পান্থজনের সখা

সুধীর চক্রবর্তী | লোক-গবেষক

প্রবুদ্ধ বাগচী

 



প্রাবন্ধিক, সমাজভাবুক

 

 

 

 

যে কোনও খ্যাত ও উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব থেকে একটু দূরত্ব বজায় রাখাই আমার স্বভাব। তাঁদের কাছে যেতে গেলেই নিজের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায় আমার ভিতর, এসে পড়ে সহজাত কুণ্ঠা ও আড়ষ্টতা। সুধীর চক্রবর্তীও তার ব্যতিক্রম ছিলেন এমন নয়।  তাঁর ‘গভীর নির্জন পথে’ যখন পড়ে ফেলি তখন সদ্য কলেজে ঢুকেছি, সেই বই পড়ার প্রেসক্রিপশন করেছিলেন সিনিয়র এক দাদা। সেই সূত্রেই এক নতুন জগতের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়ে গেল যার হদিশ আমি অন্তত আমার চারপাশে পাইনি। এর পরে আসে ‘নির্জন এককের গান’ তার পরে ‘বাংলা গানের চার দিগন্ত’। দ্বিতীয় বইটির নিবন্ধ ‘যে গান আমাদের নেই’ চোখের সামনে খুলে দেয় অন্য এক গান ভাবনার জগত। বলা বাহুল্য তখনও বাংলা গানের পাঁচশো কিলোমিটারের মধ্যে ‘তোমাকে চাই’ নামক উল্কাপাত ঘটেনি। প্রায় একরকম নেশার মতন তাঁর লেখায় মুগ্ধ হতে হতে কিনে ফেলি ‘বাংলা গানের সন্ধানে’, ‘গানের লীলার সেই কিনারে’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এর অনেক পরে যখন ‘ঘরানা বাহিরানা’ প্রকাশ হয় তাতে সন্ধান পাই তাঁর কিছু ব্যক্তিজীবনের। সেই তাঁর ছেলেবেলার ও তরুণবেলার কৃষ্ণনগর শহর, সেখানে তাঁর বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা, কলেজের মাস্টারমশাইদের সঙ্গে নিবিড় সখ্য, পত্রিকা প্রকাশ ইত্যাদি। ঘটনাচক্রে আমার প্রয়াত বাবা যে সময়টায় কৃষ্ণনগর শহরে বেড়ে উঠেছিলেন এবং তাঁর যোগাযোগের কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সুধীর চক্রবর্তীর চলাচলের কেন্দ্রগুলি মিলে যেতে থাকায় আগ্রহী হয়ে আমি ওঁকে একটি চিঠি পাঠাই। তার জবাবে তিনি জানান, আমার প্রয়াত বাবা তাঁর পূর্বপরিচিত। এইখান থেকেই আমার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্রপাত যা বিছিয়ে ছিল এই সেদিন পর্যন্ত, যখন পুজোর পর ফোনেই তাঁকে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানালাম। তখনও জানতাম না, এই হবে আমার সঙ্গে তাঁর শেষ সংলাপ।

