ফ্রান্সিসকো দে-গোয়া: অন্তিম রেনেসাঁ-যুগ ও আধুনিক সভ্যতার মর্মান্ধকার

ফ্রান্সিসকো দে-গোয়া: অন্তিম রেনেসাঁ-যুগ ও আধুনিক সভ্যতার মর্মান্ধকার -- রূপায়ণ ঘোষ

রূপায়ণ ঘোষ 

 


কবি, গদ্যকার

 

 

 

ফ্রান্সিসকো দে-গোয়া (১৭৪৬-১৮২৮) অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ এবং উনিশ শতকের গোড়ার দিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্প্যানিশ শিল্পী। প্রাচীন ইউরোপীয় ঘরানার সর্বশেষ চিত্রকর তথা আধুনিকদের মধ্যে প্রথম— যিনি জীবনের সমস্ত মানবিক জটিলতার একজন চমকপ্রদ পর্যবেক্ষক হিসাবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছেন। তাঁর কাজের বহুরৈখিক স্তর ও অর্থের মুহুর্মুহু স্থানান্তরগামিতা তাঁকে বিশ্বের অন্যতম মেধাবী ও প্রজ্ঞাবান শিল্পী করে তুলেছে।

গোয়া প্রথম জীবনে একেবারে সাদামাটা একটি সামাজিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। প্রতিভাধর চিত্রশিল্পী হিসাবে তাঁর খ্যাতি, সম্মান সবকিছুই ছিল।  তিনি নিজস্ব বৈশিষ্ট্যানুযায়ী সমাজের সর্বস্তরের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করতেন এবং তাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে পছন্দও করতেন খুবই। এ প্রসঙ্গে তাঁর জীবনীকার হুয়ান হোসে জ়ুনক্যিরা [Juan José Junquera] তাঁর লেখায় বলছেন, “when the painter moved from rural Aragon to Madrid in 1774, working people of all kinds, from muleteers, builders, tradesmen, dandies and dirty old men to young people, began to refine his brushstrokes, sharpen his vision, brighten his colours and prepare him for what was to become the basis of his career as a painter – the portrait.”

সুতরাং অনুধাবন করা অনুচিত হবে না যে, এই সময়পর্বে গোয়া ছিলেন একজন মানব চিত্রশিল্পী, যাঁকে আধুনিক চিন্তনের দিক থেকে জনসাধারণের শিল্পী [A people’s Artist: ‘Artista de un pueblo’ (Spanish)] বলে অভিহিত করলে তা কোনওমতেই অত্যুক্তি হবে না।

কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে তত তার বিবর্তনিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভেই ভিজ্যুয়াল আর্টসের অন্যতম প্রাণপুরুষ ফ্রান্সিসকো গোয়ার উপস্থিতি সম্পূর্ণ অন্য এক খাতে বইতে শুরু করে। এই ব্যতিক্রমী শিল্পী স্পেনীয় চিত্রকলায় এক  বৈপ্লবিক বিবর্তন এনেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে বলা যেতে পারে যে, গোয়া সত্যিকারের মূলবাদী এমন একজন ব্যক্তি যিনি মনে করতেন শিল্প হল সমাজের প্রতিবিম্ব এবং এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই তিনি ভিজ্যুয়াল আর্টকে নিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন।

তাঁর প্রাথমিক শিল্পসম্ভার ছাড়াও বিশেষত ১৮১৯ থেকে ১৮২৩-এর মধ্যে নির্মিত ব্ল্যাক পেইন্টিং (Black Painting) নামে পরিচিত তাঁর সবচেয়ে সাহসী সিরিজটি বোঝার জন্য সেই সময় তিনি যে ধরনের জীবনযাপনকে আত্মস্থ করেছিলেন তার প্রেক্ষাপটটি বোঝা অত্যন্ত আবশ্যিক।

উনিশ শতকের শুরুতে ইউরোপীয় রাজনীতি ও ভূ-প্রকৃতিতে ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন সাধিত হচ্ছিল। এর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হল নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ক্ষমতাতন্ত্রের বিস্তার— যিনি ইউরোপীয় ভূ-ভাগের বিভিন্ন অঞ্চল জয় তো করছিলেনই সেই সঙ্গে আন্তঃমহাদেশীয় জোট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং সমগ্র ইউরোপ জুড়ে পুরোপুরি আধুনিক ক্ষমতাবাদ প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করছিলেন। সংক্ষেপে বলতে গেলে, এই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের কর্মগুলি একটি নতুন ধরণের রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার জন্ম দেয় যা জাতীয়তাবাদ নামে একটি আদর্শের পটভূমি রচনা করেছিল।

