নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগে কতটা কাজ হল

প্রদীপ দত্ত

 

 

পরমাণুশক্তি-বিরোধী সমাজকর্মী, পরিবেশবিদ

 

 

 

 

শেষ শীর্ষ সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ কমানো নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। অধিকাংশ দেশ চেয়েছিল গোটা বিশ্ব ২০৫০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যাবহার ‘ফেজ আউট’ করুক। চিন ও ভারতের প্রবল বিরোধিতায় ভাষা বদলে ঠিক হয়েছে ‘ফেজ ডাউন’ করা হবে। চিন ২০৬০ সালে, ভারত ২০৭০ সালে কয়লার ব্যাবহার পুরোপুরি বন্ধ করবে বলেছে। ততদিনে পৃথিবীর কী হাল হবে তা নিয়ে জলবায়ু-বিজ্ঞানীরা, রাষ্ট্রসংঘ, ইন্টান্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) সহ পৃথিবীর মানুষ চিন্তায় অস্থির। তাঁরা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে বেঁধে রাখতে চান এবং অন্তত ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ নেট জিরো করতেই হবে বলে মনে করেন। জলবায়ু-বিজ্ঞানীরা বলছেন, শিল্পসভ্যতার আগের চেয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা যেন ১.৫ ডিগ্রির বেশি না বাড়ে, বেশি বাড়লে জলবায়ুর উপর তার যে চরম প্রভাব দেখা দেবে তা আর বদলানো যাবে না। অবশ্য তাতেও এই গ্রহের অনেক ক্ষতি হবে। তাপপ্রবাহ, মেঘভাঙা বৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, দাবানলে অসংখ্য মানুষ মারা যাবেন, অনেকেই সর্বহারা হবেন, উদ্বাস্তু হবেন।

সে আলোচনা ছেড়ে নিঃসরণ কমাতে কতটুকু কাজ হল তাই বরং দেখি। ২০২১ সালে সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ মোট বিদ্যুতের শতকরা ১০ ভাগ জোগান দিয়েছে। একই বছর কয়লা পুড়িয়ে পাওয়া তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন আগের বছরের চেয়ে ১.২ শতাংশ বেড়েছে। আজও ৩৬.৫ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে কয়লা পুড়িয়ে। আইইএ-র মতে নেট জিরো লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে ২০২১ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হবে শতকরা ৭৩ ভাগ।[1]

ওই বছর উন্নত দেশে অর্থনৈতিক উৎপাদন বাড়লেও কার্বন নিঃসরণ কম হয়েছে। আমেরিকায় নিঃসরণ হয়েছে ২০১৯ সালের চেয়ে শতকরা ৪ ভাগ কম, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ২.৪ ভাগ কম। জাপানে কমেছে ২.৭ ভাগ। চিনে ২০২০ সালের চেয়ে নিঃসরণ বেড়েছে ২১ লাখ টন বেশি। উন্নত দেশে নাগরিকপ্রতি নিঃসরণ কমে হয়েছে ৮.২ টন, চিনে বেড়ে হয়েছে ৮.৪ টন।

নিঃসরণ বাড়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী চিন। পৃথিবী জুড়ে প্রবল অতিমারির বছরেও, ২০২০ সালে, চিনের নিঃসরণ বেড়েছে ৭৫ কোটি টন। অথচ বাকি পৃথিবীতে সে বছর অতিমারির প্রভাবে নিঃসরণ কমেছিল। ২০২১ সালে চিন ১১৯০ কোটি টন নিঃসরণ করেছে, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ। দ্রুত জিডিপি বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০২১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হয়েছে শতকরা ১০ ভাগ। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য শক্তি ছাড়া তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনও অনেক বাড়াতে হয়েছে। বাড়তি চাহিদার অর্ধেকের বেশি বাড়াতে হয়েছে তাপবিদ্যুৎ থেকে। অথচ ওই বছর চিনে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এমনই  চিনের বিদ্যুৎ-ক্ষিদে।

উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেঁধে রাখতে গেলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা বাড়িয়ে যেতে হবে (গত এক দশক ধরে বৃদ্ধির হার গড়ে তাই-ই আছে)। তবে পরমাণুবিদ্যুতের (প্রায় কার্বন নিঃসরণহীন) অগ্রগতি হচ্ছে না, জলবিদ্যুৎও তেমন বাড়ছে না। এইসব বিদ্যুৎসূত্র থেকে উৎপাদন হয় পৃথিবীর ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ। কাজেই বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্বন নিঃসরণহীন করতে গেলে সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের আশাতীত বৃদ্ধি প্রয়োজন। আইইএ-র আর এক হিসাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেঁধে রাখতে গেলে ২০২৫ সালের মধ্যে সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা হতে হবে ২০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালে ৭০ শতাংশ।[2]

