ফেক-নিউজ এবং হ্যাংওভার

ফেক-নিউজ এবং হ্যাংওভার -- শ্রীজাতা গুপ্ত

শ্রীজাতা গুপ্ত

 



গবেষক ও লেখক

 

 

 

সামাজিক মাধ্যমগুলিকে ব্যবহার করে অপতথ্য প্রচার ও হিংসার প্ররোচনা এখন রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির অন্যতম অস্ত্র। সারা বিশ্বে চলছে এই তাণ্ডব। ভারতবর্ষে এবং পশ্চিমবঙ্গে ফেক-নিউজ ব্যবহার করে দাঙ্গা পরিস্থিতি নির্মাণ নিয়ে কয়েকজন বন্ধু গোটা একটি বই লিখে ফেলেছেন। নেটফ্লিক্স বানিয়ে ফেলেছে একটি তথ্যচিত্র। কীভাবে ফেক-নিউজ তৈরি এবং ছড়ানো হয়, এর ফলে আজ পর্যন্ত কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তার পুনরাবৃত্তির জন্য এই লেখা নয়।

ফেক নিউজ কেন সহজেই দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে? মানুষের কাছে তথ্যের চেয়ে অপতথ্য কেন বেশি বিশ্বাসযোগ্য?

এর জন্য অনেকাংশে দায়ী মানুষের জৈবিক এবং মনস্তাত্ত্বিক অসহায়তা। হরমোন-আবেগ-সামাজিকতা: এই তিনের জটিল রসায়নের ফল এক অবশ অসহায়তা। সত্য-মিথ্যা বিচারশক্তি লোপ পায় ফেক-নিউজের প্রভাবে। এই প্যারালিসিস থেকে বেরোনোর উপায় থাকে না কারণ প্যারালিসিস যে শুরু হয়েছে বোঝা সম্ভব নয়।

ফেক-নিউজগুলি সাধারণত কেমন হয়? কয়েক সেকন্ডের ভিডিও ক্লিপ, উত্তেজনাপূর্ণ। জ্বালাময়ী ছবি, বাড়িঘর পুড়ছে, মানুষ মানুষকে মারছে, সঙ্গে দু-এক পংক্তি উস্কানিমূলক বাণী। এই ফরম্যাট বজায় রাখা জরুরি সেন্সেশন তৈরি করতে। চাঞ্চল্যকর তথ্যের প্রতি মানুষের মন আকৃষ্ট হতে শুরু করে প্রায় ৬ লক্ষ বছর আগে। যখন আদিম মানুষ দল বেঁধে বন্যজন্তু শিকার করে দিনযাপন করত, গুহায় বসবাস করত। চৌহদ্দিতে বন্যপ্রাণীর হঠাৎ উপস্থিতি তখনকার মানুষের জীবন একমাত্র সেন্সেশনাল নিউজ। এই জন্তুটি হতে পারে তাদের খাদ্যের জোগাড়, অথবা প্রাণসংশয়ের কারণ। যে সকল মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্য শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জিন ছিল, তারা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বেঁচে গেছে। সেই আদিম জিন আজকের আধুনিক মানবসভ্যতার জিনপুলেও সংরক্ষিত রয়েছে। জীবজন্তু মেরে খেতে হয় না, বা তাদের থেকে পালিয়ে বাঁচতে হয় না, তাই অন্যান্য চাঞ্চল্যকর তথ্যের প্রতি আমোঘ আকর্ষণ এই প্রবণতা বাঁচিয়ে রাখে। মানবসভ্যতার বিবর্তনের গোড়ার দিকের এই সাধারণ প্রবৃত্তির কারণেই সাদামাটা সংবাদের চেয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাঞ্চল্যকর খবরের প্রতি মানুষের মনযোগ বেশি। ফেক-নিউজ যথাযথভাবে এই সেন্সেশনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