আমার কুণ্ঠা যে কেটে গিয়েছিল তা নয়। অত বড় মাপের গুণী মানুষ, তাঁর কতটা কাছে আমি যেতে পারি? ইতিমধ্যে তাঁর অন্যান্য বইপত্র প্রায় সবই আমার পড়া হয়ে গেছে, নিয়মিত সংগ্রহে রাখি তাঁর ‘ধ্রুবপদ’ যার প্রত্যেকটা সংখ্যাই কালেক্টরস আইটেম। সেই পত্রিকার শেষ সংখ্যাটি হাতে নিয়ে কষ্ট হয়েছিল— আর এরকম পত্রিকা হাতে পাব না ভেবে। এই কুণ্ঠার অবসান হল যেদিন প্রথম তাঁর কৃষ্ণনগরের বাড়িতে গিয়ে পৌছালাম। আমার মতো একটা এলেবেলে মানুষকে এত স্নেহভরে যেভাবে তিনি আপন করে নিলেন, সেটা আমার জীবনের একটা পরম অভিজ্ঞতা। যা আমাকে চুপিচুপি শিখিয়ে দিয়ে গেল, সব বড় মাপের মানুষকে এক হিসেবে বিচার করতে নেই। তার পরে যত বার তাঁর বাড়ি গিয়েছি এই শিক্ষা আমার মনে পোক্ত হয়ে বসেছে। পরে শুনেছি, তরুণদের প্রতি এইটাই ছিল তাঁর স্বভাবজ দৃষ্টিভঙ্গি। তাই তাঁকে সর্বদা পাওয়া যেত তরুণদের সঙ্গে, নতুন যুগের নতুন শিক্ষার নতুন প্রযুক্তির প্রতি ছিল তাঁর অপার আকর্ষণ। ‘শামুক ঝিনুক’ বইয়ের একটা লেখায় আপশোস করেছিলেন আজকের দুনিয়ায় এতরকম শিক্ষার ধারা দেখে তাঁর মনে হয় এই নতুন নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে যদি তিনি আবার যুক্ত হতে পারতেন! বয়স বাড়িয়ে ফেললে সবাই যে কেবল নিজেদের যুগটাকেই তোল্লাই দিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে জাহির করে চলে, তিনি কখনও তাঁদের দলে নাম লেখাননি। যদিও গত শতকের পঞ্চাশ দশকের দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে নতুন এক ঝাঁক মেধাজীবীর উঠে আসা ও বাংলার সংস্কৃতিকে পরের অনেক বছর অবধি নিজেদের দখলে রাখার যে ঐতিহাসিক সত্য সেই বিষয়ে ছিল তাঁর সঙ্গত গর্ব। এই সময়টাকে বাংলার দ্বিতীয় রেনেসাঁ বলা হবে না কেন, এই নিয়ে তিনি প্রশ্নও তুলেছেন তাঁর লেখায়। বস্তুত এই প্রশ্ন উড়িয়ে দেওয়ার নয়। তাই আজ তাঁর শারীরিক অনুপস্থিতি আমাদের রিক্ততর করছে এই বিচারে, ওই সময়ের আরও এক উজ্জ্বল প্রতিনিধিকে আমরা যেন হঠাৎই হারিয়ে ফেললাম।

হ্যাঁ, প্রায় আকস্মিকভাবেই। যতদূর জানতাম, বয়সোচিত কোনও রোগবালাই তাঁর ছিল না। কৃষ্ণনগর থেকে ভাড়া গাড়িতে দিব্যি আসতে্ন কলকাতা শহরে সেমিনারে বলতে, সভাসমিতিতে উপস্থিত থাকতে। খাদ্যরসিক মানুষটির খাদ্যাভ্যাস ছিল পরিপাটি। আমার বাড়িতে মোচার ঘণ্ট খেয়ে তারিফ করেছিলেন। বাজার করার অভিজ্ঞতায় বুঝিয়েছিলেন চিংড়ি মাছ কতরকমের হয়। এগুলো সবই তাঁর সহজ জীবনযাপনের অলঙ্কার ছিল বলেই জেনে এসেছি, তার সূত্রেই হরেক কিসিমের মানুষের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ যোগাযোগ— একটা পর্যায়ে তাঁদের নিয়ে অবিরত লিখে গেছেন আমাদের জন্য। অভিজ্ঞতার ব্যাপ্তি অনেকেরই হয়তো থাকে কিন্তু সেগুলোকে ভিন্ন মাত্রায় পাঠকের দরবারে পরিবেশন করার রীতিটা অর্জন করে নিতে হয়। সেই কাজটা তিনি সাবলীলভাবে করে দেখিয়েছেন।

