সার্ধ-দ্বিশতবর্ষে রাজা রামমোহন রায়

কণিষ্ক চৌধুরী

 



শিক্ষক, প্রাবন্ধিক

 

 

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

রামমোহন রায়ের একটি চিঠি: পুনঃপাঠ

উইলিয়াম পিট আমহার্স্ট (১৭৭৩-১৮৫৭) বা লর্ড আমহার্স্ট ভারতের গভর্নর হিসেবে কাজ করে ১৮২৩ থেকে ১৮২৮ অবধি। আমহার্স্টের শাসনকালেই ১ জানুয়ারি ১৯২৪ কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ স্থাপিত হয়। এই কলেজ স্থাপনের প্রস্তাবকদের মধ্যে ছিলেন জেমস প্রিন্সেপ (১৭৯৯-১৮৪০) ও টমাস ব্যারিংটন মেকলে (১৮০০-১৮৫৯)। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার পেছনে কোম্পানির লক্ষ্য ছিল দেশজ ভাষা, সাহিত্য ও দর্শন চর্চা। রামমোহন কোম্পানির এই উদ্দেশ্য জানতে পেরে উপযাচক হয়েই আমহার্স্টকে একটি চিঠি লেখেন, ১১ ডিসেম্বর ১৯২৩-এ। শাসকদের পক্ষ থেকে রামমোহনকে এই চিঠির কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি। সরকার অনুসৃত নীতির বিরোধিতাই এই প্রত্যুত্তর না-দেওয়ার কারণ হতে পারে। তাছাড়া কোম্পানির সঙ্গে তাঁর অ-সহজ ও দীর্ঘদিনের অস্বস্তিকর সম্পর্কও এর অন্যতম কারণ।

১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার অ্যাক্টে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একাধিপত্যের অবসান হয়। এই সনদেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে শিক্ষাখাতে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা ব্যয় করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু জেনারেল কমিটি ফর পাবলিক ইন্সট্রাকশন (জিসিপিআই)-এর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ছিল প্রাচ্যবাদী, খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের লক্ষ্য ছিল ওই অর্থ দেশীয় ভাষা, সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে খরচ করা। রামমোহন এরই বিপরীতে ভারতে পাশ্চাত্য ভাষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসার চেয়েছিলেন। এদিক থেকে তাঁর অবস্থান পাশ্চাত্যবাদীদের কাছাকাছি। তিনি নিজের উদ্যোগেই ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সুরিপাড়ায় একটি স্কুল খোলেন এবং নিজের বাড়িতে মোরক্রফট নামে এক ইংরেজ শিক্ষক নিযুক্ত করে উচ্চমানের ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন করেন। ১৮২২-এ সিমলা স্ট্রিটে অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল নামে আরও একটি বিদ্যালয় খোলেন। পূর্ববর্তী বিদ্যালয়টি স্বল্পস্থায়ী হলেও এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘস্থায়ী ও সার্থক হয়েছিল।

 

দুই.

রামমোহন বেন্থামের স্থিতবাদ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়ে বুঝতে পারেন যে, মানুষের ইহজাগতিক উন্নয়ন ছাড়া সমাজের বিকাশ ও অগ্রগতি সম্ভব নয়। আর এই ইহজাগতিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন শিক্ষার। তাই কোম্পানি সরকারের দেশীয় ভাষা ও জ্ঞানচর্চার উদ্দেশ্যে সংস্কৃত কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা জানতে পেরে তিনি আমহার্স্টকে যে চিঠিটি লেখেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। চিঠিটি ১২টি অনুচ্ছেদে বিন্যস্ত। প্রথম অনুচ্ছেদেই তিনি ভারতীয়দের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, প্রথা, ধারণা ইত্যাদি যে ইংরেজদের কাছে অপরিচিত তার উল্লেখ করেছেন।

The present rulers of India, coming from a distance of many thousand miles to govern a people whose language, literature, manners, customs and ideas are almost entirely new and strange to them, cannot easily become so intimately acquainted with their real circumstances, as the natives of the country are themselves.[1]

যেহেতু ব্রিটিশরা এ দেশের ভাষা, সাহিত্য, আচরণ, প্রথা ও ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে যথাযথভাবে অবহিত নন, তাই তাদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো ছাড়া কী করলে ভারতীয়দের পক্ষে ভাল হবে তা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না।[2] এখানে লক্ষ করতে হবে মূল কথায় পৌঁছানোর আগে তিনি কেন এই চিঠি লিখছেন তার যুক্তিটিকে উপস্থিত করেছেন।