ফেক-নিউজ কেন কোনও পজিটিভ বার্তা দেয় না? ধরুন, একটি ভিডিও বানানো হল, রোজ একটি গাছ লাগালে এক বছরের মধ্যে করোনা ভাইরাস নির্মূল হবে। সেই ভিডিও কি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে লাখখানেক লোকের কাছে পৌঁছোবে? মানুষ রোজ গাছ লাগাবে, পাশের বাড়ির মানুষকে বলবে, গাছ লাগান? গাছ-না-লাগানো মানুষকে নীচু চোখে দেখতে শুরু করবে? এমন কেন সত্যি হয় না, আহা! কেন কেবল ভীতিজনক বিদ্বেষপূর্ণ ফেক-নিউজ সফল হচ্ছে? কারণ, মানুষের মগজ হিংসা ভালোবাসে। ভয় পেতে ভালোবাসে মানুষ। সচেতনভাবে না হলেও, মানুষের শরীরে কিছু হরমোন মানুষকে ভয় ভালোবাসতে শেখায়। অবচেতন এবং শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়াগুলি হিংসা এবং ভয় থেকে রসদ সংগ্রহ করে। যত বেশি ভয়ঙ্কর খবর, তত বেশি আতঙ্ক, তত বেশি অ্যাড্রেনালিন রাশ। অ্যাড্রেনালিন মানুষের শরীরে নিঃসৃত এমন এক হরমোন, যা বিপদের মুখে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শরীরকে প্রস্তুত করে। দুরকমভাবে এই প্রস্তুতি আসে: ফাইট, অর্থাৎ রুখে দাঁড়ানো; ফ্লাইট, অর্থাৎ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। কিন্তু দুইয়ের পিছনেই অ্যড্রেনালিনের খেলা। এর ফলে হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি পায়, শারীরিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, আরও অনেক কিছু হয়, যাকে এক কথায় বলা যায়, উত্তেজনা উদ্রেককারী ঘটনাসমূহ।

শরীর এবং মন চায় আবেগ উপভোগ করতে। নেতিবাচক উত্তেজনা মানুষের মস্তিষ্কে আবেগের যতরকম জটিল সমীকরণ সৃষ্টি করে, ইতিবাচক ঘটনা ততখানি করতে অক্ষম। ইমোশন বা আবেগ-বর্ধিত পরিস্থিতিতে ডোপামিন নামক এক নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি হয়। ডোপামিন স্নায়ুকোষের মধ্যে দূতের কাজ করে মস্তিষ্কে এমন একটি অংশকে উত্তেজিত করে যা আমাদের প্রভূত পরিমাণে পুরস্কৃত হওয়ার অনুভূতি দেয়। এই রিওয়ার্ড মেকানিজম আনন্দদায়ক, আত্মতুষ্টিকর। অতএব, বেশি ডোপামিন তৈরি করার জন্য আমাদের শরীর এবং মন বারবার সেই কাজগুলি করতে চায়, যা সামান্য উস্কানিতেই উত্তেজনা ও আবেগে ভরিয়ে রাখবে। আবেগের জটিলতা যত বাড়বে, তত বেশি ডোপামিন তৈরি হবে শরীরে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মাদকদ্রব্য সেবন, বিপজ্জনক খেলাধূলায় অংশগ্রহণ, সিগারেট মদ জর্দা জুয়া বা যে কোনও ধরনের নেশাও শরীরে ডোপামিন তৈরি করে। অনাবিল আনন্দ দেয়। তাই, বারবার নেশার কাছে ফিরে যাওয়া, চূড়ান্ত ক্ষেত্রে অ্যাডিকশন— এইসবই আসলে ডোপামিনের খেলা। চাঞ্চল্যকর ভয়ঙ্কর সংবাদ ক্ষণিকের মধ্যেই ভয় থেকে উত্তেজনা থেকে আবেগ থেকে ডোপামিন চক্রব্যূহে ঘোরাফেরা করে। ফেক-নিউজ পড়া এবং ছড়ানো অতএব যেমন এক ভয়াবহ নেশা। সেই খবর বানানোর প্রক্রিয়াটিও একই নিয়মে নেশার। একবার করলে মনে হবে বারবার করি। বারবার পুরস্কৃত হোক মস্তিষ্ক। ঝিমঝিম ভাব ছড়িয়ে যাক স্নায়ুকোষে।