যখন ভিজ্যুয়াল আর্টের কথা আসে সেই একই সময়ে তাতে রোমান্টিসিজমেরও উত্থান ঘটেছিল— যা প্রকৃতপক্ষে গণজাগরণের পক্ষে একটি আংশিক প্রতিক্রিয়া ছিল মাত্র। এটিকে বিচ্ছিন্নতা এবং অতীতের গৌরব, বিশেষত মধ্যযুগীয় কালকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি আন্দোলন বলা যেতে পারে। শিল্প বিপ্লবে সামাজিক সংশয়বাদকে অবহেলা করা হয়েছিল, অন্যদিকে নবজাগরণের নিয়মানুযায়ী প্রকৃতির বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদকে সমালোচনামূলকভাবে উচ্চারিত করার রীতি প্রচলিত হয়ে ওঠে। সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে রোমান্টিকতা একই সঙ্গে আধুনিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবধারাকে প্রভাবিত করছিল এবং এর অস্পষ্টতাই একে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

যদিও গোয়ার চিত্রকর্মগুলি প্রায়শই ভাববাদের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার প্রচেষ্টা হয়েছে, তবে সেটাকে এই নির্দিষ্ট ভাব-ব্যাখ্যায় সীমাবদ্ধতা রাখা অত্যন্ত কঠিন। এই নিবন্ধে, আমরা চেষ্টা করব উল্লিখিত ব্ল্যাক পেইন্টিংগুলি বিশ্লেষণ করার— যা কেবল গোয়ার বিশাল কারুকার্যকেই চিহ্নিত করে না, তাঁর সামাজিক দৃষ্টি-চেতনার একটি বিপুল বিশ্বাসকেও চিত্রায়িত করে। বলা বাহুল্য এই চিত্রকর্মগুলি সমাজের, তার লালিত সংস্কারের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিতে পারে, অন্তত পরিবর্তনশীলতার সেই অভিঘাতকে আরও সুস্পষ্ট করে তোলে।

 

তিমিরচিত্র (Black Painting) নির্মাণ

স্প্যানিশে ‘Pinturas Negras’ বা ইংরেজিতে ‘Black painting’, আমরা যাকে বলব ‘তিমিরচিত্র’— এর অন্তর্গত প্রায় চৌদ্দটি চিত্রের এই বিস্ময়কর ক্রমটি আদতে মানুষের শিকার-চেতনার বৈশিষ্ট্যযুক্ত। প্রায় আধিভৌতিক আখ্যানগুলি মানবতার উপর গোয়ার তিক্ত পর্যবেক্ষণকে বর্ণিত করে। ১৮১৯ সালে শিল্পী মাদ্রিদের কাছে অবস্থিত Quinta-del sordo বা ‘বধির মানুষের ভিলা’ নামে একটি বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। সেই সময় তিনি ৭২ বছরের এক বৃদ্ধ প্রতিষ্ঠিত চিত্রশিল্পী। লক্ষণীয় হল, এই সময়পর্বে তিনি নিজেই প্রায় বধির হয়ে যান। প্রাথমিকভাবে, চিত্রগুলি বাড়ির দেওয়ালে ম্যুরাল হিসাবে আঁকা হত এবং পরে সেগুলি দেওয়াল থেকে স্থানান্তরিত করে ক্যানভাসের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।

সিরিজটিতে স্পেনের বিরুদ্ধে নেপোলিয়ন ঘোষিত উপদ্বীপ যুদ্ধের (Peninsular War, 1808-1814) প্রসঙ্গ লক্ষ করা যায়। যুদ্ধের বিপন্ন সময় পর্বে গোয়া মাদ্রিদে ছিলেন— যেখানে তাঁকে ভয়, আতঙ্ক, সন্ত্রাস এবং হিস্টিরিয়ার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তিনি দুবার মারাত্মক অসুস্থও হয়ে পড়েন; সাম্রাজ্যবাদের যুদ্ধলীলার ফলে অবিচ্ছিন্ন উদ্বেগ এবং ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। এই বিষয়গুলিকে মাথায় রেখেই, এটি বুঝতে সহজ হয় যে গোয়ার তিমিরচিত্রগুলি কী কারণে সৃষ্টি হয়েছিল। সর্বোপরি এগুলি কোনও প্রদর্শনীশালায় প্রদর্শিতও হয়নি। অর্থাৎ এই কাজগুলি ছিল শিল্পীর প্রবল নিঃসঙ্গতার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি করা তাঁর নিজস্ব অন্তর্বেদনার বহিঃপ্রকাশ।