আইইএ-র মতে, প্রায় তিন দশক ধরে নিঃসরণ কমানোর জন্য বিপুল উদ্যোগের পরও ২০২১ সালের শেষে কার্বন নিঃসরণ শতকরা ৬ ভাগ বেড়ে হয়েছে ৩৬৩০ কোটি টন। করোনা অতিমারির জন্য আগের বছর নিঃসরণ যা কমেছিল তা মিটিয়েও বেশি হয়েছে, ২০০ কোটি টন। কারণ প্রাকৃতিক গ্যাসের (কয়লার প্রায় অর্ধেক নিঃসরণ করে) দাম বেশি বেড়েছে বলে কয়লার ব্যাবহার বেড়েছে, তবে কয়লার দামও অনেক বেড়েছে। নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদনক্ষমতা অনেকটা বাড়লেও কয়লা ও গ্যাস থেকে নিঃসরণ বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ১৫৩০ ও ৭৫০ কোটি টন। তেল থেকে হয়েছে ১০২০ কোটি টন, তবে তা অতিমারির আগের বছরের চেয়ে (২০১৯) কম। কারণ উড়ানের ক্ষেত্রে পৃথিবী ২০২১ সালেও স্বাভাবিক (২০১৯ সালের মতো) হয়নি। আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক দেশের বিদ্যুৎব্যবস্থায় ২০২১ সালের বেশিরভাগ সময় গ্যাসবিদ্যুতের চেয়ে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল সস্তা। ওই দুইয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতাও ওইসব দেশে বেশি। আইইএ-র মতে, গ্যাসের বদলে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নিঃসরণ বেড়েছে দশ কোটি টনের বেশি। কয়লার ব্যাবহার বাড়লেও নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে উৎপাদন অনেকটাই বেশি হয়েছে। তা ৮০০০ টেরাওয়াট-আওয়ার (১০০ ওয়াটের বাতি ১ কোটি ঘণ্টা ধরে জ্বললে যে বিদ্যুৎ খরচ হয়) বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে, আগের বছরের চেয়ে ৫০০ টেরাওয়াট-আওয়ার বেশি। তবে আমেরিকা ও ব্রাজিলে খরার প্রভাবে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে কম।[3]

অনেক দেশেই জলবিদ্যুৎ সস্তায় বেসলোড(দিনরাতের মধ্যে সর্বনিম্ন বিদ্যুৎ চাহিদা যতটা হয়) বিদ্যুৎ। জলবিদ্যুতের সুবিধা হল তার নমনীয়তা, তা বায়ু ও সৌরবিদ্যুতের তুমুল বৃদ্ধিকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। এর জোরেই ২০২১-এর জানুয়ারিতে ইউরোপে ব্ল্যাকআউট এড়ানো গেছে এবং এর অভাবে ফেব্রুয়ারি মাসে টেক্সাসে চরম আবহাওয়ার সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট জাঁকিয়ে বসেছিল।

আইইএ তাদের ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘নেট জিরো বাই ২০৫০ রিপোর্ট’-এ জানিয়েছে যে, যদি তাপমাত্রাবৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেঁধে রাখতে হয় তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে জলবিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা ২৬০০ গিগাওয়াট (১ গিগাওয়াট = ১০০০ মেগাওয়াট) হওয়া চাই। ২০২০ সালে জলবিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা হয়েছে ১৩৩০ গিগাওয়াট (চিনের ৩৭০.৩, ব্রাজিলের ১০৯.৩, আমেরিকার ১০২, কানাডার ৮২, ভারতের ৫০.৫, জাপানের ৪৯.৯, রাশিয়ার ৪৯.৯, নরওয়ে ৩৩, তুর্কিস্তান ৩১, ফ্রান্স ২৫.৫, ইটালি ২২.৬, স্পেন ২০.৪ গিগাওয়াট)। তা থেকে উৎপাদন হয়েছে ৪৩৭০ গিগাওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ, যা গোটা আমেরিকার বিদ্যুৎ খরচের প্রায় সমান। আগামী ৩০ বছরে তা দ্বিগুণ করা চাই। অথচ ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বছরে জলবিদ্যুৎ বেড়েছে যথাক্রমে ২২, ২৪, ১৭, ২১ গিগাওয়াট। এই হারে বৃদ্ধিতে ২০৫০ সালে তা আকাঙ্খিত লক্ষ্যের অর্ধেকে পৌঁছবে। আরও কথা হল অনেক কেন্দ্রেরই বয়স হয়েছে, বন্ধ করে দিতে হবে। তবে কিছু কেন্দ্রকে আধুনিক করে তোলা যাবে।[4]

সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ ২০২০ সালে মোট বিদ্যুতের ৯.৩ শতাংশ সরবরাহ করেছিল, ২০২১-এ করেছে ১০.৩ শতাংশ।[5] ২০২১ সালে বিশ্বে নব-নবায়নযোগ্য শক্তি অর্থাৎ ১০ মেগাওয়াটের চেয়ে বড় জলবিদ্যুৎকেন্দ্র বাদে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদনক্ষমতা বেড়েছে ২৯৫ গিগাওয়াট। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সৌরবিদ্যুৎ, তারপর যথাক্রমে বায়ু ও জলবিদ্যুৎ। ওয়াকিবহাল মহলের মতে ২০২২ সালে নব-নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে ৩২০ গিগাওয়াট। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে তা যেভাবে বাড়ছে তা থেকে মনে হয় ২০২৩ সালের পর রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস আমদানির নির্ভরতা কমবে। তবে তার জন্য শক্তির কর্মক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং শক্তির চাহিদাতে লাগাম পড়াতে হবে।[6]

২০২১ সালের গ্লোবাল উইন্ড রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিশ্বে বায়ুবিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা বেড়েছে ৯৪ গিগাওয়াট, মোট ক্ষমতা হয়েছে ৮৩৭  গিগাওয়াট। যার ফলে ১২০ কোটি টন কম নিঃসরণ হচ্ছে। প্রতি বছর বাড়া দরকার ১৮০ গিগাওয়াট। গ্লোবাল উইন্ড এনার্জি কাউন্সিল (জিডব্লুউইসি) মনে করে, বিভিন্ন দেশের বর্তমান নীতি যদি বজায় থাকে তাহলে আগামী পাঁচ বছরে উৎপাদনক্ষমতা বাড়বে আরও ৫৫৭ গিগাওয়াট। জিডব্লুউইসি-র মতে, পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে দিতে না চাই এবং ২০৫০ সালের মধ্যে নিঃসরণ নেট জিরো করতে চাই তাহলে এই দশকের শেষে উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে হবে চারগুণ।[7]

এই নিয়ে পর পর ন বছর উৎপাদনক্ষমতার বিচারে সৌরবিদ্যুতের আগের বছরের রেকর্ড ভেঙে ২০২১ সালে বেড়েছে ১৬৮ গিগাওয়াট। ওই বছর বায়ুবিদ্যুৎ এবং অন্যান্য যাবতীয় বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা যা বেড়েছে সৌরবিদ্যুৎ একাই তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। ২০১৮-র পর থেকে তিন বছরে উৎপাদনক্ষমতা দ্বিগুণ হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১ টেরাওয়াট ছাড়াল। এই অবস্থায় আসতে প্রায় এক যুগ লেগেছে, ২০১২ সালে উৎপাদনক্ষমতা ছিল ১০০ গিগাওয়াট, ২০২১ সালে প্রায় সাড়ে আট হাজার গিগাওয়াট। ‘সোলার পাওয়ার ইউরোপ’-এর মতে, ২০২২ সালে উৎপাদনক্ষমতা ২০০ গিগাওয়াট অতিক্রম করবে।[8]

আমেরিকার নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদনক্ষমতা ২ লক্ষ মেগাওয়াট ছাপিয়েছে। তার ৬৭ শতাংশ বায়ুবিদ্যুৎ, সৌরবিদ্যুৎ ৩০ শতাংশ এবং ২ শতাংশ ব্যাটারি স্টোরেজ। ২০২২-এর মার্চে তা সে দেশের মোট ক্ষমতার কুড়ি শতাংশ পেরিয়েছে। বাইডেন প্রশাসন ২০৩৫ সালের মধ্যে গ্রিডকে নিঃসরণমুক্ত করতে চায়। অবশ্য কাজটি খুব সহজ নয়, এখনও পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ তাই হয়েছে।[9]

ইদানিংকালে মার্কিন নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদকেরা অন্তত এক ডজন বড় ব্যাটারি প্রকল্প বাতিল অথবা মুলতুবি রেখেছে। গ্রিড-সংযুক্ত ওইসব প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে চূড়ান্ত চাহিদার সময়েও বায়ু বা সৌরবিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল থাকা এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো। মুলতুবি রাখার একটা বড় কারণ বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে না ওঠা। এর ফলে বাইডেন প্রশাসনের ২০৩৫ সালের মধ্যে গ্রিডকে নিঃসরণমুক্ত করার চেষ্টা কিছুটা ধাক্কা খেল।