২ নং থেকে ৫ নং অনুচ্ছেদে রয়েছে কতগুলি আশা ও আশাভঙ্গের কথা। সরকার দেশীয় মানুষদের উন্নতির জন্য কলকাতায় সংস্কৃত স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে তা অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য। তিনি আশা করেছিলেন যে এই বিদ্যালয়ে ভারতীয়দেরকে শেখানো হবে অঙ্ক, প্রাকৃতিক দর্শন, রসায়ন, শরীরতত্ত্ব এবং আরও অনেক প্রয়োজনীয় বিজ্ঞানশাস্ত্র। এককথায় আধুনিক ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চাই হবে এদেশীয় বিদ্যালয়ে। কিন্তু এটা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক যে, সরকার প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃত বিদ্যালয়ে এই জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার বদলে হিন্দু পণ্ডিতদের দিয়ে শেখানো হবে ভারতে প্রচলিত ব্রাহ্মণ্যবাদী রক্ষণশীল শিক্ষা। এই ধরনের স্কুলে ছাত্রদের শেখানো হবে ব্যাকরণের খুঁটিনাটি, এবং অধিবিদ্যা— যেগুলির বাস্তব প্রয়োগযোগ্যতা সমাজজীবনে প্রায় নেই বললেই চলে। জীবনের শ্রেষ্ঠ ও প্রয়োজনীয় সময় এইভাবে খরচ হয় এবং তারা পরিণত হয় কল্পনাশ্রয়ী মানুষে। তাছাড়া রামমোহন এও বলেন যে, এই ধরনের শিক্ষা ভারতের সর্বত্রই প্রচলিত রয়েছে। সুতরাং নতুন করে এগুলো শেখানোর কী প্রয়োজন?

পঞ্চম অনুচ্ছেদে যখন ফ্রান্সিস বেকনের নাম করেন তখন একই সঙ্গে তিনি দুটো কাজ সেরে ফেলেন। একদিকে তিনি বোঝাতে চান যে বেকনের বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদী ভাবনা ইউরোপে যুগান্তর এনেছিল। আর অন্যদিকে দেখান যে, এহেন বেকনের পূর্ববর্তী পশ্চাত্পদ শিক্ষাব্যবস্থা ভারতে স্থাপন করতে চাইছে সরকার। এখানে তিনি তাঁর সমালোচনাটিকে বেশ মুন্সিয়ানার সঙ্গেই করেছেন। একইসঙ্গে তিনি তাঁর বিরক্তি প্রকাশ করতেও ভোলেন না: “…such as [প্রাচ্যদেশীয় শিক্ষা] is already commonly taught in all parts of India.”[3] সুতরাং কোম্পানি সরকার যে শিক্ষা সংস্কৃত কলেজে দিতে চাইছে তা অপ্রয়োজনীয় ও সমাজের পক্ষে কল্যাণকর নয়।

রামমোহন যখন ফ্রান্সিস বেকনের কথা বলেন, তখন তাঁর জ্ঞানের বিস্তৃত পরিধির পরিচয় মেলে। পরিচয় মেলে যুক্তিবাদী বৈজ্ঞানিক মেজাজেরও। সে-সময় বেকনের নামের সঙ্গে পরিচয় কতজন ভারতীয়ের হয়েছিল, তা বলা মুশকিল। ফ্রান্সিস বেকন (১৫৬১-১৬২৬) ইংল্যান্ডে বৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনার অন্যতম প্রধান অগ্রদূত। ঐতিহ্যবাহী চিন্তা ও দর্শনের বিপরীতে তিনি প্রাকৃতিক দর্শন ও অভিজ্ঞতাবাদী জ্ঞানের পথকে উন্মুক্ত করেন। রামমোহন তাই তাঁর চিন্তা দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে, বর্তমান চিঠির (১৮২৩) ষাট বছর বাদে অক্ষয় দত্ত (১৮২০-১৮৮৬) তাঁর ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ (দ্বিতীয় খণ্ড, ১৮৮৩)-এ ফ্রান্সিস বেকনের আদর্শকে প্রত্যক্ষভাবে গ্রহণ করেছিলেন।

 

তিন.

সংস্কৃত শাস্ত্রে রামমোহনের যথেষ্ট পাণ্ডিত্য থাকলেও তিনি ভারতীয় ছাত্রদের জন্য প্রকারান্তরে সংস্কৃত শিক্ষাকে অপ্রয়োজনীয় বলেই মনে করেছিলেন। আমহার্স্টকে লেখা চিঠির ৬ নং অনুচ্ছেদে সংস্কৃত শিক্ষা দেওয়ার জন্য সংস্কৃত কলেজ স্থাপনের উদ্যোগকে তিনি নিরুৎসাহিতই করেছেন। এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য হল:

The Sangscrit language, so difficult that almost a lifetime is necessary for its perfect acquisition, is well known to have been for ages a lamentable check on the diffusion of knowledge; and the learning concealed under this almost impervious veil is far from sufficient to reward the labour of acquiring it. But if it were thought necessary to perpetuate this language for the sake of the portion of the valuable information it contains, this might be much more easily accomplished by other means than the establishment of a new Sangscrit College; for there have been always and are now numerous professors of Sangscrit in the different parts of the country engaged in teaching this language as well as the other branches of literature which are to be the object of new Seminary.