মজার বিষয় হচ্ছে, গোয়া চিত্রগুলির কোনও শিরোনাম দেননি, এবং ব্যবহৃত অধিকাংশ নামই শিল্প-ইতিহাসবিদদের দ্বারা আরোপিত হয়েছে। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে গোয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আন্তোনিও ব্রুগাডা এই চিত্রগুলি প্রথম প্রকাশ করেন। এখানে ১৪টি প্রধান চিত্রকর্ম শিরোনাম ও কালানুসারে রাখা হল:

  1. Two Old Men (1819)
  2. Atropos (The Fates, 1819)
  3. Two Old Men Eating Soup (1820)
  4. Fight with Cudgels (1820)
  5. Witches’ Sabbath (1820)
  6. Men Reading (1820)
  7. Judith and Holofernes (1821)
  8. Saturn Devouring His Son (1821)
  9. A Pilgrimage to San Isidro (1821)
  10. Women Laughing (1822)
  11. Procession of the Holy Office (1822)
  12. The Dog (1822)
  13. La Leocadia (1823)
  14. Fantastic Vision (1823)

‘কুইন্টা দেল সর্ডো’ ভিলাটি মানজানারেজ় (Manzanares) নদীর তীরে অবস্থিত। মনে হয় শিল্পী মানুষের সংসর্গ এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই বাড়িটি কিনেছিলেন। সিরিজটি কখন শুরু হয়েছিল সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায় না, তবে ১৮১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে সব কটি চিত্রের খসড়া সমাপ্ত হয়েছিল বলেই অধিকাংশ শিল্পবিদদের ধারণা।

তিমিরচিত্র ম্যুরালগুলি সম্ভবত ১৮২৩ সালের অন্তিম ভাগে শেষ হয়, সে সময় গোয়া বোর্দোয় সুস্বাস্থ্যের জন্য ভ্রমণ করছিলেন। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় গোয়ার মৃত্যু হলেও ১৮৩০ সাল নাগাদ তাঁর পৌত্র মারিয়ানো এই ভিলাটির মালিকানাপত্র পেয়ে যান। পরে অবশ্য ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে ম্যুরালগুলির ক্যানভাসে স্থানান্তরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

গোয়া দেওয়ালশীর্ষে ম্যুরালগুলি আঁকেন যা ভিলার দেওয়ালগুলিকে সম্পূর্ণ ঢেকে দিয়েছিল। ফলস্বরূপ অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে সেগুলিকে ক্যানভাসে স্থানান্তরিত করতে হয়।

এই গোটা প্রক্রিয়াটি সালভাদোর মার্টেনেজ কিউবেলসের তত্ত্বাবধানে জার্মান বংশোদ্ভূত এক ফরাসি ব্যাঙ্কার ব্যারন মিল ডি’এলানজারের অনুরোধে পরিচালিত হয়;  ব্রুগাডা ১৮৭৮ সালে প্যারিস ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে চিত্রগুলি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার পরিবর্তে ব্যারন এই চিত্রগুলি স্প্যানিশ রাজ্যে দান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

ম্যুরালগুলির মূল অবস্থানিক ডায়াগ্রাম এবং ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে জিন লরেন্টের তৈরি একটি ফটোগ্রাফিক তালিকা সম্পর্কে লিখিত প্রশংসাপত্র অনুসারে, গোয়ার বাড়িটি ছিল আয়তক্ষেত্রাকার এবং তাঁর বসার ঘরে দুটি জানালার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত প্রাচীরের নিকটবর্তী এবং দুটি বৃহৎ ম্যুরাল ল্যান্ডস্কেপ আকারে মাঝখানে ছিল। তার একেবারে ডানদিকে A pilgrimage to San Isidro এবং বাঁ-দিকে ছিল Witches Sabbath।