২০২১ সালে আমেরিকায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭৮.৫ কোটি মেগাওয়াট-আওয়ার। পরমাণুবিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে ৭৭.৮ কোটি মেগাওয়াট-আওয়ার, আগের বছরের চেয়ে ১.৫ শতাংশ কম। এই প্রথম সে দেশের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ পরমাণুবিদ্যুৎকে টপকে গেল। আমেরিকা ২০৩৫ সালের মধ্যে সৌরশক্তি থেকে ৪০ শতাংশ এবং ২০৫০-এ ৪৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে। পরমাণুবিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ১৯ শতাংশ। ২০১৭ সালের পর থেকে মোট ৪৭৩৬ মেগাওয়াটসম্পন্ন ছটি চুল্লি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর ২০২১-এ নিউ ইয়র্কের ১০৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ইন্ডিয়ান পয়েন্ট ৩ নং চুল্লিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি চুল্লি অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে, যাদের সম্মিলিত উৎপাদনক্ষমতা ৩০০৯ মেগাওয়াট।[10]

গ্যাসই সে-দেশে বিদ্যুতের ৩৮ শতাংশ উৎপাদন করে। পরমাণুবিদ্যুৎ বা নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের চেয়ে কয়লা পুড়িয়ে বেশি উৎপাদন হয়। তবে বেশিরভাগ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রই অলাভজনক হয়ে পড়েছে। ২৩৫টির মধ্যে ১৮২টিই অলাভজনক বলে বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে। দামের প্রতিযোগিতায় নবায়নযোগ্য শক্তি বা গ্যাসবিদ্যুতের সঙ্গে তাপবিদ্যুৎ পেরে উঠছে না। ওদিকে পশ্চিম আমেরিকায় কম বৃষ্টিপাতের জন্য ২০২১-এ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে, এখন জলবিদ্যুতের ভাগ ৬.৩ শতাংশ।[11]

২০২০ সালের শেষে চিনের সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের মোট উৎপাদনক্ষমতা হয়েছিল ৫৩৫ গিগাওয়াট। চিনের লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালে নব-নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের উৎপাদন ২০২০ সালে ৯.৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০২১ সালে ১১ শতাংশ করবে। ২০২১-এ ৫৪.৯ গিগাওয়াট বাড়িয়ে (আমেরিকার ২৬.৮, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৫.৯, ভারতের ১১.৮৯ গিগাওয়াট) সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের মোট ক্ষমতা হয়েছে ৩০৬.৫৬ গিগাওয়াট। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা ২০২২ সালে বাড়বে ৭৫ থেকে ৯০ গিগাওয়াট। ২০২০ সালে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে চিনের ২৮.৮ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হত। ২০২৫ সালের মধ্যে সেই ভাগ সে বাড়িয়ে করতে চায় ৩৩ শতাংশ। স্বস্তির কথা, ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসে চিনের কার্বন নিঃসরণ কমেছে ১.৪ শতাংশ, তার আগের দুই ত্রৈমাসিকেও নিঃসরণ কমেছে, এই নিয়ে পর পর তিনবার।[12]

ভারত, আমেরিকা সহ নানা দেশে চিনে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎসামগ্রীর আমদানি শুল্ক বাড়ানো হলেও (আমেরিকায় ট্রাম্পের আমলে চিন থেকে আমদানি করা সৌরশক্তি যন্ত্রের উপর যে শুল্ক বসানো হয়েছিল বাইডেনের আমলেও তা বহাল রয়েছে) ২০২১ সালে চিনের ফটোভোল্টায়িক পণ্যের রপ্তানিমূল্য ছিল ২৮০০ কোটি ডলার। ইউরোপের বাজারে আমদানি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, চিনের রপ্তানির ৩৯ শতাংশ। এশিয়ার বাজারে চিনে তৈরি সিলিকন সৌর ওয়েফার ও সেল এবং নেদারল্যান্ডস, ব্রাজিল ও ভারতে রপ্তানি করা পিভি মডিউলের বৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ফটোভোল্টায়িক উৎপাদন, তার প্রয়োগ, আমদানি-রপ্তানির মূল্য ছিল ১১,৮৫১ কোটি ডলার। চিনের সৌর মডিউল উৎপাদন ১৫ বছর ধরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। একইভাবে, পলিসিলিকন (সোলার প্যানেলের কাঁচামাল) উৎপাদনে ১১ বছর ধরে, বাৎসরিক সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধিতে ন বছর ধরে এবং সৌরবিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতায় সাত বছর ধরে চিন এক নম্বরে।[13] বায়ুবিদ্যুতের ক্ষেত্রেও অনেক বছর ধরে তাই।

