেষ্ট মুনাফাও ঘরে তোলে। শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল এই পরিবেশই ডিজিটাল সিনেমাকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে।
আজ চিত্রনির্মাতারা যে ক্যামেরায় কাজ করেন, তা উন্নত ভিডিও ক্যামেরা। চিত্রসম্পাদনার কাজটিও বস্তুত ভিডিও সম্পাদনা ছাড়া আর কিছুই নয়। সাম্প্রতিক এক পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ২০১৭ সালে ব্যবহৃত ক্যামেরাগুলির রেজোলিউশন এবং ডায়নামিক রেঞ্জ ক্যাপাসিটি ৩৫ মিমি সেলুলয়েড ফিল্মের থেকে একটুও পিছিয়ে নেই। কিন্তু একথাও অস্বীকার করা যাবে না যে, দিনে দশ হাজার টাকা ভাড়ার ক্যামেরায় যে ছবি তোলা হচ্ছে তা ৩৫ মিমি সেলুলয়েড ফিল্মের সমকক্ষ হতে পারছে না। আলোকচিত্রশিল্পীদের এবং চিত্রনির্মাতাদের এই খুঁতখুঁতানির মধ্যেই সিনেমার নবরূপায়নের আশা লুকিয়ে আছে।
এবার প্রশ্ন হল রেড ওয়ান, অ্যারিফ্লেক্স-ডি ২০, অ্যালেক্সা প্রভৃতি কুলীন ক্যামেরায় যে ছবি তোলা হয়েছে, তা কোথায় গ্রথিত হবে? ডিজিটাল যুগের প্রথম দিকে ভিডিও টেপ বেসড ওয়ার্ক ফ্লো-র মাধ্যমে ভিডিও টেপে সম্পাদনার জন্য কম্পিউটারে ভিডিও স্ট্রিমিং করে সংরক্ষিত হত। সাম্প্রতিককালে ফাইল বেসড ওয়ার্ক ফ্লো ব্যবহারের দ্বারা তা সরাসরি এক্সটারনাল হার্ড ডিস্কে গ্রথিত করে RAID নামক এক বৃহৎ আকার কম্পিউটার ডিস্কে তা কপি করে নেওয়া হয়।
কিন্তু এখানে একটি মজা আছে। ক্যামেরা যে ছবি তুলছে, ডিস্কে তা হুবহু কপি হয় না। তার বিপুল ফাইল সাইজের কারণে। ডেটা রেট বজায় রাখবার জন্য ছবির যাবতীয় রংকে সাব স্যামপ্লিং করে ডিস্কে পাঠানো হয়। সেই বিবর্ণ অবস্থাতেই চিত্রসম্পাদনার কাজ চলে। চিত্রসম্পাদনা এবং ধ্বনিমুদ্রণ শেষ হবার পর পর প্রতিটি দৃশ্যের রং এবং আলো সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য নতুন করে নির্মাণ করতে হয়। এর ফলে, যে আলো এবং রংগুলিকে বাস্তবে চোখের সামনে রেখে ক্যামেরা চিত্রগ্রহণ করেছে, তার থেকে স্বতন্ত্র আলো আর রং দর্শকদের সামনে পর্দায় ফুটে ওঠে। বলা বাহুল্য, ডিজিটাল কারিগরদের মূল রোজগারটা এখানেই। একজন চিত্রনির্মাতাকে কিছুটা অসহায়ের মতো প্রাযুক্তিক এই দৌরাত্মে দিশাহারা হতে হয়।
ভারতীয় সিনেমার ক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যার প্রতি আলোকপাত করা প্রয়োজন এখানে। তা শব্দ সংক্রান্ত। সাধারণভাবে সিনেমা মাধ্যমটিকে দৃশ্যপ্রধান হিসেবেই মেনে এসেছে ভারতীয় দর্শকসমাজ। এর ফলে উন্নত ক্যামেরা এবং ‘দ্য ভিঞ্চি’র মতো সদ্য বাজারে আসা কালার কারেকশন সফটওয়্যার ব্যবহারে অত্যুৎসাহী আমাদের তরুণ প্রযুক্তি ব্যবহারকারীরা। কিন্তু শব্দগ্রহণ এবং বিশেষত শব্দ প্রক্ষেপণের জন্য যে কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি, তার প্রতি অনেক ক্ষেত্রে নির্বিকারই রয়েছে তারা। এর ফলে সিনেমার পর্দায় 4K রেজোলিউশনে ছবি দেখলেও তাতে অত্যন্ত সাধারণমানের শব্দযোজনা উপস্থাপন করা হচ্ছে। শব্দের প্রতি এই অযত্নের ফলে সিনেমার সামগ্রিক গুণমান বেশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