প্রবেশদ্বারের বিপরীতে ছোট্ট প্রাচীরের মাঝখানে একটি জানালা ছিল যার বাঁ-দিকে Saturn devouring his Son ও ডানদিকে Judith and Holofernes। একইভাবে দরজার একপাশে La Leocadia এবং ‘শনির সন্তান গ্রাসের’ বিপরীত মুখে Two Old Men ছবিটি পাওয়া গিয়েছে।

বাড়ির প্রথম তলায় লম্বা দেওয়ালগুলির মাঝ-বরাবর একটি জানালা এবং পাশে একটি ম্যুরাল যা নীচ তলায় প্রাপ্ত ম্যুরালগুলির সমান আকারের ছিল। The Fantastic Vision চিত্রটি ছিল জানালার উপরে এছাড়া Procession of the Holy Office ছবি প্রবেশদ্বারের নিকটতম ডানদিকের দেওয়ালটি আচ্ছাদন করে রেখেছিল। ঘরের বাঁ-দিকে Atropos, The Fates; এছাড়া Fight With Cudgels নামক চিত্র দুটি পাওয়া গেছে, ঘরের ডানদিকে The Dog ও Two Old Men Eating Soup চিত্রটি দরজার ঠিক উপরেই নির্মিত হয়েছিল।

 

শিল্পের আখ্যানবস্তু ও উপাদানসমূহ

ব্ল্যাক পেইন্টিং-এর প্যালেটটি গাঢ় স্বর্ণ, বাদামি, ধূসর এবং কালো রঙের ঘন শেডের উপর ভিত্তি করে তৈরি। গোয়া সাদাকে কেবলমাত্র তার বিপরীতে পোশাকের রঙের জন্য, আকাশের জন্য নীল রঙের ক্ষীণ আঁচড় এবং ছবির মধ্যে সবুজের আড়াআড়ি ব্যবহার করেছেন।

এই চিত্রগুলির মধ্যে সর্বাধিক চর্চিত হল, Saturn Devouring His Son বা শনির পুত্রগ্রাস। চিত্রটিতে গ্রিক উপকথার ব‍্যবহার লক্ষ করা যায়; দেবাধিপতি জিউসের বাবা টাইটান ক্রোনোসের একটি মিথের উপর ভিত্তি করেই এটি সৃষ্ট হয়েছে। ক্রোনোস ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীতে ভীত হয়ে ওঠে— যে তাঁর স্ত্রী রিহার অষ্টমগর্ভের সন্তান তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাঁরই মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠবে। ফলে সন্তান জন্ম নেওয়া মাত্র ক্রোনোস তাঁদের ভক্ষণ করে ফেলত! গোয়া এই ভয়াবহ ও নির্মম আচরণের প্রকাশ তথা মানব চরিত্রের ভয়াল আত্মরতির অস্থিরতাকে ছবিটিতে চিত্রিত করেছেন।

শনির পুত্রগ্রাস, শিল্পী ফ্রান্সিসকো গোয়া

এখানে Witches Subbath বা The Great he-Goat নামে একটি চিত্রও রয়েছে যা পূর্বের তুলনায় আরও গভীর অন্ধকারের দিকনির্দেশ করে। কারণ এটি একটি প্রাচীন পৌত্তলিক বিশ্বাসকে চিত্রায়িত করেছে— বিশ্রামবারের সময় শয়তান একটি ছাগলের আকারে পিশাচসিদ্ধকে আহ্বান করে পরিবর্তে আঁধারগামী মানবরমণীরা (Witches) সেই শয়তানকে শিশুরক্ত উৎসর্গ করতে পরিপূর্ণ রূপে প্রস্তুত। ছবিতে পাপীর আত্মা ক্রমাপরাধের ফলে দূষিত হয়ে পড়ে এবং সে ধীরে ধীরে একটি ‘অজ’ বা ছাগলে রূপান্তরিত হয়। ছবিটিতে ‘Metamorphic’ তত্ত্বের অবাধ ব্যবহার রয়েছে। কাফকাকে দূরে সরিয়ে রেখেও আমরা ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনিসমূহে এর সূত্র পেয়ে যাব। শিবকে ক্রমাগত অপমান ও কুবাক্য প্রয়োগে সতীর দেহত্যাগ, শিব কর্তৃক দক্ষের মুণ্ড ছেদন তথা দক্ষের ‘অজমস্তক’ লাভ— সে ঘটনারই ইঙ্গিত দেয়। গোয়া ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে যে অবগত ছিলেন তা তাঁর বন্ধুকে লেখা চিঠিপত্র থেকে জানা যায়,

The practice of human transformation that we see in the various stories of the ancient Indian scriptures undoubtedly finds incomparable resources.

