কৃষক আন্দোলন: গণতন্ত্রের উদ্ধারক

সুজন ভট্টাচার্য

 



প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, ঔপন্যাসিক

 

 

 

 

 

ছাব্বিশ জানুয়ারি লালকেল্লায় যে ঘটনা ঘটল অথবা ঘটানো হল, সেটিকে ব্যবহার করে আড়াই মাস ব্যাপী কৃষক আন্দোলনকে গালমন্দ করার চেষ্টা হচ্ছে। গাল পাড়ার অধিকার একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। একজন চরম ফ্যাসিস্টেরও যাতে সেই অধিকার থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখাই একজন গণতন্ত্রকামী মানুষের উদ্দেশ্য। ফ্যাসিস্টদের অবশ্য সেই দায় নেই। তারা নিজেদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ করার জন্যই অঙ্গীকারবদ্ধ। এবং তাঁর জন্য গণতন্ত্রের ন্যূনতম শর্তগুলোকেও অগ্রাহ্য করতে তাদের অনীহা নেই। সাম্প্রতিক কৃষি আইন তারই জলজ্যান্ত উদাহরণ।

নীল বাঁদরে সোনার বাংলা করলে এবার ছারেখার
অসময়ে হরিশ ম’ল, লঙের হল কারাগার।

আজ থেকে দেড়শ বছরের কিছু আগের এক গান। গ্রামবাংলার মানুষের মুখেমুখে ফিরত এই গান। তিতুমিরের বিদ্রোহ রক্তের বন্যায় দমন করা হয়েছে তিন দশক আগেই। উত্তর ও মধ্যভারত জুড়ে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিপাহীদের বিদ্রোহে যোগ দিয়েয়েছিলেন কৃষক ও অন্যান্য কারুজীবী মানুষ। সেই বিদ্রোহও দমন করা গেল। আর তার পরের বছরই জ্বলে উঠল নীল বিদ্রোহের আগুন। স্বাধীনতার কিছু আগে জ্বলে ওঠা তেভাগা বা তেলেঙ্গানা, মৈমনসিংহের টঙ্ক আন্দোলন কিংবা নকশালবাড়ি, ভারতে এবং বাংলায় কৃষক আন্দোলন বা অভ্যুত্থানের ইতিহাস সুদীর্ঘ। দিল্লির বুকে সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনকেও সেই ধারাবাহিকতায় না দেখার কোনও কারণ নেই। ওয়াজিদ আলি শাহ-র ভাষাকে তাই একটু ভিন্ন প্রেক্ষিতে আমরা বলতেই পারি, ‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে’।

সেপ্টেম্বর মাসে পার্লামেন্টে বিনা-বিতর্কে, বিনা-ভোটাভুটিতে গৃহীত হল তিনটি বিল, যা চলতি কথায় নয়া কৃষি আইন নামেই পরিচিত। এই তিনটি আইন হল, Farmers’ Produce Trade and Commerce (Promotion and Facilitation) Act, 2020, Farmers (Empowerment and Protection) Agreement on Price Assurance and Farm Services Act, 2020 এবং Essential Commodities (Amendment) Act, 2020। আলোচনার সুবিধার্থে তিনটি আইনকে সংক্ষেপে কৃষি বাণিজ্য আইন, কৃষিচুক্তি আইন ও অত্যাবশ্যক পণ্য আইন বলেই আমরা ব্যবহার করব। আন্দোলনরত কৃষকদের একটাই দাবি, নতুন কৃষি আইন বাতিল করো। সরকারি আইন বাতিল করার দাবি যে কেউ তুলতেই পারেন। কিন্তু কোনও মন্তব্য করা কিংবা পক্ষাবলম্বনের আগে দরকার তিনটি আইনের সারবস্তু বুঝে নেবার। তাই আসুন, আগে সেটুকু সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক।

