কেবল ভালো ছবি তৈরি নয়, শিল্পী তৈরি করাও একজন ফিল্ম-মেকারের দায়িত্ব

"কেবল ভালো ছবি তৈরি নয়, শিল্পী তৈরি করাও একজন ফিল্ম-মেকারের দায়িত্ব" -- বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত

 

আজ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর আগে, ১৩৯৩ বঙ্গাব্দে, শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত 'সাপ্তাহিক সত্যলোক' পত্রিকার তরফ থেকে কবি ও চলচ্চিত্রকার বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সাক্ষাৎকার নিতে পৌঁছে গেছিলেন কজন গুণমুগ্ধ, সেই সময় বুদ্ধদেব মাত্র পাঁচখানি কাহিনিচিত্র তৈরি করেছেন। তাঁর সেই প্রথমদিককার চিন্তাভাবনার ছবি ধরা রয়েছে এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে। পত্রিকার পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন পত্রিকা সম্পাদক কৃষ্ণচন্দ্র ভড়, প্রতনু সাহাপ্রবুদ্ধ বাগচী। শ্রী বাগচীর সহৃদয় অনুমতিক্রমে সেই সাক্ষাৎকারটি চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম-এর জুলাই সংখ্যার স্টিম ইঞ্জিন বিভাগে পুনঃপ্রকাশিত হল।

প্রসঙ্গত বলা থাক, সদ্যোপ্রয়াত বুদ্ধদেবকে আমরা ইতিমধ্যেই শ্রদ্ধা জানিয়েছি প্রবীণ চলচ্চিত্র-নিবন্ধকার এবং সাংবাদিক চণ্ডী মুখোপাধ্যায়ের একটি নিবন্ধের মাধ্যমে।

 

সম্পাদক: এর আগে কোনো মফঃস্বলের পত্র-পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন?

বুদ্ধদেব: ঠিক এই ধরণের কাগজের কথা মনে পড়ছে না। তবে মফঃস্বল থেকে তো নানান ধরণের কাগজ বেরোয়। ফিল্ম সোসাইটিগুলোর ম্যাগাজিন থেকে কেউ কেউ নিয়েছে— তাঁদের সঙ্গে চেহারায় আপনাদের অনেকটাই মিল আছে।

সম্পাদক: আচ্ছা, আপনার ফিল্ম লাইনে আসার মূল অনুপ্রেরণাটা কী?

বুদ্ধদেব: অনুপ্রেরণা মানে… (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) এই মিডিয়ামটা যে একটা অসম্ভব বড় শিল্প মাধ্যম— এর মাধ্যমে কাজ করে অনেক কথা, যা কবিতায় বা অন্য কোনো ফর্মে বলা যায় না, তা বলা যায়। কেবলই তাই মনে হয়েছে এখানে আমি অনেক কিছু কাজ করতে পারি।

প্রবুদ্ধ: আপনি ঠিক কীভাবে ফিল্ম-লাইনে ঢুকলেন?

বুদ্ধদেব: না, ঢুকলাম মানে… আমি ছোটোবেলা থেকেই ছবি দেখতাম, ভালবাসতাম এবং বুঝতাম যে এটা একটা দারুণ সম্ভাবনাময় মাধ্যম— এখানে সাংঘাতিক কিছু কাজ করা যায়। তখনই আমি… (এ ব্যাপারে আগ্রহী হই)। আমি মফঃস্বল শহরে থাকতাম— সব সময় ভাল ছবি দেখার সুযোগ পেতাম না…

সম্পাদক: আপনি কোথায় থাকতেন?

বুদ্ধদেব: আমি থাকতাম হাওড়ায়— বোটানিকাল গার্ডেনের কাছেই।

প্রতনু: কোনো বিদেশী চিত্র-পরিচালকদের মধ্যে কারোর ফিল্ম-ভাবনা কি আপনাকে প্রভাবিত করেছে বলে মনে করেন?

বুদ্ধদেব: আমি ধরো ক্লাস টেন-ইলেভেন পর্যন্ত কোনো ভালো বিদেশী ছবি দেখার সুযোগ পাইনি— চার্লি চ্যাপলিন বা এ ধরণের ছবি বাদ দিয়ে। তখন ঐ হলে যে সমস্ত সাধারণ ছবি আসতো তা’ই দেখতাম। কিন্তু ঐ সময়টায় ফিল্ম-সোসাইটি মুভমেন্ট বেশ ভালভাবে গড়ে উঠছে— ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি, সিনে ক্লাব ভাল ভাল ছবি আনছে। এর একটু পরে আরেকটু বড় হয়ে আমি বার্গম্যান, ফেলিনি দেখেছিলাম— অসম্ভব ভাল লেগেছিল। সব সময় যে সবটা বুঝতাম তা নয়। তবে অনেক ছবি একাধিকবার দেখার সুযোগ হয়েছে— দেখে দেখে বুঝতাম৷ এরপর কলেজে ভর্তি হলাম— আগের চেয়ে বেশী আলোচনা হতো। আস্তে আস্তে স্টুডিয়ো পাড়ায় যেতে লাগলাম— শ্যুটিং-ট্যুটিং দেখতাম।

প্রবুদ্ধ: আপনি কোন কলেজে পড়তেন?