(Selected Letters)

ডাইনিদের বিশ্রাম, ১৮২১ খ্রিঃ

এই চিত্র-পারম্পর্যগুলির অসংখ্য ব্যাখ্যান রয়েছে। তবে তাঁর নির্মাণ-চেতনানুসারে বলা যায়, গোয়ার এই চিত্রকর্মগুলি ছিল তৎকালীন সংস্কারযুক্ত ইউরোপীয় সমাজ-আভিজাত্যবাদকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ। সামগ্রিক প্রভুত্ববাদকে তিনি অস্বীকার তো করেছেনই এবং শাসক তথা প্রচলিত ব্যবস্থার প্রশ্নহীন আনুগত্যবাদকেও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আক্রমণ করেছেন। গোয়ার ছবিগুলি নিজেদের স্বতন্ত্র আঙ্গিক প্রকাশ করতে সক্ষম; কীভাবে তিনি মানবিক আচরণ এবং সংবেদনশীল অবস্থাগুলি, এমনকি তাদের সুশৃঙ্খল বা বিশৃঙ্খলাজনিত চূড়ান্তভাব, মার্জিত এবং উদ্বেগজনক প্রতিকৃতির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। নাটকীয় এবং স্মৃতিসৌধের ইতিহাস চিত্রগুলির অঙ্কনে একটি আশ্চর্য বিদ্রূপাত্মক, বিরক্তিকর এবং পরাবাস্তবতার ধারাবাহিক উপস্থিতি বোঝাতে এবং বর্ণনা করার জন্য কী নিরলস প্রচেষ্টা যে তিনি করেছিলেন, তা তার নিজস্ব উক্তি থেকেই বোঝা যায়— “The world is a masquerade. Face, Dress and Voice are all false. All wish to appear as what they are not, all deceive and do not even know themselves.”

অদ্ভুতভাবে বিশ শতকের লোরকার পরাবাস্তবিক উচ্চারণের সঙ্গে (Gypsy Ballads: 1928) গোয়ার অন্তর্চেতনার বৌদ্ধিক চর্চা অনেকাংশে মিলে যায়! যেখানে তিনি বলছেন— “স্বপ্নের অতল থেকে প্রতিদিন অগণন দানবের জন্ম হয়।”

বোঝা যাচ্ছে শব্দহীন চিত্র ধীরে ধীরে সাহিত্যের বাঙ্ময়তাকে শুধু স্পর্শই করেনি স্থানে স্থানে তাকে অতিক্রমও করে গিয়েছে।

এই সময়ের ইউরোপীয় রেনেসাঁ পরবর্তী চিত্রবিধি অনুসারে শিল্পকর্ম মূলত শাসন-পরিবেশের পরিপূরক হওয়া উচিত ছিল, যার অর্থ দেশের শাসকের মনোরঞ্জন উপযোগী দৃশ্যই সেখানে প্রাধান্য পাবে, এখানেও রেনেসাঁ-ধরনের সাপার-পেইন্টিং এবং তাদের কার্যকারিতার উপর নির্ভর করেই ভোজসভার নান্দনিক উপস্থাপনায় জোর দেওয়ার কথা। অথচ গোয়া এই নিয়মগুলিকে এক ফুৎকারে অগ্রাহ্য করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি ‘দুই বৃদ্ধের স্যুপ খাওয়া’ ও ‘শনির সন্তান গ্রাসের’ (১৮২০, ১৮২১) চিত্রকে কালো (এখানে খারাপ অর্থে) কৌতুকপূর্ণ রূপে অঙ্কিত করেন এবং তাতে তাঁর সাম্রাজ্যবাদী ক্ষমতাতন্ত্রের প্রতি তীব্র ঘৃণা ও ধিক্কার ফুটে ওঠে।