নয়া আইনের বিধান

১/ কৃষি বাণিজ্য আইন: বর্তমান সংশোধনীর আগে পর্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কেনার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত বাজার যা চলতি কথায় মান্ডি বলে পরিচিত, সেখানে ছাড়া করা সম্ভব নয়। নতুন সংশোধনীতে কৃষিপণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে মান্ডি এলাকার বাইরের কোনও সংস্থা যেমন কারখানা, কৃষিফার্ম, গুদাম, বৃহদাকার বহুমুখী গুদাম অর্থাৎ সাইলো কিংবা কোল্ড স্টোরেজকেও মান্যতা দেওয়া হয়েছে। ফলে কৃষিপণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বাধা আর থাকবে না। রাজ্য কিংবা দেশের মধ্যে যে কোনও জায়গায় কৃষিপণ্য বিক্রি করা যাবে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ই-কমার্সকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নস্যাৎ করা হয়েছে কৃষিপণ্য ক্রয়বিক্রয়ের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের লেভি বসানোর অধিকারকে।

২/ কৃষিচুক্তি আইন: এই আইন অনুযায়ী কৃষিপণ্যের কারবারী ফার্ম, কৃষিজ পণ্যভিত্তিক উৎপাদক, পাইকারি কারবারী, রপ্তানিকারক অথবা বৃহৎ খুচরো ব্যবসায়ী ফার্ম সরাসরি কৃষকের সঙ্গে আগাম বাণিজ্য অর্থাৎ Future Trading-এর চুক্তি করতে পারবে। চুক্তির প্রকোপে কোনও কৃষক যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে ত্রিস্তরীয় আইনি প্রতিবিধান থাকবে। প্রাথমিকভাবে Reconciliation Board সেই অভিযোগের ফয়সালা করবে। তার উপরে থাকবেন মহকুমা শাসক। আর সর্বোচ্চ ক্ষমতা হল Appellate Board-এর।

৩/ অত্যাবশ্যক পণ্য আইন: ২০২০-র সংশোধনীর বলে অত্যাবশ্যক পণ্যের আওতা থেকে যাবতীয় খাদ্যশস্য, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তৈলবীজ ও ভোজ্যতেলকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এটাও নির্ধারণ করা হয়েছে যে এই সমস্ত পণ্য গুদামজাত করার ক্ষেত্রে সাধারণভাবে কোনও বিধিনিষেধ বা ঊর্ধ্বসীমা থাকবে না।

কেন এবং কীভাবে

পার্লামেন্টে বিল পাশ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন, ‘এই বিলের মাধ্যমে ভারতীয় কৃষির আমূল রূপান্তর ঘটবে।’ এমনকি আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ-ও নতুন আইনকে সমর্থন জানিয়ে মন্তব্য করলেন, ‘farm bills and labour bills are very important steps in the right direction. …  In the case of agriculture, having a much more integrated market, creating competition, having farmers getting a greater share of the price that finally the retail price that’s paid. So that helps with rural incomes.” ৩০ নভেম্বর ‘মন কি বাতে’ সম্প্রচারে প্রধানমন্ত্রী এমনও বলেন, সমস্ত রাজনৈতিক দলই কৃষকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর এখন সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হচ্ছে। এমনকি ২০২১ সালের সূচনার দিনই ৮৬৬ জন প্রতিষ্ঠিত অধ্যাপক-গবেষকরা একটি সম্মিলিত আবেদনপত্রে বলেন যে এই আইনগুলি ‘… free the farm trade from all illicit market restrictions, open the market beyond ‘mandis’ and further assists the small and marginal farmers to sell their produce at market and competitive prices. The new laws also provide full autonomy for farmers to sell their produce.’