কিন্তু আজ এই গভীর বেদনাবোধের আচ্ছন্নতার মধ্যেও কয়েকটা কথা আরও বিশেষ করে বলা দরকার যা এই ব্যক্তিস্মৃতির থেকেও অনেক বেশি জরুরি। তিনি বহু লেখায় বা আত্মকথায় জানিয়েছেন তাঁর দুই প্রেমের কথা— একটা বাংলার গ্রাম ও অন্যটা গান। নিছক ভালবাসা বা প্যাশন পেরিয়ে বাংলার সারস্বত চর্চায় তাঁর এই দুটি দিকের ব্যতিক্রমী ভূমিকার কথা আমাদের স্মরণে না রেখে উপায় নেই। তাঁর গ্রাম পরিক্রমা শুরু হয়েছিল একটি গবেষণামূলক কাজের সূত্রে, এটা আমরা আজ অনেকেই জানি। কিন্তু সেই পরিক্রমা মানে সত্যি সত্যি অর্থে হেঁটে হেঁটে দেখা আর গ্রামজীবনের সঙ্গে নিবিড় মিশে যাওয়া। পরনে পাটভাঙা ধুতিপাঞ্জাবি আর কাঁধের কাপড়ের সাইডব্যাগে একটা গামছা আর টুকিটাকি জিনিস নিয়ে তাঁর বেরিয়ে পড়া— এই বাস থেকে ওই বাস ধরা, কখনও মাইলের পর মাইল রোদে জলে হাঁটা, টিউবয়েলের জলে হাত পা ধুয়ে জল খেয়ে আবার পথ চলা। নিছক একটা ডিগ্রি অর্জনের জন্য এবং তার সূত্রে কিঞ্চিৎ বাড়তি বেতন পাওয়ার আশায় এই কাজ করা যায় না। আর আজকের গবেষকদের কাছে তো এগুলো হয়তো আষাঢ়ে গল্পের মতোই শোনাবে। কিন্তু ষাটের দশকের শেষার্ধ থেকে তিনি এই কাজটাই করে বেরিয়েছেন দশকের পর দশক। পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলার অনেক গ্রাম তিনি ঘুরেছেন, গেছেন ওপার বাংলাতেও। কিন্তু এই পর্যটনের একটা অভিমুখ ছিল, উদ্দেশ্যহীন ভ্রমণ যাকে কোনওভাবেই বলা যাবে না। তাঁর উদ্দিষ্ট ছিল বাংলার সহজিয়া গৌণ ধর্ম ও তাঁদের মতাবলম্বীদের খুঁজে বার করা। এই কাজটা ছিল একদম আনকোরা একটা ব্যাপার। তাঁর আগে কোনও গবেষক বা সন্ধানী এই কাজের কথা ভাবেননি। উনিশ শতকে অক্ষয় কুমার দত্ত ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ নামক যে বইটি লেখেন তাতে কিছু কিছু গৌণ ধর্মের উল্লেখ থাকলেও সেই বইয়ের পেছনে, যাকে বলে, ক্ষেত্র সমীক্ষা তেমন কিছু ছিল না— অতদিন আগে হয়তো সেই সুযোগও ছিল অনেক কম। কিন্তু সেই অভাব যদি সত্যি করে কেউ পূর্ণ করে থাকেন তিনি সুধীর চক্রবর্তী। এটা একটা সম্পূর্ণ অন্য ভুবন যাকে শহরের বা গ্রামের মূল স্রোতের জীবন যাপনের সঙ্গে মেলানো যায় না কারণ এইসব গৌণধর্মের সমর্থকরা সমাজে সাধারণভাবে সংখ্যালঘু। ফলে চেনা স্রোতের বাইরে তাঁদের রয়েছে একটা গুহ্য জগত, যে পৃথিবীতে বাইরের মানুষকে পা রাখতে দিতে চট করে তারা রাজি থাকেন না। এই প্রতিরোধ সহ্য করতে হয়েছে সুধীর চক্রবর্তীকেও। অনেক চেষ্টা ও কৃচ্ছসাধন করে তাঁদের আস্থা অর্জন করতে হয়েছে তাঁকে। সেইসব অভিজ্ঞতার বর্ণময় বিবরণ তিনি লিখে গেছেন আমাদের জন্য।