বুদ্ধদেব: স্কটিশ চার্চ কলেজ।

প্রবুদ্ধ: আচ্ছা, আপনার ফিল্মে নায়ক-নায়িকার ভূমিকায় অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন কোন দিকের প্রতি বেশী গুরুত্ব দেন?

বুদ্ধদেব: দেখো, ফিল্মে সবসময় যেটা হয় যে, ধরো তুমি যখন একটা script লেখো তখন কোন কোন মুখগুলি তুমি বেছে নেবে সেটা তোমার মাথায় থাকে— তাদের হাঁটাচলা, বাচনভঙ্গী, তাকানো, মুদ্রাদোষ সবগুলিই তুমি কাজে লাগাতে চাও— তারপর সেইরকম চেহারা খুঁজে নিতে হয়। এখন ধরো, খুঁজতে গিয়ে সবসময়ে যে তুমি যেরকম চাইছো সেই রকমটা পাচ্ছো তা নয়— তার কাছাকাছি পেলেও তখন তোমার চলে যায় এবং সেক্ষেত্রে নিজের মতো করে কিছুটা গড়ে নিতে হয়৷ আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়, আমার ভাবনায় যে চরিত্র আছে তার চেহারাটা যিনি ফুটিয়ে তুলবেন তাঁর তাকানো, হাঁটাচলা ইত্যাদি সমস্ত মিললো কিনা, অভিনয়-ক্ষমতার চেয়েও এদিকটা আমি বেশী নজর দিই। আমার ছবিতে নিশ্চয়ই খেয়াল করেছো প্রায় ৭০% যাঁরা অভিনয় করেন তাঁরা নতুন মুখ মানে, যাঁদের স্বল্পখ্যাতি আছে অথবা একেবারে প্রথম অভিনয় করছেন।

এবং, এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা যে একজন film-maker এর উদ্দেশ্য কেবলমাত্র ভাল ছবি তৈরী নয়— সেই সঙ্গে শিল্পী তৈরী করাও তাঁর দায়িত্ব এবং এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ সব থেকে ভালভাবে face করেছেন আমাদের দেশে সত্যজিৎ রায়। এমন অনেক non-actor-দের নিয়ে তিনি অদ্ভুত সুন্দর ছবি তৈরী করেছেন যেগুলো আজকে পর্যন্ত দেখলে আশ্চর্য হতে হয়৷ এমন অনেকে আছেন যাঁরা ওঁর ছবিতে অভিনয় করার পর আর কোথাও অভিনয় করেননি আবার এমনও আছেন যাঁরা ওঁর ছবিতে অভিনয় মাধ্যমেই পরবর্তীকালে ল্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাই আমার মনে হয় সত্যিই এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আর দেখো, ভাল অভিনেতা নিয়ে তো ফিল্ম করাই যায়— তাঁরা তাঁদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, ইন্টেলিজেন্স দিয়ে চরিত্রকে তাঁদের মতো করে ফুটিয়ে তুলবেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে পরিচালকদের কৃতিত্ব অনেকখানি কম। আর ব্যাপারটা এমন নয় যে, নতুনদের নিয়ে ছবি করলে তা চলবে না কিংবা পুরোনোদের নিয়ে করলে চলবে।

সম্পাদক: আচ্ছা বুদ্ধদেববাবু, এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসছি। কবিতা ও ফিল্প এই দুটি শিল্পমাধ্যম তো আমাদের চোখে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বলে মনে হয় অথচ আপনাকে আমরা এই দুটি মাধ্যমে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করতে দেখতে পাই— আপনি কি এই দুই মাধ্যমের মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পেয়েছেন?