সামাজিক নিয়মেও মানুষ হিংসাত্মক খবরের প্রতি বেশি টান অনুভব করে। দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে খুন-ডাকাতি-মৃত্যুর খবর বরাবর প্রথম পাতায় স্থান পেয়েছে। এই বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন শঙ্কর ভেদন্তম তাঁর পডকাস্ট সিরিজ এবং বিভিন্ন প্রবন্ধে। সেন্সেশনাল সাংবাদিকতা থেকে বেড়িয়ে সামাজিক সাংবাদিকতায় উত্তরণ ও তার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে অ্যান্ডি টুশের বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। মনস্তত্ত্বের দিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যাবে, সামাজিকভাবে ট্যাব্যু বিষয়গুলি, যে কাজকর্ম সাধারণত গ্রহণযোগ্য নয়, তার সম্পর্কে মানুষের অদম্য কৌতূহল। খুন করতে পারব না, কিন্তু খুন করলে কেমন অনুভূতি হয় তার স্বাদ পাব খুনির খবর পড়ে। হিংসাত্মক কাজকর্ম করা উচিত নয়, তাই হিংসার খবর আমার কাছে হয়ে উঠবে ইডেনের নিষিদ্ধ আপেল। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর উপায় করে দিচ্ছে ফেক-নিউজ ও রটনা। তথ্যের আগে বিদ্যৎবেগে ছুটছে অপতথ্য।

গবেষণা বলছে, শখ করে ভয় পেতে ভালোবাসে সেই মানুষ যে বসে রয়েছে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। হিংসায় আকৃষ্ট হয়ে, তার আঁচ নিজের গায়ে লাগার আশঙ্কা থাকলে তার থেকে দূরে থাকাই ভালো। সেই কারণেই ভয়ে সিঁটিয়ে আঙুলের ফাঁকে ডিস্টোপিক অ্যাপোক্যালিপ্টিক সিনেমা দেখতে বা বৃষ্টির রাতে ভূতের গল্প পড়তে আমরা ভালোবাসি। কারণ আমরা সচেতনভাবে জানি পর্দা ফুঁড়ে বা বইয়ের পাতা থেকে ভয়ের উপাদানগুলি আমাদের ড্রয়িংরুমে ঢুকে পড়বে না। খোদ জঙ্গলের মাঝখানে বসে ভয়ের গল্প শুনতে আমরা চাই না। ফেক-নিউজের হিংসার রমরমা এই নিয়মেই হাতের স্মার্টফোনটির নিরাপত্তায় এবং সামাজিক আইডেন্টিটির কম্ফর্ট জোন থেকে বরং উপভোগ্য। আমি যদি এমন গোষ্ঠীর মানুষ হই, আমার আর্থসামাজিক পরিস্থিতি যদি আমাকে সবরকমভাবে নিরাপত্তার আশ্বাস দিতে পারে, তাহলে অন্যান্য তুলনামূলক দুর্বল গোষ্ঠী, শ্রেণি বা জাতির বিরুদ্ধে হিংসার খবর আমি ‘শখের ভয়’ পাওয়ার অ্যাড্রেনালিন-ডোপামিনের আদিম ছকে উপভোগ করব। এতে আমার প্রিভিলেজড ক্যাথার্সিস হবে। রাগ ঘৃণা আরও যা কিছু অসামাজিক, তার নিষিদ্ধ নেশায় মাতবে চেতন অবচেতন। হরমোন।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে-পরে এই ফেক-নিউজের রমরমা চলছে। বাঙালি সেই খবরের প্রতি মনোযোগী, খবরগুলির সত্যাসত্য বিচার না করে বিশ্বাস করছেন এবং হিংসাত্মক হয়ে পড়ছেন একে অপরের প্রতি। এর গায়ে লাগছে দলীয় রাজনীতির রং, সাপ্রদায়িকতার রং। বাঙালি তবে কোন ভয়ের নেশায় মেতেছে?