সে যাই হোক, মূল কথাটা হল একটা নতুন ধারার উৎসমুখ খুলে দিয়েছে তাঁর আন্তরিক পর্যটন আর নিষ্ঠ গবেষণা। তাঁর লেখাতেই আমরা খুঁজে পেয়েছি সেই অবতল জীবনের জলছবি, মূলধারার ধর্মের পাশেপাশে কীভাবে বয়ন হয়ে আছে একটা ভেদবুদ্ধিহীন অসাম্প্রদায়িক সত্যি সত্যি সেকুলার জীবন ও যাপনের ধারা। এই উন্মোচন তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। পরবর্তীকালে লোকসংস্কৃতি চর্চা, লোকায়ত জীবনের পাঠ যেভাবে আমাদের উচ্চশিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক বৃত্তে ঢুকে পড়েছে, তার প্রসার ঘটেছে ক্রমে ক্রমে— তার শুরুটা হয়েছিল সুধীর চক্রবর্তীর হাত ধরে। এমনকি আজ যে লালন ফকির নিয়ে সর্বস্তরে আলোড়ন, চর্চা, অভিনিবেশ, সাহিত্য ও চলচ্চিত্র— সেই লালনকে বাংলার বিদ্বৎসমাজের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দিয়েছিলেন সেই তিনিই তাঁর ‘ব্রাত্য লোকায়ত লালন’ গ্রন্থের মধ্যবর্তিতায়। পরে অনেকে তাঁকে এই সম্মান জানাতে কুণ্ঠিত ছিলেন, কিন্তু আমরা জানি এই অভিধার একমাত্র যোগ্য ব্যক্তিত্ব তিনি।

গান তাঁর কাছে ছিল শৈশবের আকর্ষণ। শুনে শুনে দিব্যি গান তুলে নিতে পারতেন তিনি। স্মৃতিমূলক লেখায় জানিয়েছেন গাননির্ভর চলচ্চিত্রের আকর্ষণে কীভাবে সিনেমা হলের পর্দার পেছনে রাখা গুদাম ঘরে বসেও গান শুনেছেন বন্ধুদের সঙ্গে। রেকর্ডে বা রেডিওর অনুষ্ঠানের জন্য কীভাবে আকুল হয়ে থাকতেন প্রাক বিশ্বায়ন যুগের এক তরুণ, সেই কাহিনিও নিজে শুনিয়ে গেছেন তিনি। নিজে ভালোই গান গাইতে পারতেন, বন্ধুবৃত্তে তা শুনিয়ে তারিফ কুড়োতেন। কিন্তু এগুলো পেরিয়ে গান ক্রমশ তাঁর কাছে হয়ে উঠল আলাদারকম আগ্রহ আর অভিনিবেশের জায়গা। এর একটা প্রান্ত যদি হয় গ্রাম পর্যটনের অভিজ্ঞতা  অন্যটা হল বাংলা গান নিয়ে সার্বিকভাবে তাঁর বিশেষ আগ্রহ যার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের গানও বাদ থাকার প্রশ্নই ওঠে না। যেসব গৌণ ধর্ম নিয়ে তাঁর সন্ধান তাঁদের প্রত্যেকেরই ছিল কিছু নিজেদের সঙ্গীত সম্পদ যা স্বাভাবিকভাবেই প্রচলিত ছিল একেবারেই তাঁদের নিজস্ব ঘেরাটোপে। শুধু তাই বা বলি কেন, নিজেদের এই সম্পদকে তারা যেহেতু নিজেদের ধর্মভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতেন, যা নাকি আমাদের চেনা ধার্মিকতার বিপ্রতী্‌প, তাই এইসব গানে ধরা থাকত এক সান্ধ্যভাষার ইশারা যা ভেদ করতে গেলে খুব নিবিড় উষ্ণতায় মিশে যেতে হয় তাঁদের মতো করে। সুধীর চক্রবর্তী নিজেই বলেছেন সেই গোপন ভাষার ইশারা খুঁজে পেতে তাঁর দশ বারো বছর লেগে গেছে। কিন্তু এ তো এক অর্জন! যা বাংলা গানের বিস্তৃত পরিসরে এক অনবদ্য সংযোজন বললে কি ভুল বলা হয়? সাহেবধনী, কর্তাভজা, বলাহাড়ি বা কুবির গোঁসাইয়ের গান তো সেইভাবে বাংলা গানের মানচিত্রে প্রতীয়মান ছিল না যদি না সেগুলোকে সংবদ্ধ করে দিতেন তিনি তাঁর পরম নিষ্ঠায় ও ভালোবাসায়। নিছক গবেষণার শুকনো আঙিনা পেরিয়ে সেগুলোকে সাংস্কৃতিক কাঠামোয় গ্রথিত করার দায় অবশ্যই এই নিরহঙ্কারী মানুষটার। পাশাপাশি, বাংলা গানের নানা প্রান্ত নিয়ে তাঁর অনলস চর্চা— সেও তো এক বলার মতো কথা। বাংলা গানের চর্চাকে বাংলা গদ্যের বিষয়ের আবর্তে ঢুকিয়ে নানা রকমের যে  সৃজনশীল লেখালিখি করা সম্ভব সেই হদিশ দিয়েছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়াও অন্যান্য গান নিয়ে তিনি লিখেছেন, ধরিয়ে দিয়েছেন সেইসব গানকেও আমাদের মিলিয়ে ধরতে হবে ঘরানার সঙ্গে। অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, দ্বিজেন্দ্রলাল বা দিলীপকুমার রায়কে মান্য অ্যাকাডেমিক পরিসরে নিয়ে আসার ছকভাঙা চেষ্টাকে আমরা কী বলব?