বুদ্ধদেব: দেখুন, দুটো মিডিয়াম সম্পূর্ণ আলাদা— দুটোর প্রকাশভঙ্গিই দুরকম। ফলে কবিতা কবিতাই, ফিল্ম ultimately ফিল্ম। তবে আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কি জানেন, দুটো শিল্প মাধ্যমই আমাকে ঐ দুটো মাধ্যমে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। এই যেমন ধরুন, গত দেড় বছর আমি কোনো ফিল্ম করিনি কারণ বিষয় পাচ্ছি না— কিন্তু এই যে সময়টা এতে যে আমি কবিতা যথেষ্ঠ লিখতে পেরেছি তা নয়। মানে ব্যাপারটা হচ্ছে একটা  mental dissatisfaction আমাকে কবিতাও লিখতে দিচ্ছে না। তবে কবিতার অনেক technical ব্যাপার যেমন ফর্মের ব্যাপারে ফিল্ম অনেক সময় সাহায্য করে আবার ফিল্ম-এ অনেক সময়েই কবিতার নানা ব্যাপার চলে আসে। যেমন ধরুন, একজন কবি বা সাহিত্যিকের মূল গুণ হলো কত কম শব্দ ব্যবহার করে তিনি তাঁর মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবেন। তেমনি, একজন পরিচালকের ক্ষেত্রেও কত কম শট ব্যবহার করে তিনি একটি বক্তব্য ফুটিয়ে তুলতে পারবেন৷ এই কম্প্যাক্টনেস, এটা একটা বড় ফ্যাক্টর। যেমন, অনেকে আমাকে বলেন যে আমার ফিল্মে নাকি কবিতার কথা চলে আসে— এটা তো হতেই পারে— এটা খুব স্বাভাবিক। একজন painter একটা ছবি আঁকলেন; এখন একজন film maker তাতে inspired হয়ে হয়তো বা না জেনেই তার কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছেন। আসলে সব শিল্পমাধ্যমগুলির মধ্যে একটা basic মিল আছে— এমনিতে সেটা চোখে আসে না।

প্রতনু: আচ্ছা, ঐ যে বললেন যে আপনার ফিল্মে কবিতার ছায়া দেখা যায় অনেকে বলেছেন— এটা কি সচেতনভাবে এসেছে বলে আপনার মনে হয়?

বুদ্ধদেব: সচেতনভাবে তো এগুলো আসে না— সে তো আগেই বলেছি; হয়তো না জেনেই আমি ওরকম একটা কাছাকাছি জায়গায় পৌঁছে গেছি।

প্রতনু: ফিল্মের জগতে আসার আগেই কবি হিসাবে আপনি প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছেন। এখন, আপনি যদি ফিল্ম লাইনে না আসতেন কবি হিসেবে কি আপনাকে আরও বেশী করে পেতাম?

বুদ্ধদেব: হয়তো।

প্রবুদ্ধ: আচ্ছা, আধুনিক বাংলা কবিতাকে আজকে তো নানান ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সম্মুখীন হতে হচ্ছে— কেউ কেউ বা বলছেন দুর্বোধ্য, বলছেন অবোধ্য, কেউ কেউ বা বলছেন পাগলামি ইত্যাদি, ইত্যাদি— একজন কবি হিসেবে এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

বুদ্ধদেব: দেখো, এসব নতুন কিছু নয়— এসব আগেও ছিল। রবীন্দ্রনাথের কবিতা নিয়েও সজনীকান্ত দাশ বলে গেছেন। এসব নিয়ে কোনো আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। যাঁর কবিতা ভাল লাগবে না তিনি পড়বেন না— যাঁর ভাল লাগবে তিনি পড়বেন— তাঁদের জন্যই কবিতা লেখা।

প্রবুদ্ধ: এ ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে একমত। কিন্তু যাঁরা কবিতা ভালবাসেন তাঁরা বলছেন যে, এত কষ্ট করে যদি কবিতা পড়তে হয় তাহলে পড়বো না।

বুদ্ধদেব: পড়বেন না! তাতে কী এসে গেল? তাতে কার ক্ষতি হচ্ছে? তিনি কবিতা পড়লেও বড়লোক হয়ে যাবেন না বা, না পড়লেও কবিরা কবিতা লেখা বন্ধ করে দেবেন এমন নয়। কেউ যদি কবিতা না পড়ে— ধরো এমন আইন করা হলো যে কবিতা পড়লে ফাইন করা হবে— তাহলে কি কবিরা কবিতা লেখা ছেড়ে দেবেন? কবিরা নিজেদের তাগিদে নিজের মতো করেই কবিতা লিখে যাবেন। তুমি বুঝলে ভাল— না হলে কিছুই করার নেই।

প্রবুদ্ধ: কিন্তু অনেকে আবার এমন অভিযোগ করেন যে অমুকের কবিতা বোঝা যায়, আবার অমুকের কবিতা একেবারেই বোঝা যায় না— এই যে একটা পার্থক্য রয়ে যাচ্ছে এ ব্যাপারে আপনার কী মনে হয়?