আইডেন্টিটি হারানোর ভয়। রবার্ট পাটনাম এবং তাঁর সহকর্মীরা সোশ্যাল ক্যাপিটাল নামক একটি ধারণার প্রবর্তন করেন। সোশ্যাল ক্যাপিটাল মূলত একটি জাতির (সামাজিক, ভৌগোলিক ভাবে দল বেঁধে বসবাসকারী মানুষ অর্থে ‘জাতি’) মানুষদের মধ্যে সামাজিক রীতিনীতির সাযুজ্যকে মূলধন করে গড়ে ওঠা একটি সামগ্রিক আইডেন্টিটি বা পরিচিতির কথা বলে। এই সোশ্যাল ক্যাপিটাল বা সামাজিক পুঁজি একে অপরের মধ্যে সাদৃশ্য স্থাপন করে তাদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি করে। এই পুঁজির জোরে আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে জাতিগত অস্তিত্ব। একে অপরের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রেখে মানুষের মধ্যে তৈরি করে সুরক্ষার অন্তর্জাল। সমস্যায় পড়লে সামাজিক পুঁজির জোরে যে মানুষগুলি আমার নিকটতম তারাই আমায় বাঁচাবে।

আইডেন্টিটির সাযুজ্যের উপর ভিত্তি করে যে সোশ্যাল ক্যাপিটাল, তা যেমন জাতির জন্য উপকারী অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে, ফ্র‍্যাঙ্কেস্টাইনের দানবের মত কখন যে অ্যান্টিথিসিসে পরিণত হবে, জাতি নিজেও অনেকসময়ে বুঝতে পারবে না। বহু বছর ধরে ভিন্ন সংস্কৃতির মিলমিশে তৈরি বাঙালি আইডেন্টিটির মূলে রয়েছে বহুমুখিতা। আইডেন্টিটি বহুমুখী হয়ে পড়লে এর মধ্যে তৈরি হয় একাধিক সামাজিক পুঁজি। কোন পুঁজি বেশি শক্তিশালি, তার মধ্যে অলক্ষ্যে লড়াই চলে। এর ফলে, সামগ্রিক বাঙালিয়ানার সোশ্যাল ক্যাপিটালের আড়ালে চলতে থাকে ছোট ছোট গোষ্ঠিতে ভাগ হয়ে যাওয়া আইডেন্টিটির হায়ারার্কি। এমন সময়ে, অভ্যন্তরীণ বা বহিরাগত শক্তি স্বার্থসিদ্ধি উপলক্ষে আইডেন্টিটির বিভেদগুলির অপব্যবহার করে সহজেই। এমনটাই হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিকতম নির্বাচনী আবহাওয়ায়।