দুই বৃদ্ধের স্যুপ ভোজন, ১৮২০ খ্রিঃ

অন্যদিকে, প্রথম তলার চিত্রগুলি অশ্রু এবং হাসির মধ্যে বিপরীতার্থক অবস্থান নির্দেশ করেছে— Men Reading-এর মারাত্মক পরিবেশটি Women Laughing দ্বারা অদ্ভুত বৈসাদৃশ্য তৈরি করে। একইভাবে Fantastic Vision-এর পৌরাণিক দৃশ্য এবং The Fates ট্র্যাজেডির প্রতিনিধিত্ব করে, পাশাপাশি Procession of the Holy Office-এর মতো ব্যঙ্গাত্মক চিত্রকর্মের দ্বারা গোয়া মেরুদণ্ডহীন আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতি তীব্র কটাক্ষ হানেন। গঠনমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে এই চিত্রগুলি নিঃসন্দেহে বিরল উদ্ভাবনী শক্তির পরিচায়ক; বলা যেতে পারে নিজস্ব একটি ইন্দ্রিয় হারিয়ে গোয়া এই মহাজাগতিক চেতনা অর্জন করেছিলেন। অন্য অভিনবত্বটি হল সমস্ত সৃষ্টিগুলিই প্রকৃতপক্ষে এক আধিভৌতিক নিশাচরগামিতা ও একটি বিশ্বব্যাপী নিঃসঙ্গতার পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়।

 

গোয়ার তিমিরচিত্র ও তার প্রয়োজনীয়তা

এটা স্পষ্ট যে ‘Black Paintings’ সিরিজটি গোয়াকে যন্ত্রণাবিদ্ধ একজন শিল্পী হিসেবে দেখায় এবং সাধারণভাবে অসুস্থতা, বার্ধক্য তথা এক অল্পবয়সি মহিলার সঙ্গে জটিল সম্পর্কের কারণে তাঁর মনস্তাত্ত্বিক বিবর্তন ঘটে। রাজনৈতিক ক্ষমতার উত্থানজনিত কারণে প্রাণভয়, মৃত্যুমিছিল, মানুষের নৈতিক অবনমন এবং নাগরিক দ্বন্দ্বের মতো বিষয়গুলিকে সামাজিক সমস্যা বিবেচনা করে তাদের সঙ্গে শিল্পীস্বরূপ প্রজ্ঞার মাধ্যমে গোয়া তাঁর ব্যক্তিগত অস্তিত্বের লড়াইয়ের সমন্বয় সাধন সম্ভব করেছিলেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, তিমিরচিত্রগুলি সেই সময়কালে সৃষ্টি হয়েছিল যখন স্পেন একটি উদারনৈতিক সরকার (The Trienio Liberal: 1820-1823) দ্বারা শাসিত হচ্ছিল; কিন্তু তার সময়সীমা ছিল অতি স্বল্প। নিখুঁত রাজতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে শাসনতন্ত্রের আমূল পরিবর্তন ঘটে যায়। বিভিন্ন স্পেনীয় ঐতিহাসিক এই পরবর্তী সময়টিকে (১৮২৩-১৮৩৩ খ্রিঃ) বলেছেন ‘The Ominous Decade’ বা ‘অশুভের কাল’। স্পেনের গৃহযুদ্ধ পর্বে (Carlist War) যে অরাজকতার উত্থান ঘটেছিল, গোয়ার শিল্পকর্মের ছত্রে ছত্রে সেই অস্থির সময়ের ছায়া অঙ্কিত রয়েছে।

প্রথম দিকে গোয়ার সাধারণ তৈলচিত্র এবং ক্যানভাসে তাঁর সর্বোত্তম প্রতিকৃতি চিত্রগুলি (Portrait) সামাজিক মানবতার এক তাৎপর্যপূর্ণ ধারণা দেয়। তাঁদের অতি সাধারণ জীবনযাপন সমাজ-বাস্তবতার প্রতি তাঁদের বিশ্বাস ও সততার অনুভূতি প্রকাশ করে। একমাত্র দৃষ্টি-চেতনাই পারে এই সততাকে অতিপ্রাকৃতভাবে প্রকাশ করতে, গোয়ার ‘মারিয়া লুইসা ডি-পারমা’-র প্রতিকৃতি (১৭৮৯ খ্রিঃ) এই গুণাবলির একটি নিখুঁত উদাহরণ।

আত্মপ্রতিকৃতি (১৮০৯ খ্রিঃ:)

এই রকম দৃষ্টিনন্দন, সামাজিক চিত্রাঙ্কন দিয়ে শুরু করে ‘The Dog’ (1822) নামে পরিচিত ছবির ক্ষমতাহীন নির্লজ্জতা বা তাঁর Saturn Devouring (1821) চিত্রের নিরবচ্ছিন্ন ভয়াবহতা পর্যন্ত গোয়ার শৈল্পিক যাত্রা নিঃসন্দেহে তাঁর মনস্তাত্ত্বিক বিবর্তনকে যথেষ্ট দীর্ঘতর করেছিল বলেই মনে হয। ব্ল্যাক পেইন্টিংয়ের মতো এক মহাজাগতিক কেন্দ্রের কল্পনা করা এবং সেগুলির প্রয়োগ ঘটাতে যে ত্যাগ স্বীকারের প্রয়োজন ছিল— গোয়া সম্ভবত তা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