বুদ্ধদেব: দেখো, একেকজন একেকরকম ভাবে কবিতা লিখতে চান। তুমি যেভাবে লিখবে আমি হয়তো সেভাবে লিখবো না। মানে, দুজনের প্রকাশভঙ্গী আলাদা। এখন তোমার প্রকাশভঙ্গী আরেকজনের কাছে না’ও গ্রহণযোগ্য মনে হতে পারে। এটাই ব্যাপার— আর তুমি যেটা বললে কেউ যদি দুর্বল কবি হন— তাঁর কবিতা অনায়াসেই হারিয়ে যাবে। “সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি”— এ তো জানোই। আরেকটা ব্যাপার, কবির তো কোনো দায় নেই— তাঁর একটুকরো কাগজ আর পেন হলেই চলে।

সম্পাদক: দায় মানে কি আপনি সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা বলছেন?

বুদ্ধদেব: না, না, আমি বলছি আর্থিক দায়বদ্ধতার কথা। একজন ফিল্ম-মেকার, তাঁর তো আর্থিক দায় থেকেই যায়। সে যার টাকা নিয়ে ছবি করছে ছবি না চললে তো তাকে জবাব দিতে হয়। কিন্তু একজন কবি যে কোনো সময় এক টুকরো কাগজ আর কলম যোগাড় করতে পারেন। এই তো আমি একসময় খামে চিঠি আসতো তার উপরেই কবিতা লিখেছি— investment is nil কাজেই তোমার ভাল লাগলো কি লাগলো না…

সম্পাদক: আচ্ছা তাহলে এই আর্থিক দায়বদ্ধতা নেই বলেই কি এই স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ আসছে?

বুদ্ধদেব: এ জিনিষ এখন সব জায়গায়। ফিল্ম-লাইনেও এ জিনিষ ঢুকে পড়েছে। একটা সময় ছিল যখন সবাই কবিতা লিখতো— বাঙালীর ছেলে হয়ে কবিতা লেখেননি এমন তো পাওয়া যায় না। এখনো তেমনি একটু ইন্টেলিজেন্ট— হলেই সবাই ফিল্ম-লাইনে আসতে চাইছে। এর ফলে এমন অনেক লোক যাঁরা এসব ব্যাপারে অনভিজ্ঞ তাঁরা ফিল্মের জগতে এসে পড়েছেন।

প্রতনু: এবার আপনার নিজের ফিল্মের প্রসঙ্গে আসছি। আপনার তিনটি ছবি ‘দূরত্ব’, ‘গৃহযুদ্ধ’, ‘অন্ধিগলি’তে আপনি কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলির একটা ধারাবাহিক ক্রমবিবর্তন দেখাতে চেয়েছেন— আপনি কি মনে করেন শেষ ছবি ‘অন্ধিগলি’তে এই বিবর্তনের পরিণতি ঘটেছে?

বুদ্ধদেব: দেখো, আমি মনে করি ঐ তিনটি ছবির তিনটি স্তরে যেভাবে কাজ করেছি তাতে এই মুহূর্তে অন্ততঃ ঐ ব্যাপারে কাজ করার আর কোনো ইচ্ছা আমার নেই। আমার দিক থেকে মনে হয়েছে, ঐ তিনটি ফিল্মে আমি যা দেখিয়েছি— দেখাতে চেয়েছি— তা ভুল হোক বা সঠিক হোক আর কিছু করার প্রয়োজন আছে।

সম্পাদক: আচ্ছা, এই ফিল্ম তিনটি তৈরীর পিছনে আমার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক জীবনের অবক্ষয় নিশ্চয়ই আপনাকে নাড়া দিয়েছে?

বুদ্ধদেব: মানে, কোনো একটা বিশেষ ঘটনা তো নয়, একটা ফিল্ম তৈরীর সময় আপনাকে গোটা ব্যবস্থাটা নিয়েই ভাবতে হবে। তবে দেখুন, একজন বামপন্থী মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবীর যে সমস্যা— তার যে confusion, যে contradiction এগুলো আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। অন্ততঃপক্ষে একটা সময় দিয়েছিল। আমি দেখেছি যে, ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে এই ধরণের বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অনেক সময়ই স্পষ্ট নয়। এই যে মন্দার, বিজন বা হেমন্ত এরা প্রত্যেকে আমার দেখা— এদের আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি— ভেবেছি।

সম্পাদক: অবশ্য পাশাপাশি আমরা এটাও ভেবেছি যে, আপনি যে কেবল অবক্ষয়ই দেখাতে চেয়েছেন এমন তো নয়— অবক্ষয়ের যে কী পরিণতি সেটাও আপনি স্পষ্টই দেখিয়ে দিয়েছেন— তাই নয় কি?