বহিরাগত রাজনৈতিক শক্তি প্রথমে বাঙালির বৈশিষ্ট্যগত বহুমুখী আইডেন্টিটির প্রধান উপকরণগুলি নিপুণভাবে আলাদা করে দেখাতে সক্ষম হয়েছে। পুঞ্জিভূত বহুমুখিতা সহিষ্ণুতার প্রতীক হয়ে কতখানি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে সে দিকে আলোকপাত না করে, বহুমুখিতার ভিন্নতাকে বড় করে তুলেছে। দ্বিতীয়ত, সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি সামাজিক পুঁজি, যার সঙ্গে বাঙালি পুঁজির কোনও সমঞ্জস্য নেই, এনে বাঙালির মধ্যে তৈরি করেছে অবিশ্বাস্য হীনমন্যতা। বাংলা ভাষার দীনতা প্রমাণ করতে চেয়েছে, স্লোগান বদলে গেছে, বাঙালির চিরাচরিত আইকন প্রতিস্থাপিত হয়েছে। দ্বিমুখী এই ফ্র‍্যাঙ্কেনস্টাইনের দানব ভিতরে ও বাইরে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তৈরি করে বাঙালি সামাজে ভীতি উদ্রেককারী ফেক-নিউজের বাজার তৈরি করেছে। বাঙালি তাদের সামগ্রিক পরিচিতি ভুলে আংশিক পুঁজিতে ভরসা করে নতুন আইডেন্টিটি খোঁজার আগেই তা হারানোর ভয়ের নেশায় মেতে ওঠে। নেশার ঘোরে যুক্তিবোধ কাজ করে না, কেবল আরও নেশার লোভে আরও ভয় পেতে চায় বাঙালি, আরও হিংসা ছুঁড়ে দিতে চায় একে অপরের দিকে।

সপ্তাহশেষের তুমুল পার্টির পর হ্যাংওভার কাটানোর সময়ে যেমন নেশাতুর বিগত সন্ধ্যাটি ঝাপসা ঠেকে। কী বলেছিলাম, কতখানি বেসামাল ব্যবহার করে ফেলেছি, আত্মসম্মানের পক্ষে কতখানি ক্ষতিকর কাণ্ডকারখানা করে ফেললাম, কাউকে আঘাত দিলাম? কোনও সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব আজীবনের মত ধ্বংস করে ফেলার মত কিছু করে ফেলেছি কি? এই প্রশ্নগুলি নেশা পরবর্তী সকালে আমাদের হানা দেয়। নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করি, আর নেশা নয়, করলেও মেপে, সীমা অতিক্রম করা নেশা আর নয়। তারপরেও আমরা আবার নেশা করি। বারংবার একই ভুল হওয়ার পর ঠিক করি, আবেগের তাড়নায় যতই রাগ হোক, যতই প্রেম পাক, দুঃখে ভেসে যাক হৃদয়, নেশা নামার পর আবেগগুলি ঝালিয়ে নিয়ে দেখব কতখানি প্রতিক্রিয়াশীল হওয়া যুক্তিযুক্ত। এই শেষের উপলব্ধিতে পৌঁছোনো এবং সঙ্কল্পে অনড় থাকা কঠিন সাধনার ব্যাপার। ফেক-নিউজ দেখে সাময়িক উত্তেজনার বশে আগেবতাড়িত কার্যকলাপ করা থেকে বিরত থাকার জন্যও এরকম একটি সাধনার প্রয়োজন। জোরালো প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতার মধ্যে নিজেকে গড়ে তোলা প্রয়োজন, খবরের সত্যাসত্য বিচার করার সময়টুকু দিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া থেকে নিজেকে সামলানো একান্ত জরুরি।

মনে রাখতে হবে, চাঞ্চল্যকর খবর = অ্যাড্রেনালিন ডোপামিন। যা আমাকে নেশাগ্রস্ত করে রেখেছে। এইসময়ে গভীরে লালিত হীনম্মন্যতাগুলি প্রকাশ পাচ্ছে অপরের প্রতি আক্রোশ হয়ে। কালকে এই ঘটনা ঝাপসা মনে হবে, কতখানি ক্ষতি করে ফেলেছি তার সম্যক ধারণা থাকবে না, ক্ষতিপূরণের উপায়ও থাকবে না। চিরন্তন সামাজিক পুঁজিগুলি নিশ্চিহ্ন হয়ে, হিংসাই হয়ে উঠবে আমার একমাত্র লজ্জাজনক হ্যাংওভার। যা কাটিয়ে ওঠা শক্ত, কিন্তু চেষ্টা এবং সদিচ্ছা থাকলে, টোটকার অভাব নেই।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4659 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...