২০২১-এ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বাড়িয়েছে ৫৪.৮৮ গিগাওয়াট। উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধির অর্ধেক ছিল ডিস্ট্রিবিউটেড সৌরশক্তি। আগামী দিনে এই ডিস্ট্রিবিউটেড ব্যবস্থা এবং কেন্দ্রীয়ভাবে উৎপাদনব্যবস্থার বৃদ্ধি হবে সমান গতিতে। ২০২২ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত প্রতি বছর মূলত দেশের মধ্য ও পূর্বভাগে ৮৩ থেকে ৯৯ গিগাওয়াট বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সেখান থেকে গ্রাহকের কাছে বা গ্রিডে বিদ্যুৎ পৌঁছনো তুলনামূলকভাবে সহজ। গোবিসহ কয়েকটি মরুভূমি অঞ্চলে প্রায় ১০০ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরির কাজ চলছে।[14]

চিন দেশের বিদ্যুৎ সংবহন (transmission) কোম্পানিদের নির্দেশ দিয়েছে, ২০২২ সালে যেন অন্তত ৯০ গিগাওয়াট বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ গ্রিডে সংযুক্ত করা হয়। চিন আজ আর নতুন উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্য স্থির না করে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের সংবহনের লক্ষ্য স্থির করবে, নতুন সৌর বা বায়ুবিদ্যুৎ পুরোটাই ব্যাবহৃত হয়। চিন উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির না করে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের পূর্বাভাস দেবে, স্থানীয় সরকারকে নতুন প্রকল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে দিশা দেখাবে। তাতে সংবহন কোম্পানির উপর চাপ বাড়বে, তাদের দেখতে হবে যেন নবায়নযোগ্য শক্তির অপচয় না হয়। গ্রিড ফার্মকে উৎসাহ দেওয়া হবে যেন ২০২২ সালে ব্যাটারি স্টোরেজের মাধ্যমে তারা ৯০ গিগাওয়াটের বেশি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ গ্রহণ করে। তাতে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা সামলাতে সুবিধা হবে। ২০২১-এ চিনের সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ৬০০ গিগাওয়াট (৬ লক্ষ মেগাওয়াট) ছাপিয়ে গেছে।[15]

ফুকুশিমা বিপর্য্যয়ের আগে, ২০১০ সালে জাপানের ২৬.৪ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হত পরমাণু চুল্লি থেকে। ২০১১ সালে বিপর্য্যয়ের পর জাপান সরকার ঠিক করেছিল পরমাণুবিদ্যুৎ উৎপাদন একেবারে বন্ধ করে নবায়নযোগ্য শক্তির পথে যাবে। কিন্তু সরকার বদলের পর তা আর হয়নি। পরমাণুবিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে যে বিপুল বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দেয় তা মেটাতে জাপান জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিল। জাপানের নিজস্ব জীবাশ্ম জ্বালানি কিছুই নেই। ২০১২ ও ২০১৩ সালে জাপান ছিল সবচেয়ে বেশি এলএনজি আমদানিকারী।

তারপর জাপান একটু একটু করে নবায়নযোগ্য শক্তির পথেই গেছে। ২০০০ সালে যার উৎপাদনক্ষমতা ছিল ৩.৪ গিগাওয়াট, ২০২০ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮১.৯ গিগাওয়াট, ২০৩০ সালে হবে এর দুগুণের বেশি। শুধু পরমাণুবিদ্যুৎ বন্ধ করাই নয়, গ্যাস, কয়লা ও তেল আমদানি করতে যে বিপুল খরচ হয় সরকার তাও কমাতে চাইছে। জাপ সরকার এখন নবায়নযোগ্য শক্তি বৃদ্ধিতে মন দিয়েছে।

২০২০ সালে বিদ্যুতের ২০ শতাংশ ছিল নব-নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে উৎপাদিত। প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে ৪০ আর কয়লা থেকে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। পরমাণুবিদ্যুতের ভাগ ৪ শতাংশের কম, ফুকুশিমা বিপর্য্যয়ের আগে যা ছিল ২৬.৪ শতাংশ। আইইএ জানিয়েছে, জাপান সরকার ধরে নিয়েছিল যে পরমাণুবিদ্যুৎ দ্রুত ফিরে আসবে, তা হয়নি। তাই নিঃসরণহীন অন্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ও প্রয়োগ ঘটাতে হবে।[16]