বুদ্ধদেব: হ্যাঁ। যেমন ধরুন, এমন অনেক প্রশ্ন আমাকে অনেকেই করেছেন যে, আপনি কেন এমন negative চরিত্র নিয়ে ছবি করেছেন? বামপন্থী মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা কি সবসময়েই এতটা নেগেটিভ? না, তা হয়তো নয়। আমার বক্তব্য হচ্ছে যে, কেন আজ পর্যন্ত ভারতবর্ষে একটা আন্দোলন দানা বাঁধতে পারলো না! এবং আমি সমস্ত character কে expose করিয়ে এই কথাটাই বলতে চেয়েছি যে, কেন আমরা হেমন্ত হবো না— কারণ, হেমন্তদের শেষ পর্যন্ত সবাই ছেড়ে যায়। হেমন্ত তার অতীতকে অস্বীকার করে চেয়েছিলো বম্বেতে গিয়ে নিজের মতো করে ভালভাবে বাঁচতে— পারলো কি? পারলো না।  অতীত বর্তমানকে ঐভাবে উপেক্ষা করে বাঁচা যায় না— বাঁচতে গেলে কতকগুলো লড়াই তাকে করতেই হয়। সেটা যে সবসময় রাজনীতিই এমন নয়। এই যে, আপনাদের কাগজ চালাতে গিয়েও তো ultimately একটা struggle চালাতে হচ্ছে। ঐ যে ঠিক, যে গল্পের ব্যাপারটা আমি ভাবছিলাম— একজন লোক, যে সাহিত্য-লেখালেখি এসব ব্যাপারে আগ্রহী। কিন্তু খুব একটা কিছু করতে পারেনি কিন্তু তার একটা প্রেস আছে। সেখান থেকে সে একটা কাগজ বার করে— প্রয়োজনে সে বিজ্ঞাপনও ছাপে, জাবদা খাতাও ছাপে আবার নিজের কাগজও ছাপে। Basically সে সৎ এবং একেবারে non-political element— কিন্তু ঐ কাগজটা বার করতে গিয়ে সে দেখতে পেল যে তাকে কিছু সত্যি কথা বলতেই হচ্ছে— এই সত্যি কথা বলতে গিয়ে সে একটা স্ট্যান্ডস নিয়ে ফেলছে যা আবার অনেকের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। অথচ কাগজটায় তার কোন লাভ হয় না, তার কর্মচারীরা তাকে বলে, কী হবে এই কাগজ ছেপে— কলকাতায় কত বড় বড় কাগজ, কি সুন্দর ছাপা— ঝকঝকে ছবি— এ সমস্ত শুনলে সে রেগে যায়। এরকমই একটা ব্যাপার। এই যে সে একটা স্ট্যাণ্ডস নিচ্ছে সেটা যে কোনো কারণেই হোক অন্যের স্বার্থে আঘাত করছে— কিন্তু হেমন্ত, বিজন বা মন্দার একেবারে পলিটিকাল লোক হয়েও এই স্ট্যান্ডস নেবার কথা ভাবে না— তারা ওসব চিন্তা তো করেই না উপরন্তু বলে ওসব ভুল। ফলে তারা নিজেদের ঘরের দরজা-জানালাগুলো বন্ধ করে রাখতে চায়— কিন্তু দরজা-জানালা বন্ধ ঘরে দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যাওয়া ছাড়া  আর কিছুই থাকে না। Ultimately ‘গৃহযুদ্ধে’ বিজনকে আমি দেখতে পাই দরজা-জানলা বন্ধ একটা ঘরের মধ্যে— তার পাশে তখন কেউ নেই, এমনকি নিরুপমাও তাকে ছেড়ে গেছে। ‘অন্ধিগলি’তেও এরকম একটা সিন আছে— হেমন্ত একা ছুটছে, পাশে কেউ নেই শুধু কতকগুলো উঁচু উঁচু বাড়ীর দেওয়াল, তাকে ঘিরে রয়েছে— এটাই তো আমারও কথা।

সম্পাদক: তার মানে আপনি একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই ফিল্মগুলো করেছেন?