১৯৯৯ থেকে ২০০০ — এই দুই বছর আমেরিকার অ্যাকাদেমি অফ মোশন পিকচারস কোনও ডিজিটাল ছবিকে অস্কার পুরস্কার দেয়নি। কিন্তু ‘স্লামডগ মিলিওনিয়ার’কে শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণের পুরস্কার দেবার পর থেকে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। কারণ শিল্পমনস্কতার সঙ্গে বাণিজ্যভাবনার সংঘাতগুলি এখন স্পষ্ট।
১৯৯৯ সালে জর্জ লুকাস সেলুলয়েড ও ভিডিও প্রযুক্তিকে মিশ্রণ করে যখন ‘স্টার ওয়ার্স — এপিসোড ১’ বানান, তখন আমেরিকার মাত্র চারটি প্রেক্ষাগৃহে তা প্রেক্ষণের জন্য ভিডিও প্রোজেক্টর বসানো হয়। পরবর্তীকালে জেমস ক্যামেরুনের ‘অবতার’ ছবিটি ডিজিটাল প্রোজেক্টরের মাধ্যমে সারা বিশ্বে দেখানোর তোড়জোড় চলে। তবে তখনও ভিডিও কপির পাশাপাশি ৩৫ মিমি প্রিন্টও বানিয়ে ডিস্ট্রিবিউটরদের দেওয়া হত। ২০১৩ সালে ‘দ্য উলফ অফ দ্য ওয়াল স্ট্রিট’ ছবিটি প্রথম ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন করা হয়।
ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন আরেকটি ক্ষেত্র, যা কিছু প্রযুক্তি সংস্থার করায়ত্ত। প্রেক্ষাগৃহে দর্শকরা টিকিট কেটে যে সিনেমা দেখছে, তা UFO বা QUBE জাতীয় স্যাটেলাইট ব্যবস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বাড়িতে বসে কেবল টিভি দেখবার সঙ্গে এই প্রেক্ষাপণ ব্যবস্থার বিশেষ ফারাক নেই। দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য এদের শরণাপন্ন হতেই হবে চিত্রনির্মাতাদের। এখানেও অর্থ ঢালতে হচ্ছে চিত্রপ্রযোজকদের।
১৯৯৯ সালের ‘স্টার ওয়ার্স — এপিসোড ওয়ান’ ছবির সূত্রে বিশ্বজুড়ে যে কাঠামোগত পরিবর্তনের সূচনা হয়, তা ২০০৪ সালে ভারতের সিনেমাজগৎকেও প্রভাবিত করে। চিত্রপরিবেশকরা বুঝতে পেরেছিলেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাণিজ্যিক স্তরে মূলস্রোতের সিনেমাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আগেকার আয়োজনের এক ভগ্নাংশও আর করতে হবে না। তাছাড়া, সেলুলয়েড ফিল্মের রিলগুলিকে এক প্রেক্ষাগৃহ থেকে অন্যটায় স্থানান্তর করবার সমস্যা সমাধান হলে সিনেমার সর্বভারতীয় মুক্তি সস্তা এবং সহজ হবে।
একই সঙ্গে সারা ভারতের শহরগুলি জুড়ে যে মাল্টিপ্লেক্স সংস্কৃতির প্রচলন ঘটানোর ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ডিজিটাল সিনেমা। কারণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিনেমা দেখানোর জন্য প্রয়োজন শুধু একটি সার্ভার আর একটি প্রোজেক্টর।
প্রেক্ষাগৃহগুলিতে হার্ডওয়্যার সংক্রান্ত পরিবর্তন ও প্রচলনে সুভাষ ঘাই-এর ‘মুক্তা আর্টস’ এবং মনমোহন শেঠির ‘অ্যাডল্যাবস’ বিনিয়োগ শুরু করে। ‘মুক্তা অ্যাডল্যাব’-এর এই প্রাথমিক উদ্যোগের পর বাজার ধরতে নামে রিয়েল ইমেজ এবং UFO (যার তৎকালীন নাম ছিল ‘ভ্যালুয়েবল মিডিয়া’)। প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা প্রথমে প্রতিরোধ করলেও পরবর্তীকালে নির্দিষ্ট বিনিয়োগে উৎসাহী হয়ে ওঠেন।