সব শেষে আসবে রবীন্দ্র গান নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা। ‘গানের লীলার সেই কিনারে’র কথা খেয়াল রাখলেও আমার বিচারে এই বিষয়ে তাঁর ‘নির্জন এককের গান’ একটি মাইলস্টোন যার প্রতিটি লেখাই মনে রাখবার মত সবল, বিশেষ করে উল্লেখ্য ‘রবীন্দ্রগানের সঞ্চারী’ নিবন্ধটি— এই মাপের লেখা আমি আর অন্তত বাংলা অক্ষরে পড়িনি। এখানে আরেকটা কথা বলতেই হবে। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে বাংলা ভাষায় স্মরণীয় আলোচনাগ্রন্থ নিশ্চয়ই আরও আছে কিন্তু সেগুলো যারা লিখেছেন তাঁরা কেউই সেই অর্থে গানের প্রশিক্ষিত শিল্পী নন, ফলে গানের কথার দিক থেকেই তৈরি হয়েছে সমস্ত আলোচনা। কিন্তু আমার সঙ্গে একটি একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেছিলেন, এটা একটা সীমাবদ্ধতা। গান নিয়ে আলোচনা করতে গেলে তার সুরের দিকটাও বিচার করা জরুরি, যদিও লিখিত গদ্যে তার সুযোগ কম। তার জন্য দরকার সুর সহ গানের পরিবেশন। মনে রাখতে হবে, যতদিন কণ্ঠের সামর্থ্য ছিল, আর সবাইকে ছাপিয়ে এই কাজটাও তিনি করেছেন নানা অনুষ্ঠানে। আমরা অকৃতজ্ঞ সেগুলো ধরে রাখতে পারিনি। এই বিষয়েও তিনি একটা মনে রাখার মতো প্রান্ত আলোকিত করে দিয়ে গেছেন।

আজ এই বিষণ্ণ শীতসন্ধ্যায় একটি মৃত্যুর আবহে মনে পড়ছে তার বাড়িতে এক শারদ সকালের কথা। সেদিন তিনি নিজের ঘরে বসে গেয়ে শুনিয়েছিলেন ‘আলোর অমল কমলখানি’ গানটি আর গেয়েই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এই গানে কীভাবে সুর দাবি করছে একটা ভিন্নতর মাত্রা। সে এক অন্য গল্প। আজ সেই গল্পের প্রধান চরিত্রটি ঘিরে আমাদের ব্যাপ্ত শোক কুয়াশা হয়ে জমে রইল মনের অলিন্দে।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4593 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...