সঞ্জয় ঘোষ

পাঁচটি কবিতা | সঞ্জয় ঘোষ

পাঁচটি কবিতা

 

সাদা হাসপাতাল

একটা সাদা হাসপাতাল গড়ে উঠছে
এই শূন্য বায়ুস্তরে

যার দুপাশে বাখের সঙ্গীতভরা থাম

তার ছাদের কৌণিক রডে বাঁধা আছে
পুরনো ব্রিজের পরাজিত হাড়

পোড়া ধোঁয়ার নিষ্পাপ মজ্জা

সেইসব রডেদের মৃত্যুভয় আমাকে আর গ্রাহ্য করে না

তার সিঁড়ি ধরে অসংখ্য পিপীলিকাবৃন্দ
কোন ভূষণ্ডির স্বর্গে ওঠে নামে, পিছলে যায়
সেইসব পিঁপড়েদের ধরে ধরে
আমি সাদা হাসপাতালে ভর্তি করি
ভর্তি করি    ছেড়ে দিই    ভর্তি করি

হাসপাতালের বেডে শুয়ে স্নায়ুতে পিঁপড়ের ঘ্রাণ
আমায় সুস্থ করে, আমাকে শেষ অবধি মুক্তি দেয়
আমি দৌড়তে দৌড়তে        খোঁড়াতে খোঁড়াতে
নীল ঘোড়াদের আস্তাবলে ঢুকে পড়ি
যার ভেতরে তির্যক সোনালি আলো,

ভাঙা আয়নার ছায়া

একদিন দমকল ফুরিয়ে যায়
দৃশ্যের ভেতরের দৃশ্য

আমার চুলিমুঠি শূন্যে তুলে ধরে

চোখের বাইরের আর একটা চোখ

অর্জুনকে বোকা বানায়

হাসপাতালের দেওয়াল সাদা থেকে লাল হয়
লাল থেকে সাদা হয়        সাদা থেকে আবার লাল হয়

 

অন্ধস্কুলের হাওয়া

অন্ধস্কুলের হাওয়া আমি মুঠিতে পুরি
আমার সমস্ত রাত মৃতদেহ স্পর্শ করে কাটে
কেউ আসেনি আমায় ছুঁতে
কেউ থাকেনি আমার গৃহে

অশ্বপৃষ্ঠে বসে আমি বৃক্ষ চিনলাম
নদীর অক্ষর থেকে আমার ভাষাশিক্ষা
কেউ কি আমায় রক্তাক্ত বদ্ধভূমি দেখিয়েছিল
কেউ কি আমার করতল বেগুনি হ্রদে ধুইয়েছিল

সমস্ত পাখিদের শব্দ নিভে গেলে যে নীরবতা
আমি তার মধ্যে দিয়ে অবশিষ্ট সাঁকো পেরোই
কোথাও আমার জন্যে একটা এসরাজ রাখা ছিল
কোথাও আমার সামনে একটা ব্ল্যাকবোর্ড খোলা ছিল

গুহা পেরিয়ে রণনীতি ছাড়িয়ে আমি এক শান্তমূর্তি
আমার ভাঙা আয়নায় বিস্ফারিত রেখার আঁচড়
কোথাও আমাকে চিনে নেবে ক্ষুধার্ত যিশুর পেরেক
কোথাও আমাকে বুঝে নেবে বাতাসের ভাইরাস বিষাদ

 

নীল আস্তাবল

নীল আস্তাবলের ভেতরে প্রবেশ করেছি
আজ সন্ধ্যাবেলায়        নিজস্ব ডানা গুটিয়ে
সমস্ত প্রান্তরে দু একটা বাদুড় ছাড়া তখন আর

কেউ নেই কোত্থাও নেই

আস্তাবলের ভেতরে তখন দিনের মতো আলো
তার কোণে কোণে সবুজ নিওনবাতি জ্বলছে
একটা মাকড়সা নেই, একটাও চামচিকে নেই
শুধু দু চারটে নক্ষত্রের মৃত্যু প্রতিমুহূর্তে ঘটে যাচ্ছে

শব্দভেদী বাণ আমার হাতের তালুতে
কোন অন্ধমুনি জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে নীরবে
আমারও জটিল মস্তিষ্ক অঙ্ক কষে বাতাসে
কোন নিথর মথ পড়ে থাকে জীর্ণ প্রাসাদে

নীল আস্তাবল থেকে বেরিয়ে আসছি
আজ রাত্রিবেলায়        কালো পোশাক পরে
সমস্ত বাগানে দু একটা কাঠের পুতুল ছাড়া তখন আর

কেউ নেই কোত্থাও নেই

 

সবুজ দরজা

সবুজ দরজা পিঠে বেঁধে নিয়ে হাঁটছি
সামনে ভুট্টার ক্ষেত        তীব্র রানওয়ের মতো
একটা দীর্ঘ শিশু দৌড়ে গেল        দুএকটা গোলাপি

খরগোশ

সূর্যরশ্মির তিরে আমার দুচোখ বিঁধছে
প্রাচীন মানুষের শৈশব আমার কানে বাজছে

সবুজ দরজা যেন বেতালের মতো
আকুল প্রশ্নময়        দুহাতে বিস্ফারিত চকখড়ি
এক একটা বিপথগামী সাপ        দূরে প্রেমময় শৃগাল
কোনও কোনও দিন আমিও হঠকারী নাবিক
পবিত্র সারস আমায় গীতবিতান শোনায়

এই দরজা কোনওদিন জানলার সঙ্গে সহবাসে ছিল
বাতাস মশারির মতো        বিস্মৃত ধারাপাত যেন
শেষদিন বিশুদ্ধ জীবেরা নুয়ে পড়ে        নারীরাও প্রবাসে

ক্ষুৎকাতর

বাড়ির ভিতরের বাড়ি আমাকে আশ্রয় জোগায়
দরজার গায়ের শিরা উপশিরা নীল সুর জাগায়

 

নিখোঁজ অস্ট্রিচের খোঁজে

যেদিন বিকেলে আমার অস্ট্রিচ হারিয়ে গেছে
ভীড়ে জনারণ্যে        কিংবা প্রাচীন ইতিহাসে
আমি দৌড়োলাম        আমি খুঁজলাম

আমার ভেতরে ভেতরে মদ্যপায়ীর হাহাকার

রহস্যপেশা আমায় হাতছানি দিচ্ছে
নীরস অসৎ        বিকৃত রেখাচিত্রের দিকে
আমার তো সঙ্গী হবে পাহাড়ি সংঘারাম

আমাকে জাগিয়ে দেবে ফাটা ডিমের উষ্ণতা

আমার ডোরকাটা জামারা চিরে যাচ্ছে
লবণাক্ত দ্বীপে        আমার শ্রান্তি বাড়ে কমে
কোথাও পেয়ে যাব প্রিয় অশ্বযান

আমি ঠিক চিনে নেব দ্বৈপায়নের চোরাবালি

এক একটা অস্ট্রিচ খুঁজে পেলে

আমি ঠিক ফিরে আসব
হত্যাকারী নাবিকের মতো……

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4667 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...