জাপান আজ চতুর্থ বৃহৎ নিঃসরক। দেশের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, সে-দেশের লক্ষ্য হল ২০৩০ সালের মধ্যে নিঃসরণ ৪৬ শতাংশ কমিয়ে ফেলা। আগে লক্ষ্য ছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে ২০১৩ সালের চেয়ে ২৬ শতাংশ নিঃসরণ কমিয়ে ফেলা।[17]

ভারতের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৩টি। বেশি দামী বিদুতের বদলে বেশি বেশি সস্তার সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ঠিক হয়েছে আগামী ৪ বছরে ৮১টি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হবে। তবে পুরনো ও বেশি উৎপাদন খরচের কেন্দ্রগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রযুক্তিগতভাবে যতটা কম উৎপাদন করা যায় (টেকনিকাল মিনিমাম) তাও দেখা হবে।[18]

ভারতে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন ক্ষমতা শতকরা ৪০ ভাগ। শুধু সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতাই ২৭.৫ শতাংশ। তবে সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ থেকে উৎপাদন হয় মাত্র ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ। ওদিকে কয়লার উৎপাদনক্ষমতা ৫১ শতাংশ হলেও, উৎপাদন করে দেশের ৭৫ শতাংশ বিদ্যুৎ।

তবে ২০২২ সালের মে মাসে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল ১৪.১ শতাংশ, যা এপ্রিল মাসে ছিল ১০.২ শতাংশ। তাই তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন ৭৬.৮ থেকে কমিয়ে দিতে হয়েছিল ৭০.৯ শতাংশে। সব ধরনের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ মিলিয়ে উৎপাদন হয়েছিল ৪৪.১ শতাংশ বেশি।[19]

২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে যখন উৎপাদনক্ষমতা ছিল ৪০ গিগাওয়াট ভারত ঘোষণা করে ২০২২ সালের মধ্যে ১৭৫ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্যবিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। সৌরবিদ্যুৎ হবে ১০০, যার মধ্যে রুফটপ হবে ৪০ গিগাওয়াট। সে সময় নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা ছিল ৪০ গিগাওয়াট। ২০২১ সালে ফের ঘোষণা করেছে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট উৎপাদন করবে।

২০২২ সালের প্রথম তিন মাসে রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ বেড়েছে ৪৫৬ মেগাওয়াট। মোট ক্ষমতা হয়েছে ৭৬০০ মেগাওয়াট। তার ৪৭, ২৯, ২২ ও ২ শতাংশ যথাক্রমে ইন্ডাস্ট্রিয়াল, কমার্সিয়াল, গৃহস্থালি ও সরকারি বাড়িতে। এই নিয়ে পরপর চারটি ত্রৈমাসিকে উৎপাদন ক্ষমতা ৪০০ মেগাওয়াটের বেশি বাড়ল। ভবিষ্যতের বৃদ্ধি নির্ভর করে সৌরব্যবস্থার খরচের উপর। প্রথম ত্রৈমাসিকে গড় খরচ ২০২১-এর শেষ ত্রৈমাসিকের তুলনায় বেড়েছে ৬ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৭ শতাংশ।[20]

এদেশে তাপবিদ্যুৎ বা জলবিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা তেমন বাড়ছে না। তৈরি হচ্ছে এমন তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বেশি নেই, দেরিতে রূপায়িত হওয়া কয়েকটি কেন্দ্র এখন চালু হচ্ছে। ২০২১ সালে এইভাবে চালু হয়েছে মাত্র ১.৪ গিগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। জ্বালানিরও খুব সমস্যা, আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম কোভিডের আগের বাজারের চেয়ে ৪-৫ গুণ বেশি। গ্যাসের দাম আরও বেশি। এই অবস্থায় বাণিজ্যিকভাবে তা আমদানি করাও মুশকিল। কারণ ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সঙ্গে যে চুক্তি হয়ে রয়েছে বিদ্যুতের দাম তার চেয়ে বাড়াতে পারবে না।

উৎপাদন যা বাড়ছে বেশিটাই সৌর বা বায়ুবিদ্যুৎ। তবে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদনের মাধ্যমে দিনের সর্বোচ্চ চাহিদা সামলানো মুশকিল। সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে সন্ধ্যার সর্বোচ্চ চাহিদা সামলানো যায় না, তখন সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হয় না, ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ চার্জ করে রাখার ব্যবস্থাও চালু হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে আবার উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রিডে দেওয়া যাচ্ছে না, কারণ পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিসকম) তাতে আগ্রহী নয়। বেশিরভাগ ডিসকম বিপুল দেনায় ডুবে আছে।[21] ২০১৯-২০২০ সালে এদেশের ২০টি রাজ্যের ৪১টি ডিসকমের বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯,০০০ কোটি টাকা। তার কারণ বিদ্যুতের দাম বেড়েছে কম, ওদিকে গড়ে তাদের বেশি মূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে, কাঁচামালের দাম বেড়েছে। সরকারের বর্তমান নীতি অনুযায়ী চলতে গেলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। ডিসকমের আর্থিক স্বাস্থ্য খুবই খারাপ তা উৎপাদক কোম্পানির দেনা মেটাতে বহু দেরি হওয়া থেকেও বোঝা যাচ্ছে। রাজ্যের উপর তাদের ২০ শতাংশের বেশি সাবসিডি ২০১৯-২০ সালে বেড়ে হয়েছে ৫৪ শতাংশে। রাজ্যের কাছ থেকে সাবসিডি দ্রুত না পেয়ে অনেক ক্ষেত্রে এখন অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে।[22]