বুদ্ধদেব: না, ঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে… (কিছুক্ষণ থেমে) মানে, অবস্থাটা অনেকটা আপনাদেরই মতো— আপনারাও একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে কাজ করতে চান— আমিও চাই। এখন কাজ করতে গেলে কিছু কথা বলতেই হয়। ব্যাপারটা হচ্ছে, একটা safegames— লাঠিও ভাঙবে না সাপও মরবে— এই খেলা বেশীদিন খেলা যায় না। একটা সময় আসে যখন আপনাকে একটা স্ট্যান্ডস নিতেই হয়। ব্যক্তি মানুষ হিসাবে আপনি তা চান বা না চান— নিজের গায়ে এক সময় আঁচ এসে পড়েই আর ঠিক তখনই এমনটা ঘটে। আমার বক্তব্য হল এই-ই।

সম্পাদক: আচ্ছা, এই যে একটা রাজনৈতিক সামাজিক অধঃপতন বা অবক্ষয়  যেটা আমাদের জীবনকে ঘিরে ফেলছে অথচ এ ব্যাপারে ব্যাপক জনসাধারণকে  সজাগ করার ক্ষেত্রে সচেতন সাহিত্যিক-কবি-বুদ্ধিজীবীরা অধিকাংশই খুব একটা বিশেষ ভূমিকা নিচ্ছেন না— এ ব্যাপারে আপনার মত কী?

বুদ্ধদেব: দেখুন, এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত দায়-দায়িত্বের ব্যাপার। যিনি এই দায়িত্ব পালন করতে চাইবেন তিনি করবেন— যিনি চাইবেন না তিনি করবেন না— এ ব্যাপারে আমি আপনাদের কী বলব বলুন!

সম্পাদক: সপ্রসঙ্গ আপনাকে আরেকটা কথা জানাতে চাই এই যে সম্প্রতি বিহারের আরোয়ালে নারকীয় গণহত্যা হয়ে গেল— এ নিয়ে সমস্ত কাগজে, পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে— আমরাও এ নিয়ে লিখেছি। প্রায় প্রত্যেকেই জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এর তুলনা করেছেন। অথচ, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পর রবীন্দ্রনাথের মত একজন ব্যক্তিত্ব ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা সবিস্ময়ে দেখলাম যে আমাদের বুদ্ধিজীবী মহল এ ব্যাপারে একেবারে নীরব। এঁদের মধ্যে অনেকেই তো বড় বড় খেতাব-উপাধিধারী। কিন্তু তাঁরা কি পারতেন না তাঁদের রাষ্ট্রপ্রদত্ত সম্মানটুকু পরিত্যাগ করতে? তাহলে আজকে আমাদের মধ্যে একজন বুদ্ধিজীবীও কি নেই যিনি এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে ভীষণভাবে গর্জে উঠতে পারেন?

বুদ্ধদেব: (কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে) সত্যিই এটা খুব বড় ব্যাপার আপনারা ভেবেছেন। (কিছুক্ষণ থেমে) কিন্তু আমি এ ব্যাপারে কী বলব বলুন তো— কীই বা বলতে পারি— এ ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই।

প্রতনু: এবার আমরা অন্য প্রসঙ্গে আসছি। আচ্ছা টিভি-ফিল্ম এবং সাধারণ ফিল্ম এদের মধ্যে পরিচালনাগত ও উপস্থাপনগত কোনো পার্থক্য আছে কি?

বুদ্ধদেব: পার্থক্য মানে— দুটোই সিনেমা। তবে টিভি-ফিল্মের ক্ষেত্রে কিছু কিছু টেকনিক্যাল ব্যাপার আছে। যেমন, ক্যামেরা বসানো composition, lighting এইসব। যেমন ধরো, একটা টিভি ফিল্মে অনেকগুলো night scene আছে। এখন এটা টিভির দর্শক ঠিক বুঝতে পারেন না— আবার খুব বেশী আলো থাকলে  সেটা আর night থাকে না, এইরকম কিছু কিছু difficulties থাকে। তারপরে ধরো framing-এর ব্যাপার যার মধ্যে long-shot, close-shot-এর সমস্ত ব্যাপার এসে পড়ে। এই আর কি!

প্রবুদ্ধ: আচ্ছা, এবার আমার প্রশ্ন এই যে, সুস্থ রুচির ভালো ছবি তৈরীর ক্ষেত্রে বর্তমান রাজ্য সরকারের ভূমিকা, নীতি এবং উদ্যোগ সম্বন্ধে আপনার ধারণা কী?