মোদ্দা কথাটা হল, রাজনৈতিক পালাবদল হোক বা না হোক, ভারতীয় কৃষি যে এক ক্রমক্ষয়মানতার রোগে ভুগছে, এই কথা সব পার্টিই বলে এসেছে। কৃষিকে উজ্জীবিত করার জন্য ব্যাপক অর্থের বিনিয়োগ চাই। পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য যতটুকু যায়, তাতে কৃষকেরা আদৌ উপকৃত হন কিনা, সেই নিয়েও ধারাবাহিক আলোচনা চলছিলই। নিয়ন্ত্রিত বাজারগুলোর মাধ্যমে আদৌ কৃষকেরা ন্যায্য দাম পান কিনা, সেই বিষয়েও অনেক আলোচনা হয়েছে। ২০১৭ সালেই কেন্দ্রীয় সরকার একটি মডেল আইনের খসড়া প্রকাশ করেন। সেই খসড়ার বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে পার্লামেন্টের কৃষি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির পর্যবেক্ষণ ছিল, এই খসড়ার বিভিন্ন প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারগুলির অনীহা আছে। জুলাই ২০১৯-এ প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সাতজন মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হল। খসড়া আইন কীভাবে প্রয়োগ করা হবে, সেটাই ছিল সেই কমিটির বিবেচ্য। তাহলে কি সেই কমিটির সুপারিশের বলেই নতুন তিন আইন আনা হল? না, তেমনটা বলা যাবে না। কারণ কমিটি এখনও পর্যন্ত তার রিপোর্ট চূড়ান্ত করেনি।

এত তাড়াহুড়ো কেন?

একটা কমিটি গঠন করা হল। অথচ তার রিপোর্ট আসার আগেই তড়িঘড়ি পার্লামেন্টে বিল পাশ করা হয়ে গেল। কেন? সন্দেহ জাগে না কি? ধরা যাক কৃষি বাণিজ্য আইনটি। ৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার লোকসভায় বিলটি পেশ করেন। সেই বিলের শেষাংশে ‘STATEMENT OF OBJECTS AND REASONS’ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ৫ নং পয়েন্টে বলা হয়েছে, ‘… the President promulgated the Farmers’ Produce Trade and Commerce (Promotion and Facilitation) Ordinance, 2020 (Ord. 10 of 2020) under clause (1) of article 123 of the Constitution on the 5th day of June, 2020’। এবং বর্তমান বিলটি সেই অধ্যাদেশকেই প্রতিস্থাপিত করবে, এমনটাই বলা হয়। তাহলে সেপ্টেম্বরের আইন আসলে জুন মাসের অর্ডিন্যান্সেরই পরিণতি। সাংবিধানিক প্রেক্ষিতে একদমই সঠিক কাজ।

আর সেখানেই লুকিয়ে আছে যাবতীয় সন্দেহ। ২০১৯ জুলাই থেকে ধরা যাক ২০২০-র মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ। অর্থাৎ লকডাউনের আগের পর্যায়। প্রায় নয় মাসেও কমিটি কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারল না। আর লকডাউনের নাচনকোঁদনের দু মাসের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে দিল! তাহলে কি লকডাউনের সুযোগ নেওয়ার জন্যই এমন তাড়াহুড়ো করা হল? যাতে দৈনন্দিন জীবনজীবিকার সমস্যায় জেরবার হওয়া মানুষ এদিকে আর নজর না দিতে পারে? কিংবা লকডাউনের মধ্যে কোনও বিক্ষোভের প্রকাশ না ঘটাতে পারে? ঘটনাক্রম দেখে তেমনই বিশ্বাস হওয়া স্বাভাবিক। এবং এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে একজনও এই অস্বাভাবিক দ্রুততার কোনও যুক্তি দেখাননি।

আপত্তি কোথায়

এমন একটা প্রচার সরকারের তরফে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যেন আন্দোলনকারীদের মুখ্য উদ্দেশ্য হল ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়াটাই। আর তাই ন্যূনতম সহায়ক মূল্য অবশ্যই বজায় থাকবে বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বারবার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। ন্যায্য দাম পাবার প্রশ্ন তো আছেই। কিন্তু ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের কথা কি মূল আইনে আছে? না নেই। সেখানে বলা আছে ‘A farmer may enter into a written farming agreement in respect of any farming produce and such agreement may provide for— (a) the terms and conditions for supply of such produce, including the time of supply, quality, grade, standards, price and such other matters’ (sec 3(a)) এই দাম নিঃসন্দেহে ফসলের মানের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। কিন্তু মুশকিল হল, চুক্তি হওয়ার সময় তো ফসল চোখে দেখা যাবে না তাহলে? কী হবে? হবে তো এটাই যে ব্যবসায়ীর ইচ্ছার নিরিখেই ফসলের আগাম দাম ধার্য করা হবে। সেখানে ব্যবসায়ী কি সরকার-ঘোষিত MSP মানতে বাধ্য থাকবে? আইনে তো তেমন কোনও সুযোগ নেই।