এই অনুচ্ছেদের মূল কথা হল: যথাযথভাবে এই কঠিন সংস্কৃত ভাষাটি শেখার জন্য গোটা জীবন লেগে যায়। যে পরিমাণ পরিশ্রম ছাত্রদের করতে হয়, সেই তুলনায় তাদের জ্ঞান অর্জনের পরিমাণ একেবারেই অকিঞ্চিৎকর। রামমোহন এই জ্ঞানকে মোটেই প্রকৃত জ্ঞান বলে বিবেচনা করেননি। এর পরেই তিনি বলেছেন যে, গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের জন্য একান্তই এই সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার কথা যদি ভাবা হয়, তাহলে নতুন সংস্কৃত কলেজ স্থাপনের থেকেও আরও অন্য পদ্ধতি আছে। যে ভাষা ও সাহিত্য সংস্কৃত কলেজে পড়ানো হবে বলে স্থির করা হয়েছে, তা ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অধ্যাপকগণ পড়ান। এঁদের আর্থিক সাহায্য করলে বরং ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।

এই যুক্তি দেখিয়ে তিনি সরাসরি সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন এবং সরকারি নীতির সঙ্গে তিনি যে সহমত নন তা জানিয়েছেন। আর এই পরিকল্পনা যে ব্যর্থ হবে— তা উল্লেখ করতেও ভোলেননি। কারণ তরুণ শিক্ষার্থীরা ১০-১২ বছর ধরে সংস্কৃত ব্যাকরণের নানা খুঁটিনাটি বিষয় অধ্যয়ন করবেন, বাস্তব প্রায়োগিক জীবনে যার প্রায় কোনও মূল্যই নেই। এটা অর্থহীন সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয় (সপ্তম অনুচ্ছেদ)।

চিঠির অষ্টম, নবম ও দশম অনুচ্ছেদগুলি রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। এখানে তিনি বেদান্ত শিক্ষা নিয়েই মৌলিক প্রশ্ন তুলেছেন। লক্ষ করার বিষয় যে, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫), কেশব সেন (১৮৩৮-১৮৮৪) এবং সর্বোপরি নরেন দত্ত ওরফে বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২) বেদান্তকে চলার পথের পাথেয় করে এগিয়েছেন, আদর্শ বলে মেনেছেন, সেই বেদান্তকে বহু আগেই রামমোহন শূন্যগর্ভ মনে করতেন। তাঁর বক্তব্য হল:

Neither can such improvement arise from such speculations as the following, which are the themes suggested by the Vedanta: In what manner is the soul absorbed into the deity? What relation does it bear to the divine essence? Nor will youths fitted to be better members of society by the Vedanta doctrines which teach them to believe that all visible things have no real existence; that as father, brother, etc. have no actual entirety, they consequently deserve no real affection and therefore the sooner we escape and leave the world the better…[4]

সুতরাং বেদান্ত দর্শনজ্ঞান দেখায় যে দৃশ্যমান বাস্তব জগৎ আসলে অস্তিত্বহীন, বাবা-মা-ভাই-বোনের প্রতি ভালবাসা-শ্রদ্ধা ইত্যাদি সম্পর্ক আসলে অর্থহীন। আর সে-কারণেই এসব থেকে নিজেকে মুক্ত করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়া ভাল। রামমোহন তাই বলেন, এহেন মতবাদের পক্ষে সমাজে দায়িত্ববান সদস্য সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, রামমোহনের এই চিঠির ৩০ বছর বাদে শিক্ষা পরিষদের সম্পাদক এফ জে সোয়াটকে বিদ্যাসাগর একটি চিঠিতে ওই একই কথা লেখেন। বিদ্যাসাগর কী লিখলেন তা পড়া যাক:

বেদান্ত ও [ভেজাল] সাংখ্য দর্শন ভ্রান্ত দর্শনতন্ত্র, এটা নিয়ে আর কোনও বিতর্ক নেই। ভ্রান্ত হলেও, এই দুটি দর্শনতন্ত্র হিন্দুদের অপরিসীম শ্রদ্ধা পেয়ে থাকে। আমাদের উচিত সংস্কৃত পাঠক্রমে এগুলি পড়ানোর সময়ে, এদের প্রভাব দূর করার জন্য ইংরেজি পাঠক্রমে খাঁটি দর্শন দিয়ে এগুলির বিরোধিতা করা।[5]