২০২১ সালে বড় জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া আমাদের দেশে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদনক্ষমতা বেড়েছে ১৫.৫ গিগাওয়াট। আগের বছর হয়েছিল ৭.৭ গিগাওয়াট। কথা ছিল ২০২২ সালের মধ্যে বড় জলবিদ্যুৎ ছাড়া নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১৭৫ গিগাওয়াট। ২০২২-এর এপ্রিল মাস পর্যন্ত হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার মেগাওয়াট, ১২০ গিগাওয়াট পেরোয় কিনা দেখা যাক। এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে ২০৩০ সালে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদনক্ষমতা হবে ৫০০ গিগাওয়াট। জলবিদ্যুৎ হিসাবে নিয়ে উৎপাদনক্ষমতা হয়েছে ১৫০ গিগাওয়াট। তার মানে এখন থেকে প্রতি বছর বাড়াতে হবে গড়ে প্রায় ৪০ গিগাওয়াট করে। এখনকার গতিপ্রকৃতি দেখে বলা যায় তা বাস্তবসম্মত নয়। মুদিস ইনভেস্টর্স সার্ভিস-এর মতে ২০৩০ সালের লক্ষ্য সফল করতে গেলে ২২,৫০০ থেকে ২৫০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ দরকার, তাই প্রাইভেট সেক্টর ও বিদেশি বিনিয়োগে সরকারের আরও উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন।[23]

দ্য ল্যান্সেট প্ল্যানেটরি জার্নাল জানিয়েছে নানা ধরনের দূষণ থেকে ২০১৯ সালে পৃথিবীতে অকালমৃত্যু হয়েছে ৯০ লাখ মানুষের। প্রতি ছটি মৃত্যুর একটি হয় দূষণ থেকে। ভারতে মৃত্যু হয়েছে ২৩.৫ লাখ মানুষের— ১৬.৭ লাখের বায়ুদূষণে, ৬.১ লাখের ঘরের দূষণ থেকে।[24] শুধু কয়লা পোড়ানো বন্ধ হলেই এই মৃত্যুসংখ্যা এক ধাক্কায় অনেক নেমে আসবে। যানবাহনের দূষণও বন্ধ হবে। কারণ তখন প্রায় সমস্ত বিদ্যুৎই আসবে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে। বহুকাল আগে নিজের দেশ নিয়ে গর্ব করে লেখা হয়েছিল ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’, অবশ্য তখন দূষণের চিন্তা তেমন ছিল না। নিজেরা শাসন করে আজ কোন অধঃপতনে নিয়ে গেছি আমাদের দেশকে! এর থেকে নিস্তার পেতে গেলে নাট্যকার বাদল সরকারের কথায় বলতে হয়—

আমাদের সামনে এখন দুটো পথ। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বহু মানুষকে নৃশংস পদ্ধতিতে হত্যা করতে করতে আত্মহত্যা— একটা পথ। আর অন্য পথটা হল… বই কাগজ পড়ে অবহিত হয়ে চেঁচিয়ে যাওয়া, যতক্ষণ না জনমতের চাপে… হনন-আত্মহননের ব্যবস্থা বন্ধ হয়।

নিঃসরণ কমানোর যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে, বলা যায় তা চোখে পড়ছে শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে। মনে রাখতে হবে বিদ্যুৎ ও তাপ উৎপাদনে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ভাগ শতকরা ২৫। কৃষি, বনায়ন ও ভূমির ব্যাবহারের ভূমিকা ২৪ ভাগ, শিল্পের ২১ এবং পরিবহন ক্ষেত্রের ভাগ ১৪।[25] শুধু কয়লার ব্যবহার কমাতেই পৃথিবীর কালঘাম ছুটে যাচ্ছে, বাকি সব অধরাই। দ্রুত গ্যাস ও তেলের ব্যবহারও পুরোপুরি বন্ধ করা চাই। ভাবলে হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার জোগাড়।