লক্ষ করলে দেখা যাবে, আমরা সর্বদাই আমাদের পছন্দসই জিনিসগুলির ক্ষতির আশঙ্কা করি এবং যে ক্ষতিটি মৃত্যুতে একেবারে নিশ্চিত তা থেকে পলায়ন করাই শ্রেয় বলে বিশ্বাস করি। কিন্তু Black Painting সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যই ছিল মানবাস্তিত্বের অভ্যন্তরে বিদ্যমান সেই আশঙ্কার মুখোমুখি দাঁড়ানো, যে পলায়নবাদকে আমরা বস্তুগতভাবে “ভালো” হিসাবে লালন করি তার অন্ধকার দিকগুলিকে চিহ্নিত করা।

কেউ কেউ পিটার পল রুবেন্সের (Peter Paul Rubens; বেলজিয়াম; সপ্তদশ শতক) ‘শনির পুত্রগ্রাস’-কে গ্রিক পৌরাণিক কাহিনি থেকে এই দৃশ্যের যথার্থ চিত্র হিসাবে বিবেচনা করেছেন। যেখানে জন্মের সময় টাইটান ক্রোনাস (রোমান পুরাণে ‘শনি’) তাঁর প্রতিটি সন্তানকে জীবিত ভক্ষণ করে। কারণ একটি ভবিষ্যদ্বাণীতে পূর্বেই বলা হয়েছিল যে তার সন্তান তাঁকে হত্যা করবে। রুবেনের ছবিটি আরও বাস্তববাদী, আরও ক্রূর, ধ্বংসাত্মক। সম্ভবত তার বীভৎসতার বোধ আরও বাড়িয়ে তুলছিল, সমাজজীবনের অন্ধকারাচ্ছন্নতাকে। কিন্তু তাতে পিতৃত্বের যে যন্ত্রণাকাতর অভিব্যক্তি, হিংস্রতার দ্বারা অশ্রুকে লুকিয়ে রাখার যে অনন্ত প্রয়াস, সেটি পরিস্ফুট হতে দেখা যায় না— যা ধরা দেয় গোয়ার তুলিতে।

‘শনির পুত্রগ্রাস’, শিল্পী: পিটার পল্ রুবেন্স

অন্যত্র শনিকে নরখাদক হিসাবে চিত্রিত করার পরিবর্তে, যন্ত্রণাদীর্ণ গোয়া কল্পনার গভীরতাগুলিকে নিমজ্জিত করে ফিরিয়ে নিয়ে আসে এক হৃদয়মত্ত টাইটানকে, এমন একটি চিত্র যা কয়েকশো বছর ধরে দর্শকদের মনে আবদ্ধ হয়ে রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন কৌতূহলে। এটি প্রায় সর্বকালের সর্বাধিক ভীতিকর চিত্র হিসাবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। কারণ চিত্রটি আলো-আঁধারি পটভূমির ব্যবহারে, কল্পনা-মিথের রহস্য এবং আবেগের মায়াবয়ব মিলে হয়ে উঠেছে অনেকখানি হৃদয়বিদারক। এর বীভৎসতার যে পৈশাচিক আবেদন তা কিছুটা হলেও নির্ভর করেছে শিল্পীর বিঘ্নিত মনন ও তাঁর অস্থির সত্তা-চেতনার ওপর। আসলে মানুষের অবদমিত ক্ষমতালিপ্সুতার প্রতিচ্ছবি হল এই চিত্রটি।

এই আলোচনার যুক্তিতে, গোয়ার ছবিটি বিশেষত ভীতিকর কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি এটি তাঁর আগের কাজগুলির পূর্ব অনুসৃত প্রকরণকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। আমরা এও দেখেছি যে গোয়ার কাজগুলিতে আলোর অনুভূমিক প্রয়োগ রক্ত-মাংসকে যেন একটি জীবন্ত মানবের হনন পূর্ণতা দান করেছে। জন বার্গারের মতে “Goya lived and observed through something near enough to total war to know that night is security and that it is the dawn that one fears. The light in his work is merciless for the simple reason that it shows up cruelty.”