সারা ভারতে প্রায় ৯,০০০ প্রেক্ষাগৃহ সক্রিয়। এছাড়া, বড় শহরগুলিতে রয়েছে প্রায় ১৫০০ মাল্টিপ্লেক্স স্ক্রিন। একটি হিসেব অনুযায়ী UFO ৩,২০০টি প্রেক্ষাগৃহকে নিয়ন্ত্রণ করে। এবং QUBE–এর দখলে রয়েছে প্রায় ২,৭০০টি প্রেক্ষাগৃহ। বাকিগুলির ক্ষেত্রে প্রেক্ষাগৃহের মালিকের সঙ্গে UFO এবং QUBE–এর রীতিমতো দরকষাকষি চলে।
কিন্তু বড় পর্দায় সিনেমা দেখানোর এই উদ্যোগকে টেলিভিশন এবং সাম্প্রতিককালে ভিডিও স্ট্রিমিং রীতিমতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, আয়তনের দিক থেকে বৃহত্তম ভারতের সিনেমা বাজার শীঘ্রই অনলাইন বিনোদনের কারণে নষ্ট হয়ে যাবে। একটি হিসেবে জানা যাচ্ছে ২০২০ সালে সারা বিশ্বে ভারতীয় সিনেমায় ১৯,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে, কিন্তু পাশাপাশি অনললাইন বিনোদনের বাজারে লগ্নি বেড়ে পৌঁছাবে ২২,৪০০ কোটি টাকায়।
ইদানিং কালে 4G মোবাইল পরিষেবার মাধ্যমে স্মার্টফোনে সম্পূর্ণ কাহিনীচিত্রের স্ট্রিমিং প্রায় ৯৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে PVR এবং INOX-সহ বিভিন্ন মাল্টিপ্লেক্স চেনগুলির প্রত্যাশিত আয় এই ২০১৮ সালে যথেষ্ট নিম্নমুখী। এই প্রবণতা লক্ষ করে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, হটস্টার-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি অল্টবালাজি, ভুট, ভিউক্লিপস, ইরোজ প্রভৃতি দেশি সংস্থাগুলি এখন ওয়েব কনটেন্ট নির্মাণে মনোযোগী হয়েছে।
বাণিজ্যিক এই উথালপাতালে সিনেমার উন্নতি কতটা ঘটবে, তার দিশা কেউ জানে না। ফ্ল্যাট টেলিভিশন এবং স্মার্টফোনে যে ১৬:৯ অনুপাতে ভিডিও স্ট্রিমিং অথবা একঘেয়ে ধারাবাহিকগুলি প্রসারণ করা হয়, তার থেকে সিনেমাকে পৃথক করে তার আবেদন এবং ব্যঞ্জনাকে দর্শকদের মনে স্থায়িত্ব দেওয়ার জন্য যে বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন, তা এদেশে দেখা যাচ্ছে না। অথচ আমেরিকায় এই বিষয় নিয়ে রীতিমতো হইচই চলছে। ক্রিস্টোফার নোলান, পল অ্যান্ডারসন, ডেভিড রাসেল এবং কোয়েন্টিন ট্যারানটিনো-র মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রনির্মাতারা ফিরে যেতে চাইছেন সেলুলয়েড ফিল্মের অ্যানালগ পদ্ধতিতে, যার প্রতিটি স্তর সংশ্লিষ্ট শিল্পীর যোগ্যতা এবং দৃশ্যায়নের ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল।
সিনেমার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, বিশ্বযুদ্ধ হোক বা সদ্য আগত টেলিভিশনের আগ্রাসন, আর্থ-সামাজিক বিপ্লব হোক বা স্বৈরতন্ত্রের প্রকোপ — যখনই সংকট নেমে এসেছে, সিনেমা তার স্বকীয় মাধুর্যে সাবলীলভাবে নিজের গৌরবকে বারবার নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এই মুহূর্তে বাণিজ্যকেন্দ্রিক প্রসারণ নীতিকে ভিত্তি করে দৃশ্য ও শব্দের অনাবিল বিস্তৃতিকে সচেতনভাবে সঙ্কুচিত করে দেওয়ার যজ্ঞ চলছে। তার মাঝে দাঁড়িয়ে সিনেমা নিজের আত্মমর্যাদা ধরে রাখতে পারবে কি?