বুদ্ধদেব: দেখো, আমার মনে হয় এক সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ ব্যাপারে দারুণ ভালো স্ট্যান্ডস নিয়েছিল— অনেক ভাল ছবি সে সময়ে তৈরী হয়েছিল। আমি বেশ কয়েকবছর আগের কথা বলছি— সে সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মন্ত্রী ছিলেন। কিছু খারাপ ছবিও অবশ্য হয়েছে। কিন্তু এটা তো হতেই পারে একটা স্রোত যখন আসে তখন সেই স্রোতের জলে অনেক দূষিত জিনিষ ভেসে আসে। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক, স্রোতটা আসা খুব দরকার ছিল। সে সময় বুদ্ধদেববাবু এ ব্যাপারে একটা বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন বাংলা ছবিকে বড় জায়গায় পৌঁছে দেবার জন্য এবং এটা তিনি খুব successfully করতে পেরেছিলেন। কিন্তু তারপরে আমি জানি না, এটা সরকারী নীতি কিনা। নতুন করে আর কোনো ছবি করার কথা তাঁরা ভাবেননি। বা ভাবলেও আমি অন্ততঃপক্ষে জানি না। তবে এটা কিসের জন্য হয়নি, কেন হয়নি আমি বলতে পারবো না। আশা করি, তাঁরা এ ব্যাপারে আবার ভাববেন, আবার ছবি করবেন। দ্বিতীয় কথা, অনেক কিছুই হয়েছে তবে, অনেকক্ষেত্রেই সেগুলো বড্ড বেশী শহরকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। যেমন ধরুন আমার একটা proposal ছিল, বিভিন্ন মফঃস্বল শহরে যে সমস্ত রবীন্দ্রভবন আছে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে সেগুলোকে যদি একটু রিনোভেট করা যায় তবে রেগুলার সেখানে ভাল ছবি দেখানো যায়— ‘নন্দন’ তো কয়েক কোটি টাকার ব্যাপার। তাছাড়া শহরের দর্শককে বেশী বেশী করে ভাল ছবি দেখালেই যে ভাল ছবির দর্শক গড়ে উঠবে এমন নয়। বরং গ্রামে- মফঃস্বল শহরে ভাল ছবি দেখানোর ব্যবস্থা অর্থাৎ বিকেন্দ্রীকরণ করলে মনে হয় ভাল হয়।

প্রবুদ্ধ: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগকে সর্বস্তরের চলচ্চিত্রকর্মী এবং এই মিডিয়ামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা কীভাবে গ্রহণ করছেন?

বুদ্ধদেব: সবাই ভাল ভাবে নিচ্ছেন— appreciate করছেন। দেখো, একটা সরকারী নীতি যখন আসে তখন তার পক্ষে-বিপক্ষে— অনেকরকম বক্তব্য থাকে। কিন্তু দেখতে হয় সেটা ultimately successful কিনা অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষের সমর্থন পাচ্ছে কিনা। তো, এক্ষেত্রে দেখা গেছে তা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমালোচনা হয়েছে— অনেক সময় হয়তো সমালোচনার কারণও ছিল কিন্তু overall যে impact সেটা অত্যন্ত পজিটিভ। এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই activity, এটা নিয়ে ভারতবর্ষের ওয়াকিবহাল মহল তো বটেই বিদেশে পর্যন্ত এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে— আমি জানি বিদেশে ঐ সমস্ত ছবি West Bengal Govt-এর সম্মানকে বহুগুণে বাড়িয়েছে। কিন্তু এই উদ্যোগ থেকে থাকলো কেন? এটা নিয়ে আবার ভাবা যেতে পারে, আবার কাজ করা যেতে পারে।

প্রবুদ্ধ: আমরা আবার অন্য প্রসঙ্গে যাচ্ছি। আচ্ছা, আমাদের দেশের শিক্ষাগত যে দুরবস্থা, সাধারণ মানুষের চিন্তাভাবনা এত সীমায়িত যে, সূক্ষ্ম চিন্তাভাবনা, গভীর ধ্যানধারণা নিয়ে এই ধরণের আর্ট ফিল্ম বা গুড ফিল্ম তৈরী করলে তা বেশীর ভাগ মানুষের কাছেই বোধগম্য হয় না। সেক্ষেত্রে সর্বজনবোধ্য সাধারণ entertaining film-এর নিশ্চয়ই একটা ভূমিকা আছে?

বুদ্ধদেব: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই ভূমিকা আছে।

প্রবুদ্ধ: আপনি ঐ ধরণের কোনো ফিল্ম করার কথা ভেবেছেন?