বহুকাল আগে গান্ধিজি বলেছিলেন, এই পৃথিবীতে সবার প্রয়োজন মেটাবার মত যথেষ্ট রয়েছে, কিন্তু লোভ সামলানোর মত যথেষ্ট নেই। একথা যে কত বড় সত্যি তা আজ কাউকে বলে দিতে হয় না। সীমাহীন লোভই আমাদের তাড়া করছে। রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা ছাড়া নিজেরা অল্পেতে বেঁচে থাকার চেষ্টা শুরু করতে পারি, যাতে এই প্রিয় গ্রহটি আমাদের নিয়ে আর কিছুদিন স্বস্তিতে থাকে।


[1] Morawski, Bridget Reed. Global Wind, Solar Production Hit Highest Benchmarks Ever in 2021, But Coal Also Kept Pace. EcoWatch. Apr 05, 2022
[2] Lewis, Michelle. US hits a record 20% of electricity from wind and solar in April. Electrek. 10 May, 2022.
[3] IEA Press release. Global CO2 emissions rebounded to their highest level in history in 2021. 8 March 2022.
[4] Hydropower Status Report. Iha. June, 2022.
[5] Venditti, Bruno. Mapped: Solar and Wind Power by Country. Elements. 4 May, 2022.
[6] IEA Press release. Renewable power is set to break another global record in 2022 despite headwinds from higher costs and supply chain bottlenecks. 11 May 2022.
[7] GWEC. Global Wind Report 2022.
[8] World Installs a Record 168 GW of Solar Power in 2021, enters Solar Terawatt Age. SolarPower Europe. 10 May 2022.
[9] Jenkins, Lisa Martine. The US hit a renewable energy milestone. Now comes the hard part. Protocol. 17 May, 2022.
[10] Groom, Nichola. How a battery shortage is hampering the U.S. switch to wind, solar power. Reuters. 9 June, 2022.
[11] Mishra, Gourav. Renewable Energy Generation in the US Surpassed Nuclear in 2021. Mercom. 3 May, 2022.
[12] AP. Carbon emissions dip, at least briefly, in China, study says. The Economic Times. 2 June, 2022.; Reuters. IEA Prss Release. Renewable power is set to break another global record in 2022 despite headwinds from higher costs and supply chain bottlenecks. 11 May, 2022.; Reuters. China solar capacity rises by record 54.9 GW in 2021 – energy authority. 27 Jan, 2022. China expected to add record 75-90GW solar power capacity in 2022. Global Times. 23 Feb, 2022. China says a third of electricity will come from renewables by 2025. 1 June, 2022.; Renewables are a long way from solving our energy needs. New Indian Express. 10 May, 2022.
[13] Masterton, Victoria. Wind and solar generated 10% of global electricity in 2021 – a world first, Race to Resilience Race to Zero. 11 Apr, 2022.
[14] China expected to add record 75-90GW solar power capacity in 2022. Global Times. 23 Feb, 2022.
[15] Reuters. China’s solar power capacity set for record increase in 2022 – industry body. 23 Feb, 2022.
[16] GlobalData Energy. Japan to promote renewable power and reduce fossil fuel imports during 2021-2030. Power Technology. 29 Jun, 2021.
[17] AFP. TRENDS: The road to renewable energy in Japan, a top CO2 emitter. Economic Times. 9 March, 2022.
[18] Reuters. India aims to cut power output from at least 81 coal-fired plants over four years. Economic Times. 30 May, 2022.
[19] De, Anish. India’s power crisis: Root causes and the way ahead. The Economic Times. 4 May, 2022.
[20] Reuters. Record renewables output helps India ease coal shortage in May. The Economic Times. 01 June, 2022.
[21] Power discoms’ losses widened to Rs 59,000 crore in 2021-22: Report. The Economic Times. 01 June, 2022.
[22] India added 456 MW rooftop solar capacity in Q1 2022: Report. The Economic Times. 01 June, 2022.
[23] IANS. New renewable energy capacity addition doubled during FY2022: CEEW-CEF report. The Economic Times. 6 May, 2022.; India needs $225-250 bn investment to meet its 2030 renewable energy target: Moody’s. The Economic Times. 13 June, 2022,
[24] PTI. Pollution led to over 23.5 lakh premature deaths in India in 2019, highest in world: Lancet study. The Economic Times, 18 May, 2022.; IANS. Phase out of coal plants can avoid over 14.5mn premature deaths: Study. The Economic Times, 24 May, 2022
[25] Global greenhouse Gas Emission by Economic Sector. EPA.

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4861 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...