গোয়া মনে করতেন ক্ষুধা শত্রু উৎপন্ন করে, তাদের পথ দেখায়— যদিও সে ভঙ্গুর ও ক্ষণস্থায়ী। এ প্রসঙ্গে বার্গার আবার একস্থানে বলছেন, “The flesh has an expression of its own features do in portraits by other painters. The expression varies according to the sitter, but it is always a variation on the as same demand: the demand for flesh as food for an appetite. Nor is that a rhetorical metaphor. It is almost literally true. Sometimes the flesh has a bloom on it like fruit. Sometimes it is flushed and hungry-looking, ready to devour. Usually and this is the fulcrum of his intense psychological insight – it suggests both simultaneously: the devourer and the to-be-devoured.”

আদতে এটি একটি রূপক এবং সে জন্যই গ্রাসকারীর আচরণের মধ্যে মাংসল বস্তুটির নিঃসাড় অভিব্যক্তি বিদ্ধ হয়। এখানে শনির পুত্রের রক্তক্ষরণ, প্রাণহীন রূপটিকে সরাসরি নির্দেশ করে।

অন্য একটি ছবি Judith and Holofernes গোয়ার নিজের নিস্তব্ধ বাড়িটির পাথরের উপরে সরাসরি আঁকা। যুদ্ধপরবর্তী জীবনে গোয়া মানুষের মধ্যে মাংসের ক্ষুধাতুর লোভ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন, সেই আতঙ্কের চিহ্নই ফুটে উঠেছে এই চিত্রে। এখানে জুডিথ  চিত্রের ধর্ষণকারীকে হত্যা করছে। যদিও সেই হত্যাকাণ্ডের শরীরে কোনও প্রকার অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে না, হিমশীতল দৃষ্টিতে প্রতিশোধের যে অসীম স্পৃহা স্পষ্ট হয় তা আদতে মানুষের টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া নিজ-অনুভূতির ছায়াচ্ছন্নতা।

জুডিথ এবং হলোফার্নেস, ১৮২২ খ্রিঃ

গোয়ার চিত্রকর্মগুলি সর্বদাই বিবিধ ক্রিয়া দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়েছে। এক পর্যায়ে এটাকে সামাজিক প্ররোচনা বলে ভ্রম হতে পারে কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যাচ্ছে এগুলি আদতে সমাজের সক্রিয় বিপরীতার্থক সহাবস্থান এবং সে কারণেই ব্ল্যাক পেইন্টিংগুলি কেবলমাত্র জীবনের অভাব উপস্থাপনের বিষয় নয়, এগুলি হল মানব অ-সত্তার উত্থান, জীবনের বিপরীতধারার নিজস্ব মৌলিক আশ্রয়কেন্দ্র (Archetypal Harbinger), ফলে তাদের অভিযোজিত স্থানগুলি কেবল যে অপূর্ণ তা নয়, আসলে সমাজ কর্তৃক সেগুলিকে শূন্য করার প্রবণতাকেই দেখানো হয়েছে। চেতনা কেবল মৃত্যুর জন্য ক্ষয় হয় না, আত্মার বিনাশও যে তাকে গ্রাস করে— সময়ের চক্রব্যূহে সেই অনতিক্রান্ত আর্তনাদকেই গোয়া বারংবার জীবন্ত করেছেন।

পরিশেষে বলা যায়, ইউরোপীয় রেনেসাঁর অন্তিম ছায়া হিসেবে শুরু করলেও, পরবর্তী সময়ে ফ্রান্সিসকো গোয়ার শিল্পরূপ পার্থিব জগতের সঙ্গে এক অপার্থিব সুরাবর্তকে সংযুক্ত করার মাধ্যমে জীবনের অসীম পরাবাস্তবতাকে যেমন স্বীকার করেছে, তেমনই তিনি শব্দহীন এমন এক বাঙ্ময় চরাচর (Wordless Euphemism) প্রস্তুত করতে চেয়েছেন— যা জীবনের বিশূন্যগামিতাকে কেবল অশ্রু দিয়েই প্রাণসঞ্চার করতে সক্ষম হবে। আর এখানেই গোয়া সমস্ত তথাকথিত প্রথা থেকে পৃথক হয়ে এক কুহেলিময় পৃথিবী নির্মাণে সফল হতে পেরেছেন।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4656 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...