বুদ্ধদেব: আমি আমার মতো করে ছবি করতে চাই এবং আমি চাই সে ছবি দর্শক দেখুক। যদি না দেখে, আমি নিশ্চয়ই দুঃখ পাবো। কিন্তু কোন ছবি জনপ্রিয় হবে বা কোন ছবি হবে না— এটা কেউ আগে বলতে পারে না। তাহলে সবাই সেই ভাবেই ছবি করতো।

প্রবুদ্ধ: যেমন ধরুন বেশ কয়েকবছর আগে উত্তম-সুচিত্রা’র যে সমস্ত ছবি হতো— খুব গভীর কোনো চিন্তাভাবনা নেই অথচ নিম্নরুচির এমনও নয়। মোটেই উপর খুব entertaining— আমি বলতে চাইছি এই ধরণের ছবির কথা।

বুদ্ধদেব: হ্যাঁ, ঐ ধরণের ফিল্ম করার জন্যও যোগ্যতা দরকার হয়। তাছাড়া, উত্তমকুমার সুচিত্রা সেনের একটা বক্স ছিল— দর্শক তাঁদের দেখতে চাইতেন, ভালবাসতেন, কাজেই ছবি চলতো। কিন্তু আজকে উত্তমের পর সে রকম অভিনেতা কৈ!

প্রতনু: আচ্ছা, উত্তমকুমারের মৃত্যুর পর বাংলা ছবির এই যে চরম সঙ্কট এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

বুদ্ধদেব: উত্তমকুমারের মৃত্যু নিশ্চয়ই একটা বড় ঘটনা। সেই সঙ্গে আরো একটা ব্যাপার কী জানো, একটা ভাল গল্পকে সুন্দরভাবে represent করা— ভাল অভিনয় দিয়ে, ভাল direction দিয়ে, technical brilliance দিয়ে একটা ছবি সুন্দর করার যে যোগ্যতা সেটা অনেকাংশেই নেই।

প্রতনু: কিন্তু পরিচালকদের অভিযোগ ভাল বিষয় নেই বা অভিনেতা নেই; তাহলে এক্ষেত্রে তাঁরা তাঁদের ঘাটতি স্বীকার করছেন না বলুন?

বুদ্ধদেব: হ্যাঁ, তাই তো বললাম— যোগ্যতার অভাব। যার জন্য অনেকক্ষেত্রেই আজ দেখা যাচ্ছে অত্যন্ত খারাপ মানের ছবি হচ্ছে।

প্রবুদ্ধ: আমার তো মনে হয় ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ জিনিষ ঢোকানো হচ্ছে— তাই নয় কি?

বুদ্ধদেব: না, ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ কিছু খারাপ করে না— এটা অক্ষমতা। জানলে ভালো commercial ছবিও করা যায়— তপনবাবু (তপন সিংহ) করেননি? ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ”আপনজন’, ‘বালিকাবধূ’ এগুলো কত সুন্দর ছবি— এগুলো তো চলছে। এ সব ছবিগুলির হয়তো খুব একটা বড় মূল্য নেই— এগুলো তাৎক্ষণিক। কিন্তু এগুলোরও দরকার আছে। সবাই যে একেবারে serious ছবি দেখবেন এমন নয়— আর তাছাড়া যাঁরা serious ছবি দেখবেন তাঁরা তো ভাল commercial ছবিও দেখতে পারেন৷ সুতরাং এ সব ছবি করতেও যোগ্যতা দরকার হয়।

প্রতনু: আচ্ছা, আমরা শুনেছি যে, আপনি নাকি খুব তাড়াতাড়ি ছবি শেষ করেন?

বুদ্ধদেব: হ্যাঁ, একবার নেমে পড়লে আর দেরী হয় না। এই যে এখনও, আমি কিছু কাজ করছি কিন্তু, বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলছি। তাছাড়া, তাড়াতাড়ি না করলে খরচাও বেড়ে যায়— এ তো ঠিক ট্যাক্সির মতো, ননস্টপ গেলে মিটার কম উঠবে, আর থেমে থেমে গেলে বেশী উঠবে (হাসতে হাসতে)।

সম্পাদক: আমাদের শেষ প্রশ্ন, আপনি কথা প্রসঙ্গে বলেছেন যে আপনি গত দেড় বছর কোনও ছবি করেননি৷ আমাদের কাছে এটা খুব বেদনাদায়ক ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে— এর কারণ কি শুধু বিষয়ের অভাব না অন্য কিছু?

বুদ্ধদেব: মূলতঃ বিষয়ের অভাব। অন্যান্য কিছু কিছু কারণ আছে তবে সেসব নিয়ে এখানে আলোচনা করা যাবে না। তবে আমি খুব শিগগিরই কাজ আরম্ভ করবো।

 


*বানান অপরিবর্তিত

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4650 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Trackback / Pingback

  1. কোভিড-১৯ পরবর্তী মধ্যবিত্তের সঙ্কট – ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

আপনার মতামত...