ধরে নেওয়া যাক, আইন সংশোধন করে সরকার MSP-র প্রসঙ্গ ঢুকিয়ে দিলেন। তাহলে তো কোনও সমস্যা নেই! আছে, অবশ্যই আছে। MSP ঘোষণা করে থাকেন কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি দপ্তর। নীতিগতভাবে ফসল বপনের আগেই সেটি ঘোষণা হওয়ার কথা। কিন্তু ধান বা পাটের ক্ষেত্রে ফসল তোলার সময় হয়ে গেলেও MSP ঘোষণা যে আর হয় না, তেমনটা দেখতেই আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সে সুযোগে ফড়েরা মাতব্বরি চালিয়ে যায়। সবথেকে বড় কথা, MSP-র কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। মূলত FCI, NAABARD বা JCI-এর মত সরকারি অধিগৃহীত সংস্থাগুলিই সরকারি ঘোষণা মেনে খরিদ করে থাকে। বেসরকারি ব্যবসায়ীদের বাধ্য করার মত কোনও আইনি সংস্থান কোনওদিনই ছিল না। আর নতুন আইনে তো সেই সুযোগটাও নেই।

আমাদের কী?

আমরা যারা কৃষক নই, আমাদের কী আসে যায় MSP থাকল কি থাকল না, সেই নিয়ে? আমাদের আগেও কিনে খেতে হত। এখনও কিনেই খেতে হবে। আমরা কি কোনওদিন MRP মানে সর্বোচ্চ খুচরো দামের সুযোগ পেয়েছি? না, পাইনি। এবং পাওয়ার দরকারও হয়নি। কারণ একদিকে গণবন্টন অর্থাৎ রেশনিং ব্যবস্থা, আর অন্যদিকে অজস্র ছোট ছোট ব্যবসায়ীর উপস্থিতি। নতুন আইনে দুটোকেই বানচাল করে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যাবতীয় খাদ্যশস্য, আনাজ ও ভোজ্য তেলকে অত্যাবশ্যক পণ্যের তালিকা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে এইসব শস্য যে কেউ যত খুশি পরিমাণে মজুদ করতে পারবে। অত্যাবশ্যক পণ্য আইনের নিরাপত্তা না থাকায় রাজ্য সরকার প্রয়োজনে গুদাম জবরদখল করতে পারবে না। নিশ্চিত পরিণতি কৃত্রিম সঙ্কট ও চরম মূল্যবৃদ্ধি। তার প্রকোপ তো পড়বে আমাদেরই ঘাড়ে। তাহলে? আমরা কি আদানি-আম্বানির পক্ষে থাকব? নাকি কৃষকদের?

একটা কথা খুব স্পষ্ট। সরকার অধিগৃহীত সংস্থাগুলো মান্ডি ব্যবস্থার মাধ্যমেই খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে থাকে। এবং এইসব মান্ডি-র গঠন ও পরিচালনা হয় Agricultural Produce Marketing Committee Act স্বারা। নতুন আইনে রাজ্য সরকারগুলোর APMC আইন প্রয়োগ করার কোনও সুযোগ থাকছে না, সেটা আমরা আগেই দেখেছি। তাহলে নতুন আইনের বলে বেসরকারি বৃহৎ ব্যবসায়ীরাই বাজারে মাতব্বরি করবে। আর শস্য সংগ্রহের সুযোগ হারাবে সরকারি সংস্থাগুলো। আর তার চাপ গিয়ে পড়বে রেশনিং ব্যবস্থার উপর। সব মিলিয়ে অকৃষক জনতারও উৎফুল্ল হবার কোনও কারণ নেই। এই আইনের প্রকোপে কৃষক-অকৃষক নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ মরবেন। আর লাভের ঝুলি ফুলে উঠবে কর্পোরেট সংস্থাগুলোর।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4664 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...