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ও বেদান্ত দর্শনের ক্ষতিকর দিকটির প্রতি আলোকপাত করতে ভোলেননি। ভারতবর্ষে বিজ্ঞানের বিকাশের ক্ষেত্রে বেদান্ত দর্শন যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, প্রফুল্লচন্দ্র রায় তা সুস্পষ্টভাবে তাঁর গ্রন্থ History of Hindu Chemistry-তে দেখিয়েছেন।[6]

ভারতীয় সমাজের অগ্রগতির জন্য বেদান্তের বিরোধিতা প্রয়োজন তা রামমোহন যেমন বলেছিলেন, তেমনই বিদ্যাসাগর, অক্ষয় দত্ত, প্রফুল্লচন্দ্র সহ অনেকেই সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন।

 

চার.

রামমোহন বেদান্তকে শূন্যগর্ভ বলেই থামলেন না। বেদ, মীমাংসা, ন্যায়শাস্ত্র চর্চা সম্পর্কে যা বললেন তা বিস্ময়কর। তাঁর কাছে এসব শাস্ত্র অধ্যয়ন করে সময় নষ্ট করার কোনও অর্থ হয় না। এগুলির কোনও উপযোগিতা নেই। কারণ এই শাস্ত্রজ্ঞান হল কাল্পনিক। তিনি তাঁর চিঠির ১০ নং অনুচ্ছেদে লেখেন:

In order to enable your Lordship to appreciate the utility of encouraging such imaginary learning as above characterised…

একই সঙ্গে তিনি ফ্রান্সিস বেকন-পূর্ব শিক্ষার সঙ্গে তুলনা করতে অনুরোধ করেছেন।

চিঠির ১১ নং অনুচ্ছেদটি কিছু কম ভয়ঙ্কর নয়। এখানে তিনি বলছেন যে, ফ্রান্সিস বেকনের শিক্ষা ছাড়া অজ্ঞতা দূর করা যাবে না। তাই সংস্কৃত শিক্ষা নয়, বেকনীয় দর্শন শিক্ষার মধ্যে দিয়েই ভারতীয়দের আলোকপ্রাপ্ত করা সম্ভব। দেশীয় জনগণের উন্নয়ন যদি ব্রিটিশ সরকারের লক্ষ্য হয়, তা হলে গণিতশাস্ত্র, প্রাকৃতিক দর্শন বা বিজ্ঞান, রসায়ন এবং শারীরবিদ্যার মতো দরকারি শাস্ত্রগুলি বিদ্যালয়ে পড়ানো প্রয়োজন। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা দরকার ইউরোপীয় শিক্ষায় শিক্ষিত প্রতিভাধরদের। শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র সরবরাহের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই।

খুব স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ সরকার রামমোহনের এইসব পরামর্শ গ্রহণ করেনি। কারণ এইসব পরামর্শ গ্রহণ করার অর্থ সরকারি নীতির বিরোধিতা করা। তখন ব্রিটিশ নীতিটি ছিল দেশজ কুসংস্কার, অন্ধত্ব, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সামাজিক পশ্চাৎপদতাকে রক্ষা করা। বর্ণ-জাতগত বৈষম্যকে অটুট রাখা এবং সামাজিক সকল ভেদগুলিকে সজীব রাখা। ব্রিটিশ সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য এই বৈষম্যমূলক ও পশ্চাৎপদ ব্যবস্থাকে টিঁকিয়ে রাখার প্রয়োজন ছিল। রামমোহন তা বুঝেছিলেন। সেই কারণেই তাঁর কাছে ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা এতটা গুরুত্ব পেয়েছিল। সমসাময়িক কালের সামাজিক গতিপ্রকৃতির যথার্থ অনুধাবনই তাঁকে এই চিঠি লিখতে প্ররোচিত করে, যা আজকেও বারবার পড়তে হবে।

 

তথ্যসূত্র:

  • বি.র.স. (বিদ্যাসাগর রচনা সংগ্রহ)। ১৯৭২। কলকাতা: সাক্ষরতা প্রকাশন। তিন খণ্ডে সমাপ্ত।
  • Ray, Prafulla Chandra. 1902-3 (Vol-1). History of Hindu Chemistry. Calcutta: The Bengal Chemical and Pharmaceutical Works Ltd.
  • Roy, Raja Rammohan. 1995. The English Works of Raja Rammohan Roy. Calcutta: Sadharon Brahmo Samaj.

 


[1] Roy, Rammohan. 1995. Part IV : 105.
[2] পূর্বোক্ত: ১০৬।
[3] পূর্বোক্ত: ১০৬।
[4] Roy. 1995 : IV : 107.
[5] বি.র.স.। ১৯৭২ : ১ : ৪৫৩।
[6] 1902-03 : Vol-1 : 195-6.

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4660 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...